Pray for the world economy

আগুন যদি কোন পদার্থ না হয়ে থাকে, তাহলে জিন কী করে আগুনের তৈরি হতে পারে?

 

নাস্তিক প্রশ্নঃ পূর্বে ধারণা করা হত যে পৃথিবীর সব কিছু চারটি উপাদান থেকে তৈরি-মাটি,পানি,বায়ু ও আগুন! কিন্তু এখন আমরা জানি আগুন কোন উপাদান/পদার্থ নয় বরং এক ধরণের রিঅ্যাকশনারী কেমিক্যাল প্রসেস! তাহলে জ্বিন(Jinn) কিভাবে আগুনের তৈরি হতে পারে(Quran 55:15) ?

 

উত্তরঃ আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ

 

وَخَلَقَ الْجَانَّ مِن مَّارِجٍ مِّن نَّارٍ

“ এবং তিনি জিনকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াহীন আগুনের শিখা থেকে।” [1]

 

আলোচ্য আয়াতে مَّارِجٍ অর্থ অগ্নিশিখা। نَّارٍ অর্থ এক বিশেষ ধরণের আগুন। কাঠ বা কয়লা জ্বালালে যে আগুন সৃষ্টি হয় এটা সে আগুন নয়। এর অর্থঃ ধোঁয়াবিহীন শিখা। [2]

 

সাহাবী ইবন আব্বাস(রা) বলেনঃ ইহা হল ধুম্রহীন আগুনের শিখা যা মানুষকে মেরে ফেলে। [3]

আবু দাউদ তায়ালিসী(র) বলেন যে, আবু ইসহাক(র) থেকে শু’বাহ(র) তাদেরকে বর্ণণা করেছেনঃ উমার আল আসাম(র) যখন অসুস্থ তখন আমরা তাঁকে দেখতে যাই। তিনি তখন বলেনঃ আমি তোমাদেরকে একটি হাদিস বলছি যা আমি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রা) থেকে শুনেছি। অতঃপর তিনি বলেন, বর্ণিত এই ধুম্রহীন আগুন হল সেই ধুম্রহীন আগুনের তেজের সত্তর ভাগের এক ভাগ যে ধুম্রহীন আগুন থেকে জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর তিনি পাঠ করেন, “এর পূর্বে সৃষ্টি করেছি জিনকে, প্রখর শিখাযুক্ত অগ্নি হতে {হিজর ১৫:২৭}” [4]

 

জিনদের প্রকৃতি সম্পর্কে কুরআনে আরো উল্লেখ আছে—

قَالَ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَيُّكُمْ يَأْتِينِي بِعَرْشِهَا قَبْلَ أَن يَأْتُونِي مُسْلِمِينَ [٢٧:٣٨
قَالَ عِفْرِيتٌ مِّنَ الْجِنِّ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن تَقُومَ مِن مَّقَامِكَ ۖ وَإِنِّي عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٌ [٢٧:٣٩
قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَٰذَا مِن فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ ۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ [٢٧:٤٠

অর্থঃ “[সুলাইমান] বললেন, “হে পরিষদবর্গ, তারা আত্মসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে তার{সাবার রাণী} সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?”

জনৈক শক্তিশালী-জিন বলল, “আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং নিশ্চয়ই আমি এ কাজে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।”

কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল -“আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। ...” [5]

 

অর্থাৎ জিনেরা মানুষের মত কোন প্রাণী নয়। এরা এমন এক প্রকারের প্রাণী মুহূর্তের মধ্যেই যাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষমতা আছে। কিংবা হয়তো এরা মানুষের থেকে ভিন্ন কোন মাত্রা(dimension) এর প্রাণী। আল্লাহ ভালো জানেন। জিনের অস্তিত্ব বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণ করাও সম্ভব হয়নি, নাকচ করাও সম্ভব হয়নি। কুরআনে জিন সম্পর্কে যা বলা আছে, বিজ্ঞান তা সম্পর্কে এখনো অজ্ঞ।

 

নাস্তিক-মুক্তমনাগণ প্রশ্ন তোলেন যেঃ আগুন যেহেতু কোন উপাদান বা পদার্থ নয় কাজেই এটি জিন বা কোন প্রাণী সৃষ্টির উপাদান হতে পারে না। কাজেই কুরআনে জিন জাতি সম্পর্কিত তথ্য অত্যন্ত ‘অবৈজ্ঞানিক’।

 

এর জবাবে আমরা মুসলিমরা বলবঃ আপনাদের চিন্তা অত্যন্ত সংকীর্ণ। আপনাদের কেন এমন  চিন্তা হল যে মহাবিশ্বের সকল প্রাণই পৃথিবীর প্রাণের মত কোন উপাদান দ্বারা গঠিত  হতে হবে? এ থেকে ভিন্ন কোন মেকানিজমে মহাবিশ্বের কোন প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে না এ নিশ্চয়তা আপনাদের কে দিল? সত্যিকারের বিজ্ঞানীরা কিংবা বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিরা কখনোই এটা কল্পনা করে না যে মহাবিশ্বের সকল প্রাণীই পৃথিবীর প্রাণীর ন্যায় তৈরি। বরং অনেক ধরণের প্রাণের সম্ভাব্যতায় একজন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি বিশ্বাস করতে বাধ্য।

 

বিজ্ঞানী G. Feinberg এবং  R.Shapiroতাঁদের ‘LIFE BEYOND EARTH’ বইতে(প্রকাশক William Morrow and Co., Inc., New York) উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের পৃথিবীর বাইরে প্রাণের বিস্তার সব থেকে বেশি সম্ভব সূর্য বা অন্য কোন নক্ষত্রে প্লাজমার মাঝে। প্লাজমার মাঝে উদ্ভুত সম্ভাব্য সেই প্রাণীদেরকে তাঁরা ‘Plasmabeasts’ বা প্লাজমা-জন্তু বলে অভিহীত করেছেন।  

সমান সংখ্যক ইলেক্ট্রন ও ধণাত্মক আয়নযুক্ত উচ্চ আয়নিক গ্যাসকে প্লাজমা বলা হয়। আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতে বিশেষ করে সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রের বায়ুমণ্ডলে গ্যাসসমূহ উচ্চ আয়নিত অবস্থায় থাকে, তাই সেখানে প্লাজমা অবস্থা বিরাজ করে। এ ছাড়া পরীক্ষাগারে ক্ষরণ নলে কিংবা তাপ নিউক্লিয় রিএক্টরে প্লাজমা অবস্থা সৃষ্টি করা যায়। প্লাজমা অবস্থা তৈরির জন্য ৫০,০০০ K থেকে বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। আন্তঃনাক্ষত্রিক প্লাজমাকে সহজেই “ধোঁয়াবিহীন শিখা” বলে অভিহীত করা যায়। জ্ঞানী G. Feinberg এবং  R.Shapiroপ্লাজমাকে বলেছেন ‘Plasmabeasts’ গঠনের উপাদান।

একেবারে সাম্প্রতিক সময় ২০০৭ সালে V.N. Tsytovich এর নেতৃত্বে General Physics Institute of the Russian Academy of Science এর বিজ্ঞানীদের একটি দলও মত প্রকাশ করেছে যেঃ প্লাজমা অবস্থা থেকে প্রাণের বিকাশ হওয়া খুবই সম্ভব। [6] 

 

বিজ্ঞানী Robert A. Freitas মহাবিশ্বে ‘নন-বায়োলজিক্যাল’ প্রাণের সম্ভাব্যতার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে এ ধরণের প্রাণ ব্যবস্থায় বিপাক ক্রিয়া চারটি ধাপ দ্বারা হতে পারে। যথাঃ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম, শক্তিশালী নিউক্লিয় বল(strong nuclear force), দুর্বল নিউক্লিয় বল(weak nuclear force), এবং মহাকর্ষ। এই সম্ভাব্য জীবন প্রক্রিয়ার নামকরণ করা হয়েছেঃ Chromodynamic, Weak Nuclear Force And Gravitational Life। পৃথিবীর প্রাণীকূল  কার্বনভিত্তিক। বিজ্ঞানী Robert A. Freitas  এর মতে Chromodynamic life শক্তিশালী নিউক্লিয় বলভিত্তিক। এ ধরণের প্রাণের বিকাশের পরিবেশ থাকতে পারে কেবল নিউট্রন স্টারে। তিনি আরো বলেন যেঃ মহাকর্ষীয় প্রাণী(Gravitational creatures) এর অস্তিত্ব থাকাও সম্ভব যারা সরাসরি মহাকর্ষীয় বল থেকে শক্তি আহরণ করতে পারে।

Robert A. Freitasসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা মহাশূণ্যে প্রাণের বিস্তার ও এর সম্ভাব্যতার ব্যাপারে এছাড়াও অনেকগুলো তত্ত্ব দিয়েছেন। [7] 

সেগুলোর সবগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলে একটা বই হয়ে যেতে পারে।

 

মহাবিশ্বে সম্ভাব্য প্রাণের বিকাশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের উত্থাপিত অল্প কিছু তত্ত্ব উপরে আলোচনা করা হল। আমরা বলব না বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বগুলোই কুরআনে বর্ণিত জিনদের বর্ণণা; কেননা বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বগুলো এখনো প্রমাণিত নয়। তবে এখানে লক্ষ্যনীয় যে, বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে সম্ভাব্য প্রাণ সম্পর্কে এমন সব তত্ত্ব দিয়েছেন যার সঙ্গে পৃথিবীর প্রাণীদের কোন মিল নেই। প্লাজমা থেকে প্রাণের উদ্ভবের তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন, কিন্তু তা দেখে কেউ কিন্তু এটা বলেনি যেঃ "প্লাজমা অবস্থার ভয়ানক তাপে কিভাবে প্রাণের বিকাশ হতে পারে??" শক্তিশালী নিউক্লিয় বলভিত্তিক প্রাণ এমনকি মহাকর্ষীয় প্রাণীর প্রস্তাবনা পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন যারা কিনা সরাসরি মহাকর্ষ বল থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি পেতে পারে। বাংলার নাস্তিক-মুক্তমনাকূলকে কিন্তু কোন বিজ্ঞানীকে কটাক্ষ করে বলতে দেখা গেল না যেঃ "শক্তিশালী নিউক্লিয় বল কিংবা মহাকর্ষ – এর কোনটাই উপাদান/পদার্থ নয়। তাহলে এ থেকে কিভাবে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে?"

কিন্তু ৭ম শতাব্দীতে নাজিলকৃত গ্রন্থ আল কুরআনে যখন এক বিশেষ ধরণের অগ্নি(ধোঁয়াহীন আগুনের শিখা) থেকে গঠিত প্রাণীর কথা উল্লেখ করা হয়, তখন তাদেরকে কটাক্ষ করে বলতে দেখা যায় যে--"রিঅ্যাকশনারী কেমিক্যাল প্রসেস থেকে কিভাবে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে??"

 

 এটা কি দ্বিমুখিতা নয়? এটা কি চিন্তার সংকীর্ণতা নয়?

 

তথ্যসূত্রঃ

[1]  আল কুরআন, আর রহমান ৫৫:১৫

[2]  তাফসির কুরতুবী, তাফসির ফাতহুল কাদির; কুরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, ২য় খণ্ড,  সুরা আর রহমানের ১৫ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৫২৮

[3]  তাবারী ১৭/৩৩

[4]  তাবারী ১৬/২১

[5]  আল কুরআন, নামল ২৭:৩৮-৪০

[6]  ☛“Cosmic Dust Clouds Point to Non-Carbon Life Forms”
http://www.dailygalaxy.com/my_weblog/2011/11/inorganic-cosmic-dust-points-to-non-carbon-life-forms.html

☛“Physicists Discover Inorganic Dust With Lifelike Qualities”

https://www.sciencedaily.com/releases/2007/08/070814150630.htm

[7]  “10 Hypothetical Forms Of Life”

http://listverse.com/2015/07/17/10-hypothetical-forms-of-life/