Pray for the world economy

ইসলামোফোবিয়া

 

বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও মিথ্যা ছড়ানো একটি বিশাল বানিজ্য। বাংলাদেশের অনলাইনে এক্টিভ নাস্তিকদের কথোপকথনের সময় বেরিয়ে এসেছে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে লেখালেখি ও এক্টিভিজমের দ্বারা অর্থ পায়।

 

একবিংশ শতকের সূচনালগ্নে মিডিয়া জুড়ে কোন ধর্মের আলোচনা-সমালোচনা-নিন্দা সবচেয়ে বেশি চলে? এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই আঁচ করা যায় সে ধর্ম হলো ইসলাম! এথনিক/কালচারাল/ফোক মুসলিমরা (যদিও এমন কোনো পরিভাষা মূল ইসলামে নেই) ইসলামের কথা শুনলেই কেমন এক হীনমন্যতায় ভোগেন! সন্ত্রাসবাদী ও বর্ণবাদী পশ্চিমাদের মিডিয়া আগ্রাসনে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইসলাম নিয়ে অমুসলিম তো বটেই, নামে মুসলিমদের মাঝেও বিরক্তি, আশংকা, ভয় কাজ করতে দেখা যায়।

 

এর কারণ কী হতে পারে? এর কারন কী সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাবলী যা আমরা ঘটতে দেখছি? না এর কারন হতাতের সংখ্যা ? তাই যদি হয়, তবে যুক্তির আলোকে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদকে আমাদের ততটুকু ভয় বা ঘৃণাকরা উচিত হবে কি? যদি আরও বেশী ভীত আমরা হতে না চাই! মুসলিম হিসেবে তা আমরা কখনোই সমর্থন করি না, বরং আমরা আশা ও ভালোবাসার বাণী শোনাতে চাই। কিন্তু কেন এই নেতিবাচক মনোভাব শুধুমাত্র ইসলামের প্রতি? একই কাজ অন্য মতবাদ বা ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রে কেনো এতো প্রচার পায় না? কেনো আমাদের ভেতর বিরক্তি ও ভয় উদ্রেক করে না?

 

এটা কি প্রায় ৪৩ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের ফল যা সরাসরি ইসলামের প্রতি ঘৃণা ও ভয় ছড়াতে অনুদান দেয়া হয়েছিল! অবাক হলেন নাকি? বানিয়ে বলছি না কিন্তু। Center for American Progress এর গবেষণা অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০০৯ সালের মাঝে সাতটি গোষ্ঠি প্রায় ৪২.৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান প্রদান করেছে ইসলামোফোবিয়া ছড়াতে নিয়োজিত দলগুলোকে !! [1] তাদের প্রচারিত মিথ্যা তথ্য এরপর ছড়িয়ে পড়ে আরও বড় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাতে অংশ নেয় অ্যাকটিভিস্ট, মিডিয়া, রাজনীতিবিদ এবং আরও অনেকে যা ইসলাম একটি সহিংস ধর্ম এই ভুল ধারণার প্রতিধ্বনি ঘটায়। সাম্প্রতিক সময়ে এই অনুদানের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে আশংকাজনক হারে !

 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক সর্ববৃহৎ মুসলিম সিভিল রাইটস এবং অ্যাডভোকেসি সংস্থা কাউনসিল অন অ্যামেরিকান -ইসলামিক রিলেশনস (CAIR) কর্তৃক ২০১৩ সালে প্রকাশিত “Legislating Fear: Islamophobia and its Impact in the United States” প্রতিবেদনে জানা যায় ইসলাম বিরোধী গোষ্ঠীগুলো ২০০৮-২০১১ সালের মাঝে অনুদান পেয়েছে ১১৯ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী অর্থ !! [2] ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের Berkeley Center for Race & Gender এবং CAIR যৌথভাবে গবেষণার ফল প্রকাশ করে “Confronting Fear: Islamphobia and its Impact in the United States” প্রতিবেদনে, এবং জানায় যে ২০০৮-২০১৩ সালের মাঝে ইসলামোফোবিয়া ছড়াতে নিয়োজিত দলগুলো অনুদান পেয়েছে ২০৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী অর্থ!! [3]

আচ্ছা, যদি এই পরিমাণ অর্থ অন্য কোন মতবাদ (যেমন: গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র) বা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণার আগুন ছড়াতে ব্যবহৃত হয় তবে কি পরিণতি হবে?

 

সেক্যুলার পশ্চিমা গবেষকদের গবেষণায় জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামোফোবিয়া নেটওয়ার্কের অন্তঃকেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ৩৩টি গোষ্ঠী যাদের মূল লক্ষ্য হল ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভুল ধারণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো। এছাড়া আরও ৪১টি দল ইসলামোফোবিয়ার সমর্থনে কাজ করে যাচ্ছে যাদের দ্বারা নেটওয়ার্কের বহিঃকেন্দ্র গঠিত। [4] ইসলাম বিরোধী আইন প্রণয়নের ধারাবাহিকতায়, ২০১৫ সালে ৩১টি বিল বা সংশোধনী প্রণয়ন করা হয়েছে ১৭টি অঙ্গরাজ্যের আইন সভায় যার মূল লক্ষ্য মুসলিমদের ধর্মীয় আচারসমূহের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করা। এর মধ্যে ২৩টি বিল সেই ভাষা বহন করে যা ডেভিড ইয়েরুশ্যালমাই এর অ্যামেরিকান লস ফর অ্যামেরিকান কোর্টস (ALAC)” থেকে গৃহিত। কেন এই বিষয়টি জানা জরুরি? কারণ ডেভিড অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে মুসলিম বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ভীতি ছড়াতে সিদ্ধহস্ত। এরপরও আইন নেয়া হচ্ছে তার থেকে? এই বিলগুলোর মাঝে ৩০টি বিল প্রণয়নে অর্থায়ন করেছে শুধুমাত্র রিপাবলিকান নেতারা। বাকি একটি বিল প্রণয়নে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় পক্ষ অংশ নিয়েছে!

 

মূল ইসলামকে পরিবর্তন করে কিভাবে মডারেট ইসলামকে প্রচলিত করা যায় সে উদ্দেশ্যে একের পর এক গবেষণা পত্র প্রকাশিত হচ্ছে! [5] কিন্তু কেন তারা এই নিচু কৌশল অবলম্বন করছে? কারণটা সহজ, তারা দূর্বলের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় বা তারা ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সএ আক্রান্ত কারণ তারা এমন বিক্রেতা যার পন্য নিম্নমানের। তাই আপনাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রির জন্য তাদের মনোনিবেশ করতে হয় অন্যের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত মিথ্যা ছড়াতে। [6] অধিকাংশ সময় তাদের এই চেতনার প্রকাশ ঘটে, কারণ তারা জানে যা তাদের নিকট আছে তা কোনক্রমেই উত্তম নয়। তাছাড়া এই নেতিবাচক মানুষগুলো আত্মিকভাবেও ব্যর্থ।

 

তাহলে আমরা কেন ভীত?

 

কারণ কিছু মানুষের অন্তর ঘৃণায় পরিপূর্ণ, আর তারা এই ঘৃণার আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে যাতে করে আমরাও ঘৃণা ও ভয়েরমহামারীতে আক্রান্ত হই। বিশ্বায়নের যুগে এই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে দাবানলের মত। [7] ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাসজিদগুলোর ওপর ৭৮ বার হামলা করা হয়েছে যা আগের বছরগুলোর তুলনায় ৩ গুন! [8] যুক্তরাজ্যে মুসলিম বিদ্ধেষী আক্রমণের হার ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৬%, যার লক্ষ্যবস্তুর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী, প্রায় ৬১% ! [9]

 

এর মানে কি মুসলিমরাও ঘৃণা ছড়াবে? না। বরং তাদের আরও বেশী উদ্যমী হতে হবে সত্য প্রকাশে এবং ইসলামের সৌন্দর্যকে যৌক্তিকভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে। আশার কথা হলো, এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অসংখ্য অমুসলিম ইসলামকে অধ্যয়ন করে নিজের জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করছে ! [10] অবাক হচ্ছেন?

 

অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব চিন্তাশক্তি ও মনন হয়েছে। যখন আমাদের চিন্তা ও চেতনায় গণমাধ্যমের অনধিকার প্রবেশ আমরা বন্ধ করতে পারব, কেবল তখনই মুক্তি সম্ভব। তা না হলে আমরা মিডিয়ার দাসে পরিণত হব। ম্যালকম এক্স [11] বলেছিলেন,

 

“The media’s the most powerful entity on earth. They have the power to make the innocent guilty and to make the guilty innocent, and that’s power. Because they control the minds of the masses.”

 

মিডিয়া হল পৃথিবীর বুকে অত্যন্ত ক্ষমতাধর সত্ত্বা। তাদের ক্ষমতা আছে নির্দোষকে অপরাধী ও অপরাধীকে নির্দোষে পরিণত করার, এবং এটা সত্যিই এক শক্তি। কারণ, তারা জনসাধারণের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।[12] তাই আসুন নিজের অন্তরকে সত্যের পানে উন্মুক্ত করি, সত্য জানতে সচেষ্ট হই। কারণ, সত্য মুক্তির পথ দেখায়।

 

 [লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় callingtotheone ব্লগে। সেখান থেকে ঈষৎ পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে।]

 

লেখকের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে লেখাটির লিঙ্কঃ https://rafanofficial.wordpress.com/2019/09/15/islamophobia/

 

 

রেফারেন্স:


[4] Confronting Fear: Islamphobia and its Impact in the United States, p. vii

[5] মডারেট ইসলাম (Moderate Islam) বাস্তবায়নে RAND Corporation এর পরিকল্পনা পত্র Civil Democratic Islam, Building Moderate Muslims Network ইত্যাদি।

[8] Confronting Fear: Islamphobia and its Impact in the United States, p. viii

[11] Malcolm X (১৯২৫-১৯৬৫) ছিলেন একজন আফ্রিকান-মার্কিন মুসলিম রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের মানবাধিকার আদায়ের আন্দোলনে অন্যতম অংশগ্রহণকারী ছিলেন। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয় Malcolm Little পরবর্তীতে Nation of Islam এর নেতা ও নব্যুওয়াতের দাবীদার এলিজা মুহাম্মদের আদর্শ (Elijah Muhammad) দ্বারা প্রভাবিত হন ও তার মত গ্রহন করেন। তাঁর নতুন নাম হয় ম্যালকম এক্স। ঘটনাচক্রে তিনি Elijah Muhammad এর গোপন চারিত্রিক কলুষণের সংবাদ পান ও গভীরভাবে আহত হন কারণ তিনি তাকে নবী মনে করতেন। পরবর্তীতে তিনি মক্কাতে হজ্জে গমন করেন। সেখানে বিশ্বভ্রাতৃত্বের স্বরূপ দেখে তিনি উজ্জীবিত হন ও মূল ধারার ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আল-হাজ্জ মালিক আল-শাব্বাজ নামেও পরিচিত। দেখুন: http://malcolmx.com/biography