Pray for the world economy

কোনো উম্মুল মুমিনীন কি আসলেই মুর্তাদ হয়েছিলেন?

 

নাস্তিকদের দাবিঃ

নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) যতগুলো বিয়ে করেছিলেন তার মধ্যে এক স্ত্রী ছিলেন কুতাইলা বিনত কায়েস (Qutayla bint Qays) যিনি নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর পর ধর্ম ত্যাগ করেন! বিশ্বাসীদের মা হিসেবে, নবীর কোন স্ত্রীর বিয়ের নিয়ম নেই! তবুও তিনি আবু জাহেলের ছেলে ইকরিমাকে বিয়ে করেন। এই খবর শুনে আবু বকর এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে তিনি তার দাঁতে দাঁত চেপে তাকে পিষে ফেলতে চেয়েছিলেন এবং শিরচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ওমর তাকে বলেন উনি যেহুতু  বিশ্বাসীদের মা নন, যেহুতু নবী মুহাম্মদ তার সাথে সহবাস করেনি তাই তিনি আবার বিয়ে করতে পারেন। ওমরের হস্তক্ষেপে এই নারী বেঁচে যান।

 

জবাবঃ

এ প্রসঙ্গে বেশ কিছু ঐতিহাসিক অভিমত রয়েছে। আমরা এখন সেগুলো বিশ্লেষণ করবো।

 ইবনুল আসির(র.)'উসদুল গাবাহ' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ

 

  قيل إنه تزوجها قبل وفاته بشهر.وقيل إن النَّبِيّ صلّى الله عليه وسلّم أوصى أن تخير، فإن شاءت ضرب عليها الحجاب وتُحرم على المؤمنين، وإن شاءت طلقها ولتنكح من شاءت. فاختارت النكاح فتزوجها عكرمة بن أبي جهل بحضرموت، فبلغ أبا بكر فقال: لقد همَمْتُ أن أحرق عليهم بيتهما. فقال له عُمر: ما هي من أمهات المؤمنين، ولا دخل عليها، ولا ضرب عليها الحجاب.

وقيل إن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يوص فيها بشيء ولكنه لم يدخل بها وارتدت مع أخيها حين ارتد ثم نكحها عكرمة بن أبي جهل فأراد أبو بكر أن يرجمه فقال عمر : إن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يدخل بها وليست من أمهات المؤمنين وقد برأها الله عز وجل بالردة . فسكت أبو بكر

অর্থঃ বলা হয়েছে, নবী() তাকে [কুতায়লা বিনত কায়েস] তাঁর মৃত্যুর ১ মাস পূর্বে বিবাহ করেছিলেন এবং তিনি তাকে বেছে নেবার সুযোগ দেন। যদি সে চায়, তাহলে তার উপর (উম্মুল মুমিনিনের বিশেষ) হিজাব নির্ধারিত হবে এবং সে মুমিনদের (বিবাহের) জন্য হারাম হয়ে যাবে। আর চাইলে সে তাঁকে তালাক দিতে পারবে এবং যাকে ইচ্ছা বিয়ে করে নেবে। অতঃপর সে বিয়ে করাকেই বেছে নেয়। সে হাদরামাউতে ইকরিমাহ বিন আবু জাহল(রা.)কে বিয়ে করে।

আবু বকর(রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি তাদের বাড়ির মধ্যে পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম। উমার(রা.) বলেন, সে তো উম্মাহাতুল মুমিনিনদের কেউ ছিলো না। আর তিনি [নবী()] তার সাথে বাসরও করেননি। আর তার উপর (উম্মুল মুমিনীনের) হিজাবও নির্ধারিত হয়নি।

 

আরো বলা হয়েছে [আরেকটি অভিমত হচ্ছে,] নবী() তাকে এমন কিছু বলেননি। তবে তিনি তার সাথে বাসরও করেননি। তঃপর সে তার ভাইয়ের সাথে মুর্তাদ হয়ে যায়। ইকরিমাহ ইবন আবু জাহল মুর্তাদ হয়ে যাবার পর তাকে বিয়ে করেন। এ জন্য আবু বকর(রা.) তাকে [পুংবাচক, ইকরিমাহ] রজম [পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড] করতে চান। উমার(রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ() তার সাথে বাসর করেননি এবং সে উম্মাহাতুল মুমিনিনদের কেউ ছিলো না। মহান আল্লাহ তাকে ধর্মত্যাগের দ্বারা এ থেকে সম্পর্কহীন করে দিয়েছেন। অতঃপর আবু বকর(রা.) নিরব হয়ে গেলেন। [1]

 

এখানে ২য় অভিমতটি সত্য হওয়া অসম্ভব। এখানে ভুল তথ্য রয়েছে। কারণ বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত যে ইকরিমাহ ইবন আবু জাহল(রা.) কখনো মুর্তাদ হননি। তিনি শেষ পর্যন্ত ইসলামে অটল ছিলেন, রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ নেন এবং ইয়ারমুকের যুদ্ধে শহীদ হন। এ ব্যাপারে বহু সাহাবী(রা.) সাক্ষী। ইবন হাজার আসকালানি(র.) তাঁর ‘ইসাবাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,

 

“আবু বকর(রা.) তাঁকে [ইকরিমাহ(রা.)] নু’মানের বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে পাঠান। তিনি তাদেরকে পরাজিত করেন। এরপর তিনি তাঁকে ইয়েমেনে পাঠান। সেখান থেকে ফিরে আসার পর তিনি জিহাদে যান। সে বছরই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর শহীদি মৃত্যু হয়েছিলো। …” [2]

 

আর ১ম অভিমতে স্পষ্টতই উল্লেখ আছে, স্বয়ং নবী(ﷺ) কুতায়লাকে বেছে নেবার সুযোগ দিয়েছিলেন সে উম্মুল মুমিনীন হিসেবে থাকবে কিনা। সে যদি উম্মুল মুমিনীন হিসেবে থাকতো, তাহলে তার উপর উম্মুল মুমিনিনের বিশেষ হিজাব নির্ধারিত হতো। এবং তাকে বিবাহ করা অন্য মুমিনদের জন্য হারাম হয়ে যেতো। নবী(ﷺ) তাকে এ স্বাধীনতাও দিয়েছিলেন যে চাইলে সে তাঁকে তালাক দিতে পারে এবং যাকে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারে। কুতায়লা বিনত কায়স নিজের ইচ্ছাতেই আর উম্মুল মুমিনীন থাকেনি এবং সে বিয়ে করাকেই বেছে নিয়েছিলো। কাজেই এখান থেকে এটি বলার কোনো সুযোগ নেই যে, কোনো ‘উম্মুল মুমিনীন’ মুর্তাদ হয়েছে এবং অন্য কাউকে বিয়ে করেছে!

 

তবে কুতায়লা বিনত কায়সের সাথে নবী(ﷺ) এর বিবাহের ঘটনা যে আদৌ সত্য নয়, এ ব্যাপারে তাবিঈ উরওয়াহ বিন যুবাইর(র.) থেকে বক্তব্য পাওয়া যায়। তাঁর মতে, নবী(ﷺ) ঐ নারীকে আদৌ বিবাহ করেননি।

 

عن هشام بن عروة عن أبيه أنه كان ينكر ذلك ويقول لم يتزوج رسول الله قتيلة بنت قيس ولا تزوج كندية إلا أخت بني الجون

অর্থঃ হিশাম বিন উরওয়াহ(র.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি [উরওয়াহ বিন যুবাইর(র.)] এই ঘটনার [কুতায়লা বিনত কায়েসের সাথে নবী() এর বিয়ে] সত্যতা অস্বীকার করেছেন। এবং তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বানি জুনের বোন ব্যতিত কুতায়লা বিনত কায়েস অথবা অন্য কোনো কানাদিয়্যাহ নারীকে বিবাহ করেননি। [3]

 

কুতায়বা বিনত কায়েস নামে কেউ যে  উম্মাহাতুল মুমিনীনদের (যাকে বিয়ে করা মুমিনদের জন্য হারাম ছিলো) অন্তর্ভুক্ত নয় -- এ ব্যাপারে উলামাদের ঐক্যমত রয়েছে। [4]

 

অতএব আমরা উপসংহারে বলতে পারি, একজন প্রখ্যাত তাবিঈ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে নবী(ﷺ) এর সাথে কুতায়লা বিনত কায়েস নামে কারো আদৌ বিবাহ হয়নি। এবং এমন কথা বলা মোটেও সঠিক নয় যে কোনো উম্মুল মুমিনীন মুর্তাদ হয়ে গিয়েছিলেন।

 

 

তথ্যসূত্রঃ

[1] উসদুল গাবাহ – ইবনুল আসির

http://islamport.com/w/trj/Web/2930/1404.htm

[2]  Ibn Hajar  may  Allaah  have  mercy  upon  him said in Al-Isaabah:

“Abu Bakr sent him [i.e. ‘Ikrimah] to fight the army of Nu’maan, and he defeated them, then he sent him to Yemen, and after he came back, he went out in Jihad in the year when he died and he died as a martyr...”

সূত্রঃ “Ikrimah did not Apostate and Prophet did not Marry Qateelah” (Islamweb)

https://www.islamweb.net/en/fatwa/370135/

[3]  তাবাকাতুল কুবরা - ইবন সা'দ

http://islamport.com/w/trj/Web/2947/3511.htm

[4]  “…Therefore, she was not among the wives with whom he  sallallaahu  `alayhi  wa  sallam ( may  Allaah exalt his mention ) consummated the marriage with them, and whom the believers are forbidden from marrying, according to the agreement of the scholars.”

সূত্রঃ “Ikrimah did not Apostate and Prophet did not Marry Qateelah” (Islamweb)

https://www.islamweb.net/en/fatwa/370135/