Pray for the world economy

জান্নাতে কি আসলেই সমকাম থাকবে?

 

 নাস্তিক প্রশ্ন: 

বেহেশতে পুরুষের যাবতীয় সেবার জন্য থাকবে চির-কিশোরগণ (Quran 52:24,56:17,76:19)।

কেন কিশোররা? এর মাধ্যমে কি সেখানে পুরুষ-কিশোরের যৌনতা যে বৈধ তাঁর দিকেই ইংগিত দেয়া হচ্ছে না?

 

উত্তর: 

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, “ Drowning man catches at a straw” কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, “Drowning atheists do the same.” অতীতে ইসলাম-বিদ্বেষীরা কুরআনের বেশ কিছু আয়াত ব্যবহার করে জান্নাতকে একটা নোংরা স্থান হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করতে। এখনকার মানুষরূপী জঞ্জালগুলো আরেকটু এগিয়ে। তারা কুরআন থেকে আয়াত দেখিয়ে প্রমাণ করতে চায়, বেহেশতে পুরুষরা সমকামিতায় লিপ্ত হবে,তাতে তাদের সমকামি আন্দোলন মানুষের সহানুভূতি ও বৈধতার দৃষ্টি পাবে। এখানে তাদের যুক্তি হচ্ছেঃ যেহেতু বেহেশতে পুরুষ-কিশোর যৌনতা বৈধ,সেহেতু দুনিয়াতেও তা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী বৈধ। প্রথমে বলে রাখি দুনিয়াতে অনেক কিছুই অবৈধ যেটা জান্নাতবাসীদের জন্য বৈধ হবে (রেশমের কাপড় পরা,শরাব পান করা)। দ্বিতীয়ত, কুরআনের কোথাও বলা হয়নি জান্নাতবাসীরা কিশোরদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করবে।

 

মূলত যে তিনটা আয়াত এখানে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় সেগুলো হচ্ছেঃ

“ সুরক্ষিত মুক্তার মত কিশোররা তাদের সেবায় ঘুরাফেরা করবে।” [1]

“তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা।” [2]

“তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা।” [3]

 

এ তিনটি আয়াতের কোথাও কি এ কথা বলা হয়েছে যে, জান্নাতে মুক্তা সদৃশ কিশোরদের সাথে জান্নাতবাসী পুরুষরা মিলিত হবে? বরং বলা আছে, চির-কিশোরগণ পানপাত্র হাতে নিয়ে জান্নাতবাসীদের সেবা করবে, পানপাত্র হাতে নিয়ে সেবার অর্থ তাদের পান করাবে।

 

ব্যাপারটা আরো পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলছি। ধরা যাক, সি-ভিটা কোম্পানী থেকে বলা হলো, যারা তাদের পণ্য সবচেয়ে বেশী কিনবে তাদের মধ্য থেকে শীর্ষ দশ বিজয়ীকে তারা সারাদিন ফ্রী শরবত খাওয়াবে। আরো বলা হলো ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েরা তাদের শরবত পান করাবে। এখন এই ঘোষণা থেকে কার ও মনে কি এই ধারণা জন্মাবে যে, বিজয়ীগণ সেই ছোট্ট ছেলে-মেয়েগুলোর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করবে?

 

অনেকে আবার বলেন আল্লাহ কেন তাদের রূপের বর্ণনা দিতে গেলেন- তারা হবে মুক্তা-সদৃশ, চির-কিশোর? প্রকৃতপক্ষে, জান্নাতে কারো বয়স বাড়বে বা কমবে না, তাই একবার যে কিশোর থাকবে সে চিরকিশোর ই থাকবে। আর জান্নাতে সবাই সুদর্শনই হবে, সে সেবক কিশোর হোক আর দুনিয়াতে সে যতই কৃষ্ণকায় থাকুক। রাসূল(সাঃ) এর হাদীস অনুযায়ী, কালো বর্ণের লোকদের জান্নাতে ঐ সাদা রং দেয়া হবে যা হাজার বছরের দূরত্ব থেকে দেখা যাবে। [4]

 

সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, চিরকিশোরদের কাজ হবে জান্নাতবাসীদের শরবত পান করানোর মাধ্যমে তাদের সেবা করা,কোন যৌন সম্পর্ক স্থাপন নয়। প্রখ্যাত তাফসীর বিশারদ ইবনে কাসির(রহঃ) সহ আরো অনেকেই এই মতামত ব্যক্ত করেছেন ।এমন কোন সঠিক ইসলামী বিশ্বাস-সম্পন্ন স্কলার কিংবা এমন কোন সহীহ হাদীস ও নেই যেটা বলছে জান্নাতে মানুষ সমকামিতায় লিপ্ত হবে। আমরা অস্বীকার করি না যে, যৌনতা মানুষের তৃপ্তি ও আনন্দের অন্যতম উৎস আর এর জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে হুরের ব্যবস্থা করবেন।আল্লাহ বলেন,

“আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব।” [5]

 

মূলত সমকামিতা কখনোই ইসলামের অংশ ছিল না। আল্লাহ-তায়ালা পুরো একটা জাতিকে নিশ্চিন্থ করেছেন সমকামিতায় লিপ্ত হবার কারণে। আল্লাহ বলেন,

“অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম।” [6]

অপরদিকে রাসূল(সাঃ) বলেছেন, “যে পুরুষ পুরুষের সাথে নোংরা কাজে লিপ্ত হয়, উভয়ে জিনাকারী সাব্যস্ত হবে। তেমনি যে নারী আরেক নারীর সাথে কুকর্মে লিপ্ত হয় উভয়ে জিনাকারী সাব্যস্ত হবে।” [7]

 

অনেকেই আরেক ধাপ এগিয়ে সমসাময়িক আরবী ও ফার্সি কবিতায় সমকামিতা দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, তখন সমকামিতা বৈধ ছিল। এক্ষেত্রে, আরবীয় কবি আবু নুয়াসের কবিতা খুব জনপ্রিয়।অশালীন বিধায় সেই কবিতা এখানে উল্লেখ করছি না।তবে শুধু এতোটুকু বলব, কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী যেটা হারাম,সেটা আবু নুয়াস দূরে থাকুক সারা বিশ্বের সব মুসলিম যদি একত্রে সে কাজ করা শুরু করে তবুও সেটা হালাল হয়ে যায় না।

 

আবু নুয়াসকে মাতামাতি করা তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা হয়তো এটা জানেন না কিংবা জানলেও কখনো বলবেন না যে, জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে আবু নুয়াস তার হৃদয়ে পরিবর্তন অনুভব করেন এবং নিজেকে সম্পূর্ণ ধর্মীয় শিক্ষায় নিবেদিত করেন। [8]

সে তো দুর্ভাগা নয় যে, অন্ধকার থেকে আলোতে আসে, বরং দুর্ভাগা তো সে যে অন্ধকারেই থেকে যায়।

 

 

তথ্যসূত্রঃ

[1]. আল কুরআন ৫২:২৪

[2]. আল কুরআন ৫৬:১৭

[3]. আল কুরআন ৭৬:১৯

[4]. তাফসীর ইবনে কাসিরঃ ১৭ নং খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৭৮ (বাংলা)

[5]. আল কুরআন ৫২:২০

[6]. আল কুরআন ১১:৮২

[7]. শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৫০৭৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-১৭০৩৩

[8]. https://queerhistory.blogspot.com/2011/09/abu-nuwas-islamic-poet-of-male-love.html