Pray for the world economy

নাস্তিকদের অসততা- আরো একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ : পর্ব-১

জাকির নায়েক আর কিছু করতে পারুক বা না পারুক, ওয়ার্ল্ডওয়াইড নাস্তিকদের ‘মাথাব্যথা’র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নিশ্চিত।

 

বাংলা নাস্তিকরা কোন মুসলিমকে কটাক্ষ করার আগে তাকে সরাসরি ‘জাকির নায়েকের চ্যালা’ ‘জাকির নায়েকের মুরিদ’ বলে থাকে।
জাকির নায়েকের নামকে বিকৃত করে তাকে ‘জোকার নায়েক’, এবং তার ছবিকে বিকৃত করে অসংখ্য কার্টুনও তারা বানিয়েছে এবং বানাচ্ছেও।

 

সে যাই হোক, জাকির নায়েক এবং উনার প্রতিষ্ঠিত ‘পিস টিভি’ কে গতবছর ভারত এবং বাংলাদেশে ব্যান করা হয় খুব সিলি একটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে।
ইস্যুটা ছিলো- ঢাকার গুলশানের জঙ্গী হামলার সাথে জড়িতদের কোন একজন টুইটার বা ফেইসবুকে জাকির নায়েকের ফলোয়ার ছিলো এবং কোন একসময়, জাকির নায়েকের কোন একটি লেকচার সে শেয়ার করেছিলো।
এ থেকে ধারণা করা হয় যে, সেই জঙ্গীটা ডক্টর জাকির নায়েক দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড হয়ে জঙ্গী কর্মকান্ডে জড়িয়েছে। মোদ্দাকথা, সেই জঙ্গীর সূত্র ধরে, জাকির নায়েক এবং উনার ‘পিস টিভি’ কে জঙ্গী কর্মকান্ডে উস্কানিদাতা হিসেবে দেখিয়ে ব্যান করে দেওয়া হয়।

 

জাকির নায়েক এবং উনার পিস টিভি ব্যান হওয়ার পর এদেশের মুক্তমনাদের মনে খুশির বন্যা বয়ে গেলো। সবাই খুশিতে বাক বাকুম বাক বাকুম করতে লাগলো। আহা! এতোদিনে সরকার একটা কাজের কাজ করেছে। এদেশের একজন নামকরা প্রফেসর, যিনি আবার নিজেকে বাক স্বাধীনতার পক্ষের লোক, অবাধ মত প্রকাশের (সে যার মত-ই হোক) পক্ষের লোক বলে জাহির করেন, যিনি নাস্তিক ব্লগারদের জন্য সবসময় মায়াকান্নায় ভেঙে পড়েন, তিনিও জাকির নায়েক এবং উনার টিভি ব্যান হওয়ার পর খুশিতে একখানা আর্টিকেল প্রসব করেছিলেন।

 

যা হোক, পয়েন্ট হলো- জাকির নায়েকের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই ছেলেটা জঙ্গী হয় এবং গুলশানে জঙ্গী কর্মকান্ডে জড়িয়ে এতোগুলো মানুষ খুন করে।
পয়েন্ট টু বি নোটেড- ছেলেটা জাকির নায়েককে ফলো করতো, এবং কোন এককালে জাকির নায়েকের একটা লেকচারের ভিডিও লিঙ্ক শেয়ার করেছিলো সোশ্যাল মিডিয়ায়।ছেলেটা যেহেতু জাকির নায়েককে ফলো করতো, সুতরাং, এখানে জাকির নায়েকও সমানভাবে দোষী। সুতরাং নাস্তিকদের অভিমত- জাকির নায়েক এবং তার টিভি চ্যানেল ব্যান হওয়াটা যৌক্তিক, ঠিক কাজ।
কারণ, জাকির নায়েক জঙ্গী কর্মকান্ডে উস্কানি দেয়।

 

এবার আরেকটা পয়েন্টে আসুন। বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইনকে তো চিনেন, তাই না?
হ্যাঁ, সেই চার্লস ডারউইন তার বিখ্যাত (যেটাকে বিবর্তনবাদের ‘বাইবেল’ গন্য করা হয়) বই ‘The Origin Of Species: By means Of Natural Selection’ এ পৃথিবীতে কীভাবে একটি এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রাণী এবং উদ্ভিদের বিবর্তন ঘটেছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।
যাহোক, সেই বইতে কোন কোন প্রাণীরা পরিবেশে টিকে থাকবে, সেটাও তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি এটার নাম দিয়েছিলেন- ‘Natural Selection’। বলা চলে, এই ন্যাচারাল সিলেকশানই তার পুরো থিওরির মূলমন্ত্র। এজন্যই, বইয়ের নামের সাথেই উনি এই নামটাও জড়িয়ে দিয়েছিলেন (By means Of Natural Selection)

 

Natural Selection এর মূল বক্তব্য হচ্ছে- ‘প্রকৃতিতে একটি অবিরাম সংগ্রাম চলছে। এই সংগ্রাম হলো টিকে থাকার সংগ্রাম। দিনশেষে, প্রকৃতিতে তারাই টিকবে, যারা যোগ্য। অযোগ্য, দূর্বলরা বিলুপ্ত হবে- এটাই প্রকৃতির নিয়ম। যারা দূর্বল, যারা সংগ্রামে টিকে থাকার অযোগ্য, তারা প্রকৃতিতে টিকে থাকবে না।
এটাকে Survival Of the Fittest বলা হয়।

 

আমি যখন একদিন এডলফ হিটলারের Mein Kampf ( My Struggle) বইটা পড়ছি, তখন ঠিক একদম এরকম, হুবহু ডারউইনের কথার মতোই কিছু বক্তব্য খুঁজে পেলাম।
তিনি তার বই Mein Kampf এর ২৩৯-২৪০ পৃষ্টায় লিখেছেন- ‘ If nature doesn’t wish that weaker individuals should mate with the stronger, she wishes even less that a superior race should intermingle with an inferior one; because in such cases all her efforts, throughout hundreds of thousands of years, to establish an evolutionary higher stage of being, may thus be rendered futile.
But, such a preservation goes hand-in-hand with the inexorable law that it is the strongest and the best who must triumph and that they have right to endure. he who would live, must fight. he who doesn’t wish to fight in this world, where permanent struggle is the law of life, hasn’t the right to exist’

 

খেয়াল করুন, Hitler লিখেছে ‘If Nature doesn’t wish’
Nature বলতে তিনি ঠিক কী বুঝালেন? ডারউইন যে Natural Selection এর কথা বলে গেছেন, সেটা নয়তো? Hitler এখানে স্পষ্টতই একটি Superior Race এবং Inferior Race এর কথা উল্লেখ করেছে এবং বলেছে, প্রকৃতিতে এটি বলবৎ আছে। দূর্বল আর সবলের মধ্যে সংঘাত।
ঠিক যে কথাগুলো ডারউইন তার ‘Origin Of Species’ এ বলেছে।
Hitler এরপরে বলেছে, – ‘ it is the strongest and the best who must triumph and that they have right to endure.’
অর্থাৎ, যারা সবল এবং সর্বোৎকৃষ্ট, তারাই টিকে থাকবে এবং থাকা উচিত।
(যে কথাগুলো একইভাবে ডারউইনেরও)
Hitler আরো লিখেছে- ‘he who doesn’t wish to fight in this world, where permanent struggle is the law of life, hasn’t the right to exist’

 

অর্থাৎ, সংগ্রামই যেখানে Law Of Life (Naturally) , সেখানে যারা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করবেনা, তাদের বেঁচে থাকার আদতে কোন অধিকার নেই।

 

Hitler ভাবতো, ইহুদীরা যেহেতু ম্লেচ্ছ, Inferior (তার দৃষ্টিতে), তাই প্রকৃতিতে তাদের বেঁচে থাকার কোন অধিকারই নেই। তাই সে সমানভাবে ৬০ লক্ষ ইহুদীকে গনহত্যার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত করে দেয়।
তাহলে, আমরা যদি দাবি করি, ডারউইনের The Origin Of Species: By means Of Natural Selection’ বই পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে Hitler এরকম গনহত্যা করেছে, তাহলে কি তা খুব যুক্তিবিরুদ্ধ হয়ে যাবে? যেখানে সে নিজেই Evolutionary higher Stage এর কথা উল্লেখ করেছে।
এরকম আমরা যদি Hitler এর এই অপরাধের জন্য ডারউইনকে দোষী সাব্যস্ত করি, তার মরণোত্তর (যদিও ইম্পসিবল) মৃত্যুদন্ড দাবি করি, কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে Theory Of Evolution পড়ানো বন্ধের দাবি তুলি, আমাদের নাস্তিক বন্ধুরা কি আমাদের সাথে একমত হবেন যেভাবে জঙ্গী কর্মকান্ডের সাথে জাকির নায়েকের Link করেছিলেন আপনারা? উত্তরের আশায় রইলাম।

 

(আমি বলছি না যে, হিটলারের কাজের জন্য ডারউইন দোষী। কিন্তু, একজন জঙ্গীর একটি সিলি ম্যাটার যদি জাকির নায়েককে বিচারের আওতায় আনে, হিটলারের ৬০ লক্ষ ইহুদি হত্যার জন্য ডারউইনকেও বিচারের আদালতে তোলা যায়)