Pray for the world economy

বাইতুল মামুর কী করে আসমানে কাবা ঘরের ঠিক উপরে থাকতে পারে যেখানে পৃথিবী নিজ অক্ষের উপরে ঘুরছে?

 

নাস্তিকদের একটি ব্লগে বাইতুল মা’মুর সংক্রান্ত হাদিসে ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ আছে বলে দাবি করা হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, হাদিস অনুযায়ী বাইতুল মা’মুর কা’বা শরীফের ঠিক উপরে সপ্তম আসমানে অবস্থিত। কিন্তু আমরা জানি পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণায়মান। তাহলে বাইতুল মা’মুর কাবা শরীফের ঠিক উপরে কিভাবে অবস্থান করে? হাদিসে আরো বলা হয়েছে বাইতুল মা’মুর এমনভাবে অবস্থান করছে যা পতিত হলে ঠিক কা’বার উপরে পতিত হতো। অথচ এটি প্রমাণিত বিষয় যে পৃথিবী স্থির নয় এবং এটি ক্রমাগত অবস্থান পরিবর্তন করছে; এটি নিজ অক্ষের উপর ঘুরছে আবার সূর্যকে কেন্দ্র করেও আবর্তন করছে।

বাইতুল মা’মুর সংক্রান্ত তথ্যের দ্বারা কি হাদিসের বৈজ্ঞানিক ভুল প্রমাণ হচ্ছে না?

 

এর উত্তরে শুরুতেই বলতে হবে যে এহেন প্রশ্ন উত্থাপনকারীরা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে চিন্তা করে। তারা আগে থেকেই ধরে রাখে কুরআন-হাদিসে ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ আছে। এরপর সে অনুসারে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। এ কারণে তারা হাদিসের বক্তব্যও ভালো করে খেয়াল করে না।

 

আমরা এ সংক্রান্ত হাদিসটি দেখে নিই –

 

وأخرج الطبري عن قتادة قال: ذكر لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: البيت المعمور مسجد في السماء بحذاء الكعبة، لو خرّ لخرّ عليها، يدخله سبعون ألف ملك كل يوم، إذا خرجوا منه، لم يعودوا. والحديث مرسل. قال الألباني: وإسناده مرسلًا صحيح.

অর্থঃ কাতাদাহ(র.) হতে তাবারী(র.) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “আমাদের নিকট উল্লেখ করা হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, বাইতুল মা'মুর হলো কা’বা বরাবর আকাশে অবস্থিত একটি মসজিদ। যদি তা পতিত হতো তাহলে অবশ্যই এর (কা’বার) উপরেই পতিত হতো। প্রতিদিন সেখানে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করেন, যাঁরা একবার বের হলে দ্বিতীয়বার আর সেখানে প্রবেশ করেন না।” এবং হাদিসটি মুরসাল। আলবানী(র.) বলেছেন, এর সনদ মুরসাল সহীহ। [1] 

 

পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর ঘুর্ণায়মান থাকা এবং সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তন করা সত্ত্বেও আকাশে এমন কোনো বস্তু কি থাকা সম্ভব, যা সবসময়ে পৃথিবীর কোনো একটা অঞ্চল বরাবর একই জায়গায় ‘স্থির’ থাকবে?

যারা পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে জানেন, তারা এর উত্তরে বলবেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই এটা সম্ভব।

এমন জিনিসের অস্তিত্ব আছে। যেমনঃ ভূস্থির উপগ্রহ (Geostationary Satellite)।

 

পৃথিবীর আবর্তনের সমগতি সম্পন্ন এক প্রকারের উপগ্রহ (Satellite) হলো ভূস্থির উপগ্রহ বা জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট। এই কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর আহ্নিক গতির সমান গতিতে পৃথিবীকে আবর্তন করার কারণে পৃথিবী ও কৃত্রিম উপগ্রহ উভয়ের পরিপ্রেক্ষিতে উভয়কে স্থির বলে মনে হয়। এর ফলে পৃথিবীর কোনো একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে পর্যবেক্ষণ করলে সারা বছরই আকাশে হুবহু একই স্থানে এই উপগ্রহকে দেখা যায়। [2] এই স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে বলা যায় - সেটি অমুক অঞ্চল বরাবর আছে এবং সেটি পতিত হলে এই অঞ্চলের উপরেই পতিত হবে।

 

সূত্রঃ https://archive.is/WGriy

 

সূত্রঃ https://archive.is/4k33z

 

ভূস্থির উপগ্রহ (Geostationary Satellite) কিভাবে কাজ করে তা সহজে বুঝবার জন্য এই ভিডিওটি দেখা যেতে পারে। -

Geostationary Satellite (YouTube)

https://youtu.be/XzhVK09YReA

 

পদার্থবিজ্ঞান বলে, কোনো বস্তু স্থিতিশীল না গতিশীল তা বোঝার জন্য বস্তুর আশপাশ থেকে আর একটা বস্তুকে নিতে হয় যাকে বলা হয় প্রসঙ্গ বস্তু। এ প্রসঙ্গ বস্তু ও আমাদের আলোচ্য বস্তুর অবস্থান যদি সময়ের সাথে অপরিবর্তিত থাকে তাহলে আলোচ্য বস্তুটি প্রসঙ্গ বস্তুর সাপেক্ষে স্থির বলে ধরা হয়। আলোচ্য বস্তু ও প্রসঙ্গ বস্তু যদি একই দিকে একই বেগে চলতে থাকে তাহলেও কিন্তু সময়ের সাথে বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের কোনো পরিবর্তন হবে না, যদিও প্রকৃতপক্ষে বস্তুটি গতিশীল। এ মহাবিশ্বে এমন কোনো প্রসঙ্গ বস্তু পাওয়া সম্ভব নয়, যা প্রকৃতপক্ষে স্থির রয়েছে। আমরা যখন কোনো বস্তুকে স্থিতিশীল বা গতিশীল বলি তা আমরা কোনো আপাত স্থিতিশীল বস্তুর সাপেক্ষে বলে থাকি। [3] পৃথিবী এবং এর সমান আহ্নিক গতিবিশিষ্ট ভূস্থির উপগ্রহকেও পরস্পরের সাপেক্ষে ‘স্থির’ ধরা যায়। পৃথিবীকে প্রসঙ্গ বস্তু ধরা হলে এই উপগ্রহ পৃথিবীর কোনো অঞ্চল বরাবর আকাশে আছে এমনটিও বলা যায়। এটা বলার অর্থ এই না যে পৃথিবী বা ভূস্থির উপগ্রহ কারো গতিশীলতাকে অস্বীকার করা হচ্ছে। যারা এই বিষয়গুলো জানেন, তাদের কাছে হাদিসের বক্তব্য থেকে কোনো ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ পাওয়ার কথা নয়।

 

যারা পদার্থবিজ্ঞান পড়েননি, তারাও বিষয়টা খুব সহজে বুঝতে পারবেন কিছু সাধারণ ঘটনার দ্বারা। ধরা যাক পাশাপাশি সমান গতিতে দুইটি বাস একই দিকে যাচ্ছে। বাস দুইটির গতি সমান হবার জন্য এক বাসের জানালা থেকে অন্য বাসকে ‘স্থির’ মনে হবে। আরো একটি উদাহরণ দেই। ধরা একটি ট্রাক যাচ্ছে, ট্রাকের উপরে একজন ব্যক্তি শুয়ে আছেন। তিনি দেখতে পাচ্ছেন আকাশে একটু গ্যাস বেলুন উড়ছে। গ্যাস বেলুনটি যদি বাতাসের কারণে ট্রাকের সমান গতিতে একই দিকে উড়তে থাকে, তাহলে ট্রাকে শুয়ে থাকা সেই ব্যক্তির কাছে মনে হবে আকাশে গ্যাস বেলুনটি স্থির হয়ে ভেসে আছে। যদিও সেটি আসলে ‘স্থির’ হয়ে নেই, ট্রাকটিও স্থির হয়ে নেই। একইভাবে মহাজাগতিক কোনো বস্তু যদি পৃথিবীর সমান কৌণিক বেগ নিয়ে আবর্তন করে, তাহলে সব সময়ে পৃথিবীর কোনো অঞ্চল বরাবর আকাশে সেই বস্তুটিকে দেখা যেতে পারে। সেই মহাজাগতিক বস্তুটি পৃথিবীর কোনো অঞ্চল বরাবর মহাশূন্যে আছে বা সেই মহাজাগতিক বস্তুটি পতিত হলে তা পৃথিবীর এই অঞ্চলের উপরে পতিত হবে – এমন কথা বলা কোনো সমস্যাপূর্ণ বিষয় না। বৈজ্ঞানিক ভুল না।

 

অনেক সময়ে ইসলামবিরোধীরা ইংরেজি অনুবাদে ‘Heaven’ শব্দটি দেখে আসমান এবং জান্নাতকে মিলিয়ে ফেলে এবং হাদিসের বিরুদ্ধে ভুলভাল অভিযোগ আনে। অথচ এগুলো এক জিনিস নয়। জান্নাতের অবস্থান ৭ম আসমানের উপর। [4]

 

আমরা কি তাহলে দাবি করছি যে বাইতুল মা’মুর ঠিক ভূস্থির উপগ্রহের মতো করে পৃথিবীকে আবর্তন করছে? উত্তর হচ্ছেঃ না। আমরা মোটেও বাইতুল মা’মুরের ব্যাপারে এমন কিছুই দাবি করছি না। আমরা বাইতুল মা’মুরকে মোটেও ভূস্থির উপগ্রহের সাথে তুলনা করছি না। আমরা এ ব্যাপারে ঠিক ততোটুকুই বলি যা কুরআন ও সহীহ হাদিসে আছে। বাইতুল মা’মুর আসমানে ফেরেশতাদের মসজিদ, এটি অবশ্যই পৃথিবীর মসজিদের মতো নয়। বাইতুল মা’মুর কী উপায়ে কা’বা বরাবর আসমানে অবস্থান করছে এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সঠিক জ্ঞান রাখেন। আমরা এর উপরে ঈমান রাখি। এতক্ষণ ভূস্থির উপগ্রহের কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে - গতিশীল পৃথিবীর ক্ষেত্রে “কা’বা বরাবর আকাশে অবস্থিত একটি মসজিদ, যদি তা পতিত হতো তাহলে অবশ্যই এর উপরেই পতিত হতো” --  এমন বক্তব্যকে যারা ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ বলে, তাদের দাবির অসারতা দেখানো। আমাদের জানা বস্তুর ক্ষেত্রেই (ভূস্থির উপগ্রহ) এমনটি হওয়া সম্ভব। সেখানে বাইতুল মা’মুরের ক্ষেত্রে এমনটি বলাকে ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ বলে অভিহীত করা মোটেও যৌক্তিক নয়। বিজ্ঞান দিয়ে হাদিসকে যাচাই করা এখানে উদ্দেশ্য নয় বরং বিজ্ঞানবাদে আক্রান্তদের ভ্রান্তির দিকটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া উদ্দেশ্য। হাদিসের মাঝে কোনো ভুল নেই। যারা হাদিস থেকে ভুল বের করতে চেয়েছে তাদের বিশ্লেষণেই ভুল আছে।

 

 

তথ্যসূত্রঃ


[1] هل البيت المعمور بمحاذاة العرش وكيف يستقيم ذلك مع دوران الأرض - إسلام ويب - مركز الفتوى

https://www.islamweb.net/ar/fatwa/14859/

অথবা https://archive.is/wip/KeMFM (আর্কাইভকৃত)

[2] What is geostationary satellite_ - Definition from WhatIs.com

https://www.techtarget.com/searchmobilecomputing/definition/geostationary-satellite

অথবা https://archive.is/wip/Bevvk (আর্কাইভকৃত)

Geostationary Satellite - an overview _ ScienceDirect Topics

https://www.sciencedirect.com/topics/earth-and-planetary-sciences/geostationary-satellite

অথবা https://archive.is/wip/OunzZ (আর্কাইভকৃত)

[3] দেখুনঃ পদার্থবিজ্ঞান ১ম পত্র (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি) – শাহজাহান তপন, পৃষ্ঠা ১৪৩

পদার্থবিজ্ঞানের এই বিষয়গুলো বোঝার জন্য মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান বইগুলো থেকে ‘গতিবিদ্যা’ অংশগুলো পড়া যেতে পারে।

https://mega.nz/folder/W5U2AQRT#qse0xujr85WG8JADIc15qQ

https://drive.google.com/file/d/14OmUNo5B94uclYc7_Btdt_6Z_6KkTvCT/view

[4]The Garden of Refuge is above the seventh heaven as confirmed in authentic Prophetic narrations reported by Al-Bukhari and Muslim  may  Allaah  have  mercy  upon  them. Moreover, the Prophet  sallallaahu  `alayhi  wa  sallam ( may  Allaah exalt his mention ) informed us that the roof of Al-Firdaws (the highest rank in Paradise) is The Throne of Allaah, and The Throne is above the seventh heaven.

Anas ibn Maalik  may  Allaah  be  pleased  with  him was asked about the location of Paradise whether it is in the heaven or on this earth and he  may  Allaah  be  pleased  with  him responded: “Which heaven or earth could encompass Paradise?” He was asked: “Where is it then?” He  may  Allaah  be  pleased  with  him answered: “It is above the seven heavens underneath The Throne.” Indeed, there are many texts proving this.”

From: “The location of Paradise now” (Islam Web)

https://www.islamweb.net/en/fatwa/107126/

অথবা https://archive.is/wip/AyQ4x (আর্কাইভকৃত)