Pray for the world economy

মুসলিমদের দুরাবস্থা এবং ইসলামের সত্যতা

 

এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে মুসলিম উম্মাহ। দিকে দিকে ধ্বংস আর গণহত্যার কবলে পড়ছে তারা। কোথাও তাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হচ্ছে। আবার কোথাও তারা কপদর্কহীন অবস্থায় দেশত্যাগ করছে, উদ্বাস্তু হচ্ছে। আমাদের বোনদের ইজ্জত এখন মুশরিকদের কাছে খেলনার বস্তু! যখন ইচ্ছা তারা এটা নিয়ে খেলতে পারে। এমনকি দুধের শিশুরাও ছাড়া পাচ্ছে না। অনাহারে, অর্ধাহারে, বোমার আঘাতে- ওরা ওদের রবের নিকট চলে যাচ্ছে এ নিষ্ঠুর পৃথিবীর ওপর একরাশ অভিমান নিয়ে। সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইরাক, আরাকান, কাশ্মির – মুসলিমরা সর্বত্রই শুনছে ধ্বংস আর মৃত্যুর পদধ্বনি। মুসলিমদের এই দুরাবস্থা দেখে অনলাইন জগতে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের ঝড় তুলছে ইসলামের শত্রু নাস্তিক-মুক্তমনারা। তারা অট্টহাস্য করে বলে চলছে (অথবা লিখে যাচ্ছে) – ইসলাম যদি সত্য ধর্ম হত, তাহলে মুসলিমদের আজ এই অবস্থা কেন? তারা এইভাবে মার খায় কেন? ইহুদি-খ্রিষ্টানরা যদি এতই খারাপ হত, তাহলে তারা আজ এত ভালো অবস্থায় কেন? মুসলিমরা তাদের হাতে এভাবে ‘সাইজ’ হয় কেন? আল্লাহ যদি থেকেই থাকেন, তিনি মুসলিমদের রক্ষা করেন না কেন? তাদের এই ক্রমাগত বিদ্বেষমূলক অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক সময় সরপ্রাণ মুসলিমদের মনেও এ প্রশ্নের উদ্রেক হয় – মুসলিমদের এত দুরাবস্থা কেন? অন্য ধর্মের লোকদের তো এমন হয় না! বরং কত সমৃদ্ধিতেই না তারা বাস করে।

 

প্রথম কথাঃ নাস্তিক-মুক্তমনাদের এই নির্দয় পরিহাস প্রমাণ করে যে তারা মোটেও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ না, তারা মোটেও ‘মানবতাবাদী’ না। তারা আসলে ইসলামবিদ্বেষী এবং ইহুদি-খ্রিষ্টানদের অনুরাগী এক সম্প্রদায় যারা স্বঘোষিত ‘ইউরোপপন্থী’। সাদা চামড়ার একজন ইহুদি বা খ্রিষ্টান নিহত হলে তাদের আর্তনাদে অনলাইন জগত ভারী হয়ে ওঠে। আর সে ঘটনার সাথে মুসলিম নামধারী কেউ জড়িত থাকলে তো কথাই নেই। ইসলামকে জঙ্গী-সন্ত্রাসী ধর্ম বলে তারা তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে থাকে। ওদিকে রাশিয়ার অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী সিরিয়ার নিরীহ বেসামরিক মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালিয়ে গেলেও তাদেরকে মোটেও বিচলিত হতে দেখা যায় না। খোঁজ নিলে দেখা যায় যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট একজন ধার্মিক অর্থোডোক্স খ্রিষ্টান। [1] কিন্তু তাদের কাছে খ্রিষ্টানরা মোটেও ‘জঙ্গী- বর্বর’ না। কিংবা আরাকানে বৌদ্ধ সন্যাসীরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের মেরেকেটে সাফ করে দিতে চাইলেও [2] তাদের কখনো বৌদ্ধ ধর্মকে ‘সন্ত্রাসী ধর্ম’ বলতে দেখা যায় না। কাজেই মুসলিমদের কখনোই উচিত না এইসব হিপোক্রিট নাস্তিক-মুক্তমনাদের কথাকে গুরুত্ব দেয়া।

 

দ্বিতীয় কথাঃ যে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সমৃদ্ধির কথা বলে মুসলিমদের ব্যাঙ্গ করা হয়, খোদ সেই ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ দ্বারাই এটা প্রমাণিত যেঃ সত্য ধর্মের অনুসারীরাই বিধর্মীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়, গণহত্যার শিকার হয় ও গৃহহারা হয়। এবং সব শেষে সত্য ধর্মের অনুসারীদেরকেই স্রষ্টা রক্ষা করেন।

 

বাইবেলের পুরাতন নিয়ম অংশ (Old Testament)কে ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয় ধর্মের অনুসারীরা ঈশ্বরের বাণী হিসাবে বিশ্বাস করে। এই পুরাতন নিয়ম অংশের গ্রন্থ যাত্রাপুস্তক(Exodus) এ উল্লেখ আছে – বনী ইস্রাঈল জাতিকে মিসরের ফিরাউন কী অমানুষিক নির্যাতন করত। তাদেরকে বহু যুগ ধরে কৃতদাসের মত রাখা হত, অমানবিকভাবে পরিশ্রম করানো হত, এমনকি তাদের ছেলে শিশুদের হত্যা করা হত। [3] অবশেষে ঈশ্বর তাদের ফরিয়াদ শোনেন এবং ভাববাদী মোশির [নবী মুসা (আ.) / prophet Moses] দ্বারা তাদেরকে এ দশা থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। [4] বাইবেলে আরো উল্লেখ আছে যে, এর শত শত বছর পরে বনী ইস্রাঈল জাতির মানুষেরা ঈশ্বরের বিধান থেকে দূরে সরে গিয়ে পাপে লিপ্ত হলে ঈশ্বর তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হন। তিনি অবিশ্বাসী জাতির দ্বারা বনী ইস্রাঈলের মানুষদেরকে শাস্তি দেন। ব্যাবিলনের রাজা বখত নাসর (Nebuchadnezzar/নবূখদ্নিত্‌সর) জেরুজালেমের মহামন্দির (Temple Mount / আল আকসা মসজিদ) পুড়িয়ে দেয় ও জেরুজালেম নগরী ধ্বংস করে দেয়। স্ত্রী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, সুস্থ-অসুস্থ, যিহুদা ও জেরুজালেমের সমস্ত ব্যক্তিকে নির্বিচারে হত্যা করে আর যারা বেঁচে ছিল তাদেরকে কৃতদাস বানিয়ে বন্দী করে ব্যাবিলনে নিয়ে যায়। [5] কিন্তু ঈশ্বর তাদেরকে পুনরায় উদ্ধার করেন। ৭০ বছর পরে ইষ্রা (Ezra / উজাইর) এর নেতৃত্বে বনী ইস্রাঈলের মানুষের আবার জেরুজালেমে ফিরে আসে। [6] এরপর তারা পুনরায় মহামন্দির নির্মাণ করে। শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রকৃত বিশ্বাসীদের জয় হয়।

 

বাইবেলের নতুন নিয়ম (New Testamnt) অংশে উল্লেখ আছে, যিশু খ্রিষ্টের [ঈসা (আ.)] অনুসারীদের উপর কী ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছে। যিশুর অনুসারী স্তিফানকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। [7] যাকোবকে(James) হত্যা করা হয়, পিতরকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। [8] বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রেও জানা যায় যে ১ম শতাব্দীতে খ্রিষ্টানদের উপর বহু নির্যাতন চালানো হয়েছে। তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালিয়ে যেতেন, তাদের উপর জুলুম চালিয়ে হত্যা করে ফেলা হত। [9] বাইবেলে যিশু বলছেন যে তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি বিশ্বাসীদের নিকট পুনরাগমন করবেন।

 

‘ভাই ভাইকে এবং বাবা ছেলেকে মৃত্যুদণ্ডের জন্য ধরিয়ে দেবে৷ ছেলেমেয়েরা বাবা-মার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে৷ আমার নামের জন্য সকলে তোমাদের ঘৃণা করবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে স্থির থাকবে সে-ই রক্ষা পাবে৷ যখন তারা এক শহরে তোমাদের ওপর নির্য়াতন করবে, তখন তোমরা অন্য শহরে পালিয়ে যেও৷ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মানবপুত্র [যিশু] ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমরা ইস্রায়েলের সমস্ত শহরে তোমাদের কাজ শেষ করতে পারবে না৷” [10]

 

অর্থাৎ সত্যিকারের বিশ্বাসীরা নির্যাতিত হয়, হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়, নিজ বাসভূমি থেকে উচ্ছেদও হয়, কিন্তু এর মানে এই নয় যে তাদের আদর্শ মিথ্যা। শেষ পর্যন্ত বিজয় স্রষ্টার সত্যিকার বিশ্বাসীদেরই হয়। সমৃদ্ধ অবস্থায় থাকা আর শক্তিশালী হবার অর্থই এটা নয় যে কেউ সঠিক পথে আছে। এটাই ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থের বক্তব্য। অথচ এই ইহুদি-খ্রিষ্টানদের উদাহরণ টেনে মুসলিমদের বিব্রত করতে চায় নাস্তিক-মুক্তমনারা।

বনী ইস্রাঈল জাতির উপর অত্যাচারকারী মিসরের ফিরাউন কিংবা ব্যাবিলনের রাজা বখত নাসর এরাও বহু শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ ছিল। ১ম শতকে খ্রিষ্টানদের উপর জুলুম চালানো রোমান শাসকরাও অনুরূপ শক্তিশালী ছিল। ইহুদি আর খ্রিষ্টানরা ছিল দুর্বল। আজ যেমন মুসলিমরা দুর্বল আর ইহুদি- খ্রিষ্টানরা শক্তিশালী।

ইসলামের সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া তো অনেক দূরের কথা, বরং ইহুদি-খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ দ্বারা এখানে ইসলামের সত্যতাই প্রমাণিত হচ্ছে!

 

ইসলামী বিশ্বাস হচ্ছে - ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের পূর্বসুরীরা ছিল নবীদের অনুসারী এবং তারাও ছিল মুসলিম। আল কুরআনেও বনী ইস্রাঈলের প্রতি ফিরাউনের জুলুমের কথা উল্লেখ আছে,

 

“এবং যখন আমি তোমাদেরকে ফিরআউনের সম্প্রদায় হতে বিমুক্ত করেছিলাম - তারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করত, তোমাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের কন্যাদেরকে জীবিত রাখত। আর এতে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ছিল মহা পরীক্ষা। এবং যখন আমি তোমাদের জন্য সমুদ্রকে বিভক্ত করেছিলাম, অতঃপর তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম ও ফিরআউনের স্বজনদেরকে নিমজ্জিত করেছিলাম এবং তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে।” [11]

 

আল কুরআনে বনী ইস্রাঈলের ২ বার জমিনে ফিতনা তৈরি ও আল্লাহ্‌র বান্দাদের দ্বারা আযাবের শিকার হবার কথা উল্লেখ আছে।

 

“এবং আমি কিতাবে প্রত্যাদেশ দ্বারা বনী ইস্রাঈলকে জানিয়েছিলাম, নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুই বার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ঔদ্ধত্য দেখাবে মারাত্মকভাবে। অতঃপর এই দুই এর প্রথমটির নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হল তখন আমি তোমাদের উপর আমার কিছু বান্দা পাঠালাম, যারা কঠোর যুদ্ধবাজ। অতঃপর তারা ঘরে ঘরে ঢুকে ধ্বংসযজ্ঞ চালাল। আর এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল। তারপর আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জন্য পালা ঘুরিয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সাহায্য করলাম ও সংখ্যাগরিষ্ঠ করলাম। তোমরা সৎ কাজ করলে তা নিজেদেরই জন্য করবে এবং মন্দ কাজ করলে তাও করবে নিজেদের জন্য; অতঃপর পরবর্তী নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে (অন্য বান্দাদের প্রেরণ করলাম) যাতে তারা তোমাদের চেহারাসমূহ মলিন করে দেয়, আর যেন মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন ঢুকে পড়েছিল প্রথমবার এবং যাতে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয় যা ওদের কর্তৃত্বে ছিল। আশা করা যায় তোমাদের প্রভু তোমাদের উপর রহম করবেন। কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের পূর্ব আচরণের পুনরাবৃত্তি কর তাহলে তিনিও তাঁর আচরণের পুনরাবৃত্তি করবেন

 জাহান্নামকে আমি করেছি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য কারাগার।” [12]

 

ঈসা (আ.) এর সত্যিকার অনুসারীদেরকে নির্যাতন করে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলবার একটি ঘটনাও আল কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

“ধ্বংস হয়েছে গর্তের অধিপতিরা, (যাতে ছিল) ইন্ধনপূর্ণ আগুন। যখন তারা এর পাশে উপবিষ্ট ছিল; এবং তারা মু’মিনদের সাথে যা করেছিল তা প্রত্যক্ষ করছিল। তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এ কারণে যে, তারা সেই মহিমাময় পরাক্রান্ত প্রশংসাভাজন আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল। আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব যাঁর। আর আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী। যারা মুমিন নর-নারীকে বিপদাপন্ন করেছে এবং পরে তাওবা করেনি, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি ও দহন যন্ত্রণা। নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। এটাই বিরাট সফলতা।” [13]

 

হাদিসে উল্লেখ আছে - পূর্ব যুগের মুমিনদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তাঁর জন্য গর্ত খুঁড়ে তাঁকে এর মধ্যে রাখা হত। এরপর তাঁর মাথার উপর করাত চালিয়ে দু’খণ্ড করে ফেলা হত। কারো কারো দেহের গোশতের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। কিন্তু এই কঠোর পরীক্ষাও তাঁকে তাঁর দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। [14] আগুনে পুড়ে মরা কিংবা করাতের আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়া সেই মুমিনরা ছিল প্রকৃত বিজয়ী কেননা আখিরাতে কেবল মুমিন বা বিশ্বাসীরাই জান্নাতবাসী হবে। সেটি হচ্ছে চিরস্থায়ী সুখের আবাস। যদিও পার্থিব দৃষ্টিতে তাদেরকে পরাজিত বলে মনে হয়।

 

আজকের পৃথিবীতে মুসলিমরা দুর্দশায় নিপতিত , ঠিক যেরূপে অতীতে নবীদের অনুসারীরাও দুর্দশায় নিপতিত হত। এই ব্যাপারটি কুরআন, হাদিস, বাইবেল – সকল সূত্র থেকে প্রমাণিত। মুসলিমদের নিকট বাইবেল কোন দলিল নয় বরং কুরআন-হাদিসের দলিলই মুসলিমদের জন্য যথেষ্ট।

 

বর্তমানে মুসলিমরা নিজ দ্বীন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন শাস্তি ও পরীক্ষায় নিপতিত হচ্ছে। আল্লাহ চান মানুষ যেন তাঁর দ্বীনে ফিরে আসে। আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ

 

“স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।” [15]

 

বর্তমান এই দুরাবস্থা মুসলিমদের জন্য পরীক্ষাও বটে। আল কুরআন বলা হয়েছেঃ

 

“এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্য ধারণকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, “নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।

তারাই সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েতপ্রাপ্ত।” [16]

 

হাদিসে বলা হয়েছে - মুমিন কোন দুশ্চিন্তা, রোগ-ব্যধি, বিপদে নিপতিত হলে এমনকি একটি কাঁটা ফুটলেও এর বিনিময়ে তার গুনাহ মোচন হয় এবং সওয়াব লাভ করে। [17] কাজেই মুমিনদের জন্য হারানোর কিছুই নেই। ইহুদি, খ্রিষ্টান, শিয়া বা ধর্মহীনরা মুসলিমদের উপর যতই জুলুম করুক, যতই দুর্দশা নেমে আসুক, মুসলিমদের জন্য এগুলো পরীক্ষা ও গুনাহ মাফের উপলক্ষ। কিন্তু এই জুলুমগুলো যারা করছে পরকালে কঠোর শাস্তি হবে তাদের পরিনতি। তাদের চাকচিক্য বা সমৃদ্ধি প্রকৃত মুমিনদেরকে মোটেও বিভ্রান্ত করতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা এভাবেই মানুষের মাঝে ভালো ও খারাপ অবস্থানের আবর্তন ঘটান। এবং সব শেষে আল্লাহভীরু মুসলিমদেরই বিজয় ও শুভ পরিনতি নির্ধারিত।

 

আমরা যদি আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান নিয়ে বাঁচতে পারি, তবে আমাদের হারানোর কিছু নেই। এ পৃথিবীতে  সুখের দেখা না পেলেও একদিন জান্নাতে আমরা সুখের দেখা পাবো। ক্লান্তি শেষে বিশ্রাম নেবো। 

পরাজিত হয়েও তাই আমরা জয়ী। আমাদের মাঝে তাই অনন্ত আশা। নাস্তিক-মুক্তমনাদের আশা কোথায়?

 

“নগরীতে কাফিরদের চাল-চলন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয়। এটা হলো সামান্য ফায়দা - এরপর তাদের ঠিকানা হবে দোযখ। আর সেটি হলো অতি নিকৃষ্ট অবস্থান।

কিন্তু যারা ভয় করে নিজেদের পালনকর্তাকে তাঁদের জন্যে রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সদা আপ্যায়ন চলতে থাকবে। আর যা আল্লাহর নিকট রয়েছে, তা সৎকর্মশীলদের জন্যে একান্তই উত্তম।[18]

 

“আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।

তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।

আর এ কারণে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করতে চান এবং কাফিরদেরকে ধবংস করে দিতে চান।[19]

 

“এই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। আল্লাহভীরুদের জন্যেই শুভ পরিণাম।

যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, তার জন্য আছে এর চেয়েও উত্তম ফল। আর যারা মন্দ কাজ করে, তারা যা করেছে তাদেরকে শুধু তারই শাস্তি দেয়া হবে।”  [20]

 

 

তথ্যসূত্রঃ

[1]  ■ “Putin and the 'triumph of Christianity' in Russia _ Russia _ Al Jazeera”

https://www.aljazeera.com/blogs/europe/2017/10/putin-triumph-christianity-russia-171018073916624.html

■ “Putin Hails 'Eternal Christian Values' Amid Orthodox Christmas Celebrations”

https://www.rferl.org/a/putin-christmas-russia-belarus-georgia-kazakhstan-macedonia-moldova-serbia-ukraine-armenia/28959952.html

[2]  “‘It only takes one terrorist’_ the Buddhist monk who reviles Myanmar’s Muslims _ Marella Oppenheim _ Global development _ The Guardian”

https://www.theguardian.com/global-development/2017/may/12/only-takes-one-terrorist-buddhist-monk-reviles-myanmar-muslims-rohingya-refugees-ashin-wirathu

[3]  বাইবেল, যাত্রাপুস্তক (Exodus) ১ : ১১-২২

[4]  বাইবেল, যাত্রাপুস্তক (Exodus) ৩ : ৬-১০ দ্রষ্টব্য

[5]   ■ বাইবেল, ২ বংশাবলী (2 Chronicles) অধ্যায় ৩৬ দ্রষ্টব্য

 বাইবেল, ২ রাজাবলী (2 Kings) অধ্যায় ২৫ দ্রষ্টব্য

[6]  বাইবেল, ইষ্রা (Ezra) ৮ : ৩২ দ্রষ্টব্য

[7]  বাইবেল, শিষ্যচরিত (Acts) অধ্যায় ৭ দ্রষ্টব্য

[8]  বাইবেল, শিষ্যচরিত (Acts) অধ্যায় ১২ দ্রষ্টব্য

[9]  ■ “BBC - History - Ancient History in depth_ Christianity and the Roman Empire”

http://www.bbc.co.uk/history/ancient/romans/christianityromanempire_article_01.shtml

■ “Persecution in the Early Church_ Did You Know_ _ Christian History”

http://www.christianitytoday.com/history/issues/issue-27/persecution-in-early-church-did-you-know.html

[10]  বাইবেল, মথি (Matthew) ১০ : ২১-২৩

[11]  আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ৪৯-৫০

[12]  আল কুরআন, বনী ইস্রাঈল (ইসরা) ১৭ : ৪-৮

[13]  ■ আল কুরআন, বুরুজ ৮৫ : ৪-১১

■ বিস্তারিত ঘটনাটি উল্লেখ আছে সহীহ মুসলিমের ৭২৩৯ নং হাদিসে। হাদিসটি এখান থেকে পড়ুনঃ https://goo.gl/1dr1Tm

■ ইবন হিশামের ‘সীরাতুন নবী (স)’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, তারা ছিল ঈসা (আ.) সত্যিকারের ধর্মে বিশ্বাসী অর্থাৎ মুসলিম। আর তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিল ইয়েমেনের ইহুদি রাজা যু নাওয়াস।

দেখুনঃ ‘সীরাতুন নবী (স)’ – ইবন হিশাম, ১ম খণ্ড [ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ], পৃষ্ঠা ৬৫-৬৮

[14] দেখুন সহীহ বুখারী ৩৬১৬, ৫৬৫৬, ৫৬৬২, ৭৪৭০; রিয়াদুস সলিহীন ৪২

[15]  আল কুরআন, রুম ৩০ : ৪১

[16]  আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ১৫৫-১৫৭

[17]  সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৫৪ – ৬৪৬৩ দ্রষ্টব্য। হাদিসগুলো এখান থেকে দেখা যেতে পারে।

[18]  আল কুরআন, আলি ইমরান ৩ : ১৯৬-১৯৮

[19]  আল কুরআন, আলি ইমরান ৩ : ১৩৯-১৪১

[20]  আল কুরআন, কাসাস ২৮ : ৮৩-৮৪