Pray for the world economy

মুসা(আ) এর সময়কালে সামেরির(Samaritan) অস্তিত্বঃ কুরআনের ঐতিহাসিক বর্ণনায় কি ভুল আছে?

 

আল কুরআনে মুসা(আ) ও বনী ইস্রাঈলের ঘটনায় একজন সামেরির কথা উল্লেখ আছে। মুসা(আ) যখন বনী ইস্রাঈলকে রেখে তুর পাহাড়ে যান, তখন এই সামেরি তাদেরকে গরুর বাছুরের মূর্তিপুজার দিকে আহ্বান করে পথভ্রষ্ট করে। কুরআনে বলা হয়েছেঃ

 

হে মুসা, তোমার সম্প্রদায়কে পেছনে ফেলে তুমি ত্বরা করলে কেন?

তিনি বললেনঃ এই তো তারা আমার পেছনে আসছে এবং হে আমার পালনকর্তা, আমি তাড়াতাড়ি তোমার কাছে এলাম, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও।

বললেনঃ আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছি তোমার পর এবং সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে।

(কুরআন, ত্ব-হা ২০:৮৩-৮৫)

মুফাসসিরদের থেকে আমরা জানতে পারি - সামেরি কোন ব্যক্তির নাম নয়। বরং সে সময় সামেরি নামে এক গোত্র ছিল; এবং তাদের এক বিশেষ ব্যক্তি ছিল বনী ইস্রাঈলের মধ্যে স্বর্ণ নির্মিত গরুর বাছুর পুজার প্রচলনকারী এ সামেরি। [1]

 

সামেরি সম্পর্কে আরো তথ্য আছে সুরা ত্ব-হা’র ৯৭ নং আয়াত পর্যন্ত। আয়াতগুলো এখান থেকে দেখতে পারেন।

 

সামেরি(السَّامِرِيُّ /Samaritan) কারা? :

আরবি ভাষায় সামেরি(السامري) কথাটির মানে হচ্ছে Samaritan। [2]  সামেরি(শমরীয়) বা সামারিটান কারা? সামারিটান হচ্ছে ইহুদি ধর্মের সাথে সম্পর্কিত একটি ধর্মীয় জাতি যারা প্রাচীন ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যের(North Kingdom) সাথে সম্পর্কিত। তারা নিজেদেরকে মুসা(আ) এর ধর্মের প্রকৃত অনুসারী মনে করে, ইউসুফ(আ) এর বংশধর ও উত্তরাধিকার মনে করে। তারা জেরুজালেমের বদলে মাউন্ট গেরিজিমকে তাদের ধর্মীয় কেন্দ্র মনে এবং তাওরাতকে নিজেদের কিতাব মনে করে। ইহুদিদের তাওরাত এবং তাদের তাওরাতে বেশ পার্থক্য আছে। [3] খুব সংক্ষেপে এই হচ্ছে সামেরি বা শমরীয় জাতির পরিচয়।

 

খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা লিখেছেন যে, ইহুদি ও সামেরিদের মধ্যে বহুকাল ধরে চলে আসছে এক অন্তহীন দ্বন্দ্ব যার শেকড় লুকিয়ে আছে বনী ইস্রাঈলের একেবারে সূচনায়, ইয়াকুব(আ) এর সময় থেকে যখন ইউসুফ(আ) এর বিরুদ্ধে তাঁর ভাইয়েরা ষড়যন্ত্র করে। সামেরিরা নিজেদের সম্পৃক্ত করে ইউসুফ(আ) এর সাথে অপরদিকে ইহুদিরা নিজেদের সম্পৃক্ত করে ইউসুফ(আ) এর ভাই ইহুদার সাথে। [4] ইহুদি ও সামেরিদের এ শত্রুতার ছাপ দেখা যায় খ্রিষ্টান বাইবেলের নতুন নিয়মেও(New testament), যেখানে সামেরিরা সাধারণভাবে খারাপ মানুষ। ব্যতিক্রমদেরকে আখ্যায়িত করা হয় ‘Good Samaritan’ নামে। [5] বাইবেলের পুরাতন নিয়মের(Old testament) বইগুলো ইহুদিদের লেখা, তাই এ বইগুলোতে মূলত সামেরিদের প্রতি ইহুদিদের মনোভাব উঠে এসেছে। এ কারণে বাইবেলের বিবরণ থেকে সামেরিদের সম্পর্কে বেশীরভাগই নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যায়।

 

ইসলামবিরোধীদের অভিযোগঃ

আল কুরআনে মুসা(আ) এর সময়কালে একজন সামেরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলাম বিদ্বেষী খ্রিষ্টান মিশনারী, ওরিয়েন্টালিস্ট এবং নাস্তিক-মুক্তমনাদের মতে এটি কুরআনের ঐতিহাসিক বর্ণনার একটি ভুল(নাউযুবিল্লাহ)।

তাদের মতেঃ-

মুসা(আ) এর সময়কালে সামেরি জাতির কোন অস্তিত্ব ছিল না; সামেরি জাতির উদ্ভব হয় মুসা(আ) এর সময় থেকে বহু পরে প্রাচীন ইহুদিদের ২টি রাজ্য গঠন হবার পরে। বাইবেলের বিবরণ অনুযায়ী, নবী সুলাইমান(আ) এর রাজত্বের পরবর্তী সময়ে বনী ইস্রাঈলের রাজ্য ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি হচ্ছে উত্তর রাজ্য(Northern Kingdom) যার আরেক নাম ছিল ইস্রায়েল, আরেকটি হচ্ছে দক্ষিণ রাজ্য(Southern Kingdom) যার আরেক নাম ছিল ইহুদা(Judah)। বনী ইস্রাঈলের মানুষেরা ভাগ হয়ে এই ২ রাজ্যে বসবাস করত। উত্তর রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল সামারিয়া। ৭২১ বা ৭২২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এ্যাসিরিয়রা উত্তর রাজ্যকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়। ফলশ্রুতিতে সে রাজ্যের অধিবাসীদের অনেকে মারা পড়ে, কেউ কেউ এ্যাসিরিয়া ও বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে যায়। এ্যাসিরিয়ার রাজা Esarhaddon ব্যাবিলন এবং আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের উত্তর রাজ্যে(ইস্রায়েল) নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে নতুন বসতি স্থাপনকারীদের সাথে টিকে থাকা বনী ইস্রাঈলীদের কিছু মিশ্রণ ঘটে এবং এক মিশ্র জাতিগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে।

 

দক্ষিণ(ইহুদা) রাজ্যের মানুষদের বংশধরেরা অনেক পরবর্তীতে নিজেদের ‘ইহুদি’(Jew) বলে পরিচয় দিতে শুরু করে এবং নিজেদেরকে বিশুদ্ধ রক্তের বনী ইস্রাঈলী বলে দাবি করে {{ যদিও ব্যাবিলনীয় এবং রোমকদের আক্রমনে ২ বার তাদের রাজ্য ও Temple Mount(বাইতুল মাকদিস) ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তারা বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে যায় এবং তাদের সাথেও বিভিন্ন জাতির মিশ্রণ ঘটে }}। ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মালম্বীরা ধারনা করে যে, উত্তর রাজ্যের এই মিশ্রিত জাতিগোষ্ঠীই হচ্ছে সামেরি জাতি এবং উত্তর রাজ্যের রাজধানী সামারিয়ার নামানুসারে তাদের নামকরণ করা হয়েছে। তারা সামেরি জাতিকে এক মিশ্র জাতি হিসাবে গণ্য করে যাদের ভেতর ইস্রায়েলী ও অইস্রায়েলী বিভিন্ন জাতির রক্ত আছে। বাইবেলনির্ভর বিভিন্ন সূত্রগুলো থেকে এ সব তথ্যই পাওয়া যায়। [6]  

 

ইসলামবিরোধী লেখকদের মতে, ৭২১ বা ৭২২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের আগে সামেরি(Samaritan) কথাটির উদ্ভবই হয়নি কাজেই কুরআনে উল্লেখিত মুসা(আ) এর সময়কালে সামেরির উপস্থিতির তথ্য সঠিক নয়। এ নিয়ে বহু আর্টিকেল খ্রিষ্টান মিশনারী আর নাস্তিকরা লিখেছে। চলুন ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণের আলোকে যাচাই করে দেখি কোন দাবিটি সত্য—কুরআনের দাবি নাকি ইসলামবিরোধীদের দাবি।

 

অভিযোগের বিশ্লেষণ ও খণ্ডনঃ

মুসা(আ) এর সময়কালে সামেরিদের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়—এ কথার স্বপক্ষে ইসলামবিরোধীরা বেশ কিছু যুক্তি উপস্থাপন করে। সেগুলো হচ্ছেঃ

 

১। সামেরিদের নামকরণ করা হয়েছে সামারিয়া শহরের নাম থেকে। অথচ এই শহরের উৎপত্তি হয়েছে মুসা(আ) এর কয়েক শ’ বছর পরে। যাদের নামকরণের উৎসই মুসা(আ) এর সময় থেকে অনেক পরে, কী করে মুসা(আ) এর সময়ে তাদের অস্তিত্ব থাকতে পারে?

 

২। সামেরি জাতির উদ্ভব হয়েছে পরজাতি থেকে, বনী ইস্রাঈল থেকে নয়। পরবর্তীতে বনী ইস্রাঈলের সাথে তাদের কিছু সংমিশ্রণ ঘটেছে। আর মুসা(আ) এর সঙ্গে ছিল বনী ইস্রাঈলের ১২ জাতি। সামেরিদের পূর্বপুরুষরা যদি মুসা(আ) এর সময়ে থাকত, তাহলে তাদের পূর্বপুরুষ বনী ইস্রাঈল হতে হবে।

 

আমরা এখন ইসলামবিরোধীদের এই দাবিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখব এগুলো কতটুকু যৌক্তিক।

সামেরিদের নামকরণ কিভাবে হল? :

আল কুরআনের ঐতিহাসিক তথ্যের বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষীদের অভিযোগের ভিত্তি হচ্ছে সামেরিদের সম্পর্কে অন্য জাতির লোকদের অভিমত। কুরআনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ খণ্ডন করতে হলে আমাদের দেখতে হবে খোদ সামেরি(Samaritan) জাতির লোকেরা নিজেদের উৎপত্তি সম্পর্কে কী বলে।

 

ইসলামবিরোধীরা সামেরি জাতির লোকদের সম্পর্কে বলে যে, যেহেতু উত্তর রাজ্যের রাজধানী সামারিয়ার নামানুসারে তাদের নামকরণ করা হয়েছে, তাদের নামের সাথে শহরটির নাম জুড়ে আছে। তাদেরকে তারা হিব্রু ভাষায় shomronim বা shomeronim (שומרונים) বলে উল্লেখ করে যার অর্থ হচ্ছেঃ ‘সামারিয়ার অধিবাসী’। কিন্তু সামেরি জাতি নিজেরা কি তাদের নামের উৎপত্তি হিসাবে সামারিয়া শহরকে সম্পৃক্ত করে?

উত্তর হচ্ছে—না।

 

সামেরিরা নিজেদেরকে কখনোই shomronim বা shomeronim (שומרונים) বলে উল্লেখ করে না। তারা নিজেদেরকে হিব্রুতে বলেঃ Shamerim (שַמֶרִים) {যা হিব্রু ‘Shameri’ শব্দের বহুবচন} যার অর্থ হচ্ছে ‘(ঈশ্বরের)আইনের রক্ষক / পালনকারী’। [7]

 

The Interpreter's Dictionary Of The Bible এ বলা হয়েছে, “... the Samaritans prefer to style themselves Shamerim (שַמֶרִים) ' i.e., "the observant" - rather than shomronim (שומרונים) i.e., "the inhabitants of Samaria."” [8]

অর্থাৎ--সামেরিরা নিজেদেরকে shomronim (שומרונים) বলে না বরং Shamerim (שַמֶרִים বলে।

 

Encyclopaedia Judaica তে Samaritans অংশে তথ্য আছে তাতে বিষয়টি আরো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে—

“Little guidance is obtained from the name of the Samaritans. The Bible uses the name Shomronim once, in II Kings 17:29, but this probably means Samarians rather than Samaritans. The Samaritans themselves do not use the name at all; they have long called themselves Shamerin; i.e., "keepers" or "observers" of the truth = al ha-amet, both the short and long forms being in constant use in their chronicles. They take the name Shomronim to mean inhabitants of the town of Samaria built by Omri (cf. I Kings 16:24), where the probable origin of the word Shomronim is to be found).” [9]

অর্থাত—সামেরিরা কখনো Shomronim শব্দটি নিজেদের জন্য ব্যবহার করে না। বরং তারা প্রাচীনকাল থেকেই নিজেদেরকে Shamerin বলে যার মানে হচ্ছে সত্যের অনুসারী বা রক্ষক। তারা Shomronim কথাটি দ্বারা Omri নির্মিত শহর সামারিয়ার অধিবাসীদের বোঝায় (১ রাজাবলী ১৬:২৪)।

 

The Encyclopaedia Of Judaism এও অনুরূপ তথ্য পাওয়া যায়। [10]

 

অতএব সামেরিদের নামকরণ সম্পর্কে ইসলামবিদ্বেষী লেখকরা যে দাবি করেন অর্থাৎ সামেরিদের নামকরণ করা হয়েছে সামারিয়া শহর থেকে---এটি ভুল প্রমাণিত হল। সামারিয়ার অধিবাসীদের Shomronim বলা হয় বটে, কিন্তু এর সঙ্গে সামেরি জাতির উৎপত্তির কোন সম্পর্ক নেই। বরং সামেরিরা নিজেদের Shamerim (שַמֶרִים) বলে যার দ্বারা আইন বা সত্যের রক্ষক/অনুসারী বোঝায়।

 

এ কারণেই উইকিপিডিয়াতে David Noel Freedman এর The Anchor Bible Dictionaryর রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে যে, সামারিয়া শহরের নামে সামেরিদের নামকরণ হয়েছে নাকি সামেরিদের নামেই সামারিয়া শহরের নামকরণ করা হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। [11]

 

সামারিয়া শহরের নামানুসারে সামেরিদের নামকরণের তত্ত্বটি যেহেতু সন্দেহাতিতভাবে ভুল প্রমাণিত হয়েছে, কাজেই স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে সামেরিদের নামানুসারে সামারিয়া শহরের নামকরণের তত্ত্বটিই সঠিক। এটিও প্রমাণ হচ্ছে যে সামারিয়া শহর গঠনের আরো আগে থেকেই সামেরি জাতির অস্তিত্ব ছিল।

 

সামেরিদের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে? মিশ্র জাতি থেকে নাকি বনী ইস্রাঈল থেকে? :

সামারিয়া শহরে অন্য জাতিগোষ্ঠীর মিশ্রণে সামেরি জাতির উদ্ভব হয়েছে, তারা মূল বনী ইস্রাঈলের কেউ না—এই তত্ত্ব সাধারণভাবে প্রচলিত আছে। এর কারণ বাইবেলের ২ রাজাবলী(২ বাদশাহনামা/2 Kings) ১৭:১৮-২৪ এর বিবরণ। সেখানে বলা হয়েছে যে ইস্রায়েল রাজ্যের সবাইকে উৎখাত করে ফেলা হয়েছিল এবং সে স্থানে অন্য জাতি বসত গেড়েছিল। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য-প্রমাণ কি বাইবেলের তথ্যকে সমর্থন করে?

 

বাইবেলের ২ রাজাবলীর ১৭নং অধ্যায়ের বিবরণ অনুযায়ী ইস্রায়েল রাজ্যের সবাইকে উৎখাত করে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য প্রমাণ এই বিবরণকে সমর্থন করে না। প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য অনুযায়ী মধ্য ব্রোঞ্জ যুগে(২০০০-১৫৫০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ) [12]  ইস্রায়েলে জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৪০,০০০ এবং লৌহ যুগে (১২০০-৫৮৬ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ) অর্থাৎ রাজ্য ভাগ হবার পরে উত্তরের ইস্রায়েল রাজ্যে জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৬০০,০০০। [13] Roland de Vaux এর মতে জনসংখ্যা ছিল ৮০০,০০০। [14]

এ্যাসিরিয়ার রাজা ২য় সারগন(Sargon II) উত্তর রাজ্যকে পরাজিত করেছিলেন। রাজা ২য় সারগনের সময়কার একটি শিলালিপির তথ্য থেকে জানা গেছে যে, তিনি সেখানকার ২৭,২৯০ জন বন্দীকে নির্বাসিত করেন। [15]

 

আমরা যদি এখন হিসাব করি, তাহলে দেখতে পাই যে উত্তর রাজ্যের মাত্র ৫% লোককে নির্বাসিত করা হয়েছিল এবং ৯৫% লোকই সেখানে রয়ে গিয়েছিল!

 

তা ছাড়া সেই যুগে রাজারা বন্দীদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলার চেষ্টা করত কেননা বন্দীর সংখ্যা যত বেশি বলা হবে, তাদের শক্তিমত্তা তত বেশি প্রকাশ পাবে। কাজেই প্রকৃত বন্দীর সংখ্যা আরো কম হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।

 

৯৫% অর্থাৎ উত্তর রাজ্যের প্রায় সব লোক সেখানে রয়ে যাবার অর্থ হচ্ছে—সামেরিরা আসলে মিশ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে উদ্ভব হওয়া কোন জাতি নয় বরং তারা বনী ইস্রাঈল জাতির অংশ, ঠিক ইহুদিদের মত। বনী ইস্রাঈলের মাঝে সামেরিদের অস্তিত্ব থাকার অর্থ হচ্ছে – সামেরিদের উৎপত্তি বেশ আগে, বনী ইস্রাঈলের গোত্রগুলোর মাঝেই এদের অবস্থান ছিল।

 

প্রত্নতাত্ত্বিক পরিসংখ্যান এবং বাইবেলের তথ্যের এই পার্থক্যের কারণে A. D. Crown বলেছেন,

“This is a prima facie evidence that the greatest concentration of people remained in the province until at least sixth century B.C.E. Clearly the story of Samaritan origins in the Bible must be viewed with caution. ” [16]

অর্থাৎ—তথ্য-প্রমাণের আলোকে বলা যায় যে, অন্তপক্ষে খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত রাজ্যটিতে অধিকাংশ জনগোষ্ঠীই রয়ে গিয়েছিল। কাজেই সামেরিদের উদ্ভব সম্পর্কে বাইবেলের কাহিনীকে আমাদের আর সতর্কতার সাথে দেখা উচিত।

R. J. Coggins ও প্রায় একই রকম মন্তব্য করেছেন। ---

“ If this is at all accurate it would imply the deportation of between 3 and 4% of the population.“ [17]

অর্থাৎ—উত্তর রাজ্যের মাত্র ৩ থেকে ৪% লোককে নির্বাসিত করা হয়েছিল।

 

একই রকম তথ্য উল্লেখ করেছেন Frank Cross [18] ; “The Interpreter's Dictionary Of The Bible” এও অনুরূপ তথ্য আছে। [19]

 

এই লেখার শুরুতেই এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে ইহুদি ও সামেরিদের মধ্যে বহুকাল ধরে শত্রুতা ও দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। কাজেই ইহুদিদের কিতাবে সামেরিদের দুর্ভোগের বিবরণ অতিরঞ্জিতভাবে উল্লেখ করার কারণ সহজেই অনুমেয়।

সামেরিরা নিজেরা নিজেদের উৎপত্তি সম্পর্কে কী দাবি করে? :

সামেরিদের উৎপত্তি সম্পর্কে খ্রিষ্টান মিশনারীদের দাবি দেখে অনেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান যে কুরআনের ঐতিহাসিক বিবরণ ভুল, মুসা(আ) এর সময়ে কোন সামেরির অস্তিত্ব থাকতে পারে না। নাস্তিকতা ও ইসলামত্যাগের অন্যতম কারণ হচ্ছে এরূপ অজ্ঞতা ও একমুখী অধ্যায়ন। অথচ নিরপেক্ষতা ও ইনসাফের দাবি হচ্ছে এই দাবির সত্যতা নিরূপণের জন্য সর্বপ্রথম এ ব্যাপারে সামেরিদের নিজ বক্তব্য যাচাই করা। কেননা একটি জাতির উৎপত্তির ব্যাপারে তারা নিজেরাই সর্বাধিক ওয়াকিবহাল। অতএব চলুন এবার আমরা দেখি নিজেদের জাতিগত উৎপত্তি সম্পর্কে সামেরিদের অভিমত কী।

 

উইকিপিডিয়াতে সামেরিদের সম্পর্কে আর্টিকেলের শুরুতেই বলা হয়েছে যে, সামেরিরা(Samaritans) দাবি করে যে তারা ইউসুফ(আ) এর দুই ছেলে এফ্রাইম(Ephraim) ও মানাসেহ(Manasseh) এর সরাসরি বংশধর। [20] খ্রিষ্টান সূত্রগুলোও এই তথ্যকে স্বীকার করে যে, সামেরিরা নিজেদের ইউসুফ(আ) এর ২ ছেলের বংশধর বলে দাবি করে, বাইবেলের আদিপুস্তক ৪৮ অনুযায়ী ইয়াকুব(আ) যাদেরকে আশির্বাদ করেছেন। [21]

 

Encyclopaedia Judaica তে "Samaritans" অংশে সামেরিদের উৎপত্তির ইতিহাস বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছেঃ

“ Until the middle of the 20th Century it was customary to believe that the Samaritans originated from a mixture of the people living in Samaria and other peoples at the time of the conquest of Samaria by Assyria (722/1 B.C.E.). The Biblical account in II Kings 17 had long been the decisive source for the formulation of historical accounts of Samaritan origins. Reconsideration of this passage, however, has led to more attention being paid to the Chronicles of the Samaritans themselves. With the publication of Chronicle II (Sefer ha-Yamim), the fullest Samaritan version of their own history became available: the chronicles, and a variety of non-Samaritan materials.

According to the former, the Samaritans are the direct descendants of the Joseph tribes, Ephraim and Manasseh, and until the 17th century C.E. they possessed a high priesthood descending directly from Aaron through Eleazar and Phinehas. ” [22]

অর্থাৎ—বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই ধারণা প্রচলিত ছিল যে সামেরিদের উৎপত্তি হয়েছে এ্যাসিরিয়া কর্তৃক বিজিত হবার পরে সামারিয়ায় বসবাসকারী কিছু মিশ্র জাতিগোষ্ঠীর লোক থেকে। বর্তমানে সামেরিদের নিজেদের ইতিহাসের গ্রন্থ বংশাবলী ২ (Sefer ha-Yamim) পাওয়া যায়। এই গ্রন্থ অনুযায়ী সামেরিরা ইউসুফ(আ), এফ্রাইম ও মানাসেহ এর সরাসরি বংশধর। এ ছাড়া ১৭ শতক পর্যন্ত তাদের এলিয়েজার ও পিনহসের সূত্রে হারুন(আ) এর সরাসরি বংশধর পুরোহিতও ছিল।

The Interpreter's Dictionary of the Bibleএও স্বীকার করা হয়েছে যে সামেরিদের নিজ বংশপঞ্জী অনুযায়ী তাদের সরাসরি ইউসুফ(আ) পর্যন্ত বংশধারা রয়েছে। [23]

সামেরিদের উৎপত্তি সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য-প্রমাণঃ

সাম্প্রতিক সময়ে ডিএনএ পরীক্ষা করেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সামেরি ও ইহুদিরার একই বংশধারা থেকে উদ্ভুত। অর্থাৎ সামেরিদের উৎপত্তিও বনী ইস্রাঈল থেকে। এ সংক্রান্ত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে---

“Principal component analysis suggests a common ancestry of Samaritan and Jewish patrilineages. Most of the former may be traced back to a common ancestor in the paternally-inherited Jewish high priesthood (Cohanim) at the time of the Assyrian conquest of the kingdom of Israel.” [24]

 

এমনকি ইহুদি সূত্র দ্বারাও প্রমাণ করা যায় যে সামেরিরা মূল বনী ইস্রাঈলের অংশ। ইহুদিদের তাওরাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ Genesis Rabbahতে একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সেটি হচ্ছে—

“R. Meir met a Samaritan and asked him: 'Whence are you descended?' 'From Joseph,' he replied. 'That is not so,' he said. 'Then from whom?' 'From Issachar,' he told him. 'How do you know this?' he countered. - Because it is written, AND THE SONS OF ISSACHAR: TOLA, AND PUVAH, AND IOB, AND SHIMRON - the last name referring to the Samaritans.” [25]

 

এখানে র‍্যাবাই মেইর দাবি করছেন যে সামেরিটি Issachar এর বংশধর। আর বাইবেলের Genesis 30:18 অনুযায়ী Issachar হচ্ছেন ইয়াকুব(আ) এর সন্তান। এ দ্বারা ঐ সামেরিকে বনী ইস্রাঈলের অংশ বলে স্বীকার করা হচ্ছে।

 

উপরে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রমাণ করা হল যে—সামেরিরা ইউসুফ(আ) এর সরাসরি বংশধর কিংবা অন্তপক্ষে Issachar এর বংশধর। আর যদি তাই হয়, তাহলে এটা প্রমাণিত হয় যে সামেরিরাও বনী ইস্রাঈলের অন্তর্ভুক্ত। সামেরিরা যদি বনী ইস্রাঈল হয় তার অর্থ হচ্ছে—তাদের পূর্বপুরুষরা মুসা(আ) এর সাথে ছিল। কেননা মুসা(আ) এর সঙ্গে বনী ইস্রাঈলের সকল গোত্র ছিল।

 

উপসংহারঃ

উপরে সামেরিদের উৎপত্তি সম্পর্কে ইসলামবিরোধীদের বিভিন্ন দাবির বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিশ্লেষণ থেকে সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, সামেরিদের নামকরণ সম্পর্কে খ্রিষ্টান মিশনারীদের দাবি সঠিক নয়, মুসা(আ) এর বহুকাল পরে স্থাপিত কোন শহর থেকে সামেরিদের নামকরণ করা হয়নি। সামেরিরা নিজেরা মোটেও নিজেদেরকে এভাবে নামকরণ করে না বরং “ঈশ্বরের আইনের পালনকারী বা রক্ষক” এই অর্থে তাদের নামকরণ করা হয়েছে। সে শহর গঠনের বহু আগে থেকে তারা এ নামে পরিচিত ছিল এবং তাদের নামেই শহরটির নামকরণ করা হয়। তাদের নিজেদের দাবি, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ও অন্যান্য বিভিন্ন সূত্র থেকে এটিও সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে সামেরিদের উৎপত্তি মোটেও অইস্রায়েলী জাতিগোষ্ঠী থেকে নয় বরং তারাও বনী ইস্রাঈলের বংশধর। অতএব নিঃসন্দেহে তাদের পূর্বপুরুষরাও মুসা(আ) এর সময়ে বিদ্যমান ছিল। সুতরাং মুসা(আ) এর সময়কালে একজন সামেরির অস্তিত্ব সম্পর্কে আল কুরআনের ঐতিহাসিক বিবরণ মোটেও ভুল নয়। যাবতীয় প্রশংসা মহান প্রতিপালক আল্লাহর যিনি সত্যসহ আল কুরআন নাজিল করেছেন।

সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজ বান্দার[মুহাম্মাদ ()] প্রতি এ গ্রন্থ[কুরআন] নাযিল করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি।

(কুরআন, কাহফ ১৮:১)

এগুলো অদৃশ্যের খবর, যা আমি তোমার[মুহাম্মাদ ()] কাছে প্রেরণ করি। তুমি তো তাদের কাছে ছিলে না, যখন তারা[ইউসুফ(আ) এর ভাইয়েরা] স্বীয় কাজ সাব্যস্ত করছিল এবং চক্রান্ত করছিল।

(কুরআন, ইউসুফ ১২:১০২)

মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম, তখন তুমি[মুহাম্মাদ ()] পশ্চিম প্রান্তে ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না।

কিন্তু আমি অনেক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম, অতঃপর তাদের অনেক যুগ অতিবাহিত হয়েছে। আর তুমি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে না যে, তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করতে। কিন্তু আমিই ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী।

আমি যখন মূসাকে আওয়াজ দিয়েছিলাম, তখন তুমি তুর পর্বতের পার্শ্বে ছিলে না।

কিন্তু এটা তোমার প্রভুর রহমত স্বরূপযাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক কর, যাদের কাছে তোমার আগে কোন সতর্ককারী আসেনি; যাতে তারা স্মরণ রাখে।

(কুরআন, কাসাস ২৮:৪৪-৪৬)

 

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ http://www.islamic-awareness.org

 

 

তথ্যসূত্রঃ

[1]. ফাতহুল কাদির, কুরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির), ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, ২য় খণ্ড, সুরা ত্ব-হা’র ৮৫নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ১৬৬৬

[2]. ■ Translation and Meaning of السامري in English Arabic Dictionary of terms [almaany]

https://goo.gl/D4oidG

■ [السامري] translation English _ Arabic dictionary _ Reverso

https://goo.gl/MbnLf3

[3]. ■ “Samaritan - New World Encyclopedia”

http://www.newworldencyclopedia.org/entry/Samaritan

■ “Religion of The Israelite Samaritans – The Root of All Abrahamic Religions”

https://www.israelite-samaritans.com/religion/#principles

[4]. “Hatred Between Jews and Samaritans _ Bible.org”

https://bible.org/illustration/hatred-between-jews-and-samaritans

[5]. ■ https://en.wikipedia.org/wiki/Samaritans#Christian_sources:_New_Testament

https://en.wikipedia.org/wiki/Parable_of_the_Good_Samaritan

[6]. ■ “Who were the Samaritans and why were they important_ Catholic Answers”

https://www.catholic.com/qa/who-were-the-samaritans-and-why-were-they-important

■ “The Samaritans, A Mixed Race (Bible History Online)”

http://www.bible-history.com/Samaritans/SAMARITANSA_Mixed_Race.htm

■ “Samaritans Definition and Meaning - Bible Dictionary”

http://www.biblestudytools.com/dictionary/samaritans/

■ “Who Were the Samaritans – Blue Letter Bible”

https://www.blueletterbible.org/faq/don_stewart/don_stewart_1319.cfm

[7]. J. A. Montgomery, The Samaritans The Earliest Jewish Sect: Their History, Theology And Literature, 1907, op. cit., p. 24.

[8]. "Samaritans" in G. A. Buttrick (Ed.), The Interpreter's Dictionary Of The Bible, Volume 4, 1962 (1996 Print), Abingdon Press, Nashville, p. 191.

[9]. "Samaritans" in Encyclopaedia Judaica, 1972, Volume 14, Encyclopaedia Judaica Jerusalem, col. 728.

[10]. A. D. Crown, "Samaritan Judaism" in J. Neusner, A. J. Avery-Peck & W. S. Green (Eds.), The Encyclopaedia Of Judaism, 2005, Volume IV, Brill: Leiden & Boston, pp. 2371-2373.

[11]. “Samaritans – Wikipedia” (Etymology)

 https://en.wikipedia.org/wiki/Samaritans#Etymology

[12]. M. Broshi & R. Gophna, "Middle Bronze Age II Palestine: Its Settlements And Population", Bulletin Of The American School Of Oriental Research, 1986, Volume 261, pp. 73-90, especially pp. 86-87.

[13]. Y. Shiloh, "The Population Of Iron Age Palestine In The Light Of A Sample Analysis Of Urban Plans, Areas, And Population Density", Bulletin Of The American School Of Oriental Research, 1980, Volume 239, pp. 25-35, especially p. 32.

[14]. R. de Vaux, Ancient Israel: Its Life And Institutions, 1997, Wm. B. Eerdmans Publishing Co. (Grand Rapids) and Dove Bookseller (Livonia), p. 66.

[15]. J. B. Pritchard (Ed.), The Ancient Near East: An Anthology Of Texts And Pictures, 1958, Princeton University Press: Princeton, p. 195.

শিলালিপিটিতে যা লেখা ছিল তার ইংরেজি অনুবাদ হচ্ছেঃ

“I besieged and conquered Samaria (Sa-me-ri-na), led away as booty 27,290 inhabitants of it.”

 

[16]. A. D. Crown, "Samaritan Judaism" in J. Neusner, A. J. Avery-Peck & W. S. Green (Eds.), The Encyclopaedia Of Judaism, 2005, Volume IV, op. cit., pp. 2372-2373.

[17]. R. J. Coggins, Samaritans And Jews: The Origins Of Samaritanism Reconsidered, 1975, Basil Blackwell: Oxford, pp. 17-18.

[18]. F. M. Cross, From Epic To Canon: History And Literature In Ancient Israel, 1998, The Johns Hopkins University Press: Baltimore & London, pp. 174-175.

[19]. "Samaritans" in G. A. Buttrick (Ed.), The Interpreter's Dictionary Of The Bible, 1962 (1996 Print), Volume 4, op. cit., pp. 191-192.

সেখানে যা বলা হয়েছেঃ

“...Such confirmation of the biblical account does not prove, however, that the Jews are right in regarding the Samaritans as the mere offspring of the colonists rather than the true scions of Israel; and there is, in fact, much to support the Samaritan claim.

In the first place, Sargon himself says distinctly that he deported only 27,290 persons, whereas a computation based on a contemporary record in II Kings 15:19 shows that wealthy landowners alone then numbered 60,000! Furthermore, in II Chr. 34:9, we indeed hear of a "remnant of Israel" still resident in Ephraim and Manasseh about a century later, in the days of Josiah; ...”

[20]. Samaritans – Wikipedia The Free Encyclopedia

https://en.wikipedia.org/wiki/Samaritans

[21]. “The Samaritans - Toukley Uniting Church”

http://toukleyunitingchurch.org.au/the-samaritans/

[22]. "Samaritans" in Encyclopaedia Judaica, 1972, Volume 14, op. cit., col. 727.

[23]. “Did the Samaritans exist during the time of Moses (pbuh) Imam Shabir Ally answers Anis Shorrosh”

https://www.youtube.com/watch?v=YutVCw4WTKw

[24]. P. Shen, T. Lavi, T. Kivisild, V. Chou, D. Sengun, D. Gefel, I. Shpirer, E. Woolf, J. Hillel, M. W. Feldman & P. J. Oefner, "Reconstruction Of Patrilineages And Matrilineages Of Samaritans And Other Israeli Populations From Y-Chromosome And Mitochondrial DNA Sequence Variation", Human Mutation, 2004, Volume 24, p. 248.

[25]. Rabbi H. Freedman (Trans.), Midrash Rabbah: Genesis II, 1939, Soncino Press: London, XCIV.7, pp. 873-874.