Pray for the world economy

আল কুরআন অনুযায়ী ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমির মালিক কি ইহুদিরা?

 

জায়নবাদীরা এবং অন্যান্য অনেক ইসলামবিরোধী দাবি করে খোদ আল কুরআন অনুযায়ী ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমির মালিক নাকি ইহুদিরা! জায়নাবাদী প্রোপাগান্ডাগুলোর অন্যতম প্রধান এটি। এই দাবির স্বপক্ষে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত উদ্ধৃত করা হয়। যেমনঃ   

 

یٰقَوۡمِ ادۡخُلُوا الۡاَرۡضَ الۡمُقَدَّسَۃَ الَّتِیۡ کَتَبَ اللّٰهُ لَکُمۡ وَ لَا تَرۡتَدُّوۡا عَلٰۤی اَدۡبَارِکُمۡ فَتَنۡقَلِبُوۡا خٰسِرِیۡنَ

অর্থঃ "‘হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন এবং তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যেয়ো না, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে’।" [1]

আলোচ্য আয়াতে মুসা(আ.) নিজ জাতিকে অর্থাৎ বনী ইস্রাঈলকে পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করতে বলছেন, এবং এটাও উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহ এই ভূমিকে তাদের জন্য “লিখে দিয়েছেন”। জায়নবাদীরা মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রসঙ্গবিহীনভাবে এই আয়াতটি উদ্ধৃত করতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু তারা বেমালুম চেপে যায় এই আয়াতের সামান্য কিছু পরেই উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতার জন্য বনী ইস্রাঈলের জন্য সেই ভূমি সাথে সাথেই নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল!

 

( 25 )   قَالَ رَبِّ إِنِّي لَا أَمْلِكُ إِلَّا نَفْسِي وَأَخِي ۖ فَافْرُقْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ

( 26 )   قَالَ فَإِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ ۛ أَرْبَعِينَ سَنَةً ۛ يَتِيهُونَ فِي الْأَرْضِ ۚ فَلَا تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ

অর্থঃ “সে বলল, ‘হে আমার রব, আমি আমার ও আমার ভাই ছাড়া কারো উপরে অধিকার রাখি না। সুতরাং আপনি আমাদের ও ফাসিক কওমের মধ্যে বিচ্ছেদ করে দিন। তিনি বললেন, ‘তাহলে নিশ্চয় তা তাদের জন্য চল্লিশ বছর নিষিদ্ধ; তারা যমীনে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরতে থাকবে। সুতরাং তুমি ফাসিক কওমের জন্য আফসোস করো না’।”  [2]

 

আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বনী ইস্রাঈলের জন্য পবিত্র ভূমিকে লিখে দেয়ার ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে সত্য। কিন্তু সেটা সেই সময়ের একটি ঘটনা ছিল, এবং তা মোটেও শর্তহীন ছিল না। তারা যখন আল্লাহর অবাধ্যতা করল তখন সঙ্গে সঙ্গে তাদের জন্য এই ভূমি ৪০ বছরের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছিল। আল কুরআনের প্রসিদ্ধ মুফাসসিরগণ এই কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন। তাফসির বায়দ্বাওয়ী গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে—

 

{ يَاقَوْمِ ادْخُلُوا الأَرْضَ المُقَدَّسَةَ } أرض بيت المقدس سميت بذلك لأنها كانت قرار الأنبياء عليهم الصلاة والسلام ومسكن المؤمنين.

...

{ الَّتِي كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ } قسمها لكم أو كتب في اللوح أنها تكون مسكناً لكم، ولكن إن آمنتم وأطعتم لقوله لهم بعدما عصوا{ فَإِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ } [المائدة: 26]

অর্থঃ {হে আমার কওম, তোমরা পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর} বাইতুল মাকদিসের ভূমির (জেরুজালেম) ব্যাপারে এটি বলা হয়েছে। কেননা এটি নবীদের (আলাইহিমুস সলাতু ওয়াস সালাম) সমাধীস্থল, এবং মুমিনদের আবাসস্থল। … …  {যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন} আল্লাহ তোমাদের নিকট যার অঙ্গীকার করেছেন অথবা লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন যে এটি তোমাদের বসবাস্থল হবে। তবে যদি তোমরা ঈমান আনো এবং (আল্লাহর হুকুমের) আনুগত্য করো। কেননা তারা অবাধ্যতা করার পরে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “নিশ্চয় তা তাদের জন্য (চল্লিশ বছর) নিষিদ্ধ…”  [3]

 

তাফসির ইবন কাসিরে উল্লেখ করা হয়েছে,

 

“ الَّتِیۡ کَتَبَ اللّٰهُ لَکُمۡ  “উহা তোমাদের জন্য আল্লাহ নির্দিষ্ট করিয়াছেন” অর্থাৎ, তোমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইসরাঈল(আ.) [ইয়াকুব(আ.)] এর সঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ওয়াদা করিয়াছিলেন যে, তোমাদের যাহারা ঈমান আনিবে, তাহাদিগকে তিনি এই ভূমির উত্তরাধিকারী বানাইবেন[4]

 

জায়নবাদী খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মাঝে এমন ধারণা আছে যে স্রেফ ইস্রাঈল জাতির মানুষ হবার জন্য ইহুদিরা পবিত্র ভূমির মালিক। কিন্তু এটা তাদের (অন্ধ) বিশ্বাসমাত্র, ইসলামের ধারণা মোটেও এমন নয়। তারা নিজ ভ্রান্ত বিশ্বাসকে ইসলামের নামে চালানোর অপচেষ্টা করে। আল কুরআনের মুসা(আ.) কখনো এটা বলতেন না যে যমিনের একচ্ছত্র মালিক বনী ইস্রাঈল। বরং তিনি তাঁর জাতিকে এই শিক্ষাই প্রদান করতেন যে যমিনের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। তিনি তাদেরকে ইস্রাঈল জাতির মানুষ হবার জন্য সব কিছুর মালিক বলতেন না বরং মুত্তাকী হবার কথা বলতেন। আল কুরআনের নবীদের শিক্ষা তো এমনই। অথচ আজকের জায়নবাদী ইহুদিরা মুত্তাকী হবার ধারেকাছেও নেই। তারা অবিশ্বাসী এবং অত্যাচারী।

 

  قَالَ مُوۡسٰی لِقَوۡمِهِ اسۡتَعِیۡنُوۡا بِاللّٰهِ وَ اصۡبِرُوۡا ۚ اِنَّ الۡاَرۡضَ لِلّٰهِ ۟ۙ یُوۡرِثُهَا مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ ؕ وَ الۡعَاقِبَۃُ لِلۡمُتَّقِیۡنَ

অর্থঃ "মূসা তার কওমকে বলল, ‘আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয় যমীন আল্লাহর। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে তিনি চান তাকে তার উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন। আর পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।’ " [5]

 

কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত এবং তাফসির থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা গেল যে কোনো শর্ত ছাড়া স্রেফ ইস্রাঈল জাতির মানুষ হবার জন্য আল্লাহ তাদের উদ্দেশ্যে পবিত্র ভূমি লিখে দেননি। বরং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং আল্লাহর হুকুমের অনুগত হওয়াকে শর্ত করেছেন। পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন মুমিনদের ভূমি। বনী ইস্রাঈল যখন আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করেছে, মুসা(আ.) সঙ্গে সঙ্গে তাদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। ঈমান-আমল ব্যতিত স্রেফ কোনো জাতির মানুষ হবার জন্য সব কিছু দিয়ে দেয়া হবে, এই ধরনের কোনো ধারণা ইসলামে নেই। আল কুরআনে আমরা দেখি মুসা(আ.) এবং অন্য সকল নবী রাসুল (আ.) নিজ জাতির সঙ্গে আল্লাহ তা’আলার হুকুমের অনুগত হওয়া তথা মুসলিম হবার কথা বলছেন। শুধু একটা জাতির মানুষ হবার জন্য সব কিছু দিয়ে দেয়া হবে – এমন কোনো অঙ্গীকার তাঁরা করেননি।

 

وَ قَالَ مُوۡسٰی یٰقَوۡمِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اٰمَنۡتُمۡ بِاللّٰهِ فَعَلَیۡهِ تَوَکَّلُوۡۤا اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّسۡلِمِیۡنَ

অর্থঃ "আর মূসা বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক, তবে তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল কর, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক’।"  [6]

 

فَاِنۡ تَوَلَّیۡتُمۡ فَمَا سَاَلۡتُکُمۡ مِّنۡ اَجۡرٍ ؕ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلَی اللّٰهِ ۙوَ اُمِرۡتُ اَنۡ اَکُوۡنَ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ

অর্থঃ [নুহ (আ.) বললেন] ‘অতঃপর তোমরা যদি বিমুখ হও, তবে আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর দায়িত্বে। আর আমি আদিষ্ট হয়েছি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার’। [7]

 

وَ وَصّٰی بِهَاۤ اِبۡرٰهٖمُ بَنِیۡهِ وَ یَعۡقُوۡبُ ؕ یٰبَنِیَّ اِنَّ اللّٰهَ اصۡطَفٰی لَکُمُ الدِّیۡنَ فَلَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ

অর্থ "আর এরই উপদেশ দিয়েছে ইবরাহীম তার সন্তানদেরকে এবং ইয়াকূবও (যে,) ‘হে আমার সন্তানেরা, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দীনকে চয়ন করেছেন। সুতরাং তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেয়ো না।" [8]

 

مَا کَانَ اِبۡرٰهِیۡمُ یَهُوۡدِیًّا وَّ لَا نَصۡرَانِیًّا وَّ لٰکِنۡ کَانَ حَنِیۡفًا مُّسۡلِمًا ؕ وَ مَا کَانَ مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ

অর্থঃ "ইবরাহীম ইয়াহুদী ছিলনা এবং খৃষ্টানও ছিলনা, বরং সে সুদৃঢ় মুসলিম ছিল এবং সে মুশরিকদের (অংশীবাদী) অন্তর্ভুক্ত ছিলনা।" [9]

 

আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই একটা সময়ে বনী ইস্রাঈলকে মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে অঙ্গীকার করেছিলেন। ইব্রাহিম (আ.) এর বংশধরদের মাঝ থেকে নেতৃত্বের অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু কুরআনে এটাও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে আল্লাহ তা’আলার অঙ্গীকারের মাঝে জালিমরা শামিল হয় না।

 

 وَ اِذِ ابۡتَلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ رَبُّهٗ بِکَلِمٰتٍ فَاَتَمَّهُنَّ ؕ قَالَ اِنِّیۡ جَاعِلُکَ لِلنَّاسِ اِمَامًا ؕ قَالَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ ؕ قَالَ لَا یَنَالُ عَهۡدِی الظّٰلِمِیۡنَ

অর্থঃ "এবং স্মরণ কর যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কতিপয় বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর সে সেগুলো পূর্ণ করল, তখন আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করছি’। ইব্রাহীম আরয করল, ‘আর আমার বংশধর হতেও’? নির্দেশ হল, আমার অঙ্গীকারের মধ্যে যালিমরা শামিল নয়।" [10]

 

আল কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বনী ইস্রাঈলের বিভিন্ন রকমের জুলুম ও কুফরীর উল্লেখ আছে। ইহুদিরা যে আল্লাহর অঙ্গীকার এবং আদেশ-নির্দেশের অবাধ্য হয়েছে এবং কুফরী করেছে, এ ব্যাপারে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। 

 

( 12 )   ۞ وَلَقَدْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَيْ عَشَرَ نَقِيبًا ۖ وَقَالَ اللَّهُ إِنِّي مَعَكُمْ ۖ لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَآتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَآمَنتُم بِرُسُلِي وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَأَقْرَضْتُمُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا لَّأُكَفِّرَنَّ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَلَأُدْخِلَنَّكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۚ فَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ

( 13 )   فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً ۖ يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِ ۙ وَنَسُوا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوا بِهِ ۚ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَىٰ خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

অর্থঃ “আল্লাহ বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বার জন সর্দার নিযুক্ত করেছিলাম। আল্লাহ বলে দিলেনঃ আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। যদি তোমরা নামায প্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত দিতে থাক, আমার পয়গম্বরদের প্রতি বিশ্বাস রাখ, তাঁদের সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম পন্থায় ঋন দিতে থাক, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের গোনাহ দুর করে দিব এবং অবশ্যই তোমাদেরকে উদ্যান সমূহে প্রবিষ্ট করব, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নিঝরিনীসমূহ প্রবাহিত হয়। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এরপরও কাফের হয়, সে নিশ্চিতই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয় এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে উপকার লাভ করার বিষয়টি বিস্মৃত হয়েছে। আপনি সর্বদা তাদের কোন না কোন প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হতে থাকেন, তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া। অতএব, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মার্জনা করুন। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।[11]

 

وَ ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الذِّلَّۃُ وَ الۡمَسۡکَنَۃُ ٭ وَ بَآءُوۡ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰهِ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ کَانُوۡا یَکۡفُرُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ یَقۡتُلُوۡنَ النَّبِیّٖنَ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ ؕ ذٰلِکَ بِمَا عَصَوۡا وَّ کَانُوۡا یَعۡتَدُوۡنَ

অর্থঃ “…আর তাদের উপর আরোপ করা হয়েছে লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য এবং তারা আল্লাহর ক্রোধের শিকার হল। তা এই কারণে যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করত এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করত। তা এই কারণে যে, তারা নাফরমানী করেছিল এবং তারা সীমালঙ্ঘন করত।[12]

 

وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ وَ قَفَّیۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهٖ بِالرُّسُلِ ۫ وَ اٰتَیۡنَا عِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ الۡبَیِّنٰتِ وَ اَیَّدۡنٰهُ بِرُوۡحِ الۡقُدُسِ ؕ اَفَکُلَّمَا جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌۢ بِمَا لَا تَهۡوٰۤی اَنۡفُسُکُمُ اسۡتَکۡبَرۡتُمۡ ۚ فَفَرِیۡقًا کَذَّبۡتُمۡ ۫ وَ فَرِیۡقًا تَقۡتُلُوۡنَ

অর্থঃ "এবং নিশ্চয়ই আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে ক্রমান্বয়ে রসূলদেরকে প্রেরণ করেছি, মারইয়াম পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি এবং ‘পবিত্র আত্মা’যোগে (জিবরাঈলের মাধ্যমে) তাকে শক্তিশালী করেছি, অতঃপর যখনই কোন রসূল এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের মনঃপুত নয়, তখনই তোমরা অহংকার করেছ এবং কিছু সংখ্যককে অস্বীকার করেছ এবং কিছু সংখ্যককে হত্যা করেছ।" [13]

 

এ প্রসঙ্গে আরো অনেক উদাহরণ উল্লেখ করা যায় কিন্তু আর কলেবর বড় করছি না। বনী ইস্রাঈলের মাঝে প্রেরিত শেষ নবী ঈসা(আ.)কে তারা অবিশ্বাস করেছে এবং হত্যা করার চেষ্টা করেছে। সারা জাহানের প্রতি প্রেরিত শেষ নবী মুহাম্মাদ()কে তারা অবিশ্বাস করেছে, তাঁকেও হত্যার চেষ্টা করেছে। এভাবে ঐতিহাসিকভাবে বনী ইস্রাঈলের মানুষেরা এবং বর্তমানের ইহুদি ধর্মালম্বীরা কুফরী অবলম্বন করেছে। আহলে কিতাবের (ইহুদি-খ্রিষ্টান) মাঝে কুফরীকারীদের ব্যাপারে অনন্ত জাহান্নামের কথা বলা হয়েছে। [14] কাজেই তারা আল্লাহ তা’আলার অঙ্গীকারের মাঝে আর শামিল নেই। আল কুরআন কখনো বলেনি বাইতুল মুকাদ্দাসের অধিকার কুফরীকারীদের জন্য। 

 

অনেক সময় জায়নবাদীদের কেউ কেউ দাবি করে কুরআনের অন্যতম প্রাচীন মুফাসসির ইবন জারির তাবারী(র.) নাকি স্বীয় তাফসির গ্রন্থে সুরা মায়িদাহর ২১ নং আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন পবিত্র ভূমির অধিকার ইহুদিদের জন্য। মোল্লা-মৌলভীরা নাকি সাধারণ মুসলিমদের চোখে ধুলো দিয়ে তাদের ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ভুল বোঝায়, ইহুদিদেরকে অধিকারবঞ্চিত করতে চায়! তাদের এহেন বিভ্রান্তিকর দাবির জবাবে আমরা তাফসির তাবারী থেকে আলোচ্য অংশ উল্লেখ করছি—

 

অর্থাৎ তিনি লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন যে, সে স্থানটি তোমাদেরই আবাসভূমি হবে, অত্যাচারী সম্প্রদায়ের নয়। কেউ প্রশ্ন করতে পারে, এ স্থলে আল্লাহ্ তা'আলা (সে স্থানকে তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন) বলেন কি করে, যেখানে তারা কখনই প্রবেশ করতে পারেনি? ইরশাদ হয়েছে, এ ভূমি তাদের জন্য নিষিদ্ধ, একই স্থানে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, আবার সেস্থান তাদের আবাসভূমিরূপে নির্দিষ্ট এরূপ পরস্পর বিরোধী কথা ‘লাওহে মাহফুযে' লেখা হল কি করে?

 

উত্তর এই যে, সে স্থানটি বনী ইসরাঈলের দেশ ও তাদের আবাসভূমি হিসেবে নির্ধারিত, এতে সন্দেহ নেই। তাই তো পরবর্তীকালে তারা সেখানে গমন করে, সেখানে তারা পুনর্বাসিত হয় এবং সেটা তাদেরই দেশ হয়ে যায়। এ কথা কুর'আন মজীদেই বর্ণিত আছে। মূসা 'আলায়হিস্ সালাম  ادْخُلُوا الْأَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِي كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ  বলে বুঝিয়েছেন যে, এ স্থানকে আল্লাহ্ তা'আলা বনী ইসরাঈলের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। বলা বাহুল্য, মূসা (আ) যাদেরকে সেখানে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা বনী ইসরাঈলের লোক। তিনি যাদেরকে আদেশ করেছিলেন, সেই তাদেরই জন্য যে সে স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে, একথা তিনি বুঝাননি। আবার এরূপও বলা যেতে পারে যে, লাওহে মাহফুযে তাদের বিশেষ কতকের জন্য সে স্থানকে নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। আয়াতের সম্বোধন ব্যাপক বটে, কিন্তু উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশেষ কতক। যেমন হযরত মূসা (আ) ও কালিব সেথায় প্রবেশ করেছিলেন, যাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছিল, এ দু'জন তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।[15]

 

এ প্রসঙ্গে আমরা যা বলব— ইমাম তাবারী(র.) এর বক্তব্য মোটেও জায়নবাদীদের পক্ষে যায় না। ইমাম তাবারী(র.) এর এই আলোচনার প্রেক্ষাপট হচ্ছেঃ আল কুরআনে বনী ইস্রাঈলকে পবিত্র ভূমিতে যাবার কথা বলা আবার এর পরবর্তীতে আবার সেই ভূমিকে তাদের জন্য নিষিদ্ধ বলা হল। এখানে কোনো স্ববিরোধিতা আছে কিনা এর জবাব দিতে গিয়ে ইমাম তাবারী(র.) এই আলোচনা করেছেন। তিনি “পবিত্র ভূমি বনী ইসরাঈলের দেশ ও তাদের আবাসভূমি” এই কথা অবশ্যই উল্লেখ করেছেন, তবে তা কিভাবে সেটাও ব্যাখ্যা করেছেন। কুরআন মাজিদেই উল্লেখ আছে কিভাবে পরবর্তীকালের নেককার বনী ইস্রাঈলের মানুষেরা পবিত্র ভূমি অধিকার করেছিল, দাউদ(আ.) এবং সুলাইমান(আ.) এর ন্যায় মহান নবী এবং নেককার বান্দারা সেই স্থানে শাসন করেছিলেন। ইমাম তাবারী(র.) সেই প্রসঙ্গেই উল্লেখ করেছেন যে, “পরবর্তীকালে তারা সেখানে গমন করে, সেখানে তারা পুনর্বাসিত হয় এবং সেটা তাদেরই দেশ হয়ে যায়। এ কথা কুর'আন মজীদেই বর্ণিত আছে”। তিনি এখানে আল কুরআনের বর্ণনার কথা উল্লেখ করেছেন, আর আল কুরআনে তো পবিত্র ভূমিতে বনী ইস্রাঈলের নেককার বান্দাদের ব্যাপারেই পরবর্তীকালে সেখানে গমন ও পুনর্বাসিত হবার বর্ণনা আছে। কিভাবে পবিত্র ভূমি বনী ইস্রাঈলের দেশ বা আবাসভূমি, তা এখানে স্পষ্ট। স্রেফ বনী ইস্রাঈলের মানুষ হলেই কুফরী করলেও এই ভূমির অধিকার তাদের – এমন কথা ইমাম তাবারী(র.) কষ্মিণকালেও বলেননি। তিনি নিজেই স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন, “আয়াতের সম্বোধন ব্যাপক বটে, কিন্তু উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশেষ কতক। যেমন হযরত মূসা (আ) ও কালিব সেথায় প্রবেশ করেছিলেন”। ইমাম তাবারী(র.) স্পষ্ট করেছেন আয়াতের উদ্দেশ্য ঢালাওভাবে বনী ইস্রাঈলের সব মানুষ না; নেককার-জালিম সবাই না। তিনি বনী ইস্রাঈলের নেককার বান্দা মুসা(আ.), কালিব প্রমুখের উদাহরণ দিয়েছেন। বাইতুল মুকাদ্দাসের অধিকার চিরকাল ধরে কুফরীকারী ইহুদিদের হাতেই থেকে যাবে – এমন কিছু আদৌ ইমাম তাবারী(র.) বলেননি। ইমাম তাবারী(র.) উল্লেখ করেছেনঃ “তিনি লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন যে, সে স্থানটি তোমাদেরই আবাসভূমি হবে, অত্যাচারী সম্প্রদায়ের নয়”। কিভাবে লাওহে মাহফুজের এই লিখন পূর্ণ হয়েছে? উত্তরঃ মুসা(আ.) এর পরবর্তীকালের নেককার বনী ইস্রাঈলের মানুষের দ্বারা। তাঁদের সময়ে অত্যাচারী মানুষেরা ঐ ভূমিকে আবাসভূমি বানাতে পারেনি। এই কথা শুধুমাত্র সেই সময়ের জন্য, আজকের যুগের জন্য এই কথা আদৌ সত্য হতে পারে না কেননা আজকের দিনে ফিলিস্তিনকে কব্জা করে অবৈধ এক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে চরম অত্যাচারী কিছু মানুষ।  

 

এ বিষয়টি পরিষ্কার যে আমাদের উপরের আলোচনার সঙ্গে ইমাম তাবারী(র.) এর বক্তব্যের কোনো সংঘর্ষ নেই। নিঃসন্দেহে বাইতুল মাকদিসের আল্লাহপ্রদত্ত অধিকার নেককার মুমিনদের জন্য। জালিম ও কুফরীতে লিপ্ত কারো জন্য নয়। তর্কের খাতিরে যদি এটাও ধরে নেয়া হয় যে ইমাম তাবারী(র.) এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী ফিলিস্তিনের অধিকার ইহুদিদের জন্য – এতেও এই সত্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। মুসলিমদের নিকট মুফাসসিরগণ সম্মানিত, কিন্তু কুরআনের আয়াতের ক্ষেত্রে মুফাসসিরদের কারো ব্যাখ্যা যদি নবী () এবং তাঁর সাহাবী-তাবিঈদের বুঝের সরাসরি বিপরীতে হয়, তাহলে সেই তাফসির প্রত্যাখ্যাত হয়। খুলাফায়ে রাশিদীনের যুগে বাইজান্টাইনদের হাত থেকে ফিলিস্তিনের ভূমি মুসলিমদের অধিকারে আসে। সেই সময়ে নবী () এর শ্রেষ্ঠ সাহাবীগণের প্রায় সবাই জীবিত ছিলেন। খলিফা উমার(রা.) নিজে বাইতুল মুকাদ্দাসে গমন করেন, সেই নগরের চাবি গ্রহণ করেন, বাইতুল মুকাদ্দাসের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে মসজিদের ইমারত স্থাপন করেন। [16] সে অঞ্চলে ইসলামী শাসন কায়েম করেন। সাহাবী-তাবিঈদের যুগে, ইমামদের যুগে এবং পরবর্তীতেও ইসলামী ব্যবস্থা কায়েম ছিল। নবী () এর সাহাবী-তাবিঈদের কেউ আল কুরআন থেকে এটা বোঝেননি যে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের অধিকার ইহুদিদের। তাঁরা কেউ ইহুদিদের জন্য আলাদা করে সেখানে কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেননি বরং তাঁরা ইসলামের ভূমি হিসেবে ঐ অঞ্চলকে গণ্য করেছেন। [17]  ১৪০০ বছর পরে কেউ যদি ইমাম তাবারী(র.) কিংবা অন্য কোনো উলামার বক্তব্যকে অপব্যাখ্যা করে নতুন কিছু দাবি করে, এতে কিছুই আসে যায় না। মুসলিমদের নিকট আল কুরআন অবিকৃত অবস্থায় আছে এবং সালাফে সলিহীনের বুঝও মুসলিমদের নিকট স্পষ্ট।

 

কখনো কখনো এই আয়াত উদ্ধৃত করে দাবি করা হয় যে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের অধিকার ইহুদিদেরকে দেয়া হয়েছে— 

 

وَّ قُلۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهٖ لِبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اسۡکُنُوا الۡاَرۡضَ فَاِذَا جَآءَ وَعۡدُ الۡاٰخِرَۃِ جِئۡنَا بِکُمۡ لَفِیۡفًا

অর্থঃ “আর আমি এরপর বনী ইসরাঈলকে বললাম, ‘তোমরা যমীনে বাস কর, অতঃপর যখন আখিরাতের ওয়াদা আসবে তখন আমি তোমাদেরকে জড়ো করে নিয়ে আসব।[18]

 

এই আয়াত থেকে কিভাবে ফিলিস্তিনের চিরন্তন অধিকার ইহুদিদের বলে দাবি করা হয় তা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক। এই আয়াতের প্রসঙ্গ হচ্ছেঃ ফিরআউনকে নিমজ্জিত করার পরে বনী ইস্রাঈলকে সাধারণভাবে যমিনে (কোনো কোনো মুফাসসিরের মতে এর অর্থ ফিলিস্তিনে [19]) বসবাস করতে বলা হয়েছে। এরপরে আখিরাতে সবাইকে যখন হাশরের ময়দানে জড়ো করা হবে সেই কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। [20] এই আয়াত ছাড়াও কুরআন থেকে  আরো কিছু আয়াত জায়নবাদীরা দেখানোর চেষ্টা করে যেখানে মুসা(আ.) এবং অন্য নবীদের সময়ে বনী ইস্রাঈলকে পবিত্র ভূমিতে থাকার কথা বা সেখানকার উত্তরাধিকারী করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বনী ইস্রাঈলকে সে সময়ে ফিলিস্তিনে থাকতে বলার অর্থ তো এই না যে সর্বযুগে সকল অবস্থায় ঐ ভূমির উপর তাদের বংশের অধিকার দিয়ে দেয়া হয়েছে! অতীতে বনী ইস্রাঈল কর্তৃক সেই স্থানে অবস্থান, তাদের নেকবার মানুষদের দ্বারা অতীতে বাইতুল মাকদিস আবাদ, এসব ব্যাপারে কুরআন-হাদিসের আলোকে মুসলিমরা ওয়াকিবহাল। কিন্তু সে সময় তারা ছিল নবীদের অনুসারী, তারা ছিল মুসলিম। মুমিন এবং মুসলিম বান্দা হিসেবে তারা বাইতুল মাকদিস আবাদ করেছে। তারা বাইতুল মাকদিসের দায়িত্ব পালন করেছিল ও উত্তরাধিকারী হয়েছিল তাদের ইসলামের জন্য। তাদের জাতিসত্তার জন্য না। যখন তার ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে, এই অধিকার তারা হারিয়ে ফেলেছে। তখন এই অধিকার ও দায়িত্ব বর্তেছে তাদের উপর যারা আল্লাহ ও তাঁর নবীর অনুসারী।

 

জায়নবাদীরা কুরআনের কিছু আয়াত থেকে অতীতে নবীদের যুগে সেই ভূমিতে বনী ইস্রাঈলের অবস্থান ও অধিকার করার উদাহরণ দেখায় এরপর বলেঃ “এই দেখো কুরআন অনুযায়ী এই ভূমি ইহুদিদের!” মূলত এটা নিকৃষ্ট এক মিথ্যাচার। নবী-রাসুলদের যুগে বনী ইস্রাঈল ইসলামের উপরে ছিল, তখনও তারা ‘ইহুদি ধর্মে’ চলে যায়নি। আমরা উপরেই কুরআন থেকে দেখিয়েছি সব নবীই নিজ জাতিকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেছেন। আর অতীতে কোনো জাতিকে একটা অঞ্চলের আবাদের দায়িত্ব দেবার অর্থ এই নয় চিরকালের জন্য তাদের কাফির উত্তরপুরুষদেরকেও সেটা দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি কুফরীর দ্বারা কিভাবে ইহুদিরা আল্লাহ তা’আলার অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হয়েছে। কাজেই এই আয়াতগুলো থেকে এর বিপরীতে নতুন কিছুই প্রমাণিত হয় না। অতীতে যেমন নবী-রাসুলের অনুসারী বনী ইস্রাঈলের মানুষের নিকট বাইতুল মাকদিসের অধিকার ছিল, বর্তমানে শেষ নবী মুহাম্মাদ() এর অনুসারীদের নিকট বাইতুল মাকদিসের অধিকার।

 

 

তথ্যসূত্রঃ


[1] আল কুরআন, মায়িদাহ  ৫ : ২১

[2] আল কুরআন, মায়িদাহ  ৫ : ২৫-২৬

[3] তাফসির বায়দ্বাওয়ী, সুরা মায়িদাহর ২১ নং আয়াতের তাফসির

https://www.altafsir.com/Tafasir.asp?tMadhNo=1&tTafsirNo=6&tSoraNo=5&tAyahNo=21&tDisplay=yes&UserProfile=0&LanguageId=1

অথবা https://archive.is/wip/s8VPR (আর্কাইভকৃত)

[4] তাফসির ইবন কাসির, ৩য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা মায়িদাহর ২১ নং আয়াতের তাফসির পৃষ্ঠা ৪৮৮

[5] আল কুরআন, আরাফ  ৭ : ১২৮

[6] আল কুরআন, ইউনুস  ১০ : ৮৪

[7] আল কুরআন, ইউনুস  ১০ : ৭২

[8] আল কুরআন, বাকারাহ  ২ : ১৩২

[9] আল কুরআন, আলে ইমরান  ৩ : ৬৭

[10] আল কুরআন, বাকারাহ  ২ : ১২৪

[11] আল কুরআন, মায়িদাহ  ৫ : ১২-১৩

[12] আল কুরআন, বাকারাহ  ২ : ৬১

[13] আল কুরআন, বাকারাহ  ২ : ৮৭

[14] আল কুরআন, বাইয়িনাহ  ৯৮ : ৬ দ্রষ্টব্য

[15] তাফসির তাবারী, ৮ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা মায়িদাহর ২১ নং আয়াতের তাফসির পৃষ্ঠা ৩৭৫-৩৭৬

[17]  বলা বাহুল্য ফিলিস্তিনকে ইসলামের ভূমি গণ্য করলেও অন্য অধিবাসীদেরকে তাঁরা উদ্বাস্তু ও অধিকারবিহীন অবস্থায় ফেলেননি। সেখানে ইনসাফমূলক ইসলামী শাসনের অধীনে মুসলিমদের পাশাপাশি ইহুদি-খ্রিষ্টানরাও বসবাস করেছে। 

[18] আল কুরআন, বনী ইস্রাঈল (ইসরা) ১৭ : ১০৪

[19] দেখুনঃ তাফসির আহসানুল বায়ান, সুরা বনী ইস্রাঈলের ১০৪ নং আয়াতের তাফসির

https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=2133

[20] দেখুনঃ তাফসির সা’দী (ইংরেজি), খণ্ড ৫, সুরা বনী ইস্রাঈলের ১০৪ নং আয়াতের তাফসির পৃষ্ঠা ৩২৭