Pray for the world economy

আগুনে সব কিছু পুড়ে গেলেও পোড়েনি কুরআন!

 

আমাদের দেশে কখনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে "আগুনে সব কিছু পুড়ে গেলেও পোড়েনি কুরআন!" - এই ধরণের সংবাদ অনেকেই প্রচার করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরণের বিভিন্ন পোস্ট ভাইরাল হতে দেখা যায়। তবে এসব সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন আছে। আর কিছু বিষয় নিয়ে সচেতনতারও দরকার রয়েছে।

 

প্রথমতঃ 

আল্লাহ ইচ্ছা করলে যে কোনোভাবে অলৌকিকতার প্রকাশ ঘটাতে পারেন। আল্লাহ চাইলে অলৌকিকভাবে কুরআনুল কারিমের কোনো কপিকে পোড়া থেকে হেফাজত করতে পারেন। বা অন্য কোনোভাবে নিদর্শন দেখাতে পারেন। আল্লাহ তা'আলা সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

 

দ্বিতীয়তঃ

তবে কখনো কখনো দেখা যায় এই মর্মে প্রচারিত সংবাদগুলো সঠিক নয়। হয়তো কুরআন নয় বরং অন্য কিছু পোড়েনি। যখন অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যাওয়া সংবাদগুলো ভুল প্রমাণিত হয়, তখন সাধারণ অজ্ঞ মানুষের ঈমান বৃদ্ধির বদলে উল্টো বিপরীত প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। হয়তো তারা ধার্মিক মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারেও বীতশ্রদ্ধ হয়ে যেতে পারে। কোনো সংবাদ শুনলে তা যাচাই করে নেয়া এবং মিথ্যা সংবাদ না ছড়ানো এগুলো শরিয়তের দাবি। কাজেই এসব সংবাদ প্রচারের পূর্বে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিত।

 

তৃতীয়তঃ

আগুনে কোনো কক্ষ সম্পূর্ণ পুড়ে গেলেও অনেক সময় এর ভেতরকার সবকিছুই শতভাগ পুড়ে যায় না। অনেক কিছুই আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে অক্ষত থেকে যায়। কোনো কিছু পুড়ে না গেলেই যে সেটা সবসময় অলৌকিকতার প্রকাশ হিসেবে হয় তা কিন্তু নয়। হয়তো কেবিনেটের মধ্যে থেকে যাওয়া অন্য কোনো বই, দলিল-দস্তাবেজ এগুলোও অক্ষত থাকতে পারে। এর অর্থ এই না যে সেগুলো আল্লাহর কিতাব!

 

কখনো কখনো ভিন্ন ধর্মালম্বী অনেককে দেখা যায় তারাও একইভাবে দাবি করছে আগুনে আর সব কিছু পুড়ে গেলেও তাদের ধর্মগ্রন্থ পোড়েনি। কেউ যদি এটা বিশ্বাস করে বসে থাকে যে স্রেফ আগুনে না পোড়াই একটা গ্রন্থের "সত্যতার প্রমাণ" - তাহলে তো তার ঐসব ধর্মগ্রন্থকেও বিশ্বাস করতে হবে! কাজেই ফেসবুকে প্রচারিত ভাইরাল নিউজ দেখে সেগুলোকে নিজ ঈমানের মানদণ্ড বানানো যাবে না। কোনো গ্রন্থের সত্যতার প্রমাণ এর বক্তব্য বিষয়ের মাঝে। এর দলিল-প্রমাণের মাঝে।

 

চতুর্থতঃ

"আগুনে সব কিছু পুড়ে গেলেও পোড়েনি কুরআন!" - এই ধরণের ভাইরাল নিউজগুলো দেখে দেখে অনেক অজ্ঞ ব্যক্তির এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যেতে পারে যে আগুনে কখনোই কুরআন পোড়ে না!! এই ধরণের অজ্ঞ ব্যক্তিদের আবেগে গদগদ হতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি ঈমানহারা হতেও সময় লাগে না। এদের সামনে কখনো কুরআন বা অন্য ইসলামী কিতাব পুড়ে যাবার সংবাদ দেখানো হলে এরা সংশয়ে পড়ে বসে থাকে। শুনতে হাস্যকর লাগলেও সমাজের অনেক মানুষের অবস্থা এরূপ। আল্লাহ তা'আলাই সাহায্যস্থল।

 

কোনো স্থানে অগ্নিকাণ্ড হলে কুরআন, সহীহ বুখারী বা যে কোনো ইসলামী কিতাব পুড়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এর ফলে মোটেও কুরআন বা ইসলাম মিথ্যা প্রমাণিত হয় না। খলিফা উসমান(রা.) এর আমলে কুরআন সংকলনের সময়ে সাহাবীদের কমিটির ইজমার দ্বারা প্রস্তুতকৃত কুরআনের কপিগুলো বাদে অন্যান্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরিকৃৎ কুরআনের কপিগুলোকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। কেননা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরিকৃত কপিগুলোতে ভুল-ত্রুটি থেকে যাবার ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল এবং সেগুলো থেকে গেলে পরবর্তীকালের মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশাল ফিতনার কারণ হতো। সাহাবীদের এই আমলের আলোকে উলামাগণ দলিল দেন যে অতিমাত্রায় পুরনো কুরআনের পৃষ্ঠা পড়ার অনুপযোগী হয়ে গেলে সেগুলো যেখানে সেখানে নোংরা স্থানে ফেলে না দিয়ে বরং পুড়িয়ে দেয়া উচিত। এর ফলে কুরআনের অবমাননা হয় না। [1]

 

কুরআনের পৃষ্ঠা দহনযোগ্য কোনো বস্তু দ্বারা তৈরি হলে তা অবশ্যই পুড়ে যেতে পারে। আল্লাহ তা'আলা আগুনের মাঝে পোড়ানোর গুণাবলি সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই আগুন যে কোনো দহনযোগ্য জিনিসকে পোড়াতে পারে।  এই স্বাভাবিক জিনিস দেখে কারো যেন ঈমানে সংশয় সৃষ্টি না হয়।

 

পঞ্চমতঃ

সর্বোপরি ফেসবুকের ভাইরাল নিউজ নিয়ে বেশি আবেগাপ্লুত না হয়ে আমাদের উচিত কুরআন পাঠ করা, এর অর্থ ও তাফসির পাঠ করা। এর দ্বারাই কুরআনের হক আদায় হয়।  কুরআনের মধ্যে মানুষকে দান-সদকার করার বিধান দেয়া হয়েছে। কাজেই আমরা সাধ্য থাকলে বঙ্গবাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসবো ইন শা আল্লাহ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে চটকদার ভাইরাল নিউজ নিয়ে বেশি আবেগাপ্লুত না হয়ে কুরআন সুন্নাহ অধ্যায়ন এবং এগুলোর উপরে আমলের মাঝেই প্রকৃত মুসলিমের পরিচয়। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝ দান করুন।

  

 

তথ্যসূত্রঃ


[1] "Burning pages of the Mus-haf that have become worn out" - IslamQA (Shaykh Muhammad Saalih al Munajjid)

https://islamqa.info/en/105326/

অথবা https://archive.is/wip/sR480  (আর্কাইভকৃত)