Pray for the world economy

নবী ﷺ এর আল-আমিন উপাধীর কাহিনী কতটুকু সত্য? ইসলাম কি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শিক্ষা দেয়?

 

ভূমিকাঃ

সিরাত শাস্ত্রে আমরা দেখি, সর্বোত্তম চরিত্রের উদাহরণ ছিলেন নবী মুহাম্মাদ ইসলাম প্রচারের পূর্ব থেকেই আরবের জনগণের নিকট তিনি পরিচিত ছিলেন ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসযোগ্য/বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে। নবী মুহাম্মাদ এর চরিত্রের এই দিকটি অনেক মানুষকেই যুগে যুগে ইসলাম গ্রহণের দিকে আগ্রহী করে তুলেছে। ইসলামের এই অগ্রযাত্রা ঠেকানোর কোনো কোনো ইসলামবিরোধী নবী মুহাম্মাদ এর আল-আমিন হবার এই বিষয়টি মিথ্যা প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা শুরু করেছে। তারা দাবি করে, নবী এর আল-আমিন উপাধীতে আখ্যায়িত হবার এই বিষয়টি নাকি কোনো বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থে নেই, এটি নাকি অনেক পরে লিখিত সিরাত গ্রন্থে আছে। তারা আরো দাবি করে, মুহাম্মাদ নাকি স্রেফ সাহাবীদের দ্বারাই বিশ্বস্ত হিসেবে আখ্যায়িত হতেন, মক্কার অমুসলিমদের দ্বারা না।

 

এটা সত্য যে, সিরাত গ্রন্থগুলোতে প্রচুর জাল-যঈফ বর্ণনা আছে (আবার সহীহ বর্ণনাও আছে)। কিন্তু এইসব ইসলামবিরোধীরা নবী এর ব্যাপারে খারাপ কিছু প্রমাণ করতে চাইলে সিরাত গ্রন্থ থেকে (অপব্যাখ্যা সহকারে) নানা রকম জাল-যঈফ বর্ণনা নিয়ে আসতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। কিন্তু যখনই সিরাত গ্রন্থের কোনো তথ্য নবী এর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তখনই তারা সিরাত শাস্ত্রের ব্যাপারে সংশয়বাদী হয়ে যায়। মূলত এইসব ইসলামবিরোধীর কোনো সুনির্দিষ্ট জ্ঞানগত নীতিমালা নেই, সততাও নেই। তাদের একমাত্র নীতি হল যে কোনো উপায়ে ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপব্যাখ্যা করা।

 

বিশুদ্ধ হাদিসে নবী মুহাম্মাদ এর ‘আল-আমিন’ উপাধীর উল্লেখঃ

বিশুদ্ধ হাদিসের মাঝে নবী এর আল-আমিন উপাধীতে আখ্যায়িত হবার উল্লেখ নেই – ইসলামবিরোধীদের এহেন দাবি নির্জলা মিথ্যা অথবা অজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত। সিরাত গ্রন্থগুলোতে তো বটেই, বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থগুলোতেও বিভিন্ন স্থানে নবী এর ‘আল-আমিন’ উপাধীতে আখ্যায়িত হওয়া এবং সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত হবার উল্লেখ রয়েছে। এই সম্পর্কিত হাদিসের বর্ণনা এত বিপুল যে, জ্ঞানী মুসলিমমাত্রই এই ব্যাপারে ওওয়াকিবহাল। দুঃখজনক বিষয় হল সমাজের বেশিরভাগ মুসলিমই হাদিস ও সিরাত সম্পর্কে খুব সামান্য ধারণা রাখে। তাদের এই অজ্ঞতার সুযোগে ইসলামবিরোধীরা এই মিথ্যাচারগুলো করে।

 

১ম হাদিসঃ

 فَقَالُوا: اجْعَلُوا بَيْنَكُمْ حَكَمًا، قَالُوا: أَوَّلَ رَجُلٍ يَطْلُعُ مِنَ الْفَجِّ، فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: أَتَاكُمُ الْأَمِينُ، فَقَالُوا لَهُ، " فَوَضَعَهُ فِي ثَوْبٍ، ثُمَّ دَعَا بُطُونَهُمْ فَأَخَذُوا بِنَوَاحِيهِ مَعَهُ، فَوَضَعَهُ هُوَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ "

অর্থঃ “তারা [কুরাঈশরা] বললঃ তোমরা নিজেদের মধ্যে একজনকে বিচারক বানাও।তারা বলল: যে প্রথম ব্যক্তি এই গিরিপথ থেকে বের হয়ে আসবে, তাকেই (বিচারক বানানো হবে)।তখন নবী এলেন, তারা বললঃ তোমাদের কাছে আল-আমিন (বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি) এসে গেছেন! এরপর তারা তাঁর সাথে কথা বলল, তখন তিনি পাথরটিকে একটি কাপড়ে রাখলেন, তারপর বিভিন্ন গোত্রের প্রধানদের ডাকলেন, তারা সবাই কাপড়ের কোণাগুলো ধরে নিল তাঁর সাথে, তারপর তিনি পাথরটিকে তার স্থানে বসিয়ে দিলেন।[1]

 

২য় হাদিসঃ

وَإِنَّ قُرَيْشًا اخْتَلَفُوا وَتَشَاجَرُوا فِي الْحَجَرِ أَيْنَ يَضَعُونَهُ، حَتَّى كَادَ يَكُونُ بَيْنَهُمْ قِتَالٌ بِالسُّيُوفِ، فَقَالَ: انْظُرُوا أَوَّلَ رَجُلٍ يَدْخُلُ مِنْ بَابِ الْمَسْجِدِ، فَدَخَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: هَذَا أَمِينٌ، وَكَانُوا يُسَمُّونَهُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَمِينًا، فَقَالُوا: هَذَا مُحَمَّدٌ، فَجَاءَ وَأَخَذَ ثَوْبًا وَبَسَطَهُ، وَوَضَعَ الْحَجَرَ فِيهِ، فَقَالَ لِهَذَا الْبَطْنِ، وَلِهَذَا الْبَطْنِ، وَلِهَذَا الْبَطْنِ: ” لِيَأْخُذْ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْكُمْ بِنَاحِيَةِ الثَّوْبِ، فَفَعَلُوا، فَأَخَذَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَوَضَعَهُ فِيمَكَانِهِ

অর্থঃ “কুরাইশরা যখন হাজরে আসওয়াদ (কাবার কালো পাথর) কোথায় স্থাপন করবে তা নিয়ে মতবিরোধ ও ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ল, এমনকি তাদের মধ্যে প্রায় তলোয়ার যুদ্ধ বেঁধে যেত তখন তারা বললঃ মসজিদের দরজা দিয়ে যে প্রথম ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তার সিদ্ধান্তই মেনে নেব।

তখন রাসূলুল্লাহ মসজিদে প্রবেশ করলেন। তারা বললঃ "এ তো আমিন (বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি)!" তারা জাহিলিয়াত যুগে তাঁকে ‘আমিন’ বলেই ডাকত। তারা বললঃ "এ তো মুহাম্মাদ।"

এরপর রাসূলুল্লাহ একটি চাদর নিলেন এবং তা বিছিয়ে দিলেন, হাজরে আসওয়াদ সেই চাদরের ওপর রাখলেন, তারপর প্রতিটি গোত্রকে বললেনঃ "তোমরা সবাই চাদরের একেক কোণ ধরে নাও।" তারা তা করল। এরপর রাসূলুল্লাহ নিজ হাতে পাথরটি তুলে নিয়ে তার স্থানে বসিয়ে দিলেন।[2]

 

৩য় হাদিসঃ

فَقَالَ: اجْعَلُوا بَيْنَكُمْ أَوَّلَ رَجُلٍ يَدْخُلُ مِنَ الْبَابِ، فَدَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: هَذَا الْأَمِينُ، وَكَانُوا يُسَمُّونَهُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ الْأَمِينَ، فَقَالُوا: يَا مُحَمَّدُ، قَدْ رَضِينَا بِكَ، " فَدَعَا بِثَوْبٍ فَبَسَطَهُ وَوَضَعَ الْحَجَرَ فِيهِ،

অর্থঃ “সে বললোঃ তোমরা [কুরাইশরা] নিজেদের মধ্যে প্রথম যে ব্যক্তি দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, তাকে বিচারক বানাও।তখন রাসূলুল্লাহ প্রবেশ করলেন। তারা বললঃ এ তো আল-আমিন! কেননা জাহিলিয়াত যুগে তারা তাঁকে আল-আমিন বলেই ডাকত। তারা বললঃ হে মুহাম্মাদ, আমরা তোমাকে বিচারক হিসেবে মেনে নিলাম।তখন তিনি একটি কাপড় আনালেন, সেটি বিছিয়ে দিলেন এবং হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) তাতে রাখলেন।[3]

 

আমরা দেখলাম এই সহীহ হাদিসগুলোতে কাবা পুননির্মাণের সময়কার ঘটনার উল্লেখ আছে। সেখানে কুরাইশদের সবগুলো গোত্র উপস্থিত ছিল। এই সকল গোত্র সম্মিলিতভাবে মুহাম্মাদ এর আল-আমিন হবার বিষয়টি উল্লেখ করেছে এবং সন্তুষ্টচিত্তে তাঁকে বিচারক হিসেবে মেনে নিয়েছে।

নবী ﷺ এর ‘আল-আমিন’ উপাধী সংক্রান্ত আরো অনেক বর্ণনা আছে যেগুলোতে কিছু সনদগত দুর্বলতা আছে বিধায় এখানে উল্লেখ করা হল না। এই বিশুদ্ধ বিবরণগুলোর সমর্থক হিসেবে ঐ বর্ণনাগুলো গণ্য হবে।

 

আরো যেসব হাদিসে নবী() এর সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততা প্রমাণ হয়ঃ

 

৪র্থ হাদিসঃ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ (وَأَنْذِرْ عشيرتك الْأَقْرَبين) صَعِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّفَا فَجَعَلَ يُنَادِي: «يَا بَنِي فِهْرٍ يَا بَنِي عَدِيٍّ» لِبُطُونِ قُرَيْشٍ حَتَّى اجْتَمَعُوا فَقَالَ: «أَرَأَيْتَكُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ خَيْلًا بِالْوَادِي تُرِيدُ أَنْ تُغِيرَ عَلَيْكُمْ أَكُنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ؟ » قَالُوا: نَعَمْ مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلَّا صِدْقًا. قَالَ: «فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٌ شَدِيدٌ» . فَقَالَ أَبُو لَهَبٍ: تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمَ أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟ فَنَزَلَتْ: (تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ) مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.

অর্থঃ “ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাযিল হয় (وَ اَنۡذِرۡ عَشِیۡرَتَکَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ) “(হে নবী!) তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও”- (সূরাহ আশ শুআরা ২৬ : ২১৪); তখন নবী (সা.) সাফা পাহাড়ে উঠলেন এবং হে বনী ফিহর! হে বনী আদী! বলে কুরায়শদের বিভিন্ন গোত্রকে উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান করলেন, এতে তারা সকলে জড়ো হয়ে গেল। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, বল তো আমি যদি এখন তোমাদেরকে বলি যে, এ পাহাড়ের উপত্যকায় একটি অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনী তোমাদের ওপর হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, তবে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? সমবেত সকলে বলল, হ্যা, কারণ আমরা আপনাকে সদা সত্যবাদীই পেয়েছি। তখন তিনি (সা.) বললেন, “আমি তোমাদের সম্মুখে একটি কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি।এ কথা শুনে আবূ লাহাব বলল, সারাটা জীবন তোমার ধ্বংস হোক। তুমি কি এজন্যই আমাদেরকে একত্রিত করেছ? এমতাবস্থায় অবতীর্ণ হলো (تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَهَبٍ وَّ تَبَّ ؕ)  আবূ লাহাব-এর উভয় হাত ধ্বংস হোক এবং তার বিনাশ হোক”- (সূরাহ্ লাহাব ১১১:১)। (বুখারী ও মুসলিম)[4]

 

এই হাদিসেও মক্কার আরবদের গোত্রগুলো সম্মিলিতভাবে মুহাম্মাদ কে সত্যবাদী হিসেবে সত্যায়ন করেছে।

 

৫ম হাদিসঃ

رَوَى الْبَيْهَقِيُّ بِسَنَدِهِ عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ:

إِنَّ أَوَّلَ يَوْمٍ عَرَفْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ أَنِّي أَمْشِي أَنَا وَأَبُو جَهْلٍ بْنُ هِشَامٍ فِي بَعْضِ أَزِقَّةِ مَكَّةَ؛ إِذْ لَقِينَا رَسُولَ اللَّهِ ﷺ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لِأَبِي جَهْلٍ:

"يَا أَبَا الْحَكَمِ! هَلُمَّ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ، أَدْعُوكَ إِلَى اللَّهِ".

فَقَالَ أَبُو جَهْلٍ: يَا مُحَمَّدُ! هَلْ أَنْتَ مُنْتَهٍ عَنْ سَبِّ آلِهَتِنَا؟ هَلْ تُرِيدُ إِلَّا أَنْ نَشْهَدَ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ؟ فَنَحْنُ نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ، فَوَاللَّهِ؛ لَوْ أَنِّي أَعْلَمُ أَنَّ مَا تَقُولُ حَقٌّ لَاتَّبَعْتُكَ.

فَانْصَرَفَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ، وَأَقْبَلَ عَلَيَّ فَقَالَ: وَاللَّهِ؛ إِنِّي لَأَعْلَمُ أَنَّ مَا يَقُولُ حَقٌّ، وَلَكِنْ يَمْنَعُنِي شَيْءٌ؛ إِنَّ بَنِي قُصَيٍّ قَالُوا: فِينَا الْحِجَابَةُ. فَقُلْنَا: نَعَمْ. ثُمَّ قَالُوا: فِينَا السِّقَايَةُ. فَقُلْنَا: نَعَمْ. ثُمَّ قَالُوا: فِينَا النَّدْوَةُ. فَقُلْنَا: نَعَمْ. ثُمَّ قَالُوا: فِينَا اللِّوَاءُ. فَقُلْنَا: نَعَمْ. ثُمَّ أَطْعَمُوا وَأَطْعَمْنَا، حَتَّى إِذَا تَحَاكَّتِ الرُّكَبُ قَالُوا: مِنَّا نَبِيٌّ! وَاللَّهِ لَا أَفْعَلُ.

অর্থঃ “বায়হাকী(র.) তাঁর সনদে মুগিরাহ বিন শুবাহ (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ

আমি যেদিন প্রথম আল্লাহর রাসূলুল্লাহ -কে চিনলাম, সেদিন আমি ও আবু জাহল ইবন হিশাম মক্কার এক গলিতে হাঁটছিলাম। এমন সময় আমরা রাসূলুল্লাহ -এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ আবু জাহলকে বললেনঃ হে আবুল-হাকাম! আল্লাহর দিকে এবং তাঁর রাসূলের দিকে এসো, আমি তোমাকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করছি।

তখন আবু জাহল বলল, হে মুহাম্মাদ! তুমি কি আমাদের দেবতাদের গালি দেওয়া বন্ধ করবে না? তুমি কি কেবল এটাই চাও না যে আমরা সাক্ষ্য দিই যে তুমি তোমার বার্তা পৌঁছে দিয়েছ? আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি পৌঁছে দিয়েছ। কিন্তু আল্লাহর কসম! যদি আমি জানতাম যে তুমি যা বলছো তা সত্য, তবে অবশ্যই আমি তোমার অনুসরণ করতাম।

 

এরপর রাসূলুল্লাহ সরে গেলেন, আর আবু জাহল আমার [মুগিরাহ বিন শু’বাহ] দিকে ফিরল এবং বললঃ আল্লাহর কসম! আমি তো জানি, সে যা বলছে তা সত্য। কিন্তু আমাকে একটি বিষয় আটকে রাখছে। বনী কুসাই [নবী() এর গোত্র] বললঃ আমাদের হাতে থাকবে হিজাবাহ (কাবার তত্ত্বাবধান)। আমরা বললাম, হ্যাঁ তারপর তারা বললঃ আমাদের হাতে থাকবে সিকায়াহ (হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্ব) আমরা বললাম, হ্যাঁ। তারপর তারা বললঃ আমাদের হাতে থাকবে নাদওয়াহ (পরামর্শ সভা)। আমরা বললাম, হ্যাঁ। তারপর তারা বললঃ আমাদের হাতে থাকবে লিওয়া (যুদ্ধের পতাকা)। আমরা বললাম, হ্যাঁ। এরপর তারা খাদ্য দিল, আমরাও খাদ্য দিলাম। এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হাঁটু হাঁটুতে লেগে গেল। তারপর তারা বললঃ আমাদের মধ্য থেকে একজন নবী এসেছে! আল্লাহর কসম! আমি এটা কখনো মেনে নেব না।[5]

 

এই হাদিসে মক্কায় নবী এর সব থেকে বড় বিরোধী আবু জাহলও তাঁকে সত্যবাদী হিসেবে সত্যায়ন করেছে। শুধুমাত্র গোত্রগত দ্বন্দ্বের কারণে তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি। এই বিষয়টি সে ঐ সময়ে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মুগিরাহ(রা.) এর নিকট ব্যক্ত করেছিল, যিনি ইসলাম গ্রহণের পরে তা উল্লেখ করেছেন।

 

৬ষ্ঠ হাদিসঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا الْقَاسِمِ الصَّادِقَ الْمَصْدُوقَ صلى الله عليه وسلم صَاحِبَ هَذِهِ الْحُجْرَةِ يَقُولُ " لاَ تُنْزَعُ الرَّحْمَةُ إِلاَّ مِنْ شَقِيٍّ " .

অর্থঃ “আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবুল কাসিম -কে বলতে শুনেছি, লোকেরা যাকে সত্যবাদী বলে জানতো, যিনি এই হুযরায় থাকতেন; তিনি বলতেনঃ দুর্ভাগা ব্যতীত আর কারো থেকে রহমত কেড়ে নেয়া হয় না। ”  [6]

 

এই বিশুদ্ধ হাদিসের মাঝে এই উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে যে, সেই সময়ের লোকেরা মুহাম্মাদ কে সত্যবাদী বলে জানতো।

 

৭ম হাদিসঃ

كَلاَّ أَبْشِرْ فَوَاللهِ لاَ يُخْزِيكَ اللهُ أَبَدًا وَاللهِ إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَصْدُقُ الْحَدِيثَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَتَقْرِى الضَّيْفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ

অর্থঃ "মহানবী এর প্রথম স্ত্রী খাদীজা (রাঃ), তিনিই নবুঅতের শুরুতে সান্ত্বনা দিয়ে সাহস দিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ’কক্ষনো না। আপনি সুসংবাদ নিন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে কখনই লাঞ্ছিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখেন, সত্য কথা বলেন, (অপরের) বোঝা বইয়ে দেন, মেহমানের খাতির করেন এবং বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করেন।’ "  [7]

 

একজন মানুষকে সব থেকে উত্তমভাবে চেনে তার স্ত্রী। এই হাদিসে দেখা যাচ্ছে নবী এর স্ত্রী খাদিজা(রা.) তাঁর বিভিন্ন গুণাবলি উল্লেখের মাঝে তাঁর সত্যবাদিতার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।

 

৮ম হাদিসঃ

মক্কার জীবনে নিপিড়িত মুসলিমরা হাবশা (আবিসিনিয়া/ইথিওপিয়া)তে হিজরত করলে সেখনকার শাসক নাজ্জাসীর নিকট ইসলামের শিক্ষাগুলো বর্ণনা করে নবী এর চাচাতো ভাই এবং বিশিষ্ট সাহাবী জাফর বিন আবু তালিব(রা.) বলেছিলেন—

 

أَيُّهَا الْمَلِكُ، كُنَّا قَوْمًا أَهْلَ جَاهِلِيَّةٍ نَعْبُدُ الْأَصْنَامَ، وَنَأْكُلُ الْمَيْتَةَ وَنَأْتِي الْفَوَاحِشَ، وَنَقْطَعُ الْأَرْحَامَ، وَنُسِيءُ الْجِوَارَ يَأْكُلُ الْقَوِيُّ مِنَّا الضَّعِيفَ، فَكُنَّا عَلَى ذَلِكَ حَتَّى بَعَثَ اللهُ إِلَيْنَا رَسُولًا مِنَّا نَعْرِفُ نَسَبَهُ، وَصِدْقَهُ، وَأَمَانَتَهُ، وَعَفَافَهُ، " فَدَعَانَا إِلَى اللهِ لِنُوَحِّدَهُ، وَنَعْبُدَهُ، وَنَخْلَعَ مَا كُنَّا نَعْبُدُ نَحْنُ وَآبَاؤُنَا مِنْ دُونِهِ مِنَ الحِجَارَةِ وَالْأَوْثَانِ، وَأَمَرَنَا بِصِدْقِ الْحَدِيثِ، وَأَدَاءِ الْأَمَانَةِ، وَصِلَةِ الرَّحِمِ، وَحُسْنِ الْجِوَارِ، وَالْكَفِّ عَنِ الْمَحَارِمِ، وَالدِّمَاءِ، وَنَهَانَا عَنِ الْفَوَاحِشِ، وَقَوْلِ الزُّورِ، وَأَكْلِ مَالَ الْيَتِيمِ، وَقَذْفِ الْمُحْصَنَةِ، وَأَمَرَنَا أَنْ نَعْبُدَ اللهَ وَحْدَهُ لَا نُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَأَمَرَنَا بِالصَّلاةِ، وَالزَّكَاةِ، وَالصِّيَامِ "، قَالَ: فَعَدَّدَ عَلَيْهِ أُمُورَ الْإِسْلامِ،

অর্থঃ হে বাদশাহ! আমরা ছিলাম এক অজ্ঞ জাতি। আমরা মূর্তিপূজা করতাম, মৃত প্রাণীর মাংস খেতাম, অশ্লীল কাজে লিপ্ত হতাম, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করতাম, প্রতিবেশীর প্রতি খারাপ আচরণ করতাম, আর আমাদের মধ্যে শক্তিশালী দুর্বলকে গিলে খেত। আমরা এ অবস্থায়ই ছিলাম যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করলেন, যিনি আমাদের মধ্য থেকেই ছিলেন। আমরা তাঁর বংশপরিচয়, তাঁর সত্যবাদিতা, তাঁর আমানতদারী ও তাঁর (চারিত্রিক) পবিত্রতা সম্পর্কে অবগত ছিলাম।

 

তিনি আমাদের আল্লাহর দিকে ডাকলেন, যাতে আমরা তাঁকে এক মানি, শুধু তাঁকেই ইবাদত করি এবং আমাদের ও আমাদের পূর্বপুরুষেরা আল্লাহর পরিবর্তে যে পাথর ও মূর্তিগুলো উপাসনা করত, তা ত্যাগ করি। তিনি আমাদের সত্য কথা বলার, আমানত আদায় করার, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার, প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করার, হারাম কাজ ও রক্তপাত থেকে বিরত থাকার আদেশ দিলেন।

 

তিনি আমাদের অশ্লীলতা, মিথ্যা কথা, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ, পবিত্র নারীর প্রতি অপবাদ দেওয়াএসব থেকে নিষেধ করলেন। আর তিনি আমাদের আদেশ দিলেন যেন আমরা কেবল আল্লাহকেই ইবাদত করি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করি। তিনি আমাদের সালাত, যাকাত ও সিয়াম পালনের আদেশ দিলেন।

 

(বর্ণনাকারী বলেন,) তারপর তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিধান বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে শুনালেন।[8]

 

আমরা দেখলাম এখানে নবী এর সত্যবাদিতার বিষয়টি আবিসিনিয়ার শাসকের নিকট উল্লেখ করছেন প্রখ্যাত সাহাবী জাফর(রা.)। শুধু তাই না, ইসলামের বুঁনিয়াদী শিক্ষার মাঝে সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা এই বিষয়গুলোরও উল্লেখ করা হয়েছে।

 

ইসলামে কি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শিক্ষা দেয়া হয়েছে?

ইসলামবিরোধীরা নবী এর আল-আমিন উপাধীর বিষয়টি অস্বীকারের সাথে সাথে এই দাবিও করে যে, আল কুরআন ও হাদিসে নাকি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, বেঈমানী ইত্যাদির শিক্ষা দেয়া হয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)। ইন্টারনেট ও অন্যান্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে ইসলামের বিরুদ্ধে এই ভয়াবহ মিথ্যাচার ও অপবাদ বিশ্বব্যপি ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছে বিভিন্ন মহল। সচেতন মুসলিমরা এই নির্জলা মিথ্যাগুলো খুব সহজেই ধরে ফেললেও বিপুল সংখ্যক মুসলিম ও অমুসলিম অসত্যের কালো মেঘের আঁধারে ডুবে যাচ্ছে ও বিভ্রান্ত হচ্ছে।

 

ইসলামবিরোধীরা কিছু কুরআনের আয়াত দেখিয়ে দাবি করে এগুলোতে নাকি অন্যদের সাথে কৃত শপথ ভঙ্গ করা বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শিক্ষা দেয়া হয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)। যেমনঃ

 

لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغۡوِ فِىۡٓ اَيۡمَانِكُمۡ وَلٰـكِنۡ يُّؤَاخِذُكُمۡ بِمَا كَسَبَتۡ قُلُوۡبُكُمۡ​ؕ وَاللّٰهُ غَفُوۡرٌ حَلِيۡمٌ‏

অর্থঃ "তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না; কিন্তু তিনি সেসব কসমের ব্যাপারে পাকড়াও করবেন, - তোমাদের অন্তর যা সংকল্প করে অর্জন করেছে। আর আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম সহিষ্ণু।" [9]

 

لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغۡوِ فِىۡۤ اَيۡمَانِكُمۡ وَلٰـكِنۡ يُّؤَاخِذُكُمۡ بِمَا عَقَّدْتُّمُ الۡاَيۡمَانَ​ ۚ فَكَفَّارَتُهٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَةِ مَسٰكِيۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَهۡلِيۡكُمۡ اَوۡ كِسۡوَتُهُمۡ اَوۡ تَحۡرِيۡرُ رَقَبَةٍ​ ؕ فَمَنۡ لَّمۡ يَجِدۡ فَصِيَامُ ثَلٰثَةِ اَيَّامٍ​ ؕ ذٰ لِكَ كَفَّارَةُ اَيۡمَانِكُمۡ اِذَا حَلَفۡتُمۡ​ ؕ وَاحۡفَظُوۡۤا اَيۡمَانَكُمۡ​ ؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللّٰهُ لَـكُمۡ اٰيٰتِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ‏

অর্থঃ তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না, কিন্তু বুঝে সুঝে যে সব শপথ তোমরা কর তার জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। (এ পাকড়াও থেকে অব্যাহতির) কাফফারা হল দশ জন মিসকিনকে মধ্যম মানের খাদ্যদান যা তোমরা তোমাদের স্ত্রী পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান অথবা একজন ক্রীতদাস মুক্তকরণ। আর এগুলো করার যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন রোযা পালন। এগুলো হল তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ কর। তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা করবে। আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য বিষদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।[10]

 

কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের এই আয়াতগুলো দেখে আদৌ এটা মনে হবার কারণ নেই যে এখানে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আয়াতের সরল অনুবাদ থেকেই এটা বোঝা যাচ্ছে যে, এখানে প্রকৃত শপথের কথা বলা হচ্ছে না বরং ‘অনর্থক’ শপথের কথা বলা হচ্ছে, যা ভঙ্গ করলে আল্লাহ শাস্তি দেবেন না। আয়াতের মাঝেই এটা স্পষ্ট করা আছে যে মানুষ বুঝেশুনে যে শপথ করে, সেগুলোই ধর্তব্য হবে। খুবই যৌক্তিক এক বিধান, কিন্তু এই যৌক্তিক বিধান থেকেও অযৌক্তিক আপত্তি করে ইসলামবিরোধীরা। উপরে উল্লেখিত সুরা মায়িদাহর আয়াতেও স্পষ্টভাবে আল্লাহ তা’আলা শপথ রক্ষা করার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু অসৎ ইসলামবিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবে আয়াতের ঐ অংশ উল্লেখ না করে বিকৃতভাবে অভিযোগ উত্থাপন করে।

 

আয়াতে ‘অনর্থক’ শপথ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? এর উত্তর রয়েছে তাফসির গ্রন্থগুলোতে। সুরা বাকারাহর ২২৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসির কুরতুবীতে বলা হয়েছে—

 

فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: هُوَ قَوْلُ الرَّجُلِ فِي دَرَجِ كَلَامِهِ وَاسْتِعْجَالِهِ فِي الْمُحَاوَرَةِ: لَا وَاللَّهِ، وَبَلَى وَاللَّهِ، دُونَ قَصْدٍ لِلْيَمِينِ. قَالَ الْمَرْوَزِيُّ: لَغْوُ الْيَمِينِ الَّتِي اتَّفَقَ الْعُلَمَاءُ عَلَى أَنَّهَا لَغْوٌ هُوَ قَوْلُ الرَّجُلِ: لَا وَاللَّهِ، وَبَلَى وَاللَّهِ، فِي حَدِيثِهِ وَكَلَامِهِ غَيْرَ مُعْتَقِدٍ لِلْيَمِينِ وَلَا مُرِيدِهَا.

অর্থঃ "ইবন আব্বাস (রা.) বলেছেনএটি হলো মানুষের এমন বলা, যখন কথা বলতে বলতে তাড়াহুড়ো বা স্বাভাবিক আলাপচারিতার সময় বলে ফেলে না, আল্লাহর কসম,’ কিংবা হ্যাঁ, আল্লাহর কসম,’ অথচ শপথ করার কোনো ইচ্ছা থাকে না। {আরবরা কোনো শপথের উদ্দেশ্য না করে কথাচ্ছলেই বলে থাকেঃ “লা ওয়াল্লাহি”, “বালা ওয়াল্লাহি” - অনুবাদক}

মারওয়াযি(.) বলেছেনঃ অনিচ্ছাকৃত বা অর্থহীন শপথ, যার ব্যাপারে উলামারা একমত যে এটি নিরর্থক [শপথ]। এটা হল, যখন কেউ নিজের কথোপকথনের মাঝে না, আল্লাহর কসম,’ {লা ওয়াল্লাহি} কিংবা হ্যাঁ, আল্লাহর কসম {বালা ওয়াল্লাহি} বলে ফেলে, অথচ অন্তরে শপথ করার বিশ্বাস বা উদ্দেশ্য থাকে না।" [11]

 

আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসির ইবন কাসিরে বলা হয়েছে—

 

তাই আল্লাহ তা'আলা বলিয়াছেন : لَا یُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِكُمۡ অর্থাৎ অনিচ্ছা বশত অভ্যাসগতভাবে মুখ দিয়া গুরুত্ব ও উদ্দেশ্যহীনভাবে কসম উচ্চারিত হইলে তাহার জন্য আল্লাহ তোমাদিগকে ধরিবেন না এবং দোষীও করিবে না। আবূ হুরায়রা (রা) হইতে হুমাইদ ইব্‌ন আবদুর রহমান ও যুহরী বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ () বলিয়াছেনঃ কোন ব্যক্তি লাতও উযযার নামে কসম নিয়া ফেলিলে সে যেন তৎক্ষণাৎ 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' পড়িয়া নেয় । উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ () নির্দেশটি সেই লোকদের উদ্দেশ্যে করিয়াছিলেন, যাহারা সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করিয়াছিল এবং তখনও জাহেলী যুগের শপথ বাক্যগুলি তাহাদের মুখে মুখেই ছিল। তাই তাহাদিগকে বলা হইয়াছিল যে, যদি অভ্যাসগতভাবে তাহাদের মুখ দিয়া এইরূপ শিরকমূলক শব্দ বাহির হইয়া যায়, তাহা হইলে যেন তাহারা তৎক্ষণাৎই কলিমা তাওহীদ পাঠ করিয়া নেয় । তাহা হইলে উহার কাফফারা হইয়া যাইবে ৷

 

অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলিতেছেনঃ

لَا یُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِكُمۡ অর্থাৎ যেসব শপথ মনের সংকল্প অনুসারে করা হয়, সেইগুলি আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই ধরিবেন। অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা বলিয়াছেনঃ بِمَا عَقَّدْتُّمُ الۡاَيۡمَانَ​ ۚ  অর্থাৎ যে কসম বা শপথ সম্পর্কে তোমরা সংকল্প করিয়াছ [সুরা মায়িদাহ ৮৯]।

অর্থহীন' শপথ ও কসমের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের উপর আয়েশা (রা) হইতে ধারাবাহিকভাবে আতা, ইব্রাহীম অর্থাৎ সায়িগ, হাইয়ান ইব্‌ন ইব্রাহীম, হুমাইদ ইব্‌ন মাসআদা শামী ও আবূ দাউদ অনর্থক কসম' অনুচ্ছেদে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আয়েশা (রা) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ () বলিয়াছেন-অনর্থক কসম মানুষ ঘরোয়াভাবে কথায় কথায় করিয়া থাকে। যেমন, না, আল্লাহর কসম উহা দিব না। তবে অন্য একটি মওকুফ রিওয়ায়েতে আয়েশা (রা) হইতে ধারাবাহিকভাবে আতা, ইব্রাহীম সায়িগ ও দাউদ ইব্‌ন ফুরাতের সূত্রে আবূ দাউদ অনুরূপ আরো একটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আয়েশা (রা) হইতে মাওকূফ রিওয়ায়েতে আতা, মালিক ইব্‌ন মাগলুল, আবদুল মালিক ও যুহরীও অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন[12]

 

সহীহ বুখারীর একটি পরিচ্ছেদের নামকরণ করা হয়েছে এই সংক্রান্ত আয়াত বিষয়েঃ “৬৫/৫/৮. আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন না তোমাদের নিরর্থক শপথের জন্য। (সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫/৮৯)” এখানে উল্লেখ আছে

 

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أُنْزِلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ (لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللهُ بِاللَّغْوِ فِيْٓ أَيْمَانِكُمْ) فِيْ قَوْلِ الرَّجُلِ لَا وَاللهِ وَبَلَى وَاللهِ.

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللهُ بِاللَّغْوِ فِيْٓ أَيْمَانِكُمْ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে মানুষের উদ্দেশ্যবিহীন উক্তি لَا وَاللهِ না আল্লাহর শপথ {লা ওয়াল্লাহি}, بَلَى وَاللهِ হ্যাঁ আল্লাহর শপথ {বালা ওয়াল্লাহি} ইত্যাদি উপলক্ষে।[13]

 

আলোচ্য আয়াতের তাফসির থেকে স্পষ্ট হল যে, আরবরা শপথের উদ্দেশ্য না করে কথাচ্ছলে “ওয়াল্লাহি” বলে কিছু উল্লেখ করলে তা শপথ বলে গণ্য হবে না (অন্য ভাষাভাষীদের ক্ষেত্রেও একই মূলনীতি প্রযোজ্য)। এ ছাড়া নওমুসলিমদের কেউ পূর্বের অভ্যাসবশত মিথ্যা দেবতাদের নামে কসম করলেও সে পাপী হবে না বরং মনে আসার সঙ্গে সঙ্গে কালিমা তাওহিদ পাঠ করে নিলেই এর কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। এখানে কস্মিণকালেও মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করা হালাল করা হয়নি!  

 

ইসলামবিরোধীরা কিছু হাদিস দেখিয়েও দাবি করে যে এসব হাদিসে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হালাল করা হয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)। যেমনঃ

 

وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ.

অর্থঃ "... ... আর কোন বিষয়ে কসম করার পর তার বিপরীত দিকটিকে যদি উত্তম বলে মনে কর, তাহলে উত্তম কাজটিই করবে আর তোমার কসমের কাফ্‌ফারা আদায় করে দিবে।" [14]

 

وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم: «وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ, فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا, فَكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ, وَائْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

وَفِي لَفْظٍ لِلْبُخَارِيِّ: فَائْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ, وَكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ

وَفِي رِوَايَةٍ لِأَبِي دَاوُدَ: «فَكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ, ثُمَّ ائْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ»

অর্থঃ “আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বললেন, কোন ব্যাপারে যদি শপথ কর আর তা ছাড়া অন্য কিছুর ভিতর কল্যাণ দেখতে পাও, তবে নিজ শপথের কাফফারা আদায় করে তাত্থেকে উত্তমটি গ্রহণ কর।

বুখারীর শব্দে আছে, “ভাল কাজটি কর আর শপথ ভঙ্গের কাফফারা দাও।

আবূ দাউদের এক বর্ণনায় আছে, “শপথ ভঙ্গের কাফফারা দাও, তারপর ভাল কাজটি কর।[15]

 

হাদিসগুলোর সরল অনুবাদ থেকেই এটা স্পষ্ট যে এখানেও অন্য কাউকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কারো অধিকার নষ্ট করার শিক্ষা দেয়া হয়নি। অনুবাদ থেকেই এটা বোঝা যাচ্ছে যে এখানে সেই ‘শপথ’, কসম বা সংকল্পের কথা বলা হচ্ছে যা মানুষ নিজে থেকে কোনো কাজ করার ব্যাপারে করে থাকে। হাদিসে বলা হচ্ছে যে, এরূপ কোনো শপথ বা সংকল্প যদি অকল্যাণকর বা খারাপ কাজের ব্যাপারে হয়ে থাকে, তাহলে সেই (মন্দ) শপথে অটল না থেকে ভালো বা কল্যাণকর কাজটিই করতে হবে। আর এই শপথ থেকে বিচ্যুত হবার জন্যও কাফফারা দেবার কথা বলা হচ্ছে যাতে মানুষ এরূপ শপথও অর্থহীনভাবে না করে বরং ভেবেচিন্তে সত্যতার সাথে করে। কারো সাথে প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা ভঙ্গের কোনো শিক্ষাই এখানে দেয়া হয়নি। এমন উত্তম ও যৌক্তিক শিক্ষাকে অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ইসলামবিরোধীরা।    

শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ(র.) রিয়াদুস সলিহীন গ্রন্থ থেকে আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন—

 

فَالْحَاصِلُ أَنَّ الإِنْسَانَ إِذَا حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ وَتَبَيَّنَ لَهُ بَعْدَ ذَلِكَ أَن تَرْكَهَا أَصْلَحُ وَعَدَمُ الْمُضِيِّ فِيهَا أَصْلَحُ فَإِنَّهُ يُكَفِّرُ عَنْ يَمِينِهِ، مِثْلُ: حَلَفَهُ "وَاللَّهِ مَا أَزُورُ فُلَانًا"، ثُمَّ تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّ زِيَارَتَهُ أَنْسَبُ، فِيهَا مَصَالِحُ، فِيهَا تَعَلُّمُ عِلْمٍ، فِيهَا دَعْوَةٌ إِلَى اللَّهِ؛ يُكَفِّرُ عَنْ يَمِينِهِ ثُمَّ يَزُورُهُ، أَوْ "وَاللَّهِ مَا أَتَكَلَّمُ مَعَ فُلَانٍ" فَيَهْجُرُهُ، ثُمَّ تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ غَلِطَ، وَأَنَّهُ لَا يَسْتَحِقُّ الْهَجْرَ؛ يُكَفِّرُ عَنْ يَمِينِهِ، أَوْ قَالَ: "وَاللَّهِ مَا أَتَزَوَّجُ"، ثُمَّ رَأَى أَنَّ الزَّوَاجَ أَصْلَحُ؛ يَتَزَوَّجُ وَيُكَفِّرُ عَنْ يَمِينِهِ، أَوْ قَالَ: "وَاللَّهِ مَا أَحُجُّ هَذِهِ السَّنَةَ"، ثُمَّ تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّ الْحَجَّ هَذِهِ السَّنَةَ مُنَاسِبٌ؛ يُكَفِّرُ عَنْ يَمِينِهِ وَيَحُجُّ، أَوْ قَالَ: "وَاللَّهِ مَا أُسَافِرُ الْيَوْمَ"، ثُمَّ رَأَى أَنَّ سَفَرَهُ الْيَوْمَ أَنْسَبُ؛ يُسَافِرُ وَيُكَفِّرُ عَنْ يَمِينِهِ، وَهَكَذَا.

الْمَقْصُودُ أَنَّهُ إِذَا حَلَفَ عَلَى شَيْءٍ -فِعْلٍ أَوْ تَرْكٍ- ثُمَّ تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّ الأَصْلَحَ عَدَمُ مَا حَلَفَ عَلَيْهِ؛ يُكَفِّرُ عَنْ يَمِينِهِ بِإِطْعَامِ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ أَوْ كِسْوَتِهِمْ أَوْ عِتْقِ رَقَبَةٍ، فَإِنْ عَجَزَ يَصُومُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، وَلَا يَلِجَّ فِي يَمِينِهِ؛ لِأَنَّهُ اتَّضَحَ لَهُ أَنَّ اللَّجَاجَ فِي يَمِينِهِ لَيْسَ بِأَصْلَحَ، بَلْ غَلَطٌ، فَيَأْخُذُ بِالصَّوَابِ وَيَتْرُكُ الْخَطَأَ.

وَهَذَا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ، وَمِنْ إِحْسَانِ اللَّهِ جَلَّ وَعَلَا، وَمِنْ مَحَاسِنِ هَذِهِ الشَّرِيعَةِ: أَنَّ اللَّهَ جَلَّ وَعَلَا شَرَعَ لَهُمْ مَا هُوَ الأَرْفَقُ، وَمَا هُوَ الأَحَبُّ إِلَيْهِ، وَمَا هُوَ الأَنْفَعُ، قَالَ جَلَّ وَعَلَا: يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ \[الْبَقَرَةِ:185].

অর্থঃ “সারকথা হলো, মানুষ যখন কোনো কিছুর উপর কসম খায় এবং পরে তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কসম ভঙ্গ করাই উত্তম এবং তা পালন না করাই ভালো, তখন সে [শপথ ভঙ্গ করে] তার কসমের কাফফারা দেবে।

 

উদাহরণস্বরূপঃ সে যদি কসম খায় যে, "আল্লাহর কসম! আমি অমুককে দেখতে যাব না", কিন্তু পরে তার কাছে স্পষ্ট হয় যে, তাকে দেখতে যাওয়াই বেশি উপযুক্তসেখানে কল্যাণ রয়েছে, জ্ঞান অর্জন রয়েছে কিংবা আল্লাহর দিকে দাওয়াত রয়েছেতাহলে সে [সেই শপথ ভঙ্গ করবে এবং] তার কসমের কাফফারা দিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করবে।

কিংবা সে যদি বলে, "আল্লাহর কসম! আমি অমুকের সাথে কথা বলব না", অতঃপর তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, কিন্তু পরে বুঝতে পারে যে, সে ভুল করেছে এবং সেই ব্যক্তি সম্পর্ক ছিন্ন করার যোগ্য নয়; তাহলে সে [ঐ শপথ ভঙ্গ করে] তার কসমের কাফফারা দেবে।

কিংবা সে যদি বলে, "আল্লাহর কসম! আমি বিয়ে করব না", কিন্তু পরে তার কাছে বিবাহ করাই উত্তম মনে হয়; তাহলে সে বিয়ে করবে এবং কাফফারা দেবে।

কিংবা সে যদি বলে, "আল্লাহর কসম! আমি এই বছর হজ করব না", কিন্তু পরে তার কাছে স্পষ্ট হয় যে, এই বছর হজ করা উপযুক্ত; তাহলে সে কাফফারা দিয়ে হজ করবে।

কিংবা সে যদি বলে, "আল্লাহর কসম! আমি আজ ভ্রমণ করব না", কিন্তু পরে তার কাছে ভ্রমণ করাই বেশি উপযুক্ত মনে হয়; তাহলে সে ভ্রমণ করবে এবং কাফফারা দেবে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই রকম।

 

মূল কথা হলো, সে যখন কোনো কাজ করা বা না করার শপথ করে এবং পরে তার কাছে স্পষ্ট হয় যে, যে বিষয়ে সে শপথ করেছে, তা না করাই উত্তম; তখন সে দশজন মিসকীনকে খাবার খাওয়ানো বা পোশাক প্রদান করা কিংবা একজন দাস মুক্ত করার মাধ্যমে তার কসমের কাফফারা দেবে। যদি সে তা করতে অক্ষম হয়, তাহলে তিন দিন রোযা রাখবে। এবং একগুঁয়েভাবে শপথে অটল থাকা উচিত নয়, কারণ পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ঐ শপথে আঁকড়ে থাকা কল্যাণকর নয়, বরং ভুল। সুতরাং তার উচিত সঠিকটিকে গ্রহণ করা এবং ভুলটিকে বর্জন করা।

 

এটি আল্লাহর রহমত, আল্লাহর অনুগ্রহ এবং এই শরিয়তের সৌন্দর্যের অংশ যে, আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য এমনটি বিধান করেছেন যা সহজতর, যা তাঁর নিকট অধিক প্রিয়, এবং যা অধিক কল্যাণকর। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, কষ্ট চান না।” (সূরা আল-বাকারা ২:১৮৫)[16]

 

আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন(র.) বলেছেন—

 

مِثَالُ ذَلِكَ رَجُلٌ حَلَفَ أَلَّا يَزُورَ قَرِيبَهُ لِأَنَّهُ صَارَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ شَيْءٌ فَقَالَ: وَاللَّهِ لَا أَزُورُكَ، فَهَذَا حَلَفَ عَلَى قَطْعِ الرَّحِمِ، وَصِلَةُ الرَّحِمِ خَيْرٌ مِنَ الْقَطِيعَةِ، فَنَقُولُ: يَجِبُ عَلَيْكَ أَنْ تُكَفِّرَ عَنْ يَمِينِكَ وَأَنْ تَزُورَ قَرِيبَكَ لِأَنَّ هَذَا مِنَ الصِّلَةِ، وَالصِّلَةُ وَاجِبَةٌ.

مِثَالٌ آخَرُ: رَجُلٌ حَلَفَ أَلَّا يُكَلِّمَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ وَيَهْجُرَهُ، نَقُولُ: هَذَا غَلَطٌ، كَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ وَكَلِّمْهُ. وَهَكَذَا كُلُّ شَيْءٍ تَحْلِفُ عَلَيْهِ وَيَكُونُ الْخَيْرُ بِخِلَافِ مَا حَلَفْتَ، فَكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ وَافْعَلِ الْخَيْرَ. وَهَذِهِ قَاعِدَةٌ فِي كُلِّ الْأَيْمَانِ.

وَلَكِنِ الَّذِي يَنْبَغِي لِلْإِنْسَانِ أَلَّا يَتَسَرَّعَ فِي الْحَلِفِ، فَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ يَتَسَرَّعُونَ فِي الْحَلِفِ أَوْ فِي الطَّلَاقِ أَوْ مَا أَشْبَهَ ذَلِكَ، وَيَنْدَمُونَ بَعْدَ ذَلِكَ. فَنَقُولُ: لَا تَتَعَجَّلْ وَلَا تَتَسَرَّعْ، إِذَا كُنْتَ عَازِمًا عَلَى الشَّيْءِ فَافْعَلْهُ أَوِ اتْرُكْهُ بِدُونِ يَمِينٍ وَبِدُونِ طَلَاقٍ.

অর্থঃ এর উদাহরণ হলো, একজন লোক তার আত্মীয়কে দেখতে না যাওয়ার শপথ করল কারণ তাদের মধ্যে কিছু মনোমালিন্য হয়েছিল। সে বলল, "আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে দেখতে যাব না।" এটি রক্তের সম্পর্ক ছেদ করার শপথ। অথচ রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখা ছেদ করার চেয়ে উত্তম। তাই আমরা বলিঃ তোমার উপর অবশ্যই তোমার শপথের কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব এবং তোমার আত্মীয়ের সাথে সাক্ষাৎ করা ওয়াজিব, কারণ এটি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার অন্তর্ভুক্ত এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা আবশ্যক

 

আরেকটি উদাহরণঃ একজন লোক তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে কথা না বলার এবং তাকে ত্যাগ করার শপথ করল। আমরা বলিঃ এটি ভুল; তোমার শপথের কাফফারা দাও এবং তার সাথে কথা বল। এভাবে, তুমি যে কোনো বিষয়ে শপথ করো এবং পরে যদি দেখা যায় যে, যেটিতে শপথ করেছ তার বিপরীতটিই ভালো, তাহলে শপথের কাফফারা দিয়ে ভালো কাজটি কর।

 

এটি সকল শপথের জন্য একটি সাধারণ নিয়ম। তবে মানুষের জন্য যা করা উচিত তা হলো, শপথ করতে তাড়াহুড়া না করা। অনেক লোক শপথ করতে, তালাক দিতে বা এ ধরনের বিষয়ে তাড়াহুড়া করে এবং পরে অনুশোচনা করে। তাই আমরা বলি: তাড়াহুড়া বা অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিও না। যদি তুমি কোনো কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও, তাহলে শপথ বা তালাক ছাড়াই সেটি কর অথবা ছেড়ে দাও।[17]

 

ইসলামের শিক্ষাঃ প্রতিশ্রুতি পালনের আদেশ এবং মিথ্যা, প্রতারণা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা

ইসলামবিরোধীরা কিভাবে ইসলামের শিক্ষাকে বিকৃত করে “ইসলাম প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শিক্ষা দেয়” এহেন মিথ্যা কথা প্রচার করে এর কিছু উদাহরণ আমরা উপরে দেখলাম এবং খণ্ডনের চেষ্টা করলাম। অসত্যের এই কালো মেঘ দূর করবার উদ্দেশ্যে আমরা এই অনুচ্ছেদে আল কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে ইসলামে সত্যবাদিতা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে কী শিক্ষা দেয়া হয়েছে তা উল্লেখ করছি। এই শিক্ষাগুলো দেখলে যে কারো সামনে ইসলামবিরোধীদের অপপ্রচারের স্বরূপ স্পষ্ট হবে।

 

১। আল কুরআন ও হাদিসে সত্যবাদিতা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষার আদেশঃ

وَاَوۡفُوۡا بِالۡعَهۡدِ​ۚ اِنَّ الۡعَهۡدَ كَانَ مَسۡـــُٔوۡلًا‏

অর্থঃ "... আর প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।" [18]

 

يٰۤـاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَوۡفُوۡا بِالۡعُقُوۡدِ​

অর্থঃ "হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের ওয়াদাগুলি পূর্ণ কর।" [19]

 

بَلٰى مَنۡ اَوۡفٰى بِعَهۡدِهٖ وَاتَّقٰى فَاِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُتَّقِيۡنَ‏

অর্থঃ "হ্যাঁ অবশ্যই, কেউ যদি তার অংগীকার পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে তবে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।" [20]

 

২। সত্যবাদিতা পূণ্য ও জান্নাতের পথ আর মিথ্যাচার পাপ ও জাহান্নামের পথ দেখায়ঃ

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الصِّدْقَ بِرٌّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقًا وَإِنَّ الْكَذِبَ فُجُورٌ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ كَذَّابًا-

অর্থঃ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল () বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা একটি পুণ্যময় কাজ। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা হচ্ছে পাপকাজ। পাপাচার জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয় [21]

 

৩। সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি সর্বাবস্থায় সত্য বলাঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " ثَلَاثٌ مُنْجِيَاتٌ وَثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ فَأَمَّا الْمُنْجِيَاتُ: فَتَقْوَى اللهِ فِي السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَّةِ وَالْقَوْلُ بِالْحَقِّ فِي الرِّضَى وَالسُّخْطِ وَالْقَصْدُ فِي الْغِنَى وَالْفَقْرِ.

অর্থঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল () বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- (১) প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা (২) সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবং (৩) সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। ... ” [22]

 

৪। নিজের বিরুদ্ধে গেলে বা তিক্ত হলেও সত্য বলা

তুমি সত্য বলো, যদিও তা তোমার নিজের বিরুদ্ধে যায়।[23]

 

তুমি সত্য বলো, যদিও তা তিক্ত হয়।[24]

 

৫। সঠিক তথা সত্য বলার আদেশ এবং গুনাহ ক্ষমা হওয়াঃ

( 70 )   يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا

( 71 )   يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا

অর্থঃ "হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।" [25]

 

এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে আহসানুল বায়ানে উল্লেখ আছে—

 

অর্থাৎ, এমন কথা বল, যাতে কোন টেরামি বা বক্রতা নেই, ধোঁকা ও ধাপ্পা নেই। سَدِيدٌ تَسْدِيْدُ السَّهَمِ থেকে গৃহীত। অর্থাৎ, যেমন তীরকে সোজা করা হয় যাতে সঠিক নিশানার উপর লাগে, অনুরূপ তোমাদের মুখ থেকে বের হওয়া কথা ও তোমাদের কাজ-কারবারও সোজা ও সরল হবে। সঠিকতা ও সত্যতা থেকে এক চুল বরাবর তা যেন বিচ্যুত না হয়।[26]

 

৬। শিশুকে ভুলানোর জন্যও মিথ্যা না বলাঃ

ইসলামে এমনকি ছোট শিশুকে ভুলানোর জন্য মিথ্যা বলাতেও কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এহেন কাজকেও ইসলামে পাপ বলে গণ্য করা হয়েছে।

 

مِنْ مَوَالِي عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ الْعَدَوِيِّ حَدَّثَهُ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّهُ قَالَ: دَعَتْنِي أُمِّي يَوْمًا وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاعِدٌ فِي بَيْتِنَا، فَقَالَتْ: هَا تَعَالَ أُعْطِيكَ، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَمَا أَرَدْتِ أَنْ تُعْطِيهِ؟ قَالَتْ: أُعْطِيهِ تَمْرًا، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَمَا إِنَّكِ لَوْ لَمْ تُعْطِهِ شَيْئًا كُتِبَتْ عَلَيْكِ كِذْبَةٌ

অর্থঃ "আব্দুল্লাহ ইবনু আমির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ একদিন রাসূলুল্লাহ আমাদের ঘরে বসা অবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বললেন, এই যে, এসো! তোমাকে দিবো। রাসূলুল্লাহ তাকে প্রশ্ন করলেনঃ তাকে কি দেয়ার ইচ্ছা করছে? তিনি বললেন, খেজুর। রাসূলুল্লাহ তাকে বললেনঃ যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তাহলে এ কারণে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যার পাপ লিপিবদ্ধ হতো।" [27]

 

৭। প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলে ও আমানতদার না হলে দ্বীন ও ঈমান থাকবে নাঃ

আমানতদারী ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা ইসলামে এত গুরুত্বপূর্ণ যে, যার এগুলো নেই তার দ্বীন ও ঈমান নেই।

 

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ مَا خَطَبَنَا نَبِيُّ اللهِ ﷺ إِلَّا قَالَ لَا إِيْمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ

অর্থঃ "আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর নবী প্রায় খুতবাতে বলতেন, যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার পালন করে না, তার দ্বীন নেই।"  [28]

 

৮। শত্রুর সাথেও চুক্তি ভঙ্গ না করা, দরকার হলে মুসলিম ভাইকে সাহায্য না করে হলেও চুক্তি রক্ষা করাঃ

এমনকি কোনো শত্রু সম্প্রদায়ের সাথে চুক্তি থাকলে মুসলিমরা তাদের বিরুদ্ধেও চুক্তি ভঙ্গ করে অন্য মুসলিমকে সাহায্য করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে বলা হয়েছে—

 

وَ اِنِ اسۡتَنۡصَرُوۡكُمۡ فِی الدِّیۡنِ فَعَلَیۡكُمُ النَّصۡرُ اِلَّا عَلٰی قَوۡمٍۭ بَیۡنَكُمۡ وَ بَیۡنَهُمۡ مِّیۡثَاقٌ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

অর্থঃ "... আর যদি তারা দীনের ব্যাপারে তোমাদের নিকট কোন সহযোগিতা চায়, তাহলে সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। তবে এমন কওমের বিরুদ্ধে নয়, যাদের সাথে তোমাদের একে অপরের চুক্তি রয়েছে এবং তোমরা যে আমল কর, তার ব্যাপারে আল্লাহ পূর্ণ দৃষ্টিমান।" [29]

 

আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জাকারিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে—

 

হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে এমনি ঘটনা ঘটেছিল। রাসূলুল্লাহ যখন মক্কার কাফেরদের সাথে সন্ধি চুক্তি সম্পাদন করেন এবং চুক্তির শর্তে এ বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকে যে, এখন মক্কা থেকে যে ব্যক্তি মদীনায় চলে যাবে রাসূল তাকে ফিরিয়ে দেবেন। ঠিক এই সন্ধি চুক্তিকালেই আবু জান্দাল রাদিয়াল্লাহু আনহু-যাকে কাফেররা মক্কায় বন্দী করে রেখেছিল এবং খেদমতে গিয়ে হাজির হলেন এবং নিজের উৎপীড়নের কাহিনী প্রকাশ করে রাসূল এর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলেন। যে নবী সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত হয়ে আগমন করেছিলেন, একজন নিপীড়িত মুসলিমের ফরিয়াদ শুনে তিনি কি পরিমাণ মর্মাহত হয়েছিলেন, তার অনুমান করাও যে কারও জন্য সম্ভব নয়, কিন্তু এহেন মর্মপীড়া সত্ত্বেও উল্লেখিত আয়াতের হুকুম অনুসারে তিনি তার সাহায্যের ব্যাপারে অপারগতা জানিয়ে ফিরিয়ে দেন। [দেখুন, বুখারী: ২৭০০; মুসনাদে আহমাদ ৪/৩২৩]

 

আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে আহসানুল বায়ান এ উল্লেখ করা হয়েছে—

 

যদি তারা এমন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্যকামী হয়, যাদের ও তোমাদের মাঝে সন্ধি ও যুদ্ধ-বিরতির চুক্তি থাকে, তাহলে সেই মুসলিমদের পৃষ্ঠপোষকতার তুলনায় চুক্তি পালন করা অধিক জরুরী।[30]

 

৯। চুক্তি ভঙ্গ করা ও আমানতের খেয়ানত করা ইসলামের দৃষ্টিতে মুনাফিকি কর্মঃ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ ‏"‏‏.

অর্থঃ আবদুল্লাহ‌ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম বলেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে হবে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।

১. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে

২. কথা বললে মিথ্যা বলে

৩. চুক্তি করলে ভঙ্গ করে এবং

৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়। [31]

 

১০। বিশ্বাসঘাতকদের জন্য কিয়ামতের দিন ভয়াবহ পরিণতিঃ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ عِنْدَ اسْتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرْفَعُ لَهُ بِقَدْرِ غَدْرِهِ أَلا وَلَا غادر أعظم مِن أميرِ عامِّةٍ»

অর্থঃ আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকদের নিতম্বের সাথে তার জন্য (অপরাধ অনুপাতে) একটা করে পতাকা রাখা হবে।

অপর বর্ণনাতে আছে, কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকদের জন্য তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুপাতে পতাকা উত্তোলিত হবে। সাবধান! রাষ্ট্র প্রধানের বিশ্বাসঘাতকতাই হবে সর্ববৃহৎ (অপরাধ)। [32]

 

 

তথ্যসূত্রঃ


[1] মুসনাদ আহমাদ, খণ্ড ২৪, পৃষ্ঠা ২৬২, হাদিস নং : ১৫৫০২ (সহীহ)

https://shamela.ws/book/25794/11807

https://archive.is/wip/bgMyM (আর্কাইভকৃত)

[2] শারহু মুশকিলিল আছার - আবু জাফর তহাবী, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৪০ (সহীহ)

https://antishubohat.wordpress.com/tag/دليل-ان-الرسول-هو-الصادق-الامين/

https://web.archive.org/web/20250903202446/https://antishubohat.wordpress.com/tag/دليل-ان-الرسول-هو-الصادق-الامين/ (আর্কাইভকৃত)

মাকতাবা শামেলা রেফারেন্সঃ খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৩৯

https://shamela.ws/book/22547/5819

https://archive.is/wip/UIGbj (আর্কাইভকৃত)

[3] মুসতাদরাক হাকিম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৬২৮, হাদিস নং : ১৬৮৩

https://shamela.ws/book/2266/1715

https://archive.is/wip/YAA9J (আর্কাইভকৃত)

আরো দেখুনঃ হাদিস নং : ১৪৩৪

https://shamela.ws/book/148097/1045

https://archive.is/wip/XbGOt (আর্কাইভকৃত)

[4] বুখারী ৪৭৭০, মুসলিম ৩৫৫-(২০৮); মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং : ৫৩৭২

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=85351

[5] সহীহুস সিরাতিন নাবাওয়িয়্যাহ - নাসিরুদ্দিন আলবানী, পৃষ্ঠা ১৬২ (হাসান সনদে)

https://shamela.ws/book/592/160

https://archive.is/wip/t7iKP (আর্কাইভকৃত)

[6] সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৮৫৮ (হাসান)

https://www.hadithbd.net/hadith/link/?id=36964

[7] বুখারী , মুসলিম ৪২২

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=66606

[8] মুসনাদ আহমাদ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬৬, হাদিস নং : ১৭৪০ (হাসান)

https://shamela.ws/book/25794/1271

https://archive.is/wip/Csfiw (আর্কাইভকৃত)

[9] আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ২২৫

[10] আল কুরআন, মায়িদাহ ৫ : ৮৯

[11] তাফসির কুরতুবী, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৯৯

https://shamela.ws/book/20855/1007

https://archive.is/wip/KJDQb (আর্কাইভকৃত)

[12] তাফসির ইবন কাসির (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা বাকারাহর ২২৫ নং আয়াতের তাফসির, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৩২-২৩৩

[13] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৪৬১৩

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=29103

[14] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৭১৪৭

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=31970

[15] বুলুগুল মারাম, হাদিস নং : ১৩৬৩

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=71174

[17] শারহু রিয়াদ্বিস সলিহীন – মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিন, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৯

https://shamela.ws/book/9260/1875

https://archive.is/wip/R7A39 (আর্কাইভকৃত)

[18] আল কুরআন, বনী ইস্রাঈল (ইসরা) ১৭ : ৩৪

[19] আল কুরআন, মায়িদাহ ৫ :

[20] আল কুরআন, আলে ইমরান ৩ : ৭৬

[21] বুখারী, মুসলিম, মিশকাত বাংলা ৯ম খন্ড হা/৪৬১৩

https://www.hadithbd.com/books/link/?id=8269

[22] বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৫১২২

https://www.hadithbd.com/books/link/?id=8269

[23] সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৯১১; সহীহুল জামি‘, হা/৩৭৬৯

[24] সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৩৩

[25] আল কুরআন, আহযাব ৩৩ : ৭০

[26]  তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সুরা আহসাবের ৭০ নং আয়াতের তাফসির

https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=3603

[27] সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪৯৯১ (হাসান)

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=62354

[28] আহমাদ, বাইহাকী, সহীহুল জামে৭১৭৯ (সহীহ)

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=66016

[29] আল কুরআন, আনফাল ৮ : ৭২

[30] তাফসীরে জাকারিয়া তাফসীরে আহসানুল বায়ান, সুরা আনফালের ৭২ নং আয়াতের তাফসির

https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=1232

[31] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩৩

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=36

[32]  মুসলিম ১৭৩৮, তিরমিযী ২১৯১, আহমাদ ১১৩০৩, সহীহাহ্ ১৬৯০, সহীহ আল জামি৫১৬৭।

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=69054

Go to Top