মিরাজের হাদিসসমূহে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সংখ্যা হ্রাসের ঘটনায় কি গাণিতিক অসঙ্গতি বা বৈপরীত্য আছে?
অভিযোগঃ
ইসলামবিরোধীরা দাবি করে – ইসরা-মিরাজ সংক্রান্ত হাদিসসমূহে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ থেকে ক্রমে হ্রাস করে ৫ ওয়াক্ত নামাজ হবার ঘটনার মাঝে গাণিতিক অসঙ্গতি ও পরস্পরবিরোধী তথ্য আছে।
কিছু হাদিসে উল্লেখ আছে ৫০ ওয়াক্ত থেকে ক্রমে অর্ধেক করে করে নামাজের ওয়াক্ত কমানো হয়। ৫০ এর অর্ধেক হল ২৫, আর ২৫কে অর্ধেক করা হলে সাড়ে ১২ ওয়াক্ত হয় যা কার্যত অসম্ভব।
আবার, কিছু হাদিসে উল্লেখ আছে মিরাজের রাতে ৫ ওয়াক্ত করে কমিয়ে নামাজের ওয়াক্তকে ৫০ থেকে ৫ ওয়াক্তে আনা হয়। কিছু হাদিসে উল্লেখ আছে সে রাতে ১০ ওয়াক্ত করে কমিয়ে নামাজের ওয়াক্তকে ৫০ থেকে ৫ ওয়াক্তে আনা হয়। আর আগেই বলা হয়েছে কিছু হাদিসে অর্ধেক করে নামাজের ওয়াক্ত কমানোর উল্লেখ আছে। ইসলামবিরোধীদের দাবিমতে হাদিসের এই তথ্যগুলো পরস্পরবিরোধী।
জবাবঃ
আমরা শুধুতেই দেখে নিই মিরাজের রাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ৫০ ওয়াক্ত নামাজকে যেভাবে ক্রমে হ্রাস করে ৫ ওয়াক্তের বিধান দিয়েছেন এই প্রসঙ্গে হাদিসে কী কী তথ্য রয়েছে—
১। নামাজের ওয়াক্ত অর্ধেক (?) কমানোর উল্লেখঃ
قَالَ ابْنُ حَزْمٍ وَأَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَفَرَضَ اللهُ عَلَيَّ خَمْسِيْنَ صَلَاةً فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ حَتَّى أَمُرَّ بِمُوْسَى فَقَالَ مُوْسَى مَا الَّذِيْ فَرَضَ عَلَى أُمَّتِكَ قُلْتُ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسِيْنَ صَلَاةً قَالَ فَرَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيْقُ ذَلِكَ فَرَجَعْتُ فَرَاجَعْتُ رَبِّيْ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوْسَى فَقَالَ رَاجِعْ رَبَّكَ فَذَكَرَ مِثْلَهُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوْسَى فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ رَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيْقُ ذَلِكَ فَرَجَعْتُ فَرَاجَعْتُ رَبِّيْ فَقَالَ هِيَ خَمْسٌ وَهِيَ خَمْسُوْنَ لَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ
অর্থঃ “… ইবনু হাযম (রহ.) এবং আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নবী ﷺ বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। অতঃপর আমি এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে আসলাম। যখন মূসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার রব আপনার উম্মাত উপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তিনি বললেন, পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য রাখে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য আবেদন করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি [নবী ﷺ] পূর্বের অনুরূপ কথা আবার উল্লেখ করলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বললেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আরো কমাবার আরয করুন। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান হবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না।…” [1]
২। নামাজের ওয়াক্ত ‘কিছু অংশ’ কমানোর উল্লেখঃ
প্রায় একই আরবি ইবারতের কিছু হাদিসে বঙ্গানুবাদে নামাজের ওয়াক্ত ৫০ ওয়াক্ত হতে অর্ধেক না বরং ‘কিছু অংশ’ করে কমানো বলে অর্থ করা হয়েছে। অনুবাদের এই পার্থক্যের কারণ আমরা সামনে আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ।
وَقَالَ ابْنُ حَزْمٍ وَأَنَسٌ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَفَرَضَ اللَّهُ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلَاةً فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ حَتَّى مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى. فَقَالَ: مَا فَرْضُ اللَّهِ لَكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: فَرَضَ خَمْسِينَ صَلَاةً. قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِن أُمَّتكَ لَا تطِيق فراجعت فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقُلْتُ: وَضَعَ شَطْرَهَا فَقَالَ: رَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَجَعْتُ فَرَاجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَاجَعْتُهُ فَقَالَ: هِيَ خَمْسٌ وَهِيَ خَمْسُونَ لَا يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ
অর্থঃ “ইবনু হাযম ও আনাস বা বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন: তখন মহান আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের ওপর পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করলেন। আমি তা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করলাম। যখন মূসা (আ.)-এর কাছে পৌছলাম, তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, আপনার উম্মতের ওপর আল্লাহ তা’আলা কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেন, আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মত সক্ষম হবে না। অতঃপর মূসা (আ.) আমাকে ফেরত পাঠালেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা কিছু অংশ কম করে দিলেন। অতঃপর আমি আবার মূসা (আ.)-এর কাছে ফিরে এসে বললাম, কিছু সালাত কম করে দিয়েছেন। তিনি পুনরায় বললেন, আবারও যান। কেননা আপনার উম্মত এটাও আদায় করতে সক্ষম হবে না। অতএব আমি আবারও আমার রবের কাছে ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আবার কিছু মাফ করে দিলেন। আমি আবার মূসা (আ.)-এর কাছে ফিরে আসলে তিনি বললেন, আবার যান। আরো কিছু সালাত কম করিয়ে আনেন। কেননা আপনার উম্মত এটাও আদায় করতে সক্ষম হবে না। অতএব আমি আবার আমার প্রভুর কাছে গেলাম। এবার আল্লাহ তা’আলা বললেন, এই পাঁচ সালাতই ফরয, আর তা (সাওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ সালাতের সমান। আমার কথার পরিবর্তন হয় না।” [2]
৩। নামাজের ওয়াক্ত ৫ করে কমানোর উল্লেখঃ
فَفَرَضَ عَلَىَّ خَمْسِينَ صَلاَةً فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَنَزَلْتُ إِلَى مُوسَى صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ قُلْتُ خَمْسِينَ صَلاَةً . قَالَ ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ يُطِيقُونَ ذَلِكَ فَإِنِّي قَدْ بَلَوْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَخَبَرْتُهُمْ . قَالَ فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي فَقُلْتُ يَا رَبِّ خَفِّفْ عَلَى أُمَّتِي . فَحَطَّ عَنِّي خَمْسًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقُلْتُ حَطَّ عَنِّي خَمْسًا . قَالَ إِنَّ أُمَّتَكَ لاَ يُطِيقُونَ ذَلِكَ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ التَّخْفِيفَ . - قَالَ - فَلَمْ أَزَلْ أَرْجِعُ بَيْنَ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى وَبَيْنَ مُوسَى - عَلَيْهِ السَّلاَمُ - حَتَّى قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُنَّ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لِكُلِّ صَلاَةٍ عَشْرٌ فَذَلِكَ خَمْسُونَ صَلاَةً .
অর্থঃ “… আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন, এরপর আমি মূসা (আঃ) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মত এ নির্দেশ পালনে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আঃ) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাতে দশ ওয়াক্ত সালাতের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান। …” [3]
৪। নামাজের ওয়াক্ত ১০ করে কমানোর উল্লেখঃ
، أَنَّهُ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مَسْجِدِ الْكَعْبَةِ أَنَّهُ جَاءَهُ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ قَبْلَ أَنْ يُوحَى إِلَيْهِ وَهْوَ نَائِمٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ،
…
أَوْحَى إِلَيْهِ خَمْسِينَ صَلاَةً عَلَى أُمَّتِكَ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ. ثُمَّ هَبَطَ حَتَّى بَلَغَ مُوسَى فَاحْتَبَسَهُ مُوسَى فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ مَاذَا عَهِدَ إِلَيْكَ رَبُّكَ قَالَ عَهِدَ إِلَىَّ خَمْسِينَ صَلاَةً كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ. قَالَ إِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تَسْتَطِيعُ ذَلِكَ فَارْجِعْ فَلْيُخَفِّفْ عَنْكَ رَبُّكَ وَعَنْهُمْ. فَالْتَفَتَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى جِبْرِيلَ كَأَنَّهُ يَسْتَشِيرُهُ فِي ذَلِكَ، فَأَشَارَ إِلَيْهِ جِبْرِيلُ أَنْ نَعَمْ إِنْ شِئْتَ. فَعَلاَ بِهِ إِلَى الْجَبَّارِ فَقَالَ وَهْوَ مَكَانَهُ يَا رَبِّ خَفِّفْ عَنَّا، فَإِنَّ أُمَّتِي لاَ تَسْتَطِيعُ هَذَا. فَوَضَعَ عَنْهُ عَشْرَ صَلَوَاتٍ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى مُوسَى فَاحْتَبَسَهُ، فَلَمْ يَزَلْ يُرَدِّدُهُ مُوسَى إِلَى رَبِّهِ حَتَّى صَارَتْ إِلَى خَمْسِ صَلَوَاتٍ، ثُمَّ احْتَبَسَهُ مُوسَى عِنْدَ الْخَمْسِ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ وَاللَّهِ لَقَدْ رَاوَدْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ قَوْمِي عَلَى أَدْنَى مِنْ هَذَا فَضَعُفُوا فَتَرَكُوهُ فَأُمَّتُكَ أَضْعَفُ أَجْسَادًا وَقُلُوبًا وَأَبْدَانًا وَأَبْصَارًا وَأَسْمَاعًا، فَارْجِعْ فَلْيُخَفِّفْ عَنْكَ رَبُّكَ، كُلَّ ذَلِكَ يَلْتَفِتُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى جِبْرِيلَ لِيُشِيرَ عَلَيْهِ وَلاَ يَكْرَهُ ذَلِكَ جِبْرِيلُ، فَرَفَعَهُ عِنْدَ الْخَامِسَةِ فَقَالَ يَا رَبِّ إِنَّ أُمَّتِي ضُعَفَاءُ أَجْسَادُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ وَأَسْمَاعُهُمْ وَأَبْدَانُهُمْ فَخَفِّفْ عَنَّا فَقَالَ الْجَبَّارُ يَا مُحَمَّدُ. قَالَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ. قَالَ إِنَّهُ لاَ يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَىَّ، كَمَا فَرَضْتُ عَلَيْكَ فِي أُمِّ الْكِتَابِ ـ قَالَ ـ فَكُلُّ حَسَنَةٍ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، فَهْىَ خَمْسُونَ فِي أُمِّ الْكِتَابِ وَهْىَ خَمْسٌ عَلَيْكَ.
…
قَالَ وَاسْتَيْقَظَ وَهْوَ فِي مَسْجِدِ الْحَرَامِ.
অর্থঃ “আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নবী ﷺ এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন।
...
তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো। তারপর নবী ﷺ অবতরণ করেন। আর মূসার কাছে পৌছলে মূসা (আ.) তাঁকে আটকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নবী ﷺ বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের। তখন মূসা (আ.) বললেন, আপনার উম্মাত তা আদায়ে সক্ষম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নবী ﷺ জিবরীলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরীল (আ.) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যাঁ। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নবী ﷺ কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন। তারপর নবী ﷺ যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসা (আ.) এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে নামালেন। এভাবেই মূসা তাকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাঁচ সংখ্যায়ও মূসা (আ.) তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কাওমের কাছে এর চেয়েও সামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছেন অথচ আপনার উম্মাত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দুর্বল। সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নবী ﷺ পরামর্শের জন্য জিবরীলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবারেও জিবরীল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নবী ﷺ বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মাতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দুর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন। এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নবী ﷺ বললেনঃ আমি আপনার নিকটে হাযির, বারবার হাযির। আল্লাহ বললেনঃ আমার কথার কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা ’উম্মুল কিতাব’ তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মাতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো।
...
এ সময় নবী ﷺ জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।” [4]
১০ ওয়াক্ত করে কমানোর ব্যাপারে কাছাকাছি বক্তব্যের আরো কিছু হাদিস আছে। সেই হাদিসগুলোর সূচনাতেও উল্লেখ আছে নবী (ﷺ) কাবার হাতিমে তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন বা হিজরে শুয়ে ছিলেন। [5] হাদিসগুলোর শব্দাবলিতে সামান্য ভিন্নতা থাকলেও বোঝা যায় সেগুলো একই ঘটনার বর্ণনা। পাঠককে এই বিষয়টি স্মরণে রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ, কেননা প্রবন্ধের শেষ দিকে এই তথ্যটি প্রয়োজন হবে।
এবার নামাজের ওয়াক্ত ‘অর্ধেক কমানো’ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে একই হাদিসের কিছু অনুবাদে উল্লেখ করা হয়েছে ৫০ ওয়াক্ত থেকে ‘অর্ধেক’ করে কমানো হয়েছে, আবার কিছু অনুবাদে উল্লেখ করা হয়েছে ৫০ ওয়াক্ত থেকে ‘কিছু অংশ’ করে কমানো হয়েছে। এখানে মূল আরবিতে شطر (শাতর) শব্দটি এসেছে। এই শব্দের একাধিক অর্থ আছে। 'শাতর' শব্দটির অর্থ আলোচনা করতে গিয়ে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলি ক্বারী(র.) বলেছেন,
الشَّطْرَ كَمَا يُرَادُ بِهِ نِصْفُ الشَّيْءِ قَدْ يُرَادُ بِهِ بَعْضُهُ مُطْلَقًا
অর্থঃ “ 'শাতর' যেমন কোনো বস্তুর অর্ধেককে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, তেমনি এটি কোনো বস্তুর কোনো অংশকেও সাধারণভাবে বোঝাতে ব্যবহৃত হতে পারে।” [6]
‘শাতর’ শব্দের একাধিক অর্থের ব্যাপারে সুবিখ্যাত আরবি অভিধান ‘তাজুল ‘আরুস’ এ উল্লেখ করা হয়েছে—
[شطر]
: (الشَّطْرُ: نِصْفُ الشَّيْءِ، وجُزْؤُه) ، كالشَّطِيرِ، (ومِنْهُ) المَثَلُ: (أَحْلُبُ حَلَباً لَك شَطْرُه) . وَحَدِيث سعد: (أَنّه اسْتَأْذَنَ النبيَّ صلى الله عَلَيْهِ وسلمأَنْ يَتَصَدّقَ بمالِه، قَالَ: لَا، قَالَ: فالشَّطْرُ، قَالَ: لَا، قالَ: الثُّلُث فَقَالَ: الثُّلُثُ، والثُّلُثُ كثيرٌ) ، وحديثُ عائشَة: (كَانَ عِنْدَنَا شَطْرٌ مِنْ شَعِير) ، وَفِي آخر: (أَنّه رَهَنَ دِرْعَه بشَطْر مِنْ شَعِير) ، قيل: أَراد نِصْف مَكُّوكٍ، وقيلَ: نصْفَ وَسْقٍ، و (حَدِيثُ الإِسْرَاءِ: (فَوَضَعَ شَطْرَهَا)) ، أَي الصَّلاة (أَي بَعْضَها) وَكَذَا حديثُ: (الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمانِ) ؛ لأَنّ الإيمانَ يَظْهَرُ بحاشِيَةِ الباطنِ، والطُّهُور يَظْهَرُ بحاشيةِ الظَّاهِر.
অর্থঃ “[শাতর]
(আশ-শাতরুঃ কোনো কিছুর অর্ধেক বা তার একটি অংশ) যেমন আশ-শাতির। (এটি থেকে) প্রবাদঃ (আমি তোমার জন্য দুধ দোহন করি, তার অর্ধেক তোমার)।
আর সা'দ (রা.)-এর হাদিসঃ (তিনি নবী (ﷺ)-এর কাছে তাঁর সম্পদ সদকা করার অনুমতি চাইলেন। তিনি [নবী ﷺ] বললেনঃ না। সা'দ বললেনঃ তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেনঃ না। সা'দ বললেনঃ তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেনঃ এক-তৃতীয়াংশ, আর এক-তৃতীয়াংশও অনেক)।
আর আয়িশা (রা.)-এর হাদিসঃ (আমাদের নিকট যবের অর্ধেক পরিমাণ ছিল), এবং অপর বর্ণনায়ঃ (তিনি তাঁর বর্মটি যবের অর্ধেক পরিমাণের বিনিময়ে বন্ধক রেখেছিলেন)।
বলা হয়ঃ তিনি উদ্দেশ্য করেছেন অর্ধেক মাকুক {পরিমাপের একক}, আর বলা হয়ঃ অর্ধেক ওয়াসাক {পরিমাপের একক}।
আর (ইসরা-এর হাদিসঃ (অতঃপর তিনি তার ‘শাতর’ কমিয়ে দিলেন)) অর্থাৎ নামাজের (অর্থাৎ তার কিছু অংশ)। আর অনুরূপ হাদিসঃ (পবিত্রতা ঈমানের অংশ); কারণ ঈমান প্রকাশ পায় অভ্যন্তরীণ দিক থেকে, আর পবিত্রতা প্রকাশ পায় বাহ্যিক দিক থেকে।” [7]
আমরা দেখলাম এই অভিধানে রীতিমত প্রবাদ এবং হাদিস উল্লেখ করে ‘শাতর’ শব্দের একাধিক অর্থ আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে এর একাধিক অর্থ উল্লেখ করে এটিও বলা হয়েছে যে, ইসরা-মিরাজের হাদিসে ‘শাতর’ এর ‘কিছু অংশ’ অর্থটি প্রযোজ্য হবে। ‘অর্ধেক’ না।
প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ উইলিয়াম লেনের আরবি-ইংরেজি অভিধানেও আরবি অভিধানগুলোর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করা হয়েছে। সেখানেও উল্লেখ করা হয়েছে ‘শাতর’ এর একটি অর্থ হচ্ছে ‘কিছু অংশ’। আর ইসরা-মিরাজের হাদিসে ‘শাতর’ এর এই অর্থটিই প্রযোজ্য হবে।
“Also A part, or portion, or somewhat, of a thing; (Mgh, K;) and so ↓ شَطِيرٌ. (TA.) In the trad. of the night-journey, فَوَضَعَ شَطْرَــهَا means [And He remitted] part, or somewhat, thereof; (K;) i. e., of the prayer. (TA.) And similar is the saying in another trad., الطَّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ (assumed tropical:) [Purification is part of faith].”
অর্থঃ “এছাড়াও কোনো বস্তুর একটি অংশ, বা ভাগ, বা কিছুটা; এবং একইভাবে شَطِيرٌ ।
ইসরা সম্পর্কিত হাদিসে, فَوَضَعَ شَطْرَــهَا অর্থ [এবং তিনি কমিয়ে দিলেন] এর কিছু অংশ; অর্থাৎ, নামাজের।
এবং অন্য হাদিসে একই রকম বক্তব্য রয়েছে, الطَّهُورُ شَطْرُ الإِيمَانِ (প্রাসঙ্গিক অর্থে:) [পবিত্রতা ঈমানের অংশ]।” [8]
প্রখ্যাত মুহাদ্দিসগণও ‘শাতর’ শব্দের অর্থ এবং হাদিসের বক্তব্যের প্রতি লক্ষ করে উল্লেখ করেছেন যে, আলোচ্য হাদিসসমূহে ‘শাতর’ এর অর্থ হবে ‘কিছু অংশ’। ‘অর্ধেক’ না। এ প্রসঙ্গে ইমাম নববী(র.) এর সুবিখ্যাত ‘শারহ মুসলিম’ গ্রন্থে বলা হয়েছে—
وَهَذَا الْمَذْكُورُ هُنَا لَا يُخَالِفُ الرِّوَايَةَ الْمُتَقَدِّمَةَ أَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَطَّ عَنِّي خَمْسًا إِلَى آخِرِهِ فَالْمُرَادُ بِحَطِّ الشَّطْرِ هُنَا أَنَّهُ حَطَّ فِي مَرَّاتٍ بِمُرَاجَعَاتٍ وَهَذَا هُوَ الظَّاهِرُ وَقَالَ الْقَاضِي عِيَاضٌ رَحِمَهُ اللَّهُ الْمُرَادُ بِالشَّطْرِ هُنَا الْجُزْءُ وَهُوَ الْخَمْسُ وَلَيْسَ الْمُرَادُ بِهِ النِّصْفَ وَهَذَا الَّذِي قَالَهُ مُحْتَمَلٌ وَلَكِنْ لَا ضَرُورَةَ إِلَيْهِ فَإِنَّ هَذَا الْحَدِيثَ الثَّانِيَ مُخْتَصَرٌ لَمْ يُذْكَرْ فِيهِ كَرَّاتُ الْمُرَاجَعَةِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ
অর্থঃ “এবং এখানে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা পূর্ববর্তী বর্ণনাটির বিরোধী নয়, যেখানে নবী ﷺ বলেছেনঃ “তিনি আমার থেকে পাঁচটি [নামাজের ওয়াক্ত] কমিয়ে দিলেন” ইত্যাদি। সুতরাং এখানে شَّطْرِ (শাতর) হ্রাস করার অর্থ হলো, তিনি বারবার আবেদনের মাধ্যমে বিভিন্ন দফায় হ্রাস করেছিলেন এবং এটিই হলো প্রকাশ্য অর্থ। আর কাযি ইয়ায (র.) বলেছেনঃ এখানে شَّطْرِ (শাতর) দ্বারা 'জুয' বা অংশ উদ্দেশ্য, আর তা হলো পাঁচটি। অর্ধেক নয়। তাঁর এই বক্তব্য সম্ভাব্য, কিন্তু আসলে এরও প্রয়োজন হয় না। কারণ এই দ্বিতীয় হাদিসটি সংক্ষিপ্ত, এতে বারবার আবেদনের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়নি [তাই এমনিতেই বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে]। আল্লাহই ভালো জানেন।” [9]
অর্থাৎ আলোচ্য হাদিসসমূহের প্রকৃত অর্থ হল, নবী ﷺ এর আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা নামাজের ওয়াক্তের কিছু অংশ কমিয়ে দেন। আর অন্যান্য হাদিস থেকে বোঝা যায় এই ‘কিছু অংশ’ হচ্ছে ৫ ওয়াক্ত। এই সকল হাদিসে মূলত একই বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, আলাদা কিছুই বলা হয়নি। কোনো কোনো অনুবাদক ‘শাতর’ এর একাধিক অর্থ থেকে ‘অর্ধেক’ অর্থটি দ্বারা হাদিসটির অনুবাদ করেছেন বিধায় আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে এই হাদিসে গাণিতিক অসঙ্গতি আছে। কিন্তু অভিধান থেকে শব্দটির অর্থ এবং প্রসঙ্গ বিবেচনায় মুহাদ্দিসদের অভিমত থেকে এটি স্পষ্ট যে এখানে সঠিক অর্থ হবে ‘কিছু অংশ’। মিরাজের রাতে নামাজের ওয়াক্ত 'অর্ধেক' করে হ্রাস করা হয়নি বরং 'কিছু অংশ' করে হ্রাস করা হয়েছিল। কাজেই এখানে কোনো গাণিতিক অসঙ্গতি নেই।
এবার আমরা দেখব কিছু হাদিসে ৫ ওয়াক্ত করে আবার কিছু হাদিসে ১০ ওয়াক্ত করে নামাজ কমানোর কথা কেন বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবন হাজার আসকালানী(র.) উল্লেখ করেছেন -
قَوْلُهُ: (فَوَضَعَ شَطْرَهَا) فِي رِوَايَةِ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ فَوَضَعَ عَنِّي عَشْرًا وَمِثْلُهُ لِشَرِيكٍ، وَفِي رِوَايَةِ ثَابِتٍ فَحَطَّ عَنِّي خَمْسًا قَالَ ابْنُ الْمُنِيرِ: ذِكْرُ الشَّطْرِ أَعَمُّ مِنْ كَوْنِهِ وَقَعَ فِي دُفْعَةٍ وَاحِدَةٍ. قُلْتُ: وَكَذَا الْعَشْرُ فَكَأَنَّهُ وَضَعَ الْعَشْرَ فِي دُفْعَتَيْنِ وَالشَّطْرَ فِي خَمْسِ دُفُعَاتٍ، أَوِ الْمُرَادُ بِالشَّطْرِ فِي حَدِيثِ الْبَابِ الْبَعْضُ وَقَدْ حَقَقْتُ رِوَايَةَ ثَابِتٍ أَنَّ التَّخْفِيفَ كَانَ خَمْسًا خَمْسًا وَهِيَ زِيَادَةٌ مُعْتَمَدَةٌ يَتَعَيَّنُ حَمْلُ بَاقِي الرِّوَايَاتِ عَلَيْهَا،
অর্থঃ “তাঁর [নবী (ﷺ)] বক্তব্য [তিনি (সলাতের ওয়াক্ত) شَّطْرِ (শাতর) বা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন]। আবার মালিক বিন সা’সা’আহ(রা.) এর বর্ণনায় আছে, “আমার উপর হতে দশ (ওয়াক্ত) হ্রাস করে দিলেন”। আবার, সাবিত(র.) এর বর্ণনায় আছে, “আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে”। ইবনুল মুনির(র.) বলেন, এখানে شَّطْرِ (শাতর) কথাটি দ্বারা একবারে এই ঘটনা ঘটার চেয়ে ব্যাপক অর্থ প্রকাশ পেয়েছে {অর্থাৎ এই এক শব্দ দ্বারা একাধিকবার এটি ঘটা বোঝানো হচ্ছে}। আমি [ইবন হাজার] বলি, একইভাবে ১০ দ্বারাও (ব্যাপক অর্থ প্রকাশ পাচ্ছে), ঠিক যেন ১০কে দুই দফায় এবং شَّطْرِ (শাতর)কে পাঁচ দফায় বসানো হচ্ছে। এই অধ্যায়ের হাদিসে ‘শাতর’ শব্দটি দ্বারা بَعْضُ (বা’দ) বা কিছু অংশ বোঝানো হচ্ছে। সাবিত(র.) এর বর্ণনাও এই কথার সত্যায়ন করে যে এখানে পাঁচ-পাঁচ করে [সলাতের ওয়াক্ত] কমানো হয়েছিল। এটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত বর্ণনা, অন্য বর্ণনাগুলো যার অনুগামী হবে।” [10]
অর্থাৎ কিছু হাদিসে ১০ ওয়াক্ত করে কমানোর কথা দ্বারা ২ বার ৫ ওয়াক্ত করে কমানোর বিষয়টি সংক্ষেপে বোঝানো হচ্ছে। যদিও মূলত ৫ ওয়াক্ত করেই কমানো হয়েছিল। কাজেই এখানে কোনো পরস্পরবিরোধিতা নেই।
কিছু হাদিসে ৫ ওয়াক্ত করে কমানো আর কিছু হাদিসে ১০ ওয়াক্ত করে কেন কমানোর কথা বলা হয়েছে, এর উত্তর আরেকভাবে দেয়া যায়। এ প্রসঙ্গে মুহাদ্দিসদের মাঝে আরেকটি ব্যাখ্যা রয়েছে।
যে হাদিসগুলোতে নামাজ ১০ ওয়াক্ত করে কমানোর উল্লেখ আছে, সেই হাদিসগুলোর সূচনাতে উল্লেখ আছে নবী (ﷺ) কাবার হাতিমে তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন বা হিজরে শুয়ে ছিলেন। পাঠককে অনুরোধ করব প্রবন্ধের শুরুতে এই প্রসঙ্গে উল্লেখিত হাদিস পুনরায় দেখে আসতে। এ প্রসঙ্গে দীর্ঘতম হাদিস অর্থাৎ সহীহ বুখারীর ৭০০৯ নং হাদিসের (এই প্রবন্ধের শুরুর অংশে উল্লেখিত) একদম সূচনাতেতেই উল্লেখ আছে – “নবী ﷺ এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। ”
আবার হাদিসটির একদম শেষাংশে উল্লেখ আছেঃ “এ সময় নবী ﷺ জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।”
হাদিসের এই শব্দাবলির কারণে অনেক মুহাদ্দিসের মতেঃ যদিও সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় নবী ﷺ এর ইসরা-মিরাজ প্রমাণিত, কিন্তু এই হাদিসের ঘটনাগুলো ঘটেছে নবী ﷺ এর স্বপ্নে। অর্থাৎ নবী ﷺ এর জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে যেমন ইসরা-মিরাজ হয়েছে, এর পূর্বে তাঁর স্বপ্নেও তা ঘটেছিল। আর এই হাদিসে তাঁর স্বপ্নে ঘটা মিরাজের বিবরণ আছে। তাই কিছু জায়গার বিবরণে অন্য হাদিসের বিবরণের সাথে অর্থাৎ জাগ্রত অবস্থার মিরাজের বিবরণের সাথে পার্থক্য আছে। ইমাম ইবন হাজার আসকালানী(র.) এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, একবার সশরীরে (জাগ্রত অবস্থায়) মিরাজের পুর্বে স্বপ্নে আরেকবার ইসরা-মিরাজ ঘটা অসম্ভব নয়। কারণ অন্যত্র হাদিসে উল্লেখ আছে মুহাম্মাদ ﷺ নবুয়ত লাভের পূর্বে স্বপ্নে যা দেখতেন তা পরবর্তীতে দিনের আলোর ন্যায় উদ্ভাসিত হতো। আর এভাবেই ওহী লাভের সূচনা হয়েছিল। [11] সালাফদের থেকেও এই মত বর্ণিত আছে। তবে একাধিকবার সশরীরে (জাগ্রত অবস্থায়) ইসরা-মিরাজ ঘটা সম্ভব নয়। ইবন হাজার আসকালানী(র.) এর নিজ ভাষ্য নিম্নরূপ—
فَجَنَحَ لِأَجْلِ ذَلِكَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْهُمْ إِلَى أَنَّ ذَلِكَ كُلَّهُ وَقَعَ مَرَّتَيْنِ مَرَّةً فِي الْمَنَامِ تَوْطِئَةً وَتَمْهِيدًا، وَمَرَّةً ثَانِيَةً فِي الْيَقَظَةِ كَمَا وَقَعَ نَظِيرُ ذَلِكَ فِي ابْتِدَاءِ مَجِيءِ الْمَلَكِ بِالْوَحْيِ، فَقَدْ قَدَّمْتُ فِي أَوَّلِ الْكِتَابِ مَا ذَكَرَهُ ابْنُ مَيْسَرَةَ التَّابِعِيُّ الْكَبِيرُ وَغَيْرُهُ أَنَّ ذَلِكَ وَقَعَ فِي الْمَنَامِ، وَأَنَّهُمْ جَمَعُوا بَيْنَهُ وَبَيْنَ حَدِيثِ عَائِشَةَ بِأَنَّ ذَلِكَ وَقَعَ مَرَّتَيْنِ.
وَإِلَى هَذَا ذَهَبَ الْمُهَلَّبُ شَارِحُ الْبُخَارِيِّ وَحَكَاهُ عَنْ طَائِفَةٍ وَأَبُو نَصْرِ بْنِ الْقُشَيْرِيِّ وَمِنْ قَبْلِهِمْ أَبُو سَعِيدٍ فِي شَرَفِ الْمُصْطَفَى قَالَ: كَانَ لِلنَّبِيِّ ﷺ مَعَارِيجُ، مِنْهَا مَا كَانَ فِي الْيَقَظَةِ وَمِنْهَا مَا كَانَ فِي الْمَنَامِ، وَحَكَاهُ السُّهَيْلِيُّ، عَنِ ابْنِ الْعَرَبِيِّ وَاخْتَارَهُ، وَجَوَّزَ بَعْضُ قَائِلِي ذَلِكَ أَنْ تَكُونَ قِصَّةُ الْمَنَامِ وَقَعَتْ قَبْلَ الْمَبْعَثِ لِأَجْلِ قَوْلِ شَرِيكٍ فِي رِوَايَتِهِ عَنْ أَنَسٍ وَذَلِكَ قَبْلَ أَنْ يُوحَى إِلَيْهِ،
... ... ...
وَإِنَّمَا الْمُسْتَبْعَدُ وُقُوعُ التَّعَدُّدِ فِي قِصَّةِ الْمِعْرَاجِ الَّتِي وَقَعَ فِيهَا سُؤَالُهُ عَنْ كُلِّ نَبِيٍّ وَسُؤَالُ أَهْلِ كُلِّ بَابٍ هَلْ بُعِثَ إِلَيْهِ، وَفَرْضُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ وَغَيْرِ ذَلِكَ؛ فَإِنَّ تَعَدُّدَ ذَلِكَ فِي الْيَقَظَةِ لَا يُتَّجَهُ، فَيَتَعَيَّنُ رَدُّ بَعْضِ الرِّوَايَاتِ الْمُخْتَلِفَةِ إِلَى بَعْضٍ، أَوِ التَّرْجِيحُ إِلَّا أَنَّهُ لَا بُعْدَ فِي جَمِيعِ وُقُوعِ ذَلِكَ فِي الْمَنَامِ تَوْطِئَةً ثُمَّ وُقُوعُهُ فِي الْيَقَظَةِ عَلَى وَفْقِهِ كَمَا قَدَّمْتُهُ.
অর্থঃ “একারণে কিছু আলেম এই মতের দিকে ঝুঁকেছেন যে, এই পুরো ঘটনাটি দু'বার সংঘটিত হয়েছিল - একবার স্বপ্নে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে, এবং দ্বিতীয়বার জাগ্রত অবস্থায়। ঠিক যেমন ওহী নিয়ে ফেরেশতার আগমনের শুরুতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। আমি এই গ্রন্থের [ফাতহুল বারী] শুরুতে বর্ণনা করেছি যে, বড় মাপের তাবিঈ ইবন মায়সারা(র.) ও অন্যান্যরা কী বলেছেন। [তাঁরা বলেছেন] যে এটি স্বপ্নে সংঘটিত হয়েছিল, এবং তাঁরা এটি ও আয়িশা (রা.)-এর হাদিসের মধ্যে সমন্বয় করেছেন এভাবে যে ঘটনাটি [মিরাজ] ২ বার সংঘটিত হয়েছিল।
এ মত সমর্থন করেছেন বুখারীর ব্যাখ্যাকারক মুহাল্লাব (র.)। তিনি এই মতকে একদল আলেমের অনুগামীদের মত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু নাসর ইবনুল কুশাইরি(র.) এবং তাঁদের পূর্বে আবু সাঈদ(র.) ‘শারাফুল মুস্তফা’ গ্রন্থে বলেছেনঃ “নবী ﷺ–এর একাধিক মিরাজ ছিল—এর কিছু জাগ্রত অবস্থায় এবং কিছু স্বপ্নে।” সুহাইলী(র.)ও ইবনুল আরাবীর(র.) কাছ থেকে এটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনিও এ মতটি সমর্থন করেছেন। এ মত গ্রহণকারীদের কেউ কেউ বলেছেন—স্বপ্নের ঘটনাটি নবুয়ত লাভের পূর্বে ঘটে থাকতে পারে; কেননা শারীক তাঁর আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করেছেনঃ “নবী ﷺ এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে (তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল)...”।
... ... ...
মিরাজের কাহিনীতে যেখানে প্রত্যেক নবী কর্তৃক তাঁর [মুহাম্মাদ ﷺ] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা, প্রত্যক দরজার রক্ষীদের কর্তৃক তাঁকে [তাঁদের নিকট] পাঠানো হয়েছে কিনা তা জিজ্ঞেস করা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ হওয়া ইত্যাদি ঘটনা রয়েছে - সেই পুরো ঘটনা একাধিকবার সংঘটিত হওয়াটাই কেবল অসম্ভব বলে মনে হয়। কারণ জাগ্রত অবস্থায় এটির পুনরাবৃত্তি সঙ্গত নয়। তাই বিভিন্ন রেওয়ায়েতের মধ্যে কিছুকে অন্যগুলোর সাথে সমন্বয় করা অথবা কিছুকে অগ্রাধিকার দেওয়া আবশ্যক। তবে, পূর্বে উল্লেখিত মতানুযায়ী সমস্ত ঘটনা প্রথমে স্বপ্নে প্রস্তুতিস্বরূপ সংঘটিত হওয়া এবং পরে জাগ্রত অবস্থায় একইভাবে সংঘটিত হওয়াতে কোনো আপত্তি নেই। যেমনটি আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি।” [12]
হাদিসের এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করা হলে এখানে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, আলোচ্য হাদিসগুলো পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়। এখানে এক হাদিসে নবী ﷺ এর স্বপ্নে সংঘটিত মিরাজ এবং অন্য হাদিসে নবী ﷺ এর জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত মিরাজের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। তাই কী পরিমাণে নামাজের ওয়াক্ত কমানো হয়েছিল সেই সংখ্যায় এই পার্থক্য।
যে হাদিসগুলোতে নবী ﷺ এর স্বপ্নে সংঘটিত মিরাজের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, সেগুলোতে ১০ ওয়াক্ত করে হ্রাস করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর যে হাদিসগুলোতে নবী ﷺ এর জাগ্রত অবস্থায় সংঘটিত মিরাজের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, সেগুলোতে ৫ ওয়াক্ত করে হ্রাস করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোতে ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ২টি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে সামান্য ভিন্ন উপায়ে নামাজের ওয়াক্ত সংখ্যা হ্রাস করা হয়েছে। কাজেই হাদিসগুলোতে কোনো পরস্পরবিরোধিতা নেই।
তথ্যসূত্রঃ
[1] সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নং : ৩৩৪২
https://www.hadithbd.net/hadith/link/?id=27681
আরো দেখুনঃ সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নং : ৩০৪
[2] মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং : ৫৮৬৪
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=85840
আরো দেখুনঃ সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), হাদিস নং : ৩৪২
[3] সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নং : ৩০০
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=47057
আরো দেখুনঃ মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং : ৫৮৬৩
[4] সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), হাদিস নং : ৭০০৯
[5] দেখুনঃ
সুনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), হাদিস নং : ৪৪৯ (সহীহ)
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=9559
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), হাদিস নং : ২৯৮০
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=3110
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), হাদিস নং ৩৬০৮
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=3866
সহীহ ইবনু হিব্বান (হাদিসবিডি), হাদিস নং : ৪৮
[6] মিরক্বাতুল মাফাতিহ – মোল্লা আলি ক্বারী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৭৬৬
https://shamela.ws/book/8176/8157
অথবা https://archive.is/wip/c6Bxk (আর্কাইভকৃত)
[7] তাজুল 'আরুসি মিন জাওয়াহিরিল ক্বামুস – মুর্তাযা আয যাবিদি, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা ১৬৮-১৬৯
https://shamela.ws/book/7030/6204
https://shamela.ws/book/7030/6205
অথবা (আর্কাইভকৃত)
[8] Lane's Lexicon - Edward William Lane, Page 1551
https://lexicon.quranic-research.net/pdf/Page_1551.pdf
অথবা https://web.archive.org/web/20240629071732/http://lexicon.quranic-research.net/pdf/Page_1551.pdf (আর্কাইভকৃত)
[9] শারহ মুসলিম – ইমাম নববী, খণ্ড ২ পৃষ্ঠা ২২২
[10] ফাতহুল বারী – ইবন হাজার আসকালানী, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৪৬২
[11] হাদিসটি নিম্নরূপঃ
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، أَنَّهَا قَالَتْ أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْوَحْىِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ فِي النَّوْمِ، فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلاَّ جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ، ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الْخَلاَءُ، وَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ فَيَتَحَنَّثُ فِيهِ
অর্থঃ “আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি সর্বপ্রথম যে ওহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি হেরা’র গুহায় নির্জনে থাকতেন। ...”
সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩
[12] ফাতহুল বারী – ইবন হাজার আসকালানী, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ১৯৭-১৯৮
https://shamela.ws/book/1673/4025
https://shamela.ws/book/1673/4026
অথবা (আর্কাইভকৃত)