অভিযোগঃ
ইসলামবিরোধীরা দাবি করে, কুরআনে নক্ষত্র ও উল্কাকে এক জিনিস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সাজানো হয়েছে আর তা নিক্ষেপ করে শয়তানকে তাড়ানো হয়। আমরা জানি মহাকাশে আলোকময় বস্তু হল নক্ষত্র। আর নক্ষত্র এভাবে নিক্ষিপ্ত হয় না। কুরআনের লেখক নক্ষত্র আর উল্কাকে মিলিয়ে ফেলেছেন। নক্ষত্রের নিজস্ব আলো আছে। উল্কার নিজস্ব আলো নেই বরং তা হল মহাজাগতিক প্রস্তরখণ্ড যা বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে। কুরআনে একে ‘প্রদীপ’ বলে বৈজ্ঞানিক ভুল করা হয়েছে।
জবাবঃ
আমরা শুরুতেই এ প্রসঙ্গে আল কুরআন এবং হাদিসের বক্তব্য দেখে নিই।
وَ لَقَدۡ زَیَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنۡیَا بِمَصَابِیۡحَ وَ جَعَلۡنٰهَا رُجُوۡمًا لِّلشَّیٰطِیۡنِ وَ اَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابَ السَّعِیۡرِ
অর্থঃ "আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং ওগুলিকে করেছি শাইতানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।" [1]
আলোচ্য আয়াত প্রসঙ্গে প্রসিদ্ধ মুফাসসির তাবিঈ কাতাদা(র.) থেকে একটি উক্তি পাওয়া যায়ঃ
“এ সব নক্ষত্ররাজি তিনটি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। (১) এদের আসমানের সৌন্দর্য বানিয়েছেন (২) শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ করার জন্য (৩) এবং পথ ও দিক নির্ণয়ের নিদর্শন হিসেবে। অতএব যে ব্যক্তি এদের সম্পর্কে এছাড়া অন্য কোন ব্যাখ্যা দেয় সে ভুল করে, নিজ প্রাপ্য হারায় এবং সে এমন বিষয়ে কষ্ট করে যে বিষয়ে তার জ্ঞান নেই।” [2]
ইসলামবিরোধীদের এই সংক্রান্ত অভিযোগের জবাব ২টি ব্যাখ্যার সাহায্যে দেয়া যায়।
ব্যাখ্যা ১:
কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী নক্ষত্র কি নিজ কক্ষপত্র থেকে বিচ্যুত হয়ে শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়?:
ইসলামবিরোধীরা দাবি করে – ইসলামে নক্ষত্র আর উল্কাকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে, ইসলাম অনুযায়ী নক্ষত্র নিজেই কক্ষপত্র ছেড়ে শয়তানের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয়। অথচ আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে আমরা জানি যে নক্ষত্রসমূহ তাদের নিজস্ব অবস্থান ছেড়ে পাথরের মতো এভাবে নিক্ষিপ্ত হয় না। কিন্তু কুরআনের ব্যাপারে ইসলামবিরোধীদের এহেন দাবি যে নেহায়েত ভ্রান্তিপূর্ণ তা বোঝা যায় আলোচ্য আয়াত প্রসঙ্গে নবী(ﷺ) এর হাদিস থেকে। হাদিসটি নিম্নরূপঃ
“আবূ হুরাইরাহ (রা.) নবী(ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, যখন আল্লাহ্ তা’আলা আকাশে কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন মালায়িকাহ (ফেরেশতা) তাঁর কথা শোনার জন্য অতি বিনয়ের সঙ্গে নিজ নিজ পালক ঝাড়তে থাকে মসৃণ পাথরের উপর জিঞ্জিরের শব্দের মত। ’আলী (রাঃ) বলেন, صَفْوَانِ এর মধ্যে فَا সাকিন যুক্ত এবং অন্যরা বলেন, فَا ফাতাহ্ যুক্ত। এভাবে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বাণী মালায়িকাহ্কে পৌঁছান। ’’যখন মালায়িকাহর অন্তর থেকে ভয় দূর হয়, তখন তারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের প্রভু কী বলেছেন? তখন তারা বলে, যা সত্য তিনি তাই বলেছেন, এবং তিনি অতি উচ্চ মহান।’’ চুরি করে কান লাগিয়ে (শায়ত্বনরা) তা শুনে নেয়। শোনার জন্য শায়ত্বনগুলো একের ওপর এক এভাবে থাকে। সুফ্ইয়ান ডান হাতের আঙ্গুলের ওপর অন্য আঙ্গুল রেখে হাতের ইশারায় ব্যাপারটি প্রকাশ করলেন। তারপর কখনও অগ্নি স্ফুলিঙ্গ শ্রবণকারীকে তার সাথীর কাছে এ কথাটি পৌঁছানোর আগেই আঘাত করে এবং তাকে জ্বালিয়ে দেয়। আবার কখনও সে ফুলকি প্রথম শ্রবণকারী শায়ত্বন পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই সে তার নিচের সাথীকে খবরটি জানিয়ে দেয়। এমনি করে এ কথা পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। কখনও সুফ্ইয়ান বলেছেন, এমনি করে পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তারপর তা জাদুকরের মুখে ঢেলে দেয়া হয় এবং সে তার সঙ্গে শত মিথ্যা মিশিয়ে প্রচার করে। তাই তার কথা সত্য হয়ে যায়। তখন লোকেরা বলতে থাকে, এ জাদুকর আমাদের কাছে অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কথা বলেছিল। বস্তুত আসমান থেকে শুনে নেয়ার কারণেই আমরা তা সত্যরূপে পেয়েছি।” [3]
এই হাদিসে নবী(ﷺ) এর বক্তব্য “তারপর কখনও অগ্নি স্ফুলিঙ্গ শ্রবণকারীকে তার সাথীর কাছে এ কথাটি পৌঁছানোর আগেই আঘাত করে এবং তাকে জ্বালিয়ে দেয়” ইঙ্গিত করে যে এই অগ্নি স্ফুলিঙ্গ আসে ঐসব নক্ষত্র থেকে এবং তা শয়তানদেরকে আঘাত করে। নক্ষত্র নিজেই যে শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হয় বিষয়টা মোটেও এমন নয়।
আমরা এখন আলোচ্য আয়াত প্রসঙ্গে কিছু প্রাচীন মুফাসসিরের আলোচনা দেখব। এর দ্বারা ইসলামের বিরুদ্ধে নাস্তিক-মুক্তমনাদের অভিযোগের অসারতা আরো স্পষ্ট হবে।
ইমাম কুরতুবী(র.) [মৃত্যুঃ ৬৭১ হিজরী] তাঁর তাফসির গ্রন্থে সুরা মুলকের আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেনঃ
قَوْلُهُ تَعَالَى: (وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّماءَ الدُّنْيا بِمَصابِيحَ) جَمْعُ مِصْبَاحٍ وَهُوَ السِّرَاجُ. وَتُسَمَّى الْكَوَاكِبُ مَصَابِيحَ لِإِضَاءَتِهَا. (وَجَعَلْناها رُجُوماً) أي جعلنا شهبها، فحذف المضاف. دَلِيلُهُ إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهابٌ ثاقِبٌ «١» [الصافات: ١٠]. وَعَلَى هَذَا فَالْمَصَابِيحُ لَا تَزُولُ وَلَا يُرْجَمُ بِهَا. وَقِيلَ: إِنَّ الضَّمِيرَ رَاجِعٌ إِلَى الْمَصَابِيحِ عَلَى أَنَّ الرَّجْمَ مِنْ أَنْفُسِ الْكَوَاكِبِ، وَلَا يسقط الكوكب نفسه إنما ينفصل منه شي يُرْجَمُ بِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ ضَوْءُهُ وَلَا صُورَتُهُ.
অর্থঃ আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ "আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা" এখানে مصباح (প্রদীপ) শব্দের বহুবচন উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা আলোকময় বস্তুকে বোঝানো হয়। নক্ষত্রদেরকে তাদের আলোকময়তার জন্য 'প্রদীপমালা' বলা হয়েছে।
"এবং ওগুলিকে করেছি শাইতানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ " অর্থাৎ তাদের স্ফুলিঙ্গকে এমনটি [নিক্ষেপের উপকরণ] বানিয়েছি। এখানে মুদ্বাফ (সম্বন্ধ পদ) উহ্য আছে। এর প্রমাণ হচ্ছে, “তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে যদি কেউ কিছু হাত করতে পারে তাহলে একটি তেজস্বী অগ্নিস্ফুলিংগ তার পশ্চাদ্বাবন করে।” (সুরা আস সফফাত ৩৭ : ১০) [4] অর্থাৎ এই প্রদীপমালা (নক্ষত্র) নিজের স্থান থেকে সরে যায় না বা তাদেরকে নিক্ষেপও করা হয় না। কারও কারও মতে, এই সর্বনাম দ্বারা প্রদীপমালাকেই বোঝানো হয়েছে এই অর্থে যে, নক্ষত্ররাজি থেকেই উক্ত নিক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। তবে এই নক্ষত্র নিজেই পড়ে যায় না বরং তা থেকে কোনো কিছু নির্গত হয় এবং নিক্ষিপ্ত হয় এবং এর (নক্ষত্রের) আলো অথবা আকৃতিরও কোনো পরিবর্তন ঘটে না।” [5]
আমরা দেখলাম, ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাফসিরবিদ ইমাম কুরতুবী(র.) আল কুরআনের অন্য একটি আয়াতের [আস সফফাত ৩৭ : ১০] সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছেন যে নক্ষত্রদেরকে নয় বরং তাদের থেকে এক প্রকার স্ফুলিঙ্গ শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়। নক্ষর মোটেও নিজের স্থান থেকে সরে যায় না। ইমাম কুরতুবী(র.) একা নন বরং প্রায় সকল মুফাসসির থেকেই অনুরূপ তাফসির পাওয়া যায়।
প্রখ্যাত তাফসিরবিদ ইবন জুযাই আল গারনাতি(র.) [মৃত্যুঃ ৭৪১ হিজরী] তাঁর ‘তাসহিল লি উলুমিত তানযিল’ গ্রন্থে আলোচ্য আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন,
{ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِّلشَّيَاطِينِ }
أَيْ جَعَلْنَا مِنْهَا رُجُومًا، لِأَنَّ الْكَوَاكِبَ الثَّابِتَةَ لَيْسَتْ تَرْجُمُ الشَّيَاطِينَ، فَهُوَ كَقَوْلِكَ: أَكْرَمْتُ بَنِي فُلَانٍ؛ إِذَا أَكْرَمْتَ بَعْضَهُمْ.
وَالرُّجُومُ جَمْعُ رَجْمٍ، وَهُوَ مَصْدَرٌ سُمِّيَ بِهِ مَا يُرْجَمُ بِهِ.
قَالَ الزَّمَخْشَرِيُّ:
مَعْنَى كَوْنِ النُّجُومِ رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ: أَنَّ الشُّهُبَ تَنْقَضُّ مِنَ النُّجُومِ لِرَجْمِ الشَّيَاطِينِ الَّذِينَ يَسْتَرِقُونَ السَّمْعَ مِنَ السَّمَاءِ، فَالشُّهُبُ الرَّاجِمَةُ مُنْفَصِلَةٌ مِنْ نَارِ الْكَوَاكِبِ، لَا أَنَّ الرَّاجِمَةَ هِيَ الْكَوَاكِبُ أَنْفُسُهَا؛ لِأَنَّهَا ثَابِتَةٌ فِي الْفَلَكِ.
অর্থঃ “{ এবং ওগুলিকে করেছি শাইতানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ } অর্থাৎ আমি এদের (নক্ষত্র) থেকে নিক্ষেপক বানিয়েছি। কেননা নির্দিষ্ট স্থানে থাকা নক্ষত্ররাজি নিজেরা শয়তানের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় না। এটি তো এই বক্তব্যের ন্যায়ঃ “আমি অমুক ব্যক্তির বংশকে সম্মান দিয়েছি।” এর মানে হচ্ছে আমি বংশের কিছু লোককে সম্মান দিয়েছি [সেই বংশের একেবারে সব মানুষকে নয়]। ‘রুজুম’ হচ্ছে ‘রজম’ এর বহুবচন এবং যে জিনিসকে নিক্ষেপ করা হয় তাকে এর দ্বারা নির্দেশ করা হয়। যামাখশারী বলেছেন, শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ করার অর্থঃ অগ্নিশিখা, যা নক্ষত্র থেকে নির্গত হয়; এদেরকে আসমানে আড়ি পাতা শয়তানের প্রতি নিক্ষেপ করা হয়। নিক্ষিপ্ত অগ্নিশিখা নক্ষত্রের অগ্নি থেকে নির্গত হয় এবং এর মানে এই নয় যে নক্ষত্ররাজি নিজেরাই নিক্ষিপ্ত হয় কেননা তারা নিজ কক্ষপথে অবস্থান করে।” [6]
আলোচ্য তাফসিরে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে কুরআনের আলোচ্য আয়াতের অর্থ মোটেও এমন নয় যে নক্ষত্রদেরকে শয়তানের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। বরং শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হয় নক্ষত্র থেকে আগত অগ্নিশিখা বা স্ফুলিঙ্গ। এই তাফসিরে নক্ষত্রদের নিজ কক্ষপথে অবস্থানের কথাও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নক্ষত্ররাজি নিজ কক্ষপথ থেকে সরে যায় – কুরআনে আদৌ এমন কথা বলা হয়নি।
ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাফসিরবিদ ইমাম ইবন কাসির(র.) আলোচ্য আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন,
عَادَ الضَّمِيرُ فِي قَوْلِهِ وَجَعَلْنَاهَا، عَلَى جِنْسِ الْمَصَابِيحِ، لَا عَلَى عَيْنِهَا، لِأَنَّهُ لَا يُرْمَى بِالْكَوَاكِبِ الَّتِي فِي السَّمَاءِ، بَلْ بِشُهُبٍ مِنْ دُونِهَا، وَقَدْ تَكُونُ مُسْتَمَدَّةً مِنْهَا، وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
অর্থঃ তাঁর (আল্লাহর) বাণীর মাঝে সর্বনাম ( وَجَعَلْنَاهَا ) [এবং ওগুলিকে করেছি] দ্বারা প্রদীপমালার রকমকে বোঝাচ্ছে, সরাসরি প্রদীপমালাকে বোঝাচ্ছে না। ওগুলো হতে অগ্নিশিখা বের হয়ে ঐ শয়তানদের উপর নিক্ষিপ্ত হয়, এ নয় যে স্বয়ং তারকাই তাদের উপর ভেঙ্গে পড়ে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন। [7]
প্রখ্যাত তাফসিরবিদ ফখরুদ্দিন রাযি(র.) এর তাফসিরুল কাবির গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে,
أَنَّ الشَّيَاطِينَ إِذَا أَرَادُوا اسْتِرَاقَ السَّمْعِ رُجِمُوا بِهَا، فَإِنْ قِيلَ: جَعْلُ الْكَوَاكِبِ زِينَةً لِلسَّمَاءِ يَقْتَضِي بَقَاءَهَا وَاسْتِمْرَارَهَا، وَجَعْلُهَا رُجُوماً لِلشَّيَاطِينِ وَرَمْيَهُمْ بِهَا يَقْتَضِي زَوَالَهَا، وَالْجَمْعُ بَيْنَهُمَا مُتَنَاقِضٌ. قُلْنَا: لَيْسَ مَعْنَى رَجْمِ الشَّيَاطِينِ أَنَّهُمْ يُرْمَوْنَ بِأَجْرَامِ الْكَوَاكِبِ، بَلْ يَجُوزُ أَنْ يَنْفَصِلَ مِنَ الْكَوَاكِبِ شُعَلٌ تُرْمَى الشَّيَاطِينَ بِهَا، وَتِلْكَ الشُّعَلُ هِيَ الشُّهُبُ، وَمَا ذَاكَ إِلَّا قَبَسٌ يُؤْخَذُ مِنْ نَارٍ وَالنَّارُ بَاقِيَةٌ.
অর্থঃ “শয়তানেরা যখন চুরি করে কিছু শোনার চেষ্টা করে তখন এর দ্বারা তাদেরকে আঘাত করা হয়। এখন যদি বলা হয়ঃ নক্ষত্ররাজিকে আসমানের শোভা হিসেবে সৃষ্টি করার দ্বারা ধারাবাহিকভাবে এবং সবসময়ের জন্য তাদের সেখানে অবস্থান করা জরুরী হয়। আর এদেরকে শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ করা এবং তাদেরকে নিক্ষেপ করার দ্বারা তাদের সেখান [কক্ষপথ] থেকে চলে যাওয়া আবশ্যক হয়। আর এই দুইটি বিষয় পরস্পর সাংঘর্ষিক।
[এর জবাবে] আমরা বলিঃ এদেরকে শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ করার অর্থ এই নয় যে নক্ষত্রের নিজ দেহকে তাদের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। বরং এখানে সম্ভব হচ্ছে, নক্ষত্র থেকে স্ফুলিঙ্গ নির্গত হয় এবং তা শয়তানের দিকে ছুটে যায়। আর এই স্ফুলিঙ্গ হচ্ছে [এক প্রকার] অগ্নিশিখা। এখানে যা ঘটে তা আগুনের মধ্য থেকে একটি ঝলক চলে যাবার মতো। [সেই ঝলক চলে গেলেও] আগুন অবশিষ্ট থাকে।” [8]
আল কুরআন অনুযায়ী শয়তানের প্রতি কী নিক্ষিপ্ত হয়?
আসমান থেকে চুরি করে তথ্য শুনতে চাওয়া শয়তানের প্রতি যা নিক্ষিপ্ত হয় এই ব্যাপারে আল কুরআনে সুনির্দিষ্টভাবে ‘শিহাব’ এর কথা উল্লেখ আছে।
اِلَّا مَنِ اسۡتَرَقَ السَّمۡعَ فَاَتۡبَعَهٗ شِهَابٌ مُّبِیۡنٌ
অর্থঃ “কিন্তু কেউ চুরি করে শুনতে চাইলে প্রদীপ্ত শিখা তার পশ্চাদ্ধাবন করে।” [9]
‘শিহাব’ শব্দের অর্থ উল্কাপিণ্ড নাকি অগ্নিশিখা?:
আল কুরআনে আলোচ্য স্থানে কিছু কিছু বাংলা অনুবাদে ‘শিহাব’ এর অর্থ হিসেবে উল্কার কথা উল্লেখ আছে, কোনো কোনো অনুবাদে অগ্নিশিখার কথা আছে। উভয় অনুবাদই গ্রহণযোগ্য। তবে প্রাচীন অভিধানগুলোতে এই শব্দের অর্থের ব্যাপারে ‘অগ্নিশিখা’কেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
আরবি ভাষার প্রাচীনতম অভিধান হচ্ছে খলিল ইবন আহমাদ আল ফারাহিদির ‘কিতাবুল আইন’। এমনকি বিশ্বের যে কোনো ভাষার ক্ষেত্রেই এটি অন্যতম প্রাচীন অভিধান। এই অভিধানে আল কুরআনের ব্যবহৃত الشِّهابُ এর অর্থ করতে গিয়ে বলা হয়েছেঃ
الشِّهَابُ: شُعْلَةٌ مِنْ نَارٍ، وَالْجَمِيعُ: الشُّهُبُ وَالشُّهْبَانُ
অর্থঃ “ ‘শিহাব’: আগুনের শিখা। সামষ্টিকভাবে [বহুবচন ও দ্বিবচনে] ‘শুহুব’ ও ‘শুহবান’। ” [10]
আরবি ভাষার অন্যান্য প্রাচীন অভিধানগুলোতেও অনুরূপ অর্থ করা হয়েছে।
ইবন মানযুরের ‘লিসানুল আরব’ এবং আবু নাসর আল জাওহারীর ‘তাজদিদুস সিহাহ’ অভিধানে অর্থ করা হয়েছেঃ
شُعْلَةُ نارٍ سَاطِعَةٌ. [11]
সাহিব ইবন আব্বাদ এর ‘মুহিত ফিল লুগাহ’ ও আবু মানসুর আল আযহারীর ‘তাহযিবুল লুগাহ’ অভিধানে অর্থ করা হয়েছেঃ
شُعْلَةُ نَارٍ سَاطِعٍ [12]
এর উভয়েরই অর্থ হচ্ছেঃ ‘উজ্জ্বল আগুনের শিখা’।
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী শয়তান জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত। [13] আর জিনদের তৈরি করা হয়েছে ধোঁয়াবিহীন এক বিশেষ অগ্নিশিখা থেকে। [14] কাজেই শয়তানের দিকে অগ্নিশিখা বা স্ফুলিঙ্গজাতীয় কিছু নিক্ষিপ্ত হবার বিষয়টি যৌক্তিক। যদিও আল্লাহ চাইলে অন্য উপকরণ দিয়েও শয়তানের উপর আঘাত হানতে পারেন।
কাজেই এই ব্যাখ্যা অনুসারে, শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হয় নক্ষত্র থেকে উৎপন্ন শিখা বা স্ফুলিঙ্গ। নক্ষত্র নিজে নিক্ষিপ্ত হয় না বা মহাজগতিক প্রস্তর বা উল্কার সাথে এর সম্পর্ক নেই। আমরা জানি সূর্যের মতো কিছু নক্ষত্র থেকে মাঝে মাঝে সৌর শিখা (solar flare) [15] বা করোনাল মাস ইজেকশন (coronal mass ejection) [16] এর মতো ঘটনা ঘটে, যেখানে উচ্চ-শক্তির প্লাজমা এবং বিকিরণ মহাকাশে নির্গত হয়। এই বিষয়গুলোকে প্রাচীন আরবি ভাষার শব্দরীতিতে অনায়াসে শিখা বা স্ফুলিঙ্গ বলে প্রকাশ করা যায়।
এই প্রসঙ্গে একটি হাদিস রয়েছে, যেখানে শয়তানের প্রতি নিক্ষেপক হিসেবে উল্কার উল্লেখ আছে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَالِسٌ فِي نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِهِ إِذْ رُمِيَ بِنَجْمٍ فَاسْتَنَارَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا كُنْتُمْ تَقُولُونَ لِمِثْلِ هَذَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ إِذَا رَأَيْتُمُوهُ " . قَالُوا كُنَّا نَقُولُ يَمُوتُ عَظِيمٌ أَوْ يُولَدُ عَظِيمٌ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَإِنَّهُ لاَ يُرْمَى بِهِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ وَلَكِنَّ رَبَّنَا عَزَّ وَجَلَّ إِذَا قَضَى أَمْرًا سَبَّحَ لَهُ حَمَلَةُ الْعَرْشِ ثُمَّ سَبَّحَ أَهْلُ السَّمَاءِ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ التَّسْبِيحُ إِلَى هَذِهِ السَّمَاءِ ثُمَّ سَأَلَ أَهْلُ السَّمَاءِ السَّادِسَةِ أَهْلَ السَّمَاءِ السَّابِعَةِ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالَ فَيُخْبِرُونَهُمْ ثُمَّ يَسْتَخْبِرُ أَهْلُ كُلِّ سَمَاءٍ حَتَّى يَبْلُغَ الْخَبَرُ أَهْلَ السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَتَخْتَطِفُ الشَّيَاطِينُ السَّمْعَ فَيُرْمَوْنَ فَيَقْذِفُونَهَا إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ فَمَا جَاءُوا بِهِ عَلَى وَجْهِهِ فَهُوَ حَقٌّ وَلَكِنَّهُمْ يُحَرِّفُونَ وَيَزِيدُونَ "
অর্থঃ “ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর এক দল সাহাবীর সঙ্গে বসা ছিলেন। এমন সময় একটি উল্কা পতিত হল এবং আলোকিত হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ এরূপ উল্কাপাত হতে দেখলে তোমরা জাহিলী যুগে কি বলতে? তারা বলল, আমরা বলতাম, কোন মহান লোকের মৃত্যু হবে অথবা কোন মহান লোকের জন্ম হবে (এটা তারই আলামাত)। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ কোন লোকের মৃত্যু অথবা জন্মগ্রহণের আলামাত হিসেবে এটা পতিত হয় না, বরং মহা বারাকাতময় ও মহিমান্বিত নামের অধিকারী আমাদের প্রতিপালক যখন কোন আদেশ জারী করেন তখন আরশ বহনকারী ফেরেশতারা তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেন। তারপর তাদের নিকটতম আসমানের অধিবাসীরা তাসবীহ পড়তে থাকে। এভাবে তাসবীহ ও মহিমা ঘোষণার ধারা এই নিম্নবর্তী আসমানে এসে পৌছে যায়। তারপর ষষ্ঠ আসমানের অধিবাসীরা সপ্তম আসমানের অধিবাসীদের প্রশ্ন করেন, তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তারা তাদেরকে ব্যাপারটি জানান। এভাবে প্রত্যেক আসমানের অধিবাসীরা তাদের উপরের আসমানের অধিবাসীদের একইভাবে প্রশ্ন করেন। এভাবে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে এ খবর পৌছে যায়। শাইতানেরা এ তথ্য শুনবার জন্য ওৎ পেতে থাকে। তখন এদের উপর উল্কা ছুড়ে মারা হয়। এরা কিছু তথ্য এদের সহগামীদের নিকট পাচার করে। এরা যা সংগ্রহ করে তা তো সত্য, কিন্তু তারা এতে কিছু পরিবর্তন ও কিছু বৃদ্ধি ঘটায়।” [17]
এই হাদিসটি বিভিন্ন গ্রন্থে এসেছে। এখানে মূল আরবিতে ‘নাজম’ (نجم) শব্দটি আছে, যাকে এখানে ‘উল্কা’ বলে অনুবাদ করা হয়েছে। আবার কোনো কোনো স্থানে একে ‘নক্ষত্র’ বা ‘তারকা’ বলেও অনুবাদ করা হয়েছে। [18] যদিও প্রসঙ্গ থেকে বোঝা যায় এখানে উল্কার কথাই বলা হচ্ছে। ইংরেজিতে একে ‘Meteor’ বলে অনুবাদ করা হয়েছে। [19] ক্ল্যাসিকাল আরবি ভাষায় একই শব্দ দ্বারা নক্ষত্র, গ্রহ, উল্কা এই সব কিছুকেই বোঝানোর বিষয়টি একটু পরেই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে ইন শা আল্লাহ।
অতএব, কুরআন অনুযায়ী নক্ষত্রসমূহ তাদের নিজস্ব স্থানেই অবস্থান করে, নক্ষত্র নিজে থেকে শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হয় না। বরং নক্ষত্র থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়। উল্কাও আরেকটি বস্তু যা শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়। সুবিশাল মহাকাশে শয়তানকে আঘাতের জন্য এই উপকরণগুলো কাজ করে। কুরআনে নক্ষত্র ও উল্কাকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে বা কুরআন অনুসারে নক্ষত্র নিজেই শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হয় – ইসলামবিরোধীদের এই ধারণা ভ্রান্ত।
ব্যাখ্যা ২:
নক্ষত্র, গ্রহ, উল্কা বা যে কোনো জ্যোতিষ্ককেই ক্ল্যাসিক্যাল আরবিতে ‘নাজম’, ‘কাওকাব’ ইত্যাদি শব্দ দিয়ে বোঝাতে পারেঃ
এ প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত ফতোয়ার ওয়েবসাইট islamqaর ২৪৩৮৭১ নং ফতোয়ার প্রায় সম্পূর্ণ অংশের অনুবাদ এখানে দেয়া হচ্ছে—
“ ... ... সীমিত অর্থে ‘নাজম’ (বহুবচন 'নুজুম') বিশেষ্যটি দ্বারা সুবিশাল জ্যোতিষ্ককে বোঝানো যেতে পারে যার মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথ আছে, যেগুলো জ্বলছে এবং যেগুলোর নিজস্ব আলো আছে। যেমনঃ সূর্য। আর ‘كوكب’ (কাওকাব) বিশেষ্য (বহুচন 'কাওয়াকিব') দ্বারা কঠিন জ্যোতিষ্ককে বোঝায় যেগুলো জ্বলন্ত নয় (বা নিজস্ব আলো নেই)। যেমনঃ সৌরজগতের গ্রহগুলো। এগুলো আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষা। এই সকল পরিভাষা ব্যবহার মোটেও ভুল কোনো কাজ নয়। এই পরিভাষাগুলোও ভুল নয়। কিন্তু ভুল তখন হয় যখন এই সকল পরবর্তীকালে উদ্ভাবিত পরিভাষা ব্যবহার করে কুরআন কারিমের ভাষাকে বিচার করা হয়। কুরআন কারিমকে (এর নাজিলকালীন) আরবি ভাষার আলোকে বোঝার চেষ্টা করা উচিত। কেননা এই ভাষাতে একে নাজিল করা হয়েছে।
এর সাথে আপত্তিকারীদের অবস্থা তো তাদের মতো, যারা সুরা ইউসুফের ১৯ নং আয়াতের [وَجَاءَتْ سَيَّارَةٌ فَأَرْسَلُوا وَارِدَهُمْ -"সেখানে একটা কাফেলা (سيارة) আসলো। তারা তাদের পানি সংগ্রহকারীকে পাঠালো"] سيارة শব্দের দ্বারা যন্ত্রচালিত সেই যানবাহনকে বোঝে যাতে চড়ে আজকের দিনে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করে (আধুনিক আরবিতে سيارة শব্দের অর্থ "মোটরগাড়ি")। এরপর কুরআনের 'ভুল' (!) ধরে প্রশ্ন তোলে, "ইউসুফ(আ.) এর যুগে তো মোটরগাড়ি আবিষ্কার হয়নি। তাহলে এই জায়গায় মোটরগাড়ির কথা এলো কী করে?!"
এর জবাবে তাদেরকে যা বলবো - এখানে আমাদেরকে আলোচ্য বিষয় এবং পরিভাষার পার্থক্যের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। কুরআন যে সময়কার আরবিতে নাজিল হয়েছে, আমাদেরকে সেটিকে বিবেচনায় রাখতে হবে। আরবি ভাষায় শুধুমাত্র নিজস্ব আলোবিশিষ্ট জ্যোতিষ্ককেই 'নাজম' বলে না। বরং আরবিতে 'নাজম' দ্বারা সুনির্দিষ্ট ও গতিশীল সকল প্রকার জ্যোতিষ্ককেই বোঝাতে পারে যেগুলোর নিজস্ব আলো আছে কিংবা নিজস্ব আলো নেই। কুরআনে এভাবেই শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। সুরা মুলকের উল্লেখিত আয়াতে দুই প্রকারের 'নাজম' এর কথা আলোচনা করা হয়েছে। এক প্রকার হচ্ছেঃ মহাকাশকে আলোকিত করা প্রদীপমালা তথা উজ্জ্বল নক্ষত্রমণ্ডলী। অন্য প্রকার হচ্ছেঃ গতিশীল গাড়ির মতো; যেমনঃ সকল প্রকারের গ্রহাণু, জ্বলন্ত উল্কা, গ্রহ ইত্যাদি। আরবরা এর সবগুলোকেই 'নাজম' বলে।
কাজেই এখানে কোনো বৈজ্ঞানিক ভুল নেই। বরং এখানে শব্দের অর্থ এবং প্রয়োগের বৈচিত্র্য রয়েছে।
সুরা মুলকের আলোচ্য আয়াতে ["এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি" (৬৭ : ৫)] এই শব্দের দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের 'নাজম'কে বোঝানো হয়েছে। যে কোনো প্রকারের গতিশীল জ্যোতিষ্ককে আরবিতে অনায়াসেই 'নাজম' বলা যায়। কাজেই এই আয়াতে কোনো বৈজ্ঞানিক ভুল নেই।
নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু আরবি ভাষাশাস্ত্রের কয়েকজন ইমামের অভিমত উল্লেখ করা হলো। যাঁরা এ ভাষাটির গঠন ও ব্যবহারবিধির ব্যাপারে বড়মাপের পণ্ডিত। ---
আল ফারাহিদি(র.) বলেছেনঃ
যে কোনো প্রকারের 'কাওকাব' (গ্রহ অথবা জ্যোতিষ্ক)কে 'নাজম' বলা যায়। সব গ্রহই 'নুজুম' ('নাজম' এর বহুবচন) এর অন্তর্ভুক্ত।
[আল 'আইন ৬/১৫৪]
ইবন সাইদাহ বলেছেন,
'নাজম' হচ্ছে 'কাওকাব' (كوكب)।
[মুহকাম ওয়াল মুহিত আল আ'যাম ৭/৪৬৯]
ইবন মানজুর বলেছেন,
প্রকৃতপক্ষে 'নাজম' শব্দটি দ্বারা আকাশের যে কোনো প্রকারের 'কাওকাব'কে বোঝায়।
[লিসানুল আরব ১২/৫৭০]
ফাইরুযাবাদী বলেছেন,
'নাজম' মানে 'কাওকাব'।
[কামুস আল মুহিত পৃষ্ঠা ১১৬১]
আয যুবাইদী বলেছেনঃ
'নাজম' শব্দটির লিঙ্গ নেই। একই কথা 'কাওকাব' এর বেলাতেও প্রযোজ্য। এই শব্দ দু'টি একে অন্যের পরিপূরক।
[তাজুল 'উরুস ৪/১৫৭]
(ইসলামপূর্ব) জাহেলী যুগের কবি আমির আল মুহারিবি তাঁর একটি কবিতার মাঝে বলেছেন,
وَكُنَّا نُجُومًا كُلَّمَا انْقَضَّ كَوْكَبٌ *** بَدَا زَاهِرٌ مِنْهُنَّ لَيْسَ بِأَقْتَمَا
নক্ষত্র (নুজুম) ছিলাম মোরা তারা (কাওকাব) ঝরার কালে,
হারাতো না আলোকধারা অন্ধকারের জালে।
[দেখুনঃ মুনতাহাত ত্বলাব মিন আশআরিল আরাব পৃষ্ঠা ১৩০]
লক্ষ করুন, এখানে 'কাওকাব' শব্দটি কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে ঝরে যাওয়ার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ তা দ্রুত ও শক্তিশালীভাবে গতিশীল থাকে।
উপরের আলোচনার প্রমাণস্বরূপ আমরা কুরআন বিশ্লেষণ করে এর থেকে যতো জায়গায় 'নাজম' এবং 'কাওকাব' শব্দগুলো এসেছে সবগুলো উদ্ধৃত করবো। যার ফলে সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হবে যে সেই শব্দগুলো কিভাবে সমার্থকরূপে ব্যবহৃত হয়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু যেমনঃ জ্বলন্ত উল্কা (শিহাব) কিংবা মহাজাগতিক প্রস্তর খণ্ড (নায়াযিক) এগুলোকেও আরবি ভাষায় 'নাজম' ও 'কাওকাব' বলে অভিহীত করা যায়।
وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى
অর্থঃ শপথ নক্ষত্রের, যখন তা অস্ত যায় (বা অদৃশ্য হয়)।
(সুরা নাজম ৫৩ : ১)
وَالسَّمَاءِ وَالطَّارِقِ. وَمَا أَدْرَاكَ مَا الطَّارِقُ. النَّجْمُ الثَّاقِبُ
অর্থঃ শপথ আসমানের ও রাতে আগমনকারীর। তুমি কি জানো যা রাতে আসে তা কী? তা এক দীপ্তিমান নক্ষত্র (নাজমুস সাকিব)।
(সুরা তারিক ৮৬ : ১-৩)
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ. وَحِفْظًا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ مَارِدٍ. لَا يَسَّمَّعُونَ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلَى
وَيُقْذَفُونَ مِنْ كُلِّ جَانِبٍ. دُحُورًا وَلَهُمْ عَذَابٌ وَاصِبٌ. إِلَّا مَنْ خَطِفَ الْخَطْفَةَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ ثَاقِبٌ
অর্থঃ আমি নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্ররাজির [কাওয়াকিব (কাওকাব এর বহুবচন)] সুষমা দ্বারা সুশোভিত করেছি। আর প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে হিফাযত করেছি। তারা ঊর্ধ্বজগতের কিছু শুনতে পারে না, কারণ প্রত্যেক দিক থেকে তাদের দিকে নিক্ষেপ করা হয় (উল্কাপিণ্ড)। (তাদেরকে) তাড়ানোর জন্য। তাদের জন্য আছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ সন্তর্পণে কিছু শুনে নিলে তাকে পিছু তাড়া করে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড (শিহাবুন সাকিব)।
(সুরা আস সফফাত ৩৭ : ৬-১০)
وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ. وَحَفِظْنَاهَا مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ رَجِيمٍ. إِلَّا مَنِ اسْتَرَقَ
السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُبِينٌ
অর্থঃ আসমানে আমি গ্রহ-নক্ষত্র (বুরুজ) সৃষ্টি করেছি এবং ওকে করেছি সুশোভিত, দর্শকদের জন্য। আর প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান থেকে সেগুলোকে সুরক্ষিত করে দিয়েছি। কিন্তু কেউ চুরি করে (খবর) শুনতে চাইলে উজ্জ্বল অগ্নিশিখা (শিহাবুম মুবিন) তার পশ্চাদ্ধাবণ করে।
(সুরা হিজর ১৫ : ১৬-১৮)
وَأَنَّا لَمَسْنَا السَّمَاءَ فَوَجَدْنَاهَا مُلِئَتْ حَرَسًا شَدِيدًا وَشُهُبًا. وَأَنَّا كُنَّا نَقْعُدُ مِنْهَا مَقَاعِدَ لِلسَّمْعِ فَمَنْ
يَسْتَمِعِ الْآنَ يَجِدْ لَهُ شِهَابًا رَصَدًا .
অর্থঃ আর নিশ্চয় আমরা আকাশ স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা সেটাকে পেলাম যে, তা কঠোর প্রহরী এবং জ্বলন্ত শিখা (শুহুব) দ্বারা পরিপূর্ণ। আমরা (আগে) সংবাদ শোনার জন্য আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে বসতাম, কিন্তু এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে তার উপর নিক্ষেপের জন্য সে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডকে (শিহাবার রাসাদা) লুকিয়ে থাকতে দেখে।
(সুরা জিন ৭২ : ৮-৯)
আরো একটি উদাহরণ পাওয়া যায় সহীহ মুসলিমে (হাদিস নং ২২০) হুসাইন ইবন আব্দুর রহমান(র.) এর বর্ণনায়, যিনি বলেনঃ "আমি সাঈদ ইবনু আবদুর রহমানের কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি প্রশ্ন করলেন,
أَيُّكُمْ رَأَى الْكَوْكَبَ الَّذِي انْقَضَّ الْبَارِحَةَ
গতকাল রাতে যে কাওকাবটি বিচ্যুত হয়েছিল (অথবা তারা খসেছিলো/উল্কাপাত হয়েছিলো) তা তোমরা কেউ দেখছো কি?"
তিনি একে 'কাওকাব' বলেছেন, যদিও এটি গতিশীল এবং ভূমির দিকে পতিত হচ্ছিলো।
কাজেই এটি পরিষ্কার যে, শিহাব (জ্বলন্ত উল্কা) এবং নায়াযিক (মহাজাগতিক প্রস্তর খণ্ড) এগুলোকেও সাধারণভাবে আরবদের ভাষারীতি অনুযায়ী 'কাওকাব' কিংবা 'নাজম' বলে অভিহীত করা যায়। ... ... ” [20]
islamqaর প্রবন্ধটি থেকে উদ্ধৃতি সমাপ্ত।
কুরআনের কোনো শব্দের ব্যাপারে কিছু দাবি করতে হলে তা আধুনিক আরবির রীতি অনুসারে না বরং তা ক্ল্যাসিক্যাল আরবির রীতি অনুসারে বিশ্লেষণ করে এরপর দাবি করা উচিত। উপরের দীর্ঘ আলোচনায় আমরা দেখলাম যে – ক্ল্যাসিক্যাল আরবি ভাষায় নাজম, কাওকাব এই একই শব্দের দ্বারা নক্ষত্র, গ্রহ, উল্কা এই সব কিছুকে বোঝাতে পারে। আবার শিহাব শব্দের অর্থ অগ্নিশিখা হলেও রূপকভাবে এর দ্বারা উল্কা বোঝাতে পারে। এভাবে আরবি এক শব্দের অনেক রকমের অর্থ হতে পারে।
নিকটতম আসমান যে ‘প্রদীপমালা’ দ্বারা সজ্জিত, তা দিয়ে একটি গ্রুপকে বোঝায়ঃ
وَ لَقَدۡ زَیَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنۡیَا بِمَصَابِیۡحَ وَ جَعَلۡنٰهَا رُجُوۡمًا لِّلشَّیٰطِیۡنِ وَ اَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابَ السَّعِیۡرِ
অর্থঃ "আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং ওগুলিকে করেছি শাইতানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।" [21]
আমরা যদি ভালো করে লক্ষ করি, তাহলে দেখব এই আয়াতে সরাসরি নক্ষত্রের কথা বলা নেই। আছে 'প্রদীপমালা' (مَصَابِيۡحَ) এর কথা, যা একটা সাধারণ বা General কথা।
সুরা মুলকের "নিকটতম আসমানকে প্রদীপমালা দ্বারা সজ্জিত করা" - এখানে 'প্রদীপমালা' হল একটা সেট (Set) বা গ্রুপ (Group)। এই গ্রুপের মধ্যে মানুষ খালি চোখে যেসব মহাজাগতিক বস্তুকে আলোকময় দেখে - এর সবই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ নক্ষত্র, গ্রহ, ধুমকেতু, উল্কা - সবই। এই সব কিছুকেই প্রাচীনকাল থেকেই আকাশের বুকে মানুষ আলোকময় দেখত এবং এর সবগুলোকেই খুব সহজেই রূপকভাবে 'প্রদীপমালা' বলা যায়। আল কুরআনে এমন শব্দমালা ব্যবহার করা হয়েছে যা এর সর্বপ্রথম পাঠকারী অর্থাৎ ৭ম শতাব্দীর মানুষের জন্যও প্রাসঙ্গিক ছিল, আজকের যুগের জন্যও প্রাসঙ্গিক। আর ক্ল্যাসিক্যাল আরবি ভাষায় গ্রহ, নক্ষত্র, উল্কা বা মহাজাগতিক যে কোনো জ্যোতিষ্ক সবই নাজম, কাওকাব এসব শব্দ দিয়ে নির্দেশ করা হয়।
আর নিকটতম আসমান বলতে মানুষ আসমানের যা দেখতে পায় তা বোঝায়। অর্থাৎ তা হচ্ছে দৃশ্যমান মহাকাশ। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ থেকে সব কিছুই আসমান এর অন্তর্ভুক্ত। সুদূর মহাকাশের নক্ষত্র আর বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এসে ঘর্ষণের ফলে প্রজ্জ্বলিত হওয়া উল্কা - সবই ‘আসমানে’ অবস্থান করছে।
‘প্রদীপমালা’ গ্রুপের কিছু সদস্য নক্ষত্র ও গ্রহ মহাকাশে নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে আসমানের শোভা বৃদ্ধি করছে। আবার এই গ্রুপের আরেক সদস্য উল্কা শয়তানের দিকে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এরা সবাই 'প্রদীপমালা' গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই কুরআনে যখন এদেরকে সাধারণভাবে একই পরিভাষা দিয়ে বোঝায়, এর অর্থ এই না যে কুরআনে নক্ষত্র আর উল্কাকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে। যেমন, একজন মানুষের দেহ হাত, পা, চোখ, মুখ ইত্যাদি নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত। সেই মানুষটির হাত, পা চোখ এই যে অঙ্গই কোনো কাজ করুক - সেই কাজকে ঐ ব্যক্তি করেছে বলেই ধরা হয়। লোকটি চোখ দ্বারা যা দেখেছে তাকেও ঐ ব্যক্তির কাজ ধরা হয়, আবার পা দ্বারা হাঁটলে সেটিও ঐ ব্যক্তি কাজ বলে ধরা হয়। যদিও সেগুলো ভিন্ন অঙ্গের কাজ। এই কাজগুলোকে চোখের কাজ, পায়ের কাজ এভাবে আলাদা করে বোঝানোর দরকার পড়ে না।
এ প্রসঙ্গে আমরা আরো একটি উদাহরণ দিতে পারি। একটা ফুটবল দলে কিছু খেলোয়ারের কাজ আক্রমণ করা বা স্ট্রাইকারের ভূমিকা পালন করা, আবার কিছু খেলোয়ারের কাজ রক্ষণভাগ সামলানো বা ডিফেন্ডারের ভূমিকা পালন করা। এদের খেলার ধরণ ভিন্ন হলেও এদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে একই দলের সদস্য বলা হয়। এরা গোল করা, গোল ঠেকানো সব কাজই করে। একইভাবে কুরআনে উল্লেখিত 'প্রদীপমালা' গ্রুপের মধ্যে নক্ষত্র, গ্রহ, উল্কা সবই আছে। এদের কেউ কেউ মহাকাশে কক্ষপথে আবর্তন করছে, আবার কেউ কেউ নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এদের সবাইকে একত্রে 'প্রদীপমালা' রূপক দিয়ে ডাকা যায়। কিন্তু এটা বললেই এর মানে এই না যে এদেরকে এক করে ফেলা হয়েছে বা মিলিয়ে ফেলা হয়েছে।
উপরে যে ২টি ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হল এগুলো হচ্ছে সম্ভাব্য ২টি ব্যাখ্যা, যাদের যে কোনো ১টির সাহায্যে আমরা শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণের বিষয়টি বুঝতে পারি। এ বিষয়ে আল্লাহ তা’আলাই সর্বোত্তম জানেন।
আল কুরআনের উদ্দেশ্য প্রকৃতির সব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রহস্য মানুষের সামনে উন্মোচিত করা নয়। বরং মানুষ সাধারণভাবে যা দেখতে পায়, এর মধ্য থেকেই নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। যাতে সে মহান স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় ও তাঁর দিকে ধাবিত হয়। আর এই নিদর্শনগুলোর উদাহরণের মাঝেও কোনো বৈজ্ঞানিক ভুল নেই। বরং যারা এরূপ বৈজ্ঞানিক ভুলের দাবি করে, তারা অনুধাবন ও ভাষাষাজ্ঞানের ক্ষেত্রে ঘাটতির পরিচয় দেয়।
তথ্যসূত্রঃ
[2] ইমাম বুখারী(র.) তাঁর সহীহ গ্রন্থে তাঁর থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
[3] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৪৭০১
[4] আয়াতের অনুবাদ নেয়া হয়েছে ‘শব্দার্থে আল কুরআনুল মাজিদ’ – মতিউর রহমান খান, ৭ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪ থেকে।
[5] তাফসির আল জামি’ লি আহকামিল কুরআন – আবু আব্দুল্লাহ আল কুরতুবী, খণ্ড ১৮, পৃষ্ঠা ২১০-২১১, সুরা মুলকের ৫ নং আয়াতের তাফসির
https://shamela.ws/book/20855/6786
https://shamela.ws/book/20855/6787
অথবা (আর্কাইভকৃত)
[6] তাসহিল লি উলুমিত তানযিল - ইবন জুযাই আল গারনাতি, সুরা মুলকের ৫ নং আয়াতের তাফসির
অথবা https://archive.is/wip/yCpW6 (আর্কাইভকৃত)
[7] তাফসির ইবন কাসির, সুরা মুলকের ৫ নং আয়াতের তাফসির
অথবা https://archive.is/wip/1UXvl (আর্কাইভকৃত)
আরো দেখুনঃ
তাফসির ইবন কাসির, খণ্ড ১৭ পৃষ্ঠা ৫৮৭ (প্রকাশকঃ তাফসির পাবলিকেশন কমিটি, ড. মুহাম্মাদ মুজীবুর রহমান)
[8] তাফসিরুল কাবির - ফখরুদ্দিন রাযি, সুরা মুলকের ৫ নং আয়াতের তাফসির
অথবা https://archive.is/wip/tz4ZT (আর্কাইভকৃত)
[9] আল কুরআন, হিজর ১৫ : ৮
[10] কিতাবুল আইন - খলিল ইবন আহমাদ আল ফারাহিদি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪০৩
অথবা https://archive.is/wip/AyyDz (আর্কাইভকৃত)
[11] https://shamela.ws/book/1687/509
https://shamela.ws/book/28100/2713
অথবা (আর্কাইভকৃত)
https://archive.is/wip/TLFH2[13] দেখুনঃ সুরা কাহফের ৫০ নং আয়াত এবং এর তাফসির
[14] দেখুনঃ সুরা আর-রহমান এর ১৫ নং আয়াত এবং এর তাফসির
[15] “Solar flares are large eruptions of electromagnetic radiation from the Sun lasting from minutes to hours.”
https://www.swpc.noaa.gov/phenomena/solar-flares-radio-blackouts
অথবা https://archive.is/9CqPI (আর্কাইভকৃত)
[16] “coronal mass ejection (CME), large eruption of magnetized plasma from the Sun’s outer atmosphere, or corona, that propagates outward into interplanetary space.”
https://www.britannica.com/science/coronal-mass-ejection
অথবা https://archive.is/wip/yZdDu (আর্কাইভকৃত)
[17] সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নং : ৩২২৪ (সহীহ)
[18] দেখুনঃ
সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), হাদিস নং : ৩২২৪
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=38615
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), হাদিস নং : ৫৬২৫
[19] দেখুনঃ Sahih Muslim 2229a
[20] islamqaর সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি দেখুন এখান থেকেঃ
https://islamqa.info/en/243871/
সম্পূর্ণ প্রবন্ধটির বাংলা অনুবাদ দেখুন এখান থেকেঃ