Pray for the world economy

আবু তালিব ও নবী(ﷺ)কে নিয়ে ইসলামবিরোধীদের অশালীন অভিযোগ ও এর জবাব

 

দ্বীন ইসলামকে মিথ্যা প্রমাণের নানা প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ইসলামবিরোধীরা অনেক সময় নোংরামীর আশ্রয় নেয়। এই প্রবন্ধে এমনই একটি নোংরামীমূলক অভিযোগের জবাব দেয়া হবে। শৈশবে পিতামাতাহারা রাসুলুল্লাহ()কে পিতৃস্নেহে বড় করেন চাচা আবু তালিব। নবুয়তের পরেও এক দীর্ঘ সময় তাঁকে আশ্রয় ও সমর্থন দিয়ে যান তিনি। ইসলামবিরোধীরা সেই আবু তালিবের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ()কে জড়িয়ে এমন এক নোংরা অভিযোগ আনে যা মুখে আনতেও বাধে। কিন্তু দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের খণ্ডন এবং মানুষের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য এটা নিয়ে আলোচনা করতেই হবে। আল্লাহ তা’আলাই ভরসাস্থল। 

 

নাস্তিক-মুক্তমনা ও খ্রিষ্টান মিশনারীরা দাবি করে, শৈশবে নবী মুহাম্মাদ()কে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে নিজ বিছানায় শোয়াতেন তাঁর চাচা আবু তালিব (নাউযুবিল্লাহ)। এই দাবি করে তারা নিজ থেকে সমকাম, শিশুকাম ইত্যদি নানা জিনিস টেনে এনে আরো কিছু অশ্লীল অভিযোগ নিয়ে আসে যা বিস্তারিত উল্লেখ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এই সমস্ত অভিযোগের স্বপক্ষে তারা তাফসির রাযী (তাফসিরুল কাবির) থেকে একটা বর্ণনা নিয়ে আসে। সুরা দ্বুহার ৬ নং আয়াতের তাফসিরের মাঝে এটি আছে। নিম্নে সেই বর্ণনাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ উল্লেখ করা হল। বর্ণনার পূর্বের আরো কিছু অংশও প্রেক্ষাপট হিসেবে উল্লেখ করা হল যাতে পাঠক পুরো বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেন। 

 

ثُمَّ هَلَكَ جَدُّهُ بَعْدَ أُمِّهِ بِسَنَتَيْنِ وَرَسُولُ اللَّهِ ابْنُ ثَمَانِ سِنِينَ.

 

وَكَانَ عَبْدُ الْمُطَّلِبِ يُوصِي أَبَا طَالِبٍ بِهِ لِأَنَّ عَبْدَ اللَّهِ وَأَبَا طَالِبٍ كَانَا مِنْ أُمٍّ وَاحِدَةٍ، فَكَانَ أَبُو طَالِبٍ هُوَ الَّذِي يَكْفُلُ رَسُولَ اللَّهِ بَعْدَ جَدِّهِ إِلَى أَنَّ بَعَثَهُ اللَّهُ لِلنُّبُوَّةِ، فَقَامَ بِنُصْرَتِهِ مُدَّةً مَدِيدَةً، ثُمَّ تُوُفِّيَ أَبُو طَالِبٍ بَعْدَ ذَلِكَ فَلَمْ يَظْهَرْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ يُتْمٌ الْبَتَّةَ فَأَذْكَرَهُ اللَّهُ تَعَالَى هَذِهِ النِّعْمَةَ،

 

رُوِيَ أَنَّهُ قَالَ أَبُو طَالِبٍ يَوْمًا لِأَخِيهِ الْعَبَّاسِ: أَلَا أُخْبِرُكَ عَنْ مُحَمَّدٍ بِمَا رَأَيْتُ مِنْهُ؟ فَقَالَ: بَلَى فَقَالَ: إِنِّي ضَمَمْتُهُ إِلَيَّ فَكَيْفَ لَا أُفَارِقُهُ سَاعَةً مِنْ لَيْلٍ وَلَا نَهَارٍ وَلَا أَأْتَمِنُ عَلَيْهِ أَحَدًا حَتَّى أَنِّي كُنْتُ أُنَوِّمُهُ فِي فِرَاشِي، فَأَمَرْتُهُ لَيْلَةً أَنْ يَخْلَعَ ثِيَابَهُ وَيَنَامَ مَعِي، فَرَأَيْتُ الْكَرَاهَةَ فِي وَجْهِهِ لَكِنَّهُ كَرِهَ أَنْ يُخَالِفَنِي، وَقَالَ: يَا عَمَّاهُ اصْرِفْ بِوَجْهِكَ عَنِّي حَتَّى أَخْلَعَ ثِيَابِي إِذْ لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى جَسَدِي، فَتَعَجَّبْتُ مِنْ قَوْلِهِ وَصَرَفْتُ بَصَرِي حَتَّى دَخَلَ الْفِرَاشَ فَلَمَّا دَخَلْتُ مَعَهُ الْفِرَاشَ إِذَا بَيْنِي وَبَيْنَهُ ثَوْبٌ وَاللَّهِ مَا أَدْخَلْتُهُ فِرَاشِي فَإِذَا هُوَ فِي غَايَةِ اللِّينِ وَطِيبِ الرَّائِحَةِ كَأَنَّهُ غُمِسَ فِي الْمِسْكِ، فَجَهِدْتُ لِأَنْظُرَ إِلَى جَسَدِهِ فَمَا كُنْتُ أَرَى شَيْئًا وَكَثِيرًا مَا كُنْتُ أَفْتَقِدُهُ مِنْ فِرَاشِي فَإِذَا قُمْتُ لِأَطْلُبَهُ نَادَانِي هَا أَنَا يَا عَمُّ فَارْجِعْ، وَلَقَدْ كُنْتُ كَثِيرًا مَا أَسْمَعُ مِنْهُ كَلَامًا يُعْجِبُنِي وَذَلِكَ عِنْدَ مُضِيِّ اللَّيْلِ وَكُنَّا لَا نُسَمِّي عَلَى الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ وَلَا نَحْمَدُهُ بَعْدَهُ، وَكَانَ يَقُولُ فِي أَوَّلِ الطَّعَامِ: بِسْمِ اللَّهِ الْأَحَدِ. فَإِذَا فَرَغَ مِنْ طَعَامِهِ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ، فَتَعَجَّبْتُ مِنْهُ، ثُمَّ لَمْ أَرَ مِنْهُ كِذْبَةً وَلَا ضَحِكًا وَلَا جَاهِلِيَّةً وَلَا وَقَفَ مَعَ صِبْيَانٍ يَلْعَبُونَ.

অর্থঃ “তাঁর মায়ের মৃত্যুর ২ বছর পর আব্দুল মুত্তালিব মারা যান। রাসুলুল্লাহর() বয়স তখন ৮ বছর।

আব্দুল  মুত্তালিব আবু তালিবকে রাসুলুল্লাহর() দেখভাল করার আদেশ দেন কেননা আব্দুল্লাহ [রাসুলুল্লাহর() বাবা] এবং আবু তালিব একই মায়ের গর্ভে জন্মেছিলেন। কাজেই দাদার পরে রাসুলুল্লাহর() দেখাশোনা করেছিলেন আবু তালিব, যতদিন না আল্লাহ তাঁকে নবুয়ত প্রদান করেন। তিনি [আবু তালিব] তাঁকে এক দীর্ঘ সময় ধরে সাহায্য করে যান। পরে আবু তালিব যখন মারা গেলেন, রাসুলুল্লাহ()কে সাহায্য করার মতো আর কেউ রইলো না। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে এই নিয়ামতের কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

 

বর্ণিত আছে, একদিন আবু তালিব তাঁর ভাই আব্বাসকে (রা.)  বললেন, “আমি কি তোমাকে মুহাম্মাদের() ব্যাপারে বলবো না যা আমি দেখেছি?” তিনি [আব্বাস(রা.)] বললেন, “হ্যাঁ।”

তিনি [আবু তালিব] বললেন, “আমি সবসময়ে তাঁকে [মুহাম্মাদ()] আমার কাছে কাছে রাখতাম। কী করে তাঁকে আমি দিন বা রাতে এক মুহূর্তের জন্যও আলাদা রাখতে পারি? আমি তাঁর সাথে আর কাউকে থাকতে দিতে ভরসা পেতাম না, [1] এমনকি তাঁকে আমি আমার বিছানায় শোয়াতাম। এক রাতে আমি তাঁকে জামা খুলতে ও আমার সাথে শুতে বললাম। আমি তাঁর চেহারায় অপছন্দের ছাপ দেখতে পেলাম কিন্তু সে আমার অবাধ্য হতে চাইতো না। সে বললোঃ “হে চাচা, আপনার মুখ আমার থেকে ঘুরিয়ে রাখুন যখন আমি জামা খুলি। কারণ কারো উচিত না আমার শরীর দেখা।” তাঁর কথায় আমি অভিভূত হলাম এবং সে বিছানায় ওঠা পর্যন্ত আমার দৃষ্টি ঘুরিয়ে রাখলাম। যখন আমি তাঁর সাথে বিছানায় উঠলাম আমি তাঁর এবং আমার মাঝে এক খণ্ড কাপড় পেলাম। আল্লাহর শপথ, আমি তো সেটা ওখানে রাখিনি! সেটা ছিল খুবই নরম এবং সুগন্ধীযুক্ত যেন তা মেশকের মাঝে ডোবানো ছিল। আমি যতোই তাঁর গায়ের দিকে তাঁকাতে চেষ্টা করছিলাম কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আর বেশিরভাগ সময় আমি তাঁকে বিছানাতেই দেখতে পাইনি। যখন আমি [না দেখতে পেয়ে] উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে ডাকলাম, সে বললো, “হে চাচা, এই তো আমি। ফিরে আসুন।”

আমি তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শুনতাম যা আমার ভালো লাগতো। যখন রাত হতো [খাবার সময় হতো] আমরা খাবার পূর্বে আল্লাহর নাম নিতাম না, খাওয়া শেষেও তাঁর প্রশংসা করতাম না। আর সে [মুহাম্মাদ()] খাওয়ার পূর্বে বলতোঃ “বিসমিল্লাহিল আহাদ (আল্লাহর নামে, যিনি এক)।” আর যখন খাওয়া শেষ হতো, সে বলতোঃ “আলহামদুলিল্লাহ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর)”। আমি তাঁর প্রতি অভিভূত হতাম। আমি তাঁকে মিথ্যা বলতে, হাসাহাসি করতে, মূর্খতাপূর্ণ কাজ করতে কিংবা বাচ্চাদের সাথে খেলতে দেখতাম না।[2]

 

আলোচ্য বর্ণনায় আসলেই কি আপত্তিকর কিছু আছে?:

 

ক) প্রিয় পাঠক যদি তাফসির রাযী থেকে উপরে উল্লেখিত পূর্ণ আলোচনা পড়ে থাকেন, কোনো আপত্তিকর কিছু কি পাচ্ছেন? সরল-স্বাভাবিক চিন্তার অধিকারী কারো পক্ষে এই আলোচনা থেকে আপত্তিকর বা অশ্লীল কিছু পাবার কথা নয়। যে কেউ প্রসঙ্গসহ এই বর্ণনাটি আগাগোড়া পড়লে এটাই বুঝবেন যে এখানে আবু তালিব তাঁর ভাইয়ের নিকট নবী() এর শৈবকালীন নানা বিস্ময়কর ঘটনা এবং অসাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলাপ করছেন। পুরো বর্ণনার মূল বিষয়বস্তু এই। এখান থেকে কোনো অশ্লীল বা অনৈতিক কিছুর দূরতম ইঙ্গিত পাওয়া প্রচণ্ড দুরুহ একটি কাজ। নাস্তিক-মুক্তমনা এবং খ্রিষ্টান মিশনারীরা পাঠক হিসেবে কী পরিমাণে অস্বাভাবিক এবং অসুস্থ চিন্তার লালনকারী, তাদের অভিযোগের ধরণ থেকেই এটি স্পষ্ট হয়। আমরা তাদের আত্মিক সুস্থতা কামনা করছি।

 

খ) আলোচ্য বর্ণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে ভাই আব্বাস(রা.) এর সঙ্গে নবী() এর অসাধারণ নানা দিক নিয়ে আলোচনা করছেন আবু তালিব। সে হিসেবেই প্রাসঙ্গিক নানা কথা উঠে এসেছে। কেউ যদি সত্যিই ভাতিজার সঙ্গে অশ্লীল কর্ম করে থাকে (নাউযুবিল্লাহ), তাহলে সেটা নিয়ে কি নিজ ভাইয়ের সাথে এভাবে আলাপ করে? নাকি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে? ইসলামবিরোধীদের মূলত কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই বলেই এই বর্ণনা থেকে এমন অভিযোগ করে। 

 

গ) ধরা যাক কেউ বললোঃ “জামা-কাপড় ছেড়ে খেতে বসো” অথবা “জামা-কাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়ো”।

এই কথাগুলোর মাঝে কি কেউ অস্বাভাবিকতা পাবে?

পাবে না। কেননা এগুলো খুবই স্বাভাবিক কথা। “জামা-কাপড় ছেড়ে” বললেই কোনো সুস্থ চিন্তার মানুষ এটা বোঝে না যে এখানে কেউ উলঙ্গ হয়ে যেতে বলছে! এখানে স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে পোশাক বদলে অথবা বহির্বাস খুলে রেখে খেতে এবং শুতে বলা হচ্ছে। কিন্তু যাদের মন-মানসিকতা অশ্লীলতা এবং অপবিত্রতা দ্বারা পূর্ণ হয়ে থাকে, তারা যে কোনো স্বাভাবিক কথা থেকেও অশ্লীল মানে বের করতে পারে।

 

আলোচ্য বর্ণনায় নবী() কর্তৃক জামা খোলার অংশটির কারণে ইসলামবিরোধীরা আপত্তি জানায়। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছেঃ “জামা খোলা” মানেই কি সম্পুর্ণ নগ্ন হওয়া? একজন মানুষ জামা খুলেছে এর মানে তো এই না যে সে সব পোশাক আশাক খুলে উলঙ্গ হয়ে গেছে! অনেক শিশু-কিশোরই তাদের বাবা-চাচাদের সঙ্গে খালি গায়ে ঘুমাতে পারে। যে কোনো চাচাই গ্রীষ্মকালে গরমের জন্য বা অন্য যে কোনো কারণে শিশু বা কিশোরবয়সী ভাতিজাকে বলতে পারেন জামা কাপড় ছেড়ে (খালি গায়ে) শুতে। এর মাঝে অস্বাভাবিক কিছুই নেই। আলোচ্য বর্ণনায় নবী() এর জামা খোলার বর্ণনা থেকে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ অশ্লীল মানে বের করতে পারে না। আসলে যারা বিবাহবহির্ভূত যৌনাচার, সমকাম, উভকাম, রূপান্তরকাম এইসমস্ত বিকৃত জিনিসকে ‘স্বাভাবিক’ এবং ‘অধিকার’ বলে মনে করে, তারা এমন স্বাভাবিক জিনিস থেকে অস্বাভাবিক এবং অশ্লীল মানে বের করবে এতে অবাক হবার কিছুই নেই।

 

ঘ) আলোচ্য বর্ণনায় দেখা যায় নবী() এই জামা খোলার ব্যাপারটি পছন্দ করেননি। তাঁর চেহারাতেই এর ছাপ ফুটে উঠেছিল। এর কারণ খুব সহজেই অনুমেয়। সহীহ হাদিসে রয়েছেঃ

 

كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَشَدَّ حَيَاءً مِنَ الْعَذْرَاءِ فِي خِدْرِهَا، وَكَانَ إِذَا كَرِهَ شَيْئًا عَرَفْنَاهُ فِي وَجْهِهِ‏.

অর্থঃ “নবী() অন্দর মহলের পর্দানশীন কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি কোন কিছু অপছন্দ করলে তাঁর চেহারা দর্শনেই আমরা তা বুঝতে পারতাম।[3]

 

প্রচণ্ড লজ্জাশীল নবী() এটা পছন্দ করতেন না যে কেউ তাঁকে খালি গায়ে দেখুক। তাঁর চেহারাতেই এই অপছন্দের ছাপ ফুটে উঠেছিল। এবং আল্লাহ তা’আলা তাঁর এই লজ্জাশীলতা হেফাজত করেছিলেন। আলোচ্য বর্ণনায় স্পষ্ট উল্লেখ আছেঃ

 

আমি তাঁর এবং আমার মাঝে এক খণ্ড কাপড় পেলাম। আল্লাহর শপথ, আমি তো সেটা ওখানে রাখিনি! সেটা ছিল খুবই নরম এবং সুগন্ধীযুক্ত যেন তা মেশকের মাঝে ডোবানো ছিল। আমি যতোই তাঁর গায়ের দিকে তাঁকাতে চেষ্টা করছিলাম কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আর বেশিরভাগ সময় আমি তাঁকে বিছানাতেই দেখতে পাইনি।

 

অর্থাৎ তাঁর আবু তালিব কোনোক্রমেই খালি গা অবস্থাতেও নবী()কে দেখতে পাননি। এখানে নবী() এর একটি মুজিজার প্রকাশ ঘটেছে। এই হচ্ছে পূর্ণ ঘটনা। এই বর্ণনা থেকে কোন আক্কেলে ইসলামবিরোধীরা অশ্লীল কাহিনী ফাঁদার চেষ্টা করে তা চিন্তা করে আমরা সত্যিই অবাক হই। আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দিন।

 

আলোচ্য বর্ণনার বিশুদ্ধতাঃ

 

আলোচ্য বর্ণনাটি কতোটুকু বিশুদ্ধ এ প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত ফতোয়ার ওয়েবসাইট Islamqaতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

 

وهذه القصة لم نقف على من رواها، ولم نر لها إسنادا ينظر فيه، ولا نعلم من ذكرها إلا الرازي رحمه الله في تفسيره، ونقلها عنه بعض المتأخرين.

অর্থঃ “এই কাহিনীর বর্ণনাকারী কে তা আমরা জানি না। আর এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে এর কোনো সনদও আমরা দেখতে পাইনি। রাযী(র.) তাঁর তাফসিরে এটি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি ব্যতিত আর কেউ এটি উল্লেখ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। তাঁর থেকে পরবর্তীকালে কেউ কেউ এটি বর্ণনা করেছেন।[4]

 

আমরা দেখলাম তাফসির রাযীতে সনদবিহীনভাবে এই ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে। বর্ণনাকারী সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। একটি বর্ণনা বিশুদ্ধ হবার ন্যুনতম শর্তের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল অবিচ্ছিন্ন সনদের দ্বারা এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের দ্বারা বর্ণিত হতে হবে। অথচ আলোচ্য বর্ণনার সনদই পাওয়া যায় না। কাজেই এটি কোনোক্রমেই সহীহ বা বিশুদ্ধ বর্ণনা নয়। এই বর্ণনা থেকে কোনো কিছু দাবি বা প্রমাণ করা যাবে না।

 

আমরা দেখলাম আলোচ্য বর্ণনাটি মোটেও নবী() এর ব্যাপারে সহীহভাবে প্রমাণিত কোনো বর্ণনা নয়। যদি তা সহীহ হয়েও থাকতো, তবু এখানে অশ্লীল বা আপত্তিকর কিছুই নেই। বরং অশ্লীলতা আছে ইসলামবিরোধীদের চিন্তা-চেতনার মাঝে।

 

আসলে সূর্যের দিকে থুথু দিলে গেলে ঐ থুথু নিজের গায়েই পড়বে। স্বয়ং মহান আল্লাহ যে নবী()কে সম্মান প্রদান করেছেন, তঁকে অসম্মানিত করার জন্য ইসলামবিরোধীদের মিথ্যাচার এবং অপব্যাখ্যা কখনো সফল হবে না।

 

اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

অর্থঃ "নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দো‘আ করে। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।" [5]

 

اِنَّا کَفَیۡنٰکَ الۡمُسۡتَهۡزِءِیۡنَ

অর্থঃ "আমিই যথেষ্ট তোমার [মুহাম্মাদ()] জন্য, বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে।" [6]

 

 

তথ্যসূত্রঃ


[1] এর কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থে আলোকপাত করা হয়েছে। বর্ণিত আছে, নবী() এর শৈশবকালে আবু তালিব একবার সিরিয়ায় গেলে সেখানকার একজন খ্রিষ্টান দরবেশ ভবিষ্যতবাণী করেন এই বালকই [মুহাম্মাদ()] শেষ নবী হবেন, তাঁকে যেন সাবধাণে রাখা হয় কেননা রোমবাসী একে চিনে ফেললে হত্যা করে ফেলবে। বিস্তারিত দেখুনঃ 'সীরাতুল মুসতফা (সা)' – ইদরীস কান্ধলবী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৪-৮৬

[2] তাফসির রাযী (তাফসিরুল কাবির / মাফাতিহুল গাইব), সুরা দ্বুহার ৬ নং আয়াতের তাফসির, খণ্ড ৩১, পৃষ্ঠা ১৯৬

https://shamela.ws/book/23635/6049

অথবা https://archive.is/wip/WEtac (আর্কাইভকৃত)

[3] বুখারী; মুসলিম; ইবনে মাজাহ; আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং ৬০২

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=45986

[4] "هل تصح قصة قول أبي طالب لأخيه العباس: ألا أخبرك عن محمد بما رأيت منه؟" (IslamQA)

https://islamqa.info/ar/364232/

অথবা https://archive.is/wip/28Q3l (আর্কাইভকৃত)

[5] আল কুরআন, আহযাব ৩৩ : ৫৬

[6] আল কুরআন, হিজর ১৫ : ৯৫