স্ববিরোধিতার অভিযোগ: মানুষের প্রাণ হরণ করে কে? – একজন ফেরেশতা (Quran 32:11), কয়েকজন ফেরেশতা (Quran 47:27) না কি আল্লাহ (39:42) !
জবাব: আল্লাহ কুরআনুল কারীমে বলেন,"বল,তোমাদের জন্যে নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে।" (সেজদা -১১)
" ফেরেশতা যখন তাদের মুখমণ্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে?
(আল কুরআন, মুহাম্মদ-২৭)"
" আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যারমৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবংঅন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
(আল কুরআন, যুমার:৪২)"
স্পষ্টতই, যখন কোন কর্তা,অপর কোন কর্তার মাধ্যমে কোন কার্য সম্পাদন করে,তবে ঐ কার্যের কর্তারূপে উভয়কেই উল্লেখ করা সঠিক। অনুরূপ যদি দ্বিতীয় কর্তাও অপর কোন কর্তার মাধ্যমে কার্য সম্পাদন করে,তবে তৃতীয় কর্তাকে কার্য সম্পাদনকারী হিসেবে গণনা করা সঠিক হবে। যেহেতু মহান আল্লাহ আত্মাসমূহের হরণকর্ম মৃত্যুর ফেরেশতার (ملک الموت) মাধ্যমে সম্পন্ন করেন এবং তিনিও যেহেতু তার অনুগত ফেরেশতাদের মাধ্যমে উক্ত কর্ম সম্পাদন করেন,সেহেতু আল্লাহ, মালাকুল মউত ও অন্যান্য মৃত্যুর ফেরেশতাদের আল্লাহর আদেশে কার্য সম্পাদনকারী হিসেবে মনে করা সঠিক।
মালাকুল মউত আল্লাহর নির্দেশে রুহ কবজ করে নিতে পারেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কোন কারণ নেই। যেমন ঝড় এক মূহুর্তে সহস্র প্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারে। এ সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে।মালাকুল মউত রুহ কবজ করেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই মৃত্যু দান করেন। কেননা তিনি আল্লাহর নির্দেশে রুহ কবজ করেন আর এ কারণেই কোরআন মাজিদে কখনো বলা হয়েছে আল্লাহ রুহ কবজ করেন। আবার কখনো বলা হয়েছে মালাকুল মউত রুহ কবজ করেন। কখনো আবার বলা হয়েছে ফেরেশতাগণ রুহ কবজ করেন, তিনটিই ঠিক। কেননা মালাকুল মউত এবং তাঁর সহকর্মী ফেরেশতাগণ আল্লাহর নির্দেশেই রুহ কবজ করে থাকেন। যেমন কোন সম্রাট তার সৈন্য ও সেনাবাহিনীর প্রধানদের সাহায্যে কোন দেশ জয় করে থাকে। অতএব এটা বলা ঠিক হবে যে সৈন্যরা অমুক রাষ্ট্র জয় করেছে। আবার বলতে পারি যে সিপাহসালার (সেনাপ্রধান) দেশটিকে জয় করেছে। আবার এটা বলাও ঠিক যে সম্রাট দেশটিকে জয় করেছে।
উদাহরণটি বিষয়টিকে বোঝানোর জন্য আনা হয়েছে নইলে বিষয়টি এসবের অনেক উর্ধ্বে। মোদ্দা কথা আল্লাহই মানুষের মৃত্যু দিয়ে থাকেন। তবে মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ পৃথিবীকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সৃষ্টি করেছেন। অতএব মৃত্যুর জন্যেও কিছু কারণ তিনি নির্দিষ্ট করেছেন। যেমন কোন উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, অসুস্থ হওয়া, নিহত হওয়া ইত্যাদি। তবে এসব হচ্ছে উসিলা বা কারণ মাত্র। কেননা এমনও দেখা যায় যে অতি মুমূর্ষ রোগীও অনেক সময় বেঁচে ওঠে আবার অতি সামান্য অসুখে অনেকে মারা যায়। সুতরাং অসুস্থতা, নিহত হওয়া, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি মৃত্যুর অনিবার্য কারণ নয়। আয়ু শেষ হয়ে গেলে মহান আল্লাহ তার জান মালাকুল মউতের মাধ্যমে কবজ করে নেন।