Pray for the world economy

নবী(ﷺ) কি মন্দভাষী ছিলেন?

 

মূলঃ শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ

অনুবাদঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার

 

অনুবাদকের ভূমিকাঃ জীবদ্দশায় মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ() এর শ্রেষ্ঠ শত্রুরাও তাঁকে উত্তমভাষী, সৎ ও বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে জানতো। কিন্তু আজ এতো বছর পরে কিছু মানুষ উঠেপড়ে লেগেছে তাঁকে একজন মন্দভাষী খারাপ মানুষ হিসেবে প্রমাণের জন্য (নাউযুবিল্লাহ)। কারণ তারা ইসলামকে মেনে নিতে পারে না। এজন্য যে করেই হোক, নবী করিম() এর চরিত্রের উপর কলঙ্কলেপনই তাদের মূল উদ্যেশ্য। ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কিছু হাদিসের উদ্ধৃতি অপব্যাখ্যা করে তারা এ চেষ্টা করে। ইসলামবিরোধী অপপ্রচারের প্রভাবে অনেক সময় সাধারণ মুসলিমদের মনেও এই হাদিসগুলো দেখে ভুল ধারণার তৈরি হয়। এই প্রবন্ধে এমন কিছু বর্ণনা নিয়ে আলোচনা থাকছে যেগুলো দেখে অনেকে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) সম্পর্কে ভুল ধারণা করে। অথচ বাস্তবে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) কাউকে গালাগালি করতেন না।

 

ফতোয়া নং ১৪৭৩৮৯: নবী() কি কখনো কাউকে গালি দিয়েছেন?

 

প্রশ্নঃ

দুইটি হাদিস বুঝতে আমার কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

১ম হাদিসটি সহীহ বুখারীর কিতাবুল ফাযায়েলে আছে।

 

আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (র.) ..... মুআয ইবনু জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাবুক যুদ্ধের বছর আমরা রাসুলুল্লাহ() এর সাথে (যুদ্ধে) বের হলাম। (এ সফরে) তিনি() সলাত একসাথে আদায় করতেন। অর্থাৎ, যুহর ও আসর একসাথে আদায় করতেন, আর মাগরিব ও ঈশা একত্রে আদায় করতেন। পরিশেষে একদিন (এমন) হলো যে, সলাত দেরিতে আদায় করলেন। তারপর বের হয়ে এসে যুহর ও আসর একসাথে আদায় করলেন, তারপর (তাঁবুতে) ঢুকলেন। অতঃপর আবার বেরিয়ে এলেন এবং মাগরিব ও ঈশা একসাথে আদায় করলেন। অতঃপর বললেন, ইন শা আল্লাহ তোমরা আগামীকাল তাবুক জলাশয়ে পৌঁছাবে, তবে চাশতের সময় না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে পৌঁছাতে পারবে না। তোমাদের মাঝে যে (ই) সেখানে (প্রথমে) পৌঁছাবে সে যেন তার পানির কিছুই স্পর্শ না করে -যতক্ষণ না আমি এসে পৌছি।

 

আমরা (ঠিক সময়েই) সেখানে পৌঁছালাম। (কিন্তু) ইতোমধ্যে দুই জন লোক আমাদের পূর্বে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল। আর প্রসবণটিতে জুতার ফিতার ন্যায় ক্ষীণ ধারায় সামান্য পানি বের হচ্ছিল। মুআয বলেন, রাসুলুল্লাহ() ঐ দু'জনকে প্রশ্ন করলেন, তোমরা তা হতে কিছু পানি ছুয়েছো কি? ... তারা উভয়ে বলল, হ্যাঁ! তখন নবী() তাদের দু'জনকে ভৎর্সনা করলেন (গালি/তিরস্কার করলেন)আর আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই তাদের বললেন।

 

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকেরা তাদের হাত দিয়ে অঞ্জলি ভরে ভরে প্রসবণ হতে অল্প অল্প করে (পানি) তুলল, পরিশেষে তা একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ জমা হলো। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ() এর মাঝে তাঁর দু'হাত এবং মুখ ধুলেন এবং তারপরে তা (পানি) তাতে (প্রসবণে) উল্টিয়ে (ঢেলে) দিলেন। ফলে পানির প্রসবণটি প্রবল পানি ধারায় কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেন, অধিক পরিমাণে প্রবাহিত হতে লাগল। আবু আলী (র.) সন্দেহ করেছেন যে, বর্ণনাকারী এর মধ্যে কোনোটি বলেছেন। এবার লোকেরা পানি প্রয়োজন মতো পান করল। পরে নবী() বললেন, হে মুআয! তুমি যদি দীর্ঘায়ু হও, তবে আশা করা যায় যে, তুমি দেখতে পাবে প্রস্রবণের এ জায়গাটি বাগানে ভরে গেছে।

 

২য় হাদিসটি সহীহ বুখারীর কিতাবুল বিরর ওয়াস সিলাহ ওয়াল আদাবে আছেঃ

 

যুহায়র ইবনু হারব(র.) ... আয়িশা(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার দু'জন লোক রাসুলুল্লাহ() এর কাছে এলো। তারা তাঁর সঙ্গে কোন বিষয়ে আলোচনা করল। তা কী ছিল, আমি জানি না। এরপর তারা তাঁকে অসন্তুষ্ট করেছিল। তিনি তাদের উভয়কে লানত করলেন এবং তিরস্কার (গালি/ভৎর্সনা) করলেন। যখন তারা বের হয়ে গেল আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সবাই আপনার কাছ থেকে কল্যাণ লাভ করল। আর এরা দুজনে কিছুই পাবে না।

তিনি বললেনঃ সে কী ব্যাপার! তিনি [আয়িশা(রা.)] বললেন, আপনি তো তাদের উভয়কে লানত দিয়েছেন এবং তিরস্কার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি জানো আমার প্রতিপালকের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কী শর্তাশর্তি হয়েছে? আমি বলেছিঃ হে আল্লাহ! আমি একজন মানুষ। আমি কোন মুসলমানকে লা'নত করলে কিংবা তিরস্কার করলে তা তুমি তার জন্য পবিত্রতা ও প্রতিদান বানিয়ে দিও।

 

আমার প্রশ্ন হলোঃ

রাসুল(ﷺ) তো আমাদেরকে কথাবার্তার ক্ষেত্রে সংযত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন, আল কুরআনেরও বহু আয়াতে উত্তম কথা বলতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে, সিরাহ [নবী(ﷺ) এর জীবনী] এর মাঝেও আমরা এমন অনেক কাহিনী পাই যেগুলোতে বলা হয়েছে ইহুদিদের রূঢ় আচরণের সামনেও রাসুল(ﷺ) কথাবার্তার ক্ষেত্রে কীরূপ নম্র ছিলেন। এমনকি আম্মাজান আয়িশা(রা.) পর্যন্ত তাদের সে আচরণে রেগে গিয়েছিলেন।

 

এক্ষেত্রে উপরের হাদিস দুইটির সাথে কিভাবে আমরা অন্য সব সহীহ হাদিসের সমন্বয় সাধন করতে পারি? উপরের হাদিস দুইটিও তো সহীহ। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং এ উত্তরকে আপনাদের নেকির পাল্লায় অন্তর্ভুক্ত করুন।

 

উত্তরঃ

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর।

আমাদের নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর শ্রেষ্ঠ গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম ছিলো সহিষ্ণুতা, ধৈর্য এবং কথাবার্তার মাঝে সংযম। এমনকি কুরআন কারিম নাজিলের পূর্বে অন্য নবীদের কিতাবেও এই সকল গুণাবলীর কথা উল্লেখ করে তাঁর প্রশংসা করা হয়েছে।

 

মহান আল্লাহ বলেন,

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ

অর্থঃ অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কর্কশভাষীকঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়তো

(আল কুরআন, আলি ইমরান ৩ : ১৫৯)

 

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আল্লাহর কসম! কুরআনে বর্ণিত তাঁর কিছু গুণাবলী তাওরাতেও উল্লেখ করা হয়েছেঃ ... ... তিনি বাজারে কঠোর রূঢ়, নির্দয় ও শোরগোলকারী স্বভাবের ছিলেন না। তিনি মন্দের প্রতিশোধ মন্দ দ্বারা নিতেন না বরং মাফ করে দিতেন, ক্ষমা করে দিতেন ...

[সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২১২৫]

 

এভাবেই তিনি(ﷺ) তাঁর সাহাবীদের মাঝে পরিচিত ছিলেন। এবং তাঁর এসকল চারিত্রিক গুণাবলীর কথা দিক-দিগন্তে ছড়িয়ে গেছে।

 

আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী() গালি-গালাজকারী, অশালীন ও অভিশাপকারী ছিলেন না। তিনি আমাদেরকে তিরষ্কারের সময় শুধু এতটুকু বলতেন,  “তার কী হলো, তার কপাল ধূলিমলিন হোক।

[সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৬০৩১]

 

তাঁর(ﷺ) দয়ার পরিধি শুধুমাত্র মুসলিমদের মাঝেই বিস্তৃত ছিলো না বরং তাঁর দয়া ও করুণা মুশরিক ও মুনাফিকদের জন্যও বরাদ্দ ছিলো।

 

আবু হুরাইরাহ(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ()কে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল()! আপনি মুশরিকদের উপর বদদুআ করুন। তিনি বললেন, “আমি তো অভিসম্পাতকারীরূপে প্রেরিত হইনি; বরং আমি প্রেরিত হয়েছি দয়াস্বরূপ।

[সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৯৯]

 

বিভিন্ন রকম পরিস্থিতিতে তাঁর দয়াশীলতার কাহিনীগুলোর একটা তালিকা করার চেষ্টা করা যেতে পারে, যাতে "আমি প্রেরিত হয়েছি দয়াস্বরূপ" – এই কথাটির প্রতিফলন ঘটেছে। সহীহ সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত এ সংক্রান্ত কাহিনীগুলোর ছোট একটা অংশ উল্লেখ করলেও আমাদের হাতের কাছের সব কাগজ যথেষ্ট হবে না।

 

একই সাথে আমরা এটিও বলতে চাইঃ

দয়া, অনুকম্পা এই গুণগুলো নবী(ﷺ) এর আচার-আচরণের মাঝে প্রাধান্য লাভ করেছিলো। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তিনি একদম কখনোই পরিস্থিতি অনুযায়ী (কঠোর) আচরণ করেননি। এটা তো মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতিরই একটা অংশ।

 

আর এই ব্যাপারগুলোর মাঝে নানা প্রকারের হিকমত রয়েছে। যেমনঃ

 

১।

তিনি(ﷺ) মুসলিমদের শাসক ছিলেন। আর শাসককে কোনো কোনো পরিস্থিতিতে কঠোর এবং কড়া পদক্ষেপ নিতে হয় যাতে জনগণকে সঠিক পথে রাখা যায় এবং তাদের কার্যকলাপ শৃঙ্খলার মাঝে রাখা যায়। এবং কেউ যাতে শাসকের ধৈর্য ও সহনশীল আচরণের ফায়দা ওঠাতে না পারে। নবী(ﷺ) কিভাবে ব্যভিচারীদের রজম করবার নির্দেশ দিয়েছেন, তা কি আপনি (হাদিস থেকে) দেখেননি? শাস্তিটি যদিও রূঢ় এবং কঠোর, কিন্তু শরিয়তের আইন ও দণ্ডবিধি প্রয়োগ ব্যতিত  সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব নয়। নাহলে অতিমাত্রায় সহনশীলতা জনগণের জীবনযাত্রাকে অধঃপতিত করতে পারে এবং এর ফলে (সমাজের মাঝে) ফাটল ও ভাঙন দেখা দিতে পারে।"

 

প্রশ্নে উল্লেখিত মুআয(রা.) এর হাদিসটি থেকে কাজি ইয়াদ(র.) এই ব্যাপারটিই বুঝেছেন। তিনি বলেছেনঃ এ থেকে আমরা জানলাম,  শৃঙ্খলা রক্ষা ও তিরস্কারের জন্য শাসক নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে থেকে কঠোর শব্দ এবং যুক্তি দ্বারা আক্রমণ করতে পারেন।

[ইকমালুল মু’আল্লিম ৭/২৪২]

 

২।

এর আরো একটি উদ্যেশ্য থাকতে পারে, আর তা হলো চারিত্রিকভাবে আল্লাহর নিকট নবী(ﷺ) এর সর্বোচ্চ মর্যাদায় উন্নীত হওয়া। যে কারণে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলে কারিম(ﷺ)কে সৃষ্টি করেছেন। যেমনটি আল্লাহ বলেছেন—

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا

অর্থঃ অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য, যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।

(আল কুরআন, আহযাব ৩৩ : ২১)

 

প্রয়োজনীয় পরিস্থিতির সময়ে দৃঢ় বা কঠোর ভাষার প্রয়োগ এমন একটি জিনিস যা এই উম্মাহর নেতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের শেখা উচিত। এক্ষেত্রে তাদের উদাহরণ হচ্ছেন আল্লাহর রাসুল(ﷺ)। শৃঙ্খলা তখনই অর্জিত হয় যখন উৎসাহ দেয়া এবং সতর্ক করার ব্যাপারটি একসাথে যুক্ত হয়। একই সাথে আশা এবং ভয় থাকে।

 

প্রয়োজনীয় পরিস্থিতির সময়ে কঠোর হবার কিছু উদাহরণ আমরা নবী(ﷺ) এর সুন্নাহর মাঝে পাই।

 

আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিতঃ নবী()-কে যখনই দুটি জিনিসের একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হত, তখন তিনি সহজটিই গ্রহণ করতেন যদি তা গুনাহ না হতোগুনাহ হতে তিনি অনেক দূরে অবস্থান করতেন। নবী() নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।

[সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩৫৬০; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৩২৭]

 

এখানে সাক্ষ্য হচ্ছে আয়িশা(রা.) এর এই কথাগুলোঃ “তবে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।

 

এর একটি উদাহরণ পাওয়া যায় উপরে প্রশ্নে উল্লেখিত হাদিস দুইটিতে। নবী(ﷺ) কেন তাদের সাথে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছিলেন, এর কারণ হাদিসের ব্যাখ্যাকারীরা উল্লেখ করেছেন। যে দুইজন লোক তাবুক অভিজানের সময়ে জলাশয়ের পানি নষ্ট করছিলো, তারা ছিলো মুনাফিক। তারা মুসলিমদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করেছিলো। [হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এর পরবর্তীতে নবী(ﷺ) এর মুজিজায় ক্ষতিগ্রস্ত সে প্রসবণ থেকে প্রবল ধারায় পানি প্রবাহিত হয়। যা তাঁর নবুয়তের সত্যতার একটি প্রমাণ। - অনুবাদক] এই কারণে নবী(ﷺ) তাদেরকে শাসক হিসেবে সর্বনিম্ন মাত্রার শাস্তি প্রদান করেছিলেন। আর তা হলোঃ তাদেরকে বকা দিয়েছিলেন ও কিছু রূঢ় কথা বলেছিলেন।

 

আল ওয়াকিদি(র.) বলেছেন,

আমাকে (এ হাদিসের ব্যাপারে) জানানো হয়েছে যে, মু’তাব ইবন কুশায়র, হারিস ইবন ইয়াযিদ আত তাঈ’, ওয়াদিয়াহ ইবন ছাবিত এবং যায়দ ইবন লাসিত নামে চারজন মুনাফিক সেখানে তাঁর [নবী()] পূর্বে গিয়েছিলো।

[রাওদুল আনিফ ৭/৩৮৪]

 

ইবন হাযম(র.) বলেছেন,

সেই লোক দু’টো নবী() কর্তৃক ভৎর্সনার উপযুক্ত ছিলো। কেননা তারা পানি স্পর্শ করার সেই নির্দেশ অমান্য করেছিলো।

[আল ইহকাম ফি উসুল আল আহকাম ৩/২৮২]

 

এখানে ‘গালি দেয়া’ দ্বারা বোঝানো হচ্ছে নিন্দা করা, কথার মধ্যে কঠোরতা করা ও ভৎর্সনা করা। অথবা তাদের উপর বদদোয়া করা, যেমনটি আরবরা রাগের সময়ে করে থাকে। যেমন তাদের কথা, أخزاك الله [আল্লাহ্‌ তোমাকে অপমানিত করুন] অথবা قاتلك الله [আল্লাহ্‌ তোমাকে ধ্বংস করুন]। ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

ইবন ইসহাক(র.) বলেছেন,

পথের মাঝে এক জলাশয় ছিলো যাতে অল্পভাবে পানি প্রবাহিত হচ্ছিলো (وشل)। একজন, দুইজন বা তিন জন সওয়ারী  এমন এক উপত্যকার কথা বর্ণনা করেছেন যাকে বলা হয় ওয়াদি মুশাক্কিক। অতঃপর রাসুলুল্লাহ() বললেন, “ঐ উপত্যকায় যে আমাদের মধ্যে যে আগে পৌঁছাবে, সে যেন ভুলেও ওখান থেকে কিছু পান না করে যতক্ষন না আমরা (সবাই) সেখানে পৌঁছাই।” তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, মুনাফিকদের একটা দল সেখানে আগে পৌঁছে গেলো, তারা সেখান থেকে পান করলো। রাসুলুল্লাহ() যখন সেখানে এসে পৌঁছেলেন, তিনি সেখানে থামলেন। তিনি সেখানে কিছুই দেখতে পেলেন না। অতঃপর তিনি বললেন, “এ পানির কাছে আমাদের আগে কে এসে পৌঁছিয়েছে?” তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, অমুক অমুক এসে পৌঁছেছে। এরপর তিনি বললেন, আমি কি তাদেরকে আমি পোঁছানোর আগে সেখান থেকে কিছু পান করতে নিষেধ করিনি? এরপর রাসুলুল্লাহ() তাদের উপর লানত করলেন এবং তাদের প্রতি বদদোয়া করলেন। অতঃপর তিনি (বাহন থেকে) নামলেন এবং (জলাশয়ের) অল্প পানির নিচে হাত রাখলেন। আল্লাহ্‌ যতটুকু চান সেই চান সেই পরিমাণ পানি তিনি হাত দ্বারা (জলাশয়ে) ঢালতে থাকলেন। তিনি তা ছিটালেন এবং হাত দ্বারা তা মুছলেন। আল্লাহ্‌ যা চান তিনি তা দোয়া করলেন। অতঃপর পানির ফোয়ারা শুরু হলো, যেমনটি (সে ঘটনার) শ্রবণকারীরা বর্ণনা করে - বজ্রপাতের ধ্বনির মতো তীব্র গতিতে পানি প্রবাহের আওয়াজ হতে লাগলো। মানুষ তা পান করলো এবং তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করলো। রাসুলুল্লাহ() বললেন, তোমরা অথবা তোমাদের মধ্যে হতে কেউ যদি জীবিত থাকে, সে অবশ্যই শুনতে পাবে এই উপত্যকাটি পূর্বের ও পরের সকল উপত্যকার ভূমির থেকে উর্বর হবে।

[মাগাযি ইবন ইসহাক ৬০৫-৬০৬]

 

الوشل এর অর্থঃ অল্প পানির ধারা, যা প্রবাহিত হয় পাহাড় থেকে অথবা পাথর থেকে। সেখান থেকে অল্প অল্প করে নির্গত হয়। এর ধারাগুলো মিলিত হয় না। বলা হয়ে থাকে, এটি কেবল পাহাড়ের উপর থেকেই উৎপন্ন হয়। আরো বলা হয়ে থাকে, তা এমন পানির ধারা যা পাথরের মাঝ থেকে অল্প অল্প করে প্রবাহিত হয়।

[দেখুন, লিসানুল আরব ১১/৭২৫]

 

৩।

নবী(ﷺ) তাঁর কথা কিংবা মুখ ফসকে যাবার ভুল হতে মা'সুম নন। তিনি কখনো কখনো হয়তো কাউকে বদদোয়া বা বকা দেয়ার উপযোগী মনে করেছেন, কাজেই তিনি সেই লোকের প্রকাশ্য কার্যকলাপ অনুযায়ী তাকে বকা দিয়েছেন। কখনো হয়তো এমনও হয়েছে যে, বাস্তবিক সে হয়তো নবী(ﷺ) কর্তৃক বদদোয়া বা বকার উপযুক্ত ছিলো না। এ জন্য স্নেহশীল ও দয়াময় নবী(ﷺ) তাঁর রবের নিকট সুপারিশ করেছেনঃ যাকে তিনি ভৎর্সনা করেছেন, ঐ ভৎর্সনা যেন তার নেকির পাল্লায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেটি যেন তার পবিত্রতা ও গুনাহের কাফফারাস্বরূপ হয়।

 

ইমাম মুসলিম(র.) [হাদিস নং ৪৭০৬] বর্ণনা করেছেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ اللَّهُمَّ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ فَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ سَبَبْتُهُ أَوْ لَعَنْتُهُ أَوْ جَلَدْتُهُ فَاجْعَلْهَا لَهُ زَكَاةً وَرَحْمَةً ‏"‏ ‏

অর্থঃ আবু হুরাইরা(রা.) থেকে বর্ণিতঃ  তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ() বলেছেনঃহে আল্লাহ্‌! আমি তো একজন মানুষ সুতরাং আমি কোন মুসলিমকে গাল-মন্দ করলে কিংবা তাকে অভিশাপ করলে অথবা আঘাত করলে তখন তুমি তার জন্য তা পবিত্রতা ও রহ্মাত অর্জনের উপায় বানিয়ে দিও

 

আরেকটি বর্ণনা অনুযায়ী [মুসলিম হাদিস নং ৪৭০৮] তিনি(ﷺ) বলেছেন,

اللَّهُمَّ إِنَّمَا مُحَمَّدٌ بَشَرٌ يَغْضَبُ كَمَا يَغْضَبُ الْبَشَرُ وَإِنِّي قَدِ اتَّخَذْتُ عِنْدَكَ عَهْدًا لَنْ تُخْلِفَنِيهِ فَأَيُّمَا مُؤْمِنٍ آذَيْتُهُ أَوْ سَبَبْتُهُ أَوْ جَلَدْتُهُ فَاجْعَلْهَا لَهُ كَفَّارَةً وَقُرْبَةً تُقَرِّبُهُ بِهَا إِلَيْكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থঃ হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ তো একজন মানুষ তিনি রাগান্বিত হন যেভাবে একজন মানুষ রাগান্বিত হয় আর আমি আপনার কাছ থেকে যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছি আপনি কখনো তার উল্টো করবেন না অতএব কোনো মুমিনকে আমি দুঃখ দিলে কিংবা তাকে তিরস্কার করলে অথবা তাকে কোড়া লাগালে তা আপনি তার জন্য কাফফারাহ্ ও নৈকট্য লাভের সোপান বানিয়ে দিন; যার দ্বারা কিয়ামাত দিবসে সে আপনার নৈকট্য অর্জন করতে পারে

 

ইমাম নববী(র.) বলেছেন,

এই হাদিসগুলো উম্মাহর জন্য নবী() এর দয়ার স্বরূপকেই চিত্রিত করে। এই হাদিসগুলো উম্মাহর স্বার্থের জন্য এবং যে কোনো উপায়ে তাদের কল্যাণের জন্য নবী() এর চিন্তাকে প্রকাশ করে। উম্মাহর জন্য তাঁর সদা সতর্কতামূলক ভাবনাকে প্রকাশ করে। শেষ (হাদিসের) বর্ণনাটি অন্য বর্ননাগুলোর সাধারণ অর্থেরই প্রতিধ্বনি করছে। এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, কোনো ব্যক্তির প্রতি নবী() এর বদদোয়া তার জন্য রহমত, (গুনাহের) কাফফারা এবং পবিত্রতা অর্জনেরই মাধ্যম হবে যদি সে ঐ বদদোয়ার, ভৎর্সনা বা অভিশাপের উপযুক্ত না হয় এবং যদি সে মুসলিম হয়এ ছাড়া নবী() কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে দোয়া করেছেন। সেগুলো তাদের জন্য রহমতস্বরূপ ছিলো না।

 

এখন যদি বলা হয়ঃ কিভাবে তিনি [নবী()] কাউকে বদদোয়া, ভৎর্সনা বা অভিশাপ করতে পারেন যেখানে সে তার উপযুক্ত ছিলো না? আলেমরা এ ব্যাপারে যে উত্তর দিয়েছেন তা সংক্ষেপে দুইভাবে উল্লেখ করা যায়ঃ

 

প্রথমতঃ

হয়তো সেই ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার নিকট এর [ভৎর্সনা] উপযুক্ত ছিলো না, কিন্তু বাহ্যিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে সে এর উপযুক্ত। কিছু যুক্তিযুক্ত লক্ষণের দ্বারা নবী() এর নিকট মনে হয়েছে যে সে এর যোগ্য, কিন্তু বাস্তবিক সে হয়তো এর যোগ্য ছিলো না। এমন ক্ষেত্রে প্রকাশ্য জিনিসের ব্যাপারে বিচার করতে নবী() আদিষ্ট ছিলেন। আর মানুষের অন্তরে যা আছে, এর বিচারের ভার আল্লাহর।

 

দ্বিতীয়তঃ

কিছু ব্যক্তিকে বদদোয়া বা ভৎর্সনার ঘটনাগুলো থেকে আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হয়, আক্ষরিকভাবে তেমনটি না-ও হয়ে থাকতে পারে। বরং সেগুলো সেকালের আরবদের প্রচলিত কথ্যরীতি ছিলো। যেগুলোর পেছনে কোনো (খারাপ) উদ্যেশ্য থাকতো না।  যেমন তিনি বলতেন, تَرِبَتْ يَمِينك  [তোমার হাত ধুলায় ধূসরিত হোক], عَقْرَى حَلْقَى [বন্ধ্যা, মাথা কামানো (নেড়া / নেড়ি)]  {এক প্রকার আপত্তিসূচক অভিব্যক্তি} [1] ইত্যাদি। আরবরা মোটেও কাউকে বদদোয়া করে এ শব্দগুলো বলতো না। কিন্তু নবী() আশঙ্কা করতেন এই শব্দগুলোরও কোনো কোনোটি না আবার কবুল হয়ে যায়! কাজেই তিনি তাঁর পবিত্র ও সুউচ্চ প্রতিপালকের নিকট দোয়া ও মিনতি করেছিলেন সেগুলোকে যেন গুনাহের কাফফারা এবং রহমত বানিয়ে দেন। তাঁর নৈকট্য লাভের সোপান বানিয়ে দেন। পবিত্রতা ও পুরষ্কার বানিয়ে দেন।

 

এ ঘটনাগুলো কালেভদ্রে ঘটেছে। নবী() মন্দভাষী ছিলেন না, তিনি ইচ্ছা করে কখনো খারাপভাবে কথা বলতেন না এবং তিনি নিজের জন্য প্রতিশোধ নিতেন না বা অভিশাপ দিতেন না। [2] আমরা উপরে হাদিসে দেখেছি লোকেরা দাওস গোত্রের জন্য বদদোয়া করতে বললে তিনি (তা না করে) বলেছিলেন, “হে আল্লাহ্‌, দাওসকে হেদায়েত দান করুন”। [3] আর তিনি বলেছিলেন, “হে আল্লাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তারা জানে না।” [4]

[শারহ সহীহ মুসলিম – ইমাম নববী(র.)]

 

এবং আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

 

মূল ফতোয়ার লিঙ্কঃ

আরবিঃ https://islamqa.info/ar/147389/

ইংরেজিঃ https://islamqa.info/en/147389/

 

 

অনুবাদকের টিকা

[1] এটি যে সে যুগের কুরাঈশী আরবিতে প্রচলিত কথ্যরীতি বা অভিব্যক্তি ছিলো তা বিভিন্ন হাদিস অনুবাদেও এসেছে। যেমন, আন্তর্জাতিক ইসলামী প্রকাশনী দারুস সালাম থেকে প্রকাশিত সহীহ বুখারীর ইংরেজি অনুবাদে (অনুবাদকঃ ড. মুহাম্মাদ মুহসিন খান) এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

 

 সহীহ বুখারীর ‘আদব’ অধ্যায়ের একটি পরিচ্ছেদ হচ্ছে “تَرِبَتْ يَمِينك , عَقْرَى حَلْقَى” [তোমার হাত ধুলায় ধূসরিত হোক বন্ধ্যা, মাথা কামানো (নেড়া / নেড়ি)]। দারুস সালাম থেকে প্রকাশিত ইংরেজি অনুবাদে সে অধ্যায়ে تَرِبَتْ يَمِينك  [তোমার হাত ধুলায় ধূসরিত হোক] এর অর্থের ব্যাপারে উল্লেখ আছেঃ The literal meaning of the expression is not intended. It is just an expression of exhortation, meaning, if you do not do what I tell you, you will lose great advantage and win nothing but dust.”

অর্থাৎ, এ কথার আক্ষরিক অর্থ এখানে উদ্যেশ্য নয়। এটি বিশেষভাবে উপদেশ দেয়া বা উদ্বুদ্ধ করার একটি অভিব্যক্তি। এর অর্থ হলোঃ “যদি তুমি আমার কথা অনুযায়ী কাজটি না করো, তাহলে তুমি বিশাল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে এবং এর ফলে তুমি ধুলাবালি ছাড়া কিছুই অর্জন করবে না।”

 

عَقْرَى حَلْقَى [বন্ধ্যা, মাথা কামানো (নেড়া / নেড়ি)] এর অর্থের ব্যাপারে উল্লেখ আছেঃ It is just an exclamatory expression, the literal meaning of which is not meant here. It expresses disapproval.”

অর্থাৎ,  “এটি একটি বিস্ময়সূচক অভিব্যক্তি, এর আক্ষরিক অর্থ এখানে বোঝানো হয়নি। এর দ্বারা অননুমোদন বা অসম্মতি বোঝানো হয়”

 

এই অধ্যায়ে ৬১৫৬ ও ৬১৫৭ নং হাদিসে নবী(ﷺ) কর্তৃক কুরাঈশী আরবিতে প্রচলিত এই অভিব্যক্তিগুলো এসেছে। হাদিসগুলোর অনুবাদেও এই ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ৬১৫৭ নং হাদিসে عَقْرَى حَلْقَى কথাটির অনুবাদে উল্লেখ করা হয়েছেঃ an expression used in the Quraish dialect” [কুরাঈশী উপভাষায় ব্যবহৃত একটি অভিব্যক্তি]। বিজ্ঞ পাঠক দারুস সালাম থেকে প্রকাশিত সহীহ বুখারীর ইংরেজি অনুবাদ থেকে [৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৩-১০৪] বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারেন। [ডাউনলোড লিঙ্কঃ https://is.gd/GSjG48 ]

 

এ প্রসঙ্গে 'হাদীস একাডেমি' থেকে প্রকাশিত 'তাহক্বীক্ব মিশকা-তুল মাসা-বীহ' গ্রন্থে ৪০৪২ নং হাদিসের ব্যাখ্যা অংশে ইবন হাজার আসকালানী(র.) এর 'ফাতহুল বারী' গ্রন্থের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

 

(وَيْلُ أُمِّه) ‘‘তার মায়ের সর্বনাশ হোক।’’ এটি এমন এক শব্দ যা দ্বারা তিরস্কার করা হয়। তবে ‘আরবরা কারো প্রশংসা জ্ঞাপনের জন্যও এ শব্দটি প্রয়োগ করে থাকে। তখন এর প্রকৃত অর্থ উদ্দেশ্য নেয়া হয় না। বাদীউয্ যামান বলেনঃ ‘আরবগণ تَرِبَتْ يَمِينُه শব্দটি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যবহার করে থাকে। অনুরূপভাবে তারা (وَيْلُ أُمِّه) শব্দটি ব্যবহার করে থাকে কিন্তু তার প্রকৃত অর্থ অর্থাৎ তিরস্কারের উদ্দেশ্য নয়। অনুরূপ الْوَيْل শব্দটি শাস্তি, যুদ্ধ এবং ধমক দেয়ার উদ্দেশেও ব্যবহার হয়ে থাকে। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৩১, ২৭৩২)

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=69369

 

ইসলামের কোনো কোনো সমালোচককে দেখা যায় কিছু অনুবাদ থেকে এই কথাগুলোর আক্ষরিক অর্থ দেখিয়ে দাবি করে, নবী(ﷺ) নাকি এসব স্থানে খারাপ কথা বলেছেন বা গালাগাল করেছেন! তাদের এহেন দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং অজ্ঞতাপ্রসূত।

[2] “আয়িশা(রা.) বলেন, ‘’রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে যখনই দু’টি কাজের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া হত, তখনই তিনি সে দু’টির মধ্যে সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন; যদি সে কাজটি গর্হিত না হতো। কিন্তু তা গর্হিত কাজ হলে তিনি তা থেকে সকলের চেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। আর রাসুলুল্লাহ() নিজের জন্য কখনোই কোনো বিষয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু (কেউ) আল্লাহর হারামকৃত কাজ করে ফেললে তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।”

[সহীহ বুখারী ৩৫৬০, ৬১২৬, ৬৭৮৬, ৬৮৫৩, সহীহ মুসলিম ২৩২৭, আবু দাউদ ৪৭৮৫, মুসনাদ আহমাদ ২৩৫১৪, ২৪০২৮, ২৪২৯৯, ২৪৩০৯, ২৪৩২৫, ২৪৭৬০, মুয়াত্তা মালিক ১৬৭১]

[3] সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৬৩৯৭ দ্রষ্টব্য।

[4] পূর্বের একজন নবী থেকে ’রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এই উক্তিটি বলেছেন। দেখুনঃ সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪৭৭। 

 

 

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান