অনুবাদকের ভূমিকাঃ
ইসলামবিরোধীরা আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নবুয়তকে ভুল প্রমাণ করার জন্য নানা কুৎসিত উপায়ে তাঁর চরিত্রহননের চেষ্টা করে। তারা ‘কানযুল উম্মাল’ গ্রন্থ থেকে একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করে দাবি করে নবী(ﷺ) নাকি নিজ চাচী ফাতিমা বিনত আসাদ(রা.) এর কবরে নেমে তাঁর লাশের সঙ্গে অশ্লীল কাজ করেন (নাউযুবিল্লাহ)। তাদের কেউ কেউ এক্ষেত্রে ‘লাশকাম’ (Necrophilia) এর মতো বিকৃত যৌনাচারের প্রসঙ্গও নিয়ে আসে। এমন ভয়াবহ নোংরা কথা লিখতে গিয়েও বাধছিলো, কিন্তু ইসলামের শত্রুদের মিথ্যা অপবাদের অপনোদনের জন্য এটুকু লিখতেই হলো। তারা এর প্রমাণস্বরূপ যে বর্ণনাটি উদ্ধৃত করার চেষ্টা করে সেটি নিম্নরূপঃ
From a book named Kanza ul Amal. Narrated by Ibn Abbas:
"I (Muhammad) put on her my shirt that she may wear the clothes of heaven, and I SLEPT [1] with her in her coffin (grave) that I may lessen the pressure of the grave. She was the best of Allah's creatures to me after Abu Talib"... The prophet was referring to Fatima, the mother of Ali.
এখানে মূলত বিকৃত ব্যাখ্যা করে নবী(ﷺ) এর নামে নোংরা অপবাদ দেয়া হয়। Islamweb এর নিম্নের ফতোয়াটিতে ইসলামের শত্রুদের এই বিকৃত ব্যাখ্যাকে খণ্ডন করা হবে।
ফতোয়া নং ২৯৮৯৩৬: ফাতিমা বিনত আসাদের (রা.) দাফন সংক্রান্ত অভিযোগের জবাব
মূলঃ Islamweb
অনুবাদঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। মানুষজন নবী(ﷺ)কে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলে। তারা এই হাদিসটি উদ্ধৃত করেঃ “আমি [মুহাম্মাদ(ﷺ)] তাঁকে আমার পোশাক পরিয়ে দিলাম যাতে তিনি জান্নাতের পোশাক পরিধান করতে পারেন। আর আমি তাঁর সঙ্গে শবাধারে (কবরে) শুয়েছি যাতে আমি তাঁর জন্য কবরের চাপ কমিয়ে দিতে পারি। আবু তালিবের পরে তিনিই ছিলেন আমার নিকটে আল্লাহর সেরা সৃষ্টি।” নবী(ﷺ) এখানে ফাতিমার ব্যাপারে বলেছেন, যিনি ছিলেন আলি(রা.) এর মা (আবু তালিবের স্ত্রী)। তারা বলতে চায় ফাতিমা মারা যাবার পরে নবী(ﷺ) তাঁর সঙ্গে শুয়েছেন (এমন শব্দ চয়ন থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই)। আমরা কী করে এর জবাব দিতে পারি? এই হাদিসটি দুর্বল কিনা তা কি জানাতে পারেন? আর যদি তা হয়ে থাকে তবে কেন তা হলো? আর আপনারা কি হাদিসটির ব্যাখ্যা করতে পারবেন?
উত্তরঃ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ(ﷺ) তাঁর বান্দা ও রাসুল।
আমরা আপনাকে ভ্রান্ত ধারণা (বিভ্রান্তি) থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেবো। ভ্রান্ত ধারণা যেন আপনার উপরে আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে। মানুষের অন্তর এক অরক্ষিত জিনিস। অগাধ জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও সালাফে সলিহীনগণ ভ্রান্ত ধারণার সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁচে থাকতেন। ইমাম যাহাবী(র.) বলেছেন, “বেশিরভাগ সালাফ (অসঙ্গত) ভ্রান্ত ধারণার সম্মুখীন হবার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তাঁদের অভিমত ছিলো, মানুষের অন্তর দুর্বল। আর ভ্রান্ত ধারণা এমন এক জিনিস যার মাঝে প্রলুব্ধকর বৈশিষ্ট্য আছে… ।”
কাজেই যুক্তিযুক্ত হচ্ছে আপনি ভ্রান্ত ধারণার সম্মুখীন হওয়া থেকে বেঁচে থাকবেন। যাতে সেগুলো আপনার হৃদয়-মনে শেকড় গেড়ে বসতে না পারে, যদিও এর কিছু কিছু আপনার কাছে প্রীতিকর মনে হয়। সালাফে সলিহীনদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করাই আপনার জন্য নিরাপদ এবং সুবিবেচনাপ্রসূত কাজ হবে। কোনো (বিশ্বাসগত) ভ্রান্ত ধারণার সমুখীন হলে সেগুলোকে উপেক্ষা করবেন এবং এর দিকে কোনো প্রকার ভ্রুক্ষেপ করবেন না। এটা এই জ্ঞানের উপরে ভিত্তি করে যে, এদের বেশিরভাগই সাধারণত ভুল ও মিথ্যা।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া(র.) তাঁর ছাত্র ইবনুল কাইয়িম(র.)কে আরো উত্তম একটি উপদেশ প্রদান করেছেন। ইবনুল কাইয়িম(র.) তাঁর ‘মিফতাহ দারিস সা’দাহ’ (পরম সুখের আবাসের চাবিকাঠি) গ্রন্থে যা উদ্ধৃত করেছেনঃ “আমি একের পর এক সংশয় উল্লেখ করার পর শাইখুল ইসলাম(র.) আমাকে বলেছেন, “তোমার হৃদয়কে একটা স্পঞ্জের মতো হতে দিও না যার দরুণ সংশয়ের সংস্পর্শে এলেই তা একে শুষে নেবে এবং এর দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। বরং একে এক সুদৃঢ় কাঁচের মতো হতে দাও। সংশয় এর উপর দিয়ে চলে যাবে, কিন্তু এতে আবাস গাড়তে পারবে না। ফলে হৃদয় একে এর স্বচ্ছতা সহকারে দেখতে পাবে, আর দৃঢ়তা সহকারে একে (সংশয়) প্রতিরোধ করতে পারবে। এর বদলে তুমি যদি হৃদয়কে তোমার আশপাশের যে কোনো সংশয় শুষে নিতে দাও, এটা তাহলে সব ধরণের ভ্রান্ত ধারণা ও সংশয়ের অবতরণস্থলে পরিণত হবে।…” ”
এইসব ভ্রান্ত ধারণাগুলো যে মিথ্যা, এ ব্যাপারে একজন মুসলিমের কী করে সন্দেহ থাকতে পারে? কিভাবে তার এই কথা বিশ্বাস হতে পারে যেঃ যিনি ছিলেন মানবজাতির মধ্যে শুদ্ধতম, সেই নবী(ﷺ) কবরের মধ্যে শুয়ে একজন বৃদ্ধা এবং মৃতা মহিলার সাথে ঘুমিয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ) যেই মহিলা তাঁকে একজন মমতাময়ী মায়ের মতোই দেখাশুনা করতেন? আর এহেন কর্ম কী করে তিনি সেই মহিলার পুত্র এবং বহুসংখ্যক সাহাবীর সামনে করতে পারেন (নাউযুবিল্লাহ) ? কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কি এমন দাবি বিশ্বাস করতে পারে?
এই কাহিনীটি থেকে মূলত যে সমস্যাপূর্ণ জিনিসটি উত্থাপন করা যায় তা হচ্ছে “তিনি তাঁর সঙ্গে কবরে শুয়েছেন” এই কথার অর্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলে। [2] এই হাদিসের অন্যান্য রেওয়ায়েত থেকে এই কথার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তাঁকে কবরে রাখবার পূর্বে তিনি(ﷺ) সেই স্থানটিতে শুয়েছিলেন, যা নিচের লাইনগুলোতে চিহ্নিত করা হবে। সাধারণভাবে এই কাহিনীটি (সনদগত) দুর্বলতা থেকে মুক্ত নয়। এ কারণে যাহাবী(র.) তাঁর ‘তালখিস’ গ্রন্থে এই বর্ণনা রাখেননি, তিনি একে যঈফ বা দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হাইসামী(র.) তাঁর ‘মাজমাউয যাওয়াইদ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ
“আনাস ইবন মালিক(রা.) বলেছেন, যখন আলির মাতা ফাতিমা বিনত আসাদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) মারা গেলেন, নবী(ﷺ) তাঁর নিকটে গেলেন, তাঁর মাথার পাশে বসলেন এবং বললেন, “আমার আম্মাজান, আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। আমার নিজের মায়ের পরে আপনিই আমার মায়ের মতো ছিলেন। আমাকে ভালো করে খাওয়ানোর জন্য আপনি নিজে অভুক্ত থেকেছেন। আমাকে ভালো করে খাওয়া-পরানোর জন্য আপনি নিজের প্রয়োজনকেও উপেক্ষা করেছেন। এ জন্য আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টি, পুরষ্কার এবং আখিরাতের সাফল্য আশা করেছেন।” নবী(ﷺ) এরপর এরপর আদেশ দিলেন তাঁকে যেন ৩ বার গোসল দেয়া হয়। একবার কর্পূর মিশিত পানি দ্বারা, যা তিনি নিজ হাতে ঢাললেন। এরপর তিনি নিজ ক্বমিস (লম্বা পাঞ্জাবীর মতো পোশাক) খুললেন এবং সেটি দ্বারা তাঁকে আবৃত করলেন, তাঁকে বুরদাহ (অর্থাৎ অন্য কাপড়ের উপর দিয়ে বহির্বাস হিসেবে) কাফন দিলেন। এরপর তিনি উসামা ইবন যায়দ(রা.), আবু আইউব আনসারী(রা.), উমার ইবন খাত্তাব(রা.) এবং একজন কৃষ্ণাঙ্গ দাসকে কবর খুঁড়তে বললেন। তাঁরা ‘লাহদ’ এ (কবরের মাঝের কোটরে) পৌঁছালে তিনি(ﷺ) তা খুঁড়লেন এবং নিজ হাতে ধুলা সরালেন। এরপর তিনি(ﷺ) ‘লাহদ’ এ শুয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন,
اللهُ الَّذي يُحيي ويُميتُ وهو حيٌّ لا يموتُ اغفِرْ لأمِّي فاطمةَ بنتِ أسَدٍ ولَقِّنْها حُجَّتَها ووسِّعْ عليها مُدْخلَها بحقِّ نبيِّك والأنبياءِ الَّذين مِن قَبلي فإنَّك أرحمُ الرَّاحمين
“আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি জীবন দান করেন, আবার মৃত্যুও দেন। তিনি চিরঞ্জীব, মৃত্যুবরণ করবেন না। তুমি ক্ষমা কর আমার মা ফাতিমা বিনতু আসাদকে। তাঁকে উপাধি দাও তাঁর অলংকার হিসেবে, তাঁর প্রবেশ পথকে প্রশস্ত কর, তোমার নবীকে সত্য ও আমার পূর্ববর্তী সকল নবীকে সত্য জানার দ্বারা। কারণ তুমিই সকল দয়ালুর মাঝে সর্বাপেক্ষা দয়াবান।” এরপরে তিনি(ﷺ) চারবার তাকবির (আল্লাহু আকবার) বললেন। আব্বাস ও আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) এর সহায়তায় তিনি তাঁকে [ফাতিমা বিনতে আসাদের(রা.) লাশ] ‘লাহদ’ এ রাখলেন।” [তাবারানী(র.) কর্তৃক ‘আল কাবির’ এবং ‘আল আওসাত’ এ বর্ণিত] [3]
এই বর্ণনার সনদে রাওহ ইবন সালাহ আছেন। ইবন হিব্বান(র.) এবং হাকিম(র.) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। কেউ কেউ তাকে দুর্বল বলেছেন। তবে সনদের অন্য সকল বর্ণনাকারী বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনাকারী।
ইবন আব্বাস(রা.) বর্ণনা করেছেন, “আলি ইবন আবি তালিবের মাতা ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) মারা গেলে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) নিজ ক্বমিস খুলে তাঁকে কাফন দিলেন এবং তাঁর সাথে কবরে শুলেন। তাঁকে কবর দেয়ার পরে কিছু লোক জিজ্ঞেস করলো, “হে আল্লাহর রাসুল, আমরা আপনাকে এমন কিছু করতে দেখলাম যা আর কারো জন্য করেননি।” তিনি(ﷺ) বললেন, “আমি তাকে আমার পোশাক দ্বারা (কাফনে) আবৃত করেছি যাতে তাঁকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করানো হয়। আমি তাঁর সাথে তাঁর কবরে শুয়েছি যাতে তাঁর জন্য কবরের চাপ সহজ হয়।” [তাবারানী(র.) কর্তৃক ‘আল আওসাত’ এ বর্ণিত] ” [4] এর সনদে সা’দান ইবনুল ওয়ালিদ আছেন, যিনি আমার নিকট অপরিচিত। অন্য সকল বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত।”
[মাজমাউয যাওয়াইদ]
আল্লাহই সর্বোত্তম জানেন।
মূল ফতোয়ার লিঙ্কঃ https://www.islamweb.net/en/fatwa/298936/
অনুবাদকের টীকা
[1] বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ইসলামের শত্রুরা এই ইংরেজি অনুবাদটি ব্যাপকভাবে উল্লেখ করে। কিন্তু এখানে ইংরেজিতে 'SLEPT' উল্লেখ আছে। এর মূল আরবিতে আছে "واضطجعت معها فى قبرها"। এখানে 'sleep' এর স্থলে 'lay' দেয়া সঠিক হবে। Islamweb এ প্রশ্নকারীও ইসলামের শত্রুদের প্রচারিত অনুবাদের আলোকে প্রশ্নটি করেছেন। এ জন্য বাংলা অনুবাদে 'ঘুমিয়েছি' এর স্থলে 'শুয়েছি' করা হলো। এখানে 'ঘুমানো'র কথাটি যে সঠিক নয় তা এমনকি প্রসঙ্গ দেখলেও বোঝা যায়। আলোচ্য বর্ণনার মূল আরবির জন্য দেখুনঃ
https://al-maktaba.org/book/2677/9664 অথবা http://www.islamport.com/w/mtn/Web/2431/17699.htm
[2] খ্রিষ্টান মিশনারীরা এই শব্দের অর্থ নিয়ে নবী করিম(ﷺ) এর বিরুদ্ধে নোংরা অপবাদ দিয়ে থাকে। অনেক সময় তারা দাবি করে যে, এখানে এই বর্ণনায় মূল আরবিতে যে ‘واضطجع’ এবং ‘واضطجعت ’ কথাগুলো আছে, এর অর্থ শুধুমাত্র যৌন সঙ্গম বা সহবাস হয়। অথচ এহেন দাবি যে সঠিক না স্বয়ং বাইবেল এর সাক্ষ্য দেয়!
আরবি বাইবেলে ২ রাজাবলি (2 Kings) ৪ : ৩৪ এ ‘واضطجع’ কথাটি আছে।
ثم صعد واضطجع فوق الصبي ووضع فمه على فمه وعينيه على عينيه ويديه على يديه وتمدّد عليه فسخن جسد الولد.
https://studybible.info/Arabic/2%20Kings%204:34
বাংলা বাইবেলে যার অনুবাদ আছেঃ
“পরে তিনি বিছানায় উঠে ছেলেটির মুখের উপর মুখ, চোখের উপর চোখ, হাতের উপর হাত রেখে শুয়ে পড়েছিলেন। ছেলেটির উপর তিনি যখন নিজেকে বিছিয়ে দিলেন, তখন ছেলেটির শরীর গরম হয়ে গেল।” [BCV]
https://www.bible.com/bible/2412/2KI.4.BCV
ইংরেজি বাইবেলে যার অনুবাদ আছেঃ
“Then he went up and lay upon the child, putting his mouth upon his mouth, his eyes upon his eyes, and his hands upon his hands; and as he stretched himself upon him, the flesh of the child became warm.” [RSV]
এখানে বাইবেলের ২ রাজাবলি (2 Kings) ৪র্থ অধ্যায়ের ঘটনায় নবী ইলীশায় (Elisha) ঈশ্বরের সাহায্যে একটি মৃত ছেলেকে জীবিত করার মুজিজা প্রদর্শন করেন। সে জন্য তিনি সেই মৃত ছেলেটির মুখের উপর মুখ, চোখের উপর চোখ, হাতের উপর হাত রেখে তার গায়ের উপরে শুয়ে পড়েছিলেন। সঙ্গত কারণেই এখানে “শুয়ে পড়া”, “lay upon” ইত্যাদি অর্থ করা হয়েছে। এখানে মোটেও সহবাস বা যৌনসঙ্গমের কোনো ব্যাপার নেই বরং ঈশ্বরের একজন নবীর মুজিজা প্রদর্শনের ব্যাপার রয়েছে। নবী করিম(ﷺ) এর মাতৃসম ফাতিমা বিনত আসাদ(রা.) সংক্রান্ত হাদিসে যে ‘واضطجع’ শব্দ আছে, এ স্থলে আরবি বাইবেলেও সেই একই শব্দ আছে। অথচ খ্রিষ্টান মিশনারীরা বাইবেলের মাঝে এখানে কোনো অশ্লীল কিছু না পেলেও নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর ব্যাপারে ঠিকই নোংরা অভিযোগ তুলেছে। মায়ের মতো একজন নারীর জন্য নবী(ﷺ) এর দোয়ার ঘটনা থেকে খ্রিষ্টান মিশনারীরা নানা অশালীন অভিযোগ আনে, ওদিকে বাইবেলের নবী ইলীশায় (Elisha) একটা মৃত ছেলের গায়ের উপরে উঠে গেলেও কোনো সমস্যা হয় না, সেখানে তারা ঠিকই ব্যাখ্যা করে নেয় যে এখানে তো ভালো কাজের জন্য, ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশের জন্য অলৌকিক কাজ করা হচ্ছে। এই হচ্ছে খ্রিষ্টান মিশনারীদের দ্বিমুখী নীতির উদাহরণ। তাদের নিজেদের (অপ) যুক্তি দ্বারাই এখানে বাইবেলের একজন নবীর ব্যাপারেও অশ্লীল অভিযোগ তোলা সম্ভব। কিন্তু মুসলিম দাঈরা এমন নোংরামীর নীতি গ্রহণ করেন না।
বাইবেল থেকে এ সংক্রান্ত আরো কিছু উদাহরণ পেশ করছি—
আরবি বাইবেলে ২ বংশাবলি (2 Chronicles) ২১ : ১ এ ‘واضطجع’ কথাটি আছে।
واضطجع يهوشافاط مع آبائهِ فدُفنِ مع آبائهِ في مدينة داود وملك يهورام ابنهُ عوضاً عنهُ.
https://biblia.com/bible/ar-vandyke/2-chronicles/21/1
বাংলা বাইবেলে যার অনুবাদ আছেঃ
“পরে যিহোশাফট তাঁর পূর্বপুরুষদের সাথে চিরবিশ্রামে শায়িত হলেন এবং তাঁকে তাদেরই সাথে দাউদ-নগরে কবর দেওয়া হল। তাঁর ছেলে যিহোরাম রাজারূপে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন।” [BCV]
https://www.bible.com/bible/2412/2CH.21.BCV
ইংরেজি বাইবেলে যার অনুবাদ আছেঃ
“Jehosh′aphat slept with his fathers, and was buried with his fathers in the city of David; and Jeho′ram his son reigned in his stead.” [RSV]
এখানে বাংলা ও ইংরেজি বাইবেলে ‘واضطجع’ কথাটির অর্থ করা হয়েছেঃ “চিরবিশ্রামে শায়িত হলেন”, “Slept with his fathers” । এর অর্থ কোনোক্রমেই যৌন সঙ্গম বা সহবাস হওয়া সম্ভব নয় কেননা কেউ কারো পরলোকগত পূর্বপুরুষদের সাথে সহবাস করতে পারে না!
আরবি বাইবেলে ২ শমুয়েল (2 Samuel) ৭ : ১২তে ‘واضطجعت ’ কথাটি আছে। এখানেও এর অর্থ যৌন সঙ্গম বা সহবাস হয়নি বরং অন্য অর্থ হয়েছে। প্রসঙ্গ অনুসারে কখনোই এর অর্থ সহবাস হওয়া সম্ভব নয়।
متى كملت ايامك واضطجعت مع آبائك اقيم بعدك نسلك الذي يخرج من احشائك واثبت مملكتهُ
https://biblia.com/bible/ar-vandyke/2-samuel/7/12
বাংলা বাইবেলে যার অনুবাদ আছেঃ
“তোমার দিন ফুরিয়ে যাওয়ার পর ও তোমার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে তুমি যখন বিশ্রাম নেবে, তখন আমি তোমার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য তোমার সেই বংশধরকে তুলে আনব, যে হবে তোমারই মাংস ও তোমারই রক্ত, এবং আমি তার রাজ্য স্থির করব।” [BCV]
https://www.bible.com/bible/2412/2SA.7.BCV
ইংরেজি বাইবেলে যার অনুবাদ আছেঃ
“When your days are fulfilled and you lie down with your fathers, I will raise up your offspring after you, who shall come forth from your body, and I will establish his kingdom.” [RSV]
[3] বর্ণনাটির মূল আরবির জন্য দেখুনঃ
https://www.dorar.net/h/919c42eee1e461692035fda08609458a অথবা https://tinyurl.com/56nstpdf
[4] বর্ণনাটির মূল আরবির জন্য দেখুনঃ
https://dorar.net/h/bb7055e401259076eba6b3bce1d1ae9b অথবা https://tinyurl.com/yc6y86xc