Pray for the world economy

বজ্রপাত ঘটার উদ্দেশ্য কি মানুষকে ভয় দেখানো বা কাউকে আঘাত করা?

নাস্তিক প্রশ্নঃ বজ্রপাত(একজন ফেরেশতা যে আল্লাহর প্রশংসা করে সভয়ে) ঘটার উদ্দেশ্য কি মানুষকে ভয় দেখানো বা কাউকে আঘাত করা (Quran 13:12-13 see Tafseer Ibn Abbas) ?

 

 উত্তরঃ কুরআন মাজিদে বলা হয়েছেঃ

 

"তিনিই [আল্লাহ] তোমাদেরকে দেখান বিজলী যা ভয় ও ভরসা সঞ্চার করে এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ঘন মেঘ।

রা’দ(বজ্র) ও ফেরেশতাগণ সভয়ে তাঁর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি ওরা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে; যদিও তিনি মহাশক্তিশালী।" [1]

 

কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে যে, মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রতিটি বস্তু আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে[সুরা বনী ইস্রাঈল(ইসরা) ১৭:৪৪ দ্রষ্টব্য] এবং হাদিসে বলা হয়েছে যে বৃষ্টি বর্ষণের কাজে নিযুক্ত ফেরেশতার নাম রা’দ [তিরমিযী ৩১১৭ দ্রষ্টব্য]। আল্লাহ তা’আলাই আকাশে বিদ্যুতের প্রকাশ ঘটান। এটা মানুষের জন্য ভয়েরও কারণ হতে পারে, কারণ এটা যে জায়গায় পতিত হয়, সব কিছু জ্বালিয়ে ছাইভষ্ম করে দেয়। আবার এটা আশার সঞ্চার করে যে, বিদ্যুৎ চমকানোর পর বৃষ্টি হবে, যা মানুষ ও জীব-জন্তুর জীবনের অবলম্বন।

 

রয়্যাল আল বাইত ইনস্টিটিউট ফর ইসলামিক থট, জর্ডান থেকে প্রকাশিত তাফসির ইবন আব্বাসে এ আয়াত দু’টির তাফসিরে বলা হয়েছে যে—

“ (তিনিই[আল্লাহ] তোমাদেরকে দেখান বিজলী) - বৃষ্টি, তা পথিকের জন্য ভয়ের, কারণ এর ফলে তার জামাকাপড় ভিজে যাবে।এবং মুকিম বা স্থায়ীভাবে বসবাসকারীর জন্য তা আশার, কারণ এর ফলে তার জমিতে সেচের ব্যবস্থা হবে।তিনিই ভারী মেঘমালাকে তৈরি করেন এবং উপরে উত্থিত করেন যা বৃষ্টিকে ধারণ করে।

(বজ্র ও ফেরেশতাগণ সভয়ে তাঁর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে) – তাঁরই নির্দেশে; এ (বজ্র) হচ্ছে একজন ফেরেশতা।এও বলা হয়েছে যে, এ হচ্ছে আকাশের ধ্বনি (ফেরেশতাদেরও) এবং ফেরেশতারা সভয়ে তাঁর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে। এবং তিনি বজ্রপাত করেন – অর্থাৎ জ্বালিয়ে দিতে পারেন, এবং যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা আঘাত করেন; তিনি যাকে ইচ্ছা এ স্ফুলিঙ্গ দিয়ে ধ্বংস করে দিতে পারেন।এখানে যাইদ ইবন কায়েসের কথা বলা হচ্ছে যাকে আল্লাহ বজ্রপাত দিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। ...” [2]

 

..একবার আমের বিন তুফাইল আমেরী এবং আরবাদ বিন রবীয়া আমেরী রাসুল(ﷺ) এর নিকট গেল। তারা রাসুল(ﷺ)কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। আমের রাসুল(ﷺ)কে বলল, “আপনি একটু উঠুন, আপনার সঙ্গে একান্তে আলাপ করতে চাই।” আমের তার সাথী আরবাদকে আরো বলে রেখেছিল যে মুহাম্মাদ(ﷺ) যখন আমার সাথে আলাপে মগ্ন থাকবে, তখন তুমি অতর্কিতে পিছন থেকে তাকে তলোয়ারের আঘাত করে শেষ করে দেবে। আরবাদ সুযোগ বুঝে রাসুল(ﷺ) এর পেছনে চলে এল, কিন্তু খাপ থেকে কিছুতেই তলোয়ার বের করতে পারল না।বার বার চেষ্টা করেও বিফল হল। তখন অকস্মাৎ বজ্রপাত হল এবং ব্জ্র পড়ল পাপিষ্ঠ আরবাদের মাথার উপর। বজ্রাহত হয়ে সে নিমেষেই মারা গেল। ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল আমের কিন্তু পালাতে পালাতে সে বলছিল যে সে রণকুশলী লোকদের দিয়ে এই উপত্যকা ভরে ফেলবে [অর্থাৎ রাসুল(ﷺ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা]। পরদিন তার উরুর উপরে একটি বড় ফোঁড়া হয় এবং সে ঘোড়ার পিঠে মৃত্যুবুরণ করে। [3]

 

তাফসির ইবন কাসিরেও ইবন আব্বাস(রা) থেকে “এবং তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা আঘাত করেন” এর শানে নুযুলে এই ঘটনাটি বর্ণিত আছে। [4]

 

এই আয়াতদ্বয়ে আল্লাহর মহা ক্ষমতার কথা বলা হচ্ছে। আমরা ইবন আব্বাস(রা) থেকে বিবরণে দেখতে পাচ্ছি যে আল্লাহ এই বজ্র দ্বারা সেই পাপিষ্ঠকে ধ্বংস করেছেন যে নবী মুহাম্মাদ(ﷺ)কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল।এভাবে আল্লাহ চাইলে যে কাউকে এর দ্বারা ধ্বংস করতে পারেন। তিনি যাকে রক্ষা করেন, কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। আবার তিনি যাকে ধ্বংস করেন, কেউ তাকে রক্ষা করতে পারে না।

 

মেঘ, বৃষ্টি, বজ্রপাত এগুলো সবই আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট প্রাকৃতিক উপাদান। এগুলো দ্বারা আল্লাহ পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখেন, মানুষ ও পশু-পাখির খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। সেই সাথে ব্জ্রপাতের দ্বারা যে তিনি পাপিষ্ঠদের ধ্বংস করতে সক্ষম, সেকথাও আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে। এমন ঘটনা বাস্তবে ঘটেছে, ইবন আব্বাস(রা) এর বিবরণ থেকে আমরা এমন একটি ঘটনা জানতে পারছি।

 

তথ্যসূত্রঃ

[1]  আল কুরআন, রা’দ ১৩ : ১২-১৩

[2]  তাফসির ইবন আব্বাস, সুরা রা’দের ১২-১৩ আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব্য; প্রকাশনীঃ রয়্যাল আল বাইত ইনস্টিটিউট ফর ইসলামিক থট, জর্ডান

[3]  তাফসির মাজহারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৮-৩০১

[4]  তাফসির ইবন কাসির, ৪র্থ খণ্ড, সুরা রা’দের ১২-১৩ আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৫৮-২৬২