ইসলাম ধর্মের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি হচ্ছে হজ। সামর্থ্যবান মুসলিমদের ওপর জীবনে অন্তত একবার হজ করা ফরয। ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ বিধানের ব্যাপারে নাস্তিক-মুক্তমনা এবং বিশেষত খ্রিষ্টান মিশনারিদের অভিযোগ হচ্ছে : হজের রীতিগুলো মোটেও ইব্রাহিম(আ.) এর সাথে কিংবা একত্ববাদের সাথে সম্পর্কিত নয়; বরং এগুলো প্রাচীন আরবের পৌত্তলিক মূর্তিপূজারিদের থেকে ধার করা। তাদের এই অভিযোগগুলো দেখে অনেকের মনে হজ সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
সুনির্দিষ্টভাবে হজের যেসব রীতিকে ইসলামবিরোধীরা “পৌত্তলিকদের থেকে ধার করা” বলে অভিযোগ করে সেগুলো হচ্ছে :
◘ কা’বাকে কেন্দ্র করে পাক দিয়ে ঘোরা
◘ হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে চুমু খাওয়া
◘ সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো ও শয়তানকে পাথর ছোড়া
এখন আমরা অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ ও খণ্ডন করার চেষ্টা করব ইন শা আল্লাহ।
◘ কা’বাকে কেন্দ্র করে পাক দিয়ে ঘোরা (তাওয়াফ)
হজ ও উমরার সময়ে মুসলিমরা তাওয়াফ করে বা কা’বাকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এই ঘূর্ণন হয় ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে (anti clockwise)। খ্রিষ্টান মিশনারি ও নাস্তিক-মুক্তমনাদের মতে, এভাবে একটি ইমারতকে কেন্দ্র করে পাক দিয়ে ঘোরা পৌত্তলিকদের রীতি। তাদের মধ্যে কারও কারও যেমন : খ্রিষ্টান প্রচারক ডেভিড উডের মতে এর কারণ হচ্ছে সূর্য, চন্দ্র এবং ৫টি গ্রহকে উপাস্য সাব্যস্ত করে পৌত্তলিক রীতির অনুকরণ। এ রকম নানা উদ্ভট অভিযোগ তারা করে থাকে। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে, সব থেকে অজ্ঞ মুসলিমটিরও কখনো হজের সময় মাথায় এটা থাকে না যে, সে চাঁদ-সূর্য কিংবা গ্রহের পূজা করছে। অথবা কা’বা গৃহটি আল্লাহ তা’আলার মূর্তি বা প্রতিকৃতি (নাউযুবিল্লাহ)। কা’বা ঘরে উপাসনাকে পৌত্তলিকতার সাথে মিলিয়ে ইসলামবিরোধীরা যেসব অপপ্রচার চালায়, তার সবগুলোর খণ্ডন এই ওয়েবসাইটের একটি আর্টিকেলে করা হয়েছে।[1] যা হোক, এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, মুসলিমরা কেন হজ ও উমরার সময়ে কা’বাকে কেন্দ্র করে এভাবে পাক দিয়ে ঘোরে?
উত্তর হচ্ছে—এটিই নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) নির্দেশিত সুন্নাহ পদ্ধতি।[2] যেহেতু নবী(ﷺ) এভাবে হজ করতে শিখিয়েছেন, মুসলিমরাও আল্লাহর নবীর অনুসরণে এই কাজ করে। কোনো মুসলিম কখনো কোনো পৌত্তলিক জাতিগোষ্ঠীকে অনুকরণ করে এটা করে না অথবা কোনো মুসলিম কখনো চাঁদ-সূর্যের পূজা করার নিয়তে এই কাজ করে না (নাউযুবিল্লাহ)। আল কুরআনে সুস্পষ্টভাবেই এর ঠিক উল্টো কথা বলা আছে, অর্থাৎ চাঁদ-সূর্যের পূজা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
“তাঁর [আল্লাহর] নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র।
তোমরা সূর্যকে সিজদা কোরো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সিজদা করো, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধু তাঁরই ইবাদত করো।” [3]
আল কুরআনে যা বলা হয়েছে, ঠিক তার উল্টো জিনিস ইসলাম ও মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তোলে খ্রিষ্টান মিশনারি ও নাস্তিক-মুক্তমনারা।
ইসলামবিরোধীরা এরপরে যদি বলতে চায়, কা’বা ঘর তাওয়াফ পৌত্তলিক (pagan) উপাসনা না হলে প্রাচীন আরব পৌত্তলিকরা কেন তাওয়াফ করত?
উত্তরে আমরা বলব : আরব পৌত্তলিকদের করা ১০০% কাজই ভুল ছিল না। তারা ছিল ইব্রাহিম(আ.) ও ইসমাঈল(আ.) এর বংশধর, তাঁদের একত্ববাদী দ্বীন ধীরে ধীরে তাঁদের বংশধরদের মাঝে বিকৃত হয়েছিল। তাদের ভেতর অল্প কিছু ইব্রাহিমী রীতি রাসুল(ﷺ) এর সময়েও অবশিষ্ট ছিল।[4] এর মধ্যে আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ বা পাক দেওয়া অন্যতম।
আল কুরআনে বলা হয়েছে :
“আর স্মরণ করো, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে সলাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো। আর আমি ইব্রাহিম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ‘ইতিকাফকারী ও রুকূকারী-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।” [5]
“ আর স্মরণ করো, যখন আমি ইব্রাহিমকে সে ঘরের (বাইতুল্লাহ, কা’বা) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, “আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং আমার ঘরকে পাকসাফ রাখবে তাওয়াফকারী, রুকূ-সিজদা ও দাঁড়িয়ে সলাত আদায়কারীর জন্য। আর মানুষের নিকট হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূরের পথ পাড়ি দিয়ে। যেন তারা নিজদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাজির হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিযিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। অতঃপর তোমরা তা থেকে খাও এবং দুস্থ-দরিদ্রকে খেতে দাও। তারপর তারা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, তাদের মানতসমূহ পূরণ করে এবং প্রাচীন ঘরের (কা’বা) তাওয়াফ করে।” [6]
অর্থাৎ এই তাওয়াফ ছিল স্বয়ং ইব্রাহিম(আ.) ও ইসমাঈল(আ.) এর সময় থেকেই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত রীতি। তাঁদের বংশধরদের মধ্যে পরবর্তীকালে বিভিন্ন নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় রীতি ও পৌত্তলিকতা বিস্তার লাভ করে। নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) তাদের মধ্য থেকে নব উদ্ভাবন ও পৌত্তলিকতাগুলো দূর করে দেন এবং ইব্রাহিমী রীতিগুলোকে আল্লাহর নির্দেশে বহাল রাখেন। ইসলামবিরোধীরা যদি এরপরেও গোঁয়ারের মত বলতে চায় যে, আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করা বা ঘোরা ইব্রাহিমী রীতি নয়, তাহলে আমরা বলব, আপনারা কি ‘হজ’ শব্দটির তাৎপর্য জানেন? আরবি ও হিব্রু উভয়েই সেমিটিক (Semitic) ভাষা, এদেরকে বলা হয় ‘Sister Languages’। আরবি ‘হজ’(حَجِّ) শব্দটি হিব্রু হাগ/খাগ(חָג) শব্দের ইকুইভ্যালেন্ট শব্দ। এমনকি বিখ্যাত বাইবেলের ওয়েবসাইট Biblehub এ ডিকশনারি অংশে এই হিব্রু শব্দটি ব্যাখ্যা করতে আল কুরআনের আরবি ‘হজ’(حَجِّ) শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এটি এমন একটি শব্দ যেটি বাইবেলে বনি ইস্রাঈল জাতির হজ সম্পর্কে ব্যবহার করা হয়েছে। Hebrew Language Detective ওয়েবসসাইট Balashon এও হিব্রু শব্দটি ব্যাখ্যা করতে আল কুরআনের ‘হজ’(حَجِّ) শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে।[7] এই হিব্রু শব্দটির ধাতুমূল (root-word) হচ্ছে חוג (খুগ/হুগ) যার মানে হচ্ছে "to make a circle" বা "move in a circle" অর্থাৎ কোনো বৃত্ত তৈরি করা। এই শব্দটির সাথে পাক দেওয়া বা ঘোরানোর একটি সম্পর্ক আছে। এই কারণে হিব্রু ভাষায় টেলিফোনের ডায়ালের ক্ষেত্রে এই শব্দমূল থেকে উদ্ভুত חיוג (খেউগ/হেউগ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[8] তাই হিব্রুতে ইহুদিদের pilgrimage বা হজ বোঝাতে ব্যবহৃত ‘হাগ’ শব্দটি দিয়ে সরাসরি “পাক দিয়ে ঘোরা”ও বোঝানো হয়।[9]
আমরা এতক্ষণ শব্দটির উৎপত্তি ও তাৎপর্য আলোচনা করলাম। এবার আমরা বনী ইস্রাঈলের প্রাচীন ইতিহাসে ফিরে যাই।[10] বনী ইস্রাঈলে আল্লাহ তা’আলা বহু নবী-রাসুল প্রেরণ করেন এবং এককালে তারা ছিল নবী-রাসুলদের দ্বীনের অনুসারী (যদিও পরবর্তীকালে তারা সেই সত্য দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়)। ইহুদিরা বাইতুল মুকাদ্দাসকে তাদের কিবলা হিসাবে গণ্য করে। ৭০ খ্রিষ্টাব্দে ইহুদিদের সেকেন্ড টেম্পল বা বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস হয়। এর আগে প্রাচীন ইহুদিরা কীভাবে তাদের হজ বা pilgrimage সম্পাদন করত? বাইতুল মুকাদ্দাসে ইহুদিদের হজ করার রীতি হচ্ছে : বাইতুল মুকাদ্দাসকে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে (anti clockwise) ৭ বার পাক দিয়ে ঘোরা বা তাওয়াফ করা—ঠিক যেভাবে মুসলিমরা কা’বাকে ৭ বার তাওয়াফ করে![11] ইহুদিদের মৌখিক তাওরাত (Oral Torah) এ এভাবেই তাদের হজের নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হজের মূল দিনে বাইতু্ল মুকাদ্দাসের ইমারতকে ৭ বার পাক দিতে হবে। সেই সাথে ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করতে হবে।[12] মুসলিমদের হজের সময় ৭ বার তাওয়াফ করাকে ‘পৌত্তলিক’(!) রীতি বলে অভিহিত করে খ্রিষ্টান মিশনারি ও নাস্তিক-মুক্তমনারা, অথচ এই একইভাবে প্রাচীন ইহুদিরা বাইতুল মুকাদ্দাসে হজ করত বলে তাদের নথিপত্রে উল্লেখ আছে, এভাবে হজ করা তাদের ধর্মগ্রন্থের বিধান। মুসলিমদের হজের তাওয়াফ যদি পৌত্তলিক রীতিই হতো, তাহলে কীভাবে এর সাথে প্রাচীন ইহুদিদের হজের মিল পাওয়া যাচ্ছে? মুসলিমদের ৭ বার তাওয়াফকে ডেভিড উড এর মতো খ্রিষ্টান মিশনারিরা চাঁদ-সূর্য ও গ্রহের পূজা বলে মিথ্যাচার করে, অথচ ইহুদিদের ব্যাপারে কেন তারা এই অভিযোগ তোলে না? কেন এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড?
ইসলামবিরোধীরা এবার হয়তো নড়েচড়ে বসে বলবে : বুঝতে পেরেছি, মুহাম্মাদ(ﷺ) নিশ্চয়ই হজের রীতি ইহুদিদের নিকট থেকে কপি করেছেন; মদীনায় তো অনেক ইহুদি বাস করত...
কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে, মদীনার ইহুদিরা মোটেও ওভাবে বাইতুল মুকাদ্দাসে হজ করত না। ৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোম সম্রাট টাইটাস বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস করার পর থেকে ইহুদিরা আর বাইতুল মুকাদ্দাসে হজ করে না। ৭০ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত ইহুদিরা বাইতুল মুকাদ্দাসকে ৭ বার তাওয়াফ করে হজ করত।[13]
সূত্রঃ “Divine Diversity: An Orthodox Rabbi Engages with Muslims” by Ben Abrahamson; page 44
মুহাম্মাদ(ﷺ) এর পক্ষে কি সম্ভব ছিল তাঁর সময় থেকে ৫০০ বছর আগের ইহুদিদের রীতি-নীতি নকল করার? নাকি এটা ভাবাই অধিক যুক্তিসংগত যে, এক আল্লাহর থেকেই বিধানটি এসেছে বলে এই মিল দেখা যাচ্ছে? প্রশ্নটা না হয় তাদের জন্যই তোলা থাকুক, যারা চিন্তা করতে জানে।
বাইবেলের নতুন নিয়ম (New Testament) অংশে যিশু খ্রিষ্ট বনী ইস্রাঈলের প্রাচীন নবীদের সকল আইন ও বিধানকে সমর্থন করেছেন এবং তিনি এগুলো পূর্ণ করতে এসেছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি নবীদের শিক্ষা মেনে চলতে বলেছেন।[14] আমরা দেখেছি যে, ইহুদিদের নথিপত্র অনুযায়ী বনী ইস্রাঈলের প্রাচীন নবীদের অনুসারীদের হজ অনেকটাই মুসলিমদের হজের মতো ছিল। যেসব খ্রিষ্টান মিশনারি ইসলামী হজকে ‘পৌত্তলিক’ বলে অপপ্রচার করেন, তাদের নিকট প্রশ্ন রাখব, যিশু খ্রিষ্টও কি তবে ‘পৌত্তলিকতা’কে সমর্থন করেছেন?!!
◘ হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে চুমু খাওয়া
হজের সময়ে হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে চুমু খাওয়া নিয়ে খ্রিষ্টান মিশনারি ও নাস্তিক-মুক্তমনারা বহুমুখী অভিযোগ তোলে। অভিযোগগুলো শুধু মিথ্যাই নয়; অশ্লীলও।
প্রথমত, তারা বলতে চায়, হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর নাকি নারীদের যোনির প্রতিকৃতি যাতে মুসলিমরা চুম্বন করে (নাউযুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ)।
এই অভিযোগের আদৌ কোনো ভিত্তি নেই। ইসলামবিরোধীরা হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরের উপরিভাগের ছবিতে এর রুপালি বর্ণের ধারকটির আকৃতির দিকে ইঙ্গিত করে এই উদ্ভট অভিযোগ তোলে। শিয়াদের একটি ফির্কা কারামিতারা ৩১৭ হিজরিতে কা’বা থেকে হাজরে আসওয়াদ লুট করে, ২২ বছর পর ৩৩৯ হিজরিতে তা উদ্ধার করা হয়। এই ২২ বছর হাজরে আসওয়াদ ছাড়াই হজ সম্পাদিত হয়েছিল। কারামিতারা হাজরে আসওয়াদ ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছিল।[15] টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া পাথরটিকে একত্রে জোড়া দিয়ে একটা গোল ধারক বা ফ্রেমের ভেতর স্থাপন করা হয়েছে। যে কারণে আমরা বর্তমানে গোল রুপালি রঙের ফ্রেমের মাঝে কালো পাথর বা হাজরে আসওয়াদ দেখি। প্রকৃতপক্ষে যদি আমরা পূর্ণ হাজরে আসওয়াদের ছবি দেখি, তাহলে কোনোভাবেই এর সাথে নারীদের যোনির আকৃতির কোনো মিল পাওয়া যাবে না (নাউযুবিল্লাহ)। দেখুন হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরের পূর্ণ আকৃতি কীরূপ :
সূত্রঃ ■ প্রাচ্যবিদ William Muir এর লেখা মুহাম্মাদ(ﷺ) এর জীবনী "The life of Mohammad : from original sources", page 29
মানুষ তো তার সন্তানকেও ভালোবেসে চুম্বন করে। এর মানে কি মানুষ তার সন্তানের উপাসনা করে? কোনো পৌত্তলিক জাতিগোষ্ঠীগুলোর উপাসনার রীতি যদি আমরা লক্ষ করি, তাহলেও আমরা এর সাথে মুসলিমদের কোনো মিল খুঁজে পাই না। কোনো ক্যাথোলিক খ্রিষ্টান কি চার্চে গিয়ে মরিয়ম(আ.) কিংবা যিশুর মূর্তিকে চুমু খায়? কিংবা কোনো হিন্দু কি কখনো মন্দিরে পূজার সময় দুর্গা, সরস্বতী, কালি এসব দেব-দেবীর মূর্তিতে চুমু খায়? হাজরে আসওয়াদকে মুসলিমরা কখনোই আল্লাহ তা’আলার মূর্তি বা প্রতিকৃতি মনে করে না (নাউযুবিল্লাহ), একে কল্যাণ-অকল্যাণের মালিকও মনে করে না, এর কাছে কোনো সাহায্যও চায় না। শুধু নবী(ﷺ) এর সুন্নাত হিসাবে মুসলিমরা হজের সময় একে চুম্বন করে। অথচ পৌত্তলিকরা যেসব বস্তুর পূজা করে সেগুলো হয় তাদের উপাস্য দেবতার মূর্তি, নয়তো তারা সেগুলোর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করে। কাজেই হাজরে আসওয়াদকে পৌত্তলিকতার সাথে মেলানো অত্যন্ত অযৌক্তিক একটি অভিযোগ।
উমর (রা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একখানা পাথরমাত্র, তুমি কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারো না। নবী(ﷺ)কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।[16]
হাজরে আসওয়াদের উৎস কী? এটি কা’বা ঘরে কেন রয়েছে?
কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী ফেরেশতা জিব্রাঈল(আ.) হাজরে আসওয়াদ কা’বার স্থানটিতে রাখেন এবং ওই স্থানের ওপরেই ইব্রাহিম(আ.) কা’বা নির্মাণ করেন।[17]
এ ক্ষেত্রে আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে, বাইবেল অনুযায়ী বনী ইস্রাঈল জাতির কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাসের (Temple Mount/মহামন্দির) গোড়াপত্তনের সাথেও একটি পাথর জড়িয়ে আছে! বাইবেল অনুযায়ী—ইস্রায়েল জাতির পিতা যাকোব [ইয়া’কুব(আ.)/Jacob] একটি বিশেষ পাথরের ওপরে বাইতুল মুকাদ্দাসের ভিত্তি স্থাপন করেন! শুধু তা-ই না, যাকোব [ইয়া’কুব(আ.)] সেই পাথরটিকে স্তম্ভের মতো করে দাঁড় করান এবং ভক্তি ভরে তার ওপর তেল ঢালেন![18]
খ্রিষ্টান মিশনারীরা কা’বা ঘরের হাজরে আসওয়াদের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন, অথচ তাদের নিজ ধর্মগ্রন্থে Temple Mount বা বাইতুল মুকাদ্দাসের গোড়াপত্তনের সাথে একটি পাথর জড়িয়ে আছে সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব থাকেন। যাকোব [ইয়া’কুব(আ.)]কে তারাও নবী বলে মানেন। মুসলিমদের হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করা তাদের কাছে ‘পৌত্তলিক আচরণ’ হয়ে যায়, কিন্তু যাকোব কর্তৃক Temple Mount এর পাথরে ভক্তিভরে তেল ঢালা তাদের কাছে কোনো পৌত্তলিকতা হয় না।
কেন এই দ্বিমুখী আচরণ?
বাংলার নাস্তিক-মুক্তমনাদেরও কখনো দেখিনি এই ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে। অথচ মুসলিমদের বিরুদ্ধে সব সময়েই তাদের সরব দেখা যায়।
সেই পাথরটির (হিব্রুতে : Even Ha-Shetiya) ওপরেই বনী ইস্রাঈলের নবীগণের বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদ (Temple Mount) ছিল এবং হাজার হাজার বছর ধরে সেটা ইহুদিদের কিবলা। পাথরটি আজও সে স্থানে আছে। সেই পাথরের স্থানে ফিলিস্তিনে বাইতুল মুকাদ্দাস এরিয়ার ভেতরে বর্তমানে সোনালি গম্বুজের কুব্বাতুস সাখরা (Dome of Rock) মসজিদ রয়েছে।[19]
হজকে ব্যঙ্গ করে খ্রিষ্টান মিশনারিরা মুসলিমদের পাথরের উপাসক(!) বা ‘উল্কা উপাসক’ বলে অভিহিত করে, অথচ খোদ বাইবেলে বলা আছে যে ঈশ্বর একজন পাথর এবং বাইবেলে বহু জায়গায় “ঈশ্বর-পাথরের” বন্দনাগীত করা হয়েছে! এমনকি বাইবেলে এ কথাও বলা হয়েছে : “যাবতীয় প্রশংসা পাথরের”!!
অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? তাহলে দেখুনঃ বাইবেল এর --- ২ শামুয়েল(2 Samuel)২২:২-৩, ২২:৪৭; গীতসংহিতা(সাম সঙ্গীত/জবুর শরীফ/Psalms) ১৮:২, ১৮:৪৬, ১৯:১৪, ২৮:১, ৩১:২-৩, ৪২:৯, ৬২:২, ৬, ৭১:৩, ৯২:১৫, ১৪৪:১। প্রকৃতপক্ষে বাইবেল জুড়ে “পাথর-ঈশ্বরের” এত পরিমাণে বন্দনাগীত করা হয়েছে যে এর রেফারেন্স খুঁজে পাওয়া খুব সহজ। ইংরেজি বাইবেলের পিডিএফের সার্চ অপশনে গিয়ে ‘my rock’ লিখে সার্চ দিলে বহুবার “পাথর ঈশ্বরের” অথবা শুধু পাথরের প্রচুর বন্দনা পাওয়া যাবে। খ্রিষ্টান মিশনারীরা মুসলিমদেরকে ‘পাথরের উপাসক’ বলে মিথ্যা অপবাদ দেয় অথচ তাদের নিজ ধর্মগ্রন্থের অবস্থা এইরূপ।
◘ সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো ও শয়তানকে পাথর ছোড়া
পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে, আরব পৌত্তলিকদের করা ১০০% কাজই ভুল ছিল না। তারা ছিল ইব্রাহিম(আ.) ও ইসমাঈল(আ.) এর বংশধর। তাঁদের বংশধরদের মধ্যে পরবর্তীকালে বিভিন্ন নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় রীতি ও পৌত্তলিকতা বিস্তার লাভ করে। নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) তাদের মধ্য থেকে নব উদ্ভাবন ও পৌত্তলিকতাগুলো দূর করে দেন এবং ইব্রাহিমী রীতিগুলোকে আল্লাহর নির্দেশে বহাল রাখেন। সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো ও শয়তানকে পাথর ছোড়া—এগুলোও ইব্রাহিমী রীতি—যেগুলোকে মুহাম্মাদ(ﷺ) বহাল রেখেছিলেন। নবী ইব্রাহিম(আ.) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর স্ত্রী হাযেরা(আ.) এবং শিশুপুত্র ইসমাঈল(আ.)কে আরবের মরুভূমিতে রেখে এসেছিলেন এবং পিপাসার্ত শিশু ইসমাঈল(আ.) এর পানির জন্য তাঁর মা হাযেরা(আ.) সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার দৌড়েছিলেন।[20] এ ছাড়া, পুত্রকে কুরবানী করতে যাবার সময় ওয়াসওয়াসা দানকারী শয়তানের উদ্দেশ্যে নবী ইব্রাহিম(আ.) পাথর ছুড়েছিলেন।[21] ইব্রাহিম(আ.), হাযেরা(আ.), ইসমাঈল(আ.)—তাঁরা সকলেই তাকওয়া অবলম্বন করেছিলেন, আল্লাহর উদ্দেশে আত্মসমর্পণ ও ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। তাঁদের এই কর্মগুলোকেই মুহাম্মাদ(ﷺ) এর শরিয়তে হজের আনুষ্ঠানিকতার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করে চিরস্মরণীয় করে রাখা হয়েছে। এখানে আল্লাহ ছাড়া আর কারও উপাসনার কোনো ব্যাপার নেই। সাধারণ যুক্তির আলোকেও আমরা বলতে পারি—পৌত্তলিকরা কি কখনো তাদের উপাস্য দেবতার মূর্তিকে ঘৃণা করে বা পাথর ছোড়ে? নাকি তার উল্টো কাজ করে, মূর্তিকে ভক্তি করে এবং ফুল ও বিভিন্ন দ্রব্য দিয়ে পূজা করে? একই কথা সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানোর ক্ষেত্রেও। এখানে আল্লাহর বিধানের আনুগত্য ছাড়া মুসলিমদের মানসপটে আর কোনো কিছু থাকে না।
যারা হজের ভেতর বিভিন্ন প্রাচীন ঐতিহাসিক কর্মের অনুকরণমূলক কর্মকাণ্ডকে ‘পৌত্তলিকতা’ বলে, তাদের আসলে মিল্লাতে ইব্রাহিম [ইব্রাহিম(আ.) এর ধর্মাদর্শ] কিংবা পৌত্তলিকতা এর কোনোটা সম্পর্কেই সম্যক ধারণা নেই। মুহাম্মাদ(ﷺ) এর পূর্বেও অনেক নবী-রাসুল এসেছিলেন এবং তাঁরাও ইব্রাহিম(আ.) এর দ্বীনেরই তথা ইসলামের অনুসরণ করতেন। বনী ইস্রাঈল বংশে বহু নবী-রাসুল এসেছেন এবং প্রাচীন ইহুদিরা ছিল নবী-রাসুলদের অনুসারী। তাদের ধর্মেও ছিল হজের বিধান। তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো বিকৃত হলেও এখনো তাতে কিছু প্রাচীন বিধি-বিধান রক্ষিত আছে। তাদের ধর্মগ্রন্থে তিনটি হজের বিধান পাওয়া যায়।[22] তাদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী—বনী ইস্রাঈলের শরিয়তে হজের বিধানেও কিছু প্রাচীন প্রসিদ্ধ ঘটনার অনুকরণের নির্দেশ রয়েছে। ইহুদিদের কিতাব অনুযায়ী, মুসা(আ.) ও ফিরআউনের সময়ে মিসর ত্যাগ করে চলে যাবার আগে বনী ইস্রাঈলের মানুষেরা পশু কুরবানী করেছিল এবং তাড়াহুড়ার কারণে খাবার জন্য খামির (leaven) ছাড়া রুটি তৈরি করেছিল। এই ঘটনার স্মরণে ইহুদিরা তাদের ‘নিস্তার পর্ব’ [Pesach/Passover] pilgrimage এ পশু কুরবানী করত এবং খামিরবিহীন রুটি তৈরি করত। আজ পর্যন্ত ইহুদিরা এভাবেই Passover উদ্যাপন করে। মুসা(আ.) যখন বনী ইস্রাঈলকে নিয়ে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে যাত্রা করেছিলেন, তখন তারা সেই বিস্তীর্ণ যাত্রাপথে দীর্ঘকাল মরুভূমিতে খোলা আকাশের নিচে তাঁবুতে রাত কাটিয়েছেন। সেই ঘটনাকে স্মরণ করে ইহুদিরা তাদের Chag Sukkot বা Sukkot pilgrimage এ খোলা প্রান্তরে ছোট ছোট তাঁবুতে থাকে।[23] এমনকি বাইবেলের নতুন নিয়ম (New testament) অনুযায়ী যিশু খ্রিষ্ট তাওরাতের শরিয়তের সকল আইন অনুমোদন করেছেন এবং তিনি ইহুদিদের Pilgrimage feast উদ্যাপন করতেন।[24] মুসলিমরা যদি পৌত্তলিক(!) হয়, তাহলে তো যিশু খ্রিষ্টও পৌত্তলিক হয়ে যাচ্ছেন!
খ্রিষ্টান মিশনারিদের কখনো দেখা যায় না ইহুদিদের pilgrimage এ এই অনুকরণমূলক কাজগুলোকে ‘পৌত্তলিকতা’ বলতে, কেননা তাহলে যে তাদের নিজ ধর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ, খোদ যিশুখ্রিষ্ট যে এ সকল আচার-অনুষ্ঠান অনুমোদন করে গিয়েছেন। নাস্তিক-মুক্তমনাদেরকেও আর বাইবেলের pilgrimage নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় না; তাদের যত আপত্তি মুসলিমদের pilgrimage বা হজ নিয়ে।
পরিশেষে এটাই বলব যে, দ্বীন ইসলামের অন্যতম রুকন বা ভিত্তি হজ এর অনুষ্ঠানাদির মধ্যে পৌত্তলিকতার লেশমাত্রও নেই এবং তা বিশুদ্ধ একত্ববাদী ইব্রাহিমী রীতিনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। যারা হজের অনুষ্ঠানাদি নিয়ে প্রশ্ন তোলে, একরাশ অজ্ঞতা ও ডাবল স্ট্যান্ডার্ড প্রয়োগ ছাড়া তাদের দাবির কোনো সুদৃঢ় ভিত্তি নেই।
“বলো, আল্লাহ সত্য বলেছেন; অতএব তোমরা ইব্রাহিমের সুদৃঢ় ধর্মের অনুসরণ করো এবং সে মুশরিক (অংশীবাদী)দের অন্তর্গত ছিল না।
নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম গৃহ, যা মানবমণ্ডলীর জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা ওই ঘর (কা’বা) যা বাক্কায় (মক্কায়) অবিস্থত; ওটি সৌভাগ্যযুক্ত এবং সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। তাতে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে (যেমন) মাকামে ইব্রাহিম (ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গা)। যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে নিরাপদ হবে।
আল্লাহর জন্য উক্ত ঘরের হজ করা লোকেদের ওপর আবশ্যক—যার সে পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে; এবং যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে, (সে জেনে রাখুক) নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্বজাহানের মুখাপেক্ষী নন।
বলো হে কিতাবধারীরা (ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়), তোমরা কেন আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি অবিশ্বাস করছ? তোমরা যা করছ আল্লাহ সে বিষয়ে সাক্ষী।” [25]
তথ্যসূত্রঃ
[1]. দেখুন এই সাইটের আর্টিকেলঃ ‘কা’বা ঘরের ব্যাপারে ইসলামবিরোধীদের অভিযোগসমূহ ও তাদের খণ্ডন’
[2]. “The virtue of tawaaf around the sacred House” – islamQA(Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid )
https://islamqa.info/en/234172
[3]. আল কুরআন, হা-মিম সিজদাহ (ফুসসিলাত) ৪১ : ৩৭
[4]. আর রাহিকুল মাখতুম - শফিউর রহমান মুবারকপুরী(র.), [তাওহীদ পাবলিকেশন্স] পৃষ্ঠা ৬২ দ্রষ্টব্য
[5]. আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ১২৫
[6]. আল কুরআন, হাজ্জ ২২ : ২৬-২৯
[7]. ■ “Strong's Hebrew 2282. חָג (chag) -- a festival gathering, feast, pilgrim feast”
http://biblehub.com/hebrew/2282.htm
■ “What Are Pilgrimage Festivals _ My Jewish Learning”
http://www.myjewishlearning.com/article/pilgrimage-festivals/
■ “Balashon - Hebrew Language Detective chag”
http://www.balashon.com/2006/10/chag.html
অথবা https://web.archive.org/web/20191217144142/http://www.balashon.com/2006/10/chag.html
[8]. ■ “Strong's Hebrew 2328. חוּג (chug) -- to draw around, make a circle”
http://biblehub.com/hebrew/2328.htm
■ “Balashon - Hebrew Language Detective chag”
http://www.balashon.com/2006/10/chag.html
অথবা https://web.archive.org/web/20191217144142/http://www.balashon.com/2006/10/chag.html
[9]. The Christian's Biblical Guide to Understanding Israel - Insight Into God's Heart For His People By Doug Hershey; Page 49
[10]. নবী ইয়া’কুব(আ.) এর আরেক নাম ‘ইস্রাঈল’। তাঁর বংশধরদের বলা হয় ‘বনী ইস্রাঈল’। এই বংশে আল্লাহ তা’আলা ইউসুফ(আ.), মুসা(আ.), হারুন(আ.), দাউদ(আ.), সুলাইমান(আ.), যাকারিয়া(আ.), ইয়াহইয়া(আ.), ঈসা(আ.) সহ অনেক নবী-রাসুল প্রেরণ করেন। এই জাতির নবীদের সত্য দ্বীন বিকৃত হয়ে বর্তমানে ইহুদি ধর্মে পরিনত হয়েছে।
[11]. ■ “The Second Temple” (Jewish Virtual Library)
http://www.jewishvirtuallibrary.org/the-second-temple
■ “Similarities between Masjid al-Haram and the Jewish Temple | Judaism and Islam – comparing the similarities between Judaism and Islam”
http://www.judaism-islam.com/similarities-between-masjid-al-haram-and-the-jewish-temple/
[12]. “"Every day they would circle the altar one time and say, "We beseech you Hashem (God), redeem us, please; we beesech you Hashem, bring prosperity, please....And on that particular day, they would circle the altar seven times. ..."
[Mishnah Sukkah 4:5]
[13]. ■ The Islamic Jewish Calendar How the Pilgrimage of the 9th of Av became the Hajj of the 9th of Dhu'al-Hijjah by Joseph Katz & Ben Abrahamson
■ “The Second Temple” (Jewish Virtual Library)
http://www.jewishvirtuallibrary.org/the-second-temple
[14]. “ভেবো না যে আমি [যিশু] মোশির [মুসা (আ.)] বিধি-ব্যবস্থা ও নবীদের শিক্ষা ধ্বংস করতে এসেছি। আমি তা ধ্বংস করতে আসিনি বরং তা পূর্ণ করতেই এসেছি। আমি তোমাদের সত্যি বলছি আকাশ ও পৃথিবীর লোপ না হওয়া পর্যন্ত বিধি-ব্যবস্থার বিন্দু বিসর্গও লোপ হবে না, বিধি-ব্যবস্থার সবই পূর্ণ হবে। তাই কেউ যদি এইসব আদেশের মধ্যে অতি সামান্য আদেশও অমান্য করে আর অপরকে তা করতে শিক্ষা দেয়, তবে সে স্বর্গরাজ্যে সব থেকে তুচ্ছ বলে গন্য হবে। কিন্তু যাঁরা বিধি-ব্যবস্থা পালন করে ও অপরকে তা পালন করতে শিক্ষা দেয়, তারা স্বর্গরাজ্যে মহান বলে গন্য হবে। (বাইবেল, মথি(Matthew) ৫:১৭-১৯)
[15]. “Questions about the Black Stone” – islamQA (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
[16]. সহীহ বুখারী; হাদিস নং ১৫০২
[17]. আখবারুল মাক্কাহ (আযরাকী) ১/১১৬, দুররুল মানসুর ১/৭০৭
[18]. বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis/পয়দায়েশ) ২৮ : ১০-২২ দ্রষ্টব্য
[19]. ■ “Foundation Stone” (Wikipedia: The Free Encyclopedia)
https://en.wikipedia.org/wiki/Foundation_Stone#Jewish_significance
■“The Temple Institute: A CALL TO REMEMBER”
http://www.templeinstitute.org/a-call-to-remember.htm
অথবা https://web.archive.org/web/20191217144758/http://www.templeinstitute.org/a-call-to-remember.htm
[20]. সহীহ বুখারী, ৩১২৫ নং হাদিস দ্রষ্টব্য
[21]. ■ মুসনাদ আহমাদে ইবন আব্বাস (রা.) হতে একটি বর্ণনা রয়েছে যে, যখন ইব্রাহিম(আ.) স্বীয় সন্তানকে যবেহ করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শয়তান সামনে এসে হাযির হল । কিন্তু তিনি শয়তানকে পিছনে ফেলে অগ্রসর হলেন। অতঃপর জিবরাঈল(আ.)সহ জামরায়ে আকাবায় উপস্থিত হলেন। এখানেও শয়তান সামনে এলে তার দিকে তিনি ৭টি কংকর নিক্ষেপ করেন। তারপর তিনি জামরায়ে উসতার নিকট এসে পুনরায় শয়তানের দিকে ৭টি কংকর ছুঁড়ে মারেন। অতঃপর সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে ছেলেকে মাটিতে শায়িত করলেন। ঐ সময় ছেলের গায়ে সাদা রংয়ের জামা ছিল। তিনি পিতাকে জামাটি খুলে নিতে বললেন, যাতে ঐ জামা দ্বারা তাঁর কাফনের কাজ হয়। এহেন অবস্থায় পিতা হয়ে পুত্রের দেহ অনাবৃত করা অতি বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে। এমন সময় শব্দ এলোঃ “হে ইব্রাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যিই পালন করলে।” (আস সফফাত ৩৭ : ১০৪-১০৫) তখন তিনি পিছনে ফিরে একটি দুম্বা দেখতে পেলেন, যার শিং ছিল বড় বড় এবং দেখতে ছিল অতি সুন্দর।
ইবন আব্বাস (রা.) বলেনঃ এ জন্যই আমরা কুরবানীর জন্য এই প্রকারের দুম্বা পছন্দ করে থাকি। (মুসনাদ আহমাদ ১/২৯৭) আল মানাসিক কিতাবে হিশাম (র.) এর বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
[তাফসির ইবন কাসির, সূরা আস সফফাতের ১০৩-১১৩ আয়াতের তাফসির দ্রষ্টব্য]
■ The Ka'bah from the prophet Ibrahim till now By Fathi Fawzi Abd al-Mu'ti; page 11-12
[22]. ■ Jewish Tanakh, Shemot (Exodus), অধ্যায় ২৩ দ্রষ্টব্য
■ Three pilgrimage festivals(Wikipedia: The Free Encyclopedia)
https://en.wikipedia.org/wiki/Three_Pilgrimage_Festivals
[23]. ■ “3 Jewish Feasts of the Old Testament You Should Know”
http://www.seedbed.com/3-jewish-feasts-old-testament-know/
■ “Judaism 101—Sukkot”
http://www.jewfaq.org/holiday5.htm
■ “The 3 Annual Biblical Pilgrim Feasts”
http://www.bibletruth.cc/LetUsGoUp.htm
[24]. বাইবেল, মথি (Matthew) ৫:১৭-২০ এবং ২৬:১৭-১৮ দ্রষ্টব্য
[25]. আল কুরআন, আলি ইমরান ৩ : ৯৫-৯৮