নাস্তিক প্রশ্নঃ হাদিসে বলা আছে আল্লাহ নাকি শেষ রাতে নিকটতম আসমানে আসেন। আধুনিক যুগে আমরা জানি যে, সব সময়েই পৃথিবীর সব স্থানেই কখনো না কখনো ‘শেষ রাত’ চলে। তাহলে আল্লাহ কীভাবে শেষ রাতে অবতরণ করেন? আল্লাহ কি তাহলে সব সময়েই নিকটতম আসমানে থাকেন? তিনি তাহলে কখন ও কীভাবে আরশের উপরে থাকেন? এটা কি আদৌ কোন যৌক্তিক কথা?
উত্তরঃ মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের রব। তিনি শোনেন ও জানেন আমরা যা প্রকাশ করি আর যা গোপন করি। বান্দার কোনো ডাকই তাঁর জানার বাইরে নয়। তিনি সর্বাবস্থায় আমাদের আকুতি শোনেন। তবে কিছু সময় আছে যখন দু‘আ করলে তিনি সে ডাকে সাড়া দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তেমনই একটা সময়ের কথা আমরা জানতে পারি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)- এর একটি হাদিসে-
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْاخِرِ يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِىْ فَأَسْتَجِيبَ لَه مَنْ يَسْأَلُنِىْ فَأُعْطِيَه مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَه
অর্থঃ “প্রতি রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে তখন আমাদের মহিমান্বিত মহা-কল্যাণময় প্রতিপালক নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন। তিনি বলেন: আমাকে ডাকার কেউ আছ কি? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে প্রদান করব। আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব।” [1]
আসমান ও জমীনের রব হয়েও আল্লাহ তা‘আলার বান্দাকে এভাবে ডাকাটা একজন মুমিনের হৃদয়কে বিগলিত করে দেয়। তবে অন্ধকারে যাদের বসবাস, তারা সবকিছুতেই অন্ধকার খুঁজে বেড়ায়। তাই এ হাদিস নিয়েও তাদের কুযুক্তির শেষ নেই।
চলুন দেখা যাক, আলেমরা এ হাদিস সম্পর্কে কী বলেছেন।
মুহাদ্দিসগণ এই হাদিসকে আল্লাহ তা’আলার সিফাত (গুণ/বিশেষণ) বিষয়ক হাদিস হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম তিরমিযী (র.) বলেনঃ
“… এই হাদিস এবং আরো এই ধরণের যে সমস্ত হাদিসে আল্লাহর সিফাত বা প্রত্যেক রাতে পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে আল্লাহ তা'আলার অবতরণ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। সে সকল হাদিস সম্পর্কে একাধিক বিশেষজ্ঞ আলিমের বক্তব্য হল যে, এই ধরণের রিওয়ায়াত সমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত। এগুলো সম্পর্কে বিশ্বাস রাখতে হবে। এই সব বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা যাবে না এবং তা কী ধরণের সে সম্পর্কেও প্রশ্ন করা যাবে না। ইমাম মালিক ইবন আনাস, সুফিয়ান ইবন উআয়না, আবদুল্লাহ ইবন মুবারক (র.) প্রমূখ ইমামদের থেকে এই ধরণের বক্তব্য বর্ণিত আছে। এই ধরণের হাদিসগুলো সম্পর্কে তাঁরা বলেন, “কী ধরণের?” - সে প্রশ্ন না তুলে যেভাবে উল্লিখিত হয়েছে সেভাবেই তা মেনে নাও। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আলিমগণ এ অভিমতই পোষণ করেন। কিন্তু জাহমিয়া সম্প্রদায় এই সমস্ত রিওয়ায়াত অস্বীকার করে ; তারা বলে, এগুলো তা হল উপমাবোধক। … এটি এমন, যেমন আল্লাহ তা'আলা তাঁর কিতাবে ইরশাদ করেছেনঃ "কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয় ; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা” (৪২ : ১১)।[2]
অতএব, মহান আল্লাহর অন্য একটি বিশেষণ ‘নুযুল' বা অবতরণ। এ সিফাত বা বিশেষণটিকে কিছু প্রাচীন পথভ্রষ্ট ফির্কা জাহমিয়া ও মুতাযিলারা অস্বীকার করতো। তাদের বক্তব্যঃ স্থান পরিবর্তন আল্লাহর অতুলনীয়ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি আরশ থেকে অবতরণ করলে আরশ কি শূন্য থাকে? তারা আরো বলেঃ অবতরণ অর্থ নৈকট্য বা বিশেষ করুণা।[3]
নাস্তিকদের প্রশ্নও এই পথভ্রষ্ট ফির্কাগুলোর ন্যায়। প্রকৃতপক্ষে মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করে চিন্তা করাটাই একটা ভুল চিন্তা। স্রষ্টা আর সৃষ্টি কখনো এক নয়, স্রষ্টা ও সৃষ্টির ক্ষেত্রে একই স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে চিন্তা করাটা একটা ত্রুটিপূর্ণ ও দূষিত চিন্তা।
আল্লাহ তা’আলার গুণাবলী সম্পর্কে ইমাম আবু জাফর তহাবী(র.) বলেনঃ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মানবীয় কোনো গুণ আরোপ করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি এতে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে সে শিক্ষা নিতে সক্ষম হবে। আর (আল্লাহ সম্পর্কে) কাফিরদের মত নিরর্থক কথা বলা হতে বিরত থাকবে এবং সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর গুণাবলীতে মানুষের মতো নন। ” [4]
কাজেই আল্লাহ তা’লাকে মানুষ বা সৃষ্টিজগতের মাত্রা বা dimension থেকে চিন্তা করাটা কোন ইসলামী বিশ্বাস নয়। আল্লাহ তা’আলার গুণাবলীর ব্যাপারে ইসলামী বিশ্বাস কী?
প্রসিদ্ধ তাবি-তাবিয়ী মুহাদ্দিস ওয়ালীদ ইবন মুসলিম(র.) [১৯৫ হি.] বলেনঃ
سألت الأوزاعي ومالكا والثوري والليث بن سعد عن الأحاديث التي فيها الصفة فقالوا أمروها كما جاءت بلا كيف
“ইমাম আওযায়ী(র.) [১৫৭ হি.], ইমাম মালিক ইবন আনাস(র.) [১৭৯ হি.], ইমাম সুফিয়ান সাওরী(র.) এবং ইমাম লাইস ইবন সা'দ(র.) [১৭৫ হি.]-কে আমি মহান আল্লাহর বিশেষণ (সিফাত) বিষয়ক হাদিসগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তখন তাঁরা বলেন: এগুলো যেভাবে এসেছে সেভাবেই চালিয়ে নাও; কোনোরূপ স্বরূপ-প্রকৃতি নির্ণয় ব্যতিরেকে।” [5]
ইমাম আবু হানিফার(র.) অন্যতম প্রধান ছাত্র প্রসিদ্ধ তাবি-তাবিয়ী ফকীহ ও মুহাদ্দিস ইমাম মুহাম্মাদ ইবন হাসান শাইবানী(র.) [১৮৯ হি.] বলেন:
“পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সকল দেশের ফকীহগণ সকলেই একমত যে, মহান আল্লাহর বিশেষণ (সিফাত) সম্পর্কে কুরআন এবং রাসুলুল্লাহ(ﷺ) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীসগুলোকে বিশ্বাস করতে হবে, কোনোরূপ পরিবর্তন, বিশেষায়ন এবং তুলনা ব্যতিরেকে। যদি কেউ বর্তমানে সেগুলোর কোনো কিছু ব্যাখ্যা করে তবে সে রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর পথ ও পদ্ধতি পরিত্যাগকারী এবং উম্মতের পূর্বসূরীদের ইজমার (ঐকমত্যের) বিরোধিতায় লিপ্ত । কারণ তারা এগুলোকে বিশেষায়িত করেন নি এবং ব্যাখ্যাও করেন নি। বরং তারা কুরআন ও সুন্নাহতে যা বিদ্যমান তার ভিত্তিতে ফাতওয়া দিয়েছেন এবং এরপর নীরব থেকেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি জাহম [জাহমিয়া ফির্কার প্রতিষ্ঠাতা]-এর মত গ্রহণ করবে সে সাহাবী-তাবিয়ীগণের ঐকমত্যের পথ পরিত্যাগ করবে; কারণ সে মহান আল্লাহকে নেতিবাচক ও অবিদ্যমানতার বিশেষণে বিশেষিত করে।” [6]
আহলুস সুন্নাতের ইমামগণ অন্যান্য বিশেষণের মত আল্লাহ তা’আলার ‘অবতরণ’ সিফাতটিকেও তুলনামুক্তভাবে মেনে নেন। তিনি যখন এবং যেভাবে ইচ্ছা অবতরণ করেন। তাঁর অবতরণ কোনোভাবেই কোনো সৃষ্টির অবতরণের মত নয়। তাঁর অবতরণের স্বরূপ ও প্রকৃতি কি তা আমরা জানি না এবং জানার চেষ্টাও করি না। ইমাম আবু হানিফা(র.)কে মহান আল্লাহর অবতরণ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তরে বলেন:
ينزل بلا كيف
“[মহান আল্লাহ] অবতরণ করেন, কোনোরূপ পদ্ধতি বা স্বরূপ ব্যতিরেকে।” [7]
সহীহ বুখারীতে সিফাত-সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র.) এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন ইবন রজব হাম্বলী(র.) ---
“…আমি আবু আব্দুল্লাহকে [আহমাদ বিন হাম্বল(র.)] বললাম, “আল্লাহ কি দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। আমি বললাম, “তাঁর অবতরণ কি ইলম (জ্ঞান) দিয়ে অথবা কী দিয়ে?” তিনি বললেন, “এই বিষয়ে চুপ করো। তোমার কী দরকার এ বিষয়ে? হাদিসে যেভাবে ‘কীভাবে’ বা সীমা ছাড়া বর্ণিত হয়েছে সেভাবে মেনে নাও। তবে কোন আছার বা হাদিস যদি বর্ণিত হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। অথবা যদি কিতাবে বর্ণিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, “অতএব, আল্লাহর কোন সদৃশ সাব্যস্ত করো না।” (সুরা নাহল ১৬ : ৭৪) ” ” এর পরে ইবন রজব হাম্বলী(র.) উল্লেখ করেছেন, “ [আল্লাহর] ‘অবতরণ’ বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে, তার উপর নড়াচড়া, স্থানান্তর, আরশ থেকে খালি হওয়া, না থাকা এ সকল কিছু সাব্যস্ত করা বিদআত। এ ব্যপারে গভীরে অনুসন্ধান করা কোনো প্রশংসনীয় কাজ নয়। ” [8]
কুরআনে এটিও বলা আছে যে আল্লাহ তা’আলা আরশের উপর উঠেছেন (ইস্তাওয়া)।
الرَّحْمَٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ
“পরম করুণাময় [আল্লাহ], আরশের উপর উঠেছেন (ইস্তাওয়া)।” [9]
এর ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল(র.) বলতেন—
“মহান আল্লাহ আরশের ঊর্ধ্বে ইস্তাওয়া করেছেন। 'ইস্তাওয়া' অর্থ তিনি এর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ আরশ সৃষ্টির পূর্ব থেকেই সব কিছুর ঊর্ধ্বে। তিনি সকল কিছুর ঊর্ধ্বে এবং সকল কিছুর উপরে। এখানে আরশকে উল্লেখ করার কারণ আরশের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কিছুর মধ্যে নেই। তা হলো আরশ সবচেয়ে মর্যাদাময় সৃষ্টি এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে। মহান আল্লাহ নিজের প্রশংসা করে বলেছেন যে, তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত, অর্থাৎ তিনি আরশের ঊর্ধ্বে। আরশের উপর অধিষ্ঠানের অর্থ আরশ স্পর্শ করে অবস্থান করা নয়। মহান আল্লাহ এরুপ ধারনার অনেক ঊর্ধ্বে। ” [10]
ইমাম আবু হানিফা(র.) তাঁর ‘ওসীয়াত' গ্রন্থে লিখেছেন -
“আমরা স্বীকার ও বিশ্বাস করি যে, মহান আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন, আরশের প্রতি তাঁর কোনোরূপ প্রয়োজন ব্যতিরেকে এবং আরশের উপরে স্থিরতা-উপবেশন ব্যতিরেকে। তিনি আরশ ও অন্য সবকিছুর সংরক্ষক। তিনি যদি আরশের মুখাপেক্ষী হতেন তাহলে বিশ্ব সৃষ্টি করতে ও পরিচালনা করতে পারতেন না, বরং তিনি মাখলুকের মত পরমুখাপেক্ষী হতেন। আর যদি তাঁর আরশের উপরে উপবেশন করার প্রয়োজনীয়তা থাকে তবে আরশ সৃষ্টির পূর্বে তিনি কোথায় ছিলেন? কাজেই আল্লাহ এ সকল বিষয় থেকে পবিত্র ও অনেক অনেক উর্ধ্বে।”[11]
ইমাম আযম আবু হানিফার(র.) এ বক্তব্য উল্লেখ করে মোল্লা আলী কারী হানাফী(র.) বলেন: “এ বিষয়ে ইমাম মালিক (র.) খুবই ভাল কথা বলেছেন। তাঁকে আল্লাহর আরশের উপরে ওঠা (ইস্তাওয়া) বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন:
الاستواء معلوم والكيف مجهول والسؤال عنه بدعة والإيمان به واجب
“ইস্তাওয়া পরিজ্ঞাত, এর পদ্ধতি বা স্বরূপ অজ্ঞাত, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদ'আত এবং এ বিষয় বিশ্বাস করা জরুরী।”[12]
আল্লাহর সত্তা যেমন সৃষ্টির মত নয়, তেমনি তার বিশেষণাবলিও সৃষ্টির মত নয়। সকল মানবীয় কল্পনার উর্ধ্বে তাঁর সত্তা ও বিশেষণ। কাজেই মহান আল্লাহর আরশের উপরে ওঠা (ইস্তাওয়া) এবং নিকটতম আসমানে অবতরণ (নুযুল) উভয়ই সত্য এবং মুমিন উভয়ই বিশ্বাস করেন। উভয়ের মধ্যে বৈপরীত্য কল্পনা করা মানবীয় সীমাবদ্ধতার ফসল। তদুপরি জাহমিয়াদের এ বিভ্রান্তি দূর করতে ইমামগণ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম মালিক(র.) বলেন:
الله في السماء وعلمه في كل مكان لا يخلو من علمه مكان
“আল্লাহ আসমানে (উর্ধ্বে) এবং তার জ্ঞান সকল স্থানে। কোনো স্থানই মহান আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়।” [13]
ইমাম আযম আবু হানিফা(র.) থেকেও অনুরূপ বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন ইমাম বাইহাকী(র.)।[14]
ইমাম কুতাইবাহ বিন সা'ঈদ রহিমাহুল্লাহ (মৃ ২৪০ হি.) বলেন:
هذا قول الائمة في الإسلام والسنة والجماعة: نعرف ربنا في السماء السابعة على عرشه ، كما قال جل جلاله: (الرحمن على العرش استوى)
অর্থঃ “এটাই হচ্ছে ইসলামের এবং আস-সুন্নাহ ওয়াল জাম'আতের ইমামদের বক্তব্য যে: আমরা আমাদের রবকে সপ্তম আসমানে আরশের উপর আছেন বলে জানি, যেমন মহিমাময় প্রতাপশালী বলেছেন: "পরম করুণাময় [আল্লাহ], আরশের উপর উঠেছেন।" [সুরা ত্ব-হা ৫]।[15]
ইমাম আবু নাসর আস-সিজযি রহিমাহুল্লাহ (৪৪৪ হি.) তাঁর "কিতাবুল ইবানাহ" তে বলেন:
فأئمتنا كسفيان الثوري ومالك وسفيان بن عيينة وحماد بن سلمة وحماد بن زيد وعبد الله بن المبارك وفضيل بن عياض وأحمد بن حنبل وإسحاق بن إبراهيم الحنظلي متفقون على أن الله سبحانه بذاته فوق العرش وان علمه بكل مكان وانه يرى يوم القيامة بالأبصار فوق العرش وأنه ينزل إلى سماء الدنيا وأنه يغضب ويرضى ويتكلم بما شاء فمن خالف شيئا من ذلك فهو منهم بريء وهم منه براء
অর্থঃ "এবং আমাদের ইমামগণ যেমন সুফিয়ান আস-সাওরি, মালিক, সুফিয়ান বিন 'উয়াইনাহ, হাম্মাদ বিন সালামাহ, হাম্মাদ বিন যায়দ, আব্দুল্লাহ বিন আল-মুবারক, ফুদ্বাইল বিন 'ইয়াদ্ব, আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক বিন ইব্রাহিম আল-হানযালি (রহিমাহুমুল্লাহ) এই ব্যাপারে একমত আছেন যে, মহামহিম আল্লাহ তাঁর সত্তাসহ আরশের উপরে আছেন এবং তাঁর জ্ঞান সকল স্থানে রয়েছে এবং তাঁকে কিয়ামতের দিন আরশের উপরে চক্ষুসমূহ দ্বারা দেখা যাবে এবং তিনি নিকটবর্তী আসমানে অবতরন করেন এবং তিনি রাগান্বিত হন, যা চান তা দ্বারা কথা বলেন। সুতরাং, যারা এর কোন কিছু বিরোধিতা করবে, সে তাদের থেকে মুক্ত (সম্পর্কবিহীন) এবং তারা তার থেকে মুক্ত।" [16]
এ সকল দলিল ও ইজমার আলোকে দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের ফতোয়ায় বলা হয়েছেঃ
اللہ تعالیٰ عرش پر ہے، عرش پر ہوتے ہوئے ہرجگہ ہے یعنی سب چیز اس کی قدرت اور احاطہٴ علم کے اندر ہے اس کے احاطہٴ علم اور احاطہٴ قدرت سے باہر نہیں ہے، تمام مفسرین نے لکھا ہے کہ اللہ تعالیٰ ہی جانتا ہے کہ وہ عرش پر کس طرح ہے جو اس شایانِ شان ہے اسی طرح عرش پر ہے ، ہمیں اس کا علم نہیں، نہ ہمیں اس ٹوہ میں پڑنا چاہیے، بس ایمان رکھنا چاہیے۔
অর্থঃ “আল্লাহ তা'আলা আরশের উপর আছেন। আরশের উপর থেকেই তিনি সর্বত্র বিরাজমান, অর্থাৎ তাঁর জ্ঞান ও কুদরাতের গণ্ডিতেই সব কিছু । কোনো কিছুই তাঁর আয়ত্বের বাহিরে নয়। সকল মুফাসসিরের মতে আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন, তিনি আরশের উপর কিভাবে আছেন। তিনি তাঁর শান মোতাবেক আছেন। যার আকার বা ধারণা আমাদের অজানা। আমাদের এ ব্যাপারে কোনো ইলম নেই। আর এসব বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি না করা উচিৎ। ব্যস, ইমান রাখাই যথেষ্ট আমাদের জন্য।” [17]
আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
اللَّهُ الصَّمَدُ
অর্থঃ “আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন।” [18]
ইমাম আবু জাফর তহাবী(র.) বলেনঃ
“আর ‘আরশ এবং কুরসী সত্য। আর আল্লাহ তা‘আলা ‘আরশ ও অন্যান্য বস্তু থেকে অমুখাপেক্ষী। তিনি সমস্ত বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি সব কিছুরই উর্ধ্বে। সৃষ্টিজগত তাঁকে পূর্ণভাবে আয়ত্ব করতে অক্ষম।” [19]
আল্লাহ তা’আলা স্থান ও সময়ের স্রষ্টা।[20] তিনি এগুলোর মুখাপেক্ষী নন এবং তিনি এগুলোর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। কাজেই আল্লাহ তা’আলার জন্য এটা খুবই সহজ যে আল্লাহ তা’আলা আরশের উপরে থাকবেন এবং শেষ রাতে নিকটতম আসমানে অবতরণ করবেন। পৃথিবীর কোথাও না কোথাও সব সময়ে শেষ রাত থাকলেও আল্লাহ তা’আলার জন্য তা কঠিন কিছু নয়। আল্লাহ তা’আলার আরশের ঊর্ধ্বারোহন কিংবা শেষ আসমানে অবতরন মোটেও মানুষ বা অন্য কোন সৃষ্টির মত নয়। নাস্তিক-মুক্তমনা কিংবা পথভ্রষ্ট বিদআতী আকিদার মানুষেরা সৃষ্টির সাথে আল্লাহ তা’আলার গুণাবলীকে মিলিয়ে ফেলে ত্রুটিপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা’আলার সিফাত সংক্রান্ত হাদিসে কোনো প্রকারের অসঙ্গতি বা অযৌক্তিক কিছু নেই।
এবং আল্লাহই ভালো জানেন।
এ ব্যাপারে আরো জানতে দেখুনঃ
আল্লাহ শেষরাতে একই সাথে আসমানে ও আরশে কীভাবে থাকেন?
আল্লাহ শেষ রাতে একই সাথে আসমানে ও আরশে কীভাবে থাকেন?
https://youtu.be/xRKZuwUOVR4
শেষরাতে আল্লাহ একই সাথে আসমানে ও আরশে কীভাবে থাকেন?
https://youtu.be/rwuqv6Rk5sk
তথ্যসূত্রঃ
[1] সহীহ বুখারী ১/৩৮৪; সহীহ মুসলিম ১/৫২২
[2] তিরমিযী শরীফ, ৩য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ৬৫৯ নং হাদিসের আলোচনা, পৃষ্ঠা ৪০
[3] ইমাম আবু হানিফা(র.) এর ‘ফিকহুল আকবার’ বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা – ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর(র.), পৃষ্ঠা ২৬৩
[4] আকিদা তহাবিয়া - ইমাম আবু জাফর তহাবী(র.), আকিদা নং ৩৪
[5] ইবন হাজার আসকালানী(র.), ফাতহুল বারী ১৩/৪০৭
[6] সায়িদ নাইসাপূরী, আল-ই'তিকাদ, পৃ. ১৭০; লালকায়ী, ই'তিকাদ ৩/৪৩২; যাহাবী, আল-উলু, পৃ. ১৫৩
[7] বাইহাকী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ২৩৮০; মোল্লা আলী কারী আল হানাফী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ৬৯
[8] ফাতহুল বারী - ইবন রজব হাম্বলী(র.), ৯ম খণ্ড, ২৮০-২৮১ পৃষ্ঠা
[9] আল কুরআন, ত্ব-হা ২০ : ৫
[10] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র.), আল-আকিদাহ, আবু বকর খাল্লালের বর্ণনা; পৃষ্ঠা ১০২-১১১
[11] ইমাম আবু হানিফা(র.), আল-ওয়াসিয়্যাহ, পৃ. ৭৭
[12] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ৭০
[13] আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ, আস-সুন্নাহ ১/১০৭, ১৭৪, ২৮০; আজুররী, আশ-শরীয়াহ ২২২৪-২২৫; আব্দুল বার, আত-তামহীদ ৭/১৩৮
[14] বাইহাকী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ২/৩৩৭-৩৩৯
[15] আল-উলু' - ইমাম যাহাবী(র.), বর্ণনা: ৪৭০
[16] দেখুন, দারউত তাআরুদ ৬/২৫০ এবং এ থেকে যাহাবী উদ্ধৃত করেছেন তাঁর সিয়ার ১৭/৬৫৬ এ
[17] দারুল উলুম দেওবন্দের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ফতোয়াটি দেখা যেতে পারেঃ
http://www.darulifta-deoband.com/home/ur/Islamic-Names/155436
[18] আল কুরআন, ইখলাস ১১২ : ২
[19] আকিদা তহাবিয়া - ইমাম আবু জাফর তহাবী(র.), আকিদা নং ৪৯-৫১
[20] বিস্তারিত দেখুনঃ “He is asking about time is it created Will it exist in Paradise Will time cease to exist” – islamQa (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)