অভিযোগঃ
ইসলামে যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস-দাসীতে রূপান্তরিত করা যায় এবং ইসলাম অনুযায়ী দাসীকে ধর্ষণ করা একটি অনুমোদিত বিষয়।
জবাবঃ
ইসলামে দাসপ্রথাকে পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হয়নি, মানসুখ করা হয়নি। [1] কিন্তু পৌত্তলিক যুগে যে ধরণের বর্বর দাসপ্রথা ছিল ইসলাম একে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং দাসপ্রথাকে এক নতুন অর্থ ও নতুন রূপ দেয়া হয়েছে। [2] ইসলামে দাসীর সঙ্গে স্ত্রীরূপ আচরণকেও বৈধ করা হয়ছে। [3] পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতায় বহু প্রাচীনকাল থেকেই দাসপ্রথা ছিল। ইসলাম দাসপ্রথার সূচনাকারী না, বরং সংস্কারকারী। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বৈশ্বিক ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ইসলাম একে সম্পূর্ণরূপে উচ্ছেদ করেনি, কিন্তু ইসলাম ব্যাপকভাবে দাসমুক্ত করায় উৎসাহ প্রদান করে ও দাস বানানোর অধিকাংশ উৎস বন্ধ করে দিয়ে একে হ্রাস করেছে। [4] ইসলামের এই বিধানকে পৌত্তলিক যুগের এবং অন্যান্য নানা সভ্যতার মাঝে প্রচলিত দাসপ্রথার সাথে তুলনা করে ইসলামবিরোধীরা এই বিষয়টি নিয়ে অপপ্রচার চালায়। এই প্রবন্ধে ইসলামে দাসপ্রথার এই দিকটি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে যেখানে তারা দাবি করে ইসলামে দাসীর সাথে অমানবিক আচরণ ও ধর্ষণের অনুমোদন আছে।
১। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় ‘ধর্ষণ’ কাকে বলে?
‘ধর্ষণ’ প্রসঙ্গে অভিধানে বলা হয়েছে,
وَفِي لِسَان الْعَرَب: وَقد تَكَرَّر ذِكْرُ الغصْب فِي الحَدِيث، وَهُوَ أَخْذُ مَالِ الغَيْرِ ظُلْماً وعُدُواناً. وَفِي الحَدِيثِ (أَنَّه غصَبَها نَفْسَها) أَرادَ أَنَّه وَاقَعها كُرْها فاسْتَعَارَه لِلْجِمَاع.
অর্থঃ "লিসানুল আরব"-এ বলা হয়েছে, হাদিসে "غَصْب" (জবরদখল বা বলপ্রয়োগ) বারবার এসেছে, এবং এটি অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ও জোরপূর্বক গ্রহণ করাকে বোঝায়।
একটি হাদিসে এসেছে: "أنه غصَبَها نَفْسَها" এর অর্থ হলো, “সে তার সাথে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস করেছিল (বা ধর্ষণ করেছিল) ” ; এবং এখানে সহবাস বোঝাতে শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। [5]
ইসলামী শরিয়তে ধর্ষণকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় –
“একজন পুরুষের দ্বারা একজন নারীর সাথে জোরপূর্বক অবৈধ যৌন সঙ্গম, যেখানে নারী তার সাথে বৈধভাবে বিবাহিত নয় এবং তার স্বাধীন ইচ্ছা ও সম্মতি ছাড়াই এটি সংঘটিত হয়।” [6]
ইসলামী দণ্ডবিধিতে ধর্ষণকে জবরদস্তিমূলক ব্যাভিচারের আওতায় ফেলা হয়। [7] স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ক্ষেত্রে ‘ধর্ষণ’ শব্দটির প্রয়োগ হয় না। কেননা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জন্য বৈধ এবং স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ক্ষেত্রে ব্যাভিচার কথাটি প্রযোজ্য হয় না। [8] বৈধ দাসীর ক্ষেত্রেও একই কথা। তাদের সহিত সহবাসের ক্ষেত্রে জুলুমের প্রসঙ্গ আসতে পারে এবং ইসলামে কোনো প্রকার জুলুম অনুমোদিত নয়। শরিয়তে স্ত্রীর যৌন অধিকার এবং স্ত্রীর সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে জুলুমের অবসানে ইসলামের অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। [9] এই প্রবন্ধে আমরা দেখব ইসলামে বৈধ দাসীর সঙ্গে সহবাস প্রসঙ্গে জুলুমের অভিযোগের আদৌ কোনো বাস্তবতা আছে কিনা।
২। অন্যের মালিকানাধীন দাসীঃ
অন্যের মালিকানাধীন দাসী ধর্ষণের শাস্তি প্রসঙ্গে ইমাম মালিক(র.) এর মুয়াত্তা গ্রন্থে “بَاب الْقَضَاءِ فِي الْمُسْتَكْرَهَةِ مِنْ النِّسَاءِ” {কোন স্ত্রীলোকের সাথে জবরদস্তি যিনা করিলে তাহার ফয়সালা} এই শিরোনামের পরিচ্ছেদে উল্লেখ আছে,
الْأَمْرُ عِنْدَنَا فِي الرَّجُلِ يَغْتَصِبُ الْمَرْأَةَ بِكْرًا كَانَتْ أَوْ ثَيِّبًا إِنَّهَا إِنْ كَانَتْ حُرَّةً فَعَلَيْهِ صَدَاقُ مِثْلِهَا وَإِنْ كَانَتْ أَمَةً فَعَلَيْهِ مَا نَقَصَ مِنْ ثَمَنِهَا وَالْعُقُوبَةُ فِي ذَلِكَ عَلَى الْمُغْتَصِبِ وَلَا عُقُوبَةَ عَلَى الْمُغْتَصَبَةِ فِي ذَلِكَ كُلِّهِ وَإِنْ كَانَ الْمُغْتَصِبُ عَبْدًا فَذَلِكَ عَلَى سَيِّدِهِ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ أَنْ يُسَلِّمَهُ
অর্থঃ “আমাদের নিকট এই ফয়সালা যে, যদি কেহ কোন স্ত্রীলোকের উপর জবরদস্তি করে, চাই সে কুমারী হউক অথবা অকুমারী, যদি সে স্বাধীন হয় তবে তাহাকে মাহরে মিসাল দেওয়া আবশ্যক।
আর যদি যে দাসী হয় তবে যিনার দ্বারা যে মূল্য কম হইয়াছে তাহা আদায় করিতে হইবে এবং ব্যভিচারীর শাস্তিও সঙ্গে সঙ্গে হইবে এবং উক্ত স্ত্রীলোকের উপর কোন শাস্তিও হইবে না। আর যদি ব্যভিচারী গোলাম হয় তবে মনিবের জরিমানা দিতে হইবে। কিন্তু যদি গোলামকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিয়া দেয় তবে ভিন্ন কথা।” [10]
এ প্রসঙ্গে ইমাম শাফিঈ(র.) এর ‘আল উম্ম’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে—
وَإِذَا اغْتَصَبَ الرَّجُلُ الْجَارِيَةَ ثُمَّ وَطِئَهَا بَعْدَ الْغَصْبِ وَهُوَ مِنْ غَيْرِ أَهْلِ الْجَهَالَةِ أُخِذَتْ مِنْهُ الْجَارِيَةُ وَالْعُقْرُ وَأُقِيمَ عَلَيْهِ حَدُّ الزِّنَا
অর্থঃ “যদি কোনো ব্যক্তি একজন দাসীকে জোরপূর্বক অধিকার করে এবং তারপর সেই দাসীর সাথে (জোরপূর্বক) সহবাস করে, আর সে যদি অজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত না হয় (অর্থাৎ, সে যদি এই কাজের নিষিদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন থাকে), তাহলে সেই দাসীকে তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে, তার উপর ক্ষতিপূরণের অর্থ ধার্য করা হবে এবং তার ওপর ব্যভিচারের হদ্দ শাস্তি কার্যকর করা হবে।” [11]
ইমাম ইবনু কুদামা মাকদিসি(র.) তাঁর সুবিখ্যাত ‘আল মুগনী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন—
أَنَّ الْغَاصِبَ إذَا وَطِئَ الْجَارِيَةَ الْمَغْصُوبَةَ، فَهُوَ زَانٍ؛ لِأَنَّهَا لَيْسَتْ زَوْجَةً لَهُ وَلَا مِلْكَ يَمِينٍ، فَإِنْ كَانَ عَالِمًا بِالتَّحْرِيمِ، فَعَلَيْهِ حَدُّ الزِّنَى؛ لِأَنَّهُ لَا مِلْكَ لَهُ، وَلَا شُبْهَةَ مِلْكٍ، وَعَلَيْهِ مَهْرُ مِثْلِهَا، سَوَاءٌ كَانَتْ مُكْرَهَةً أَوْ مُطَاوِعَةً.
অর্থঃ “যদি কোনো জোরপূর্বক দখলকারী ব্যক্তি কোনো দাসীর সাথে (জোরপূর্বক) সহবাস করে, তবে সে একজন ব্যভিচারী। কারণ, সে তার স্ত্রী নয় এবং মালিকানাধীনও নয়। যদি সে এই কাজের নিষিদ্ধতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকে, তবে তার উপর ব্যভিচারের নির্ধারিত শাস্তি (হাদ্দ) প্রযোজ্য হবে। কারণ, তার মালিকানা নেই এবং কোনো ধরনের মালিকানার (আইনগত) সন্দেহও নেই। এছাড়া, তাকে ঐ দাসীর উপযুক্ত দেনমোহর (মাহর) প্রদান করতে হবে, তার সাথে বাধ্য হয়েই (সহবাস করা) হোক বা সম্মতিতে হোক।” [12]
পূর্বযুগের উলামাদের ফিকহী আলোচনাগুলো থেকে স্পষ্ট হল ইসলামে দাসী ধর্ষণকে অনুমোদন দেয়া তো দূরের কথা, এর বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তবে এই আলোচনাগুলো কেউ যদি অন্যের মালিকানাধীন দাসীকে ধর্ষণ করে এই প্রসঙ্গে। ইসলামী শরিয়ত অনুসারে কেউ নিজ মালিকানাধীন দাস-দাসীর সঙ্গে জুলুমমূলক আচরণ করতে পারে কিনা এ ব্যাপারে নিম্নে আলোচনা করা হল।
৩। নিজ মালিকানাধীন দাসীঃ
৩.১। যুদ্ধবন্দী মানেই কি ‘যৌনদাসী’?
ইসলামী শরিয়ত অনুসারে কেউ যুদ্ধবন্দী হলেই যে “দাস-দাসী” হয়ে যায় বা তার সাথে সহবাস করা হয় বিষয়টা এমন না। ইসলামী শরিয়ত অনুসারে মুসলিমদের আমির যুদ্ধবন্দীদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে পারেন, শত্রুদের সাথে বন্দী বিনিময় করতে পারেন, যুদ্ধবন্দীদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা দাস-দাসীতে পরিণত করতে পারেন। [13] পরিবেশ-পরিস্থিতি ও সার্বিক কল্যাণ বিবেচনা করে মুসলিম আমির এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। আবার ইসলামী শরিয়ত অনুসারে কারো অধীনে দাসী থাকলেই যে সে তার সাথে স্ত্রীরূপ আচরণ করে বা তার সহবাস করে বিষয়টা মোটেও এমন না। কারো অধীনে দাস-দাসী থাকলে তারা সাধারণ গৃহকর্মীদের ন্যায় এমনকি পরিবারের সদস্যের ন্যায় থাকতে পারে, যাদের মর্যাদা হবে তার মনিবের ভাইয়ের মতো (বা নারী হলে বোনের মতো)। মনিব নিজে যা খাবেন, তার দাসকেও তাই খেতে দেবেন, নিজে যা পরবেন, দাসকেও তাই পরতে দেবেন। দাসের উপর কঠিন পরিশ্রমের কাজ চাপিয়ে দেয়া বা কষ্ট দেয়াকে ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
عَنِ الْمَعْرُورِ، قَالَ لَقِيتُ أَبَا ذَرٍّ بِالرَّبَذَةِ، وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ، وَعَلَى غُلاَمِهِ حُلَّةٌ، فَسَأَلْتُهُ عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ إِنِّي سَابَبْتُ رَجُلاً، فَعَيَّرْتُهُ بِأُمِّهِ، فَقَالَ لِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " يَا أَبَا ذَرٍّ أَعَيَّرْتَهُ بِأُمِّهِ إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيكَ جَاهِلِيَّةٌ، إِخْوَانُكُمْ خَوَلُكُمْ، جَعَلَهُمُ اللَّهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ، فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ، وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ فَأَعِينُوهُمْ
অর্থঃ মা’রূর (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাঁদর) আর তাঁর চাকরের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর (সমতার) কারন জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ একবার আমি এক ব্যাক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন রাসূল ﷺ আমাকে বললেনঃ ’আবূ যর! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যাক্তি, তোমার মধ্যে এখনো জাহিলী যুগের স্বভাব রয়েছে। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ তা’আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরে, তাকে তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য খুব কষ্টকর। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সাহায্য করবে। [14]
দাস-দাসীরা তার মনিবের অধীনে পুত্র বা কন্যার ন্যায় স্নেহের সাথে বসবাস করতে পারে, এবং তাদের বিয়ের বয়স হলে তাদের তাদের বিয়ে দেবার দায়িত্ব তাদের মনিবের উপর বর্তায়। আল কুরআনে বলা হয়েছে—
وَ اَنۡكِحُوا الۡاَیَامٰی مِنۡكُمۡ وَ الصّٰلِحِیۡنَ مِنۡ عِبَادِكُمۡ وَ اِمَآئِكُمۡ ؕ اِنۡ یَّكُوۡنُوۡا فُقَرَآءَ یُغۡنِهِمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ
অর্থঃ "আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।" [15]
ইসলামের শিক্ষার কারণে ইতিহাসে এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে দাস-মনিবের সম্পর্ক ছিল পিতা ও সন্তানের ন্যায় কিংবা বন্ধুর ন্যায়। [16] আর অন্যান্য বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় দাসপ্রথা যেমন জুলুমমূলক ছিল, ইসলামী এই ব্যবস্থা আদৌ তেমন না, আর এটা চিরস্থায়ীও না। মনিব চাইলে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃশর্তভাবে তার দাস-দাসীকে মুক্ত করে দিতে পারেন। ইসলামে এতভাবে দাসমুক্ত করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন কাজের কাফফারা হিসেবে দাসমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে এর তালিকা করা হলে তা বেশ বড় তালিকা হয়ে যাবে। আবার ইসলামী ব্যবস্থায় দাস চাইলে মনিবের সঙ্গে নিজ মুক্তির জন্য চুক্তিও করতে পারে। কোনো দাস যদি নিজ মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায় তবে তা সম্পাদনের জন্য আল কুরআনে বলা হয়েছে। ইসলামপূর্বযুগে অর্থের লোভে দাসীদের দিয়ে ব্যাভিচার বা পতিতাবৃত্তি করানো হতো; আল কুরআনে কঠোরভাবে তা থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং দাসীদের সতীত্ব রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
وَ الَّذِیۡنَ یَبۡتَغُوۡنَ الۡكِتٰبَ مِمَّا مَلَكَتۡ اَیۡمَانُكُمۡ فَكَاتِبُوۡهُمۡ اِنۡ عَلِمۡتُمۡ فِیۡهِمۡ خَیۡرًا ٭ۖ وَّ اٰتُوۡهُمۡ مِّنۡ مَّالِ اللّٰهِ الَّذِیۡۤ اٰتٰىكُمۡ ؕ وَ لَا تُكۡرِهُوۡا فَتَیٰتِكُمۡ عَلَی الۡبِغَآءِ اِنۡ اَرَدۡنَ تَحَصُّنًا لِّتَبۡتَغُوۡا عَرَضَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ؕ
অর্থঃ “…আর যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে। আর তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায় তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পার এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদেরকে দাও। তোমাদের দাসীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে তোমরা দুনিয়ার জীবনের সম্পদের কামনায় তাদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না। …” [17]
আল কুরআনের এই আয়াত অনুসারে দাসের মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীর একটি হাদিসে উল্লেখ আছে—
وَقَالَ رَوْحٌ عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ قُلْتُ لِعَطَاءٍ أَوَاجِبٌ عَلَيَّ إِذَا عَلِمْتُ لَهُ مَالاً أَنْ أُكَاتِبَهُ قَالَ مَا أُرَاهُ إِلاَّ وَاجِبًا وَقَالَهُ عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ قُلْتُ لِعَطَاءٍ تَأْثُرُهُ عَنْ أَحَدٍ قَالَ لاَ ثُمَّ أَخْبَرَنِي أَنَّ مُوسَى بْنَ أَنَسٍ أَخْبَرَهُ أَنَّ سِيرِينَ سَأَلَ أَنَسًا الْمُكَاتَبَةَ وَكَانَ كَثِيرَ الْمَالِ فَأَبَى فَانْطَلَقَ إِلَى عُمَرَ tفَقَالَ كَاتِبْهُ فَأَبَى فَضَرَبَهُ بِالدِّرَّةِ وَيَتْلُو عُمَرُ ( فَكَاتِبُوهُمْ إِنْ عَلِمْتُمْ فِيهِمْ خَيْرًا ) فَكَاتَبَهُ
অর্থঃ রাওয়াহ (রহ.) বলেন, ইবনু জুরাইজ (রহ.) বর্ণনা করেন, আমি ‘আতা (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, যদি আমি জানতে পারি যে, তার (গোলামের) অর্থ-সম্পদ রয়েছে, তবে কি তার সাথে কিতাবের চুক্তি করা আমার জন্য ওয়াজিব হবে? তিনি বললেন, আমি তো ওয়াজিব ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। ‘আমর ইবনু দ্বীনার (রহ.) বলেন, আমি ‘আতা (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ মতামত কি আপনি (পূর্ববর্তী) কারো কাছ হতে বর্ণনা করছেন? তিনি বললেন, না। তারপর ‘আতা (রহ.) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, মূসা ইবনু আনাস (রহ.) তাকে অবহিত করেছেন যে, আনাস (রাঃ)-এর কাছে তার ক্রীতদাস সীরীন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ) হবার আবেদন জানাল। সে বিত্তশালী ছিল। কিন্তু আনাস (রাঃ) তাতে অস্বীকৃতি জানালেন। সীরীন তখন ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করল। ‘উমার (রাঃ) তখন তাকে [আনাস (রাঃ)-কে] বেত্রাঘাত করলেন এবং নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, ‘‘তোমরা তাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও’’- (আন-নূর ৩৩)। [18]
এখানে দাসের সঙ্গে এই চুক্তিতে সম্মত হওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রিয় পাঠক, লক্ষ করুন ইসলাম কিভাবে দাস-দাসীদের মুক্তির জন্য চুক্তিতে সাহায্য করতে এবং দাসীদের সতীত্ব রক্ষার কথা বলে। ইসলামবিরোধীরা কুরআন-হাদিসের এই দিকগুলো গোপন করে এবং প্রাচীনকালের বিভিন্ন সভ্যতার মাঝে প্রচলিত দাসপ্রথা এবং ঔপনিবেশিক যুগে ইউরোপের বর্বর দাসপ্রথার সাথে ইসলামের দাসপ্রথাকে মিলিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে।
দাসীদের মধ্য থেকে মনিব যদি কাউকে স্ত্রীরূপে বেছে নেন, তাকে বলা হয় সুররিয়্যাহ (السُّرِّيَّةُ) বা বাঁদীপত্নী/উপপত্নী (Concubine)। [19] মনিব তার সঙ্গে সহবাসসহ স্ত্রীরূপ আচরণ করতে পারেন। ইসলামী শরিয়তে স্ত্রী আর সুররিয়্যাহ যদিও পুরোপুরি এক নয়, কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে সুররিয়্যাহ বা বাঁদীপত্নীর প্রচুর সাদৃশ্য রয়েছে। [20]
আমরা দেখলাম ইসলামি শরিয়তে ‘যুদ্ধবন্দী’ মানেই ‘দাস-দাসী’ না বা ‘সহবাস’ না। দাসীদের মধ্য থেকে যাকে তার মনিব সুররিয়্যাহ হিসেবে নেন, তার সাথেই শুধুমাত্র সহবাসের ব্যাপার থাকে।
এখন প্রশ্ন হল - এই সহবাস কি জোর-জুলুম বা ধর্ষণ? আর এই ব্যবস্থার ফলে কি কেউ ‘যৌনদাসী’তে পরিণত হয়? পরবর্তী অনুচ্ছেদে এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে।
৩.২। বাঁদীপত্নীর সঙ্গে সহবাস কি ‘ধর্ষণ’?
আমরা এ প্রসঙ্গে শুরুতেই বিভিন্ন সহীহ হাদিস থেকে ইসলামে দাস-দাসীদের ব্যাপারে কিছু মূলনীতি দেখব। হাদিসগুলো দেখলেই বিজ্ঞ পাঠকের সামনে পুরো বিষয়টি পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ। এরপর আমরা এটিও দেখব সহবাসের ক্ষেত্রে দাসীর নিজ ইচ্ছা বা মতামতের গুরুত্বের স্বীকৃতি ইসলামে আছে কি নেই।
৩.২.১। দাসকে প্রহারে নিষেধকরণ এবং প্রহার করলে কাফফারা স্বরূপ দাসমুক্তকরণঃ
ইসলামে নিজ মালিকানাধীন দাসের সঙ্গে জুলুম ও জবরদস্তি করা তো দূরের কথা, শুধুমাত্র চপেটাঘাত করলেই এর কাফফারা হিসেবে তাকে মুক্ত করে দেবার কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কিছু সহীহ হাদিস পেশ করছি—
عَنْ زَاذَانَ أَبِي عُمَرَ، قَالَ أَتَيْتُ ابْنَ عُمَرَ وَقَدْ أَعْتَقَ مَمْلُوكًا - قَالَ - فَأَخَذَ مِنَ الأَرْضِ عُودًا أَوْ شَيْئًا فَقَالَ مَا فِيهِ مِنَ الأَجْرِ مَا يَسْوَى هَذَا إِلاَّ أَنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ لَطَمَ مَمْلُوكَهُ أَوْ ضَرَبَهُ فَكَفَّارَتُهُ أَنْ يُعْتِقَهُ ".
অর্থঃ আবূ উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি একদা ইবনু উমার (রাঃ) এর কাছে গিয়ে দেখি যে, তিনি একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিয়েছেন বা বর্ণনাকারী বলেন যে, তিনি মাটি থেকে একটি কাঠি অথবা অন্য কোন বস্তু ধারণ করে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে এর (কাঠির) সমতূল্য পুণ্যও নেই। কিন্তু আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আপন ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করল অথবা প্রহার করল, এর কাফফারা হল তাকে আযাদ করে দেয়া। [21]
عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ كُنْتُ أَضْرِبُ غُلاَمًا لِي فَسَمِعْتُ مِنْ خَلْفِي صَوْتًا " اعْلَمْ أَبَا مَسْعُودٍ لَلَّهُ أَقْدَرُ عَلَيْكَ مِنْكَ عَلَيْهِ " . فَالْتَفَتُّ فَإِذَا هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هُوَ حُرٌّ لِوَجْهِ اللَّهِ . فَقَالَ " أَمَا لَوْ لَمْ تَفْعَلْ لَلَفَحَتْكَ النَّارُ أَوْ لَمَسَّتْكَ النَّارُ " .
অর্থঃ আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। হঠাৎ আমার পিছন দিক থেকে একটি আওয়ায শুনলাম, হে আবূ মাসউদ! জেনে রেখো, তুমি তার ওপর যেরূপ ক্ষমতাবান, আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তোমার ওপর এর চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান। হঠাৎ পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ । তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে আল্লাহর ওয়াস্তে আযাদ। এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ শোন! যদি তুমি তা না করতে তাহলে অবশ্যই (জাহান্নামের) আগুন তোমাকে ঝলসে দিত। কিংবা (তিনি বললেন) আগুন তোমাকে অবশ্যই-স্পর্শ করতো। [22]
سَمِعْتُ هِلاَلَ بْنَ يَسَافٍ يَقُولُ: كُنَّا نَبِيعُ الْبَزَّ فِي دَارِ سُوَيْدِ بْنِ مُقَرِّنٍ، فَخَرَجَتْ جَارِيَةٌ فَقَالَتْ لِرَجُلٍ شَيْئًا، فَلَطَمَهَا ذَلِكَ الرَّجُلُ، فَقَالَ لَهُ سُوَيْدُ بْنُ مُقَرِّنٍ: أَلَطَمْتَ وَجْهَهَا؟ لَقَدْ رَأَيْتُنِي سَابِعَ سَبْعَةٍ وَمَا لَنَا إِلاَّ خَادِمٌ، فَلَطَمَهَا بَعْضُنَا، فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُعْتِقُهَا.
অর্থঃ হেলাল ইবনে ইয়াসাফ (রহঃ) বলেন, আমরা সুয়াইদ ইবনে মুকাররিন (রাঃ)-এর বাড়ির সামনে কাপড় বিক্রি করতাম। এক দাসী বের হয়ে এসে এক ব্যক্তিকে কটু কথা বললো। লোকটি তাকে চপেটাঘাত করলো। সুয়াইদ ইবনে মুকাররিন (রাঃ) বলেন, তুমি কি তার গালে চপেটাঘাত করছো? আমি ছিলাম সাতজনের মধ্যে একজন। আমাদের সাতজনের একজন মাত্র খাদেম ছিল। আমাদের একজন তাকে চপেটাঘাত করলো। নবী ﷺ খাদেমটিকে আযাদ করে দিতে তাকে নির্দেশ দিলেন। [23]
আমরা হাদিসগুলো থেকে দেখলাম নবী ﷺ দাস-দাসীদেরকে এমনকি চপেটাঘাত, প্রহার এর কোনোটিই অনুমোদন করেননি। এর কাফফারা হিসেবে ঐ দাসকে মুক্ত করে দিতে বলেছেন। [24] একটি হাদিসে আমরা দেখলাম যে একজন দাসী তার মনিবকে কটূক্তি করলেও তাকে চপেটাঘাত করা অনুমোদন করা হয়নি। একজন সাহাবী ঐ ব্যক্তিকে নবী ﷺ এর বাণী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যেখানে নবী ﷺ দাসমুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। আমরা আরেকটি ঘটনায় দেখলাম এক ব্যক্তি তার দাসকে প্রহার করায় নবী ﷺ তাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেন। লোকটি সেই দাসকে মুক্ত করে দেয়ার পর নবী ﷺ তাকে বলেন, সে যদি এটা না করতো তাহলে জাহান্নামের আগুন তাকে গ্রাস করতো। ইসলামে দাসকে প্রহার করা এমনই মারাত্মক এক কাজ হিসেবে পরিগণিত হয়।
নবী ﷺ দাস-দাসীকে সামান্য চপেটাঘাতকেই অনুমোদন করেননি, তাহলে এটা কী করে সম্ভব যে তিনি দাসীদের সাথে জুলুম করে সহবাস করা, ধর্ষণ ইত্যাদি মারাত্মক কাজকে অনুমোদন করবেন?
৩.২.২। দাসের প্রতি অভিশাপমূলক কথা বলতে নিষেধ করাঃ
প্রহার, জুলুম ইত্যাদি তো অনেক দূরের বিষয় – দাসের প্রতি অভিশাপমূলক কথা বলা থেকে নিষেধের কথাও হাদিসে পাওয়া যায়। আবু বকর(রা.) একবার একজন দাসকে অভিশাপমূলক কিছু কথা বলে ফেললে নবী ﷺ তাঁকে এমনটি করতে বারণ করেন। আবু বকর(রা.) এরপর সেই দাসকে মুক্ত করে দেন।
أَخْبَرَتْنِي عَائِشَةُ، أَنَّ أَبَا بَكْرٍ لَعَنَ بَعْضَ رَقِيقِهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: يَا أَبَا بَكْرٍ، اللَّعَّانِينَ وَالصِّدِّيقِينَ؟ كَلاَّ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ، مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا، فَأَعْتَقَ أَبُو بَكْرٍ يَوْمَئِذٍ بَعْضَ رَقِيقِهِ، ثُمَّ جَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: لا أَعُودُ.
অর্থঃ আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবু বাকর (রাঃ) তার কোন গোলামকে অভিসম্পাত করেন। নবী ﷺ বলেনঃ হে আবু বাকর! কাবার প্রভুর শপথ! একই ব্যক্তি একই সাথে পরম সত্যবাদী ও অভিসম্পাতকারী হতে পারে না। তিনি দুই বা তিনবার একথা বলেন। আবু বাকর (রাঃ) সেদিনই ঐ গোলামকে আযাদ করে দেন এবং নবী ﷺ -এর নিকট এসে বলেন, আমি আর কখনো এরূপ আচরণ করবো না। [25]
ইসলামে দাসের সঙ্গে আচরণের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে এই।
৩.২.৩। দাস-দাসীদের শাস্তি দিতে বারণ করা এবং ক্ষমা করাঃ
দাসের উপর কোনো প্রকার জুলুম করা ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয়। এমনকি দাস-দাসী যদি কোনো ভুল কাজও করে ফেলে, তবু তাকে প্রতিদিন অন্তত ৭০ বার ক্ষমা করতে বলা হয়েছে। দাসকে কষ্ট দিতে ও শাস্তি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। বাস্তবিক কারো পক্ষে এক দিনে ৭০ বার ভুল করা অসম্ভব বিষয়। এই কথার দ্বারা বোঝা যাচ্ছে দাস-দাসীদের কখনোই শাস্তি না দিয়ে ক্ষমার নীতি অবলম্বন করা উচিত।
عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ جُلَيْدٍ الْحَجْرِيِّ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو يَقُولُ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَمْ نَعْفُو عَنِ الْخَادِمِ فَصَمَتَ ثُمَّ أَعَادَ عَلَيْهِ الْكَلاَمَ فَصَمَتَ فَلَمَّا كَانَ فِي الثَّالِثَةِ قَالَ " اعْفُوا عَنْهُ فِي كُلِّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً " .
অর্থঃ আব্বাস ইবন জুলায়দ হাজারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ)-কে এরূপ বলতে শুনেছি যে, একবার এক ব্যক্তি নবী ﷺ -এর কাছে এসে বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা গোলামকে কতবার ক্ষমা করবো? নবী ﷺ চুপ থাকলে সে ব্যক্তি আবার একই প্রশ্ন করে। তখনও তিনি চুপ থাকেন। লোকটি তৃতীয়বার একই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, নবী ﷺ বলেনঃ তোমরা তাদের প্রত্যহ সত্তর বার ক্ষমা করবে। [26]
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ لَاءَمَكُمْ مِنْ مَمْلُوكِيكُمْ، فَأَطْعِمُوهُ مِمَّا تَأْكُلُونَ، وَاَكْسُوهُ مِمَّا تَلْبَسُونَ، وَمَنْ لَمْ يُلَائِمْكُمْ مِنْهُمْ، فَبِيعُوهُ، وَلَا تُعَذِّبُوا خَلْقَ اللَّهِ
অর্থঃ আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদের খুশি করে তাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তা-ই পরতে দাও। আর যেসব দাস তোমাদের খুশি করে না তাদেরকে বিক্রি করো। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে শাস্তি দিও না। [27]
৩.২.৪। জীবনের অন্তিম সময়েও দাস-দাসীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করার নসিহতঃ
নবী ﷺ তাঁর জীবনের একদম অন্তিম সময়েও দ্বীনের স্তম্ভ সলাত (নামাজ) এর পাশপাশি দাস-দাসীর অধিকারের ব্যাপারে উপদেশ দিয়ে গেছেন।
عَنْ عَلِيٍّ، عَلَيْهِ السَّلاَمُ قَالَ كَانَ آخِرُ كَلاَمِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الصَّلاَةَ الصَّلاَةَ اتَّقُوا اللَّهَ فِيمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ " .
অর্থঃ আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর জীবনের সর্বশেষ কথা ছিলঃ সালাত, সালাত (অর্থাৎ সালাত ঠিকভাবে আদায় করবে), এবং তোমরা তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। [28]
যেই নবী ﷺ তাঁর জীবনের অন্তিম সময়ে দাস-দাসীর অধিকারের ব্যাপারে উপদেশ দিয়ে যান, তিনি দাসীর প্রতি জোর-জুলুম বা ধর্ষণের বিধান দিয়ে গেছেন এমন দাবি কি আদৌ যৌক্তিক?
৩.২.৫। সহবাসের ক্ষেত্রে দাসীর মতামতঃ
দাস-দাসী প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিসের বক্তব্যগুলোকে সার্বিকভাবে বিবেচনা করে এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকিহ আবু আব্দুল্লাহ আল হালিমি(র.) [মৃত্যু ৪০৩ হিজরি/১০১২ খ্রিষ্টাব্দ] উল্লেখ করেছেন –
وأَن يُعْتِقُهُ مُتَبَرِّعًا أَحُسْنٌ وَأَجْمَلُ أَن يَلْزَمُهُ بَدَلَا ، وإِذَا اِشْتَرَى رَجُلٌ بِه عَاهَةِ مستقدرَة عَبْدًا لِيَخْدُمُهُ ، فإِنّ كَرِهَ الْعَبْدُ صِحَّتَهُ ، فَلَيَبِيعُهُ وإِن اِشْتَرَى جَارِيَةً فَكَرِهَتْ أَن يُسَمِّهَا أَو يُضَاجِعُهَا ، فلَا يَمَسُّهَا ولَا يُضَاجِعُهَا ولَا يَطَأُهَا إِلَّا بِإِذْنِهَا ، وَبَيْعَهَا إِنّ أَرَادَتْ ذَلِك وَالْإحْسَانُ إِلَى الْمَمْلُوكِ يَجْمَعُ الشُّكْرُ لِلَهَّ تُعَالَى عَلَى الْفِكَاكِ وَالسلَّامَةِ مِن ذُلِّ الرِّقِّ ، وَالْعَدْلَ وَالْإِنْصَافَ فَيَمَنَ يَضُمُّهُ الْمَلِكُ ، واستطباة نَفْس الْمُلُوكِ ، وَاِسْتِجْلَاَبَ طَاعَتِهِ ومناصحته ، ففِيه نَظَرَ لِلْمَالِكُ دنِيًّا وَدِينًا ، وَنَظَرٌ لِلْمُلُوكَ وَبِذَٰلِكَ جَاءَت الْأَخْبَارُ مُجْمَلَةً وَمُفَصَّلَةً
অর্থঃ “আর কোনো বিনিময়ের আশা না করে স্বেচ্ছায় তাকে [দাসকে] মুক্ত করে দেয়া অধিক উত্তম কাজ। যদি শারিরীক বিকলাঙ্গতা আছে এমন কেউ একজন দাস ক্রয় করে নিজের খেদমতের জন্য, আর সেই দাস তার [মনিবের] স্বাস্থ্যগত বিষয় অপছন্দ করে, তাহলে [তাকে কষ্ট না দিয়ে] সে তাকে বিক্রি করে দেবে। যদি কেউ একজন দাসী ক্রয় করে এবং ঐ দাসী যদি তার [মনিব] কর্তৃক স্পর্শ করা বা তার সাথে শোয়া অপছন্দ করে, তাহলে সে তার [দাসীর] অনুমতি ছাড়া তাকে স্পর্শ করবে না, তার সাথে শোবে না আর তার সাথে সহবাসও করবে না। আর সে [দাসী] যদি চায় তবে তাকে সে বিক্রি করে দেবে। দাসের প্রতি অনুগ্রহ করা মানে আল্লাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করা, কারণ তিনি [সেই মনিবকে] দাসত্বের অপমান থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা দিয়েছেন। শাসক যার উপর শাসন করেন, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার ও ইনসাফ করা, শাসিতদের কল্যাণ কামনা করা, তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করা এবং আন্তরিক পরামর্শ প্রদান করা — এসব বিষয় সে শাসকের দুনিয়া ও দ্বীন উভয়ের জন্যই কল্যাণকর। এটি শাসিতদের জন্যও কল্যাণকর। আর তা শাসকদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত ও বিষদভাবে বহু বর্ণনা [হাদিস] এসেছে।” [29]
এই আলোচনার পরে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আল হালিমি(র.) দাস-দাসীদের অধিকারের বিষয়ে একের পর এক হাদিস এনেছেন। [30]
আমরা দেখলাম আজ থেকে হাজার বছর পূর্বের একজন ইমাম অত্যন্ত স্পষ্টভাবে দাসীর সহিত সহবাসের ক্ষেত্রে তার অনুমতির কথা উল্লেখ করেছেন।
সহবাসের ক্ষেত্রে দাসীর অনুমতি লাগবে কিনা বা দাসীর সাথে জোরাজুরি করার কোনো বিষয় ইসলামে আছে কিনা এ প্রসঙ্গে Islamic Online Madrasah (IOM) এর ইফতা বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন করা হলে তাঁরাও অনুরূপ উত্তর প্রদান করেন –
“দাসীদের সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে ইসলাম অন্য কিছু ধর্মের ন্যায় জোর করার অনুমতি দেয় না। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো দাসীদের সাথে সহবাস কেবল তাদের সন্তুষ্টি চিত্তেই হবে। জোরপূর্বক নয়।” [31]
ইমাম হানিফা(র.) এবং ইমাম মালিক(র.) থেকে উল্লেখ পাওয়া যায় দাসীর সহিত আযল (সহবাসের সময়ে যোনির বাইরে বীর্যপাত করা) এর জন্য তার অনুমতি নেয়া আবশ্যক নয়। [32] এই বক্তব্যের আলোকে কোনো কোনো উলামা বলেছেন, দাসীর সাথে সহবাসের জন্যও তার অনুমতি আবশ্যক নয়। যদিও আযলের জন্য অনুমতির আবশ্যকতা না থাকার দ্বারা সহবাসের জন্য অনুমতির আবশ্যকতা না থাকা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় না। তথাপি এই উলামারাও এটা বলেননি যে দাসীর উপর জুলুম করা যাবে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শায়খ আহমাদুল্লাহ(হাফি.) বৈধ দাসী কিংবা স্ত্রীর সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে অনুমতি নেয়া জরুরী কিনা এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উল্লেখ করেছেনঃ তা জরুরী নয়, তবে এক্ষেত্রে যে “জোর” করা যাবে তা হল “আবদারমূলক জোর” করা। যা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে হয়েই থাকে। এটি মোটেও জুলুম বা অমানবিক কিছু নয়। [33]
ইসলামে কি দাসীর সাথে জোর করে সহবাস কিংবা আজল করা বৈধ?_শায়খ আহমাদুল্লাহ
ইসলামের সমালোচকরা অনেক সময় এমন দাবি করেঃ যেহেতু ইসলাম অনুযায়ী দাসীর উপর তার মনিবের হক আছে, কাজেই ইসলাম অবশ্যই তার সাথে জুলুম করে, অত্যাচার করেও সহবাসের অনুমতি দেয়!
এই দাবি মূলত ভ্রান্ত দাবি। এমন দাবিকারীদের জবাবে আমরা এই হাদিসটি পেশ করতে পারিঃ
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ "
وَحَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ ابْنِ، الْمُسَيَّبِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " خَمْسٌ تَجِبُ لِلْمُسْلِمِ عَلَى أَخِيهِ رَدُّ السَّلاَمِ وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ "
অর্থঃ "আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটি। অন্য সুত্রে আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পাঁচটি বিষয় মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের ব্যাপারে ওয়াজিবঃ
১. সালামের জবাব দেওয়া, ২. হাঁচিদাতাকে (তার আলহামদু লিল্লাহ বলার জবাবে) রহমতের দু’আ করা, ৩. দাওয়াত কবুল করা, ৪. অসুস্থকে দেখতে যাওয়া এবং ৫. জানাযার সাথে গমন করা।" [34]
এই হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে – এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের পাঁচটি হক বা অধিকার রয়েছে। আরো বলা হয়েছে এই পাঁচটি বিষয় একজন মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের ব্যাপারে ওয়াজিব বা আবশ্যক। এগুলো হল – সালামের জবাব দেয়া, হাঁচির জবাব দেয়া, দাওয়াত কবুল করা… ইত্যাদি। এখন এর অর্থ কি এইঃ কেউ যদি তার মুসলিম ভাইয়ের হাঁচির জবাব না দেয় বা সালামের জবাব না দেয় বা দাওয়াত কবুল না করে তাহলে তার মুসলিম ভাই এই জন্য তাকে জোর করে বা প্রহার করে তার এই অধিকার আদায় করে নিতে পারবে??!
অবশ্যই না। ইসলামের চরমতম বিরোধীও আশা করি এই হাদিস থেকে এমন উদ্ভট ব্যাখ্যা করে না। এ ছাড়া ইমাম ইবন হাজার আসকালানী(র.) এর আলোচনাটিও এখানে প্রণিধানযোগ্য—
قَوْلُهُ: (بَابُ لَا يَجُوزُ نِكَاحُ الْمُكْرَهِ) الْمُكْرَهُ بِفَتْحِ الرَّاءِ.
قَوْلٌ: ﴿وَلا تُكْرِهُوا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَاءِ﴾
...
وَقَدِ اسْتَشْكَلَ بَعْضُهُمْ مُنَاسَبَةَ الْآيَةِ لِلتَّرْجَمَةِ وَجَوَّزَ أَنَّهُ أَشَارَ إِلَى أَنَّهُ يُسْتَفَادُ مَطْلُوبُ التَّرْجَمَةِ بِطَرِيقِ الْأَوْلَى لِأَنَّهُ إِذَا نَهَى عَنِ الْإِكْرَاهِ فِيمَا لَا يَحِلُّ فَالنَّهْيُ عَنِ الْإِكْرَاهِ فِيمَا يَحِلُّ أَوْلَى.
অর্থঃ “তাঁর বাণীঃ (অধ্যায়: জবরদস্তি করে বিয়ে বৈধ নয়)— المُكْرَهُ শব্দটি ر (রা) অক্ষরে ফাতহা (যবর) সহ উচ্চারিত হবে।
[আল্লাহর] বাণীঃ "আর তোমরা তোমাদের দাসীদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য কোরো না..." (সুরা নুর ২৪ : ৩৩)
... ... ...
যদি এমন বিষয়ে জবরদস্তি করা নিষিদ্ধ হয় যা হারাম, তবে যে বিষয়ে অনুমতি আছে, সেখানে জবরদস্তি নিষিদ্ধ হওয়া আরও অধিক প্রযোজ্য।” [35]
একইভাবে দাসীর উপর তার মনিবের সহবাস সহ বিভিন্ন অধিকার থাকলেও এর অর্থ এই না যে তার মনিব তাকে জোর-জুলুম করে বা মারধোর করে তার এই অধিকার আদায় করবে। আমরা এই প্রবন্ধে ইতিমধ্যেই দাস-দাসীকে প্রহারের ব্যাপারে ও শাস্তি দেবার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাসূচক অনেকগুলো সহীহ হাদিস উল্লেখ করেছি। পাশাপাশি পূর্বযুগ এবং বর্তমান যুগের উলামাদের থেকেও এই ফতোয়া দেখেছি যে দাসীর সাথে সহবাসের জন্য তার অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে, জোর করা যাবে না। যদিও কোনো কোনো উলামার এই ব্যাপারে ভিন্নমতও রয়েছে, তথাপি তাঁরা দাসীর প্রতি জুলুম-অত্যাচারের ফতোয়া দেননি। আর এই ইখতিলাফ (মতপার্থক্য)কে একপাশে রেখে সার্বিকভাবে আমরা যদি দাস-দাসীদের অধিকারের ব্যাপারে সরাসরি নবী ﷺ এর হাদিসগুলো দেখি (যার অনেকগুলো ইতিমধ্যেই এই প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে) তাহলে এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে ইসলামে দাসীর সাথে ধর্ষণ, জুলুম ইত্যাদির কোনো স্থান নেই।
৪। যৌনদাসী বনাম ইসলামের দাসব্যবস্থাঃ
ইসলামের সমালোচকরা কথায় কথায় ইসলামী ব্যবস্থায় প্রচলিত দাসীকে ‘যৌনদাসী’ বলে অভিহীত করে। এটা ইসলামের প্রতি এক অপবাদ। ‘কর্মী’ আর ‘যৌনকর্মী’ যেমন এক কথা না, তেমনি ‘দাসী’ আর ‘যৌনদাসী’ও এক কথা না। এই প্রবন্ধে ইতিমধ্যেই যে আলোচনা করা হয়েছে আশা করি তা দ্বারা পাঠকের নিকট স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ইসলামী ব্যবস্থায় ‘দাসী’ মানেই ‘যৌনদাসী’ না।
‘যৌন দাস’ (Sex Slave) বলতে কী বোঝায় এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মেরিয়াম-ওয়েবস্টার অভিধানে বলা হয়েছে—
"Someone held captive and forced to perform sexual acts usually under threat of violence and often for the purposes of commercial prostitution" [36]
অর্থঃ কেউ যদি বন্দী অবস্থায় থাকে এবং সহিংসতার হুমকির অধীনে যৌন কাজ করতে বাধ্য হয়, এবং প্রায়শই যা বাণিজ্যিক পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে।
‘যৌন দাসত্ব’ (Sex Slavery) বলতে কী বোঝায় প্রসঙ্গে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতে বলা হয়েছে—
"sex slavery, condition in which one human being is owned by another and is forced or otherwise coerced into working in the sex trade. Activities associated with sex slavery include prostitution, pornography, child sex rings, sex tourism, and such occupations as nude dancing and modeling." [37]
অর্থঃ যৌন দাসত্ব হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন মানুষ অন্যজনের মালিকানাধীন হয় এবং তাকে যৌন ব্যবসায় কাজ করতে বাধ্য করা হয় বা অন্য কোনোভাবে চাপ দেওয়া হয়। যৌন দাসত্বের সাথে যুক্ত কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে পতিতাবৃত্তি, পর্নোগ্রাফি, শিশু যৌন চক্র, যৌন পর্যটন এবং নগ্ন নাচ ও মডেলিংয়ের মতো পেশা।
আমরা দেখলাম যৌন দাস এবং যৌন দাসত্ব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে এতে সেই দাসের সঙ্গে সহিংসতা ও হুমকির দ্বারা যৌন কাজ করতে বাধ্য করা হয় এবং এর সাথে পতিতাবৃত্তি, পর্নোগ্রাফিসহ নানা অশালীন পেশার সংযোগ রয়েছে। অথচ বহু হাদিসে দাস-দাসীকে প্রহার করা তথা সহিংসতা থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং সুরা নুরের ৩৩ নং আয়াত অনুসারে দাসীকে দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলামের দাস-দাসী ব্যবস্থার সঙ্গে যৌনদাসত্বের আকাশ আর পাতাল তফাৎ রয়েছে। ইসলামে সুররিয়্যাহ দাসী শুধুমাত্র যৌনকাজের জন্য ব্যবহৃত কোনো পণ্য না বরং সে স্ত্রীর ন্যায় একজন গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের সদস্য। এরপরেও যদি স্রেফ সহবাসের বৈধতার কারণে কেউ ইসলামী ব্যবস্থায় স্বীকৃত দাসীকে ‘যৌনদাসী’ বলে অভিহীত করতে চায়, তাহলে ঐ একই (কু)যুক্তি দ্বারা স্ত্রীকেও ‘যৌন স্ত্রী’ বলতে হবে। আশা করি এমনটি কেউ করবে না।
৫। বর্তমান যুগে কি দাসপ্রথা, দাসীর সাথে সহবাস – এই বিষয়গুলো মানা যায়?
অনেক সরলপ্রাণ মুসলিম বর্তমান আধুনিক সমাজের বাস্তবতায় দাসপ্রথার এই বিষয়গুলো সহজে মেনে নিতে পারবে না। এ ছাড়া ইসলামবিরোধীরাও মুসলিমদের দিকে প্রায়শই এই জাতীয় প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। এর জবাবে আমরা বলব—
প্রথমত, শুধুমাত্র বর্তমান সময় বাদে অতীত সময়কে এক প্রকার উপেক্ষা করা, বর্তমান সময়ের নীতি-নৈতিকতা দ্বারা ইতিহাসের সব সময়ের সব কিছুকে বিচার করা – এই বিভ্রান্তিকর চিন্তাধারাকে ‘বর্তমানবাদ’ (Presentism) বলে। এটা এক প্রকার কুযুক্তি বা Logical Fallacyর অন্তর্ভুক্ত। [38] ইসলামের দাসপ্রথার সমালোচনাকারীরা অনেক সময় অবচেতনভাবেই এই কাজটা করে থাকে। এটা হচ্ছে ইতিহাসকে বর্তমানের দৃষ্টিকোণ, মূল্যবোধ ও মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিচার ও বিশ্লেষণ করার প্রবণতা। এর দ্বারা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের ঘটনাগুলোকে বর্তমানের সামাজিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক ধারণার আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা হয়। যা অনেক সময় ভুল বা একপাক্ষিক মূল্যায়নের কারণ হয়।
দ্বিতীয়ত, ইসলাম কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা। কেউ কেউ বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে দাসপ্রথা বা দাসীর সাথে সহবাসের মতো বিষয়গুলো মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করে। কিন্তু আমাদেরকে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে - ইসলাম শুধুমাত্র একবিংশ শতাব্দীর জন্য আসেনি। ইসলাম ৭ম শতাব্দীর জন্যও ছিল, ১০ম শতাব্দীর জন্য ছিল, ১৫শ শতাব্দীর জন্য ছিল আবার একবিংশ শতাব্দীর জন্যও আছে। নবী ﷺ এর আবির্ভাবের পরের প্রায় ১ হাজার বছরেরও বেশি সময় পৃথিবীতে দাসপ্রথা অত্যন্ত স্বাভাবিক জিনিস ছিল। এক জাতির সাথে অন্য জাতির যুদ্ধ হলে যুদ্ধবন্দীদের দাস বানানো খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিল। ইসলাম এই বিষয়টিকে একপাক্ষিক রাখেনি বরং মুসলিমদের জন্য এই অবকাশ রাখা হয়েছে যে তারাও প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে এটা করতে পারবে। যদিও সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে এবং মানবিক এক উপায়ে। এই অবকাশটি না রাখা হলে একপাক্ষিকভাবে মুসলিমদের যুদ্ধবন্দীদেরকে শুধু প্রতিপক্ষরা দাস বানাতে পারতো। এই বিষয়টি মাথা রাখা উচিত যে ইসলামে যুদ্ধ ব্যতিত দাস বানানোর আর সকল উপায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। [39]
তৃতীয়ত, কেউ কেউ এরপরেও বলতে পারেঃ ঠিক আছে, কিন্তু সেটা তো প্রাচীন যুগ ছিল। এই বর্তমানে ইন্টারনেট-সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে কি দাস-দাসী, দাসী সহবাস এসব জিনিস চলে? মানা যায়?
এর উত্তর খুব সহজ। কাউকে দাস বানানো বা দাসীর সাথে সহবাস করা ইসলামে কোনো ‘অপরিহার্য’ কাজ না। দাসপ্রথা একটা Option। Obligation না। এই Optionটাও বর্তমান যুগে যদি প্রচলিত না থাকে, একে নতুন করে প্রচলন ঘটাতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। নবী ﷺ বলেছেনঃ “হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন অবশ্যই বিবাহ করে।…” [40] তাঁর (ﷺ) থেকে এমন কোনো নির্দেশ পাওয়া যায় না যেঃ “হে যুব সম্প্রদায় তোমরা দাসী বানাও!” বরং এর বিপরীতে কুরআন-হাদিসে দাসমুক্ত করার ব্যাপারে অজস্র স্থানে তাগিদ দেয়া হয়েছে। দাস মুক্ত করার ফজিলতের কথা বলা হয়েছে, বিভিন্ন উপলক্ষে (এমনকি সূর্যগ্রহণের মতো প্রাকৃতিক ঘটনার সময়েও) দাসমুক্ত করতে বলা হয়েছে। ইসলামে দাসমুক্ত করাকে এমন বিশাল ফজিলতের কাজ বলা হয়েছে যে অন্য মহৎ আমলের বৃহৎ ফজিলতকে দাসমুক্ত করার ফজিলতের সাথে তুলনা দেয়া হয়েছে। [41] ইসলামে বিভিন্ন কাজের কাফফারা হিসেবে দাসমুক্ত করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে “দাসমুক্ত করা”, “দাস আজাদ করার ফজিলত” ইত্যাদি নামে অধ্যায় আছে। [42] “দাসী বানানোর ফজিলত” নামে কোনো অধ্যায় নেই! ইসলামে দাসের যেমন অপশন আছে, দাস না থাকারও অপশন আছে। ইসলামের বিধি-বিধান ও নৈতিকতা সকল যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আসলে বর্তমান সময়ে অনেক মানুষ পশ্চিমা সভ্যতা ও মিডিয়া দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত। নাহলে তাদের মনে এই প্রশ্ন জাগতোঃ বর্তমান এই আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সভ্যতার যুগে কি সমকাম, উভকাম, রূপান্তরকাম, জেনা-ব্যভিচার – এইসব অশ্লীল ও অমার্জিত জিনিস মানা যায়?
চতুর্থত, কেউ কেউ এরপরেও কিছু আবেগী প্রশ্ন করে – তোমার নিকটজন কাউকে দাস-দাসী বানালে কেমন লাগতো? তুমি নিজে মানতে পারতে? মুসলিম নারীরা অন্যদের দাসী হলে ব্যাপারটা কেমন হবে?
এসব প্রশ্নের উত্তর ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় দেয়া হয়েছে। [43] এই প্রবন্ধে এগুলো নিয়ে অধিক আলোচনা করে প্রবন্ধের কলেবর বাড়াতে চাই না। সংক্ষেপে কিছু কথা বলি।
ধরা যাক, পতিত স্বৈরাচার হিটলার মিত্রবাহিনীর হাতে ধরা পড়ল। গণহত্যার দায়ে হিটলারের বিচার করা হল, তার অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি দেয়া হল। এখন কেউ যদি এসে বলেঃ হিটলারকে যেভাবে বিচার করা হল, তোমার নিকটজনের উপর এমনটি হলে তোমার কেমন লাগতো?
উত্তর হবেঃ অবশ্যই খারাপ লাগতো। কিন্তু এই খারাপ লাগার আবেগী অনুভূতির তো কোনো গুরুত্ব নেই। বরং বাস্তবতা দেখা বেশি জরুরী। আগে এটা দেখতে হবে যে কেন হিটলারকে শাস্তি দেয়া হল, এর পেছনে কী কারণ ছিল, কী প্রেক্ষাপট ছিল। একইভাবে ইসলামের দাসপ্রথা নিয়ে শুধু আবেগী প্রশ্ন না করে আগে দেখতে হবে ইসলামে দাসপ্রথা থাকার কারণ বা প্রেক্ষাপট কী, ইসলাম কি এর সূচনা করেছে নাকি সংস্কার করেছে, ইসলাম কি দাসপ্রথা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছে নাকি হ্রাস করেছে, ইসলাম কেন একে একবারে উচ্ছেদ না করে বহাল রেখেছে [44], ইসলাম দাসদের প্রতি কেমন আচরণের আদেশ দিয়েছে। আর এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা ও সঠিকভাবে অধ্যায়ন করলে কারো মনে আর ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় বা আপত্তি থাকবে না, ইন শা আল্লাহ।
তথ্যসূত্রঃ
[1] মাসিক আল কাউসার, রবিউল আওয়াল-১৪৩৩ || ফেব্রুয়ারি-২০১২
https://www.alkawsar.com/bn/qa/student-advices/detail/83/
অথবা https://archive.is/wip/GjeFp (আর্কাইভকৃত)
“দাস প্রথা কি শরী‘আত সম্মত_এর হুকুম কি মানসূখ হয়ে গেছে?” (মাসিক আত-তাহরীক)
https://at-tahreek.com/article_details/7757
অথবা https://archive.is/wip/YcI7V (আর্কাইভকৃত)
[2] বিস্ত্যারিত জানতে দেখুনঃ
দাসপ্রথা ও ইসলাম (Response To Anti-Islam)
https://response-to-anti-islam.com/show/দাসপ্রথা-ও-ইসলাম-/172
ইসলামে দাসপ্রথা (Response To Anti-Islam)
https://response-to-anti-islam.com/show/ইসলামে-দাসপ্রথা-/171
"ইসলামে যুদ্ধবন্দী মহিলাদেরকে দাসী বানানো হ’ত কেন? তাদেরকে কেবল বন্দী না রেখে পুরুষের ভোগের সামগ্রী বানানোর কারণ কি ছিল?" (মাসিক আত-তাহরীক)
https://at-tahreek.com/article_details/2208
অথবা https://archive.is/wip/yYP7s (আর্কাইভকৃত)
[3] “What is the ruling on intimacy with slave women?” (IslamQA - Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/answers/13737/
অথবা https://archive.is/j6tQH (আর্কাইভকৃত)
আগস্ট ২০২৩ - মাসিক আল-ইতিছাম
https://al-itisam.com/article_details/1530
অথবা https://archive.is/wip/etRT8 (আর্কাইভকৃত)
[4] মানবাধিকার ও ইসলাম (৮ম কিস্তি) (মাসিক আত-তাহরীক)
https://at-tahreek.com/article_details/6906
অথবা https://archive.is/wip/JCypr (আর্কাইভকৃত)
[5] তাজুল ‘আরুস মিন জাওয়াহিরিল ক্বামুস – মুর্তাযা আয-যাবিদি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৮৪
https://shamela.ws/book/7030/1553
অথবা https://archive.is/wip/G3Aje (আর্কাইভকৃত)
[6] "Forcible illegal sexual intercourse by a man with a woman who is not legally married to him, without her free will and consent"
- Azman Mohd Noor (1 January 2010). "Rape: A Problem of Crime Classification in Islamic Law". Arab Law Quarterly, Vol. 24, No. 4 (2010), pp. 417-438
[7] দেখুনঃ মুয়াত্তা মালিক, বিচার সম্পর্কিত অধ্যায় (كتاب الأقضية); بَاب الْقَضَاءِ فِي الْمُسْتَكْرَهَةِ مِنْ النِّسَاءِ (পরিচ্ছেদঃ ১৬. কোন স্ত্রীলোকের সাথে জবরদস্তি যিনা করিলে তাহার ফয়সালা)
[8] الِاغْتِصَابُ أَحْكَامٌ وَآثَارٌ - هَانِي بْنُ عَبْدِاللهِ بْنِ مُحَمَّدٍ الجُبَيْرُ পৃষ্ঠা ২
إِثْبَاتُ الِاغْتِصَابِ بِالْقَرَائِنِ الطِّبِّيَّةِ الْمُعَاصِرَةِ - د. أَحْمَدُ بْنُ سُلَيْمَانَ العُبَيْدُ পৃষ্ঠা ৬
[9] ইসলামে স্ত্রীর সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে স্বামী কোনো জুলুম করতে পারেন না এবং সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রয়োজনীয় অধিকারের স্বীকৃতি ইসলাম দেয়। এ ব্যাপারে বিস্ত্যারিত তথ্যের জন্য দেখুনঃ “স্ত্রী কি সর্বাবস্থায় সহবাসে বাধ্য?” – মুহাম্মাদ সাদাত; বইঃ ‘জবাব-২’, পৃষ্ঠা ১৬৪
অথবাঃ “ইসলাম কি নারীকে যে কোন পরিস্থিতে জোর করে স্বামীর সাথে যৌন কাজ করার আদেশ দেয়? নারীর কি কোন অধিকার নেই?” (Response To Anti-Islam)
[10] মুয়াত্তা মালিক, নং : ১৪৩৫
[11] আল উম্ম – মুহাম্মাদ বিন ইদ্রিস আশ-শাফিঈ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৫৩
https://shamela.ws/book/1655/848
অথবা https://archive.is/HYK0f (আর্কাইভকৃত)
[12] আল মুগনী - ইবনু কুদামা মাকদিসি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৯৯
https://shamela.ws/book/8463/2082
অথবা https://archive.is/wip/fdSie (আর্কাইভকৃত)
[13] বিস্তারিত দেখুনঃ "Treatment of prisoners-of-war in Islam" (IslamQA - Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/13241/
অথবা https://archive.is/wip/4EEsg (আর্কাইভকৃত)
[14] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩০
[15] আল কুরআন, নুর ২৪ : ৩২
[16] "One of the results of these guidelines is that in many cases, the slave would become a friend of his master; in some cases the master would regard him as a son. Sa’d ibn Hashim al-Khalidi said, describing a slave of his:
“He is not a slave, rather he is a son whom [Allah] has put under my care.
He has supported me with his good service; he is my hands and my arms.”
Another result of the Muslims treating slaves in this manner is that the slaves became part of Muslim families as if they were also family members.
Gustave le Bon says in Hadarat al-‘Arab (Arab Civilization) (p. 459-460):
“What I sincerely believe is that slavery among the Muslims is better than slavery among any other people, and that the situation of slaves in the east is better than that of servants in Europe, and that slaves in the east are part of the family. Slaves who wanted to be free could attain freedom by expressing their wish. But despite that, they did not resort to exercising this right.”"
দেখুনঃ "Slavery in Islam" (IslamQA - Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/94840/
অথবা https://archive.is/wip/14ACH (আর্কাইভকৃত)
[17] আল কুরআন, নুর ২৪ : ৩৩
[18] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২৫৬০, তা’লিকাত অংশ
[19] " تَعْرِيفُ وَمَعْنَى السُّرِّيَّةِ فِي مُعْجَمِ الْمَعَانِي الْجَامِعِ - مُعْجَمٌ عَرَبِيٌّ عَرَبِيٌّ" (Almaany Dictionary)
https://www.almaany.com/ar/dict/ar-ar/السرية/?
অথবা https://archive.is/wip/dPVsN (আর্কাইভকৃত)
"معنى كلمة سراري" (islamweb)
https://www.islamweb.net/ar/fatwa/175959/
অথবা https://archive.is/wip/4Tbex (আর্কাইভকৃত)
[20] বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ “ইসলামে দাসীদের ব্যাপারে বিধান” – মুহাম্মাদ সাদাত; বইঃ ‘জবাব’’, পৃষ্ঠা ১৬৮
অথবা "ইসলামে ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌন সম্পর্কের বৈধতার স্বরূপ" (Response To Anti-Islam)
[21] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪১৫২
[22] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৪১৬২
[23] মুসলিম, তিরমিযী, আল-আদাবুল মুফরাদ ১৭৫ (সহীহ)
[24] ইসলামবিরোধীরা এক্ষেত্রে কিছু মুহাদ্দিস থেকে উদ্ধৃত করে যেঃ দাসদের চপেটাঘাত করলে তাদেরকে মুক্ত করে দেয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক নয় এই মর্মে ঐক্যমত আছে। এটি মূলত ইসলামবিরোধীদের এক প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা। কারণঃ
প্রথমতঃ নবী ﷺ যে দাসদের চপেটাঘাত করা বা প্রহার করতে নিষেধ করেছেন তা এই সহীহ হাদিসগুলো থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এমনটি করে ফেললে কাফফারা হিসেবে তাদের মুক্ত করা ওয়াজিব কি ওয়াজিব না এটা তো পরের মাসয়ালা।
দ্বিতীয়তঃ এক্ষত্রে কাফফারা হিসেবে দাসকে মুক্ত করে দেয়া আবশ্যক নয় এই মর্মে যেমন ঐক্যমতের উল্লেখ পাওয়া যায়, তেমনি তাদের মুক্ত করা আবশ্যক এই মর্মেও কিছু উলামা থেকে ঐক্যমতের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর অর্থ হল, উভয় দিকেই বিপুল পরিমাণ আলেমের অভিমত তথা ঐক্যমত রয়েছে। এটি একটি ইখতিলাফী (মতপার্থক্যপূর্ণ) মাসয়ালা। কিন্তু দাস-দাসীদেরকে প্রহার করে ফেললে তাদেরকে যে মুক্ত করে দেয়া উচিত বা ন্যুনতমভাবে মুস্তাহাব, এই কাজে যে উৎসাহ দেয়া হয়েছে - এ ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য নেই। মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আস-সান’আনী(র.) উল্লেখ করেছেন,
(فَكَفَّارَتُهُ) وُجُوبًا عَلَى قَوْلٍ وَنَدْبًا عَلَى قَوْلٍ (أَنْ يُعْتِقَهُ) وَقَدِ ادَّعَى الوُجُوبَ الإِجْمَاعَ عَلَى العِتْقِ وَادَّعَى الإِجْمَاعَ أَيْضًا عَلَى عَدَمِ الوُجُوبِ
অর্থঃ {এর কাফফারা} একটি মত অনুযায়ী (তাকে মুক্ত করে দেয়া) আবশ্যক এবং অন্য মত অনুযায়ী মুস্তাহাব। দাসমুক্তি আবশ্যক হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত দাবি করা হয়েছে, আবার আবশ্যক না হওয়ার ব্যাপারেও ঐক্যমত দাবি করা হয়েছে।
- আত তানওয়িরু শারহুল জামি’ইস সগির – আস সান’আনী, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩৯০
https://shamela.ws/book/122096/5854
অথবা https://archive.is/wip/ZMGHb (আর্কাইভকৃত)
এ প্রসঙ্গে শায়খ আব্দুল আযিয আর-রাজিহি(র.) উল্লেখ করেছেন—
وَالْأَقْرَبُ: أَنَّهُ إِذَا كَانَ الضَّرْبُ خَفِيفًا يَكُونُ الْعِتْقُ مُسْتَحَبًّا، وَإِذَا كَانَ شَدِيدًا يَكُونُ وَاجِبًا، كَمَا سَيَأْتِي فِي الْأَمْرِ الْمُؤَكَّدِ فِيمَنْ ضَرَبَ غُلَامَهُ ضَرْبًا شَدِيدًا مُبَالَغًا، حَيْثُ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((أَمَا لَوْ لَمْ تَفْعَلْ لَلَفَحَتْكَ النَّارُ- أَوْ لَمَسَّتْكَ النَّارُ)).
অর্থঃ “সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হলো, যদি প্রহার হালকা হয়, তবে দাসকে মুক্ত করে দেওয়া মুস্তাহাব, আর যদি তা (প্রহার) কঠোর হয়, তবে তা (দাসকে মুক্ত করা) বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। যেমন, যে ব্যক্তি কঠোর ও মাত্রাতিরিক্তভাবে দাসকে মারধর করে, তার ব্যাপারে নিশ্চিত বিষয় হিসেবে হাদিস এসেছে যেখানে হিসেবে নবী ﷺ বলেছেনঃ "যদি তুমি এটি (দাসকে মুক্ত) না করতে, তবে আগুন তোমাকে দগ্ধ করত—অথবা আগুন তোমাকে স্পর্শ করত।"”
- তাওফিকুর রব্বিল মুন’ইমি বিশারহি সহীহিল ইমামি মুসলিম – আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ আর-রাজিহি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩৭
https://shamela.ws/book/11/2470
অথবা https://archive.is/wip/5OSyq (আর্কাইভকৃত)
[25] বাযযার, আল-আদাবুল মুফরাদ (ইমাম বুখারী), হাদিস নং : ৩১৯ (সহীহ)
[26] সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ৫০৭৪ (সহীহ)
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=37180
[27] সুনান আবু দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নং : ৫১৬১ (সহীহ)
[28] সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ৫০৬৬ (সহীহ)
https://www.hadithbd.net/hadith/link/?id=37172
[29] মিনহাজ ফি শু’আবিল ঈমান – আবু আব্দুল্লাহ আল হালিমি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬৭
https://shamela.ws/book/18567/1353
অথবা https://archive.is/wip/T6vYK (আর্কাইভকৃত)
[30] দেখুনঃ মিনহাজ ফি শু’আবিল ঈমান – আবু আব্দুল্লাহ আল হালিমি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৬৭-২৭২
[31] “ইসলামে ক্রীতদাসী এর সাথে সহবাস কেন বৈধ - Islamic Fatwa”
অথবা https://archive.is/IWtTj (আর্কাইভকৃত)
[32] ইমাম আবু হানিফা(র.) এর বক্তব্যের জন্য দেখুনঃ বুখারী শরীফ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৬৯, পাদটীকা নং ১
ইমাম মালিক(র.) এর বক্তব্যের জন্য দেখুনঃ মুয়াত্তা মালিক, নং ১২৫৮
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=74155
এবং সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নং ১১৩৭
[33] দেখুনঃ “ইসলামে কি দাসীর সাথে জোর করে সহবাস কিংবা আজল করা বৈধ?_শায়খ আহমাদুল্লাহ” (YouTube)
[34] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৪৬৫
[35] ফাতহুল বারী – ইবন হাজার আসকালানী, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা ৩১৯
[36] Sex slave Definition & Meaning - Merriam-Webster
https://www.merriam-webster.com/dictionary/sex%20slave
অথবা https://archive.is/wip/l0JG3 (আর্কাইভকৃত)
[37] Sex slavery _ Definition, Types, & Facts _ Britannica
https://www.britannica.com/topic/sex-slavery
অথবা https://archive.is/wip/XFgqy (আর্কাইভকৃত)
[38] দেখুনঃ Presentism (Stanford Encyclopedia of Philosophy)
https://plato.stanford.edu/entries/presentism/
অথবা https://archive.is/wip/y2GbH (আর্কাইভকৃত)
ইতিহাসবিদ David Hackett Fischer একে ফ্যালাসির অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। এটি "fallacy of nunc pro tunc" (now for then) নামেও পরিচিত। দেখুনঃ "Historians' Fallacies : Toward a Logic of Historical Thought" by David Hackett Fischer, পৃষ্ঠা ১৩৫।
এর সাথে সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় হল 'Whig History'। এর দ্বারা ইতিহাসের সেই ব্যাখ্যাকে বোঝানো হয়, যেখানে অতীতকে বর্তমানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয় এবং ইতিহাসকে একটি নিরবিচ্ছিন্ন উন্নতির ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা হয়। অতীতকে বর্তমানের আলোকে এমনভাবে বিচার করা হয়, যেন বর্তমান সমাজের কাঠামোই সর্বকালের জন্য আদর্শ। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, ইতিহাসকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয় যেন এটি গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বৈজ্ঞানিক উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে এবং বর্তমান সময়ের এই মতাদর্শগুলো বাদে আর সবই বর্বরতা। এটি ইতিহাসের প্রকৃত জটিলতাকে উপেক্ষা করে এবং ঘটনাগুলোকে সরলীকৃত দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করে। বর্তমান সময়ে আধিপত্যের অবস্থায় নেই বা বিকল্প মতাদর্শকে (অথবা পড়ুনঃ ইসলামী মতাদর্শকে) অবহেলা করা হয়, যা ইতিহাসের সামগ্রিক সত্যকে বিকৃত করতে পারে। এই চিন্তাধারার দ্বারা অতীতের সমাজ, সংস্কৃতি ও সিদ্ধান্তকে বর্তমান মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিচার করে, যা ভুল উপসংহারে পৌঁছাতে পারে। যেমন, এতে ইউরোপে গণতন্ত্রের বিকাশকে একমাত্র "অগ্রগতির ধারা" হিসেবে ব্যাখ্যা করা এবং মনে করা যে সামন্ততান্ত্রিক বা রাজতান্ত্রিক সমাজগুলো কেবলমাত্র ব্যর্থতার প্রতীক ছিল।
এ প্রসঙ্গে পড়া যেতে পারেঃ “The Whig Interpretation of History” By Herbert Butterfield
[39] عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " قَالَ اللَّهُ ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ، وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ ".
অর্থঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম ﷺ বলেছেন, মহান আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। এক ব্যাক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। আরেক ব্যাক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যাক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার থেকে পুরো কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না।
[সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২০৮৬]
[40] عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»
অর্থঃ ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন অবশ্যই বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি অবনত করে ও লজ্জাস্থানের অধিক অধিক হিফাযাত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম (রোযা) রাখে। কেননা, সওম তার জন্য ঢালস্বরূপ (অর্থাৎ- অবৈধ যৌনচাহিদা থেকে বিরত রাখে)।
[বুখারী ৫০৬৬, মুসলিম ১৪০০, নাসায়ী ৩২১০, তিরমিযী ১০৮১, আহমাদ ৪০২৩; মিশকাত ৩০৮০]
[41] দাস মুক্ত করার ন্যায় ফযীলতপূর্ণ আমল সমূহ (মাসিক আত-তাহরীক)
https://at-tahreek.com/article_details/6968
অথবা https://archive.is/wip/U8DDJ (আর্কাইভকৃত)
[42] সহীহ বুখারীর অধ্যায়
https://www.hadithbd.com/hadith/detail/?book=12§ion=278
সহীহ মুসলিমের অধ্যায়
[43] মুসলিম নারীদের দাসী বানালে কেমন হবে? (From Muslims)
https://www.frommuslims.com/qna/মুসলিম-নারীদের-দাসী-বানা/
অথবা https://archive.is/2NT0O (আর্কাইভকৃত)
[44] মানবাধিকার ও ইসলাম (৮ম কিস্তি) (মাসিক আত-তাহরীক)
https://at-tahreek.com/article_details/6906
অথবা https://archive.is/wip/JCypr (আর্কাইভকৃত)