ইসলামবিরোধীরা অভিযোগ করে ইসলাম ধর্মের বিধান হচ্ছে, একটি রাষ্ট্রে বিনা অপরাধে অমুসলিমদেরকে অপমান-অপদস্থ করতে হবে। জিজিয়া কর নেবার সময়ে অমুসলিমদেরকে মারধোর ও লাঞ্ছিত করতে হবে, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং অন্য বিভিন্ন বিষয়ে অমুসলিমদেরকে জোর করে ভিন্নতা অবলম্বন করাতে হবে। আমরা এই প্রবন্ধে তাদের এই অভিযোগগুলোর সত্যতা কতটুকু তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করব।
জিজিয়া নেবার সময়ে অপমান-অপদস্থ করাঃ
আল কুরআনে সুরা তাওবাহর ২৯ নং আয়াতে [1] জিজিয়ার প্রসঙ্গ এসেছে। সুরা তাওবাহর ২৯ নং আয়াতে যে স্থানে জিজিয়ার কথা বলা হয়েছে, {حَتَّىٰ يُعْطُوا۟ ٱلْجِزْيَةَ عَن يَدٍۢ وَهُمْ صَـٰغِرُونَ} এর অর্থ বিভিন্ন অনুবাদে যেভাবে করা হয়েছে—
"যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিয্য়া দেয়।" [আল-বায়ান ফাউন্ডেশন]
"যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা সহকারে স্বেচ্ছায় ট্যাক্স দেয়।" [তাইসিরুল কুরআন]
"যে পর্যন্ত না তারা অধীনতা স্বীকার করে প্রজা রূপে জিযিয়া দিতে স্বীকার করে।" [মুজিবুর রহমান]
"যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে নিজ হাতে জিযইয়া দেয়।" [ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া]
"until they give the jizyah willingly while they are humbled." [Saheeh International]
"until they pay the tax,2 willingly submitting, fully humbled." [Dr. Mustafa Khattab, The Clear Quran]
"until they pay the tax and agree to submit." [M.A.S. Abdel Haleem]
"until they pay the Jizya with willing submission, and feel themselves subdued." [A. Yusuf Ali] [2]
আলোচ্য আয়াতের صَـٰغِرُونَ > الصِّغَارُ কথাটির ব্যাখ্যায় কিছু ফিকহ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসলামবিরোধীরা দাবি করে যে ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের কোনো কারণ ছাড়াই হেনস্তা, অপদস্থ, মারধোর ইত্যাদি করা হয়। আমরা এখন দেখব এই অভিমতের আদৌ কোনো ভিত্তি আছে কিনা।
এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ(র.) উল্লেখ করেছেন,
وَاخْتَلَفَ النَّاسُ فِي تَفْسِيرِ (الصَّغَارِ) الَّذِي يَكُونُونَ عَلَيْهِ وَقْتَ أَدَاءِ الْجِزْيَةِ فَقَالَ عِكْرِمَةُ: أَنْ يَدْفَعَهَا وَهُوَ قَائِمٌ، وَيَكُونَ الْآخِذُ جَالِسًا.
وَقَالَتْ طَائِفَةٌ: أَنْ يَأْتِيَ بِهَا بِنَفْسِهِ مَاشِيًا لَا رَاكِبًا، وَيُطَالَ وُقُوفُهُ عِنْدَ إِتْيَانِهِ بِهَا وَيُجَرَّ إِلَى الْمَوْضِعِ الَّذِي تُؤْخَذُ مِنْهُ بِالْعُنْفِ ثُمَّ تُجَرَّ يَدُهُ وَيُمْتَهَنَ.
وَهَذَا كُلُّهُ مِمَّا لَا دَلِيلَ عَلَيْهِ وَلَا هُوَ مُقْتَضَى الْآيَةِ وَلَا نُقِلَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَلَا عَنِ الصَّحَابَةِ أَنَّهُمْ فَعَلُوا ذَلِكَ.
وَالصَّوَابُ فِي الْآيَةِ أَنَّ الصَّغَارَ هُوَ الْتِزَامُهُمْ لِجَرَيَانِ أَحْكَامِ الْمِلَّةِ عَلَيْهِمْ، وَإِعْطَاءِ الْجِزْيَةِ فَإِنَّ الْتِزَامَ ذَلِكَ هُوَ الصَّغَارُ.
অর্থঃ “লোকেরা (الصَّغَارِ) এর তাফসির নিয়ে মতভেদ করেছে। যারা জিজিয়া প্রদান করে, তাদেরকে এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। ইকরিমাহ বলেছেন, [এর ব্যাখ্যা হচ্ছে] যারা [জিজিয়া] প্রদান করে তারা দাঁড়িয়ে তা প্রদান করবে এবং যারা গ্রহণ করে তারা বসে তা গ্রহণ করবে। এক দলের বক্তব্য হল, তারা সশরীরে [জিজিয়া] নিয়ে আসবে, হেঁটে আসবে, কোনো বাহনে চড়ে আসবে না। তাদেরকে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রাখা হবে এবং তাদেরকে জোর করে [জিজিয়া] সংগ্রহের স্থানে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের হাত ধরে টানা হবে এবং অপদস্থ করা হবে। -- এর সবগুলোই এমন কাজ যার পক্ষে কোনো দলিল নেই। আর আয়াতের [সুরা তাওবাহ ২৯] দাবিও এমন কিছু নয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে এমন কিছু বর্ণিত হয়নি। আর সাহাবী(রা.)দের থেকেও এমন কোনো কর্ম পাওয়া যায় না।
আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা হলঃ এখানে الصَّغَارَ দ্বারা তাদের উপর [ইসলামী] ধর্মাদর্শের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন মেনে নেবার ব্যাপারে আনুগত্য এবং জিজিয়া প্রদানকে বোঝাচ্ছে। আর এই আনুগত্যই الصَّغَارِ।” [3]
এ ব্যাপারে ইমাম নববী(র.) উল্লেখ করেছেন,
فَصْلٌ
تُؤْخَذُ الْجِزْيَةُ عَلَى سَبِيلِ الصَّغَارِ وَالْإِهَانَةِ، بِأَنْ يَكُونَ الذِّمِّيُّ قَائِمًا، وَالْمُسْلِمُ الَّذِي يَأْخُذُهَا جَالِسًا، وَيَأْمُرُهُ بِأَنْ يُخْرِجَ يَدَهُ مِنْ جَيْبِهِ، وَيَحْنِيَ ظَهْرَهُ وَيُطَأْطِئَ رَأْسَهُ، وَيَصُبَّ مَا مَعَهُ فِي كِفَّةِ الْمِيزَانِ، وَيَأْخُذُ الْمُسْتَوْفِي بِلِحْيَتِهِ وَيَضْرِبُ فِي لِهْزَمَتِهِ: وَهِيَ مُجْتَمَعُ اللَّحْمِ بَيْنَ الْمَاضِغِ وَالْأُذُنِ [مِنَ اللِّحْيِ] ، وَهَذَا مَعْنَى الصَّغَارِ عِنْدَ بَعْضِهِمْ،
... ... ...
قُلْتُ: هَذِهِ الْهَيْئَةُ الْمَذْكُورَةُ أَوَّلًا، لَا نَعْلَمُ لَهَا عَلَى هَذَا الْوَجْهِ أَصْلًا مُعْتَمَدًا، وَإِنَّمَا ذَكَرَهَا طَائِفَةٌ مِنْ أَصْحَابِنَا الْخُرَاسَانِيِّينَ، وَقَالَ جُمْهُورٌ الْأَصْحَابِ: تُؤْخَذُ الْجِزْيَةُ بِرِفْقٍ، كَأَخْذِ الدُّيُونِ، فَالصَّوَابُ الْجَزْمُ بِأَنَّ هَذِهِ الْهَيْئَةَ بَاطِلَةٌ مَرْدُودَةٌ عَلَى مَنِ اخْتَرَعَهَا، وَلَمْ يُنْقَلْ أَنَّ النَّبِيَّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَلَا أَحَدَ مِنَ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ فَعَلَ شَيْئًا مِنْهَا مَعَ أَخْذِهِمِ الْجِزْيَةَ،
অর্থঃ “অধ্যায়
জিজিয়া গ্রহণ করা হয় বশ্যতা ও অপমানিত করার জন্য। কাজেই যিম্মি দাঁড়িয়ে থাকবে, এবং যে মুসলিম তা [জিজিয়া] গ্রহণ করবে সে বসে থাকবে। আর সে তাকে তার থলি থেকে হাত বের করতে বলবে। সে [অমুসলিম] তার পিঠ ঝোঁকাবে, মাথা নত করবে আর দাঁড়িপাল্লার মধ্যে তার যা কিছু আছে সব ঢেলে দেবে। [জিজিয়া] সংগ্রাহক তার দাড়ি ধরবে এবং গালে থাপ্পর মারবে। এটা হচ্ছে চোয়াল ও কানের মধ্যবর্তী মাংসল স্থান (দাড়ির মাঝে)। -- কারো কারো মতে الصَّغَارِ এর অর্থ হচ্ছে এই।
… … …
আমি [ইমাম নববী] বলিঃ শুরুতে যে সমস্ত কর্মের কথা উল্লেখ করা হল, এসবের কোনো গ্রহণযোগ্য ভিত্তি আমাদের জানা নেই। এগুলো কেবলমাত্র আমাদের খোরাসানের কিছু আলেম উল্লেখ করেছেন। অধিকাংশ আলেম উল্লেখ করেছেনঃ জিজিয়া নিতে হবে নম্রতার সাথে। এমনভাবে, যেন ঋণ নেয়া হচ্ছে। সঠিক অভিমত হচ্ছে, [শুরুতে উল্লেখিত] এই সমস্ত কর্ম বাতিল এবং যারা এগুলো উদ্ভাবন করেছে তাদের উচিত এগুলো পরিত্যাগ করা। নবী ﷺ থেকে এমন কিছু বর্ণিত হয়নি। খুলাফায়ে রাশিদিনের একজনের থেকেও বর্ণিত হয়নি যে তাঁরা জিজিয়ার নেবার সময়ে এমন কিছু করতেন!” [4]
যদিও الصَّغَارِ কথাটির আক্ষরিক অর্থ অপমান করা, ছোট করা ইত্যাদিও হয়। কিন্তু উপরের আলোচনায় আমরা দেখলাম জিজিয়া দেবার সময়ে অমুসলিমদেরকে আক্ষরিকভাবেই লাঞ্ছিত করা, প্রহার করা এমন কিছু করার পক্ষে কোনো দলিল নেই। নবী ﷺ বা তাঁর সাহাবীদের থেকেও এমন কিছু বর্ণিত হয়নি। খুরাসান অঞ্চলের কিছু আলেমের ব্যাখ্যা থেকে এই বিষয়গুলো এসেছে, যার প্রতিফলন কিছু ফিকহের ও তাফসিরের কিতাবে দেখা যায় [ইসলামবিরোধীরা বেছে বেছে সেসব গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করে]। কিন্তু এই অভিমতের পক্ষে দলিল নেই এবং অধিকাংশ আলেমের অভিমত এমনটি নয়। বরং তাঁদের অভিমত সালাফে সলিহীনদের আমলের অনুগামী। তাঁরা অমুসলিমদের থেকে নম্রতার সাথে জিজিয়া নেবার কথা উল্লেখ করেছেন এবং কেমন নম্রতা তা বোঝানোর জন্য উপমা দিয়েছেন – যেভাবে ঋণের টাকা নেয়া হয় ঠিক সেভাবে অমুসলিমদের থেকে জিজিয়ার অর্থ নেয়া হবে। অমুসলিমদেরকে প্রহার করে বা অন্য কোনো উপায়ে হেনস্তা করে আক্ষরিকভাবে লাঞ্ছিত করা আয়াতের উদ্দেশ্য নয় বরং এখানে উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তা’আলার বিধান তাদের উপর বলবৎ হওয়া এবং এর ফলে তাদের কর্তৃক বশ্যতা বা অধীনতা স্বীকার করা। আর এখানে যদি আমরা ‘অপমান করা’, ‘ছোট করা’ এই অর্থগুলোও নিই, তাহলে এর প্রয়োগ হবেঃ আল্লাহর বিধান অন্য সকল বিধানকে পরাভূত করে অমুসলিদের উপর আরোপিত হয় এবং এর ফলে তারা “ছোট” হয় / “অপমানিত” হয় / “বশ্যতা স্বীকার” করে। বহু উলামা থেকে আমরা এই উল্লেখ পাই যে الصَّغَارِ দ্বারা ইসলামের বিধান অমুসলিমদের উপর বলবৎ হওয়া বোঝানো হয়েছে। যেমন, ইমাম শাফিঈ(র.) বলেছেন,
وَالصَّغَارُ أَنْ يُجْرِيَ عَلَيْهِمْ حُكْمَ الْإِسْلَامِ
অর্থঃ “الصَّغَارِ হচ্ছে ইসলামের বিধান তাদের উপরে প্রয়োগ হওয়া।” [5]
ইমাম ইবনু কুদামা মাকদিসী(র.) উল্লেখ করেছেন,
: {حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ} [التوبة: ٢٩] . وَقِيلَ: الصِّغَارُ الْتِزَامُهُمْ الْجِزْيَةَ، وَجَرَيَانُ أَحْكَامِنَا عَلَيْهِمْ.
وَلَا يُقْبَلُ مِنْهُمْ إرْسَالُهَا، بَلْ يَحْضُرُ الذِّمِّيُّ بِنَفْسِهِ بِهَا، وَيُؤَدِّيهَا وَهُوَ قَائِمٌ وَالْآخِذُ جَالِسٌ، وَلَا يَشْتَطُّ عَلَيْهِمْ فِي أَخْذِهَا، وَلَا يُعَذَّبُونَ إذَا أَعْسَرُوا عَنْ أَدَائِهَا؛ فَإِنَّ عُمَرَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أُتِيَ بِمَالٍ كَثِيرٍ، قَالَ أَبُو عُبَيْدٍ: وَأَحْسَبُهُ مِنْ الْجِزْيَةِ، فَقَالَ: إنِّي لَأَظُنُّكُمْ قَدْ أَهْلَكْتُمْ النَّاسَ. قَالُوا: لَا وَاَللَّهِ، مَا أَخَذْنَا إلَّا عَفْوًا صَفْوًا. قَالَ: بِلَا سَوْطٍ وَلَا بَوْطٍ؟ قَالُوا: نَعَمْ. قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَجْعَلْ ذَلِكَ عَلَى يَدِي، وَلَا فِي سُلْطَانِي.
অর্থঃ “যে পর্যন্ত না তারা অধীনতা স্বীকার করে প্রজা রূপে জিযিয়া দিতে স্বীকার করে।” [সুরা তাওবাহ ২৯] এবং বলা হয়েছে, الصِّغَارُ হচ্ছে জিজিয়া দেবার ব্যাপারে তাদের আনুগত্য এবং আমাদের [মুসলিমদের] বিধি-বিধান তাদের উপর বলবৎ হওয়া। এটি পাঠিয়ে দিলে হবে না বরং যিম্মিকে সশরীরে এসে তা পরিশোধ করতে হবে। আর তিনি দাঁড়িয়ে তা প্রদান করবেন এবং আদায়কারী বসে গ্রহণ করবেন। আর তিনি [জিজিয়া] আদায়ের ব্যাপারে কোনোরূপ কঠোরতা করবেন না। তারা [অমুসলিমরা] যদি তা পরিশোধ করতে সক্ষম না হয় তাহলে তাদেরকে কোনো শাস্তি দেয়া হবে না। কেননা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট একবার প্রচুর অর্থ এনে রাখা হয়েছিল। আবু উবায়দ বললেন, “আমি মনে করি এগুলো জিজিয়া থেকে এসেছে।” তিনি [উমার(রা.)] বললেন, “আমি মনে করি তোমরা [অমুসলিম] জনগণকে ধ্বংস করে দিয়েছো!” তাঁরা বললেন, “না না! আল্লাহর শপথ, আমরা যা সংগ্রহ করেছি তা শুধুমাত্র শুধুমাত্র উদ্বৃত্ত এবং বৈধ অংশ।” তিনি [উমার(রা.)] জিজ্ঞেস করলেন, “চাবুক ও লাঠি [অর্থাৎ কোনোরূপ চাপ প্রয়োগ ও অত্যাচার] ব্যতিরেকে [সংগ্রহ করেছো]?” তাঁরা বললেন, “হ্যাঁ”। তিনি বললেন, “যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমার হাতে বা আমার শাসনকালে তা [অত্যাচার] ঘটতে দেননি।” ” [6]
এই আলোচনা থেকে আরো স্পষ্ট হল যে আল কুরআনে জিজিয়ার যে বিধান বর্ণিত হয়েছে এর দ্বারা অমুসলিমদের উপর কোনো প্রকার জুলুম উদ্দেশ্য নয়। জিজিয়া নেবার সময়ে অমুসলিমদের উপর কঠোরতা করা যাবে না, তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু চাপানো যাবে না। তারা জিজিয়া দিতে সক্ষম না হলে তাদেরকে শাস্তিও দেয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে খলিফা উমার(রা.) থেকে সুস্পষ্ট আমল বর্ণিত আছে যে অমুসলিমদের উপর জিজিয়ার ব্যাপারে কোনোরূপ কঠোরতা ও অত্যাচার করা যায় না। ইসলামে অমুসলিমদের থেকে জিজিয়া গ্রহণের বাস্তব চিত্র এই। এর বিপরীতে নাস্তিক-মুক্তমনা এবং অন্যান্য ইসলামবিরোধীরা এ ব্যাপারে ভয়াবহ এক চিত্র উপস্থাপনের চেষ্টা করে যা অতিরঞ্জিত এবং সঠিক নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শায়খ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া(হাফি.) এর এই আলোচনাটি শোনা যেতে পারেঃ
অমুসলিমদের জন্য পোশাক এবং আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্নতা সৃষ্টি করাঃ
ইসলামবিরোধীরা দাবি করে ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদেরকে মুসলিমদের সাথে পোশাক আশাক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্নতা অবলম্বনে বাধ্য করে তাদের উপরে জুলুম করা হয়। আমরা এখন এই অভিযোগের বাস্তবতা কতটুকু তা জানার চেষ্টা করব।
ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের পার্থক্যীকরণের বিধান রয়েছে। এই বিধান ‘আল গিয়ার’ হিসেবে পরিচিত। এই বিধানের উৎস নবী ﷺ এর সাহাবী ২য় খলিফা উমার বিন খাত্তাব(রা.) এর কিছু আমল।
كتَبتُ لعُمرَ بنِ الخطَّابِ حين صالَحَ نَصارى الشَّامِ، وشرَطَ عليهم فيه ... ... ولا يَتشَبَّهوا بالمُسلِمينَ في شيءٍ مِن لباسِهم في قَلَنسُوةٍ ولا عِمامةٍ ولا نَعلينِ، ولا فَرقِ شَعرٍ، ولا يَتَسَمَّوْا بأسماءِ المُسلِمينَ، ولا يَتكَنَّوْا بكُناهم، ولا يَركَبوا سُرُجًا، ولا يَتقَلَّدوا سَيفًا، ولا يَتَّخِذوا شَيئًا مِن سِلاحٍ، ولا يَنقُشوا خَواتِمَهم بالعَربيَّةِ، ولا يَبيعوا الخُمورَ، وأنْ يَجُزُّوا مَقادِمَ رُؤوسِهم، وأنْ يَلزَموا زِيَّهم حيثما كانوا، وأنْ يَشُدُّوا الزَّنانيرَ على أوساطِهم،... ....
অর্থঃ আব্দুর রহমান বিন গুনম(রা.) বর্ণনা করেন, “আমি উমার বিন খাত্তাব(রা.)কে [চুক্তিনামা] লিখে দিয়েছিলাম যখন তিনি শামের খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সন্ধি করেন। আর সেখানে তিনি তাদের জন্য শর্ত নির্ধারণ করেন … … তারা মুসলিমদের সাথে তাদের টুপি, পাগড়ি, জুতা কোনো পোশাকে সাদৃশ্য অবলম্বন করবে না, [মুসলিমদের মতো] চুলে সিঁথি করবে না। তারা মুসলিমদের নাম ব্যবহার করবে না, কুনিয়াত [উপনাম] ব্যবহার করবে না। তারা ঘোড়ায় জিন ব্যবহার করবে না, তরবারী বহন করবে না, কোনো অস্ত্র বহন করবে না, আরবিতে আংটি খোদাই করবে না, মদ বিক্রি করবে না, মাথার অগ্রভাগের চুল কাটবে। [7] আর তাদের পোশাকের যে রীতি ছিল সেই রীতিই অনুসরণ করবে। তারা তাদের কোমরে বন্ধনী (বেল্ট) ব্যবহার করবে। [8] … …” [9]
আমরা দেখলাম শাম (বৃহত্তর সিরিয়া-ফিলিস্তিন অঞ্চল) বিজয়ের পরে খলিফা উমার(রা.) অমুসলিমদের জন্য মুসলিমদের থেকে ভিন্নতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিধি (আল গিয়ার) জারি করেন। খ্রিষ্টানদের জন্য তাদের নিজস্ব পোশাক ও অন্যান্য রীতি অনুসরণের আদেশ দেন। তাদের জন্য মুসলিমদের পোশাক ও অন্যান্য বিভিন্ন রীতি অনুকরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই বিধি জারির উদ্দেশ্য হিসেবে ইমাম আবু ইউসুফ(র.) এর সুবিখ্যাত ‘কিতাবুল খারাজ’ গ্রন্থে উমার(রা.) থেকে উদ্ধৃত এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে—
هَكَذَا كَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَمَرَ عُمَّالَهُ أَنْ يَأْخُذُوا أَهْلَ الذِّمَّةِ بِهَذَا الزي، وَقَالَ: وَحَتَّى يُعْرَفَ زِيَّهُمْ مِنْ زِيِّ الْمُسْلِمِينَ.
অর্থঃ “উমার(রা.) এভাবেই তাঁর কর্মচারীদের আদেশ করেছিলেন যাতে যিম্মিরা এই ধরণের পোশাক পরে। আর তিনি বলেছিলেনঃ “যাতে তাদের পোশাক মুসলিমদের পোশাক থেকে আলাদা করা যায়।” [10]
অমুসলিমদের জন্য ভিন্নতা সৃষ্টিকারী এই বিধি ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক নাকি বাধ্যতামূলক নয় এই ব্যাপারে উলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া(র.) উল্লেখ করেছেন,
وهَذَا فِيهِ خِلَاَفَ: هَل يَلْزَمُونَ بِالتَّغْيِيرِ أَم الْوَاجِبُ إِذَا اِمْتَنَعُوا أَن نُغَيِّرُ نَحْن
অর্থঃ “এই বিষয়ে মতপার্থক্য আছে যে তাদের জন্য [পোশাক সহ বিভিন্ন অবস্থার] পরিবর্তন বাধ্যতামূলক নাকি তারা যদি পরিবর্তন না করে তাহলে আমাদের জন্য পরিবর্তন বাধ্যতামূলক।” [11]
কোনো কোনো উলামা একে বাধ্যতামূলক গণ্য করেছেন। [12] তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে, এটি বাধ্যতামূলক কিছু নয়। কেননা নবী ﷺ এবং আবু বকর(রা.) এমন কোনো বিধান আদৌ জারি করেননি। [13] এটি যদি বাধ্যতামূলকই হতো, তাহলে তো এই বিধান তাঁরাও জারি করতেন! বরং এটি এমন এক বিধান যা ইসলামী শাসক স্থান, কাল, কল্যাণ, অকল্যাণ ইত্যাদি বিবেচনা করে প্রয়োজনবোধে জারি করতে পারেন। [14] এই ধরণের বিধি আরোপে অমুসলিমদেরকে কোনো প্রকার জোর করা হবে না। এই প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু মুফলিহ(র.) বলেছেন,
فَإِنْ أَبَوُا الْغِيَارَ، لَمْ يُجْبَرُوا، وَنُغَيِّرُهُ نَحْنُ.
অর্থঃ “যদি তারা পরিবর্তন করতে রাজি না হয় তাহলে তাদেরকে জোর করা হবে না। বরং আমরাই [মুসলিমরা] নিজেদেরকে পরিবর্তন করে নেবো [অমুসলিমদের সাথে পার্থক্য সৃষ্টি করব]।” [15]
ইসলামের সমালোচকরা অমুসলিমদের জন্য এ ধরণের ভিন্নতা সৃষ্টিকারী বিধানকে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করেছেন। এর খণ্ডনে প্রখ্যাত মিসরীয় ইসলামী ইতিহাসবিদ, আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি হুসনি আল খারবুতলি বলেন,
فقد كان هذا لا غبار عليه، فهو نوع من التحديد للملابس في نطاق الحياة الاجتماعية، للتمييز بين أصحاب الأديان المختلفة، وخاصة أننا في وقت مبكر من التاريخ، ليس فيه بطاقات تثبت الشخصية، وما تحمله عادة من تحديد الجنسية والدين والعمر وغير ذلك، فقد كانت الملابس المتميزة هي الوسيلة الوحيدة لإثبات دين كل من يرتديها، وكان للعرب المسلمين ملابسهم، كما للنصارى ِأو اليهود أو المجوس ملابسهم أيضًا، وإذا كان المستشرقون قد اعتبروا أن تحديد شكل ولون الثياب هو من مظاهر الاضطهاد فنحن نقول لهم: إن الاضطهاد في هذه الصورة يكون قد لحق بالمسلمين وأهل الذمة على السواء. وإذا كان الخلفاء ينصحون العرب والمسلمين بألا يتشبهوا بغيرهم، فمن المنطقي أن يأمروا غير العرب وغير المسلمين ألا يتشبهوا بالعرب المسلمين.
অর্থঃ “এটি আদৌ নিন্দনীয় কিছু নয়। এটি সামাজিক জীবনের প্রেক্ষাপটে পোশাককে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার একটি পন্থা ছিল যার দ্বারা ভিন্ন ধর্মের জনগোষ্ঠীকে আলাদা করা যেতো। বিশেষত আমরা এমন এক প্রাচীন সময়ের কথা বলছি, যখন আইডি কার্ড বলে কিছুই ছিল না। যার মাঝে [আইডি কার্ডে] জাতীয়তা, ধর্ম, বয়স এবং অন্যান্য তথ্য দেয়া থাকে। সে সময়ে ভিন্ন ধরণের পোশাক ছিল একমাত্র মাধ্যম যার দ্বারা এর পরিধানকারীর ধর্ম বোঝা যেতো। আরব মুসলিমদের নিজস্ব কিছু পোশাক ছিল ঠিক যেমন খ্রিষ্টান, ইহুদি এবং মাজুসীদেরও নিজস্ব পোশাক ছিল। প্রাচ্যবিদরা যদি পোশাকের ধরণ ও রং আলাদা করাকে অত্যাচারের নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করে, তাহলে আমরা তাদেরকে বলবঃ এই ‘অত্যাচার’ তো তবে মুসলিম ও [অমুসলিম] আহলুয যিম্মাহ উভয়ের জন্যই ছিল। খলিফারা যদি আরব ও মুসলিমদেরকে অন্যদের অনুকরণ করতে নিষেধ করেন, তাহলে এটা খুবই যৌক্তিক যে তাঁরা অনারব এবং অমুসলিমদেরকেও আরব মুসলিমদের অনুকরণ করতে নিষেধ করবেন।” [16]
এ প্রসঙ্গে প্রাধান্যযোগ্য ইসলামী বিধান আলোচনা করে ইমাম ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ(র.) বলেছেন,
فَإِنْ كَانَ فِي كُنْيَتِهِ تَمْكِينُهُ مِنَ اللِّبَاسِ وَتَرْكِ الْغِيَارِ وَالسَّلَامِ عَلَيْهِ أَيْضًا، وَنَحْوِ ذَلِكَ تَأْلِيفًا لَهُ وَرَجَاءَ إِسْلَامِهِ وَإِسْلَامِ غَيْرِهِ كَانَ فِعْلُهُ أَوْلَى كَمَا يُعْطِيهِ مِنْ مَالِ اللَّهِ لِتَأَلُّفِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ، فَتَأَلُّفُهُ بِذَلِكَ أَوْلَى، وَقَدْ ذَكَرَ وَكِيعٌ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ كَتَبَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ: " سَلَامٌ عَلَيْكَ ".
وَمَنْ تَأَمَّلَ سِيرَةَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابِهِ فِي تَأْلِيفِهِمُ النَّاسَ عَلَى الْإِسْلَامِ بِكُلِّ طَرِيقٍ تَبَيَّنَ لَهُ حَقِيقَةُ الْأَمْرِ، وَعَلِمَ أَنَّ كَثِيرًا مِنْ هَذِهِ الْأَحْكَامِ الَّتِي ذَكَرْنَاهَا مِنَ الْغِيَارِ وَغَيْرِهِ تَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الزَّمَانِ وَالْمَكَانِ وَالْعَجْزِ وَالْقُدْرَةِ وَالْمَصْلَحَةِ وَالْمَفْسَدَةِ.
وَلِهَذَا لَمْ يُغَيِّرْهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَغَيَّرَهُمْ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ،
অর্থঃ “যদি তাদেরকে কুনিয়াতে [উপনামে] ডাকা, পোশাকের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়া, তাদের উপর থেকে ‘আল গিয়ার’ [অর্থাৎ অমুসলিমদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলিমদের সাথে পার্থক্য সৃষ্টি করার বিধি] আরোপ পরিত্যাগ করা, এমনকি সালাম প্রদান করা এবং এই জাতীয় আরো বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে তাদের অন্তর জয় করা যায় এবং এর ফলে তাদের ও অন্যদের ইসলাম গ্রহণের আশা থাকে— তাহলে এই কর্মগুলোকেই প্রাধান্য দিতে হবে। ঠিক যেমনিভাবে আল্লাহর [উদ্দেশ্যে দানকৃত] সম্পদ তাদের অন্তর জয় করে ইসলামের দিকে আনার জন্য প্রদান করা যায়। অতএব এই কর্মপন্থাগুলো প্রাধান্য পাবে। ওয়াকি’(র.) ইবন আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি আহলে কিতাবের এক ব্যক্তির নিকট [চিঠিতে] লিখেছেনঃ “আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক” [অর্থাৎ তাকে সালাম দিয়েছেন]। কেউ যদি নবী ﷺ এবং তাঁর সাহাবীদের জীবনের দিকে লক্ষ করে তাহলে দেখতে পাবে যে তাঁরা মানুষকে ইসলামের দিকে আনার জন্য সকল প্রকারের কর্মপন্থা অবলম্বন করেছেন। আর তাহলে এই বিষয়টির সত্যতা তার সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে। এর দ্বারা তিনি এটিও বুঝতে পারবেন যে, আমরা ইতিপূর্বে ‘আল গিয়ার’ [মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিধি] এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য যে বিধানগুলো আলোচনা করেছি সেগুলো স্থান, কাল, সক্ষমতা, অক্ষমতা, কল্যাণ এবং ক্ষতি বিবেচনা করে পরিবর্তিত হয়। এ কারণেই নবী ﷺ এবং আবু আবু বকর(রা.) ‘আল গিয়ার’ এর বিধি জারি করেননি। তবে উমার(রা.) জারি করেছিলেন।” [17]
ইসলামের প্রকৃত অবস্থান হচ্ছে এটি। অমুসলিমদের ব্যাপারে পোশাক সহ ভিন্নতা সৃষ্টিকারী বিভিন্ন বিধান আবশ্যিক কিছু নয়। বরং তাদের অন্তর জয় ও ইসলাম গ্রহণের দাওয়াহর জন্য একে পরিত্যাগ করা এবং অমুসলিমদেরকে পোশাকসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্বাধীনতা দেয়াকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর এই বিধিগুলো প্রয়োগ হলেও এর দ্বারা আদৌ অমুসলিমদেরকে অত্যাচার করা উদ্দেশ্য নয়। কুরআন-সুন্নাহর বিধান মেনে যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তা মুসলিম-অমুসলিম সকলের জন্যই কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ
জিজিয়া কি আসলেই শোষণমূলক বিধান?
তথ্যসূত্রঃ
[1] সম্পূর্ণ আয়াতটি নিম্নরূপঃ
قَاتِلُوا الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ لَا بِالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ لَا یُحَرِّمُوۡنَ مَا حَرَّمَ اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗ وَ لَا یَدِیۡنُوۡنَ دِیۡنَ الۡحَقِّ مِنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡكِتٰبَ حَتّٰی یُعۡطُوا الۡجِزۡیَۃَ عَنۡ یَّدٍ وَّ هُمۡ صٰغِرُوۡنَ
অর্থঃ "তোমরা লড়াই কর আহলে কিতাবের সে সব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিয্য়া দেয়।"
[3] আহকামু আহলিয যিম্মাহ – ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২০-১২১
https://shamela.ws/book/21747/41
https://shamela.ws/book/21747/42
অথবা (আর্কাইভকৃত)
[4] রাওদ্বাতুত ত্বলিবীন ওয়া ‘উমদাতিল মুফতিন – আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া বিন শারাফ নববী, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩১৫-৩১৬
https://shamela.ws/book/499/4244
https://shamela.ws/book/499/4245
অথবা (আর্কাইভকৃত)
[5] আল উম্ম – মুহাম্মাদ বিন ইদরিস আশ-শাফিঈ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২১৯
https://shamela.ws/book/1655/1075
অথবা https://archive.is/wip/AF3Wf (আর্কাইভকৃত)
[6] আল মুগনি – ইবনু কুদামা মাকদিসি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৬৪
https://shamela.ws/book/8463/4278
অথবা https://archive.is/wip/EhFBs (আর্কাইভকৃত)
[7] প্রাচীনকালে খ্রিষ্টানদের একটি রীতি ছিল যে তারা মাথার কিছু অংশের চুল কর্তন করে রাখতো। এটা খ্রিষ্টানদের ধার্মিকতার চিহ্ন ছিল এবং এর দ্বারা খ্রিষ্টানদেরকে অন্য সম্প্রদায় থেকে আলাদা করে চেনা যেতো। এই রীতিকে বলা হয় Tonsure। আধুনিক যুগে খ্রিষ্টীয় পোপ ৬ষ্ঠ পল খ্রিষ্ট ধর্মের এই রীতিকে রহিত করে দেন এবং ১৯৭৩ সাল থেকে এই রহিতকরণ কার্যকর হয়। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ
https://www.britannica.com/topic/tonsure
অথবা https://archive.is/wip/htHJg (আর্কাইভকৃত)
[8] খ্রিষ্টানদের মধ্যে কোমরবন্ধনীর প্রচলন ছিল যা Girdle নামে পরিচিত। বর্তমানেও অনেক চার্চে ধর্মীয় পোশাকে Girdle ব্যবহার করা হয়।
[9] আল আহকামিশ শারইয়্যাতিস সুগরা – আব্দুল হক ইশবিলি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬০০ (সহীহ)
অথবা https://archive.is/Xcaa0 (আর্কাইভকৃত)
[10] কিতাবুল খারাজ – আবু ইউসুফ, পৃষ্ঠা ১৪০
https://shamela.ws/book/26333/145
অথবা https://archive.is/wip/8RWhq (আর্কাইভকৃত)
[11] ইকতিদ্বাউস সিরাত্বিল মুস্তাকিম – ইবন তাইমিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬৬
https://shamela.ws/book/11620/355
অথবা https://archive.is/wip/JLI1A (আর্কাইভকৃত)
[12] যেমন, ইমাম কুদুরী(র.) বলেনঃ “জিম্মিদেরকে তাদের পোশাকে, বাহনে, জিন বা গদিতে এবং টুপিতে মুসলমানদের থেকে ভিন্নতা অবলম্বন করতে বাধ্য করা হবে। সুতরাং তারা ঘোড়ায় চড়বে না ও অস্ত্র বহন করবে না।” [আশরাফুল হিদায়া, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৯৫]
[13] দেখুনঃ আহকামু আহলিয যিম্মাহ – ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৩২১। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনুল কাইয়িম(র.) এর বিস্তারিত আলোচনা একটু পরেই উল্লেখ করা হবে।
[14] শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ(হাফি.) পরিচালিত সুবিখ্যাত ফতোয়ার ওয়েবসাইট islamqa.infoতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
هذه الأحكام تختلف باختلاف الزمان والمكان، والقوة والضعف، والمصلحة والمفسدة.
অর্থঃ "এই বিধিগুলো স্থান, কাল, শক্তি, দুর্বলতা, কল্যাণ এবং ক্ষতি বিবেচনা করে পরিবর্তিত হয়।"
দেখুনঃ https://islamqa.info/ar/429701/
অথবাঃ https://archive.is/wip/0iZ5O (আর্কাইভকৃত)
[15] আল মুবদি’ ফি শারহিল মুক্বনি’ – বুরহানুদ্দিন ইবন মুফলিহ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৭৫
https://shamela.ws/book/21619/1262
অথবা https://archive.is/wip/HkKRT (আর্কাইভকৃত)
[16] আল ইসলাম ওয়া আহলুয যিম্মাহ – আলি হুসনি আল খারবুতলি, পৃষ্ঠা ৮৬
[17] আহকামু আহলিয যিম্মাহ – ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৩২১
https://shamela.ws/book/21747/1191
অথবা https://archive.is/wip/hoHob (আর্কাইভকৃত)