[ লেখাটি ডা. শামসুল আরেফিন শক্তি রচিত ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩’ বইয়ের একটি গল্প "অর্ধেক কেন? উত্তরাধিকার ও সাক্ষ্যে" এর অংশবিশেষ। সম্পূর্ণ গল্পটি পড়া যেতে পারে লেখকের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে। ]
[ক] নারীরা সহজে প্রভাবিত হয়। বাদী বা বিবাদী দ্বারা নারীকে প্রভাবিত করা পুরুষকে প্রভাবিত করার চেয়ে সহজ। আরেক নারীর সাক্ষ্য যুক্ত হয়ে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দূর করা হলো।
[খ] নারীর মেমোরি খুঁটিনাটি অপ্রয়োজনীয় ডিটেইলস সহকারে। তাছাড়া মাসিক রজঃচক্রে ৯০% নারী আবেগিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। [1] সুতরাং সে সময়কার সিদ্ধান্ত এবং সুস্থ সময়ের সিদ্ধান্ত এক হয় না। বিশেষ করে স্মৃতি সংরক্ষণ। [2] আবেগ বা পরিস্থিতিগত স্ট্রেসে মেয়েদের ১০% বেশি সময় লেগেছে কোনো কিছু মনে করতে। (Schwabe & Wolf, 2010). আরেকজন নারীর সাক্ষ্য যোগ হলে এই দুর্বলতা কাটল। [3]
[গ] নারীর সিদ্ধান্তে বা সাক্ষ্যে কাজ করে স্বভাবসুলভ দ্বিধা বা কনফিউশন৷ এটা নাকি ওটা। আরেকজন নারীর সহায়তা তার সাক্ষ্যকে বোল্ড করে।
[ঘ] যুক্তি ও আবেগের সীমা টের পায় পুরুষের চেয়ে কম। আরেকজন নারীর যুক্তি সংযোজন সাক্ষ্যে আবেগের প্রভাব হ্রাস করল। [4]
এই যে দুর্বলতা কাটিয়ে সাক্ষ্যকে শক্তিশালী করা, এটা শুধু মামলা-মোকদ্দমা ও ঈদের চাঁদ দেখার মতো সেন্সিটিভ ক্ষেত্রে। [5] যেখানে সাক্ষ্যপ্রমাণে গরমিলের কারণে একটু থেকে একটু হলে অপরাধী ছাড়া পেয়ে যেতে পারে, মজলুম হতে পারে জালিম, আর অপরাধী হতে পারে নিরপরাধ। অন্যান্য ক্ষেত্রে যেখানে এই সম্ভাবনা নেই। যেমন—
নারী যখন বাদী, তখন তার একার অভিযোগই আমলে নেওয়া হবে। [6] সাক্ষী হিসেবে ২ নারীসাক্ষী। বাদী হিসেবে না। বাদী তো একলাই অভিযোগ দায়েরে যথেষ্ট।
আবার হাদিস বর্ণনায়ও একজন নারীর সনদ যথেষ্ট। [7] এই সাক্ষ্যে দুইজনের দরকার নেই।
মূল লেখার লিঙ্কঃ
https://shamsularefin.com/ordhek-keno-uttoradhikhar
অথবা https://archive.is/wip/Cl9BT (আর্কাইভকৃত)
[[ ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংযুক্তিঃ
বেশ কিছু বিষয় আছে যেসব জায়গায় একককভাবে নারীদের সাক্ষ্য গ্রহণের অবকাশ ইসলামে রয়েছে। জর্ডানের ফতোয়া বিভাগ থেকে এই সংক্রান্ত এক ফতোয়ার মাঝে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
“ … নারী সংক্রান্ত বিষয় যেমনঃ সন্তান জন্মদান, কুমারীত্ব এবং নারীদের ব্যক্তিগত ত্রুটি সম্পর্কিত বিষয়ে শুধুমাত্র নারীদের সাক্ষ্যই নেয়া হবে। ইমাম শাফিঈ রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “সন্তান জন্মদান, এবং নারীদের ব্যক্তিগত ত্রুটি সম্পর্কিত বিষয়ে [শুধুমাত্র] নারীদের সাক্ষ্য দেয়া জায়েজ এবং তাদের পাশাপাশি পুরুষরা এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে পারবে না। এই অভিমতের বিপরীত কোনো অভিমত আমার চোখে পড়েনি।” [আল উম্ম ৭/৯২]
ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ “যে সকল বিষয়ে পুরুষদের পক্ষে সরাসরি জ্ঞানলাভ করা সম্ভব নয় কিন্তু সাধারণভাবে নারীরা অধিক জ্ঞান রাখেন, সেসব ক্ষেত্রে তাদের সাক্ষ্য এককভাবে গ্রহণ করা হয়। এসব বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হল সন্তান জন্মদান, কুমারীত্ব, পোশাক, একত্রে জোড়া দেত্তয়া সংক্রান্ত বিষয় [পোশাকের], বিনুনি [চুলের], মাসিক এবং [শিশুদের] দুধপান।” [রাওদ্বাতুত ত্বলিবিন ওয়া ‘উমদাতুল মুফতিন ১১/২৫৩] …”
উৎসঃ জর্ডানের আল ইফতা ওয়েবসাইট
অথবা https://archive.is/wip/vfdsP (আর্কাইভকৃত) ]]
আরো পড়ুনঃ
নারীদের অধিক জাহান্নামী হওয়া এবং বুদ্ধির ত্রুটি থাকা সংক্রান্ত হাদিসের পর্যালোচনা
তথ্যসূত্রঃ
[1] Milad, M. R., Zeidan, M. A., Contero, A., Pitman, R. K., Klibanski, A., Rauch, S. L., et al. (2010). The influence of gonadal hormones on conditioned fear extinction in healthy humans. Neuroscience, 168, 652–658.
[2] আমাদের রিসার্চ সাজেস্ট করে, মাসিকের চক্রে ব্রেইনের নিজস্ব কার্যক্রম ও যোগাযোগব্যবস্থায় যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে, হিপোক্যাম্পাস অংশটা যে জায়গাটা কোনো প্রসঙ্গে রক্ষিত স্মৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে (contextual memory-regulation)। মাসিকচক্রে প্রোজেস্টেরোন হরমোনের কারণে ব্রেইনের বিভিন্ন অংশের সংযোগে পরিবর্তন আসে (bilateral DLPFC and sensorimotor cortex) যা আবেগ ও ব্যথার অনুভূতিতে কাজ করে। (Arélin, ২০১৫)
[3] সূরা বাকারা ২৮২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন : এর মানে—একজন নারী যদি সাক্ষ্য ভুলে যায়, আরেকজন যেন তাকে মনে করিয়ে দিতে পারে, ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। (তাফসিরু ইবনি কাসির, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭২৪) ঘটনার স্মরণ নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহ দুইজন নারীর সাক্ষ্যের কথা বলেছেন। কেননা, মন ও স্মৃতির ক্ষেত্রে দুজন নারীর সমকক্ষ একজন পুরুষ। (ইলামুল মুওয়াক্কিয়িন, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭৫) এখানে নারীকে ছোটো ও তুচ্ছ সাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য নয়। (যেমন, অনেকে বুঝাতে চেষ্টা করে।) বরং উদ্দেশ্য হলো, একটি প্রাকৃতিক দুর্বলতার কথা বর্ণনা করা; যা মহান আল্লাহর ইচ্ছা এবং তাঁর কৌশলগত ব্যাপারের অন্তর্ভুক্ত। [তাফসিরু আহসানিল বায়ান]
[4] তারা (নারীরা) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের যুক্তিবোধ (আকল) ও দ্বীনি আমলের ঘাটতি (نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ) কী? তিনি বললেন, ‘নারীদের সাক্ষী কি পুরুষদের সাক্ষীর অর্ধেক নয়?’ তারা বললেন—‘জি, হ্যাঁ।’ তিনি বললেন—‘এটিই তাদের যুক্তিবোধের ঘাটতি। যখন তাদের মাসিক শুরু হয় তখন কি তারা সালাত ও সাওম (রোজা) বাদ দেয় না?’ তারা বললেন, ‘জি, হ্যাঁ।’ তিনি বললেন—‘এটিই তাদের দ্বীনে কমতি।’ [সহিহ বুখারি : ৩০৪]
[5] তবে নারীদের সাথে সম্পর্কিত কিছু ক্ষেত্র আছে, যেসব জায়গায় একজন নারীর সাক্ষ্যই যথেষ্ট। যেমন—শিশুদের দুধপান সম্পর্কিত বিষয়াদি। যেসব কারণে বিবাহ ত্রুটিগ্রস্ত হয় ইত্যাদি।
[6] ইবনে আরাবি, আহকামুল কুরআন ৪/২৮৩, মুহাযযাব ৩/৪৫২
[7] তাদরীবুর রাবী ১/৩৩২ (যদিও সাক্ষ্য ও রিওয়ায়াতের মধ্যে মুহাদ্দিসগণ কিছুটা পার্থক্য করেছেন)