ইসলামবিরোধীরা ইসলামকে নারীবিদ্বেষী ধর্ম হিসেবে প্রচার করে দাবি করে – হাদিস অনুযায়ী জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী হচ্ছে নারীরা, ইসলামী জান্নাতে নারীদের অবস্থান যৎসামান্য। শুধু তাই না, ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী নারীরা স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী। এই দাবির স্বপক্ষে তারা নিম্নোক্ত হাদিস পেশ করেঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي أَضْحًى ـ أَوْ فِطْرٍ ـ إِلَى الْمُصَلَّى، فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ " يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ، فَإِنِّي أُرِيتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ ". فَقُلْنَ وَبِمَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ، وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ، مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَاكُنَّ ". قُلْنَ وَمَا نُقْصَانُ دِينِنَا وَعَقْلِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " أَلَيْسَ شَهَادَةُ الْمَرْأَةِ مِثْلَ نِصْفِ شَهَادَةِ الرَّجُلِ ". قُلْنَ بَلَى. قَالَ " فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ عَقْلِهَا، أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ ". قُلْنَ بَلَى. قَالَ " فَذَلِكَ مِنْ نُقْصَانِ دِينِهَا
অর্থঃ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমার সদাক্বাহ করতে থাক। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেনঃ কী কারণে, হে আল্লাহ্র রাসূল? তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমানে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তারা বললেনঃ আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, হে আল্লাহ্র রাসূল? তিনি বললেনঃ একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’। তখন তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়েয অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম হতে বিরত থাকে না? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি। [1]
হাদিস অনুযায়ী জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী কি নারীরা?
এখানে হাদিসের সরল অর্থ থেকেই এটা বোঝা যাচ্ছে যে নবী(ﷺ) এখানে নারীদের জন্য সদাকাহ বা দানের মতো মহৎ কর্মের দিকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন এবং উত্তম নসিহা করছিলেন। কাউকে হেয় করা বা ছোট করা এখানে উদ্দেশ্য নয়। তাছাড়া একটি ইসলামী মূলনীতির ব্যাপারে ইসলামের অনুসারী বা ইসলামের সমালোচক সকলেরই জানা থাকা উচিত। আর তা হল, একজন মানুষ জান্নাতী বা জাহান্নামী হয় তার বিশ্বাস ও কর্মের জন্য। নারী নাকি পুরুষ, এর উপর ভিত্তি করে কেউ জান্নাতী বা জাহান্নামী হয় না। আল কুরআনে বলা হয়েছে—
وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِنَ الصّٰلِحٰتِ مِنۡ ذَكَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی وَ هُوَ مُؤۡمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ نَقِیۡرً
অর্থঃ "আর পুরুষই হোক অথবা নারীই হোক, যারাই বিশ্বাসী হয়ে সৎকাজ করবে, তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি (খেজুরের আঁটির পিঠে) বিন্দু পরিমাণও যুলুম করা হবে না।" [2]
জান্নাতে বা জাহান্নামে যারাই অধিক সংখ্যায় থাকুক, তারা তাদের কৃতকর্মের জন্যই সেখানে অবস্থান করবে। কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে কোনো মানুষকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বানানো হবে না। কোনো নারী যদি জাহান্নামে যায় তাহলে সেটা তার নারী হবার কারণে না বরং কর্মের কারণে। কাজেই এখানে ইসলামবিরোধীদের অভিযোগের মূল ভিত্তিই অসার। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। ধরা যাক, কোনো বছর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই ঢাকা কলেজের। কিন্তু এর অর্থ কি এই যে ঢাকা কলেজ দেখে তাদেরকে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে? উত্তর হচ্ছেঃ না। বরং তারা ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করবার জন্যই তারা বুয়েটে সুযোগ পেয়েছে।
এবার জান্নাত নাকি জাহান্নাম কোথায় অধিক সংখ্যক নারী থাকবেন – এই প্রসঙ্গে আসা যাক। এই প্রশ্নের উত্তর স্বয়ং আবু হুরায়রা(রা.) দিয়ে গেছেন, যিনি ছিলেন সর্বোচ্চ সংখ্যক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী। সেই যুগে লোকেরা এই বিষয়ে আলোচনা করত যে, জান্নাতে কারা অধিকাংশ হবে - নারী নাকি পুরুষ? এর উত্তরে আবু হুরায়রা(রা.) নবী(ﷺ) এর হাদিস উদ্ধৃত করতেন।
عَنْ مُحَمَّدٍ، قَالَ إِمَّا تَفَاخَرُوا وَإِمَّا تَذَاكَرُوا الرِّجَالُ فِي الْجَنَّةِ أَكْثَرُ أَمِ النِّسَاءُ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَوَلَمْ يَقُلْ أَبُو الْقَاسِمِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ وَالَّتِي تَلِيهَا عَلَى أَضْوَإِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ اثْنَتَانِ يُرَى مُخُّ سُوقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ اللَّحْمِ وَمَا فِي الْجَنَّةِ أَعْزَبُ " .
অর্থঃ “মুহাম্মদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা হয়ত গর্ব প্রকাশ করে বলল, অথবা আলোচনা করতঃ বলল, জান্নাতে পুরুষ বেশী হবে, না নারী? এ কথা শুনে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আবূল কাসিম ﷺ কি বলেন নি, প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় দীপ্তীয়মান। তাদের পর যারা জান্নাতে যাবে তাদের চেহারা হবে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায়। তাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে দু জন স্ত্রী। গোশতের ওপাশ হতে তাদের পায়ের গোছার (অস্থির) মগজ দেখা যাবে। জান্নাতের মধ্যে কেউ অবিবাহিত থাকবে না।” [3]
এখানে প্রত্যেকের জন্য দুই জন স্ত্রী বলতে কী বোঝানো হয়েছে এ প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া(র.) উল্লেখ করেছেন,
وَقَدْ صَحَّ لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ زَوْجَتَانِ مِنْ الْإِنْسِيَّاتِ سِوَى الْحُورِ الْعِينِ
অর্থঃ “সহীহভাবে বর্ণিত আছে যে প্রত্যেক জান্নাতী পুরুষের জন্য হুর আল আইন ছাড়াও ২ জন মানবী স্ত্রী থাকবে।” [4]
এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবন কাসির(র.) উল্লেখ করেছেন,
فَالْمُرَادُ مِنْ هَذَا أَنَّ هَاتَيْنِ مِنْ بَنَاتِ آدَمَ،
অর্থঃ “এর মানে হচ্ছে এই দুইজন হবে আদমের কন্যাদের থেকে [অর্থাৎ মানবী]।” [5]
এই হাদিস থেকে জানা গেল যে, প্রত্যেক জান্নাতী পুরুষের ২ জন স্ত্রী থাকবে। আর প্রত্যেক পুরুষের ২ জন স্ত্রী থাকলে জান্নাতে নারীর সংখ্যা পুরুষের দ্বিগুণ হয়ে যায় অর্থাৎ জান্নাতে নারীদের সংখ্যাই পুরুষের চেয়ে অধিক হয়।
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হল জান্নাতের অধিকাংশ অধিবাসী নারী। কিন্তু এই প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখিত অন্য হাদিসে উল্লেখ আছে জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী নারী। এর ব্যাখ্যায় ইমাম নববী(র.) সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
قَالَ الْقَاضِي ظَاهِرُ هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ النِّسَاءَ أَكْثَرُ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَفِي الْحَدِيثِ الْآخَرِ أَنَّهُنَّ أَكْثَرُ أَهْلِ النَّارِ قَالَ فَيَخْرُجُ مِنْ مَجْمُوعِ هَذَا أَنَّ النِّسَاءَ أَكْثَرُ وَلَدِ آدَمَ قال وهذا كله فى الآدميات
অর্থঃ “কাযি [ইয়ায(র.)] বলেন, হাদিসের প্রকাশ্য অর্থ হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী। আবার অন্য হাদিসে বলা হয়েছে তারা [নারীরা] জাহান্নামের অধিবাসীদের মাঝে অধিকাংশ। তিনি হাদিসগুলোর মাঝে সমন্বয় সাধন করে বলেন, “আদম সন্তানদের মাঝে অধিকাংশই নারী।” তিনি আরো বলেন, “তাদের সবাই হবে মানবী [আদমের কন্যা]।” ” [6]
এই ব্যাখ্যা অনুসারে, যেহেতু মানবজাতির মাঝে নারীদের সংখ্যাই অধিক, এ কারণে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় স্থানেই নারীদের সংখ্যা অধিক হবে।
আবার কোনো কোনো মুহাদ্দিস থেকে আলোচ্য হাদিসগুলো প্রসঙ্গে আরেকটি ব্যাখ্যা উল্লেখ আছে। ইমাম কুরতুবী(র.) উল্লেখ করেছেন—
قلت: يحتمل أن يكون هذا في وقت كون النساء في النار، وأما بعد خروجهن في الشفاعة ورحمة الله تعالى حتى لا يبقى فيها أحد ممن قال لا إله إلا الله، فالنساء في الجنة أكثر، وحينئذ يكون لكل واحد منهم زوجتان من نساء الدنيا،
অর্থঃ “আমি বলি, এমনটি হতে পারে যে এটি সে সময়কার কথা, যখন জাহান্নামে অধিক সংখ্যক নারী ছিল। তবে যখন শাফায়াত এবং আল্লাহ তা’আলার রহমতের ফলে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে, যার দরুণ সেখানে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা আর কেউ বাকি থাকবে না – তখন জান্নাতে নারীর সংখ্যা বেশি হবে। আর সেই সময়ে প্রত্যেক পুরুষের জন্য দুনিয়ার নারীদের মধ্য থেকে দুইজন স্ত্রী থাকবে।” [7]
আলোচ্য হাদিসসমূহের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবন হাজার আসকালানী(র.) তাঁর সুবিখ্যাত ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন—
وَاسْتَدَلَّ أَبُو هُرَيْرَةَ بِهَذَا الْحَدِيثِ عَلَى أَنَّ النِّسَاءَ فِي الْجَنَّةِ أَكْثَرُ مِنَ الرِّجَالِ كَمَا أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ مِنْ طَرِيقِ ابْنِ سِيرِينَ عَنْهُ، وَهُوَ وَاضِحٌ لَكِنْ يُعَارِضُهُ قَوْلُهُ ﷺ فِي حَدِيثِ الْكُسُوفِ الْمُتَقَدِّمِ: رَأَيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ وَيُجَابُ بِأَنَّهُ لَا يَلْزَمُ مِنْ أَكْثَرِيَّتِهِنَّ فِي النَّارِ نَفْيُ أَكْثَرِيَّتِهِنَّ فِي الْجَنَّةِ، لَكِنْ يُشْكِلُ عَلَى ذَلِكَ قَوْلُهُ ﷺ فِي الْحَدِيثِ الْآخَرِ: اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَقَلَّ سَاكِنِهَا النِّسَاءَ، وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ الرَّاوِي رَوَاهُ بِالْمَعْنَى الَّذِي فَهِمَهُ مِنْ أَنَّ كَوْنَهُنَّ أَكْثَرُ سَاكِنِي النَّارِ يَلْزَمُ مِنْهُ أَنْ يَكُنَّ أَقَلَّ سَاكِنِي الْجَنَّةِ، وَلَيْسَ ذَلِكَ بِلَازِمٍ لِمَا قَدَّمْتُهُ، وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ فِي أَوَّلِ الْأَمْرِ قَبْلَ خُرُوجِ الْعُصَاةِ مِنَ النَّارِ بِالشَّفَاعَةِ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
অর্থঃ “আবু হুরায়রা(রা.) এই হাদিস দ্বারা দলিল দিতেন যে জান্নাতে নারীদের সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে বেশি হবে। যে হাদিসটি ইমাম মুসলিম(র.) [মুহাম্মাদ] ইবন সিরিন(র.) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এই [জান্নাতে নারীদের সংখ্যা অধিক হবার] বিষয়টি স্পষ্ট, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এটি পূর্বে উল্লেখিত নবী ﷺ এর কুসুফের হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক [যেখানে বলা হয়েছে] : “আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই [নারীরা] অধিক”। এর জবাব হচ্ছে, জাহান্নামে নারীদের অধিক সংখ্যক হবার বিষয়টি জান্নাতেও তাদের অধিক সংখ্যক হবার বিষয়কে নাকচ করে না। তবে নবী ﷺ এর আরেকটি বক্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন আসতে পারে। আরেকটি হাদিসে উল্লেখ আছে, “আমি জান্নাতের মাঝে দৃষ্টিপাত করলাম। দেখলাম সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা কম।” [8] এমনটি হওয়া সম্ভব যে বর্ণনাকারী নিজস্ব বুঝের আলোকে এটি বর্ণনা করেছেন যে জাহান্নামে অধিক নারী থাকার অর্থ হল জান্নাতে তাদের সংখ্যা কম। তবে আমি ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি যে এমনটি হওয়া জরুরী নয়। এমনটি হওয়া সম্ভব যে, শাফায়াতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে পাপী নারীদেরকে বের করে আনার আগের অবস্থাকে এই বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে [এর পরবর্তীকালে জান্নাতে নারীদের সংখ্যা অধিক হয়ে গেছে]। এবং আল্লাহই সর্বোত্তম জানেন।” [9]
অর্থাৎ প্রথম হাদিসে যখন নবী(ﷺ) উল্লেখ করেছেন যে তাঁকে দেখানো হয়েছে জাহান্নামের অধিক সংখ্যক অধিবাসী নারী, সেটা সে অবস্থার কথা যখন পাপের কারণে অনেক মুসলিম নারী জাহান্নামে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহর রহমতে ও নবী(ﷺ) এর শাফায়াতে তারা জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [10] তখন একজন জান্নাতী পুরুষের ২ জন স্ত্রী থাকবে। অর্থাৎ চূড়ান্তভাবে জান্নাতেই নারীর সংখ্যা অধিক হবে, জাহান্নামে নারীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কমে যাবে।
অতএব মুহাদ্দিসদের আলোচনার আলোকে বলা যায়ঃ এটি প্রমাণিত বিষয় যে, চূড়ান্তভাবে জান্নাতেই নারীদের সংখ্যা অধিক। এই কথা বলার সুযোগ নেই যে শুধু জাহান্নামেই নারী বেশি আর জান্নাতে নারী কম।
হাদিসে কি নারীদেরকে স্বল্পবুদ্ধির বলে নিন্দা করা হয়েছে?
এই প্রবন্ধে উল্লেখিত প্রথম হাদিসে নারীর বুদ্ধির ত্রুটির বিষয়ে উল্লেখ আছে। হাদিসে এই কথা উল্লেখের উদ্দেশ্য কি নারীদের নিন্দা করা? এ প্রসঙ্গে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইবন হাজার আসকালানী(র.) সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী’তে উল্লেখ করেছেনঃ
وَلَيْسَ الْمَقْصُودُ بِذِكْرِ النَّقْصِ فِي النِّسَاءِ لَوْمَهُنَّ عَلَى ذَلِكَ ; لِأَنَّهُ مِنْ أَصْلِ الْخِلْقَةِ، لَكِنَّ التَّنْبِيهَ عَلَى ذَلِكَ تَحْذِيرٌ مِنَ الِافْتِتَانِ بِهِنَّ، وَلِهَذَا رَتَّبَ الْعَذَابَ عَلَى مَا ذَكَرَ مِنَ الْكُفْرَانِ وَغَيْرِهِ لَا عَلَى النَّقْصِ،
অর্থঃ “নারীদের [বুদ্ধি ও দ্বীনের] ব্যাপারে ত্রুটি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য তাদেরকে দোষ দেয়া নয়। কারণ এগুলো তো তাদের সৃষ্টিগত অবস্থার অংশ। বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের দ্বারা প্রলুব্ধ হওয়া থেকে সতর্ক করা। আর এ কারণেই শাস্তি রয়েছে তাদের কুফরী ও অন্যান্য খারাপ কাজের জন্য, [বুদ্ধি ও দ্বীনের] ত্রুটির জন্য নয়।” [11]
আলোচ্য হাদিসে নারীদের বুদ্ধির ত্রুটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? এর অর্থ কি এই যে নারীরা সকল ক্ষেত্রে বুদ্ধিহীন বা সকল ক্ষেত্রে তারা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে আছে? এ প্রসঙ্গে শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী পণ্ডিত শায়খ আব্দুল আযিয বিন বায(র.) উল্লেখ করেছেন—
ولا يلزم من هذا أن يكون نقص عقلها في كل شيء ونقص دينها في كل شيء، وإنما بين الرسول صلى الله عليه وسلم أن نقص عقلها من جهة ما قد يحصل من عدم الضبط للشهادة، ونقص دينها من جهة ما يحصل لها من ترك الصلاة والصوم في حال الحيض والنفاس، ولا يلزم من هذا أن تكون أيضا دون الرجل في كل شيء وأن الرجل أفضل منها في كل شيء، نعم جنس الرجال أفضل من جنس النساء في الجملة لأسباب كثيرة، كما قال الله سبحانه وتعالى: {الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ} (١) لكن قد تفوقه في بعض الأحيان في أشياء كثيرة، فكم لله من امرأة فوق كثير من الرجال في عقلها ودينها وضبطها، وإنما ورد عن النبي صلى الله عليه وسلم أن جنس النساء دون جنس الرجال في العقل وفي الدين من هاتين الحيثيتين اللتين بينهما النبي صلى الله عليه وسلم.
وقد تكثر منها الأعمال الصالحات فتربو على كثير من الرجال في عملها الصالح وفي تقواها لله عز وجل وفي منزلتها في الآخرة، وقد تكون لها عناية في بعض الأمور فتضبط ضبطا كثيرا أكثر من ضبط بعض الرجال في كثير من المسائل التي تعنى بها وتجتهد في حفظها وضبطها، فتكون مرجعا في التاريخ الإسلامي وفي أمور كثيرة، وهذا واضح لمن تأمل أحوال النساء في عهد النبي صلى الله عليه وسلم وبعد ذلك، وبهذا يعلم أن هذا النقص لا يمنع من الاعتماد عليها في الرواية وهكذا في الشهادة إذ انجبرت بامرأة أخرى، ولا يمنع أيضا تقواها لله وكونها من خيرة عباد الله ومن خيرة إماء الله إذا استقامت في دينها وإن سقط عنها الصوم في الحيض والنفاس أداء لا قضاء، وإن سقطت عنها الصلاة أداء وقضاء، فإن هذا لا يلزم منه نقصها في كل شيء من جهة تقواها لله، ومن جهة قيامها بأمره، ومن جهة ضبطها لما تعتني به من الأمور، فهو نقص خاص في العقل والدين كما بينه النبي صلى الله عليه وسلم، فلا ينبغي للمؤمن أن يرميها بالنقص في كل شيء وضعف الدين في كل شيء، وإنما هو ضعف خاص بدينها، وضعف في عقلها فيما يتعلق بضبط الشهادة ونحو ذلك، فينبغي إيضاحها وحمل كلام النبي صلى الله عليه وسلم على خير المحامل وأحسنها، والله تعالى أعلم.
অর্থঃ “এর অর্থ এই নয় যে জীবনের প্রতিটি জায়গাতেই তাদের বুদ্ধি ও দ্বীনের ঘাটতি আছে। বরং রাসুলুল্লাহ ﷺ এটি ব্যাখ্যা করেছেন যে, সাক্ষ্যদানের উপরে নিয়ন্ত্রণের অভাবের জন্য তাদের বুদ্ধির ত্রুটি রয়েছে এবং হায়েয-নেফাসের সময়ে সলাত ও সাওম পরিত্যাগের জন্য তাদের দ্বীনের ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তারা পুরুষদের চেয়ে সকল ক্ষেত্রেই নিম্ন পর্যায়ে কিংবা পুরুষরা সকল ক্ষেত্রেই তাদের চেয়ে উত্তম। তবে হ্যাঁ, অনেকগুলো কারণে পুরুষরা নারীদের চেয়ে উত্তম। যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেনঃ “পুরুষেরা নারীদের উপর তত্ত্বাবধানকারী ও ভরণপোষণকারী, যেহেতু আল্লাহ তাদের মধ্যে একের উপর অপরকে বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এই হেতু যে, তারা স্বীয় ধন সম্পদ হতে তাদের জন্য ব্যয় করে থাকে।” [সুরা নিসা ৩৪] তবে নারীরা কখনো কখনো অনেক জায়গাতেই পুরুষদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। অনেক নারীই আছেন যারা পুরুষদের চেয়ে বুদ্ধিমত্তা, দ্বীনদারী এবং স্মরণশক্তিতে এগিয়ে। বুদ্ধি ও দ্বীনে নারীদের পিছিয়ে থাকা সম্পর্কে নবী ﷺ থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তা শুধুমাত্র এই নির্দিষ্ট দুইটি ক্ষেত্রে যা তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন। নারীরা অধিক পরিমাণে সৎকাজ করতে পারেন যার দ্বারা তারা মহান আল্লাহর নিকট নেকি, তাকওয়া এবং পরকালীন মর্যাদায় পুরুষদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন। তারা কোনো কোনো বিষয়ে অধিক মনোযোগ দিতে পারেন এবং অনেক পুরুষের চেয়েও অধিক দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তারা আত্মস্থ করা এবং মনোনিবেশ করায় আত্মনিয়োগ করতে পারেন এবং ইসলামের ইতিহাসে এবং অন্যান্য বহু স্থানে স্বাক্ষর রেখে যেতে পারেন। এই বিষয়টি তাদের নিকট সুস্পষ্ট, যারা নবী ﷺ এর সময় এবং তাঁর পরবর্তী সময়ে নারীদের অবস্থার দিকে লক্ষ করেছেন। এটি জ্ঞাত বিষয় যে এই ঘাটতি তাদের থেকে কোনো রেওয়ায়েত বর্ণনা বা সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য হবার ব্যাপারে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, যদি তাকে আরেকজন নারী সমর্থন দেন। যদি তারা দ্বীনের প্রতি সুদৃঢ় থাকেন, তাহলে এটি আল্লাহর তাকওয়ার পথে এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা-বান্দীদের মধ্যে একজন হওয়ার পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। যদিও হায়েয-নেফাসের সময়ে তাদেরকে সিয়াম রাখতে হয় না; যার কাযা পরে আদায় করতে হয়। এবং সেই সময়টিতে তাদেরকে সলাত আদায় করতে হয় না এবং যার কাযাও আদায় করতে হয় না। তবে এর মানে মোটেই এই নয় যে তারা আল্লাহর তাকওয়া ও তাঁর আদেশ পালনের ক্ষেত্রে একদম প্রতিটি জায়গাতেই পিছিয়ে আছে। অথবা এর মানে এটাও নয় যে তারা যে বিষয়গুলোর প্রতি মনোনিবেশ করেছে, সেগুলোতেও পিছিয়ে আছে। বরং এটি তো বুদ্ধি ও দ্বীনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট এক ত্রুটি যা নবী ﷺ ব্যাখ্যা করে গিয়েছেন। কাজেই মুমিন পুরুষদের মোটেই উচিত না নারীদেরকে প্রতিটি জায়গাতেই ত্রুটি আছে বলে অথবা দ্বীনের সকল স্থানেই দুর্বলতা আছে বলে দোষারোপ করা। এটি খাসভাবে দ্বীনের ক্ষেত্রে এক জায়গার দুর্বলতা এবং বুদ্ধির ক্ষেত্রে সাক্ষ্যদানের নির্ভুলতা এবং এই জাতীয় বিষয়ে দুর্বলতা [সর্বক্ষেত্রেই তারা দুর্বল নয়]। এটি সকলের জানা উচিত যে, নবী ﷺ এর বাণীকে সর্বোত্তম উপায়ে এবং সব থেকে সঠিক উপায়ে ব্যাখ্যা করতে হবে। এবং আল্লাহ তা’আলাই সর্বোত্তম জানেন।” [12]
আলোচ্য আলোচনার আলোকে বোঝা গেল যে হাদিসে নারীদেরকে মোটেও সকল স্থানেই স্বল্পবুদ্ধির বলে দাবি করা হয়নি বরং সাক্ষ্যদানের মতো বিশেষ স্থানে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সৃষ্টিগতভাবেই নারীরা পুরুষের চেয়ে ভিন্ন। [13] কাজেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের দক্ষতায় কম-বেশি হওয়া অসম্ভব কিছুই না। নারীদের সাক্ষ্যদান প্রসঙ্গে ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি রচিত ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩’ বইতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
“ মাসিক রজঃচক্রে ৯০% নারী আবেগিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। [14] সুতরাং সে সময়কার সিদ্ধান্ত এবং সুস্থ সময়ের সিদ্ধান্ত এক হয় না। বিশেষ করে স্মৃতি সংরক্ষণ। [15] আবেগ বা পরিস্থিতিগত স্ট্রেসে মেয়েদের ১০% বেশি সময় লেগেছে কোনো কিছু মনে করতে। (Schwabe & Wolf, 2010). আরেকজন নারীর সাক্ষ্য যোগ হলে এই দুর্বলতা কাটল। [16] ” [17]
আরেকটি কথা না বললেই নয়। হাদিসে যা উল্লেখ করা হয়েছে এটা সাধারণভাবে নারীদের অবস্থার বর্ণনা। এককভাবে একজন নারী একজন পুরুষের তুলনায় অধিক বুদ্ধিমান হতেই পারেন বলে মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন। এমনটি হওয়া হাদিসের তথ্যের সাথে মোটেও সাংঘর্ষিক নয়। নারীরা সকল ক্ষেত্রেই ত্রুটিযুক্ত বা পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে আছে এমনটি ভাবা আদৌ সঠিক নয়। পুরুষদের জন্য কখনোই উচিত না নারীদের বুদ্ধি বা দ্বীনের বিষয়ে সৃষ্টিগত অবস্থার প্রসঙ্গ তুলে তাদেরকে কটাক্ষ করা বা ছোট করা।
হাদিসে নারীদের বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে যে সীমাবদ্ধতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে এগুলো কি নারীদের দোষ বা এগুলোর জন্য কি নারীদের উপর দায়ভার বর্তাবে? এ প্রসঙ্গে শায়খ বিন বায(র.)কে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
السؤال:
ما رأيت من ناقصات عقل، ودين: يدل على نقص أجرها بناء عليه، وإلا تكون معذورة؟
الجواب:
لا ما عليها شيء في هذا؛ لأن هذا شيء كتبه الله عليها، إنما هو وصف لها.
অর্থঃ প্রশ্নঃ
“বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও …কাউকে দেখিনি।” [হাদিসের এই বক্তব্য থেকে] এখানে কি এটাই প্রমাণ হয় যে তাদের [নারীদের] সওয়াবের ক্ষেত্রে ঘাটতি হবে? নাকি তাদেরকে ওযরপ্রাপ্ত গণ্য করা হবে?
উত্তরঃ
“ না, এ ব্যাপারে তাদের [নারীদের] কোনো দায়ভার নেই। কেননা এটি এমন বিষয় যা আল্লাহর তাদের ব্যাপারে নির্ধারিত করেছেন। এটি শুধুমাত্র তাদের অবস্থার এক বর্ণনা [তাদের প্রতি নিন্দা নয়]।” [18]
পরিশেষে বলব কে কতোটা শারিরীকভাবে শক্তিশালী বা কে কতোটা বুদ্ধিমান, ইসলামে এগুলো মর্যাদার মাপকাঠি না। বরং ইসলামে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া বা পরহেজগারী। সৃষ্টিগতভাবে কে অধিক বুদ্ধিমান এর দ্বারা কেউ আল্লাহর কাছে বড় বা ছোট হয় না। নারী বা পুরুষের মাঝে যে অধিক তাকওয়াবান, আল্লাহর কাছে সে-ই অধিক মর্যাদাবান বলে গণ্য হবে। স্রেফ লৈঙ্গিক পরিচয়ের ভিত্তিতে কেউ মর্যাদাবান হবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰكُمۡ مِّنۡ ذَكَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰكُمۡ شُعُوۡبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَكۡرَمَكُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ اَتۡقٰكُمۡ ؕ
অর্থঃ "হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।" [19]
আরো পড়ুনঃ
নারীর সাক্ষ্য পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক কেন?
তথ্যসূত্রঃ
[1] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩০৪
[2] আল কুরআন, নিসা ৪ : ১২৪
[3] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৬৮৮৪
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=19207
আরো দেখুনঃ তাফসির ইবন কাসির (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৬১০
[4] মাজমু’উল ফাতাওয়া – ইবন তাইমিয়া, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৩২
https://shamela.ws/book/7289/2870
অথবা https://archive.is/wip/SurS3 (আর্কাইভকৃত)
[5] আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ইবন কাসির, খণ্ড ২০, পৃষ্ঠা ৩৪১
https://shamela.ws/book/4445/12996
অথবা https://archive.is/wip/aG0XM (আর্কাইভকৃত)
[6] শারহ মুসলিম – ইয়াহইয়া বিন শারাফ আন নববী, খণ্ড ১৭, পৃষ্ঠা ১৭২
https://shamela.ws/book/1711/3887
অথবা https://archive.is/wip/AsoHz (আর্কাইভকৃত)
[7] আত তাযকিরাহ – আবুল আব্বাস কুরতুবী, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৯৮৩
https://shamela.ws/book/21536/871
অথবা https://archive.is/wip/I4ZWe (আর্কাইভকৃত)
আরো দেখুনঃ https://islamqa.info/ar/390367/
অথবা https://archive.is/wip/zyIAU (আর্কাইভকৃত)
[8] অনুরূপ বক্তব্য অন্যত্রও আছে। সেখানে বলা হয়েছে,
فَحَدَّثَنَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ أَقَلَّ سَاكِنِي الْجَنَّةِ النِّسَاءُ "
অর্থঃ “…তিনি আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করলেন যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ জান্নাতে মহিলা জাতি সবচেয়ে কম।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৬৮৩৫]
[9] ফাতহুল বারী – ইবন হাজার আসকালানী, খণ্ড ৬ পৃষ্ঠা ৩২৫
https://shamela.ws/book/1673/3519
অথবা https://archive.is/wip/jz9kv (আর্কাইভকৃত)
[10] নবী(ﷺ) শাফায়াত এবং জাহান্নামীদের সাজামুক্ত হয়ে জান্নাতে প্রবেশের বিষয়ে অন্যত্র বিভিন্ন সহীহ হাদিস রয়েছে। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ
https://at-tahreek.com/article_details/1965 অথবা https://archive.is/wip/1c8ZK (আর্কাইভকৃত)
https://islamqa.info/en/21672/ অথবা https://archive.is/wip/ZRKUH (আর্কাইভকৃত)
[11] ফাতহুল বারী – ইবন হাজার আসকালানী, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৪০৬-৪০৭
https://shamela.ws/book/1673/892
https://shamela.ws/book/1673/893
অথবা (আর্কাইভকৃত)
[12] মাজমু’ ফাতাওয়া – আব্দুল আযিয বিন বায, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯৩-২৯৪
https://shamela.ws/book/21537/1765
https://shamela.ws/book/21537/1766
অথবা (আর্কাইভকৃত)
[13] অনেক সময় নারী ও পুরুষের সৃষ্টিগত ভিন্নতার বিষয়টিও ইসলামবিরোধীরা স্বীকার করতে চায় না এবং যুক্তি-বুদ্ধির ধার না ধেরে লাগাতার ইসলামকে নারীবিদ্বেষী ধর্ম বলে অভিযুক্ত করতে থাকে। এদের অনেকেই নিজেদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক দাবি করে। তাদের উদ্দেশ্যে বলবঃ বিবিসির একটি প্রতিবেদনে ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকোলজির একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয়েছে গড়ে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা আইকিউ টেস্টে এগিয়ে আছে। অতএব পুরুষেরা নারীদের তুলনায় তুলনায় চালাক-চতুর (Men cleverer than women)! বিবিসির প্রতিবেদনটির লিঙ্কঃ
http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/education/4183166.stm
অথবা https://archive.is/I2hTt (আর্কাইভকৃত)
এখন তারা কি বিবিসিকে কিংবা ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকোলজিকে “নারীবিদ্বেষী” বলবে?
আমরা অবশ্যই একটিমাত্র গবেষণাকে সত্যের মানদণ্ড ধরি না, স্রেফ একটি গবেষণা উদ্ধৃত করে নারী বা পুরুষ কারা অধিক চালাক বা বুদ্ধিমান এমন দাবি করি না। কিন্তু অনেক ইসলামবিরোধীকেই দেখা যায় ২-১টি গবেষণা উদ্ধৃত করে এবং অপব্যাখ্যা করে ইসলামের বিরুদ্ধে অন্যায় সমালোচনা করে।
[14] Milad, M. R., Zeidan, M. A., Contero, A., Pitman, R. K., Klibanski, A., Rauch, S. L., et al. (2010). The influence of gonadal hormones on conditioned fear extinction in healthy humans. Neuroscience, 168, 652–658. [ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি উল্লেখিত পাদটীকা]
[15] আমাদের রিসার্চ সাজেস্ট করে, মাসিকের চক্রে ব্রেইনের নিজস্ব কার্যক্রম ও যোগাযোগব্যবস্থায় যথেষ্ট প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে, হিপোক্যাম্পাস অংশটা যে জায়গাটা কোনো প্রসঙ্গে রক্ষিত স্মৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে (contextual memory-regulation)। মাসিকচক্রে প্রোজেস্টেরোন হরমোনের কারণে ব্রেইনের বিভিন্ন অংশের সংযোগে পরিবর্তন আসে (bilateral DLPFC and sensorimotor cortex) যা আবেগ ও ব্যথার অনুভূতিতে কাজ করে। (Arélin, ২০১৫) [ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি উল্লেখিত পাদটীকা]
[16] সূরা বাকারা ২৮২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন : এর মানে—একজন নারী যদি সাক্ষ্য ভুলে যায়, আরেকজন যেন তাকে মনে করিয়ে দিতে পারে, ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। (তাফসিরু ইবনি কাসির, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭২৪) ঘটনার স্মরণ নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহ দুইজন নারীর সাক্ষ্যের কথা বলেছেন। কেননা, মন ও স্মৃতির ক্ষেত্রে দুজন নারীর সমকক্ষ একজন পুরুষ। (ইলামুল মুওয়াক্কিয়িন, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৭৫) এখানে নারীকে ছোটো ও তুচ্ছ সাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য নয়। (যেমন, অনেকে বুঝাতে চেষ্টা করে।) বরং উদ্দেশ্য হলো, একটি প্রাকৃতিক দুর্বলতার কথা বর্ণনা করা; যা মহান আল্লাহর ইচ্ছা এবং তাঁর কৌশলগত ব্যাপারের অন্তর্ভুক্ত। [তাফসিরু আহসানিল বায়ান] [ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি উল্লেখিত পাদটীকা]
[17] ডাবল স্ট্যান্ডার্ড-৩, ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি, পৃষ্ঠা ৮৩-৮৪
লেখকের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সম্পুর্ণ লেখার লিঙ্কঃ https://shamsularefin.com/ordhek-keno-uttoradhikhar
অথবা https://archive.is/wip/Cl9BT (আর্কাইভকৃত)
আরো পড়ুনঃ
“নারীর সাক্ষ্য পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক কেন?” (Response To-Anti-Islam)
https://response-to-anti-islam.com/show/নারীর-সাক্ষ্য-পুরুষের-সাক্ষ্যের-অর্ধেক-কেন--/372
[18] هل "ناقصات عقل ودين" يعني نقص الأجر؟
https://binbaz.org.sa/fatwas/23534/هل-ناقصات-عقل-ودين-يعني-نقص-الاجر
অথবা https://archive.is/pJPxk (আর্কাইভকৃত)
[19] আল কুরআন, হুজুরাত ৪৯ : ১৩