Pray for the world economy

ঈদ কি হাসতে শেখায়? ভালোবাসতে শেখায়?

 

কিছু নাস্তিক-ইসলামবিরোধীকে বলতে শোনা যায়ঃ মুসলিমদের ঈদে নাকি কোনো আনন্দ নেই। ইসলামে নাকি সব ধরণের আনন্দ-স্ফূর্তি নিষিদ্ধ। ঈদ নাকি হাসতে শেখায় না, ভালোবাসতে শেখায় না। এই ধরণের অজ্ঞের মতো দাবি দেখে সত্যিই এই মানুষগুলোর জন্য আফসোস হয়।

 

প্রথম কথা হচ্ছে, যে যেই ধরণের মানুষ, তার কাছে 'আনন্দ' এর ধরণও সেই রকম। 'আনন্দ' বলতে যদি আপনি নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা, পর্দাহীনতা, মদ্যপান, জেনা-ব্যভিচার বা এই জাতীয় জিনিসকে বোঝান, তাহলে বলতেই হবে ইসলামে 'আনন্দ' বলে কিছু নেই।

 

 

কিন্তু 'আনন্দ' বলে আপনি যদি পবিত্র, শালীন ও মার্জিত পন্থায় উদযাপনকে বোঝেন, তাহলে ইসলামে বহু আনন্দ আছে। মুসলিমদের ঈদ উৎসব শুরুই হয় উন্মুক্ত ময়দানে ঈদের সলাতের দ্বারা, পবিত্র পন্থায়। ইসলাম হচ্ছে এমন এক ধর্ম যাতে ২টি ধর্মীয় উৎসবেই দরিদ্রদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। ঈদুল ফিতরে যেমন ঈদের সলাতের আগেই দরিদ্রদেরকে খাদ্যের ব্যবস্থা করা তথা ফিতরা আদায় করা আবশ্যক, [1] তেমনি ঈদুল আযহাতে কুরবানীর মাংস দরিদ্রদেরকে খেতে দেবার কথা স্বয়ং কুরআন মাজিদে বলা হয়েছে।

 

“ এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।

 যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।

এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে।

এটা শ্রবণযোগ্য। আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্যে উত্তম। উল্লেখিত ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক;”  [2]

 

 

সমাজের বহু দরিদ্র মানুষ থাকে যারা সারা বছর ভালো কিছু খেতে পায় না। কিন্তু ইসলাম এমন এক ব্যবস্থা করেছে যে ঈদ উৎসবের সময়ে ধনীরা দরিদ্রদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে সাহায্য করবে, এভাবে দরিদ্ররাও উৎসবে শামিল হবে। ঈদ এভাবেই  হাসতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়, ত্যাগের মহিমা শেখায়। পৃথিবীর আর কোন ধর্মে ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের ক্ষেত্রে এই রকম বিধান আছে?

 

মজার বিষয় হল, ইসলামবিরোধীরা অনেক সময় দাবি করে মুসলিমদের ঈদে অমুসলিমদের শরীক হবার কোনো উপায় নেই। অথচ ঈদুল আযহায় কুরবানীর মাংস অমুসলিম প্রতিবেশীদের দেয়া সম্পুর্ণরূপে বৈধ কাজ [3] এবং অমুসলিম প্রতিবেশীদেরকে মাংস প্রদান করা সাহাবী(রা.)দের আদর্শ।

 

"মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন তার গোলাম ছাগলের চামড়া ছাড়াচ্ছিলো। তিনি বলেন, হে বালক! অবসর হয়েই তুমি প্রথমে আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে মাংস দিবে। ..." [4]

 

আমাদের দেশে অনেক হিন্দু ধর্মালম্বী বাস করেন। যেহেতু তারা গরুর মাংস খান না, তাদের ক্ষেত্রে ছাগল, ভেড়া বা কুরবানীকৃত অন্য পশুর মাংস প্রদান করে ঈদুল আযহার আনন্দ তাদের সাথেও ভাগাভাগি করা যেতে পারে। ইসলাম পৃথিবীর সকল জাতির জন্য কল্যাণের।

 

 

ঈদের দিনে মুসলিমরা হালালের সীমায় থেকে যে কোনো প্রকারে আনন্দ করতে পারে। আমাদের দেশে অনাদিকাল ধরে ঈদের দিনে আত্মীয় ও বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, সুন্দর ও নতুন পোশাক পরা, ছোটদেরকে ঈদী হিসাবে উপহার দেয়া, খেলাধুলা করা ইত্যাদি হালাল আনন্দের মাধ্যম প্রচলিত আছে। শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে আরো বহুভাবে ঈদের দিন আনন্দ করা যেতে পারে। আসল কথা হল ঈদের আনন্দ পবিত্র ও মার্জিত। আর এই পবিত্র আনন্দ অনুধাবন করতে পারে উত্তম স্বভাব-চরিত্রের মানুষেরা। অপবিত্র স্বভাবের লোকদের কাছ ঈদের দিনকে যে 'আনন্দহীন' মনে হয় এতে অবাক হবার কিছুই নেই। 'আনন্দ' কী সেটা না চিনেই তারা "ইসলামে কোনো আনন্দ নাই!" বলে চেঁচামেচি করে। ইসলামবিরোধী নাস্তিকরা যে অশালীন সমাজের স্বপ্ন দেখে, তেমন সমাজের স্থান ইসলামে নেই। যারা সমকামিতা, রূপান্তরকামিতা (ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ), জেনা, মদপান এইসব নোংরা জিনিসকে ‘স্বাভাবিক’ মনে করে, যাদের কাছে 'আনন্দ' মানে পার্টি করা, উদ্যম নৃত্য করা, জেনা সম্পর্কিত কার্যকলাপ ইত্যাদি করা – তারা ঈদের আনন্দের কী বুঝবে? মৌমাছির আনন্দ যেমন ফুলের মাঝে, মাছির আনন্দ তেমনি মল-মূত্রের মাঝে। 

 

আমরা তাদেরকে আহ্বান জানাবো নর্দমার এই পন্থা ছেড়ে পবিত্রতার পথে আসতে, অন্ধকারের পথ ছেড়ে ইসলামের আলোতে আসতে। আল্লাহ তাদেরকে ঈদের মর্ম বোঝার ও ঈদ উদযাপন করবার তাওফিক দিন।

 

 

আরো পড়ুনঃ

 

ঈদুল আযহায় পশু কুরবানী করে উৎসব কি অনৈতিক?

হত্যা আর কুরবানি কি এক?

কুরবানীর জন্য কাকে নেওয়া হয়েছিল—ইসমাঈল(আ.) নাকি ইসহাক(আ.)? 

 

 

তথ্যসূত্রঃ


[1] বিস্তারিত দেখুনঃ All About Zakat al-Fitr - Islamqa (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)

https://islamqa.info/en/articles/69/

অথবা https://archive.is/AZW1e (আর্কাইভকৃত)

[2] আল কুরআন, হজ ২২ : ২৭-২৮

[3] বিস্তারিত দেখুনঃ Is Giving Udhiyah Meat to Non-Muslims Permissible? - Islamqa (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)

https://islamqa.info/en/answers/180503/

অথবা https://archive.is/wip/9gec6 (আর্কাইভকৃত)

[4] আল-আদাবুল মুফরাদ - ইমাম বুখারী, হাদিস নং ১২৭ (সহীহ)

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=45442