অনেকেই মনে করে থাকে, বিজ্ঞানের যতো উন্নতি হচ্ছে, ধর্ম মনে হয় ততোটাই কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন সব আবিষ্কার, গবেষণার সাথে ধর্মটা বুঝি আর পেরে উঠলো না। অনেক নাস্তিকও এমন ধারণা পোষণ করে মনে মনে তৃপ্তি পায়। আদতে, ব্যাপারটা যেরকম ভাবা হয় বা যেরকম করে ভাবানো হয়, ঠিক তার উল্টো। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং আধুনিকায়নের সাথে ধর্মের আসলে কোন সংঘাত নেই।
প্রথমে সাধারণ কমনসেন্স দিয়েই ভাবা যাক। একটা সুপার কম্পিউটারের কথাই ধরুন। মানব সভ্যতার অন্যতম প্রধান আবিষ্কারগুলোর মধ্যে কম্পিউটার সম্ভবত একেবারে প্রথম সারির আবিষ্কার। এই কম্পিউটার আমাদের দৈনিক জীবন থেকে শুরু করে আমাদের জীবনের সবকিছুকে একদম ‘ডালভাত’ বানিয়ে ফেলেছে। এই কম্পিউটার দিয়ে আমি যেমন ফেইসবুক ব্রাউজ করি, ঠিক তেমনি এই কম্পিউটার দিয়েই হাজার আলোকবর্ষ মাইল দূরের কোন গ্রহ বা নক্ষত্রের অবস্থান, আকৃতি, কার্যকলাপ নিখুঁতভাবে নির্ণয় করে ফেলি। আচ্ছা, এই কম্পিউটার কে তৈরি করেছে? নিশ্চয়ই কোন বুদ্ধিমান প্রাণী। সাম্প্রতিক বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে যে, সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের চেয়েও মানুষের ব্রেইন দশগুণ বেশিই শক্তিশালী। আপনাকে যখন জিজ্ঞেস করি, ‘কম্পিউটার কে বানিয়েছে?’ আপনি অকপটে উত্তর দেন, - বুদ্ধিমান মানুষ। আবার, সেই আপনাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়,- সেই বুদ্ধিমান মানুষ, যিনি দশটি সুপার কম্পিউটারের সমান, তাকে কে সৃষ্টি করেছে?
আপনি তখন কমন সেন্সের ঘাঁড়,মাথা সবকিছু খেয়ে বলেন, - বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিজ থেকে, স্ব-উদ্যোগে একত্রিত হয়ে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়। আপনাকে যদি আবার বলা হয়, বিলিয়ন বিলিয়ন বছর আগের সেই জ্বালাও-পোঁড়াওময় আবহাওয়ায় কেনো কিছু রাসায়নিক পদার্থের মনে হলো যে তারা একত্রিত হয়ে প্রাণ তৈরি করবে? আর, তাদের মনই বা কোথা থেকে এলো? আপনি তখন কিছু বস্তবাদী বৈজ্ঞানিক ‘থিওরি’ কপচাতে কপচাতে কমনসেন্স, লজিক থেকে বের হয়ে ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার’ নীতিতে চলে যান। সুপার কম্পিউটার আবিষ্কারের পেছনে একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বার হাত আছে, থাকতে হবেই- এটা আপনি বিশ্বাস করেন। কিন্তু ওই সুপার কম্পিউটারের চাইতেও অনেক বেশি শক্তিশালী ‘Human Brain’ এর ব্যাপারে আপনার ধারণা হলো কিছু আবর্জনা, রাসায়নিক পদার্থ ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাধ্যমে এটা নিজে নিজে তৈরি হয়ে গেছে। এর পেছনে কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বার হাত নেই বা থাকতে নেই। হোয়্যাট অ্যা কমনসেন্স!
আমরা সকলেই জানি, বিগ ব্যাংয়ের সময়ে সেই মহা বিস্ফোরণের ফলেই আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টি। বিগ ব্যাং মানে কি? মহা বিস্ফোরণ। আচ্ছা, কখনো কি কোথাও বিস্ফোরণ হতে দেখেছেন? পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণের কথাই ধরুন। আপনাকে প্রশ্ন করি, আমেরিকা যখন জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা ফেলে, সেটাকে আমরা কি বিস্ফোরণ বলতে পারি? আচ্ছা, যদি সেটা বিস্ফোরণ হয়, তাহলে সেই বিস্ফোরণের ফলাফল কি ছিলো? হিরোশিমা নাগাসাকি শহর কি তছনছ হয়ে গিয়েছিলো নাকি আগের চেয়েও সুন্দর, মনোহর, অপরূপ হয়ে উঠেছিলো?
আমরা সবাই জানি যে, হিরোশিমা-নাগাসাকি সেই পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণের পরে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই পারমানবিক বিস্ফোরণের তেজস্ক্রীয়তা এতোই বেশি ছিলো যে, সেই তেজস্ক্রীয়তার ভয়াবহতা এখনো ভোগ করে সেই অঞ্চলের লোকজন। এখনো হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পঙ্গু-বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম নেয়। পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণের সেই রেশ এখনো গর্ভবতী মায়ের পেটে সন্তানের শারীরিক বিকৃতি ঘটায়। এই যে বিস্ফোরণ, এটা কি ক্ষতিকর না উপকারি? আমি জানি সবাই একবাক্যে বলবে- ক্ষতিকর। দুনিয়ায় এমন একটা বিস্ফোরণের নজির কেউ দেখাতে পারবেনা যেখানে কোন বিস্ফোরণ ভালো কিছু সৃষ্টি করেছে, নতুন কিছু সৃষ্টি করেছে যা আগের চেয়ে সুন্দর, মনোহর, উপকারি। নট অ্যা সিঙ্গেল ইনসিডেন্ট। বিগ ব্যাংয়ের সাথে তুলনা করলে হিরোশিমা-নাগাসাকির সেই বিস্ফোরণ কয়েক কোটি ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগও হবেনা। অথচ, বিগ ব্যাংয়ের মতো এতো বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর মতো লাইফ সাপোর্টেড একটা গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষার সকল উপাদান, সকল উপকরণ একেবারে সমান অনুপাতে আছে। একটু বেশিও না, একটু কমও না। আপনার কি মনে হয় এটা নিছক কো-ইনসিডেন্ট?
মহাবিশ্বে চারটা ফোর্স (শক্তি) এর অস্তিত্ব স্বীকার্য। সেগুলো হচ্ছে, Strong Nuclear Force, Weak Nuclear Force, Electromagnatic Force, Gravitional Force.
এই চারটা জিনিস মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন থেকে একেবারে ঠিক সেই অনুপাতেই আছে, যে অনুপাতে হলে আমাদের মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসতে পারে। Strong Nuclear Force ঠিক যে পরিমাণে আছে, যদি তার চেয়ে এক পার্সেন্ট কম বা বেশি থাকতো, তাহলে হয়তো আমাদের মহাবিশ্বে শুধু হাইড্রোজেন থাকতো, অথবা একেবারে হাইড্রোজেন ছাড়া হয়ে যেতো। এমতাবস্থায়, সেই মহাবিশ্বে কোনভাবেই প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব হতো না।
মহাবিশ্বের জন্মলগ্নে Weak Nuclear Force এর পরিমাণ এখন যা আছে যদি তারচেয়ে একটু কম বা একটু বেশি হতো, তাহলে হয়তো মহাবিশ্বে খুব বেশি পরিমাণে হিলিয়াম গ্যাস তৈরি হতো, অথবা একেবারে হিলিয়াম গ্যাস বিহীন একটা মহাবিশ্ব আমরা পেতাম। এমনটা হলে কি হতো জানেন? কোন গ্রহই মহাবিশ্বে অস্তিত্ব লাভ করতো না।
Electromagnatic Force যদি যে পরিমাণ আছে তারচেয়ে সামান্য পরিমাণ কম থাকতো, তাহলে মহাবিশ্বের সব ইলেক্ট্রণ হাওয়ায় মিলিয়ে যেতো এবং এখানে কোন ধরণের অণুই অস্তিত্ব লাভ করতে পারতো না। আবার, Electromagnatic Force যদি যে পরিমাণ আছে, তারচেয়ে সামান্য পরিমাণ বেশি থাকতো, তাহলে পরমাণু কোন ইলেক্ট্রণকেই কনসিস্ট করতে পারতো না। ফলে তখনই কোন প্রকার অণুর অস্তিত্ব লাভ করা সম্ভব হতো না।
এরপর আসা যাক Gravitional Force এর কথায়। এটা যদি যে পরিমাণ আছে, তারচেয়ে সামান্য একটু বেশি থাকতো, তাহলে কি হতো জানেন? গ্রহগুলো মাত্রাতিরিক্ত গরম থাকতো এবং সারাজীবন ধরে দাহ্য হতেই থাকতো। জীবন ধারণের জন্য কোনভাবেই উপযোগি হতোনা। আবার, Gravitional Force যদি সামান্য একটু কম হতো, তাহলে কি হতো? গ্রহগুলোর দাহ্যশক্তি এতোই কম হতো যে সেগুলো ঠান্ডা হয়ে পড়তো। এরকম গ্রহও কোনভাবে জীবন ধারণের জন্য উপযোগি হতো না।
আচ্ছা, বিগ ব্যাংয়ের মতো এরকম মহা বিস্ফোরণের ফলে এই জিনিসগুলো ঠিক সেই অনুপাতে মিলে যাওয়া, যে অনুপাত হলেই জীবন ধারণ এবং তার বিস্তৃতি ঘটার উপযোগি হয়- এটা কি নিছক কাকতালীয়? এই উপাদানগুলোর এরকম অবিশ্বাস্য অনুপাতে ‘মিলে যাওয়া’ কে প্রয়াত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং এভাবে বলেছেন, - “The remarkable fact is that the values of these numbers seem to have been very finely adjusted to make possible the development of Life.’
এই যে জীবনের উপযোগিতার জন্য এই জিনিসগুলোর এরকম নিঁখুতভাবে মিলে যাওয়া, এটার পেছনে কি কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বার হাত নেই? কমনসেন্স কি বলে?
উহু, কাহিনী এখানেই শেষ নয়। শুধু যে Strong Nuclear Force – Weak Nuclear Force এবং Electromagnatic Force আর Gravitional Force মিলেমিশে একটা লাইফ সাপোর্টেড মহাবিশ্ব আমরা পেয়ে গেছি তাই নয়। এই উপাদানগুলোর এরকম ‘জাস্ট মিলে যাওয়া’র জন্য দরকার ছিলো একদম সঠিক সময়ে একটা বিগ ব্যাংয়ের, অর্থাৎ একটা মহা বিস্ফোরণের। ঠিক যে সময়টায় এবং যে গতি নিয়ে বিগ ব্যাং ঘটেছিলো, যদি তারচেয়ে একটু কম গতিতে বিগ ব্যাং ঘটতো, তাহলে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ মাত্রা (Expanding Rate) ধীর হয়ে যেতো। ফলে, মহাবিশ্বের অভিকর্ষ বলও ধীর হয়ে পড়তো। যদি এমনটা হতো, তাহলে আমাদের মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের বদলে নিজের মধ্যে গুটিয়ে আবার একটি বিন্দুতে এসে পরিণত হতো। বিজ্ঞানীরা এটাকে বলে ‘Big Crunch’. যদি এমনটা হতো, তাহলে এই যে আপনি, আমি, এই মহাবিশ্ব, গ্রহ-নক্ষত্র, তারকামালা এর কোনকিছুই জন্মাতো না। কিছুই না। আবার, ঠিক যে সময়টায় বিগ ব্যাং ঘটেছিলো, যদি তারচেয়ে একটু সময় পরে ঘটতো এবং যে গতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিলো, যদি গতির মাত্রা তারচেয়ে একটু বেশি হতো, কি হতো জানেন? মহাবিশ্ব এতো দ্রুতই দৌঁড়াতো যে, আমাদের বসবাস উপযোগি কোন গ্যাস, কোন গ্যালাক্সি কোনকিছুই তৈরি হবার সুযোগ থাকতো না।
শুধু এসবই না। আমাদের ছোট্ট পৃথিবীটাই আগাগোড়া একটা মিরাকল। সূর্য থেকে আমাদের পৃথিবীর এখন যে দূরত্ব, সেটা যদি তারচেয়ে একটু বেশি হতো কি হতো জানেন? আমাদের পুরো পৃথিবীটাই ঠান্ডা বরফে ঢেকে যেতো। পুরো পৃথিবীই হয়ে উঠতো এন্টার্কটিকা মহাদেশ যেখানে কেবল পেঙ্গুইন ছাড়া আর কোন প্রাণীই থাকতে পারতো না।
আবার, পৃথিবীর অবস্থান যদি বর্তমানের চেয়ে আরেকটু নিকটে হতো, তাহলে সব তো কবেই পুঁড়ে কাঠ-কয়লা হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যেতো।
আমাদের চারপাশে ঘিরে থাকা Magnetic Field এবং সূর্য থেকে ধেয়ে আসা অতি বেগুনী রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষাকারী বায়ুমন্ডলের ‘ওজোন স্তর’ এর কথা নাহয় বাদই দিলাম। এই যে এতো এতো উপাদান, উপকরণ ঠিক সেই অনুপাতে ‘মিলে যাওয়া’ টা কি নিছক কোন একসিডেন্ট? এর পেছনে কি সত্যিই কোন মহা পরিকল্পকের হাত নেই? আপনার অবচেতন মনকে প্রশ্ন করুন।
আমরা পদার্থবিদ্যার যে সূত্রগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো কেনো ঠিক সেরকম যেরকমটা প্রকৃতির দরকার? কেনো E = mc2 হলো? কেনো ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া’ থাকতে হবে? শক্তির নিত্যতা সূত্র, থার্মোডাইনামিক্সের সূত্রগুলো কেনো ঠিক সেরকম যেরকম আমাদের দরকার? এর ব্যতয় নেই কেনো কোথাও? আমরা এসব সূত্রের কাজ সম্পর্কে জানি। কিন্তু এসব সূত্র ঠিক কোত্থেকে এসেছে? ঠিক এই প্রশ্নটাই রেখেছেন এক সময়কার সবচেয়ে ইনফ্লুয়েন্সিভ নাস্তিক Antony Flew. তিনি বলেছেন, - ‘Then, who wrote the laws of nature?’
সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রশ্ন আসলে এটাই। বিজ্ঞান আমাদের সূত্রগুলোর কাজ জানাতে পারে, কিন্তু এর উৎসমূল সম্পর্কে জানাতে পারেনা। আরো চ্যালেঞ্জিং প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের অস্তিত্ব। বিজ্ঞান মহলে সুবিদিত চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নটাই হচ্ছে,- Why there is something rather than nothing?’ কেনো ‘কোনকিছু’ না থাকার বদলে ‘কোনকিছু’ আছে? এই পৃথিবী, এই মহাবিশ্ব, এই গ্রহ, নক্ষত্র, তারকা, সাগর-মহাসাগর এসব তো সৃষ্টি না হলেও পারতো। কেনো হলো? এর পেছনে রহস্য কি? আপাত এই সাধারণ প্রশ্নটাই যুগ যুগ ধরে ‘অমীমাংসিত’ অবস্থায় থেকে গেছে।
‘বিবর্তনবাদ তত্ত্ব’ এসে মাঝখান দিয়ে বিজ্ঞানের অন্দরমহল থেকে ধর্ম আর স্রষ্টাকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে দিতে চাইলো। চার্লস ডারউইন এসে বললেন যে, আমরা আসলে কোন নির্দিষ্ট মানব-মানবী থেকে জন্মাইনি। আমাদের আদিপুরুষ একটি এককোষী ব্যাকটেরিয়া মাত্র। সেই একটি এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে বিবর্তিত হতে হতে আমরা আজকের আধুনিক মানুষে এসে ঠেকেছি।
টু বি অনেস্ট, বিজ্ঞান জগতে এই ‘বিবর্তনবাদ তত্ত্ব’র মতো ধোঁকাবাজিপূর্ণ, গোঁজামিলে ভরা কোন তত্ত্ব বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে আর একটিও নেই। বিজ্ঞান জগতের ঠুঁটি চেপে ধরা বস্তুবাদী বিজ্ঞান দর্শনের মূলনীতিই হলো- স্রষ্টাতত্ত্বকে কোনভাবেই তারা বিজ্ঞান মহলে প্রবেশ করতে দিবে না। ফলে, যখনই কোন বিজ্ঞানী, কোন গবেষক বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বা করেছে, তাকে বরণ করে নিতে হয় অপমান-লাঞ্চনা আর চাকরি থেকে বহিঃস্কার। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা জার্মানির বিজ্ঞানী গুনটার বেকলিই তার উদাহরণ।
বিবর্তনবাদ তত্ত্বে চার্লস ডারউইন অসাড় প্রমাণ হয়েছে অনেক আগেই। তার প্রস্তাবিত ‘ন্যাচারাল সিলেকশন’ পদ্ধতিকে স্বয়ং ডারউইনিস্টরাই অনেক আগে ছুঁড়ে ফেলেছে। ডারউইনকে ত্যাগ করে ‘নিও-ডারউইনিজম’ পদ্ধতির বিবর্তনবাদকে ব্যাখ্যার যে ক’টা ফর্মুলা তারা দাঁড় করিয়েছে, তার কোনটার সাথেই আসল বিজ্ঞানের বিন্দুমাত্র যোগসাজেশ নেই। যা আছে তা অর্ধসত্য, বিকৃত।
[ এ ব্যাপারে লেখকের দ্বিতীয় বই ‘আরজ আলী সমীপে’ তে একটি অধ্যায়ে সবিস্তার আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরো আলোচনা পাওয়া যাবে ডা. রাফান আহমেদ লিখিত ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ বইতে। ]
সুতরাং, বিজ্ঞান কখনোই ধর্মবিরোধি হয় না,না প্রকৃত ধর্ম কখনো বিজ্ঞান বিরোধি হয়। বিজ্ঞান নির্ভর করে প্রকৃতির উপর। প্রকৃতি চলে তার সুনির্দিষ্ট ‘ল’ অনুসারে। আর প্রকৃতির সেই ‘ল’ গুলো তো মহান আল্লাহ তাআলা’রই সৃষ্টি। তাহলে, এতে কি করে বিরোধ হতে পারে?
যারা আপনার সামনে বিজ্ঞানকে ধর্মের বিপক্ষে হাজির করে, তারা আপনাকে অর্ধসত্য বিজ্ঞান শেখায়। এরা না নিজেরা সঠিক কিছু জানে, না এরা সঠিক কোনকিছু জানাতে পারে। বিজ্ঞান এবং স্রষ্টার ব্যাপারে বলতে গিয়ে আধুনিক জীব বিজ্ঞানের জনক লুই পাস্তুর বলেছেন,- ‘The more I study science the more I think about God’.
বিজ্ঞান চর্চা কখনোই কাউকে ধর্মবিরোধি করে তোলে না। যারা বিজ্ঞানের ধোঁয়া তুলে ধর্মবিরোধি সাজে, এরা মূলত নিজেদের ‘নফস’ কে প্রাধান্য দেয়। ধর্মের অধীন হতে হলে তাকে কিছু ‘রুলস এন্ড রেগুলেশন’ এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ভোগবাদী দুনিয়ার মোহে সে এসব রুলস এন্ড রেগুলেশন মানতে রাজি নয়। সে অবশ্যই বিশ্বাস করে যে, তার চারপাশের প্রকৃতি, তার দৃষ্টিগোচরের সবকিছুই একটা নিয়ম, রুলস মেনে চলে। তার কমনসেন্স তাকে এটাও বলে যে, যেখানেই কোন ‘রুলস’ থাকে, ‘নিয়ম’ থাকে, ‘ল’ থাকে, সেখানেই একজন ‘ল গিভার’ থাকাও আবশ্যক। সে জানার পরও অস্বীকার করে। কারণ, তারা নিজেদের প্রবৃত্তিকেই নিজেদের ‘রব’ বানিয়ে নিয়েছে।