মূলঃ হামজা যর্তজিস (Hamza Tzortzis)
অনুবাদঃ ইশতিয়াক আহমেদ সাঈফ
কোনো ভাষায় বিদেশি শব্দের ব্যবহারের ধারণাকে ভাষাতত্ত্বের দিক থেকে বলা হয় 'borrowing'[1] বা 'গ্রহণ'। এই বিদেশি শব্দ গ্রহণের ব্যাপারটি বিশ্বব্যাপী দেখা যায় এবং সব ভাষার জন্যই এটি প্রযোজ্য। ইংরেজি ভাষা নিজেই এর এক অন্যতম উদাহরণ। যেমন, আমরা যদি 'Philosophy' শব্দটির কথাই ধরি, এর উৎপত্তির মূলে রয়েছে গ্রীক শব্দ 'Philo' যার অর্থ ভালোবাসা এবং 'Sophia' যার অর্থ প্রজ্ঞা। বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষেরা একে অপরের সংস্পর্শ আসার ফলেই মূলত কোনো ভাষায় 'বিদেশি' শব্দের সংযুক্তি ঘটে [2]।
রসূল (ﷺ) এর নবুয়ত লাভের আগ থেকেই আরবরা বাণিজ্যিক কারণে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সংস্পর্শে আসে এবং সে সময়ে বেশ কিছু বিদেশি শব্দ আরবি ভাষায় ঢুকে যায়। [3] কুরআন নাযিলের পূর্বেই সে সব শব্দের আরবি ভাষায় সংযুক্তি ঘটে [4] এবং শব্দগুলো ঐ সময়েই আরবি ভাষায় ব্যবহৃত হতো। [5] ইমাম শাফিঈ (রহ.) [6] এর মতে এই শব্দগুলো পরিপূর্ণভাবেই আরবি ভাষার অংশভুক্ত হয়েছে এবং সেগুলো আরবি ভাষারই অংশ [7]।
বিদেশি ভাষা থেকে আগত এই শব্দগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ
তূর (طُورِ) (কুরআন ৯৫ : ২) সিরিয়াক থেকে
ইসতাবরাক্ব (إِسْتَبْرَقٍ) (কুরআন ১৮ : ৩১) ফার্সি থেকে
সিনাই (سِينِينَ) (কুরআন ৯৫ : ২) নাবাতিয় থেকে
রাক্বীম (رَّقِيمِ) (কুরআন ১৮ : ৯) গ্রীক থেকে
ইয়াম্ম (يَمِّ) (কুরআন ৭ : ১৩৬) কপটিক (কিবতী / মিসরীয়) থেকে
দুররী (دُرِّيٌّ) (কুরআন ২৪ : ৩৫) হাবশী (আবিসিনিয়) থেকে
হুদনা (هُدْنَا) (কুরআন ৭ : ১৫৬) হিব্রু (ইব্রানী) থেকে [8]
"এটি সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়" [9] -- কুরআনের এ বক্তব্যের ব্যাপারে ইমাম সুয়ুতি (রহ.)র মত হচ্ছে, কিছু বিদেশী শব্দের উপস্থিতি এ গ্রন্থের “আরবি হওয়া”র ব্যাপারটিকে বিন্দুমাত্র কমিয়ে দেয় না ; যেমন কোনো ফারসী কবিতায় বিদেশি শব্দের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও একে অশুদ্ধ ফারসি কবিতা বলা হয় না [10]। তা ছাড়াও এ আয়াতে বর্ণিত "এটি [কুরআন] সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়" - দ্বারা সমগ্র কুরআনের ভাষাকে বোঝানো হয়েছে, আলাদাভাবে কোনো শব্দকে বোঝানো হয় নি [11] ।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, ভাষার প্রকৃতি এবং কোনো ভাষার শব্দভাণ্ডারে কীভাবে বিদেশি শব্দ একীভূত হয় সে বিষয়ে ধারণা থাকলে কুরআনের সমালোচকদের ভ্রান্ত দাবী খুব সহজেই খণ্ডন করা যায়। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ও বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষেরা একে অপরের সংস্পর্শ আসার ফলেই মূলত কোনো ভাষায় 'বিদেশি' শব্দের সংযুক্তি ঘটে। কুরআনের ভাষা যে “সুস্পষ্ট আরবি ভাষা” এ বক্তব্যটি সম্পূর্ণ সঠিক কারণ কুরআন নাযিলের বহু আগে থেকেই এই শব্দগুলো পরিপূর্ণভাবেই আরবি ভাষার সংযুক্ত হয়েছিল এবং আরবি ভাষারই অংশ ছিল।
তথ্যসূত্র:
[1] G. Yule. 1985. The Study of Language. Cambridge University Press, p. 52
[2] H. Abul-Raof. 2003. Exploring the Qur’an. Al-Makhtoum Institute Academic Press, p. 38
[3] F. E. Peters. 1994. Muhammad and the Origins of Islam. State University of New York, Chapter 3;
এবং
হাসান জিয়া' আল-দীন. ১৯৮৮. আল-আহরুফ আল-সাব'আহ ওয়া-মানযিলাত আল-ক্বিরা'আত মিনহা। বৈরুত: দার-আল বাশা'ইর আল-ইসলামিয়াহ, পৃ. ৩৭
[4] Exploring the Qur’an, p. 39
[5] প্রাগুক্ত
[6] ৮২০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন
[7] উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে এখান থেকে-
A. Jeffrey. 1938. The Foreign Vocabulary of the Qur’an. Baroda: Oriental Institute, p. 110
[8] Exploring the Qur’an, p. 39-40
[9] কুরআন, 16:103
[10] আস-সুয়ুতি. 1996. আল ইতক্বান ফী উলুমুল কুরআন, খণ্ড ১
বৈরুত: দারুল ইহইয়া 'আল-উলুম, পৃষ্ঠা ৩৬৭
[11] Exploring the Qur’an, p. 40
[প্রবন্ধটি ভাবানুবাদ করা হয়েছে।]
উৎসঃ http://www.hamzatzortzis.com/q-a/does-the-quran-contain-foreign-words/
http://thefactsaboutislam.blogspot.com/2013/12/does-quran-contain-foreign-words-by.html