কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা পরিচালিত অর্থাৎ একটি শরিয়া রাষ্ট্রে অমুসলিমদের ধর্মপালন ও উপাসনালয়ের অধিকারের ব্যাপারে নাস্তিক-মুক্তমনাদের থেকে অনেক বিরূপ সমালোচনা শোনা যায়। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো একটি শরিয়া রাষ্ট্রে অমুসলিমদের ধর্মপালন ও উপাসনালয়ের ব্যাপারে কী নীতি অবলম্বন করা হয়।
অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতাঃ
ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের নিজ ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা থাকে। এমনকি ইসলামী রাষ্ট্র তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে, সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত কাতারভিত্তিক ফতোয়ার ওয়েবসাইট Islamweb এ বলা হয়েছে,
“...যিম্মির (ইসলামী রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিক) অবশ্যই ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। অর্থাৎ সে স্বাধীনভাবে ইসলাম গ্রহণ করতে পারবে অথবা নিজ ধর্মের উপর থাকতে পারবে। যদিও আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করা এবং হৃদ্যতাপূর্ণভাবে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা।
উপরে যেটি উল্লেখ করা হলো (ধর্মীয় স্বাধীনতা) সেটি তাদের মৌলিক অধিকারের একটি এবং তাদের সঙ্গে চুক্তির দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কাজেই মুসলিম রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের গির্জাকে ভেতরকার এবং বাহিরকার আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা। তাদের নিজ নিজ মন্দিরগুলোতে এবং গ্রামগুলোতে উপাসনা করবার অধিকারও রয়েছে। তবে তারা তাদের উপাসনার রসমগুলোকে মুসলিমদের সমাবেশ এবং রাস্তাগুলোতে প্রদর্শন করতে পারবে না যার দরুণ মুসলিমরা সেগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়।… ” [1]
বিনা জিজিয়ায় বসবাসঃ
অমুসলিমদের উপাসনালয়ের সেবক, সন্যাসী, ভিক্ষু এদেরকে ইসলামী রাষ্ট্রে কোনো জিজিয়া করও দিতে হয় না। তারা বিনা জিজিয়ায় ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করেন। [2] কো্নো অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করলে হয়তো তাদেরকেও কর দিয়ে বসবাস করতে হতো।
উপাসনালয় ও এর অধিবাসীদের সুরক্ষাঃ
ইসলামের নীতি হচ্ছে, অমুসলিমদের উপসনালয়ে যুদ্ধাবস্থাতেও হামলা করা যাবে না। যাজক, পুরোহিতদেরকে হত্যা করা যাবে না। তাদের উপাসনালয় জ্বালিয়ে দেয়া যাবে না। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন,
انْطَلِقُوا بِسْمِ اللَّهِ وَبِاللَّهِ، وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ، تُقَاتِلُونَ مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ، أَبْعَثُكُمْ عَلَى أَنْ لَا تَغُلُّوا، وَلَا تَجْبُنُوا، وَلَا تُمَثِّلوا، وَلَا تَقْتُلُوا وَلِيدًا، وَلَا تَحْرِقُوا كَنِيسَةً، وَلَا تَعْقِرُوا نَخْلًا
অর্থঃ “তোমরা আল্লাহ ও আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা কর। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি : (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না।” [3]
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন,
كَانَ إذَا بَعَثَ جُيُوشَهُ ، قَالَ : لاَ تَقْتُلُوا أَصْحَابَ الصَّوَامِعِ
অর্থঃ “রাসুলুল্লাহ(ﷺ) নিজের কোনো বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন, “তোমরা গির্জার অধিবাসীদেরকে হত্যা করবে না।” [4]
নবী(ﷺ) এর সাহাবীদের আমলঃ
শরিয়া রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মডেল হচ্ছে খুলাফায়ে রাশিদীন এর শাসনামল। যে সময়টিতে হেদায়াতপ্রাপ্ত খলিফাগণ নবুয়তের আদলে শাসন পরিচালনা করতেন। রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর শাসনামলে অমুসলিম নাগরিকদের সাথে সম্পাদিত একটি চুক্তিপত্রে তাদের সকল অধিকার নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। তাঁর খলিফা আবু বকর(রা.) ঐ সব অধিকার শুধু বহালই রাখেননি; বরং তাঁর খিলাফাতের মোহর ও স্বাক্ষর দ্বারা ঐ চুক্তিপত্রটি সত্যায়িত করেন। তাঁর শাসনামলে যেসব রাজ্য ইসলামী রাষ্ট্রের শাসনাধীনে এসেছিল, তিনি ঐ সব রাজ্যের অমুসলিমদের জন্যে চুক্তিপত্রে উল্লেখিত সকল অধিকারই বলবৎ রাখেন। ইরাকের হীরাবাসীদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের ভাষা নিম্নরূপঃ
أن لا يهدم لهم بيعة ولا كنيسة ولا قصرا من قصورهم التي كانوا يتحصنون فيها إذا نزل بهمعدو لهم ولا يمنعون من ضرب النواقيس ولا من إخراج الصلبان في يوم عيدهم
অর্থঃ “তাদের খানকাহ ও গির্জাগুলো ধ্বংস করা হবে না। প্রয়োজনের সময় শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য যে সব ইমারতে তারা আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে সেগুলোও নষ্ট করা হবে না। নাকুস ও ঘণ্টা বাজাতে নিষেধ করা হবে না। আর উৎসবের সময় ক্রুশ মিছিল বের করার ওপরও কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে না।” [5]
উসামাহ (রা.)-এর নেতৃত্বে শাম অভিমুখে অভিযান প্রেরণের সময় তার প্রতি আবু বকর (রা.)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ এই ছিল যে,
وسوف تمرون بأقوام قد فرغوا أنفسهم في الصوامع فدعوهم وما فرغوا أنفسهم له
অর্থঃ “যাত্রাপথে তোমাদের সাথে এরূপ অনেক লোকের সাক্ষাতও হবে, যারা তাদের জীবনকে উপাসনালয়ের মধ্যে উৎসর্গ করে দিয়েছে, তাদেরকে তোমরা তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেবে।” [6]
মিসরবিজয়ী সাহাবী আমর ইবনুল আস(রা.) সেখানকার অধিবাসীদের সাথে যে চুক্তি করেছিলেন তাতে উল্লেখ ছিলঃ
“পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। এটা হচ্ছে মিসরবাসীদের প্রতি দেয়া হযরত আমর (রা.)-এর একটি নিরাপত্তানামা, তাদের জানের জন্যে, তাদের ধন-দৌলতের জন্যে, গির্জা, ক্রুশ, জল ও স্থলের জন্যে, কোন কিছুর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হবে না। কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা হ্রাস করা হবে না বা পরিহার করা হবে না। মিসরের বাসিন্দাগণ কর আদায় করবে যদি তারা এ সন্ধিনামায় একাত্মতা প্রকাশ করে।…” [7]
তবে খলিফা উমার(রা.) এর সময়ে আগ্রাসী পরাশক্তি বাইজানটাইনদেরকে পরাজিত করে জেরুজালেম বিজয়ের পরে সেখানকার খ্রিষ্টান অধিবাসীদের ব্যাপারে কিছু কঠোর শর্ত দেয়া হয়। বাইতুল মুকাদ্দাস এবং এর আশপাশের ভূমি ইসলামের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জনপদের একটি। সেখানে নতুন করে গির্জা স্থাপনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাসহ আরো কিছু ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। চুক্তিনামার মধ্যে উল্লেখ ছিলোঃ
“…ইহা হইতেছে শাম দেশের অমুক অমুক নগরের অধিবাসীগণের পক্ষ হইতে আল্লাহর বান্দা আমীরুল-মু'মিনীন উমরকে প্রদত্ত লিখিত প্রতিজ্ঞাসমূহ—আপনারা যখন আমাদের নিকট আগমন করিলেন, তখন আমরা আমাদের নিজেদের জন্যে, আমাদের সন্তান-সন্ততির জন্যে, আমাদের ধন-সম্পত্তির জন্যে এবং আমাদের সব ধর্মাবলম্বী লোকদের জন্যে আপনাদের নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করিলাম। উক্ত নিরাপত্তার বিনিময়ে আমরা প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, আমরা আমাদের নগরে বা উহার চতুষ্পর্শ্বে কোথাও কোন নূতন গীর্জা ইবাদতখানা নির্মাণ করিব না; কোন পুরাতন গির্জা বা ইবাদত খানা মেরামত করিব না; ইতিপূর্বে যে সকল গীর্জা ও ইবাদতখানা মুসলমানদের নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত হইয়াছে, উহাদিগকে গির্জা ও ইবাদত খানা রূপে পুনঃপ্রচলিত করিব না; আমাদের কোন গির্জায় রাত্রিতে বা দিনে কোন মুসলমান অবস্থান করিতে চাহিলে তাহাকে বাধা দিব না; আমাদের গির্জাগুলির দ্বারসমূহ পথিক ও মুসাফিরদের জন্যে উন্মুক্ত রাখিব; কোন পথিক মুসলমান আমাদের আবাসস্থলের কাছ দিয়া
... … …
গির্জায় প্রকাশ্য স্থানে ক্রুশ রাখিব না; মুসলমানদের রাস্তায় বা তাহাদের বাজারে ক্রুশ বা নিজেদের ধর্মীয় পুস্তক প্রকাশ করিব না; গির্জায় উচ্চ শব্দে ঘণ্টা বাজাইব না; মুসলমানের উপস্থিতিতে গির্জায় উচ্চঃস্বরে নিজেদের ধর্মীয় পুস্তক পাঠ করিব না; ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কোনরূপ মিছিল বাহির করিব না; মৃতদেহ বহন করিয়া লইয়া যাইবার সময়ে উচ্চঃস্বরে ক্রন্দন করিব না; …” [8]
এ ছাড়া আরব উপদ্বীপের মধ্যেও অন্য ধর্মালম্বীদের স্থায়ী বসবাস ও উপাসনালয় নির্মাণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার কথা সুন্নাহ থেকে পাওয়া যায়। প্রবন্ধের শেষাংশে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইন শা আল্লাহ।
ইসলামী আইনশাস্ত্রে এ ব্যাপারে বিধি-বিধানঃ
ইসলামী ফকিহগণ সকল দলিলের আলোকে ইসলামে রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের উপাসনালয়ের বিধান আলোচনা করেছেন। আমরা এখন এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত বিধি-বিধানগুলো ড. আহমদ আলী লিখিত ‘ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা’ গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করছিঃ
“ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমরা নিজেদের এলাকা ও পরিমণ্ডলে স্বাধীনভাবে স্ব স্ব ধর্ম-কর্ম প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে পালন করতে পারবে। তবে একান্ত মুসলিম জনপদের [9] অভ্যন্তরে প্রকাশ্যে ধর্ম-কর্ম পালন করতে দেয়া থেকে তাদেরকে বাধা দেয়া অসঙ্গত নয়। ইসলামী রাষ্ট্র প্রয়োজন মনে করলে এ ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করতে পারবে। মুসলিম জনপদগুলোতে তাদেরকে কেবল ক্রুশ ও প্রতিমাবাহী শোভাযাত্রা বের করতে এবং প্রকাশ্যে ঢাকঢোল বাজাতে বাজাতে বের হতে নিষেধ করা হবে। তবে মুসলিম জনপদের অভ্যন্তরে অমুসলিমদের প্রাচীন উপাসনালয় থাকলে তার অভ্যন্তরে তারা সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে। ইসলামী সরকার তাতে কোন রূপ হস্তক্ষেপ করবে না। [10]
... ... ...
তাদেরকে তাদের বিবেকের বিরুদ্ধে কোন চিন্তা অবলম্বনে বাধ্য করা যাবে না। দেশের প্রচলিত আইনের বিরোধী নয় এমন যে কোন কাজ তারা আপন বিবেকের দাবি অনুসারে করতে পারবে। এ কারণে অমুসলিমকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য কোন রূপ চাপ সৃষ্টি করা বিধেয় নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ -‘‘ ধর্মের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই।’’ (সুরা বাকারাহ ২৫৬) অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-কে উদ্যেশ্য করে বলেন, أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ “তুমি কি লোকদেরকে মু’মিন হবার জন্য বাধ্য করবে?” (সুরা ইউনুস ৯৯) অর্থাৎ জোর করে কাউকে মু'মিন বানানো তোমার কাজ নয়। লোকদের নিকট আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়াই হল তোমার একান্ত দায়িত্ব। তবে তাদের কেউ ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তা ভিন্ন কথা। এ কারণে কোন অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করার পর তা ত্যাগ করল এবং যদি প্রমাণিত হয় যে, সে একান্ত চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিল, তাহলে তার বেলায় মুরতাদের হুকম প্রযোজ্য হবে না।
মুসলিমরা যে সব কাজকে পাপ ও অপরাধ মনে করে, অমুসলিমরা এ ধরনের কোন কাজকে বৈধ রূপে জানলে (যেমন- মদ সেবন, শুকর পালন ও ক্রয়-বিক্রয়, ক্রুশ বহন ও শঙ্খ ধ্বনি বাজানো এবং রমযানের দিনে পানাহার প্রভৃতি) তা করতে তাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না, যদি না তারা তা প্রকাশ্যে মুসলিমদের মধ্যে সম্পাদন করে। [11]
অমুসলিমরা তাদের জনপদের মধ্যে পুরাতন উপাসনালয়গুলোর সংরক্ষণ ও সংস্কারের পাশাপাশি নতুন উপাসনালয়ও তৈরী করতে পারবে। ‘একান্ত মুসলিম জনপদে’র অভ্যন্তরে নতুনভাবে অমুসলিমদের উপাসনালয় তৈরি করতে দেয়া যাবে না। তবে সেখানে তাদের প্রাচীন উপাসনালয় থাকলে, তাতে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। যদি তা ভেঙ্গে যায়, একই জায়গায় তা পুনঃনির্মাণের অধিকার তাদের রয়েছে।[12] ‘একান্ত মুসলিম জনপদ নয়’- এ ধরনের এলাকায় অমুসলিমরা নতুন উপাসনালয় তৈরি করতে পারবে। অনুরূপভাবে যে এলাকা বর্তমানে ‘একান্ত মুসলিম জনপদ’ নয়, সরকার যেখানে জুম‘আ, ‘ঈদ ও ফৌজদারী দণ্ডবিধির প্রচলন বন্ধ করে দিয়েছে, সেখানেও অমুসলিমরা নতুন উপাসনালয় তৈরি এবং প্রকাশ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে।
মুসলিমদের হাতে যে সব নগরী পত্তন হয়েছে (যেমন- বাগদাদ, কূফা, বসরা, ওয়াসিত প্রভৃতি), সেখানে অমুসলিমদেরকে নতুনভাবে কোন উপাসনালয় তৈরির অনুমতি দেয়া হবে না। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, لا تبنى كنيسة فى الإسلام و لا يجدد ما خرب منها ‘‘ইসলামী ভূখণ্ডে কোন গীর্জা না নির্মাণ করা যাবে, না কোন জীর্ণ গীর্জার সংস্কার করা যাবে।” [13] অধিকন্তু, এ ধরনের নগরীতে অমুসলিমদেরকে মদ সেবন ও শুকরের ক্রয়-বিক্রয় করা থেকেও বারণ করা হবে। [14] ইবনু ‘আববাস (রা.) বলেন, ‘‘যে সব জনপদকে মুসলিমরা বাসযোগ্য বানিয়েছে, সেখানে অমুসলিমদের নতুন মন্দির, গীর্জা ও উপাসনালয় বানানো, বাদ্য বাজানো এবং প্রকাশ্যে শুকরের গোস্ত ও মদ বিক্রি করার অধিকার নেই। তবে অনারবদের হাতে আবাদকৃত, পরে মুসলিমদের হাতে বিজিত এবং মুসলিমদের বশ্যতা স্বীকারকারী জনপদে অমুসলিমদের অধিকার তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির শর্তানুসারে নির্ধারিত হবে। মুসলিমরা তা মেনে চলতে বাধ্য হবে।’’ [15]
যুদ্ধের মাধ্যমে হস্তগত অমুসলিম জনপদের উপাসনালয় দখল করার অধিকার ইসলামী সরকারের রয়েছে। তবে সৌজন্য বশত এ অধিকার ভোগ করা থেকে বিরত থাকা এবং উপাসনালয়গুলোকে যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায় বহাল রাখা উত্তম। বিশিষ্ট ফকীহ আল-কাসানী বলেন, ‘‘ প্রাচীন উপাসনালয়গুলোকে ধ্বংস করা কোন অবস্থায়ই বৈধ নয়।’’[16] হযরত ‘উমার (রা.)-এর আমলে যত দেশ বিজিত হয়েছে তার কোথাও কোন উপাসনালয় ভেঙ্গে ফেলা হয় নি বা তাতে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করা হয় নি। হযরত আবূ বাকর (রা.)-এর আমলে হীরাবাসীদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে এ কথাও লেখা হয়েছিল যে, ‘‘ তাদের খানকাহ ও গির্জাগুলো ধ্বংস করা হবে না। প্রয়োজনের সময় শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য যে সব ইমারতে তারা আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে সেগুলোও নষ্ট করা হবে না। নাকুশ ও ঘন্টা বাজাতে নিষেধ করা হবে না। আর উৎসবের সময় ক্রুশ বের করার ওপরও কোন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে না।’’[17] হযরত উমার ইবনু আবদিল ‘আযীয (রহ.) আঞ্চলিক গভর্নরদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দান করেছিলেন যে, ألا يهدموا بيعة ولا كنيسة ولا بيت نار، “তারা যেন কোন উপাসনালয়, গীর্জা ও অগ্নিকুণ্ড ধ্বংস না করে।" [18] ”
প্রখ্যাত হাম্বলী ফকিহ ইমাম ইবনু কুদামা মাকদিসি(র.) উমার ইবন আবদুল আযিয(র.) এর এই নির্দেশটি উদ্ধৃত করে বলেছেন, এ বিষয়টি ইজমার পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে (তাদের উপাসনালয়গুলো অক্ষত রাখতে হবে)। [19.5]
মুফতি তাকি উসমানী(হাফি.) এ ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন,
“নতুন উপাসনালয় নির্মাণের প্রসঙ্গে মুসলিম আইনশাস্ত্রবিদরা একমত যে, যদি অমুসলিমদের সাথে তাদের নতুন উপাসনালয় নির্মাণে অনুমতি দেবার ব্যাপারে চুক্তি হয়, তাহলে ইসলামী রাষ্ট্র তাদেরকে এর অনুমতি দিতে বাধ্য থাকে। এ ব্যাপারে যদি এমন কোনো চুক্তি না থাকে, তাহলে তারা এমন উপাসনার গৃহ তাদের গ্রামীন এলাকায় নির্মাণ করতে পারে। তবে মুসলিম অধ্যুষিত শহরাঞ্চলের ব্যাপারে আইনশাস্ত্রবিদদের বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো কারো মতে তারা এসব শহরে নতুন উপাসনালয় নির্মাণ করতে পারবে না। (বাদা’উস সানাই’ ৭:১১৪) মালিকি মাযহাবে তাদেরকে এর অনুমতি দেয়া হয়, তবে সমাজের পরিস্থিতি অনুসারে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত নেবার এখতিয়ার থাকে। (আল খুরাশী ৩:১৪৮)
বাস্তবক্ষেত্রে এই অভিমতটিই অধিকাংশ মুসলিম দেশে গৃহিত হয়েছে।”
মুফতি তাকি উসমানী(হাফি.)কে নির্দিষ্ট করে জিজ্ঞেস করা হয় ইসলামী রাষ্ট্রে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, জরথুস্ত্রবাদী ইত্যাদি ধর্মালম্বীদের ক্ষেত্রে এভাবে উপাসনালয়সহ ধর্ম পালনের অধিকার আছে কিনা। তিনি এর উত্তরে বলেনঃ
“উপরে উল্লেখিত বিধান সাধারণভাবে সকল অমুসলিমের জন্য প্রযোজ্য। এমনকি যারা আহলে কিতাব না তাদের জন্যও। কারণ খলিফা উমার বিন আব্দুল আযিয(র.) এর নির্দেশনা শুধুমাত্র আহলে কিতাবদের জন্য ছিলো না বরং অগ্নি উপাসক (জরথুস্ত্রবাদী)দের জন্যও ছিলো।” [19.75]
আমরা দেখলাম কিছু নিয়মের অধীনে ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও অমুসলিমদের ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। অনেক সময় ইসলামবিরোধীরা সাহাবীদের একটি আমলের রেফারেন্স দেখিয়ে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে ইসলামে বুঝি অমুসলিমদের কোনো অধিকারই নেই! সাহাবীদের অন্যান্য রেফারেন্সগুলোকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে তারা আংশিক এক চিত্র উপস্থাপন করে। আমরা পাঠকদেরকে অনুরোধ করবো ইসলামবিদ্বেষীদের প্রচারনায় বিচলিত না হয়ে সাহাবীদের জীবনী অধ্যায়ন করুন এবং আলেমদের সংস্পর্শে থাকুন, আলেমদের নিকট প্রশ্ন করে বিষয়গুলো বুঝে নিন।
‘কানযুদ্ দাকায়িক’ (‘তাসহীলুল হাকায়িকে’র শরাহ) গ্রন্থেও এই নিয়মগুলো আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ইরশাদ করেন : لا خِصَاء في الإسلام والكنيسة
‘খোজাকরণ ও গীর্জার অবকাশ নেই।' আর এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল নতুন করে তৈরীর অবকাশ নেই। আর যদি পুরাতন গীর্জা বা উপাসনালয় ভেঙ্গে যায় তাহলে তা মেরামত বা পুনঃনির্মান করা যাবে। কেননা, ভবন তো চিরস্থায়ী থাকে না। তাই তা মেরামত বা ভেঙ্গে গেলে পুনঃনির্মাণ করা যাবে। আর বিদ্যমান গীর্জা বা উপাসনালয় এর অনুমোদন তো আছেই। কেননা, শাসক যখন তাদেরকে দারুল ইসলামে বহাল রেখেছেন তখন তাদের উপাসনালয়সমূহ পূণঃনির্মানেরও অনুমতি দিয়েছেন।
তবে তা স্থানান্তর করা যাবে না। কেননা, স্থানান্তর করা এর অর্থ হল নতুন করে তৈরী করা। আর কেহ যদি তার ঘরের কোন স্থানকে উপাসনালয় নির্ধারণ করে তবে তা নিষেধাজ্ঞার বাইরে। আর এই নিষেধাজ্ঞা আরবের প্রতিটি শহর-গ্রাম সর্বত্রের জন্য প্রযোজ্য। কেননা রাসুলুল্লাহ(ﷺ)- ইরশাদ করেন : لا يجتمع دينان في جزيرة العرب - ‘জাজিরাতুল আরবে দুটি দ্বীন একত্র হতে পারে না।” আর অন্য স্থানের ক্ষেত্রে তা শহরের সাথে নির্দিষ্ট। গ্রামে প্রযোজ্য নয়। কেননা, ইসলামী মারকাজ ও নিদর্শনাবলী শহরেই প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে।” [20]
অর্থাৎ ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমরা তাদের উপাসনালয় পুনঃনির্মাণ করতে পারবে। জাজিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপে অমুসলিমদের উপাসনালয় নির্মাণের অনুমতি নেই। অন্যান্য অঞ্চলে শহরে এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গ্রামে নেই। এখানে ‘শহর’ বলতে ‘একান্ত মুসলিম জনপদ’ এর কথা বলা হচ্ছে যে ব্যাপারে একটু আগেই আমরা আলোচনা করেছি। আর ‘গ্রাম’ পরিভাষা দ্বারা যিম্মিদের নিজস্ব এলাকাকে বোঝানো হচ্ছে যেখানে ইসলামী মারকাজ ও নিদর্শনাবলী নেই। [20.5]
এ ব্যাপারে অন্যান্য মাযহাব ও ফকিহদের মধ্যে ভিন্ন কিছু অভিমতও রয়েছে। অনেক আলেম ভিন্ন মতটিকে শক্তিশালী বলেছেন। [20.75]
জাজিরাতুল আরবে উপাসনালয় নির্মাণে নিষেধাজ্ঞাঃ
জাজিরাতুল আরব বা আরব উপদ্বীপে অমুসলিমদের স্থায়ী বসবাস বা উপাসনালয় নির্মাণের অনুমতি না থাকার বিষয়টি সুন্নাহর দলিলের আলোকে সুপ্রমাণিত। এই বিধানের ব্যাপারে অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে। ড. আহমদ আলী লিখিত ‘ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা’ গ্রন্থ থেকে আমরা বিষয়টির ব্যাখ্যা উল্লেখ করছি।
“ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমরা স্বাধীনভাবে দেশের যে কোন স্থানে, এমন কি মুসলিম জনপদেও মিলেমিশে বসবাস করতে পারবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজ-কারবার ও চাকুরী প্রভৃতির প্রয়োজনে রাষ্ট্রের যে কোন স্থানে মুক্তভাবে বিচরণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে কোন রূপ বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। তবে পবিত্র মক্কা ও মদীনা নগরীতে তাদেরকে প্রবেশ, চলাফেরা ও বসবাস করতে দেয়া জায়িয নয়।” [21] আরব দেশের অন্যান্য ভূখণ্ডে অমুসলিমদেরকে বসবাস ও বিচরণের অধিকার দেয়া যাবে কি- তা নিয়ে ইমামগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ(ﷺ)- لا يجتمع دينان في جزيرة العرب- “আরব জাযীরায় [22] দুটি ধর্ম একত্রে থাকতে পারবে না।” [23] অন্তিম মুহূর্তে তিনি চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়ে বলেন, أَخْرِجُوا الْمُشْرِكِينَ مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ - “মুশরিকদেরকে তোমরা আরব জাযীরা থেকে বের করে দেবে।” [24] এ হাদীসগুলোর প্রেক্ষিতে ইমামগণ বলেছেন, কোন অমুসলিমকে আরব ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেয়া যাবে না। তবে তারা যে কোন প্রয়োজনে সেখানে সরকারের অনুমতি কিংবা সম্মতিক্রমে প্রবেশ করতে পারবে, চলাফেরা করতে পারবে এবং সাময়িকভাবে অবস্থানও করতে পারবে। [25]
উল্লেখ্য যে, আরব ভূখণ্ডে অমুসলিমদের প্রবেশ, বিচরণ ও বসবাসের ওপর বিশেষ বিধি-নিষেধের ব্যাপারে কারো কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। আসল কথা হল- আরব ভূখণ্ডটি ইসলামের সংরক্ষিত অঞ্চল। এখানে কেবল তারাই সাধারণভাবে প্রবেশ ও বসবাস করতে পারবে, যারা দীন ইসলামে বিশ্বাস করে। যেমন প্রত্যেক দেশেই কিছু সংরক্ষিত এলাকা থাকে, যেখানে সে দেশের সাধারণ নাগরিকও প্রবেশ করতে পারে। দেশের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশাধিকারের বিধি-নিষেধের ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপন যেমন অবান্তর ও অযৌক্তিক, ঠিক তেমনিভাবে আরব ভূখণ্ডে অমুসলিমদের প্রবেশ ও বসবাস করার ওপর যে বিধি-নিষেধ আছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করাও নিতান্তই অবান্তর ও অযৌক্তিক।” [26]
সমগ্র আলোচনার সারাংশ হিসেবে বলা যায় –
১। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকে। সে চাইলে নিজ ধর্ম পালন করতে পারে। তাকে ইসলাম গ্রহণ করতে জোর করা হয় না।
২। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম সন্যাসী, উপাসনালয়ের সেবকদেরকে জিজিয়া কর দিতে হয় না।
৩। ইসলামী রাষ্ট্র অমুসলিমদের উপাসনালয়কে সুরক্ষা দেয়, আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করে।
৪। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের উপাসনালয় ধ্বংস করা হয় না। যুদ্ধাবস্থাতেও তাদের উপাসনালয় বা এর অধিবাসীদেরকে আক্রমণ করা হয় না।
৫। অমুসলিমরা নিজেদের গৃহে, নিজেদের জনপদে স্বাধীনভাবে ধর্মীয় উপাসনা করতে পারে।তাদেরকে কোনো বাধা প্রদান করা হয় না।
৬। একান্ত মুসলিম জনপদে এবং আরব উপদ্বীপে অমুসলিমরা উপাসনালয় নির্মাণ করতে পারবে না।
উপসংহারঃ
উপরের আলোচনায় আমরা দেখলাম কিছু নিয়ম-কানুন এবং শর্তের অধীনে ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং উপাসনালয় নিয়ে বসবাস করতে পারে। এমনকি আমরা যদি সেকুলার রাষ্ট্র বা সমাজব্যবস্থার দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখবো এখানেও যে কোনো ধর্মের লোককেই রাষ্ট্রের নিয়ম ও শর্ত মেনেই তা পালন করতে হয়। ইসলামের সমালোচকরা অনেক সময় একতরফাভাবে শরিয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে তারা অন্য ধর্মের অনুসারীদের উপর শর্তারোপ করে। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশকেই দেখা যায় কোন ধর্মের অনুসারীদের উপর বিভিন্ন শর্তারোপ করে এমনকি কিছু ধর্মীয় বিধান পালন করতেও বাধাপ্রদান করে। এবং সেই দেশগুলো মোটেও মুসলিম দেশ না বা শরিয়া পরিচালিত দেশ না। পৃথিবীর অনেক দেশেই লাউডস্পিকারে আযান দেয়া যায় না, অনেক দেশেই মুসলিম নারীদের হিজাব বা নিকাব নিষিদ্ধ। এমন আরো উদাহরণ দেখানো যায়। আমরা কখনো এই দাবি করছি না যে ইসলাম সকল ধর্মকে ‘সমান’ দৃষ্টিতে দেখে। ‘আল কুরআনে’ স্পষ্ট ঘোষিত হয়েছেঃ “আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন ইসলাম”। (সুরা আলি ইমরান ৩:১৯) কিন্তু ইসলামবিরোধীরা যদি দাবি করে যে ইসলামী রাষ্ট্রে অন্য ধর্মের লোকদের একদম কোনো অধিকারই নেই – আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ইসলামী রাষ্ট্রে অন্য ধর্মের মানুষদেরকেও অধিকার প্রদান করেছে। তবে এতে সন্দেহ নেই যে মানবজাতির ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ এবং নাজাতের একমাত্র উপায় হচ্ছে ইসলাম।
এ ব্যাপারে এই আলোচনাটিও দেখা যেতে পারেঃ
তথ্যসূত্রঃ
[1] “Rights of Non-Muslims in an Islamic State - Islamweb – Fatwas”
https://www.islamweb.net/en/fatwa/84263/
[2] ■ ‘আল-মুগনী’ - ইবনু কুদামা মাকদিসী(র.), খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৭০-২৭৩;
■ ‘বাদাই’ - আল কাসানী, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ১১১
[3] আবদুর রাযযাক, ‘মুসান্নাফ’ : ৯৪৩০
[4] ইবন আবী শাইবা, ‘মুসান্নাফ’ : ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ, যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের হত্যা করা নিষেধ অধ্যায়
হাদিসটির সনদ সহীহ। https://www.dorar.net/h/1db96c35e4ed85d6e2d84fbe6f7fb2ce [শর্ট লিঙ্কঃ https://rb.gy/u4ahq6 ]
অন্যত্র হাসান সনদেও বর্ণিত হয়েছে। https://www.dorar.net/h/9605fc33181a7af1d363fe8f63669742 [শর্ট লিঙ্কঃ https://rb.gy/7b5os6][5] ■ ‘কিতাবুল খাৱাজ’ – ইমাম আবু ইউসুফ, ১/১৭০
http://islamport.com/d/1/ajz/1/393/1042.html#
■ ‘ই’লাউস সুনান’ – জাফর আহমাদ উসমানী ১২/৫২২
[6] ■ ‘তাবারী’, তারীখুল উমাম ওয়াল মুলূক’, খ. ২, পৃ. ৪৬৩; ইবনু আছীর, ‘আল-কামিল’... খ. ১, পৃ. ৩৬২
■ আবু বকর(রা.) এর গৃহিত পদক্ষেপগুলো জানার জন্য দেখুনঃ ‘খালীফাতু রাসূলিল্লাহ আবূ বাক্র আছ্ছিদ্দীক রাদিআল্লাহু ‘আনহু’ - ড. আহমদ আলী, পৃষ্ঠা ৩৫২
[7] ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ – ইবন কাসির, ৭ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা ১৮৪
[8] ‘তাফসির ইবন কাসির’, ৪র্থ খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), সুরা তাওবাহর ২৯ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৫৬৬-৫৬৭
[9] একান্ত মুসলিম জনপদ বলতে সে সব অঞ্চলকে বুঝানো হয়, যে সব এলাকার ভূসম্পত্তি মুসলিমদের মালিকানাভুক্ত এবং যে সব এলাকাকে মুসলিমরা ইসলামী অনুষ্ঠানাদি উদযাপনের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[10] আল-কাসানী, ‘বাদাই’, খ. ৭, পৃ. ১১৩ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[11] আল-কাসানী, ‘বাদাই’, খ. ৭, পৃ. ১১৩ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[12] আল-কাসানী, ‘বাদাই’, খ. ৭, পৃ. ১১৪ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[13] ইবনু হাজার আসকালানী, ‘আদ-দিরায়াহ...’, হা.নং: ৭৪১; ইবনু কুদামাহ, ‘আল-মুগনী’, খ.৯, পৃ. ২৮৫ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[14] ইবনু কুদামাহ, ‘আল-মুগনী’, খ,৯,পৃ. ২৮৩ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[15] মাওদূদী, ‘ইসলামী রাষ্ট্র ও সংবিধান’, পৃ. ৩৯৫ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[16] আল-কাসানী, ‘বাদাই’ খ. ৭,পৃ. ১১৪ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[17] আবু ইউসূফ, ‘কিতাবুল খাৱাজ’, পৃ. ১৪৪ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[18] ‘আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ’, খ,৭,পৃ. ১২৯ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[19] ‘ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা’ – ড. আহমদ আলী, পৃষ্ঠা ২৫-২৮
[19.5] আল-মুগনী’ - ইবনু কুদামা মাকদিসী, খণ্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৬১০
সূত্রঃ Mufti Taqi Usmani, “Answers to Your Questions”, Monthly Al-Balagh International, Karachi, Vol.26 No.06 April 2015, pp. 33-36
https://www.icraa.org/qas-about-minorities-and-slaves-in-islamic-law/
[19.75] Mufti Taqi Usmani, “Answers to Your Questions”, Monthly Al-Balagh International, Karachi, Vol.26 No.06 April 2015, pp. 33-36
https://www.icraa.org/qas-about-minorities-and-slaves-in-islamic-law/
[20] ‘কানযুদ্ দাকায়িক’ (‘তাসহীলুল হাকায়িক’ শরাহ) – মূলঃ ইমাম নাসাফী, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৬২
[20.5] এ প্রসঙ্গে হানাফী ফিকহের ব্যাখ্যার জন্য দেখুনঃ ‘ফতোয়া সুবকী’, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৮৮
তবে হানাফী ফিকহেও কেউ কেউ এ ব্যাপারগুলোতে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। দেখুনঃ ‘ফতোয়া শামি’, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২০২
[20.75] https://dorar.net/article/49
[21] এটা অধিকাংশ ইমামের অভিমত। হানাফীগণের মতে- মক্কা নগরীতে অমুসলিমরা সরকারের অনুমতিক্রমে কিংবা সমঝোতার ভিত্তিতে প্রবেশ করতে পারবে। আর মাদীনা শারীফে ব্যবসা-বাণিজ্য, আসবাবপত্র বহন, সংবাদ দান বা গ্রহণ প্রভৃতি যে কোন প্রয়োজনে অমুসলিমদেরকে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া যাবে না। [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[22] হাদীসে আরব জাযীরা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে, তা নিয়ে ইমামগণের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়। শাফিঈ ও হাম্বলী ইমামগণের মতে- এখানে আরব জাযীরা দ্বারা কেবল হিজাজ অর্থাৎ মক্কা ও মাদীনা এবং এতদুভয়ের সংলগ্ন অঞ্চলগুলোকে বুঝানো হয়েছে। তবে মালিকী ও হানাফীগণের মতে- কেবল হিজাযই নয়; বরং পুরো আরব ভূখণ্ডই জাযীরাতুল আরবের মধ্যে শামিল হবে। তাদের মতানুসারে জাযীরাতুল আরবের মধ্যে নাজদ, ইয়ামান, তিহামাহ ও ‘আরূদ (ইয়ামামা থেকে বাহরাইন) প্রভৃতি দেশও অন্তর্ভুক্ত হবে। (ইবনু আবিদীন, ‘রাদ্দুল মুহতার’, খ. ৪,পৃ. ৩৯২; ইবনু কুদামাহ, ‘আল-মুগনী’, খ. ৯, পৃ. ২৮৫-৬)। [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[23] ইমাম মালিক, ‘আল-মুওয়াত্তা’, হা.নং: ১৩৮৮; আল-বায়হাকী, ‘আস-সুনানুল কুবরা’, হা.নং: [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[24] আল-বুখারী, ‘আস-সাহীহ’, হা.নং : ২৮২৫, ২৯৩২, ৪০৭৮; মুসলিম, ‘আস-সাহীহ’, হা.নং : ৩০৮৯ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[25] ইবনু আবিদীন, ‘রাদ্দুল মুহতার’, খ. ৪,পৃ. ৩৯২; ইবনু কুদামাহ, ‘আল-মুগনী’, খ.৯, পৃ.২৮৫-৬ [ড. আহমদ আলী উল্লেখিত পাদটীকা]
[26] ‘ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা’ – ড. আহমদ আলী, পৃষ্ঠা ২৪-২৫