ইসলামবিরোধীরা একটি হাদিস দেখিয়ে দাবি করে ইসলামে নাকি কৃষিকাজের ন্যায় উত্তম কাজকে হারাম করা হয়েছে। ইসলাম নাকি কৃষি উৎপাদনকে আদৌ উৎসাহ দেয় না এবং কৃষি সরঞ্জামকে লাঞ্ছনার কারণ বলে ঘোষণা দেয়। এর প্রমাণস্বরূপ তারা নিচের হাদিসকে উদ্ধৃত করেঃ
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ قَالَ وَرَأَى سِكَّةً وَشَيْئًا مِنْ آلَةِ الْحَرْثِ فَقَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ يَدْخُلُ هَذَا بَيْتَ قَوْمٍ إِلاَّ أَدْخَلَهُ اللهُ الذُّلَّ
অর্থঃ আবূ উমামাহ্ বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লাঙ্গলের ফাল এবং কিছু কৃষি সরঞ্জাম দেখে বললেন, আমি নবী(ﷺ) -কে বলতে শুনেছি “এটা যে সম্প্রদায়ের ঘরে প্রবেশ করে, আল্লাহ সেখানে অপমান প্রবেশ করান।” [1]
ইসলামবিরোধীরা এখানে যে ভয়াবহ অপব্যাখ্যা করছে তা বোঝা অত্যন্ত সহজ। এই হাদিসের বর্ণনাকারী ইমাম বুখারী(র.) আলোচ্য হাদিসের পরিচ্ছেদের নামকরণ করেছেনঃ بَاب مَا يُحَذَّرُ مِنْ عَوَاقِبِ الاِشْتِغَالِ بِآلَةِ الزَّرْعِ أَوْ مُجَاوَزَةِ الْحَدِّ الَّذِي أُمِرَ بِهِ
অর্থঃ “পরিচ্ছেদঃ শুধু কৃষি সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত থাকার অথবা নির্দেশিত সীমালঙ্ঘন করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্কীকরণ।”
এখান থেকে খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে স্বয়ং এই হাদিসের সংকলক ইমাম বুখারী(র.)ও এই হাদিস থেকে এমন কিছু বোঝেননি যে ইসলামে কৃষিকাজকে হারাম করা হয়েছে বা স্রেফ কারো নিকট কৃষি সরঞ্জাম থাকলেই একে নিন্দা করা হয়েছে। বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্য কাজ বাদে শুধু কৃষি সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত থাকা অথবা সীমালঙ্ঘন করা। শুধু তাই না, ইমাম বুখারী(র.) যে অধ্যায়ে এই হাদিস এনেছেন, সেখানে এই হাদিসের ঠিক আগেই বৃক্ষরোপণ ও কৃষিকাজের ফজিলত বর্ণনা সম্পর্কিত হাদিস এনেছেন।
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ
অর্থঃ নবী(ﷺ) বলেছেন, “যে কোন মুসলিম ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা হতে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হতে সাদাকা্ বলে গণ্য হবে।” [2]
আমরা দেখলাম সাধারণভাবে নিন্দা তো দূরের কথা বরং কারো কৃষিকাজের দ্বারা মানুষ বা পশুপাখির উপকার হলে এর দ্বারা সদাকাহর সওয়াব হয়। ইসলামে যদি আসলেই কৃষিকাজকে নিন্দা করা হতো, তাহলে নবী(ﷺ) কেন এই কাজের ফলে সদাকাহ আদায়ের সওয়াবের কথা উল্লেখ করলেন? এই হাদিসটি উল্লেখ করবার পূর্বে ইমাম বুখারী(র.) কুরআনের এই আয়াতগুলো উদ্ধৃত করেছেনঃ
وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى (أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَحْرُثُونَ أَأَنْتُمْ تَزْرَعُونَهُ أَمْ نَحْنُ الزَّارِعُونَ لَوْ نَشَاءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا)
মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি তাকে অঙ্কুরিত কর, না আমিই অঙ্কুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়-কুটা করে দিতে পারি।’’ [3]
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির প্রতি তাঁর অনুগ্রহের বর্ণনা দিতে গিয়ে বীজ বপন তথা কৃষিকাজের প্রসঙ্গ এনেছেন। ইসলামে যদি কৃষিকাজ হারাম হতো, তাহলে আল্লাহ তা’আলা এই প্রসঙ্গ টানতেন না। কাজেই ইসলামী মূলনীতি অনুসারে কৃষিকাজ হারাম নয় বরং প্রশংসিত। [4] ঠিক এই কারণেই হাদিসটি উল্লেখ করবার পূর্বে ইমাম বুখারী(র.) কুরআনের এই আয়াতগুলো উদ্ধৃত করেছেন।
এ বিষয়গুলো থেকে খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে ইসলামবিরোধীদের অভিযোগ কীরূপ অসার। ইসলামবিরোধীরা একটা গ্রন্থ থেকে আগের-পরের কোনো কিছু না দেখেই এভাবে ভুলভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে।
নবী(ﷺ) থেকে আরো বিভিন্ন কর্ম ও নির্দেশের উল্লেখ পাওয়া যায় যা থেকে বোঝা যায় ইসলামে কৃষিকাজ আদৌ নিন্দনীয় কিছু নয়। সেই যুগে আরবে একটি অন্যতম প্রধান কৃষিকাজ ছিল খেজুরের চাষ করা। মুসনাদ আহমাদ গ্রন্থে হাসান সনদে একটি বর্ণনা রয়েছে যেখানে উল্লেখ আছে সালমান ফারসী(রা.)কে দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য নবী(ﷺ) নিজ হাতে ৩০০ খেজুর চারা রোপণ করেছিলেন! [5] কৃষিকাজ প্রসঙ্গে নবী(ﷺ) থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায় যে, কারো কাছে জমি থাকলে সে যেন নিজে চাষ করে বা অন্য কাউকে চাষ করতে দেয়।
قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ كَانَتْ لَهُ أَرْضٌ فَلْيَزْرَعْهَا فَإِنْ لَمْ يَزْرَعْهَا فَلْيُزْرِعْهَا أَخَاهُ "
অর্থঃ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ যার কাছে জমি আছে সে যেন তা (নিজে) চাষাবাদ করে। যদি সে (নিজে) চাষাবাদ না করে তবে যেন তার কোন ভাইকে চাষাবাদ করতে দেয়। [6]
ইসলামে কৃষিকাজ যদি একটি হারাম কাজ কিংবা নিন্দনীয় কাজই হতো, তাহলে কেন স্বয়ং নবী(ﷺ) থেকে এই কাজ করার এবং এই ব্যাপারে নির্দেশনা পাওয়া যায়?
এবার আমরা আলোচ্য হাদিস প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত মুহাদ্দিসদের ব্যাখ্যা দেখব। আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় ‘মিরকাতুল মাফাতিহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে—
وَقَالَ بَعْضُ عُلَمَائِنَا مِنَ الشُّرَّاحِ: " ظَاهِرُ هَذَا الْحَدِيثِ أَنَّ الزِّرَاعَةَ تُورِثُ الْمَذَلَّةَ، وَلَيْسَ كَذَلِكَ لِأَنَّ الزِّرَاعَةَ مُسْتَحَبَّةٌ لِأَنَّ فِيهَا نَفْعًا لِلنَّاسِ، وَلِخَبَرِ: «اطْلُبُوا الْأَرْضَ مِنْ جَثَايَاهَا» ; بَلْ إِنَّمَا قَالَ ذَلِكَ لِئَلَّا يَشْتَغِلَ الصَّحَابَةُ بِالْعِمَارَاتِ وَبِتَرْكِ الْجِهَادِ فَيَغْلِبَ عَلَيْهِمُ الْكُفَّارُ. وَأَيُّ ذُلٍّ أَشَدُّ مِنْ ذَلِكَ. وَقِيلَ: هَذَا فِي حَقِّ مَنْ يُقَرِّبُ الْعَدُوَّ لِأَنَّهُ لَوِ اشْتَغَلَ بِالْحَرْثِ وَتَرَكَ الْجِهَادَ لَأَدَّى إِلَى الْإِذْلَالِ بِغَلَبَةِ الْعَدُوِّ عَلَيْهِ
অর্থঃ “আমাদের কিছু উলামা উল্লেখ করেছেন, এই হাদিসটি দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় কৃষিকাজ লাঞ্ছনা নিয়ে আসে। কিন্তু প্রকৃত বিষয় মোটেও তা নয়। কেননা কৃষিকাজ হচ্ছে মুস্তাহাব কর্ম যার মাঝে মানুষের জন্য কল্যাণ আছে। আর এই কথার মাঝেও এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়ঃ "তোমরা জমিন থেকে শস্য তালাশ করো।" বরং নবী(ﷺ) এমনটি বলেছিলেন যাতে সাহাবীগণ এসব জিনিস গড়ায় ব্যস্ত না হয়ে পড়েন এবং জিহাদ পরিত্যাগ না করেন কেননা এর ফলে কাফিররা তাদের উপর [যুদ্ধে] বিজয়ী হয়ে যেতে পারতো। আর এর থেকে বড় লাঞ্ছনা আর কী হতে পারে? বলা হয়েছে, এটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা শত্রুর নিকটবর্তী স্থানে অবস্থান করছে। কারণ এই লোকেরা যদি চাষাবাদে ব্যস্ত হয়ে যায় আর জিহাদ পরিত্যাগ করে, তাহলে শত্রু কর্তৃক তাদের উপর জয়লাভের দ্বারা এটি তাদের জন্য লাঞ্ছনার কারণ হবে।" [7]
আলোচ্য হাদিস প্রসঙ্গে সহীহ বুখারীর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইবন হাজার আসকালানী(র.) রচিত ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে—
قَالَ ابْنُ التِّينِ: هَذَا مِنْ إِخْبَارِهِ ﷺ بِالْمُغَيَّبَاتِ، لِأَنَّ الْمُشَاهَدَ الْآنَ أَنَّ أَكْثَرَ الظُّلْمِ إِنَّمَا هُوَ عَلَى أَهْلِ الْحَرْثِ.
وَقَدْ أَشَارَ الْبُخَارِيُّ بِالتَّرْجَمَةِ إِلَى الْجَمْعِ بَيْنَ حَدِيثِ أَبِي أُمَامَةَ وَالْحَدِيثِ الْمَاضِي فِي فَضْلِ الزَّرْعِ وَالْغَرْسِ وَذَلِكَ بِأَحَدِ أَمْرَيْنِ: إِمَّا أَنْ يُحْمَلَ مَا وَرَدَ مِنَ الذَّمِّ عَلَى عَاقِبَةِ ذَلِكَ، وَمَحَلُّهُ مَا إِذَا اشْتَغَلَ بِهِ فَضَيَّعَ بِسَبَبِهِ مَا أُمِرَ بِحِفْظِهِ، وَإِمَّا أَنْ يُحْمَلَ عَلَى مَا إِذَا لَمْ يُضَيِّعْ إِلَّا أَنَّهُ جَاوَزَ الْحَدَّ فِيهِ.
وَالَّذِي يَظْهَرُ أَنَّ كَلَامَ أَبِي أُمَامَةَ مَحْمُولٌ عَلَى مَنْ يَتَعَاطَى ذَلِكَ بِنَفْسِهِ، أَمَّا مَنْ لَهُ عُمَّالٌ يَعْمَلُونَ لَهُ وَأَدْخَلَ دَارَهُ الْآلَةَ الْمَذْكُورَةَ لِتُحْفَظَ لَهُمْ فَلَيْسَ مُرَادًا، وَيُمْكِنُ الْحَمْلُ عَلَى عُمُومِهِ فَإِنَّ الذُّلَّ شَامِلٌ لِكُلِّ مَنْ أَدْخَلَ عَلَى نَفْسِهِ مَا يَسْتَلْزِمُ مُطَالَبَةَ آخَرَ لَهُ، وَلَا سِيَّمَا إِذَا كَانَ الْمُطَالِبُ مِنَ الْوُلَاةِ.
وَعَنِ الدَّاوُدِيِّ هَذَا لِمَنْ يَقْرُبُ مِنَ الْعَدُوِّ، فَإِنَّهُ إِذَا اشْتَغَلَ بِالْحَرْثِ لَا يَشْتَغِلُ بِالْفُرُوسِيَّةِ فَيَتَأَسَّدُ عَلَيْهِ الْعَدُوُّ، فَحَقُّهُمْ أَنْ يَشْتَغِلُوا بِالْفُرُوسِيَّةِ وَعَلَى غَيْرِهِمْ إِمْدَادُهُمْ بِمَا يَحْتَاجُونَ إِلَيْهِ.
অর্থঃ “ইবনুত তীন(র.) বলেনঃ এটা নবী(ﷺ) -এর তরফ হতে অদৃশ্য সম্পর্কে সংবাদ প্রদান। কেননা বর্তমান দৃশ্য হলো- অধিকাংশ নির্যাতন চাষীদের ওপর বর্তায়। ইমাম বুখারী(র.) এর অর্থ করতে গিয়ে আবু উমামাহ(রা.) বর্ণিত হাদিস এবং এর ঠিক পূর্বেই বৃক্ষরোপণ ও চাষাবাদ সংক্রান্ত হাদিস উল্লেখ করে সমন্বয় সাধন করেছেন। এর দ্বারা দুইটি জিনিস বোঝাতে পারেঃ হয় এর দ্বারা নিন্দাজনক কাজের পরিণতি বোঝানো হচ্ছে। এই কাজের ক্ষেত্রটি হচ্ছে-- কেউ যদি নিজ কাজে অবহেলা করে এই কাজে [কৃষিকাজ] ব্যস্ত হয়ে পড়ে যার ফলে তাকে যেই কাজের হেফাজত করতে বলা হয়েছিল তা নষ্ট করে ফেলে (তাহলে তখন তার জন্য উক্ত নিন্দা সাব্যস্ত হবে)। পক্ষান্তরে সে যদি কোনো (হেফাজতের) কাজকে নষ্ট নাও করে, তবুও সে এই কাজ করতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে ফেলে (সেক্ষেত্রেও তার জন্য উক্ত নিন্দা সাব্যস্ত হবে)। এখানে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে আবু উমামাহ(রা.) বর্ণিত হাদিস তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা এই কাজেই নিজেদের ব্যতিব্যস্ত করে ফেলে। তবে যার কর্মচারী আছে এবং তার কর্মচারীরাই তার সব কৃষিকাজ করে ও তৎশ্লিষ্ট সকল যন্ত্রপাতি নিজের ঘরেই কর্মচারীদের জন্য রেখে তার দেখাশোনা বা মাল হেফাজত করে তাহলে এই কর্মচারীদের মালিক এই হাদিসের ভর্ৎসনার অন্তর্ভুক্ত হবেন না। আবার এই হাদিসটা সমভাবে সকলের উপরই প্রয়োগ করা যায়; কারণ যে ব্যক্তি নিজের ওপর এমন কাজের ভার অর্পণ করে, যে কাজে অবধারিতভাবে অন্যের তলব শুনতে হয়; বিশেষত তলবকারী যখন হয় শাসকদের কেউ (তখন এমনিতেই শাসিত এক ধরনের লাঞ্ছনার শিকার হয়)।
দাউদী(র.) থেকে বর্ণিত আছে, এটি তার জন্য প্রযোজ্য যে শত্রুর নিকটবর্তী স্থানে আছে। সে যদি চাষাবাদেই ব্যস্ত থাকে, তাহলে অশ্বারোহণের অনুশীলন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হবে না, ফলে শত্রু তার উপর প্রবল হয়ে যেতে পারে। কাজেই তাদের উচিত অশ্বারোহণের অনুশীলন করা এবং অন্যদের উচিত তাদেরকে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু সরবরাহ করা।” [8]
এই হাদিসের ব্যাপারে প্রাচীন মুহাদ্দিসদের ব্যাখ্যা দেখে প্রকৃত বিষয়টি প্রকাশ্য দিবালোকের মতো বোঝা যাচ্ছে। এখানে নিন্দনীয় হচ্ছে তারা যারা শত্রুর নিকটবর্তী স্থানে আছে এবং শত্রুর মোকাবিলায় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, জিহাদে অবহেলা করে স্রেফ কৃষিকাজে তথা দুনিয়াবী স্বার্থ বাস্তবায়নে মত্ত আছে। এমনটি করলে শত্রু এদের উপর বিজয়ী হয়ে ভয়াবহ লাঞ্ছনার কারণ হবে। এই হাদিসের হুকুম অত্যন্ত যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। বর্তমান সময়ের উলামারাও এই হাদিসের ব্যাখ্যায় এই অভিমতই ব্যক্ত করেছেন যে কৃষিকাজ আদৌ নিষিদ্ধ কাজ নয়। বরং দ্বীনের জরুরী দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে শুধু কৃষিকাজে মত্ত থাকা হচ্ছে নিন্দনীয়। কেউ যদি দ্বীনের দায়িত্ব পালন করে কৃষিকাজ ও চাষাবাদ করে, সে মোটেও নিন্দনীয় কিছু করে না। এক্ষেত্রে তার গৃহে কৃষি সরঞ্জাম প্রবেশ করলেও সে লাঞ্ছিত হবে না। [9] উপরন্তু হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী কারো কৃষিকাজের দ্বারা কোনো মানুষ বা পশুপাখি উপকৃত হলে তা সওয়াবের কারণ হবে।
একটা উদাহরণ দেখলে হয়তো বিষয়টি বোঝা আরো সহজ হবে। যে কোনো উক্তির ক্ষেত্রে দেখা উচিত কোন প্রসঙ্গে তা বলা হচ্ছে।
ধরা যাক একজন বাবা প্রায়ই তার ছেলেকে কৃষিকাজে সাহায্য করতে বলেন। তার ছেলে তাকে নিয়মিত চাষাবাদে সাহায্য করে।
একবার ছেলেটার পরীক্ষার সময় চলে এলো আর সে মাঠে গেল তার বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করতে। তার বাবা তাকে দেখেই বললেনঃ "পড়াশুনা করতে যাও। চাষাবাদ করলে পরীক্ষায় গোল্লা পাবে!"
-- এখন কেউ যদি ঐ ব্যক্তির এই উক্তি দেখিয়ে বলেঃ এই ব্যক্তি কৃষিকাজের বিরোধী! - তাহলে কি সেটা সঠিক হবে?
উত্তর হচ্ছেঃ না।
কারণ ঐ ব্যক্তিই তার ছেলেকে সব সময় কৃষিকাজে সাহায্য করতে বলে, সে নিজেও কৃষিকাজ করে। এ থেকে বোঝা যায় সে আদৌ তার নিজের বা তার ছেলের কৃষিকাজের বিরোধী না। কিন্তু পরীক্ষার সময়ে সে তার ছেলের কৃষিকাজের বিরোধী। এই প্রসঙ্গে সে ঐ উক্তি করেছে।
এবার হাদিসের ক্ষেত্রেও দেখুন কোন প্রসঙ্গে কী বলা হচ্ছে। সাধারণভাবে কৃষিকাজের ব্যাপারে ফজিলতের কথা এসেছে, আবার একটি নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে কৃষি সরঞ্জাম রাখার ব্যাপারে নিন্দা করা হয়েছে। কাজেই ইসলামে আদৌ ঢালাওভাবে কৃষিকাজে নিন্দা করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে এই আলোচনাটিও দেখা যেতে পারেঃ
There's no house in which agricultural equipment enters that Allah will cause humiliation 2 enter it (YouTube)
বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম শায়খ আহমাদুল্লাহর কৃষিকাজের বর্ণনা
আরো পড়ুনঃ
কাফেলা আক্রমণ প্রসঙ্গে রাসুল(ﷺ) এর শানে ইসলামবিরোধীদের অপবাদ ও এর জবাব
তথ্যসূত্রঃ
[1] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২৩২১
[2] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ২৩২০
[3] সুরা ওয়াক্বিয়াহ্ : ৬৩-৬৫
[4] “The two narrations could be interpreted as follows: Planting and sowing is in principle something praised because Allaah mentioned it in the Quran as a blessing and a bounty, Allaah Says (what means): {And have you seen that [seed] which you sow? Is it you who makes it grow, or are We the grower?}[Quran 56:63-64]. Of course, Allaah does not consider something as a blessing or a bounty except that it is something permissible and allowed, and in which there is good. However, if a person is preoccupied by sowing to the extent that he does not fulfil other obligations and rights on him, or that he exceeds the limits due to being busy sowing, or that he is near the enemy, and instead of preparing for Jihaad (fighting in the path of Allaah), he remains busy with sowing until the enemy overcomes him, then such people deserve the dispraise which is mentioned in the Prophetic narration.”
From: A narration about owning the device of sowing and ploughing [Islamweb]
https://www.islamweb.net/en/fatwa/99186/
Or https://archive.is/wip/ktLPS (Archieved)
[5] “…each man gave according to what he had, until they had collected three hundred small trees for me. Then the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said to me: “Go, O Salmaan, and dig the holes where they are to be planted. When you have finished, come to me and I will plant them with my own hand.” So I dug the holes for them, and my companions helped me, then when I had finished, I came to him and told him. The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) came out with me and we started to bring the trees close and the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) planted them with his own hand. By the One in Whose hand is the soul of Salmaan, not one single tree among them died. …”
Narrated by Ahmad in al-Musnad (5/441). The scholars of hadeeth said: Its isnaad is hasan.
https://islamqa.info/en/88651/
অথবা https://archive.is/wip/WztHx (আর্কাইভকৃত)
[6] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৩৭৭৩
[7] মিরকাতুল মাফাতিহ – মোল্লা আলি ক্বারী, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৯৮৯
https://shamela.ws/book/8176/4199
অথবা https://archive.is/wip/6SmAc (আর্কাইভকৃত)
[8] ফাতহুল বারী – ইবন হাজার আসকালানী, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৫
https://shamela.ws/book/1673/2787
অথবা https://archive.is/90lCh (আর্কাইভকৃত)
[9] “Therefore, if one is engaged in this work but fulfils his duties as a Muslim in accordance to the teachings of Islam, then there will be no reproach upon him, and no humiliation will enter his home if he has cultivation/agricultural equipment’s. However, if occupation in this (cultivation/agriculture) makes one unmindful of his duties in Islam and prevents him from propagating and spreading the message of Islam, then this will become a cause for humiliation to enter one’s house.”
Fron: “CULTIVATION AND AGRICULTURE” [islamqa.org]
Or https://archive.is/0wIO4 (Archieved)