Pray for the world economy

সূর্যগ্রহণ এবং সত্যভাষণ

 

একটা প্রবাদ আছে – “ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে”। সুযোগসন্ধানী, মিথ্যাবাদী ও ক্ষমতালোভী লোকদের বৈশিষ্ট্য হলো, যখনই নিজেদের পক্ষে কোনো ঘটনা ঘটবে, সেটাকে নিজের কেরামতি বলে চালিয়ে দেবে। যদি সে বিখ্যাত কেউ হয়, এই সুযোগের সদ্বব্যবহারের কোনো সুযোগই সে মিস করবে না। কেননা এর দ্বারা তার কেরামতির ক্যারিয়ারের পালে জোরদার হাওয়া লাগবে। কিন্তু সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত লোকদের বৈশিষ্ট্য এমন হয় না। তাঁরা সত্য বলাকেই যথেষ্ট মনে করেন। যে জিনিসের পেছনে নিজের কোনো ভূমিকা নেই সে জিনিসকে কখনো নিজের বলে দাবি করেন না। আর তাঁদের এই বৈশিষ্ট্যের দ্বারা বোঝা যায় যে তাঁরা ক্ষমতালোভী নন বরং শত ঝড়-ঝাপটাতেও সত্যের ছাদের নিচ থেকে তাঁরা কখনো নড়েন না।

 

আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা। ১০ম হিজরির রবিউল আউয়াল মাস। নবী করিম(ﷺ) এর শিশুপুত্র ইব্রাহিম(রা.)  মারা গেলেন। [1] পুত্রের বিচ্ছেদে শোকে আকুল নবী(ﷺ)। তিনি বললেন, চোখ কাঁদছে, মন ব্যথিত হচ্ছে, (কিন্তু) মুখে আমরা তা-ই বলবো; যা আল্লাহ পছন্দ করেন। হে ইব্রাহিম! আল্লাহর কসম! আমরা তোমার কারণে (বিচ্ছেদে) দুঃখিত। [2]  আল্লাহর নবী(ﷺ) এর চোখ-মুখে বিষাদের আঁধার। এদিকে আকাশ কালো করে সূর্যগ্রহণ শুরু  হলো।

 

মদীনার লোকজন  ভাবলো – নিশ্চয়ই আল্লাহর হাবিবের(ﷺ) পুত্রের মৃত্যুতে প্রকৃতিতেও শোকের কালো ছায়া নেমে এসেছে। তাদের এই ধারণার কথা শুনে মুহাম্মাদ(ﷺ) এর প্রতিক্রিয়া কী হলো?

তিনি বের হয়ে তাঁর চাঁদর টেনে টেনে মসজিদে পৌঁছালেন এবং লোকজনও তাঁর কাছে একত্রিত হলোতারপর তাঁদেরকে নিয়ে দুই রাকাত সলাত আদায় করলেন। এরপর সূর্যগ্রহণ চলে গেলে বললেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যুর কারণে এ দুটোর গ্রহণ ঘটে না [3]

 

তাঁর সামনে সুযোগ ছিলো সবার সাথে একমত হয়ে নিজ মর্যাদাকে বাড়িয়ে নেয়া। সবাইকে এই কথা বলা যে – তাঁর পুত্রের মৃত্যুতে তাঁর দুঃখের সাথে একাত্ম হয়ে প্রকৃতিতেও শোকের কালো ছায়া নেমেছে, সূর্যে গ্রহণ লেগেছে। কিন্তু তিনি মোটেও এমন কিছু করলেন না। কারণ তিনি যে আল্লাহর রাসুল(ﷺ)। সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত (আস সদিক আল-আমিন)। যাঁর পবিত্র মুখ দিয়ে সত্য ভিন্ন অন্য কিছু নিঃসৃত হতো না। যাঁর সত্যবাদিতার জন্য তাঁর নাম মুখে নেবার সময়ে সাহাবীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসতো – আস সদিকুল মাসদুক্ব (সত্যবাদী ও সত্যায়িত সত্ত্বা)। [4]

 

ইসলামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য অবিশ্বাসীরা বরাবরই নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর সত্যবাদিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করে। দেড় হাজার বছর আগের এই মানুষটির জীবনকাহিনী একটু খেয়াল করে পড়বার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান রইলো।

 

ইবন মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ()  বলেছেনঃ তােমরা শুধু সত্য আঁকড়ে ধর। কেননা সত্যবাদিতা হচ্ছে সাওয়াবের কাজ। আর সাওয়াব জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে থাকে। যে ব্যক্তি সত্য কথা বলে এবং সত্যের জন্য মেহনত করে তার নাম আল্লাহর দফতরে সত্যবাদীরূপে লিখিত হয়। মিথ্যা কথা বলা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাক। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপাচার জাহান্নাম পর্যন্ত পৌছে দেয়। মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলতে থাকে এবং মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করে তখন আল্লাহর দফতরে তার নাম মিথ্যাবাদী' রূপে লিখে দেয়া হয়।' [5]

 

তুমি সত্য বলো, যদিও তা তিক্ত হয়।[6]

  

■  তুমি সত্য বলো, যদিও তা তোমার নিজের বিরুদ্ধে যায়।[7]

 

 

তথ্যসূত্রঃ

[1]  আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া - ইমাম ইবনু কাসির, ৫ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা ৫১০

[2] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৮১৮

https://www.hadithbd.com/print.php?hid=15688

[3] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ১০০৩

https://www.hadithbd.com/print.php?hid=1010

আরো দেখুনঃ সহীহ বুখারী, হাদিস নং :৯৮৬

https://www.hadithbd.com/print.php?hid=993

[4] বুখারী ৩২০৮, মুসলিম ২৬৪৩, আবূ দাঊদ ৪৭০৮, ইবনু মাজাহ ৭৬, তিরমিযী ২১৩৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৭৪, আহমাদ ৩৯৩৪

[5] মুসনাদ আহমাদ ১/৩৮৪, ফাতহুল বারী ১/৫২৩, সহীহ মুসলিম ৪/২০১২

[6] সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২২৩৩

[7] সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/১৯১১; সহীহুল জামি‘, হা/৩৭৬৯