নাস্তিক প্রশ্নঃ শয়তান নাকি মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে পথভ্রষ্ট করে। স্রষ্টা কেন তাহলে নিজ সৃষ্ট জীব মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য শয়তানকে সৃষ্টি করলেন? এটা একজন স্রষ্টার জন্য কতটুকু নৈতিক?
উত্তরঃ শয়তানকে বলা হয়েছে আমাদের প্রকাশ্য শত্রু। যার কারণে বহু আদম সন্তানের পদস্খলন ঘটেছে। বনী ইস্রাঈলের বিখ্যাত আবেদ বারসিসার কথা কে না জানে? যাকে শয়তান এক মেয়ের সাথে কথা বলতে প্ররোচিত করেছিল। তারপর জিনা, খুন, শিরক- কী করায়নি শয়তান বারসিসাকে দিয়ে? [1] শুধু বারসিসা নয় এ পৃথিবীর বহু মানুষকে শয়তান পথভ্রষ্ট করেছে। কাজেই সংশয়ী মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, শয়তানকে কেন সৃষ্টি করা হলো? আল্লাহ তা‘আলা কেন এমন একজনকে সৃষ্টি করলেন যার দ্বারা তাঁর বান্দারা জাহান্নামে পৌঁছে যাবে? উত্তরটা জানার আগে শয়তান সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা যাক-
আরবি ‘শয়তান’ (شيطان) শব্দটির অর্থঃ বিদ্রোহী বা অবাধ্য (rebellious)। [2]
আল্লাহ বলেনঃ
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا ۚ وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ ۖ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ
অর্থঃ আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি মানুষ ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদেরকে, তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরকে চাকচিক্যপূর্ণ কথার কুমন্ত্রণা দেয় এবং তোমার রব যদি চাইতেন, তবে তারা তা করত না। সুতরাং তুমি তাদেরকে ও তারা যে মিথ্যা রটায়, তা ত্যাগ কর। [3]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসির ইবন কাসিরে উল্লেখ আছে,
কাতাদা (র.) বলেন, “জিনদের মধ্যেও শয়তান আছে এবং মানুষের মধ্যেও শয়তান রয়েছে।” [4]
এ প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া (র.) বলেনঃ
“শয়তান হচ্ছে, মানুষ এবং জিনের মধ্যে বিদ্রোহী ও অবাধ্যরা। আর এ জিনেরা ইবলিসের বংশধর।” [5]
অতএব আমরা জানলাম যে ‘শয়তান’ হচ্ছে একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম। মানুষ কিংবা জিন জাতির মধ্যে আল্লাহর অবাধ্য ও বিদ্রোহীগোষ্ঠীর নাম এটি। অভিযোগকারী নাস্তিক মুক্তমনারা ইবলিস ও তার বংশধর জিন শয়তানদের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে যারা মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দিয়ে খারাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করে। তাদের প্রশ্ন, স্রষ্টা বলে যদি কেউ থেকেই থাকেন, তাহলে তিনি কেন এমন কিছুকে সৃষ্টি করবেন যারা তাঁর নিজ সৃষ্টিকে পথভ্রষ্ট করে জাহান্নামী করবে?
প্রথমতঃ আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি যে ‘শয়তান’ একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্যগত নাম। কেউই ‘শয়তান’ হয়ে জন্মে না বরং নিজ কর্মের দ্বারা সে ‘শয়তান’ হয়। ইবলিস এবং তার উত্তরসূরীদেরকে আল্লাহ জোর করে ‘শয়তান’ বানাননি বরং তারা নিজ কর্ম দ্বারা শয়তান হয়েছে। জিন এবং মানুষের ইচ্ছাশক্তি আছে। তারা ভালো-মন্দ কর্ম বেছে নিতে পারে। ইবলিস ও তার উত্তরসূরীরা নিজেরাই ‘শয়তান’ হওয়া ও মানুষকে কুমন্ত্রণা দেবার পথ বেছে নিয়েছে। [6]
দ্বিতীয়তঃ জগতের প্রতিটি ঘটনা আল্লাহর ইচ্ছা ও অনুমতিক্রমে হয়। আল্লাহ মানুষ ও জিনকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। তাদের দ্বারা ভালো ও খারাপ কর্ম আল্লাহ সম্পাদন হতে দেন। তাদের ভালো কর্মের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে। যেহেতু মানুষের সকল কর্ম আল্লাহর সৃষ্টি কাজেই ভালো কর্মের সাথে সাথে পাপও আল্লাহর ‘ইচ্ছা’ক্রমে হয়। তবে তা কেবলমাত্র এ অর্থে যে আল্লাহ এগুলোকে(পাপ/খারাপ কর্ম) নির্ধারিত করেছেন; এ অর্থে নয় যে আল্লাহ এগুলো অনুমোদন করেন বা আদেশ দেন। পৃথিবীতে যত খারাপ কাজ বা অপরাধ সংঘটিত হয়, এগুলোর উপর আল্লাহ তা’আলার কোনো সন্তুষ্টি নেই। আল্লাহ এগুলো ঘৃণা করেন, অপছন্দ করেন এবং এগুলো থেকে বিরত হবার আদেশ দেন। [7]
তৃতীয়তঃ আল্লাহ কেন শয়তানকে সৃষ্টি করলেন ও খারাপ পথে যেতে দিলেন?
ইমাম ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ (র.) তাঁর ‘শিফাউল ‘আলিল’ গ্রন্থে শয়তান সৃষ্টির পেছনে আল্লাহ তা’আলার বেশ কিছু হিকমতের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ইবলিস ও তার বাহিনীর সৃষ্টির পেছনে এত হিকমত রয়েছে যার বিস্তারিত আল্লাহ ছাড়া কেউই অনুধাবন করতে পারবে না। এর মধ্যে অল্প কিছু হিকমতের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে,
১। শয়তান ও তার শিষ্যদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আমাদেরকে ইবাদতের উৎকর্ষের দিকে ধাবিত করে। নবীগণ এবং আল্লাহর বান্দারা শয়তান ও তার শিষ্যদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই ইবাদতকে চূড়ান্ত উৎকর্ষের দিকে নিয়ে গেছেন। আল্লাহর নিকট শয়তানের হাত থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং শয়তান থেকে বাঁচার জন্য বার বার আল্লাহর নিকট ফিরে আসার মাধ্যমেই তাঁরা তাঁদের ঈমানকে পাকাপোক্ত করেছেন। শয়তান না থাকলে তো ইবাদতের এই সুউচ্চ অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব হত না।
২। শয়তানের জন্যই আল্লাহর বান্দারা তাদের পাপের জন্য ভীত হয় কারণ তারা তো জানে পাপের কারণে শয়তানের (ইবলিস) কী দশা হয়েছে। পাপের কারণেই ইবলিস ফেরেশতাদের সাহচর্য থেকে নেমে গেছে ও বিতাড়িত হয়ে গেছে – এই ঘটনা থেকে একজন মুমিন শিক্ষা নেয়। ফলে তাঁর তাকওয়া (আল্লাহভীতি) বৃদ্ধি পায় ও শক্তিশালী হয়।
৩। মানুষ ও (শয়তান)জিন উভয়েরই আদি পিতাকে ভুল [বড় বা ছোট গুনাহ] দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছে। যারা আল্লাহর বিধানের বাইরে যায়, তাঁর ইবাদতে অহঙ্কার ও অবাধ্যতা করে, তাদের জন্য আল্লাহ একজন আদি পিতা[শয়তান জিনদের] ইবলিসকে একটি নিদর্শন বানিয়েছেন। আর যারা পাপ করলে অনুশোচনা করে আর তাঁর প্রভুর নিকট ফিরে যায়, তাঁদের জন্য আল্লাহ অন্য আদি পিতাকে [আদম (আ.)] একটি নিদর্শন বানিয়েছেন।
৪। শয়তান আল্লাহর বান্দাদের জন্য একটি পরীক্ষাস্বরূপ।
৫। ইবলিস শয়তান হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টিক্ষমতার একটি নিদর্শন। আল্লাহ যে বিপরীতধর্মী সব কিছু সৃষ্টি করতে পারেন, শয়তান তার একটি প্রমাণ। যেমন তিনি আসমান ও যমিন সৃষ্টি করেছেন, আলো ও অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন, পানি ও আগুন সৃষ্টি করেছেন, ঠাণ্ডা ও গরম সৃষ্টি করেছেন, ভালো ও মন্দ সৃষ্টি করেছেন। তেমনি জিব্রাঈল (আ.) ও ফেরেশতাদের বিপরীতে ইবলিস ও শয়তানদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
৬। কোন কিছুর পূর্ণ মাহাত্ম্য বোঝা যায় এর বিপরীতধর্মী কোন কিছুর মাধ্যমে। যদি কুৎসিত কিছু না থাকতো, তাহলে আমরা কখনো সৌন্দর্য্যের মাহাত্ম্য বুঝতে পারতাম না। যদি দারিদ্র্য না থাকতো, তাহলে আমরা সম্পদশালী হওয়াকে মূল্য দিতাম না।
৭। আল্লাহ বান্দাদের নিকট তাঁর সংযম, ধৈর্য, সহনশীলতা, পরম দয়া ও ঔদার্য্যের প্রকাশ ঘটাতে পছন্দ করেন। আর এ জন্য এমনটি ঘটা প্রয়োজন যে, তিনি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা তাঁর সাথে শরিক করবে ও তাঁকে ক্রুদ্ধ করবে। এরপরেও তিনি তাদেরকে সর্ব প্রকার নিআমত ভোগ করতে দেবেন। তিনি জীবিকা দেবেন, সুস্বাস্থ্য দেবেন এবং সকল প্রকার বিলাসিতা উপভোগ করতে দেবেন, তিনি তাদের ইচ্ছা শুনবেন ও তাদের থেকে অনিষ্ট সরিয়ে নেবেন। তারা তাঁকে অবিশ্বাস করে, তাঁর সাথে শরিক স্থাপন করে, তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করে যে খারাপ আচরণ করবে, এর বিপরীতে তিনি তাদের প্রতি দয়া ও সদাচরণ করবেন। একটি সহীহ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন আছে! যদি তোমরা পাপ না কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে [তোমাদের পরিবর্তে] এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’ [8]
৮। আল্লাহর পছন্দনীয় অনেক কিছুই শয়তানের অস্তিত্বের জন্য সংঘটিত হতে পারে। যেমনঃ কারো নিজ কামনা-বাসনার বাইরে যাওয়া (শয়তানের দ্বারাই যা জাগ্রত হয় এবং বান্দা তা দমন করা সুযোগ পায়), কারো কষ্ট ও প্রতিকূলতার মধ্যে পতিত হওয়া যার দ্বারা সেই বান্দা আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। কেউ তার প্রেমাষ্পদের কাছ থেকে সব থেকে প্রিয় যা আশা করতে পারে তা হচ্ছে – সে শুধু তারই ভালোবাসার প্রমাণ দেবার জন্য চরম কষ্ট ও প্রতিকূলতা সহ্য করছে। যদিও পাপ ও অবাধ্যতা ইবলিসের কুমন্ত্রণার কারণে হয় এবং তা আল্লাহর ক্রোধ তৈরি করে, কিন্তু এর চেয়েও আল্লাহ অনেক বেশি সন্তুষ্ট হন যদি তাঁর বান্দা তাওবা করে। তিনি এর ফলে ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশী হন যে ভয়ঙ্কর মরুভূমিতে তার উট হারিয়ে ফেলবার পর খুঁজে পায়, যেই উটের পিঠে ছিল তার বেঁচে থাকবার অবলম্বন খাদ্য ও পানীয়। [9]
... … … [10]
শয়তান মানুষকে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দেয় যা মানুষের বিপথগামী হবার জন্য ভূমিকা রাখে। কিন্তু আল্লাহর বান্দাদের উপর শয়তানের এমন কোন ক্ষমতা নেই যে সে বান্দাদের খারাপ কাজ করতে বাধ্য করতে পারে। সে শুধু মানুষকে কুমন্ত্রণাই দিতে পারে। যারা শয়তানের কুমন্ত্রণার অনুসরণ করে, শয়তানের পথে চলে, তারা পথভ্রষ্ট হয়। [11] এ টুকু ক্ষমতাই কেবল শয়তানের আছে। কুরআনে বলা হয়েছে—
( ٤٢ ) إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ
( ٤٣ ) وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ
অর্থঃ “নিশ্চয়ই বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমার [শয়তানের] অনুসরণ করবে তারা ছাড়া আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব থাকবে না। তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। ” [12]
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ
অর্থঃ “তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফির হতে বলে। অতঃপর যখন সে কাফির হয়, তখন শয়তান বলেঃ তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালনকর্তা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করি।” [13]
যারা শয়তানের পথে চলে না, আল্লাহর শরণ নেয়, শয়তান তাদের উপর কোন প্রভাব খাটাতে পারে না।
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۚ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
অর্থঃ “যদি শয়তানের পক্ষ থেকে তুমি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব কর, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [14]
কাজেই আমরা বলতে পারি, শয়তান নিজ ইচ্ছাশক্তির দ্বারা খারাপ পথ বেছে নিয়েছে, আল্লাহ তাকে এর নির্দেশ দেননি। উপরন্তু আল্লাহ তা'আলা মানুষকে শয়তান থেকে সতর্ক করেছেন। শয়তানের সৃষ্টিও আল্লাহর অসামান্য ক্ষমতার পরিচায়ক ও এর মাঝে অনেক হিকমত নিহিত আছে। আল্লাহ তাঁর ইবাদতের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং এ পৃথিবীর জীবনকে মানুষের জন্য করেছেন পরীক্ষাস্বরূপ। [15] শয়তানের অস্তিত্বের দ্বারা মানুষের জন্য এই পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া সম্ভবপর হয়। আল্লাহর সৃষ্টিকর্ম এভাবেই অসামান্য এক ভারসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে। কাজেই শয়তানের ধারণার কারণে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বা নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা অযৌক্তিক।
يَـٰٓأَيُّہَا ٱلنَّاسُ إِنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقٌّ۬ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَاۖ وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِٱللَّهِ ٱلۡغَرُورُ (٥) إِنَّ ٱلشَّيۡطَـٰنَ لَكُمۡ عَدُوٌّ۬ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّاۚ إِنَّمَا يَدۡعُواْ حِزۡبَهُ ۥ لِيَكُونُواْ مِنۡ أَصۡحَـٰبِ ٱلسَّعِيرِ (٦)
অর্থঃ হে মানুষ! অবশ্যই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক [শয়তান] যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়। [16]
أَلَمۡ أَعۡهَدۡ إِلَيۡكُمۡ يَـٰبَنِىٓ ءَادَمَ أَن لَّا تَعۡبُدُواْ ٱلشَّيۡطَـٰنَۖ إِنَّهُ ۥ لَكُمۡ عَدُوٌّ۬ مُّبِينٌ۬ (٦٠) وَأَنِ ٱعۡبُدُونِىۚ هَـٰذَا صِرَٲطٌ۬ مُّسۡتَقِيمٌ۬ (٦١) وَلَقَدۡ أَضَلَّ مِنكُمۡ جِبِلاًّ۬ كَثِيرًاۖ أَفَلَمۡ تَكُونُواْ تَعۡقِلُونَ (٦٢)
অর্থঃ হে আদম সন্তানেরা, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, “তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্র? আর আমারই ইবাদাত কর, এটাই সরল পথ? শয়তান তো তোমাদের বহু দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বোঝোনি? ” [17]
তথ্যসূত্রঃ
[1] ইবন কাসির ১৩/৪৯৭, তাবারী ২৮/৪৯-৫০
[2] “Why Satan was named Iblees (Islam web)”
[3] আল কুরআন, আন’আম ৬ : ১১২
[4] তাফসির ইবন কাসির, ৩য় খণ্ড (হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী), সুরা মায়িদাহর ১১২ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ১৬৮-১৬৯
[5] “Why Satan was named Iblees (Islam web)”
[6] “Free Will of Iblis and His Keenness to Lead People Astray” (IslamQa - Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
[7] ‘শারহ আকিদা আত ত্বহাওয়ী’ – ইবন আবিল ইজ্জ হানাফী(র); পৃষ্ঠা ৩৮ (ইংরেজি অনুবাদ)
[8] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৭৪৯; তিরমিযী, হাদিস নং : ২৫২৬; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ৭৯৮৩, ৮০২১
[9] রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ বান্দা যখন আল্লাহর নিকট তাওবা করে তখন তিনি ঐ ব্যক্তি থেকেও অধিক খুশী হন যে মরু-বিয়াবানে নিজ সাওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল। তারপর সাওয়ারিটি তার থেকে পালিয়ে গেল। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর নিরাশ হয়ে সে একটি বৃক্ষের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ে এবং তার সাওয়ারী সমন্ধে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ সাওয়ারীটি তার সামনে এসে দাড়ায়। তখন (অমনিই) সে তার লাগাম ধরে ফেলে। তারপর সে আনন্দের আতিশয্যে বলে উঠে, "হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব।" আনন্দের আতিশয্যে সে ভুল করে ফেলেছে!
[সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৬৭০৮]
[10] সংক্ষিপ্তসার হিসাবে উপস্থাপিত; মূল উৎসঃ ‘শিফাউল ‘আলিল’, ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ (র.), পৃষ্ঠা ৩২২;
■ সূত্রঃ “Why did Allah create Satan (Shaytan)” -Khilafat World
http://www.khilafatworld.com/2011/12/why-did-allah-create-satan-shaytan.html
■ আরো দেখুনঃ “The rationale behind the creation of Satan - Islam web - English”
■ ‘আলামুল জিন্নি ওয়াশ শাইত্বন’ – উমার সুলাইমান আল আশকার, পৃষ্ঠা ১৬৯-১৭৩
[11] এখানে আরও একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, শয়তানকে কে কুমন্ত্রণা দেয়? এর উত্তর হচ্ছেঃ সেই নিজেই নিজ কুপ্রবৃত্তির দ্বারা খারাপ কাজ করে। কেউ কাউকে কুমন্ত্রণা দিয়ে কোনো কাজ করাতে বাধ্য করতে পারে না। মানুষ ও জিন উভয়ই মূলত নিজ প্রবৃত্তির দ্বারা খারাপ কাজ করে। যার কারণে তারা শাস্তির যোগ্য হয়।
[12] আল কুরআন, হিজর ১৫ : ৪২-৪৩
[13] আল কুরআন, হাশর ৫৯ : ১৬
[14] আল কুরআন, আ’রাফ ৭:২০০
[15] সুরা যারিয়াত ৫১ : ৫৬ ও সুরা মুলক ৬৭ : ২ দ্রষ্টব্য
[16] আল কুরআন, ফাতির ৩৫ : ৫-৬
[17] আল কুরআন, ইয়াসিন ৩৬ : ৬০-৬২