Pray for the world economy

একজন স্রষ্টা থেকে থাকলে মানবজাতির দুঃখ-যন্ত্রণায় কেন তিনি বাধা দেন না?

 

➫ মূলঃ শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ

➫ অনুবাদঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার

 

অনুবাদকের ভূমিকাঃ আস্তিকদের প্রতি নাস্তিকরা যে ধরণের প্রশ্নগুলো ছুড়ে দেয়, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “Problem of Evil”। স্রষ্টা যদি সকল অশুভ বা অনাচারকে দমন করতে পারেন, তবে কেন করেন না? [1] পৃথিবীতে যে দুঃখ-যন্ত্রণার অস্তিত্ব রয়েছে, পথহারা মানুষ এর হিসেব মেলাতে না পেরে অনেক সময়েই ডুবে যায় হতাশা আর নিরিশ্বরবাদিতার চোরাবালিতে। অথচ এই প্রশ্নের উত্তর কুরআন-সুন্নাহতে রয়েছে। না মেলা হিসেবগুলো খুব সহজেই মিলে যেতো যদি মানুষ আল্লাহর পথে আসতো। আলোর পথের এই ডাকে কি তারা সাড়া দেবে?  

 

ফতোয়া নং ২৮৫০: মানবজাতির দুঃখ-যন্ত্রণার বিষয়টির ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ কেন এগুলোতে বাধা দেন না?

 

প্রশ্নঃ

এমনভাবে যারা চিন্তা করে, তাদের কাছে কিভাবে আমরা আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারি? -

আল্লাহ যদি থেকেই থাকেন, তাহলে কিভাবে সেই পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু স্রষ্টা পৃথিবীর মানুষকে এতো দুঃখ-ক্লেশ লাভ করতে দেন? তারা একটা তত্ত্ব দাঁড় করায়, আমরা যদি ঈশ্বরের সন্তান [2] হয়ে থাকি, তাহলে তিনি আমাদের রক্ষা করেন না কেন? বাবা-মা’ও তো নিজ সন্তানকে রক্ষা করে!

 

উত্তরঃ

আলহামদুলিল্লাহ্‌।

 

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। তবে আমরা হয়তো আমাদের স্বল্প জ্ঞানে আল্লাহর সকল কর্মের হিকমত বুঝতে পারি না। বিষয়টি বোঝা সহজ হবে যদি আমরা সকলে একমত হই আল্লাহ তা’আলা ন্যায়পরায়ন, ইনসাফকারী এবং তিনি সকল বিষয়ে অবগত। এর মানে হচ্ছে আল্লাহ তা’আলা যেটিই করেন এর পেছনে কোনো ন্যায়সঙ্গত কারণ রয়েছে। যদিও আমরা হয়তো এই কারণ না-ও বুঝতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, একজন স্নেহশীল এবং যত্নবান ডাক্তার পিতা হয়তো কখনো বাধ্য হন অপারেশন করে একমাত্র সন্তানের পা কেটে ফেলতে। কোনো সন্দেহ নেই যে ঐ পিতা তাঁর সন্তানকে ভালোবাসেন। কিন্তু কাজটি তাঁর প্রিয় সন্তানের প্রয়োজনের কথা ভেবেই করতে হয়েছে। যারা প্রকৃত ঘটনা জানে না, আপাতদৃষ্টিতে এই কাজ তাদের কাছে নিষ্ঠুর বলে মনে হতে পারে। আল্লাহ তা’আলা আরো বড় এবং উঁচু পর্যায়ের উদাহরণের অধিকারী। তাঁর কর্মের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার অধিকার তাঁর কোনো সৃষ্টির নেই। যেটি ২১ নং সুরার ২৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,

 

لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ

অর্থঃ “তিনি যা করেন সে বিষয়ে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না; বরং তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করা হবে।”

[আল কুরআন, আম্বিয়া ২১ : ২৩]

 

একজন মুসলিমের বিশ্বাস হচ্ছে ব্যাথা, ক্ষুধা, মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এইসবের যন্ত্রণা মানুষের গুনাহের ফলে হয় কারণ আল্লাহ এসব কষ্টের দ্বারা সেই মুসলিমের কিছু গুনাহ মুছে দিতে চান। আল্লাহ ৪২ নং সুরার ৩০ নং আয়াতে বলেছেন,

وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ

অর্থঃ “তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।”

[আল কুরআন, শুরা ৪২ : ৩০]

 

সংকটের সময় অনেক মানুষকে আল্লাহর কাছাকাছি হতে এবং তাওবা করতে দেখা যায়। অথচ আরাম-আয়েশের সময়টিতে ঐ লোককেই দেখা যায় আল্লাহর বরকতকে ভুলে যেতে। আল্লাহর উপহার সেই বরকতকে সে একের পর এক গুনাহের কাজে ব্যয় করে।    

 

আল্লাহ তা’আলা মানুষকে ভালো ও খারাপ উভয় পথই দেখিয়েছেন, তিনি তাকে বেছে নেবার ইচ্ছা ও ক্ষমতা দিয়েছেন। কাজেই একজন মানুষ নিজেই তার কর্মের জন্য দায়ী। সে নিজ পাপের জন্য দুনিয়ায় যে শাস্তি পায় তা সামান্য এক পরীক্ষা। আর এর ফল তো আখিরাতেই জানা যাবে।

এবং আল্লাহই ভালো জানেন।

 

মূল ফতোয়ার লিঙ্কঃ

https://islamqa.info/en/2850/

 

আরো পড়ুনঃ

"এই পৃথিবীতে ছোট শিশুরা কেন দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করে? এর পেছনে হিকমত কী?"

 

"আল্লাহ্‌ যদি সকল প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে আফ্রিকার লাখ লাখ মানুষকে অনাহারে রাখার পেছনে যুক্তি কি?"

 

 

অনুবাদকের টিকা

[1] "Problem of Evil - Definition, Responses, & Facts" - Encyclopædia Britannica

https://www.britannica.com/topic/problem-of-evil

[2] সম্ভবত প্রশ্নকারী খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী অথবা খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চলে বাস করেন। “সকল মানুষ ঈশ্বরের সন্তান” - এমনটি খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং এই ধরণের ভাষার ব্যবহার তাদের মধ্যে লক্ষ করা যায়। ইহুদিরাও রূপকার্থে এমনটি বলে থাকে। ইসলাম এমন ধারণা প্রত্যাখ্যান করে। ইসলাম মতে সকল মানুষ আল্লাহর সন্তান নয় বরং আল্লাহর বান্দা।

“ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বলে, ‘আমরা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়জন’। বল, ‘তবে কেন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের পাপের কারণে আযাব দেন? বরং তোমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত মানুষ, যাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা আযাব দেন। আর আসমানসমূহ ও যমীন এবং তাদের মধ্যবর্তী যা আছে তার সার্বভৌমত্ব আল্লাহর এবং তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন’।”
(আল কুরআন, মায়িদাহ ৫ : ১৮)