নাস্তিক প্রশ্নঃ ধরা যাক একজন ব্যক্তি কিয়ামতের ২ দিন আগে মারা গিয়েছেন আরেকজন ব্যক্তি কিয়ামতের ২ হাজার বছর আগে মারা গিয়েছে্ন। যিনি কিয়ামতের ২ দিন আগে মারা গিয়েছে্ন, তার পাপের পরিমাণ বেশি আর যিনি ২ হাজার বছর আগে মারা গিয়েছেন তার পাপের পরিমাণ কম। মুসলিমরা কবরের আযাবে বিশ্বাস করে। কবরের আযাব বলে যদি কিছু থেকেই থাকে, তাহলে যিনি কিয়ামতের ২ দিন আগে মারা গেলেন তার কবরের আযাব অনেক কম হবে কারণ তিনি অনেক কম সময় কবরে থাকছেন। পক্ষান্তরে, যিনি কিয়ামতের ২ হাজার বছর আগে মারা গেলেন তার কবরের আযাব অনেক বেশি হবে কারণ তিনি অনেক বেশি সময় কবরে থাকছেন। ফলে পাপ বেশি হওয়া সত্ত্বেও ১ম ব্যক্তি কম শাস্তি পেলেন এবং পাপ পাপ কম হওয়া সত্ত্বেও ২য় ব্যক্তি বেশি শাস্তি পেলেন। তাহলে আল্লাহ কী করে ন্যায়বিচারক হন?
উত্তরঃ কবরের আযাব বলতে ঐ আযাবকে বোঝায়, যা মৃত্যুর পর থেকে শুরু কবরের বা বারযাখের জীবনে মানুষ উপলব্ধি করে থাকে।
আল কুরআনে বলা হয়েছে - মানুষকে তার পাপ অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে এবং কারো প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুমও করা হবে না।
“আজকের দিনে কারও প্রতি জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে কেবল তারই প্রতিদান পাবে।”
(আল-কুরআন, সুরা ইয়াসিন ৩৬:৫৪)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কারো প্রতি বিন্দুমাত্রও জুলুম করেন না; আর যদি তা (মানুষের কর্ম) সৎকর্ম হয়, তবে তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে বিপুল সওয়াব দান করেন।” [1]
“বস্তুতঃ যারা মিথ্যা জেনেছে আমার আয়াতসমূকে এবং আখিরাতের সাক্ষাতকে, তাদের যাবতীয় কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে গেছে। তেমন বদলাই সে পাবে যেমন আমল করত।” [2]
অর্থাৎ মানুষকে তার পাপের পরিমাণ অনুযায়ীই শাস্তি দেয়া হবে। যে বেশি পাপ করবে সে বেশি শাস্তি পাবে আর যে কম পাপ করবে সে কম শাস্তি পাবে। এটিই সাধারণ নিয়ম।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ(র)র মতে, কবরের আযাব ২ প্রকার। স্থায়ী এবং সাময়িক।
স্থায়ী কবরের আযাবের উদাহরণ হচ্ছে,
“অতঃপর আল্লাহ তাঁকে তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করলেন এবং ফিরআউন গোত্রকে শোচনীয় আযাব গ্রাস করল। সকাল ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয় এবং যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে ফিরআউন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর।" [3]
এছাড়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ) -এর স্বপ্ন সম্পৰ্কীয় একটি হাদীসে উল্লেখ আছে যে, “তাদের উপর কিয়ামত পর্যন্ত এ রকম শাস্তি হতে থাকবে।” (বুখারী) [4] অবিশ্বাসী বা কাফিরদের স্থায়ী কবরের আযাব হয়।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (র) আরো উল্লেখ করেছেন, কবরের সাময়িক আযাব হবে তাদের জন্য যারা সাধারণ গুনাহগার বান্দা। ঐ গুনাহের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা আযাব ভোগ করবে, তারপর তার আযাব বন্ধ হয়ে যাবে এবং সে রেহাই পেয়ে যাবে। কবরের এরূপ সাময়িক আযাব দুআ, সদকাহ, ক্ষমা প্রার্থনা, হজ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নেক কাজের মাধ্যমে মাফ হয়ে যায়। [5] নির্দিষ্টকাল পরে এই আযাব বন্ধ হয়ে যায়।
এবার নাস্তিক-মুক্তমনাদের প্রশ্নের ব্যাপারে আসি। যে কাফিরদের স্থায়ী কবরের আযাব হবে, তাদের মৃত্যুর পর থেকে কবরের জীবনে শাস্তি শুরু হবে। কিয়ামতের আগে ও পরে – অনন্তকালব্যপি তাদের শাস্তি চলতে থাকবে। [6]
কিয়ামতের ২ দিন আগে কবর দেয়া হোক আর ২ হাজার বছর আগে দেয়া হোক এখানে সেটি কোন বিবেচ্য বিষয় নয় কারণ তাদের শাস্তি চলবে অনন্তকাল বা অসীম (Infinity) সময় ধরে। এই অসীম সময়ের শাস্তির ক্ষেত্রে কারো আগে আযাব শুরু হোক বা পরে হোক, মোট সময়ের পরিমাণ অসীমই থাকবে। একটি মহাসমুদ্রে ১ ফোঁটা পানি যোগ করলে তা যেমন মহাসমুদ্রের পানির কোন পরিবর্তন ঘটায় না, তেমনি অসীম (Infinity) সময়ের শাস্তির জন্যও ২ হাজার কিংবা ২ লক্ষ বছর সময়ের ব্যবধানও শূন্যের সমান। কাজেই সে যে সময়েই মারা যাক না কেন মোট শাস্তি সমান। [Infinity (∞)+ any number = Infinity (∞)]
সাময়িক কবরের আযাব যাদের উপর প্রযুক্ত হবে (অর্থাৎ পাপী মুসলিমরা), তাদের কবরের আযাব এক সময় থেমে যায়। কিয়ামতের ২ হাজার বছর আগে যার মৃত্যু হবে, গুনাহ কম হলে তার তার কবরের আযাবও কম হবে। গুনাহের পরিমাণ হিসাবে তা এক সময় থেমে যাবে। আগে মৃত্যুবরণ করার জন্য অতিরিক্ত কোন শাস্তির ব্যাপার এখানে নেই। কিয়ামতের ২ দিন আগে মৃত্যুবরণ করলেও পাপের পরিমাণ অনুযায়ীই শাস্তি পাবে। পাপী মুসলিমদের তাদের পাপের পরিমাণ অনুযায়ী কবরে ও শেষ বিচারের দিন শাস্তি দেয়া হবে। পাপের শাস্তি শেষ হলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [7] যদি কবরে শাস্তির শেষ নাও হয়ে থাকে, তাহলে শেষ বিচারের দিন শাস্তি পেতে হবে। অর্থাৎ যতটুকু পাপ ততটুকুই শাস্তি। কারো প্রতি এতটুকুও অন্যায় করা হবে না। কবরের আযাব নির্ভর করে পাপের পরিমাণের উপর। কবরের জীবনের সময়কালের উপর নয়।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সূক্ষ্ম হিসাব গ্রহণকারী ও ন্যায়বিচারক।
“সুতরাং এরপরও কিসে তোমাকে কর্মফল দিবস সম্পর্কে অবিশ্বাসী করে তোলে? আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নন?” [8]
“…"হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে।" ” [9]
তথ্যসূত্রঃ
[1] আল কুরআন, সুরা নিসা ৪ : ৪০
[2] আল কুরআন, সুরা আ’রাফ ৭ : ১৪৭
[3] আল কুরআন, মু’মিন ২৩ : ৪৫-৪৬
[4] ‘কিতাবুর রূহ’ [‘রূহের রহস্য’ শিরোনামে বাংলায় অনূদিত] – ইমাম ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ(র), পৃষ্ঠা ১৬৭ (আহসান পাবলিকেশন)
[5] ‘কিতাবুর রূহ’ – ইমাম ইবনুল কাইয়িম জাওযিয়্যাহ(র), পৃষ্ঠা ১৬৮
[6] The people of Hell will abide therein forever – islamQa (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
[7] The punishment in the grave may happen to sinners among those who affirm the Oneness of Allah; the squeezing in the grave will happen to everyone – islamQa (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/175666
[8] আল কুরআন, তীন ৯৫ : ৭-৮