Pray for the world economy

কবি আসমা বিনত মারওয়ানকে হত্যার ঘটনা কতোটুকু সত্য?

 

মূলঃ শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ (হাফিজাহুল্লাহ)

অনুবাদঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার

 

অনুবাদকের ভূমিকাঃ নাস্তিক-মুক্তমনারা সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রায়ই ইসলামের নামে নানা বাজে কথা বলে থাকে। অনেক সময় তাদেরকে বলতে দেখা যায় - নবী()কে সমালোচনা করার জন্য আসমা বিনত মারওয়ান নামে একজন কবিকে নাকি মুসলিমরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। আসলেই কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিলো? মুহাদ্দিসদের তাহকিকসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এখানে।

 

ফতোয়া নং ১৭৭৬৯৪: আসমা বিনত মারওয়ানকে হত্যা সংক্রান্ত ঘটনাটি মিথ্যা

 

প্রশ্নঃ

ভাই, আমার প্রশ্নটি আসমা বিনত মারওয়ানের মৃত্যু নিয়ে। ইসলামবিরোধীরা বলছে যে, তাকে নবী(ﷺ) এর নির্দেশে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কেউ কেউ বলছে এ দ্বারা নাকি ইয়াসরিব (মদীনা) শহরে  রাসুল(ﷺ) এর ক্ষমতার লোভের প্রমাণ পাওয়া যায়! খুব ভালো হতো যদি এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতেন। তাহলে আমি ঐসব লোককে বোঝাতে পারতাম যে প্রকৃতপক্ষে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) কতো দয়ালু ছিলেন।

 

উত্তরঃ

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর।

 

প্রথমতঃ

মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে আমাদেরকে বলেছেন যে, তিনি তাঁর রাসুল(ﷺ)-কে সব মানুষের জন্য দয়াস্বরূপ পাঠিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেছেনঃ

 وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ

অর্থঃ আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।

(সুরা আম্বিয়া ২১ : ১০৭)

 

যে এই রহমত (দয়া)কে গ্রহণ করবে আর এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে, এটি দুনিয়া ও আখিরাতে তার জন্য সৌভাগ্যের কারণ হবে। আর যে তা গ্রহণ করবে না এবং অস্বীকার করবে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

[তাফসির ইবন কাসির ৫/৩৮৫]

 

ইমাম হাকিম(র.) তাঁর মুসতাদরাকে (১০০) বর্ণনা করেছেন, আবু হুরায়রা(রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ() বলেছেন, “হে লোকসকল, আমি তো অর্পিত রহমতস্বরূপ”

আলবানী(র.) তাঁর সহীহ আল জামি ২৩৪৫-এ একে সহীহ বলে বর্ণনা করেছেন।

 

নবী(ﷺ) সকল কুরাঈশকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন যদিও তারা তাঁকে পরিত্যাগ করেছিল, তাঁর বিরোধিতা করেছিল, তাঁকে বহিষ্কার করেছিল, তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল এবং আরবদেরকে তাঁর বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছিল। যখন তিনি মক্কা জয় করলেন, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, তাদেরকে শাস্তি দেননি অথবা খারাপ আচরণের জন্য তাদের থেকে প্রতিশোধ নেননি। [1]

 

তিনি ঐ ইহুদি মহিলাকেও ক্ষমা করেছিলেন যে তাঁর জন্য আনা বকরীর মাংসে বিষপ্রয়োগ করেছিল (এবং যার দ্বারা তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন)। ইমাম বুখারী(র.) [২৬১৭] এবং ইমাম মুসলিম(র.) [৫৮৩৪] আনাস বিন মালিক(রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, সেই ইহুদি মহিলা নবী(ﷺ) এর জন্য কিছু বিষ মেশানো বকরীর মাংস নিয়ে এসেছিল। এবং  তিনি তা থেকে কিছু অংশ খেয়েছিলেন। এরপর তাকে তাঁর নিকট নিয়ে আসা হয়েছিল। এবং বলা হয়েছিল, “আমরা কি একে হত্যা করবো না?” তিনি বলেছিলেন, “না”।

 

আয়িশা(রা.) বলেছেন, আর রাসুলুল্লাহ() নিজের জন্য কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। তবে যদি কেউ আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো হারাম কাজে লিপ্ত হতো, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন (বা শাস্তি দিতেন)

এটি ইমাম বুখারী(র.) [৬১২৬] ও ইমাম মুসলিম(র.) [২৩২৭] বর্ণনা করেছেন।

 

 ইমাম বুখারী(র.) [৪৮৩৮] আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (রা.) থেকে, কুরআনের এ আয়াত, {يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا } “হে নবী, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে (সুরা আহযাব ৩৩ : ৪৫) এর ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন,  তাওরাতে কথাটি এভাবে আছেঃ: “হে নবী আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদবাদা ও উম্মী লোকদের মুক্তিদাতারূপে। তুমি আমার বান্দা ও রাসুল। আমি তোমার নাম নির্ভরকারী (মুতাওয়াক্কিল) রেখেছি, যে রূঢ় ও কঠোরচিত্ত নয়, বাজারে শোরগোলকারী নয় এবং মন্দ দ্বারা মন্দ প্রতিহতকারীও নয়; বরং তিনি ক্ষমা করবেন এবং উপেক্ষা করবেন। 

 

এই বর্ণনাগুলো অনিষ্টের বিপরীতে তাঁর ধৈর্য, ক্ষমাশীলতা ও সহনশীলতার ব্যাপারেই বলছে। তাঁর দ্বারা মানুষের দোষকে উপেক্ষা করা এবং উত্তম দ্বারা মন্দকে মোকাবিলা করবার উদাহরণ তো অগণিত। এই মানুষগুলো (ইসলামবিরোধীরা) রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করতে চায় শুধুমাত্র তাদের হিংসা, বিরক্তি এবং অন্তরের ঘৃণার জন্য। আর এগুলো তাদের কুফরী বৃদ্ধির চিহ্ন। তারা তো আল্লাহর আলোকে নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন - যদিও অবিশ্বাসীরা তা অপছন্দ করে। (সুরা সফ ৬১ : ৮ দ্রষ্টব্য)

 

এটি প্রমাণিত যে নবী(ﷺ) নারীদেরকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন। ইমাম আবু দাউদ(র.) [২৬৬৯] বর্ণনা করেছেন, রাবাহ ইবন রবী‘ (রা.) বলেন, “আমরা কোনো এক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ()-এর সাথে ছিলাম। তিনি লোকদেরকে একটি স্থানে ভিড় জমাতে দেখে এক লোককে পাঠিয়ে বললেনঃ দেখে এসো, ঐ লোকেরা কি জন্য ভিড় জমিয়েছে। লোকটি এসে বললো, তারা একটি নিহত মহিলার লাশের কাছে একত্র হয়েছে। তিনি বললেনঃ এ মহিলা তো যুদ্ধ করেনি। একে কেন হত্যা করা হলো! বর্ণনাকারী বলেন, খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ(রা.) অগ্রবর্তী দলের নের্তৃত্বে ছিলেন। নবী() এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে বললেনঃ খালিদকে বলো, নারী এবং শ্রমিককে হত্যা করবে না।”

 

দ্বিতীয়তঃ

আসমা বিনত মারওয়ানের হত্যা সম্পর্কিত যে বর্ণনাটি মিথ্যাবাদীরা ছড়িয়ে থাকে, সেটি একটি মাওযু (জাল / বানোয়াট) বিবরণ। এটি বর্ণনা করেছেন আল ক্বাদা’ঈ তাঁর মুসনাদ শিহাবে (৮৫৬), আল খতিব তাঁর তারিখে (১৩/৯৯), ইবন আসাকির তাঁর তারিখে (৫১/২৪৪) এবং ইবন উমার আল হারবি তাঁর ফাওয়াইদে (৫০)। তাঁদের সকলেই এই সূত্র থেকে বর্ণনা করেছেনঃ

মুহাম্মাদ ইবন হাজ্জাজ আল লাখমী আবু ইব্রাহিম আল ওয়াসিতি যিনি মুজালিদ ইবন সাঈদ থেকে যিনি আশ শাবি থেকে যিনি ইবন আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন; তিনি বলেছেনঃ

 

বনু খাতামাহ এর এক মহিলা নবী()-কে তীব্র ব্যাঙ্গ করে কবিতা লিখেছিল। এ সংবাদ নবী() এর নিকট পৌঁছালে এটি তাঁকে কষ্ট দিলো। তিনি বললেন, “আমার পক্ষ থেকে কে তার ব্যাপারটি দেখবে?” ঐ মহিলার গোত্রের একজন লোক বলে উঠলো, “আমি, হে আল্লাহর রাসুল!” মহিলাটি খেজুর বিক্রী করতো। সুতরাং সে তার কাছে গেল এবং জিজ্ঞেস করলো, “তোমার কাছে কোনো খেজুর আছে?” মহিলা বললোঃ “হ্যাঁ।” সে তাকে কিছু খেজুর দেখালো। সে বললোঃ “আমি এর চেয়ে আরো ভালো কিছু চাচ্ছিলাম।” অতঃপর সে তাকে (আরো খেজুর দেখানোর জন্য) ভেতরে গেলো সে-ও তার পিছু পিছু ভেতরে ঢুকলোসে ডানে-বামে তাঁকাতে লাগলো কিন্তু একটা ছোট টেবিল ছাড়া কিছু দেখতে পেলো না। এরপর সে মহিলাটির মাথায় আঘাত করতে শুরু করলো, যতক্ষন পর্যন্ত না সে মরে যায়। এরপর সে নবী() নিকট গেলো এবং বললো, “হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার জন্য তার ব্যাপারটি হেস্ত-নেস্ত করেছি।” নবী() বললেন, “এ ব্যাপারে ২টি ছাগলও শিং দিয়ে গুঁতোগুতি করবে না!” [অর্থাৎ কাজটি এমনরূপে বৈধ যা নিয়ে কেউ তর্ক করতে পারে না।]

মহিলাটি ছিল আসমা বিনত মারওয়ান।

 

এই ঘটনাটি একটি বাতিল সনদে বর্ণিত হয়েছে। এই তথ্যের বিবরণ মাওযু (জাল)। এটি বর্ণনা করেছে মুহাম্মাদ ইবন হাজ্জাজ যার ব্যাপারে ইমাম বুখারী(র.) বলেছেন, “সে মুনকারুল হাদিস (অর্থাৎ তার বর্ণিত হাদিস পরিত্যাজ্য)”। ইবন মাঈন(র.) বলেছেন, “সে একজন মিথ্যাবাদী এবং নরাধম।” দারাকুতনী(র.) বলেছেন, “সে একজন মিথ্যাবাদী।” অন্যত্র বলেছেন, “সে সিকাহ (নির্ভরযোগ্য) নয়।”

[মিযানুল ই’তিদাল ৩/৫০৯]

 

ইবন ‘আদি বলেছেন, “একজন মহিলা রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-কে ব্যাঙ্গ করতো বলে হাদিসটি জাল করেছে মুহাম্মাদ ইবন হাজ্জাজ। যে (জাল) বিবরণ অনুযায়ী - ঐ মহিলার হত্যাকাণ্ডের পর তিনি [নবী(ﷺ)] বলেছিলেন, “এ ব্যাপারে ২টি ছাগলও শিং দিয়ে গুঁতোগুতি করবে না!” [অর্থাৎ কাজটি এমনরূপে বৈধ যা নিয়ে কেউ তর্ক করতে পারে না।] ”

[আল মাওযুআত - ইবনুল জাওযী(র.),  ৩/১৮]

 

এই হাদিসের ব্যাপারে শায়খ আলবানী(র.) আদ-দ্বইফাহ (৬০১৩) তে বলেছেন, “এটি বানোয়াট”।

 

এই ঘটনাটি ওয়াকিদি আল মাগাযীতে (পৃষ্ঠা ১৭৩) বর্ণনা করেছেন। তার বরাতে আল ক্বাদাঈ (৮৫৮) বর্ণনা করেছেন,

 

 “আব্দুল্লাহ ইবন হারিস তার বাবার সূত্রে আমাকে বলেছেন, আসমা বিনত মারওয়ান ছিল বনু উমাইয়াহ ইবন যায়েদ গোত্রের এবং তার স্বামী ছিল ইয়াজিদ ইবন যায়েদ ইবন হিসন আল খাতমী। সে নবী()-কে কষ্ট (গালাগাল) দিতো, ইসলামের সমালোচনা করতো এবং মানুষজনকে নবী() এর বিরুদ্ধে উসকে দিতো। সে যা যা বলতো এই সংবাদ যখন উমাইর ইবন ‘আদি ইবন খারাশাহ ইবন উমাইয়াহ আল খাতমীর নিকট পৌঁছালো, তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট শপথ করছি যদি আপনি আমাকে নিরাপদে মদীনায় রাসুলুল্লাহ() এর কাছে পৌঁছে দেন, তাহলে আমি ওকে (আসমা) হত্যা করবো।” কারণ রাসুলুল্লাহ() সে সময়ে বদরে অবস্থান করছিলেন। রাসুলুল্লাহ() বদর থেকে ফিরে আসার পর উমাইর ইবন ‘আদি এক মধ্যরাতে ঐ মহিলার নিকট গেলেন এবং তার ঘরে ঢুকলেন। সে সময়ে তার আশপাশে কয়েকটি বাচ্চা ঘুমাচ্ছিলো যার মধ্যে একটি দুধের শিশু ছিল যেটি তখনও দুধ খাচ্ছিলো। তিনি তাকে হাত দিয়ে ধরলেন এবং শিশুটিকে দুধ খাওয়া অবস্থায় পেলেন। তিনি শিশুটিকে এক পাশে সরিয়ে দিলেন এবং তার তলোয়ার ঐ মহিলার বুকের ভেতর ঢুকিয়ে দি্লেন যতক্ষন না সেটি তার পিঠ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর তিনি চলে গেলেন এবং মদীনায় নবী() এর সাথে ফজরের সলাত আদায় করলেন। নবী() সলাত শেষ করে উমাইরের দিকে তাঁকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি বিনত মারওয়ানকে হত্যা করেছো?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ। আমার পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক হে আল্লাহর রাসুল!” উমাইর ভয় পাচ্ছি্লেন যে নবী() হয়তো তার ঐ হত্যাকে অনুমোদন করবেন না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “এ জন্য আমার কি কোনো গুনাহ হয়েছে হে আল্লাহর রাসুল?” তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে ২টি ছাগলও শিং দিয়ে গুঁতোগুতি করবে না!” [অর্থাৎ কাজটি এমনরূপে বৈধ যা নিয়ে কেউ তর্ক করতে পারে না।] আর এই প্রথম আমি (উমাইর) নবী() এর মুখে এই বাক্য শুনলাম। উমাইর বলেন, আশপাশে যারা ছিলেন তাঁদের দিকে নবী() ঘুরলেন এবং বললেন, “তোমরা যদি এমন কাউকে দেখতে চাও যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে সাহায্য করেছে তাহলে উমাইর ইবন ‘আদি-কে দেখো।”  

[বর্ণনা সমাপ্ত]

 

এটি একটি তালিফ (অকেজো) ইসনাদ। ইমাম আহমাদ(র.) ওয়াকিদির ব্যাপারে বলেছেন, যার পুরো নাম ছিল মুহাম্মাদ ইবন উমার ইবন ওয়াকিদি – “সে একজন মিথ্যাবাদী, সে হাদিস পরিবর্তন করে।” ইবন মাঈন(র.) বলেছেন, “সে (ওয়াকিদি) বিশ্বস্ত নয়।” অন্যত্র তিনি বলেছেন, “তার বর্ণিত হাদিস লিপিবিদ্ধ করা যাবে না।” ইমাম বুখারী(র.) এবং আবু হাতিম(র.) বলেছেন, “সে মাতরুক (পরিত্যাক্ত)”। আবু হাতিম(র.) এবং নাসাঈ(র.) বলেছেন, “সে হাদিস জাল করে।” ইবন ‘আদি(র.) বলেছেন, “তার বর্ণিত হাদিস অদ্ভুত এবং সমস্যাপূর্ণ।” ইবন মাদিনি(র.) বলেছেন, “ওয়াকিদি হাদিস জাল করে।”

[মিযানুল ই’তিদাল ৩/৬৬৩]

 

ইমাম নাসাঈ(র.) বলেছেন, “যেসব মিথ্যাবাদী হাদিস জাল করার জন্য পরিচিত, তারা চার জনঃ মদীনায় ইব্রাহিম ইবন আবি ইয়াহইয়া, বাগদাদে ওয়াকিদি, খোরাসানে মুক্বাতিল এবং শামে মুহাম্মাদ ইবন সাঈদ।”

[তাহযিব আত তাহযিব ৯/১৬৩ থেকে বর্ণনা সমাপ্ত]

 

এবং আল্লাহ ভালো জানেন। [2]

 

মূল রচনার উৎসঃ

আরবি : https://islamqa.info/ar/177694/

ইংরেজি : https://islamqa.info/en/177694/

 

 

পাদটিকা (অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত)

[1] মক্কা বিজয়ের পরে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) কুরাঈশদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “ওগো কুরাঈশ জনগণ! তোমাদের কী ধারণা, তোমাদের সঙ্গে আমি কীরূপ ব্যবহার করব বলে মনে করছো?” সকলে বললো, “খুব ভালো। আপনি সদয় ভাই এবং সদয় ভাইয়ের পুত্র। নবী কারীম(ﷺ) বললেন, “তাহলে তোমরা জেনে রেখো যে, আমি তোমাদের সঙ্গে ঠিক সেরূপ কথাই বলছি যেমনটি ইউসুফ (আ.) তাঁর ভাইদের সঙ্গে বলেছিলেন যে, আজ তোমাদের জন্য কোনো নিন্দা নেই। যাও, আজ তোমাদের সকলকে মুক্তি দেয়া হল।” তবে অল্প কিছু লোককে শাস্তি দেয়া হয়েছিলো যারা ছিল খুব বড় পাপী।

বিস্তারিত দেখুন,আর রাহিকুল মাখতুম’ – শফিউর রহমান মুবারকপুরী(র.) [তাওহীদ পাবলিকেশন্স] পৃষ্ঠা ৪৬৫-৪৬৬

[2] আল্লাহ ও রাসুল(ﷺ) এর নামে বাজে কথা বলা, ব্যাঙ্গ করা ভয়াবহ অপরাধ। ইসলামী রাষ্ট্রে এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সাধারণ নিয়ম হচ্ছেঃ মুসলিমগণ শাসককে অবহিত করবেন এবং শাসক অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবেন। এসব ক্ষেত্রে বিধান এবং সাধারণ মুসলিমদের করনীয় কর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ

■ "It is essential to respond to those who defame the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him)" - islamQA (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid) https://islamqa.info/en/14305/

■ "Our attitude concerning mockery of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him)" - islamQA (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)

https://islamqa.info/en/86109/

■ "How should he deal with a work colleague who reviles Allah and His Messenger?" - islamQA (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)

https://islamqa.info/en/145302/