বড়দিন (Christmas) যে ঈসা(আ.) এর ধর্মের মধ্যে এক নব সংযোজন এবং রোমান মূর্তিপুজকদের থেকে ধার করা একটি উৎসব তা এমনকি অনেক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও স্বীকার করে [যেমনঃ Jehovah's Witness]। খ্রিষ্টধর্মে ত্রিত্ববাদ, আদিপাপ, যিশু [ঈসা(আ.)] কর্তৃক সকল মানুষের পাপের ভার বহন—এগুলোও যে ঈসা(আ.) এর ধর্মে অনেক পরে ঢুকেছে সে বিষয়েও অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু আমরা কি জানি, খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে নবী-রাসুলদের সম্পর্কে কী কথা লেখা আছে? এ কথা অনেকেই জানে না যে বাইবেল অনুযায়ী মাসিহ ঈসা(আ.) হচ্ছেন একটি incest এর দূরবর্তী ফসল, তিনি নাকি জারজের বংশধর! নাউযুবিল্লাহ। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে (যেমনঃ পিতা-কন্যা, ভাই-বোন) যৌন কাজকে ইংরেজিতে incest বলে, যাকে বাংলায় অযাচার কিংবা অগম্য-গমনও বলা হয়। আল্লাহ তা’আলা তাঁর পবিত্র নবীদের ব্যাপারে সকল প্রকার মিথ্যাচারের নিপাত করুন।
[[এই লেখার উদ্যেশ্য কোনো সম্প্রদায়কে আঘাত করা নয় বরং সত্যের প্রচার এবং মিথ্যাচারের বিরোধিতা করা। আশা করি কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় মনে কষ্ট না নিয়ে ধৈর্য সহকারে লেখাটি পড়বেন। এখানে সকল তথ্য বাইবেলে থেকে গৃহিত।]]
ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয় ধর্মালম্বীরাই বাইবেলের পুরাতন নিয়ম (Old Testament)কে ঈশ্বরের বাণী হিসাবে মানে; খ্রিষ্টানরা একে ‘পুরাতন নিয়ম’ এবং ইহুদিরা একে ‘তানাখ’ বলে। পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলোতে প্রাচীন নবী-রাসুল এবং তাঁদের পরিবারের ইতিহাস অনেক বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old Testament) এর প্রথম পুস্তকের নাম ‘আদিপুস্তক’(Genesis)। নবী ইব্রাহিম(আ.) এর পুত্র ইসহাক(আ.); ইসহাক(আ.) এর পুত্র ইয়া’কুব(আ.) [Jacob/যাকোব]। ইয়া’কুব(আ.) এর আরেক নাম ইসরাঈল। ইয়া’কুব(আ.) এর বংশধরদেরকে বলা হয় বনী ইসরাঈল। এই বনী ইসরাঈল থেকেই এসেছেন মুসা(আ.), দাউদ(আ.),সুলাইমান(আ.),ঈসা(আ.) এর মত প্রসিদ্ধ নবীগণ। আদিপুস্তকের ৩৮ নং অধ্যায়ে নবী ইয়া’কুব(আ.) এর পুত্র ইয়াহুদার [যিহুদা/Judah] কিছু ঘটনা বর্ণণা করা হয়েছে [[এই ইয়াহুদা থেকেই ‘ইয়াহুদি’(Jew) কথাটি এসেছে]]। ইয়াহুদা হচ্ছেন নবী ইয়া’কুব পরিবারের একজন সদস্য এবং বরকতময় বনী ইসরাঈল জাতির একজন পিতা। বাইবেল বলে যে নবীপুত্র ইয়াহুদা নাকি নিজ পুত্রবধুর সাথে যৌনকাজ করে ২টি জমজ জারজ সন্তানের জন্ম দেন!
বাইবেলের আদিপুস্তকের (Genesis) ৩৮ নং অধ্যায় থেকেঃ-
“১২. অনেক দিন পর শুয়া-র কন্যা যিহুদা (ইয়াহুদা/Judah)র স্ত্রী মারা গেল। শোক কাটিয়ে ওঠার পরে যিহুদা তিমনাহ এর দিকে যাত্রা করলেন। ......
১৩. তামার [যিহুদার পুত্রবধু] জানতে পারলো যে তার শ্বশুর তিমনাহ এর দিকে ভেড়ার লোম ছাটবার কাজে যাচ্ছে।
১৪.সে তার বিধবার পোশাক খুলে ফেলল এবং কাপড় দিয়ে নিজ মুখ ঢেকে ছদ্মবেশ নিল।এরপর এনিয়ামের প্রবেশ মুখে বসে রইলো যেটা তিমনাহ যাবার রাস্তাতেই ছিল। ...
১৫. যিহুদা যখন তাকে দেখলেন, তাকে একটা বেশ্যা ভাবলেন।কারণ সে বেশ্যাদের মত করে মুখ ঢেকেছিল।
১৬. যিহুদা মোটেই বুঝতে পারলেন না যে ঐ মেয়েটাই তার পুত্রপবধু।তিনি তার কাছে গিয়ে বললেন, “এসো, আমায় তোমার সাথে শুতে দাও।” সে জিজ্ঞেস করল, “আপনার সাথে শোয়ার বিনিময়ে আমাকে কী দেবেন?”
১৭. যিহুদা বললেন, ”আমার পাল থেকে তোমার কাছে একটা ছাগলছানা পাঠিয়ে দেব।”। “সেটা পাঠানোর আগ পর্যন্ত আমার কাছে কী বন্ধক রাখবেন?” সে জানতে চাইলো।
১৮.তিনি বললেন, “তোমায় কী বন্ধক দিতে পারি?” “আপনার সীলমোহর আংটি এবং এর সুতা, আর আপনার হাতের ঐ লাঠিটা।” সে বলল। তিনি তাকে এর সবগুলোই দিলেন এবং তার সাথে সঙ্গম করলেন। মেয়েটি তার দ্বারা গর্ভবতী হল।
১৯.পরে মেয়েটি তার মুখের আবরণ সরিয়ে আবার বিধবার পোশাক পড়ল।
২০. যিহুদা তার আদুল্লামীয় বন্ধুকে দিয়ে মেয়েটির কাছে একটি ছাগলছানা পাঠিয়ে দিলেন, যাতে করে একই সাথে সে তার বন্ধকের [আংটি ও লাঠি] জিনিসগুলোও নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু সে কোথাও মেয়েটিকে খুঁজে পেল না।
... ... ...
২৪. প্রায় ৩ মাস পরে যিহুদাকে জানানো হল যে তাঁর পুত্রবধু তামার বেশ্যাগিরী করে। বেশ্যাগিরী করে তার পেটে এখন বাচ্চা এসেছে। শুনে যিহুদা বললেন, “ওকে নিয়ে এসো আর আগুনে পুড়িয়ে মারো!”
[[ ✞✞✞ প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ১:
উনি নিজে বেশ্যার কাছে গেলেন তাতে কোন দোষ হল না, কিন্তু বেশ্যাগিরী করার কারণে মেয়েটাকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চাচ্ছেন! এটি কি যুক্তির মধ্যে পড়লো?
✞✞✞ প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ২:
মেয়েটি যখন বেশ্যাগিরি করেছে তখন তো সে মুখ ঢেকে ছদ্মবেশে তা করেছে। এমনকি তার সাথে সঙ্গমকারী যিহুদাও তাকে চিনতে পারেনি। কাজ শেষে মেয়েটি গোপনে চলে গিয়েছে। ফলে তার বেশ্যাগিরির কথা কারো জানবার কথা নয়। তাহলে কীভাবে যিহুদার কাছে পরবর্তীতে বার্তা যায় যে তার পুত্রবধু বেশ্যাগিরী করে?? কাহিনীটি কি অবাস্তব নয়? এ থেকে কি বোঝা যায় না যে এটা একটা কাল্পনিক গল্প ছাড়া কিছুই নয়? ]]
২৫.মেয়েটিকে যখন নিয়ে আসা হল, তখন সে তার শ্বশুরের কাছে এই বলে বার্তা পাঠালো যে, “আমি সেই মানুষটির দ্বারা গর্ভবতী যে এগুলোর মালিক।” সে আরো যোগ করল, “দেখুন, চিনতে পারেন কিনা এই আংটি, সুতা এবং লাঠি কার।”
২৬.যিহুদা সেগুলো চিনতে পারলেন এবং বললেন, “সে আমার থেকে বেশি পূণ্যবান। আমি তাকে আমার ছেলে শেলার হাতে তুলে দেব বলেও দেইনি।” তিনি মেয়েটির সাথে আর যৌনকাজ করলেন না।
২৭.প্রসবের সময় এলে দেখা গেল তার উদরে দু’টো জমজ ছেলে।
২৮. জন্মের সময় একটি বাচ্চা আগে হাত বের করল। ধাত্রী মহিলা বাচ্চাটির হাতে একটা লাল সুতা বেঁধে বলল, “এই বাচ্চাটা আগে বের হবে”।
২৯. কিন্তু সেই বাচ্চাটি হাত গুটিয়ে নিল। এবং অন্য বাচ্চাটা বের হল। ধাত্রী বলল, “তুমি ঠেলে বের হয়ে এলে!” সেই বাচ্চাটির নাম রাখা হল পেরেজ। [‘পেরেজ’ মানে ঠেলে বের হয়ে আসা]
[বাইবেল, আদিপুস্তক (Genesis) ৩৮:১২-২৯]
বাইবেলের নতুন নিয়মের (New Testament) একেবারে শুরুতেই যিশু খ্রিষ্টের [ঈসা(আ.)] বংশতালিকার রেকর্ডে বলা হয়েছে যে—ইয়াহুদা (যিহুদা)র জারজ সন্তান পেরেজ হচ্ছে ঈসা(আ) এর পূর্বপুরুষ!
১. যিশু খ্রিষ্টের জন্মতালিকা, যিনি কিনা দাউদসন্তান, আব্রাহাম [ইব্রাহিম(আ.)]সন্তান,
২. আব্রাহাম ইসহাকের পিতা, ইসহাক যাকোবের [ইয়া’কুব(আ.)] পিতা, যাকোব যিহুদা ও তাঁর ভাইদের পিতা,
৩. যিহুদা পেরেজ ও জেরাহ এর পিতা, যাদের মা তামার, পেরেজ হেজরনের পিতা, ...
... ... ...
১৬. এবং যাকোব যোসেফের পিতা, যে কিনা মরিয়মের স্বামী।যার থেকে যিশুর জন্ম হয়েছে; তিনি খ্রিষ্ট নামে অভিহীত।
[বাইবেল, মথি (Matthew) ১:১-১৬]
ইসলাম ধর্মালম্বীদের দাবি—এই পুস্তকগুলো নির্ভরযোগ্য নয় বরং এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বিকৃতি রয়েছে। ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের দাবি- এগুলো ঈশ্বরের অবিকৃত বাণী যা ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রানিত কিছু মানুষ লিখেছে।
যা হোক, “ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রানিত কিছু মানুষ” এর লেখা বাইবেলের পুস্তকগুলো সম্পর্কে আমাদের মুসলিমদের প্রশ্নঃ
ঈসা(আ.), যিনি কিনা সকল বংশতালিকার ঊর্ধ্বে, যার কোন পিতাই ছিল না, তাঁর সম্পর্কে কেন অযথা বাইবেলে একটা বংশতালিকা আনা হল? বংশতালিকা এনে কি তাঁর মর্যাদা বাড়লো নাকি কলুষিত করা হল? (বংশতালিকাও মারাত্মক ভুলে ভরা; সেটাও বাইবেল থেকেই প্রমাণ করা যায় ) নবী পরিবারগুলোর নামে বাইবেলের পুরাতন নিয়মে যেসব অশালীন কাহিনী বর্ণিত আছে [বাইবেলে incest (অযাচার) এর ঘটনা আছে মোট ১০টি!] সেগুলোর সাথে কেন ঈসা(আ)কে সংশ্লিষ্ট করা হল? কেন বনী ইস্রাঈলের মহান নবী ঈসা(আ.) এর পবিত্র নসবনামা(বংশতালিকা)কে মিথ্যা দিয়ে কলঙ্কিত করা হল???
"তারা কি এতটুকুও জানে না যে, আল্লাহ সেসব বিষয়ও জানেন যা তারা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে?
তাদের কিছু লোক অক্ষরজ্ঞানহীন। তারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া আল্লাহর গ্রন্থের কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই।
অতএব তাদের জন্যে আফসোস! যারা নিজ হাতে গ্রন্থ লেখে এবং বলে, "এটা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে"--যাতে এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য লাভ করতে পারে।
অতএব আফসোস তাদের হাতের লেখার জন্য এবং আফসোস, তাদের উপার্জনের জন্যে।”
[আল কুরআন, বাকারাহ ২:৭৭-৭৯]