Pray for the world economy

করোনাভাইরাস আর বিজ্ঞানপূজো

 

বিকেলে বাসায় থাকা হলে প্রায়ই চা বা কফি খাওয়া হয়। আসরের সালাত শেষে লেবু চা, সাথে পুদিনা বা তুলসি পাতার বৈঠক থাকে। একদিন চা বানাতে গিয়ে ফেইসবুকে দেখা একটা কবিতা হঠাৎ মনে এল। নাস্তিকেরা বুক ফুলিয়ে বলছে –

 

যদি বেঁচে যাও এবারের মতো, 
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
মন্দির মসজিদ নয়

 

কবিতা পড়ে মনে হলো বিজ্ঞান বোধ হয় কোনো নব-দেবতা! আরোগ্যের ঝান্ডা দিয়ে স্পর্শ করে সুস্থ করে তুলছে! তবে সবাইকে পারছে না। মসজিদ-মন্দির সব অকাজের। তাই এবার বিজ্ঞানেরই পূজো হোক। নমঃনমঃ বিজ্ঞানদেব!

 

 

তার অল্পক্ষণ পরই আরেকটা কবিতা মনে এল, তারপর আরো কয়েকটা। ভাবলাম দু’কলম চালাই। ও মা! দেখি এক ডজন কোবতে (কবিতা) হয়ে গেলো! পড়ে দেখুন তো –

 

যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
শিল্প-সংস্কৃতি নয়

 

যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
সেক্যুলারিজম নয়


যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
মঙ্গল শোভাযাত্রা নয়

 

যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
পদার্থ-গণিত বিদ্যে নয়


যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
কাব্য-সাহিত্য নয়

 

যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
অর্থনীতি-ব্যবসা নয়


যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
নাস্তিকতা নয়

 

যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র নয়


যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
নারীবাদ নয়

 

যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
উকিল-ব্যারিস্টার নয়


যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
জাতীয়তাবাদ নয়

 

যদি বেঁচে যাও এবারের মতো,
যদি কেটে যায় এ মৃত্যুর ভয়!
তবে মনে রেখো বাঁচিয়ে ছিল বিজ্ঞান,
‘___ চেতনা’ নয়

 

এগুলোর কোনোটাই আপনি প্রগতিশীলদের ওয়ালে দেখবেন না। আমি কেন লিখলাম? একটা বেসিক বিষয় বুঝানোর জন্য। এই কবিতাতে যে (অপ)যুক্তি দিয়ে তারা মসজিদ-মন্দির বাদ দিতে চাইছে, একই সুরে বলতে থাকে আরো অনেক কিছুই বাদ পড়ে যায়। তবে তারা এইসব ঘুনাক্ষরেও বলবে না। কারণ হতে পারে, নাস্তিকতার (philosophical naturalism/materialism) বিশ্বাসের অন্যতম অনুসঙ্গ হলো বিজ্ঞানপূজো। (১) তাই ওটা নিয়ে মাতামাতি। বাকিসব বলে নিজেকে বিপদে ফেলবে নাকি তারা?


এবার মুল কথায় আসি। বিজ্ঞান কোন দেবতা নয়, বরং মানুষের বানানো জ্ঞানার্জনের একটি পদ্ধতি মাত্র। যার নিজস্ব বিশ্বাস-দর্শন আছে। (২) এর ভিত্তিতে বস্তুজগতের সীমিত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা চলে। সময়ের সাথে সেই ব্যাখ্যায় নানা বদল আসে, এক-সময় পুরনো ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে একদম আনকোরা ব্যাখ্যা বেছে নেয়া হয় (paradigm shift)। এই বিজ্ঞানের গাড়ি চালায় আমার-আপনার মত কিছু মানুষ।

 

বিজ্ঞানের ওপর অনেক বড়সড় ছড়ি ঘোরে। বিজ্ঞানের গতিপথ নির্ধারিত হয় এই ছড়িগুলোর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী। আমাদের মূল উপকার যে জিনিসটা করে সেটা হল আমাদের নীতি-নৈতিকতা, যেটা ধার্য হয় ধর্মীয় অনুশাসনবোধ, সমাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদির ভিত্তিতে। তাই মূল সমস্যাটা হলো নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয়। বিজ্ঞান নিজে যাই হোক, আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির বেশ কিছু ফ্যাক্টর নির্ধারণ করে এর গতিপথ কেমন হবে। মানুষের মধ্যে যদি সদিচ্ছা শুভবুদ্ধি থাকে, তাহলে বিজ্ঞান দিয়ে লাভ হয়। অন্যথায় নয়। উদাহরণ দেয়া যাক।

 

চায়নাতে করোনা আউটব্রেক হয়েছিলো গত বছরের নভেম্বরের দিকে। কিন্তু নাস্তিক-সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার এই দেশের হর্তাকর্তারা সেটা প্রকাশ করে নি, পাত্তাও দেয় নি। যে কয়জন ডাক্তার তা প্রকাশ করতে চেয়েছিলো তাদের নগদে জেলে পুরে দিয়েছে, আর মিডিয়া দিয়ে মানুষকে বুঝিয়েছে এগুলো সব গুজব। অথচ তখন থেকেই এই নাস্তিক-সমাজতান্ত্রিক প্রশাসন লকডাউনের ব্যবস্থা নিলে সারাবিশ্বে এত ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তো না। কোভিড-১৯ ঠেকানোর উপায় তারা কি জানত না? একই ধরণের রোগ তো আগেও সেখানে হয়েছে। এটা ছড়ায় হাঁচি-কাশি থেকে। লক্ষণ-উপসর্গ না থাকলেও আক্রান্ত ব্যক্তি ভাইরাস ছড়াতে পারে। কাজেই ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে মানুষদের সবাইকে আলাদা করে রাখা, বাইরে থেকে কাউকে আসতে না দেয়া, ওষুধের ব্যবস্থা করা – এগুলো করতে তারা চরম গড়িমসি করেছে। আজ সারা বিশ্বকে সেই খেসারত দিতে হচ্ছে। কোনো মুসলিম অধ্যুষিত দেশ থেকে এটা ছড়ালে এতক্ষণে মুসলিম বিশ্বে নিউক্লিয়ার হামলার প্রস্তাবনাও হয়তো চলে আসতো!

কীভাবে চায়নার প্রশাসন প্রপ্পাগান্ডা ছড়িয়ে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে তার কিছু নমুনা

 

করোনার বিস্তার রোধে এই সামান্য কাজগুলো হাতেগোনা কয়েকটা দেশই ভালমত করতে পেরেছে। তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর- মোটামুটি সার্স থেকে যে কয়টা দেশ ঠেকে শিখেছে তারাই। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেনের তো যাচ্ছেতাই অবস্থা (এই প্রবন্ধের রচনাকালে)। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, প্রিন্স চার্লস এরাও আক্রান্ত। বিজ্ঞানের দান এই প্রত্যেকটা দেশের হাতেই ছিল। বিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা আদৌ যথেষ্ট নয়, যদি না সমাজ পর্যায়ে ব্যাপারটা ভালমত প্রতিফলিত হয়। সেই প্রতিফলনের জন্য সমাজের হর্তাকর্তাদের সময়মত নড়েচড়ে বসতে হয়। হর্তাকর্তারা যদি সেটা না করেন, তাহলে বিজ্ঞান দিয়ে কিছুই হয় না। আবার হর্তাকর্তাদের সেই অপরিপক্ব চিন্তার পেছনে কাজ করে রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতির ঘোলাটে ব্যাপারগুলো।

 

কোভিড-১৯ অসুখটার জন্য দায়ী এক রকম করোনাভাইরাস (SARS-CoV2)। এই শ্রেণীর ভাইরাসগুলোর আক্রমণ পদ্ধতির মধ্যে বেশ কিছু মিল আছে। অর্থাৎ, বিশ্বমোড়লরা চাইলেই সাধারণ করোনাভাইরাসদের বিরুদ্ধে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ বানিয়ে, ট্রায়াল দিয়ে তৈরি করে রাখতে পারত। সেটা করা হয় নি। এখন হুমড়ি খেয়ে পড়ে এইডস/ ইবোলা/এসএলই-এর পুরান ড্রাগ ট্রায়াল দেয়া হচ্ছে। কেন? এই বিজ্ঞানদেব কি সে সময় ছিল না?! আলবৎ ছিল! বিগত প্রায় বিশ-পঁচিশ বছরে সার্সের মহামারী দু’বার হয়েছে। কোনোবারই আমাদের টনক নড়ে নি। কেন? নড়েনি তার কারণ হচ্ছে টাকা। করোনার মহামারী যে মৌসুমে নেই, সে মৌসুমে অযথা ওষুধ বানিয়ে বেচবেন কার কাছে? কাজেই মহামারী হয়ে লাখ-খানেক লাশ পড়ার আগে টাকা ঢালার প্রশ্নই আসে না। বিজ্ঞানের ব্যবসা তো আর নতুন কিছু না। সেই টাকাটা দিয়ে বরং নতুন বোমারু প্লেন বা ড্রোন বানালে বেশি ফায়দা। তাই বলা যায়, বিজ্ঞানদেবের পদতলে যে অর্ঘ্য অর্পন করার চেষ্টা চলছে, তা কতিপয় তারছেড়া লোকের কম্মো ছাড়া কিছু না।

 

আরেকটা প্রশ্ন থেকে যায়। সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে ধর্মের আদৌ কোনো ভূমিকা আছে কিনা? এই বিষয়ে অন্য ধর্মের বক্তব্য আমি জানি না। কিন্তু ইসলাম চর্চা করতে গিয়ে দেখেছি—একজন মুসলিমকে সর্বদা ভেতর-বাহিরে সাফ-সুতরো থাকতে বলা হয়েছে, যেসব অখাদ্য-কুখাদ্য জ্যান্ত/মৃত খাওয়ার অভ্যেস থেকে এমন রোগ ছড়াতে পারে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মদ-সিগারেট ইত্যাদি নেশাদ্রব্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মানব সেবা-সৃষ্টির সেবা দ্বারা রবের নৈকট্য হাসিল করতে বলা হয়েছে। এই অনুপ্রেরণা থেকেই এককালে আমরা বিশ্বের প্রথম হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলাম।

বোনাস: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রতিবেদন। বিস্তারিত পড়তে ছবিতে ক্লিক করুন।

 

সেক্যুলার গবেষকদের বই থেকে জানা যায়:

[I]slam places a premium on cleanliness and personal hygiene, and it is a requirement of every Muslim to carry out the wudhū’. At a time when the Christian West was obsessed with magic, viewing illness either as divine punishment for sins or, worse, as possession by evil spirits, medics in the Muslim world were following the Greek tradition of trying to understand disease and illness scientifically and finding ways to treat them rationally. What is more, maintaining a healthy body and caring for the sick was now seen as a religious duty.

JIM AL KHALILI (2010), PATHFINDERS: THE GOLDEN AGE OF ARABIC SCIENCE, CH. 10: THE MEDIC (PENGUIN BOOKS)

Koranic injunction on the need to heal the sick, meanwhile, spurred enormous gains in medicine and the creation of advanced hospitals, complete with such innovations as specialized wards, regular doctors’ rounds, free health care for indigent patients, and humane treatment of the insane. Grounding their work in Greek learning initially passed along by Nestorian Christians fleeing Byzantine religious persecution, the Arabs went on to develop new medicines and new methods for preparing the active ingredients of these drugs. They made important discoveries in the field of vision and optics and advances in surgery. Revealing an early and growing recognition of germs and other disease pathways, the authorities chose to base Baghdad’s main hospital at a site where tests had shown that raw meat putrefied most slowly… Major medical schools were established in Damascus, Baghdad, Cordoba, and Cairo. The Persian physician and philosopher Avicenna’s eleventh century Canon of Medicine (৩) served as the leading medical text in the West for more than five hundred years, while the medical school at Salerno, in southern Italy, was a primary conduit conveying Muslim medical learning to Western Europe. Adelard of Bath visited Salerno during his grand tour, but there is no record that he ever delved into the healing arts. Unlike the medieval Christian West, which tended to view illness and disease as divine punishment, the Arab physicians looked for imbalances or other physical causes that could be treated as part of their religious mission.

JONATHAN LYONS, THE HOUSE OF WISDOM: HOW ARAB LEARNING TRANSFORMED WESTERN CIVILIZATION; CHAPTER 4 (BLOOMSBURY PUBLISHING)

 

আন্তর্জাতিক বেস্ট-সেলার বইতে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর গবেষক ফিরাস আল-খতিব লিখেছেন:

চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসের কথা বললে অনেকেই ভুল ধারণা করে বসে যে চিকিৎসাশাস্ত্র বােধ হয় অনুমাননির্ভর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থায় এসেছে। এমনকি শিক্ষিত অনেকের কাছেই যদি বিংশ শতাব্দীর আগের চিকিৎসার কথা জানতে চাওয়া হয়, তার মানসপটে হয়তাে সহজসরল গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তারের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলাে মুসলিম বিশ্বে চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ একটি ঐতিহ্য রয়েছে, যার প্রাথমিক ভিত্তি ছিল প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা থেকে পাওয়া তথ্য এবং গবেষণালব্ধ জ্ঞান। যদিও আধুনিক সময়ে এসে অনেকের কাছেই এই কথাগুলাে অপরিচিত মনে হবে, তারপরও এখনও বিশ্বের অনেক জায়গাতেই চিকিৎসাশাস্ত্র প্রসঙ্গে মুসলিম সােনালি যুগের অসাধারণ সব চিকিৎসাবিদদের লেখা পাওয়া যায়। যা এই বিষয়গুলাে সম্পর্কে তাদের দক্ষতাই প্রমাণ করে। মুসলিমদের সে যুগে চিকিৎসাশাস্ত্রেও এতটাই অগ্রগতি হয়েছিল যে, সে সময়টিকে বিশ্বের চিকিৎসা ইতিহাসের সবচেয়ে আলােকিত যুগ হিসেবে। অভিহিত করলেও অত্যুক্তি হবে না। একইসাথে এটাও ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, মুসলিম চিকিৎসাবিদদের সে অবদানগুলাের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসাবিজ্ঞান আজকের এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

ফিরাস আল-খতিব (২০১৯), লস্ট ইসলামিক হিস্ট্রি; পৃ. ১০২ (বঙ্গানুবাদ: আলী আহমাদ মাবরুর, প্রচ্ছদ প্রকাশন)

সংক্রামক রোগের ব্যাপারে তো আরও চমকপ্রদ নির্দেশনা আছে। তাই বলা যায়, এই মহামারী ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে মুসলিমরা আগে থেকেই প্রস্তুত থাকার কথা। দুঃখজন হলেও সত্য, আমাদের মাঝে ইসলামের জ্ঞানচর্চা খুবই অবহেলিত থাকায় আমরা এসব জানি না। কতিপয় আলেম/বক্তা থেকেও এত অদ্ভুত বক্তব্য এসেছে যা সুন্নাহের পুরো বিপরীত! তাকদির, আসবাব আর সুন্নাহ-এর মাঝে সমন্বয়ে আমরা অধিকাংশই ব্যার্থ হচ্ছি। কেবল আবেগ দ্বাড়াই তাড়িত হচ্ছি। (ভিডিও দ্রষ্টব্য)

আলোচনায় ইতি টানবো একজন মুক্তচিন্তক-প্রগতিশীল শিশু সাহিত্যিকের কথা দিয়ে –

‘পৃথিবীর এই অহংকারী দাম্ভিক মানবজাতিকে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় পদানত করে ফেলেছে ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস। পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব ছিলোনা। হঠাৎ করেই তার জন্ম হয়েছে। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, অর্থে-বিত্তে, সম্পদে বলীয়ান হয়েও পৃথিবীর মানুষ তার সামনে অসহায়। এই ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র যে ভাইরাসটি প্রথম জন্ম নিয়েছিলো, সেটি যদি মানুষের মতো চিন্তা-ভাবনা করতে পারতো, তাহলে সে কী অট্টহাসি দিয়ে বলতো, ‘পৃথিবীর মানুষ, তোমার কী নিয়ে এতো অহংকার?’

মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। করোনাকাল। বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম। ৩রা এপ্রিল, ২০২০

 

এই অদৃশ্য ভাইরাস বড়-বড় সুপারপাওয়ারদের শুইয়ে দিল, এরপরও অহংকারী মানুষ শিক্ষা নেয় না। পথে আসার বদলে অজ্ঞতা ও অহংবোধকে পূঁজি করে পথ থেকে আরো দূরে সরে যায়। আসল রবের দিকে না ফিরে, নকল ইলাহের পূজোয় লিপ্ত হয়। এই পূজ্য আর পূজারি – কতই না দুর্বল!

 

[ লেখকের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে লেখাটির লিঙ্কঃ

https://rafanofficial.wordpress.com/2020/04/13/coronavirus-and-science-worship/  ]

 


তথ্যসূত্র:
১। Jonathan J. Loose et al. (edt), The Blackwell companion to substance dualism; p. 22 (Wiley Blackwell, 2018)
২। বিস্তারিত: রাফান আহমেদ, হোমো স্যাপিয়েনস: রিটেলিং আওয়ার স্টোরি; অধ্যায় – বিজ্ঞানের গান, ল্যাবরেটরির অন্তঃপুর (ঢাকা: সমর্পন প্রকাশন, ২০২০) এই অধ্যায়দুটিতে বিভিন্ন একাডেমিক বইয়ের রেফারেন্স দেয়া আছে।
৩। ইবনে সিনা কিছু দার্শনিক ধারণা প্রমোট করার কারনে কোনো-কোনো আলেম তাকে কাফির ফাতায়া দিয়েছিলেন। উনি কোন অবস্থায় মারা গিয়েছেন তা নিশ্চিত নয়। কেউ কেউ বলেন উনি তাওবা করেছিলেন। সেটা বিবেচনায় না নিলেও, উনাকে একেবারে নাস্তিক বলা যায় না। উনার লেখা মাস্টারপিস আল-কানুনের ভূমিকা শুরুই হয়েছে আল্লাহর প্রতি প্রশংসা জ্ঞাপন ও নবীর প্রতি দরুদ পেশ করে। দেখুন: The Canon of medicine (Trans. Cameron Gruner, AMS PRESS INC. 1973) p. 22। বইয়ের ১ম অধ্যায় শুরু হয়েছে – বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে। একই বইয়ের ২৮ পৃষ্ঠায় তিনি মেডিসিন চর্চার পিছে ধর্মীয় অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করেছেন।