Pray for the world economy

যে মেয়েকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয় এবং যে কবর দেয় - উভয় কি জাহান্নামী?

 

হাদিস যখন প্রেক্ষাপট ব্যতিত বুঝতে চাওয়া হয় তখন কিছুটা অস্পষ্টতা ও ঝামেলার সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের উচিত কোনো বিষয়ে অস্পষ্ট হলে গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসদের ব্যাখ্যা সামনে রাখা।

 

লেখাটি বুঝতে ও মন্তব্য করতে শেষ পর্যন্ত পড়ার আহ্বান রইলো।

হাদিসে বলা হয়েছেঃ


من طريق الشَّعْبِيِّ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ سَلَمَةَ بْنِ يَزِيدَ الْجُعْفِيِّ قَالَ: انْطَلَقْتُ أَنَا وَأَخِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أُمَّنَا مُلَيْكَةَ كَانَتْ تَصِلُ الرَّحِمَ ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ ، وَتَفْعَلُ وَتَفْعَلُ ، هَلَكَتْ فِي الْجَاهِلِيَّةِ ، فَهَلْ ذَلِكَ نَافِعُهَا شَيْئًا؟ قَالَ : لَا قُلْنَا: فَإِنَّهَا كَانَتْ وَأَدَتْ أُخْتًا لَنَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَهَلْ ذَلِكَ نَافِعُهَا شَيْئًا؟ قَالَ: (الْوَائِدَةُ وَالْمَوْءُودَةُ فِي النَّارِ إِلَّا أَنْ تُدْرِكَ الْوَائِدَةُ الْإِسْلَامَ فَيَعْفُوَ اللَّهُ عَنْهَا
অর্থঃ শাবীর সূত্রে আলকামা থেকে এবং তিনি সালমাতা বিন ইয়াজিদ জু'ফী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি এবং আমার ভাই রাসুলুল্লাহ() -এর কাছে গেলাম। তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মা "মুলাইকা" তিনি আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতেন, মেহমানদারী করতেন এবং এই এই করতেন। তিনি জাহেলিয়াতের যুগে মৃত্যুবরণ করেন। এ সকল নেক আমলের উপকার কি সে এখন পাবে?

তিনি() বললেন, না।

আমরা বললাম, জাহেলিয়াতের যুগে তিনি আমাদের একটি বোনকে জীবন্ত দাফন করেন, এখন এই অন্যায়ের শাস্তি কি সে প্রাপ্ত হবে?

তিনি() বললেন, জীবন্ত দাফনকারী নারী ও দাফনকৃত মেয়ে (উভয়ে) জাহান্নামী। তবে দাফনকারী নারী যদি ইসলাম কবুল করে তবে আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন।

(মুসনাদে আহমাদ-১৫৪৯৩)

 

সুনান আবু দাউদে আছে-


إن الوائدة والموءودة في النار
অর্থঃ জীবন্ত দাফনকারী নারী ও দাফনকৃত মেয়ে উভয় জাহান্নামী। (৪৭১৭)

এই হাদিসগুলোকে সামনে রাখলে একটা প্রশ্ন আসে - জীবন্ত দাফনকারী নারী পাপের কারণে জাহান্নামী এই কথা তো বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু যাকে দাফন করা হল তার কী দোষ, যে সে জাহান্নামী হবে?


হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লাম ইবনুল কাইয়িম(রাহি.) লিখেছেন,


الجواب الصحيح عن هذا الحديث : أن قوله (إن الوائدة والموءودة في النار) جواب عن تينك الوائدة والموءودة ، اللتين سئل عنهما ، لا إخبار عن كل وائدة وموءودة ،
অর্থঃ এই হাদিস(জীবন্ত দাফনকারী নারী ও দাফনকৃত মেয়ে উভয় জাহান্নামী)-এর ক্ষেত্রে সঠিক উত্তর হল, এই কথা হাদিসের প্রশ্নকৃত দুই ব্যক্তির সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রত্যেক জীবন্ত দাফনকারী ও দাফনকৃত সম্পর্কে বলা হয়নি।

(আহকামু আহলিল যিম্মা-২/৯৫)

শায়খ আলবানী (রাহি.) বলেছেন,

 

ثم إن ظاهر الحديث ان الْمَوْءُودَةَ في النار ولو لم تكن بالغة، وهذا خلاف ما ةقةضيه نصوص الشريعة أنه لا تكليف قبل البلوغ وقد أجيبت عن هذا الحديث بأجوبة اقربها عندي الي الصواب ان الحديث خاص بمَوْءُودَة معينة، وحينئذ الও في الْمَوْءُودَة ليست لاستغراق بل للعهد، ويؤيده قصة ابني مليكة، وعليه فجائز ان تلك الْمَوْءُودَة كانت بالغة فلا إشكال، والله اعلم.

অর্থঃ ‘এই হাদিসটির বাহ্যিক দাবী এই যে, প্রোথিত কন্যা জাহান্নামে যাবে। যদিও সে বালেগা না হয়। কিন্তু এই বাহ্যিক মর্ম শরী‘আতের দলীল বিরোধী যে, বালেগা হওয়ার পূর্বে কেউ শরী‘আতের বিধান মানতে আদিষ্ট নয়। আর এই হাদিসটির বিভিন্ন জবাব প্রদান করা হয়েছে। তন্মধ্যে আমার নিকটে সর্বাধিক বিশুদ্ধ জবাব হল এই হাদিসটি একজন নির্দিষ্ট প্রোথিত কন্যা সম্পর্কে প্রযোজ্য। আর তখন الْمَوْءُودَة এর মধ্যে ال ইসতিগরাক্ব (সমষ্টিবাচক)-এর জন্য নয়। বরং আহদে যিহনীর (নির্ধারিত একজনের) জন্য। মুলায়কার পুত্রদের ঘটনার হাদিসটি দ্বারা এর সমর্থন পাওয়া যায় (যা সালামাহ বিন ইয়াযীদ জু‘ফী হতে বর্ণিত)। এজন্য এ কথা বলা সিদ্ধ যে, সেই প্রোথিত কন্যাটি বালেগা তথা প্রাপ্তবয়স্কা ছিল। আর এভাবেই এই হাদিসটির উপর উত্থাপিত অভিযোগ দূরীভূত হয়ে যায়। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত’।

(হাশিয়াতুল মিশকাত নং ৪০)

শায়েখ আযীম আবাদি(রাহি.) বলেন,


فلا يجوز الحكم على أطفال الكفار بأن يكونوا من أهل النار بهذا الحديث لأن هذه واقعة عين في شخص معين
অর্থঃ এই হাদিস দ্বারা এই কথা বলা শুদ্ধ হবে না যে, কাফির শিশুগন জাহান্নামী। কেননা, এ নির্দিষ্ট ঘটনাটি এক নির্দিষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে।

(আউনুল মা’বুদ-১২/৩২২)

আমি (প্রবন্ধটির লেখক) বলি, আল্লাহর রাসুল(ﷺ) কে ওহীর মাধ্যমে এই ঘটনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, এই অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুটি জাহান্নামী হবে। যেমন খিযির(আ.) এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুকে হত্যা করেছিলেন এইজন্য যে, তাকে ইলহামের (বা হতে পারে ওহীর) মাধ্যেমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এই বালকটি তার পিতা-মাতাকে কুফরী করতে বাধ্য করবে, তাই তাকে হত্যা করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

এখন একটি প্রশ্ন আসতে পারে, এই ছোট শিশুর তো কোন পাপ নেই তবে তাকে কিভাবে জাহান্নামে দেওয়া হবে?

 

আহলে সুন্নাতের অধিকাংশ অলেমদের মতে, অমুসলিমদের শিশুদেরকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন পরীক্ষা করবেন। যারা পরীক্ষায় পাস করবে তাদেরকে জান্নাত দেওয়া হবে আর যারা পরীক্ষায় ফেল করবে তাঁরা জাহান্নামী হবে। এটাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার, ইবনুল কাইয়িম, ইবনে বাযের (রহিমাহুমুল্লাহ) মত।

(দেখুনঃ মাজমুউল ফাতাওয়া ইবনে বায-২/৭১২)

 

এ থেকে বোঝা গেলো যে জাহান্নামী হবে সে মূলত নিজ আমলের জন্যই হবে। পরীক্ষায় পাস না করার জন্য হবে। বিনা দোষে নয়। আল্লাহ কারো উপর সামান্যতম অবিচারও করবেন না।

 

(তবে অমুসলিমদের শিশুরা বিনা হিসাবে জান্নাতি না পরীক্ষা দিয়ে জান্নাতে যেতে হবে এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কিছু মতভেদ আছে।)

 

এবং আল্লাহ সর্বোত্তম জানেন।

 

এ প্রসঙ্গে আরো পড়ুনঃ

 

জান্নাতীদের আমল করা কাউকে কি শুধুমাত্র তাকদিরের প্রভাবে জোর করে জাহান্নামী বানিয়ে দেয়া হয়?

 

কেউ যদি ইসলামের ভুল বার্তা পেয়ে মুসলিম না হয়েই মারা যায় তবে তার কী হবে?

 

তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?

 

আল্লাহ যদি আগে থেকেই সব কিছু জেনে থাকেন তাহলে কেন মানুষের পরীক্ষা নেন?

 

যার উপর নূরের আলোকপ্রভা পড়েছে সে সৎপথ পেয়েছে যার উপর পড়েনি সে পথভ্রষ্ট হয়েছেএই হাদিসের ব্যাখ্যা