আল কুরআনে বর্ণিত মহামহিম স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলার ব্যাপারে ভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য ইসলামবিরোধীদের অপচেষ্টার অন্ত নেই। বিশেষত খ্রিষ্টান প্রচারকরা একটি জিনিস প্রচার করেন যে, মুসলিমদের আল্লাহ নাকি Best deceiver বা শ্রেষ্ঠ প্রতারক (নাউযুবিল্লাহ)। বিষয়টি উচ্চারণ করতেও আমাদের কষ্ট হয়, কিন্তু এহেন জঘন্য অপপ্রচারের অপনোদনের জন্য এটি উল্লেখ করতে হলো। ইউটিউবে বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এ ব্যাপারে খ্রিষ্টান মিশনারীদের বহু ভিডিও বা প্রবন্ধ লক্ষ করা যায় যা দেখে অনেক সরলপ্রাণ মুসলিম বিভ্রান্ত হন, অনেক সরলপ্রাণ সাধারণ খ্রিষ্টানও ইসলাম সম্পর্কে বিকৃত ধারণা পান। আমরা এখন খ্রিষ্টান মিশনারীদের এহেন প্রচারণার ব্যাপারে পর্যালোচনা করবো।
খ্রিষ্টান প্রচারকদের দাবিঃ
খ্রিষ্টান মিশনারীরা তাদের দাবির স্বপক্ষে যেসব কুরআনের আয়াত উল্লেখ করে থাকেঃ
وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
অর্থঃ “এবং তারা কৌশল করেছিল এবং আল্লাহ্ও (জবাবে) কৌশল করেছিলেন, আল্লাহ কৌশলীদের শ্রেষ্ঠ।” [তাইসিরুল কুরআন অনুবাদ]
“And the disbelievers planned, but Allah planned. And Allah is the best of planners.” [Sahih International Translation] [1]
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ ۚ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
অর্থঃ “স্মরণ কর, সেই সময়ের কথা যখন কাফিরগণ তোমাকে বন্দী করার কিংবা হত্যা করার কিংবা দেশ থেকে বের করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করে। তারা চক্রান্ত করে আর আল্লাহও কৌশল করেন। আল্লাহই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।” [তাইসিরুল কুরআন অনুবাদ]
“And [remember, O Muhammad], when those who disbelieved plotted against you to restrain you or kill you or evict you [from Makkah]. But they plan, and Allah plans. And Allah is the best of planners.” [Sahih International Translation] [2]
أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ ۚ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ
অর্থঃ “তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকে নির্ভয় হয়ে গেছে? নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর কৌশল হতে কেউ নির্ভয় হতে পারে না।” [তাইসিরুল কুরআন অনুবাদ]
“Then did they feel secure from the plan of Allah? But no one feels secure from the plan of Allah except the losing people.” [Sahih International Translation] [3]
وَمَكَرُوا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
অর্থঃ “তারা এক চক্রান্ত করেছিল আর আমিও এক কৌশল অবলম্বন করেছিলাম, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি।” [তাইসিরুল কুরআন অনুবাদ]
“And they planned a plan, and We planned a plan, while they perceived not.” [Sahih International Translation] [4]
এ ছাড়া তাদেরকে আবু বকর(রা.) এর একটি উক্তিও উল্লেখ করতে দেখা যায়ঃ
و يقول و هو يبكى: "يا ليتني كنت شجرة تعضد"..!
فاذا ذكر بمقامة عند الله اجاب:
- "و الله لا امن لمكر الله، و لو كانت احدى قدمي فى الجنة"..
" So, he used to utter, while weeping: ‘Would that I have been a bitten tree!’ Whenever he was reminded of his position in Allah’s sight, he would say: ‘By Allah! I would not rest assured and feel safe from the deception of Allah (la amanu limakr Allah), even if I had one foot in paradise.’" [5]
খ্রিষ্টান মিশনারীদের দাবিমতে, উপরে উল্লেখিত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা’আলার কর্মের ক্ষেত্রে মূল আরবিতে ‘مكر’ (মাকর) কথাটি এসেছে। এর অর্থ ইংরেজিতে Deception, Scheme ইত্যাদি হয় এবং বাংলায় এর অর্থ প্রতারণা, চক্রান্ত ইত্যাদি হয়। ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর(রা.) এর উক্তিতেও আল্লাহর ব্যাপারে এই শব্দটি পাওয়া যায়। এ থেকে তারা দাবি করতে চান মুসলিমদের আল্লাহ একজন প্রতারক (নাউযুবিল্লাহ)।
জবাবঃ
‘মাকর’ (مكر) শব্দের অর্থঃ
আলোচ্য আয়াতগুলোতে এবং আবু বকর(রা.) এর উক্তির মাঝে ‘مكر’ (মাকর) মূল শব্দ থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন শব্দ এসেছে। আমরা এখন দেখবো এই শব্দের অর্থ কী।
এডওয়ার্ড উলিয়াম লেনের আরবি-ইংরেজি অভিধানটি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ একটি অভিধান। খ্রিষ্টান মিশনারীরা এই অভিধানটি উদ্ধৃত করে আল্লাহ তা’আলার সম্পর্কে খারাপ গুণ প্রমাণের চেষ্টা করেন। এই অভিধানে (যা Lane’s Lexicon নামে পরিচিত) مكر শব্দের অর্থের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
“ مَكَرَ, aor. ـُ (Msb, TA,) inf. n. مَكْرٌ; (S, A, Msb, K;) and ↓ امكر; (Msb;) He practised deceit, guile, or circumvention; or he practised deceit, guile, or circumvention, desiring to do to another a foul, an abominable, or an evil, action, clandestinely, or without his knowing whence it proceeded; ” [6]
অর্থাৎ, এখানে ‘مكر’ শব্দের মানে আলোচনা করতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, “সে কাউকে আঘাত করার (foul) জন্য কপটতা (deceit) করেছে, ধুর্ততা (guile) করেছে অথবা পাশ কাটিয়ে গিয়েছে (circumvention)। একটি জঘন্য (abominable) অথবা মন্দ (evil) কাজ। গুপ্তভাবে (clandestinely) অথবা কারো অজ্ঞাতসারে যা করা হয়েছে।
খ্রিষ্টান মিশনারীরা সাধারণত Lane’s Lexicon থেকে এইটুকু অর্থ উল্লেখ করেই থেমে যান।অথচ আলোচনা এখানেই শেষ নয়। ‘مكر’ শব্দের অর্থ আলোচনা করতে গিয়ে এখানে আরো অনেকগুলো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে যা তারা বেমালুম এড়িয়ে যান। Lane’s Lexicon এ এই আলোচনার একটু পরেই উল্লেখ করা হয়েছে,
“ مَكْرٌ is praised or dispraised according to the nature of its object. (El-Basáir.) [For further explanation, see what follows.] - It is trans. by means of بِ: and also, accord. to Z, by itself: (MF:) [but I know not any instance of its being trans. by itself: except as meaning he plotted a thing: see مَكْرَ السَّيِّئ in the Kur, xxxv. 41, [7] cited voce سَيِّئٌ:] you say مَكَرَ بِهِ, (S, A, TA,) aor. and inf. n. as above, (S, TA,) meaning, He deceived, beguiled, or circumvented, him; or he deceived, beguiled, or circumvented, him, and desired to do him a foul, an abominable, or an evil, action, clandestinely, or without his knowing whence it proceeded:” [8]
অর্থাৎ “কর্মের প্রকৃতি অনুসারে ‘مكر’ (মাকর) কথাটি প্রশংসনীয় অথবা নিন্দনীয় অর্থে হতে পারে।” সেখানে এরপর আল কুরআন থেকে مَكْرَ السَّيِّئِ (কু-চক্রান্ত) কথাটি উল্লেখ করে এর উদাহরণ দেয়া হয়েছে।
اسْتِكْبَارًا فِي الْأَرْضِ وَمَكْرَ السَّيِّئِ ۚ وَلَا يَحِيقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ إِلَّا بِأَهْلِهِ ۚ فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا سُنَّتَ الْأَوَّلِينَ ۚ فَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَبْدِيلًا ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَحْوِيلًا
অর্থঃ “যমীনে উদ্ধত আচরণ আর কু-চক্রান্ত। কু-চক্রান্ত তাকেই ঘিরে ধরবে যে তা করবে। তাহলে তারা কি তাদের পূর্ববর্তীদের উপর (আল্লাহর পক্ষ হতে) যে বিধান প্রয়োগ করা হয়েছে তারই অপেক্ষা করছে? তুমি আল্লাহর বিধানে কক্ষনো কোন পরিবর্তন পাবে না। তুমি আল্লাহর বিধানে কক্ষনো কোন ব্যতিক্রম পাবে না।” [তাইসিরুল কুরআন অনুবাদ]
“[Due to] arrogance in the land and plotting of evil; but the evil plot does not encompass except its own people. Then do they await except the way of the former peoples? But you will never find in the way of Allah any change, and you will never find in the way of Allah any alteration.” [Sahih International Translation] [9]
কুরআনের উদাহরণের পর সেখানে আবার সেই বাক্যটির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে যা শুরুতে ছিলোঃ “, “সে কাউকে আঘাত করার (foul) জন্য কপটতা (deceit) করেছে, ধুর্ততা (guile) করেছে্…”। আমরা দেখলাম উইলিয়াম লেনের অভিধানে একদম পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ‘مكر’ (মাকর) মানেই খারাপ ষড়যন্ত্র, প্রতারণা বা চক্রান্ত না বরং কথাটি প্রশংসনীয় অথবা নিন্দনীয় উভয় অর্থে হতে পারে। কুরআনের মধ্যেই পরিষ্কারভাবে এমন উদাহরণ দেখা যায়।অথচ ইসলামবিদ্বেষীরা এই জায়গাগুলো সম্পূর্ণ গোপন করে।তারা শুধু সেই জায়গাটি উল্লেখ করে যেখানে ‘مكر’ এর খারাপ অর্থগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।যাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার গুণাবলির ব্যাপারে মিথ্যারোপ করা যায়।
খ্রিষ্টান মিশনারীদের উদ্ধৃত করা উইলিয়াম লেনের অভিধান থেকে আমরা ‘مكر’ (মাকর) শব্দের অর্থ দেখলাম। এবার আমরা কিছু প্রাচীন ব্যাকরণবিদ ও আলেমদের থেকে এই শব্দের অর্থ দেখবো।
প্রসিদ্ধ ব্যাকরণবিদ রাগিব ইসফাহানী(র.) বলেছেন,
قال الرَّاغب: (المكْر: صرف الغير عمَّا يقصده بحيلة، وذلك ضربان: مَكْرٌ محمودٌ، وذلك أن يُتَحرَّى بذلك فعلٌ جميل... ومذموم، وهو أن يُتَحرَّى به فعلٌ قبيح)
অর্থঃ “মাকরঃ কৌশলের মাধ্যমে কেউ যা উদ্দেশ্য করে, তা থেকে তাকে অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখা। এটি দুই প্রকার। প্রশংসনীয় মাকর (কৌশল), যার দ্বারা কোনো ভালো কাজ আশা করা হয়। … এবং নিন্দনীয় (কৌশল); যার দ্বারা কোনো খারাপ কাজকে প্রত্যাশা করা হয়।” [10]
রাগিব ইসফাহানী(র.) আরো বলেছেন,
المكْر والخَدِيعَة: متقاربان، وهما اسمان لكلِّ فعل يَقْصِد فاعله في باطنه خلاف ما يقتضيه ظاهره، وذلك ضربان:
1- أحدهما مذموم: وهو الأشهر عند النَّاس والأكثر، وذلك أن يقصد فاعله إنزال مكروه بالمخدوع، وهو الذي قصده النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم بقوله: ((المكر والخَدِيعَة في النَّار ))، والمعنى: أنَّهما يؤدِّيان بقاصدهما إلى النَّار.
2- والثَّاني: على عكس ذلك، وهو أن يقصد فاعلهما إلى استجرار المخدوع والممكور به إلى مصلحة لهما، كما يُفْعَل بالصَّبي إذا امتنع مِن تعلُّم خيرٍ
অর্থঃ “ ‘মাকর’ এবং ‘খাদিআহ’ কাছাকাছি শব্দ। এই শব্দদ্বয় দ্বারা ঐসব কাজকে বোঝায় যেসব জায়গায় কর্তা বাহ্যিকভাবে যা মনে হয় এর চেয়ে ভিন্ন এক উদ্দেশ্য নেন। এগুলো দুই প্রকারের হতে পারে।
১। এদের প্রথমটি নিন্দনীয় অর্থে। এটিই মানুষের মাঝে সব থেকে বেশি প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত। এক্ষেত্রে কর্তা নিন্দনীয় ধোঁকা দেবার ইচ্ছা করে থাকে। এই ব্যাপারটিকে উদ্দেশ্য করেই নবী(ﷺ) বলেছেন, “কৌশল/প্রতারণা এবং ধোঁকা উভয়ই জাহান্নামে।” [11] এর অর্থ হচ্ছে, এই কাজগুলোর যারা ইচ্ছাপোষণ করে, এগুলো তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।
২। এদের দ্বিতীয়টি ঠিক এর বিপরীত। এর দ্বারা কর্তা কৌশলের শিকার এবং প্রতারিত ব্যক্তিদেরকে কল্যাণের দিকে নিয়ে যাবার ইচ্ছাপোষণ করেন। যেমনটি ছোট বাচ্চার সাথে করা হয় যখন সে ভালো কিছু শিখতে চায় না।” [12]
ইমাম ইবনুল কাইয়িম(র.) বলেছেন,
المكْر ينقسم إلى محمود ومذموم، فإنَّ حقيقته إظهار أمرٍ وإخفاء خلافه؛ ليُتَوصَّل به إلى مراده.فمِن المحمود: مَكْرُه تعالى بأهل المكر، مقابلةً لهم بفعلهم، وجزاءً لهم بجنس عملهم.
قال تعالى: وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللّهُ وَاللّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ [الأنفال: 30] وقال تعالى: وَمَكَرُوا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لا يَشْعُرُونَ [النَّمل: 50]
অর্থঃ ‘মাকর’ দুই প্রকার, প্রশংসনীয় ও নিন্দনীয়। বাস্তবিক অর্থে এর দ্বারা কোনো কিছু গোপন করা এবং এর বিপরীত কিছুকে প্রকাশ করা বোঝায়। যার ফলে উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়।
প্রশংসনীয় (মাকর) এর ক্ষেত্রে যেটি হয়ঃ কৌশলকারীদের (খারাপ) কর্মের প্রতিদানস্বরূপ তাদের কর্মের বিরুদ্ধে আল্লাহর কৌশল। যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তারা চক্রান্ত করে আর আল্লাহও কৌশল করেন। আল্লাহই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী” [আল আনফাল ৩০] আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন, "তারা এক চক্রান্ত করেছিল আর আমিও এক কৌশল অবলম্বন করেছিলাম, কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি। [আন নামল ৫০]" [13]
ব্যাকরণবিদ এবং আলেমদের আলোচনা থেকেও এটি দেখা গেলো যে ‘مكر’ (মাকর) শব্দ ব্যবহার হলেই যে তা খারাপ অর্থে হবে এমন কোনো কথা নেই। কারো ব্যাপারে خَيْرُ الْمَاكِرِينَ [সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী] কথাটি আসার মানেই এই নয় যে তিনি খারাপ কোনো কৌশল বা প্রতারণা করেছেন। বরং তা ভালো উদ্যেশ্যেও ব্যবহৃত হতে পারে। যেমনটি আল কুরআনে মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর প্রেক্ষাপট ও ব্যাখ্যাঃ
এবার আমরা কুরআনের সেই আয়াতগুলো পর্যালোচনা করবো যেগুলো দেখিয়ে খ্রিষ্টান মিশনারীরা আল্লাহ তা’আলার গুণাবলির ব্যাপারে খারাপ জিনিস বলার চেষ্টা করে।তারা সাধারণত সুরা আলে ইমরান ৩ : ৫৪, সুরা আনফাল ৮ : ৩০, সুরা আ'রাফ ৭ : ৯৯, সুরা নামল ২৭ : ৫০ এগুলো দেখিয়ে আল্লাহ তা’আলাকে প্রবঞ্চক প্রমাণের চেষ্টা করে (নাউযুবিল্লাহ) যা এই প্রবন্ধের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে।
সুরা আলে ইমরানের ৫২-৫৪ আয়াত প্রসঙ্গে তাফসির ইবন কাসিরে উল্লেখ আছে,
“… ইবন আবু হাতিম বলেনঃ আবু সাঈদ আশাজ্জ, ওয়াকী, ইসরাঈল, সাম্মাক ও ইকরামা হযরত ইব্ন আব্বাস (রা.) হইতে … …তারপর আল্লাহ তা'আলা বনু ইসরাঈল নেতাদের অসৎ সংকল্পের বিষয় খবর দিয়া বলেন যে, তাহারা ঈসা(আ.)-কে হত্যা করিতে সংকল্প করিল এবং তাহাকে শুলিতে চড়াইতে চাহিল। তাই তাহারা ষড়যন্ত্র করিয়া তাহার বিরুদ্ধে সমসাময়িক সম্রাটের নিকট অভিযোগ পেশ করিল যে, এখানকার একটি লোক জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করিতেছে। সে জনসাধারণকে রাজ আনুগত্য স্বীকারে বাধা দিতেছে এবং প্রজা সাধারণের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করিতেছে। সে পিতা-পুত্রের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করিতেছে। এই প্রকারের মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগ পেশ করিয়া তাহারা সম্রাটকে ক্ষেপাইয়া দিল। তাহারা আরও বলিল, লোকটি আসলে জারজ সন্তান। সন্তানটি মূলত নাস্তিক ও কাফের। সম্রাট উত্তেজিত হইয়া হযরত ঈসাকে গ্রেফতার করিয়া শুলিতে চড়াইয়া হত্যা করিবার জন্য লোক পাঠাইলেন। অতঃপর সম্রাটের প্রেরিত লোকগণ একটি ঘর ঘেরাও দিয়া তাহাকে আটক করিল এবং তাহারা ভাবিল যে, তাহাদের কাজ সফল হইয়াছে।
মূলত আল্লাহ তা'আলা তাহাকে তাহাদের মধ্য হইতে সেই ঘরের খিড়কি পথে বাহির করিয়া নিয়া গেলেন এবং তাহাকে মুক্তি দিয়া আকাশে উঠাইয়া নিলেন। তদুপরি তাহার সেই ঘরে তখন যাহারা ছিল তন্মধ্যে একজনকে হযরত ঈসার আকৃতি দিলেন। রাত্রির অন্ধকারে সম্রাটের লোকজন সেই ব্যক্তিকেই হযরত ঈসা মনে করিয়া গ্রেফতার করিল এবং তাহাকে চরমভাবে লাঞ্ছিত করিয়া গুলিতে চড়াইয়া হত্যা করিল। তাহারা তাহার মাথায় কাটা গাড়িয়া দিল। এইভাবে আল্লাহ তা'আলা কৌশল করিয়া তাহার নবীকে নাজাত দিলেন এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্য হইতে উঠাইয়া নিলেন।…” [14]
সুরা আনফালের ৩০ নং আয়াত প্রসঙ্গে তাফসির ইবন কাসিরে উল্লেখ আছে,
“ইমাম আহমদ (র.) বলেনঃ আমাদের নিকট আবদুর রাযযাক (র.) ইবন আব্বাস (রা)-এর ভৃত্য মিকসাম হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ইবন আব্বাস (রা.) আলোচ্য আয়াত প্রসঙ্গে বলেন : মহানবী(ﷺ) মক্কায় অবস্থানকালে কুরায়েশগণ এক সভায় মিলিত হইয়া পরামর্শ করিয়াছিল । উক্ত বৈঠকে কোন এক লোক প্রস্তাব দিল যে, রাত্র প্রভাত হইলেই লোকটিকে ধরিয়া বন্দী করিতে হইবে । কতকে বলিল বন্দী নয়, বরং তাহাকে হত্যা করিতে হইবে। কতক লোকে পরামর্শ দিল, ইহার কিছুই নয়; বরং আমাদের দেশ হইতে তাহাকে বিতাড়িত করিতে হইবে।
এই ঘটনা আল্লাহ তা'আলা তাঁহার নবীকে অবহিত করিলেন। আলী আসিয়া মহানবী(ﷺ) -এর শয্যায় শয়ন করিলেন। মহানবী(ﷺ) মক্কা ছাড়িয়া মদীনার দিকে যাত্রা করিলেন এবং পথিমধ্যে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিলেন। মুশরিকগণ রাত্রিভর মহানবী (ﷺ) -কে ধারণা করিয়া আলী (রা.)-এর প্রতি কড়া দৃষ্টি রাখিল। রাত্র প্রভাত হইলে যখন আলী (রা.) উহাদিগকে দেখিলেন, তখন আল্লাহ উহাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করিয়া দিয়াছেন। … … মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র.) মুহাম্মদ ইবন জাফর ইবন যুবায়ের সূত্রে উরওয়াহ ইবন যুবায়ের হইতে আল্লাহ পাকের আয়াত وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ এর তাৎপর্য প্রসঙ্গে বলিয়াছেন, দৃঢ় ও কাঠোর ষড়যন্ত্র করিয়াছিল। কিন্তু আমি আল্লাহ্ পাক তোমাকে উহা হইতেও মজবুত পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিত্রাণ দিয়াছি।” [15]
এবার সুরা আ’রাফের ৯৯ নং আয়াতের আলোচনা। আমরা যদি সুরা আ’রাফের আগের আয়াতগুলো লক্ষ করি তাহলে খেয়াল করবো যে সেখানে বেশ কয়েকজন পূর্ববর্তী নবী এবং তাঁদের অবাধ্য সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে। ৫৯ নং আয়াত থেকে নুহ(আ.), সালিহ(আ.), লুত(আ.) এবং শুআইব(আ.) এর সম্প্রদায়ের ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে। কিভাবে সেইসব সম্প্রদায়ের নিকট তাদের পাপ কাজের ব্যাপারে নবীগণ(আ.) সতর্কবাণী পৌঁছাতেন, আল্লাহর পথে ডাকতেন, এবং সেই সম্প্রদায়গুলো কিভাবে দাম্ভিকতা ও অবাধ্যতা করে আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হয়েছে এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সেই সম্প্রদায়গুলো বিভিন্নভাবে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে, আল্লাহর নবীদের বিরুদ্ধে অপকৌশল করেছে কিন্তু সব শেষে আল্লাহর আযাব এসে তাদেরকে গ্রাস করেছে। তাদের সব অপকৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এই বর্ণনাগুলো শেষ হবার কিছু পরে ৯৯ নং আয়াত এসেছে, যেখানে আল্লাহর কৌশলের কথা বলা হয়েছেঃ “তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকে নির্ভয় হয়ে গেছে? নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর কৌশল হতে কেউ নির্ভয় হতে পারে না।”
এই আয়াত প্রসঙ্গে তাফসির মা’আরিফুল কুরআনে বলা হয়েছে,
“সারমর্ম হলো এই যে, এসব লোক যারা দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে উন্মত্ত হয়ে আল্লাহকে ভুলে গেছে, তাদের এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত নয় যে, তাদের প্রতি আল্লাহর অযাব রাতে কিংবা দিনের বেলায় যে কোন অবস্থায় এসে যেতে পারে। যেমন বিগত জাতিসমূহের প্রতি অবতীর্ণ অযবের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। বুদ্ধিমানদের কাজ হচ্ছে অন্যের অবস্থা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং যেসব কাজ অন্যের জন্য ধ্বংসের কারণ হয়েছে সেসব কাজের ধারে-কাছেও না যাওয়া ।” [16]
সুরা নামলের ৪৮-৫৩ আয়াত প্রসঙ্গে তাফসির ইবন কাসিরে উল্লেখ আছে,
“আওফী (র.) হযরত ইবন আব্বাস (রা.) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, যেই সকল লোক উষ্ট্রী হত্যা করিয়াছিল, তাহারা বড় দুঃসাহসিকতার সহিত বলিল, আমরা হঠাৎ সালিহ ও তাঁহার পরিবারের লোকজনকে রাত্রিকালে হত্যা করিব। অতঃপর তাঁহার ওয়ারিসদিগকে বলিব, আমরা তাঁহার হত্যাকালে উপস্থিত ছিলাম না। আর এই সম্পর্কে কিছুই জানি না। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাদিগকে ধ্বংস করিয়া দিলেন।
মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র.) বলেন, ঐ নয় ব্যক্তি উষ্ট্রীকে হত্যা করিবার পর বলিল, চল আমরা সালিহকে হত্যা করিয়া আসি। যদি সে সত্যি নবী হইয়া থাকে তবে তো আমরা তাঁহার কিছুই করিতে পারিব না। আর যদি মিথ্যাবাদী হয় তবে তাহার উষ্ট্রীর সহিত তাহাকেও শেষ করিয়া দিব। অতঃপর তাহাকে হত্যা করিবার জন্য তাহারা রাত্রিকালে আসিল, কিন্তু ফিরিশতাগণ তাহাদিগকে পাথর মারিয়া তাহাদের মাথা চুর্ণ বিচূর্ণ করিলেন।
… …
“তাহারা ধোকাবাজীর কাজ করিল আর আমি ও উহার প্রতিশোধ গ্রহণ করিলাম। অথচ, ইহার পূর্বে কিছুই টের পাইল না। তাহাদের ধোকার পরিণতি যে কি তাহা তুমি দেখ। আমি তাহাদিগকে এবং তাহাদের কাওমের সকলকে ধ্বংস করিয়াছি। এই তাহাদের ঘর বাড়ী বিরান পড়িয়া আছে … তাহাদের যুলুম এর কারণে তাহাদের অশুভ পরিণতি। জ্ঞানীজনদের নিকট অবশ্যই ইহাতে নির্দশন রহিয়াছে। আর যাহারা ঈমান আনিয়াছিল পরহেযগারী করিয়াছিল আমি তাহাদিগকে নিরাপদে রক্ষা করিয়াছি।” [17]
খ্রিষ্টান মিশনারীরা আল্লাহ তা’আলার ‘মাকর’ সম্পর্কে যে আয়াতগুলো দেখায়, আমরা এতক্ষণ সেই আয়াতগুলোর প্রসঙ্গ ও ব্যাখ্যা দেখলাম। এখানে সবগুলো আয়াতের ক্ষেত্রেই একটি বিষয়ে মিল দেখা যায়। এখানে সবগুলো আয়াতই পাপী সম্প্রদায়ের ব্যাপারে, যারা আল্লাহর অবাধ্যতা করেছে, নবীদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে এমনকি হত্যার চেষ্টা করেছে। তারা এহেন সীমালঙ্ঘন করার পরে আল্লাহ তা’আলার কৌশল ও পরিকল্পনার নিকট তাদের অপকৌশল পরাস্ত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা এর দ্বারা পাপীদের শাস্তি দিয়েছেন, নবীদের এবং ঈমানদারদেরকে রক্ষা করেছেন। এখানে একটি আয়াতেও পূণ্যবান কাউকে বা সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা বা ধোঁকা দেবার কোনো বিষয় নেই। অথচ খ্রিষ্টান মিশনারীরা এই আয়াতগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপনা করেন যেন আল্লাহ তা’আলা বুঝি গণহারে সব মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকেন (নাউযুবিল্লাহ)! অথচ সত্য এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
আমরা একটু আগেই দেখেছি ভাষাগতভাবে ‘مكر’ (মাকর) শব্দটি প্রশংসনীয় এবং নিন্দনীয় উভয় অর্থেই হতে পারে। আয়াতগুলোর প্রসঙ্গ থেকে এটি প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে মহান আল্লাহর ‘মাকর’ শুধুমাত্র প্রশংসনীয় অর্থে। আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা’আলা যে ‘মাকর’ বা কৌশলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা পাপীদের খারাপ কর্মের বিরুদ্ধে, তাদের অপকৌশলকে ব্যর্থ করা জন্য, নবীদেরকে(আ.) রক্ষা করার জন্য, কল্যাণের জন্য। নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) থেকেই এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট রক্ষা চেয়ে দোয়া করার বর্ণনা পাওয়া যায়। যাতে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে শত্রুদের থেকে কৌশল করে রক্ষা করেন।
حَدَّثَنَا أَبُو حَفْصٍ قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ: سَمِعْتُ عَمْرَو بْنَ مُرَّةَ قَالَ: سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الْحَارِثِ قَالَ: سَمِعْتُ طَلِيقَ بْنَ قَيْسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو بِهَذَا: «رَبِّ أَعِنِّي وَلَا تُعِنْ عَلَيَّ، وَانْصُرْنِي وَلَا تَنْصُرْ عَلَيَّ، وَامْكُرْ لِي وَلَا تَمْكُرْ عَلَيَّ، وَيَسِّرْ لِيَ الْهُدَى، وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيَّ. رَبِّ اجْعَلْنِي شَكَّارًا لَكَ، ذَكَّارًا لَكَ، رَاهِبًا لَكَ، مِطْوَاعًا لَكَ، مُخْبِتًا لَكَ، أَوَّاهًا مُنِيبًا، تَقَبَّلْ تَوْبَتِي، وَاغْسِلْ حَوْبَتِي، وَأَجِبْ دَعْوَتِي، وَثَبِّتْ حُجَّتِي، وَاهْدِ قَلْبِي، وَسَدِّدْ لِسَانِي، وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ قَلْبِي»
অর্থঃ ইবনে আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী(ﷺ) এভাবে দোয়া করতেনঃ “হে প্রভু! আমাকে সাহায্য করো এবং আমার বিরুদ্ধে (কাউকে) সাহায্য করো না। আমাকে সহযোগিতা করো এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সহযোগিতা করো না। আমার জন্য কৌশল এঁটে দাও এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে কৌশল এঁটে দিও না। আমার জন্য হেদায়াতের পথ সুগম করো এবং যে ব্যক্তি আমার উপর অত্যাচার ও সীমালংঘন করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো। হে প্ৰভু! আমাকে তোমার জন্য কৃতজ্ঞ বান্দা বানাও, তোমার জন্য অনেক যিকিরকারী, তোমাকে অধিক ভয়কারী, তোমার অধিক আনুগত্যকারী, তোমার নিকট অনুনয়-বিনয়কারী ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী বানাও। হে আমার রব! আমার তওবা কবুল করো, আমার সমস্ত গুনাহ ধুয়েমুছে সাফ করো, আমার যবানকে সোজা রাখো, আমার অন্তরকে হেদায়াত দান করো এবং আমার বক্ষ থেকে সমস্ত হিংসা দূরীভূত করো” [18]
এখানে যদি ‘মাকর’ এর অনুবাদ ‘কৌশল’ বা ‘plan’ এর পরিবর্তে ‘চক্রান্ত’, ‘ষড়যন্ত্র’, ‘Deceiption’, ‘scheme’ ইত্যাদি শব্দ দ্বারাও অনুবাদ করা হয়, তবু এগুলো তো শুধুমাত্র পাপীদের বিরুদ্ধে, অকল্যাণের বিরুদ্ধে। অকল্যাণের বিরুদ্ধে এই শব্দগুলো প্রয়োগ হলেও তা দ্বারা খারাপ কিছুই বোঝায় না। আল কুরআন থেকে এমন আরো কিছু উদাহরণ এনে আল্লাহ তা’আলার গুণাবলি সম্পর্কে ইসলামবিরোধীদের অপব্যাখ্যা করতে দেখা যায়। সেখানে হয়তো ‘মাকর’ এর কাছাকাছি অর্থের অন্য কোনো শব্দ আছে। যেমনঃ সুরা নিসার ১৪২ নং আয়াত। কিন্তু এসব স্থানেও এর ব্যতিক্রম কিছু নেই, সেসব স্থানেও পাপীদের অপকর্মের বিপরীতে আল্লাহ তা’আলার ব্যবস্থা গ্রহণের কথাই উল্লেখ আছে। যা দ্বারা মহান আল্লাহর ব্যাপারে কোনো খারাপ গুণ প্রমাণ হয় না। এখানে আর সেগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করে প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি করা হলো না। [19] আশা করছি এতক্ষণে বিজ্ঞ পাঠকের নিকট ইসলামবিরোধীদের এ জাতীয় সকল অপব্যাখ্যার অসারতা স্পষ্ট হয়েছে।
আবু বকর(রা.) এর উক্তির পর্যালোচনাঃ
খ্রিষ্টান প্রচারকগণ এ প্রসঙ্গে আবু বকর(রা.) এর একটি উক্তি উদ্ধৃত করে আল্লাহ তা’আলার ব্যাপারে খারাপ গুণ সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেন। আবু বকর(রা.)কে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত উল্লেখ করে যে হাদিস রয়েছে, এই বর্ণনার দ্বারা তারা এর উপরেও আবু বকর(রা.) এর অনাস্থা প্রমাণের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেন।
" So, he used to utter, while weeping: ‘Would that I have been a bitten tree!’ Whenever he was reminded of his position in Allah’s sight, he would say: ‘By Allah! I would not rest assured and feel safe from the deception of Allah (la amanu limakr Allah), even if I had one foot in paradise.’" [20]
খ্রিষ্টান প্রচারকগণের দাবিমতে আবু বকর(রা.) জান্নাতে পা রাখার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার প্রতারণা (deception) এর ভয় করছেন (নাউযুবিল্লাহ)। তারা এখানে ‘মাকর’ এর অনুবাদ ‘deception’ করেছে। এখানে তারা যে অনুবাদ ও ব্যাখ্যা উল্লেখ করে থাকে তা নিঃসন্দেহে আপত্তিকর। কিন্তু তর্কের খাতিরে আমরা যদি একে ঠিকও ধরে নিই, তবু এ থেকে কিছু প্রমাণ করা সম্ভব হবে না যদি না এটি বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়। এই বর্ণনার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ(হাফি.) পরিচালিত সুপ্রসিদ্ধ ফতোয়ার ওয়েবসাইট islamqa.infoতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
ما يذكره بعض الناس عن أبي بكر رضي الله عنه - ويحكيه بعضهم عن عمر رضي الله عنه – أنه قال : " لو كانت إحدى قدمي في الجنة والأخرى خارجها لما أمنت مكر الله " لم نجد له أصلا في كتب أهل الحديث ، ولا نعلم أحدا من أهل العلم ذكره .
অর্থঃ “কেউ কেউ উক্তিটিকে আবু বকর(রা.) এর দিকে সাব্যস্ত করে। আবার কেউ কেউ একে উমার(রা.) এর দিকেও সাব্যস্ত করেঃ
“যদি আমার এক পা জান্নাতের বাইরে থাকে আর অন্য পা জান্নাতে চলেও যায়, আমি আল্লাহর ‘মাকর’ (কৌশল) থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করবো না।”
আমরা হাদিস বিশারদদের গ্রন্থে এই বর্ণনার কোনো ভিত্তি পাইনি। কোনো ইলমের অধিকারীকেও এই বর্ণনা উদ্ধৃত করতে দেখিনি।” [21]
আরেকটি সুপ্রসিদ্ধ ফতোয়ার ওয়েবসাইট islamweb এ এই বর্ণনার ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
فلم نقف له على مصدر فيما تيسر لنا البحث فيه من المراجع.
অর্থঃ “আমাদের নিকট সহজলভ্য গ্রন্থ উৎসের মাঝে আমরা এর কোনো সূত্র খুঁজে পাইনি।” [22]
এই একই বর্ণনা উমার(রা.) এর সাথেও কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট করেন। এ ব্যাপারে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবন সালাহ(র.) বলেন,
هذا القول عن عمر رضي الله عنه لسنا نصححه
অর্থঃ “উমার(রা.) এর সূত্রে এই বক্তব্যকে আমরা সহীহ (বিশুদ্ধ) সাব্যস্ত করি না।” [23]
যে বর্ণনা বিশুদ্ধভাবে বর্ণিতই না, যার উৎস প্রমাণিত না, সেই বর্ণনা থেকে কোনো প্রমাণ পেশ করা যায় না। কাজেই এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া মূলত নিষ্প্রয়োজন।
এরপরেও তর্কের খাতিরে আমরা যদি এই বর্ণনাগুলোকে বিশুদ্ধও ধরে নিই, এখানে কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হয় না। আমরা ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি যে আল কুরআনে বিভিন্ন পাপী সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা খারাপ কর্মের জন্য আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হয়েছে। তাদের উপর আল্লাহর কৌশল প্রযুক্ত হয়েছে। একজন মুত্তাকী বান্দা সদা-সর্বদা ঐসব সম্প্রদায়ের পরিণতি স্মরণ করে আল্লাহর শাস্তির ভয় করবে ও আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করবে এটাই স্বাভাবিক। আবু বকর(রা.) এবং উমার(রা.) নেককার এবং জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত, চূড়ান্তভাবে তাঁরা জান্নাতী হবেন এতে সন্দেহ নেই। কেননা ওহী দ্বারা বিষয়টি নবী (ﷺ)কে অবগত করা হয়েছে। [24] সকল সাহাবী সত্যবাদী ও ন্যায়নিষ্ঠ হলেও নবী-রাসুল বাদে কোনো মানুষ একদম পুরোপুরি নিষ্পাপ নন। ক্ষণিকের গুনাহের জন্য কিছু সময় শাস্তিপ্রাপ্ত হবেন কিনা এ ব্যাপারেও মুত্তাকী সাহাবীগণ সদা ভয়ে থাকতেন। এটা তাঁদের তাকওয়া বা পরহেজগারীর প্রকাশ। এতো বড় নেককার বান্দা হয়েও তাকওয়াবশত তাঁরা নিজেদেরকে নগণ্য এবং পাপী বান্দা মনে করতেন। এমন চিন্তা থেকে যদি আবু বকর(রা.) কিংবা উমার(রা.) এমন কোনো উক্তি করেও থাকেন – এতে সমস্যার কিছুই দেখা যায় না। এর দ্বারা জান্নাতী হবার সুসংবাদের ব্যাপারে কোনো অনাস্থা প্রমাণ হয় না, আল্লাহ তা’আলার কোনো খারাপ গুণাবলিও প্রমাণ হয় না।
আল্লাহর জন্যই যাবতীয় মহত্তম গুণাগুণঃ
মুসলিমরা যে মহান আল্লাহর উপাসনা করে থাকেন, তিনি সকল উত্তম গুণের অধিকারী। তাঁর ক্ষেত্রে শুধু উত্তম বিশেষণই প্রযোজ্য হতে পারে। কোনো অনুত্তম বিশেষণ নয়। খ্রিষ্টান মিশনারী বা অন্যান্য ইসলামবিরোধীরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ব্যাপারে যা বলে থাকে তা সত্যের অপলাপ। আল কুরআনে বলা হয়েছে,
وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ ۚ وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থঃ “আর তিনি-ই, যিনি সৃষ্টিকে শুরুতে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, তারপর তিনি সেটা পুনরাবৃত্তি করবেন; আর এটা তার জন্য অতি সহজ। আসমানসমূহ ও যমীনে সর্বোচ্চ গুণাগুন তারই; এবং তিনিই পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা।” [25]
যত সুন্দর সুন্দর গুণ সবই মহান আল্লাহর রয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] তাঁর মত কোন কিছুই নেই। [তাবারী] [26]
আল কুরআনে আরো বলা হয়েছে,
وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থঃ “…আর আল্লাহর জন্যই যাবতীয় মহোত্তম গুণাগুণ আর তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়৷ ।” [27]
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর যাবতীয় নাম ও গুণই সুন্দর ও মহোত্তম। তাঁর জন্য কোন প্রকার খারাপ নাম ও গুণ সাব্যস্ত করা জায়েয নেই। তবে এতে অবশ্যই ঈমান রাখতে হবে যে, কুরআন ও সুন্নায় আল্লাহর জন্য যে সমস্ত নাম ও গুণাগুণ সাব্যস্ত করা হয়েছে তা অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তার প্রত্যেকটিই সুন্দর। [উসাইমীন: আল-কাওয়া'য়িদুল মুসলা] [28]
বাইবেল এবং ঐশ্বরিক প্রতারণাঃ
খ্রিষ্টান প্রচারকগণ আল্লাহ তা’আলার গুণাবলি সম্পর্কে যে অপব্যাখ্যা করে আমরা এতক্ষণ এর অপনোদন করলাম। এবার চলুন দেখি খ্রিষ্টান মিশনারীরা যে ঈশ্বরকে মানেন, তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে তার ব্যাপারে কেমন গুণাবলি আছে।তবে শুরুতেই বলে নিচ্ছি, এই আলোচনার উদ্দেশ্য কোনো সাধারণ খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীকে কষ্ট দেয়া নয়, আঘাত করা নয়। বরং ইসলামের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ খ্রিষ্টান মিশনারীদের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, এর তুলনামূলক জবাব দেয়া এবং সত্যের প্রকাশ করা। এখানে খ্রিষ্টান অনুবাকদের অনূদিত কিছু বাইবেল থেকে হুবহু তথ্য উদ্ধৃত করে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হবে।
বাইবেলে উল্লেখ আছে, ঈশ্বর দুষ্টলোকদের কুপরিকল্পনাকে ভেস্তে দেন এবং তাদের কুপরিকল্পনা তাদের উপরেই ঘটিয়ে দেন। যার ফলে সবাই ঈশ্বর সম্পর্কে জানতে পারে, ঈশ্বরকে ভয় ও শ্রদ্ধা করতে শিখতে পারে।
“8 মন্দ লোকরা অন্য লোকের খারাপ করারই চিন্তা করে। কিন্তু ঈশ্বর ওদের দুষ্ট পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারেন এবং ঐ কু-পরিকল্পনা ওদের ওপরেই ঘটাতে পারেন। তখন যারাই ওদের দেখবে তারা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে মাথা নাড়াবে।
9লোকরা দেখবে ঈশ্বর কি করেছেন।তাঁর সম্পর্কে তারা অন্য লোকদের বলবে।তখন প্রত্যেকে ঈশ্বর সম্পর্কে আরও বেশী জানতে পারবে।ওরা তাঁকে ভয় ও শ্রদ্ধা করতে শিখবে।” [29]
প্রিয় পাঠক লক্ষ করুন। প্রায় একই রকম ধারণা ইসলামেও আছে। অথচ কুরআনে যখন আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক পাপীদের অপকৌশল ব্যর্থ করা এবং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কৌশলের কথা আসে, সেগুলো নিয়ে খ্রিষ্টান মিশনারীরা ঠিকই অভিযোগ তোলেন। অপরদিকে একই রকম ধারণা যে তাদের নিজের ধর্মগ্রন্থেই আছে তা বেমালুম ভুল যান।
বাইবেলে এমন আরো অনেক উদাহরণ দেখা যায়। যেমনঃ
“আর যদি কোন ভাববাদী প্রতারিত হয় এবং অন্য কিছু বলে, তার মানে, আমি, প্রভু, ঐ ভাববাদীকে ঠকিয়েছি। আমি তাকে শাস্তি দেব। আমি তাকে ধ্বংস করব এবং আমি তাকে আমার প্রজা ইস্রায়েলের মধ্য থেকে সরিয়ে নেব।” (BERV)
“ And if the prophet be deceived and speak a word, I, the Lord, have deceived that prophet, and I will stretch out my hand against him, and will destroy him from the midst of my people Israel.” (RSV) [30]
এখানে ভাববাদী বা নবীদেরকে (Prophet) ঈশ্বর কর্তৃক প্রতারিত করা এবং ঠকানোর উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে। ইংরেজি অনুবাদে সরাসরি ‘deceive’ কথাটি দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ বাইবেলের ঈশ্বর এই কাজগুলো করেন। বাইবেলের ব্যাখ্যাকারকদের মতে এখানে ভণ্ড নবী (False Prophets)দের ব্যাপারে বলা হয়েছে।
“21শেষে একটি আত্মা এগিয়ে এসে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যাব।’ 22সদাপ্রভু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেমন করে করবে?’ সে বলল, ‘আমি গিয়ে তার সব নবীদের মুখে মিথ্যা বলবার আত্মা হব।’ সদাপ্রভু বললেন, ‘তুমিই তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তুমি গিয়ে তা-ই কর।’ 23এইজন্যই সদাপ্রভু এখন আপনার এই সব নবীদের মুখে মিথ্যা বলবার আত্মা দিয়েছেন। আপনার সর্বনাশ হবার জন্য সদাপ্রভু রায় দিয়েছেন।” (SBCL)
“21 Then a spirit came forward and stood before the Lord, saying, ‘I will entice him.’ 22 And the Lord said to him, ‘By what means?’ And he said, ‘I will go forth, and will be a lying spirit in the mouth of all his prophets.’ And he said, ‘You are to entice him, and you shall succeed; go forth and do so.’ 23 Now therefore behold, the Lord has put a lying spirit in the mouth of all these your prophets; the Lord has spoken evil concerning you.” (RSV) [31]
খ্রিষ্টান বিশেষজ্ঞদের মতে এখানেও ভণ্ড নবীদের বিষয়ে বলা হয়েছে। [32] এখানে দেখা যাচ্ছে ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি আত্মা এসে ভণ্ড নবীদেরকে ভুলিয়ে দেয়, তাদেরকে দিয়ে মিথ্যা বলায়, তাদের সর্বনাশ করে।
"আর সেজন্য ঈশ্বর তাদের কাছে ভ্রান্তিমূলক (প্রতারণার) কাজ পাঠান, যাতে তারা সেই মিথ্যায় বিশ্বাস করে," (IRV BEN)
“Therefore God sends upon them a strong delusion, to make them believe what is false,” (RSV) [33]
এখানে প্রসঙ্গসহ পদটি পড়লে বোঝা যায় যে, ঈশ্বর এখানে পাপী ব্যক্তিদের কাছে ভ্রান্তিমূলক বা প্রতারণার কাজ (Strong Delusion) পাঠান যাতে তারা মিথ্যায় বিশ্বাস করেন। পাপী কিংবা ভণ্ড নবীদের সাথে ঈশ্বর প্রতারণা, আত্মা পাঠিয়ে মিথ্যা বলানো ইত্যাদি করে থাকেন বলে বাইবেলে বহু উদাহরণ রয়েছে। খ্রিষ্টান মিশনারীরা এর মাঝে কোনো সমস্যা পান না। যতো সমস্যা পান আল কুরআনের মধ্যে, ইসলামের মধ্যে।
তবে বাইবেলের ঈশ্বর যে শুধু ভণ্ড নবীদের সাথেই এমন করেন তা কিন্তু নয়। সত্য নবীদের সাথেও এমন করেন!
বাইবেলের একজন (সত্য) নবী হচ্ছেন যিরমিয় (Jeremiah)। ঈশ্বর প্রতারণা করেছেন বলে একাধিক স্থানে তাঁকে অভিযোগ করতে দেখা যায়! বাইবেলের নবী যিরমিয়র বক্তব্য অনুযায়ী ঈশ্বর জেরুজালেমের সাথে এবং মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন।
“তখন আমি বললাম, “হায়, সার্বভৌম সদাপ্রভু! তুমি এই লোকেদের এবং জেরুশালেমকে এই কথা বলে পুরোপুরি প্রতারণা করলে যে, ‘তোমরা শান্তি পাবে,’ অথচ তরোয়াল এখন একেবারে আমাদের গলার কাছে!” (BCV)
“Then I said, “Ah, Lord God, surely thou hast utterly deceived this people and Jerusalem, saying, ‘It shall be well with you’; whereas the sword has reached their very life.” (RSV) [34]
The Holy Bible, Bengali Contemporary Version এ যিরমিয় ২০ নং অধ্যায়ের ৭ নং পদ এভাবে অনুবাদ করা হয়েছেঃ
“হে সদাপ্রভু, তুমি আমার বিশ্বাস উৎপন্ন করেছ, তাই আমি বিশ্বাস করেছি; তুমি আমার উপরে শক্তি প্রয়োগ করে বিজয়ী হয়েছ। সমস্ত দিন আমাকে উপহাস করা হয়; প্রত্যেকে আমাকে বিদ্রুপ করে।” (BCV)
কিন্তু এখানে ‘বিশ্বাস উৎপন্ন’ কথার স্থানে টীকা নং দিয়ে পাদটীকায় বলা হয়েছেঃ
“20 : 7 – হিব্রুঃ ঠকিয়েছ, ভুলিয়েছ প্রতারণা করেছ” [35]
অর্থাৎ এখানে মূল হিব্রুতে প্রতারণা, ঠকানো ইত্যাদির কথা আছে! তার মানে নবী যিরমিয় বাইবেলের ঈশ্বরকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করছেন।
এখানে মূল হিব্রুতে কী আছে তা আমরা দেখলাম। বাইবেলের বিভিন্ন বাংলা অনুবাদে বিষয়টি সরাসরি অনুবাদ না করে অন্যভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version এ যিরমিয় ২০ নং অধ্যায়ের ৭ নং পদে ঈশ্বর ‘কৌশল’ করেছেন এবং নবী যিরমিয় ‘প্রতারিত’ হয়েছেন বলে অনুবাদ করা হয়েছে।
“প্রভু, আপনি কৌশল করেছিলেন এবং আমি প্রতারিত হয়েছিলাম। আপনি আমার চেয়ে শক্তিশালী তাই আপনি জিতে গেলেন। আমি মানুষের কাছে হাস্যকর হয়ে গেলাম।ওরা আমাকে নিয়ে সারাদিন ধরে হাসাহাসি করল।” [36]
খ্রিষ্টান মিশনারীগণ মুসলিম অনুবাদকদের ক্রমাগত অভিযুক্ত করেন কেন তারা আরবি ‘মাকর’ এর অনুবাদ ‘কৌশল’ করেন। ওদিকে বাইবেলে কিন্তু ঠিকই মূল হিব্রুতে যাকে ‘প্রতারণা’ বলা হয়েছে, সেই জিনিসকে ‘কৌশল’ বলে অনুবাদ করা হয়েছে!
ইংরেজি Revised Standard Version (RSV) বাইবেলে যিরমিয় ২০ : ৭ পদটি যেভাবে অনুবাদ করা হয়েছেঃ
“O Lord, thou hast deceived me, and I was deceived; thou art stronger than I, and thou hast prevailed. I have become a laughingstock all the day; every one mocks me.” [37]
আল কুরআনের বর্ণনায় সত্য নবীদেরকে রক্ষার জন্য পাপীদের উপযুক্ত শাস্তি দেবার জন্য আল্লাহ তা’আলা কৌশল করেন। অপরদিকে বাইবেলের একজন নবীর বক্তব্য অনুযায়ী ঈশ্বর স্বয়ং একজন সত্য নবীর বিরুদ্ধে প্রতারণা/কৌশল (deceive) করেন, যার ফলে তিনি মানুষের নিকট হাসির পাত্র হন। তা ছাড়া তিনি জেরুজালেমের সাথে এবং মানুষের সাথে প্রতারণা (deceive) করেছেন। এটিও বলা হয়েছে যে ঈশ্বর শক্তিশালী বলে জিতে গেছেন।
তাহলে বাইবেল অনুযায়ী কে শ্রেষ্ঠ প্রতারক (Best deceiver) প্রমাণিত হলেন? প্রশ্নটি আমরা সেসব খ্রিষ্টান মিশনারীদের নিকট রাখলাম যারা আল কুরআনের আল্লাহ তা’আলাকে শ্রেষ্ঠ প্রতারক (Best deceiver) প্রমাণের জন্য নানা অপপ্রচার চালিয়ে থাকেন।
খ্রিষ্টান মিশনারীরা সুরা আলি ইমরানের ৫৪ নং আয়াতে নবী ঈসা(আ.)কে কাফিরদের চক্রান্ত থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহ তা’আলা যে কৌশল করেছেন, এর তীব্র সমালোচনা করে। তাফসিরগুলোতে উল্লেখ আছে কাফির চক্রান্তকারীরা ঈসা(আ.) ভেবে অন্য আরেকজনকে ক্রুশবিদ্ধ করে। [38] খুব স্বাভাবিকভাবে আল্লাহ তা’আলার এই কৌশলের হিকমত বোঝা যায়। এই কৌশলমূলক ব্যবস্থার জন্য ইহুদি ও রোমানরা ভেবেছিলো তারা ঈসা(আ.)কে খতম করে দিয়েছে। তারা শত্রু নিধন করেছে ভেবে নিশ্চিন্ত হয়ে যায়। যার ফলে ঈসা(আ.) এর তাঁর হাওয়ারী বা শিষ্যগণের উপর থেকে ঝুঁকি কমে যায়। তাঁরা ছিলেন সংখ্যা কম ও দুর্বল। তাঁদের ক্ষমতা ছিলো না ইহুদি ও রোমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার। বরং এমন সম্ভাবনা ছিলো যে তারা ঈসা(আ.)কে না পেলে শিষ্যদের সবাইকে হত্যা করে শেষ করে দেবে। আল্লাহ তা’আলার এই কৌশলের দ্বারা ইহুদি ও রোমানরা ঈসা(আ.)কে হত্যা করেছে ভেবে খুশী হয়ে যায় যার দরুণ সত্যিকারের ঈসা(আ.) ও তাঁর শিষ্যদের উপর থেকে তাদের নজর সরে যায়। ঈসা(আ.) তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যদেরকে আল্লাহ তা’আলার বাণী পৌঁছে দিয়ে আসমানে চলে যান। খুবই সহজ ও যৌক্তিক হিসাব। যুদ্ধের ক্ষেত্রেও শত্রুর তুলনায় সংখ্যায় খুব হলে টিকে থাকার কৌশল হচ্ছে শত্রুর নজরকে ফাঁকি দেয়া বা শত্রুর নজরকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়া এরপর নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া। ঈসা(আ.) এবং তাঁর সহচরদেরও অনুরূপ অবস্থা ছিলো। যে জন্য আল্লাহ তা’আলা অবিশ্বাসীদের কৌশলের বিপরীতে তাঁর নবী ও শিষ্যদেরকে আরো শক্তিশালী কৌশলের দ্বারা রক্ষা করেন। কিন্তু সহজ এই হিসাবকে খ্রিষ্টান প্রচারকরা ‘প্রতারণা’, ‘চক্রান্ত’ ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কি লক্ষ করে না, এই ব্যাপারে তাদের নিজ গ্রন্থ বাইবেলে কী ‘কৌশল’ এর উল্লেখ আছে?
খ্রিষ্টীয় বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী ক্রুশবিদ্ধ করার পর যিশু খ্রিষ্টের যখন পুনরুত্থান হয়, এরপর তিনি ৪০ দিন পৃথিবীতে ছিলেন। [39] কিন্তু এই চল্লিশ দিন সময়ব্যপি তিনি শুধুমাত্র কিছু শিষ্যের নিকট দেখা দেন। যেসব ইহুদি ও রোমান তাকে অবিশ্বাস করেছিলো ও হত্যা করতে চেয়েছিলো তাদের নিকট তিনি দেখা দেন না। [40] তিনি যদি তাদেরকে সশরীরে দেখা দিতেন, তাহলে তাদের আর বিশ্বাস না করে উপায় থাকতো না। কিন্তু তিনি মোটেই তা করেননি। প্রশ্ন জাগে, কেন তিনি তা করলেন না? এর পেছনে কী ‘কৌশল’ ছিলো?
কেউ কেউ বলতে পারেন, শিষ্যদেরকে তো তিনি দেখা দিয়েছেন; এটাই যথেষ্ট। অবিশ্বাসীদেরকে তিনি কেন দেখা দেবেন? অবিশ্বাসীদেরকে দেখা না দিলে যে কী সমস্যা, এর উত্তর আছে বাইবেলেই। যিশু নিজেই অঙ্গীকার করেছিলেন যে তাদেরকে তিনি ভাববাদী যোনা (Jonah) এর চিহ্ন দেখাবেন।
“38 এরপর কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুর কাছে এসে বললেন, ‘হে গুরু, আমরা আপনার কাছ থেকে কোন চিহ্ন বা অলৌকিক কাজ দেখতে চাই৷’39 যীশু তাদের বললেন, ‘এ যুগের দুষ্ট ও পাপী লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে; কিন্তু ভাববাদী যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখান হবে না৷ ”
“38 Then some of the scribes and Pharisees said to him, “Teacher, we wish to see a sign from you.” 39 But he answered them, “An evil and adulterous generation seeks for a sign; but no sign shall be given to it except the sign of the prophet Jonah.” [41]
ভাববাদী (নবী) যোনা ৩ দিন মাছের পেটে থেকে আবার ফিরে এসেছিলেন। মারা যাননি। [42] যিশু সেই যুগের দুষ্ট ও পাপী লোকদেরকে ভাববাদী যোনার চিহ্ন দেখানোর অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে ৩ দিন পর পুনরুত্থিত হয়ে তিনি পাপী ও দুষ্টু লোকদের দেখা না দিয়ে শুধুমাত্র শিষ্যদেরকেই দেখা দিয়েছেন। কেন যিশু নিজ অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন?
শুধু তাই না, এই সময়টিতে তিনি এমনভাবে ছিলেন যাতে কেউ তাকে চিনতে পারছিলো না। (সাধারণত ছদ্মবেশে থাকলেই এমনটি হয়।) বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী একজন শিষ্যা তাকে বাগানের মালী ভেবে ভুল করেছিলো।
“15 তাঁরা যখন এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন, এমন সময় যীশু নিজে এসে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগলেন৷ 16 ঘটনাটি এমনভাবেই ঘটল যাতে তাঁরা যীশুকে চিনতে না পারেন৷ 17 যীশু তাঁদের বললেন, ‘তোমরা য়েতে য়েতে পরস্পর কি নিয়ে আলোচনা করছ?’তাঁরা থমকে দাঁড়ালেন, তাঁদের খুবই বিপন্ন দেখাচ্ছিল৷ 18 তাঁদের মধ্যে ক্লিয়পা নামে একজন তাঁকে বললেন, ‘জেরুশালেমের অধিবাসীদের মধ্যে আমাদের মনে হয় আপনিই একমাত্র লোক, যিনি জানেন না গত কদিনে সেখানে কি কাণ্ডটাই না ঘটে গেছে৷’ 19 যীশু তাঁদের বললেন, ‘কি ঘটেছে, তোমরা কিসের কথা বলছ?’ তাঁরা যীশুকে বললেন, ‘নাসরতীয় যীশুর বিষয়ে বলছি৷ তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি তাঁর কথা ও কাজের শক্তিতে ঈশ্বর ও সমস্ত মানুষের চোখে নিজেকে এক মহান ভাববাদীরূপে প্রমাণ করেছেন৷” [43]
“14 একথা বলতে বলতে তিনি যীশুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন কিন্তু চিনতে পারলেন না য়ে উনি যীশু৷ 15 যীশু তাঁকে বললেন, ‘নারী, তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কাকে খুঁজছ?’মরিয়ম তাঁকে বাগানের মালী মনে করে বললেন, ‘মহাশয়, আপনি যদি তাঁকে নিয়ে গিয়ে থাকেন তবে আমায় বলুন তাঁকে কোথায় রেখেছেন, আমি তাঁকে নিয়ে যাব৷’16 যীশু তাঁকে বললেন, ‘মরিয়ম৷’তিনি ফিরে তাকালেন, আর তাঁকে ইহুদীদের ভাষায় বললেন, ‘রব্বি’ যার অর্থ ‘গুরু’৷ 17 যীশু তাঁকে বললেন, ‘আমাকে ধরো না, কারণ আমি উর্দ্ধে পিতার কাছে এখনও যাইনি৷ কিন্তু তুমি আমার ভাইদের কাছে যাও, আর তাদের বল, ‘যিনি আমার পিতা ও তোমাদের পিতা আর আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বর, উর্দ্ধে আমি তাঁর কাছে যাচ্ছি৷” [44]
প্রশ্ন জাগে, কেন তিনি এমন অবস্থায় ছিলেন যাতে মানুষজন তাকে সহজে চিনতে পারছিলো না? এর পেছনে কী ‘কৌশল’ ছিলো? কেন তিনি অঙ্গীকার অনুযায়ী সেই যুগের দুষ্ট ও পাপীদেরকে যোনার চিহ্ন দেখালেন না? সেই চিহ্ন দেখিয়ে কেন তাদেরকে বিশ্বাসের দিকে ধাবিত করলেন না? কেন তিনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এভাবে লুকিয়ে ছিলেন? এই কর্মকে কি ‘ধোঁকা’ বলা যায়? তিনি কি তবে নিজের কিছু অনুসারী বাদে সেই যুগের অন্য লোকদেরকে ‘ধোঁকা’ দিয়েছিলেন?
যারা আল কুরআনের আল্লাহ তা’আলার কর্মকে ‘ধোঁকা’, ‘প্রতারণা’, ‘scheme’, ‘deception’ ইত্যাদি বলতে চান, তাদের নিকট এই যৌক্তিক প্রশ্নগুলো তোলা থাকলো।তাদের নিজ যুক্তি অনুযায়ী এই প্রশ্নগুলো চলে আসে।
কথা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বাইবেলের অনুযায়ী স্বয়ং ঈশ্বরকেই প্ররোচিত করে শয়তান। যার ফলে বিনা কারণে নির্দোষ নবী ইয়োব (Job) ধ্বংসের মুখে পড়েন!
“তখন প্রভু শয়তানকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি আমার দাস ইয়োবকে দেখেছো? পৃথিবীতে ইয়োবের মতো আর কোন লোক নেই। ইয়োব একজন সৎ এবং অনিন্দনীয় মানুষ। সে এখনও তার সততাকে ধরে আছে যদিও তুমি সম্পূর্ণ বিনা কারণে তাকে ধ্বংস করতে আমাকে প্ররোচিত করেছিলে।”(BERV)
“And the Lord said to Satan, “Have you considered my servant Job, that there is none like him on the earth, a blameless and upright man, who fears God and turns away from evil? He still holds fast his integrity, although you moved me against him, to destroy him without cause.” (RSV) [45]
আমরা মুসলিমরা শয়তানকেই সব থেকে অনিষ্টকারী এবং প্রতারক হিসেবে জানি। বাইবেলের দাবিমতে সেই শয়তান স্বয়ং ঈশ্বরকে প্ররোচিত করে আর ঈশ্বর সে অনুযায়ী কাজ করেন যার ফলভোগ করেন একজন নিরাপরাধ নবী! যেসব খ্রিষ্টান মিশনারীরা আল্লাহ তা’আলাকে ‘প্রতারক’, ‘প্রবঞ্চক’ ইত্যাদি নানা বাজে গুণবিশিষ্ট বলে প্রমাণ করতে চান (নাউযুবিল্লাহ) তারা কি নিজ ধর্মগ্রন্থে এই বিষয়গুলো লক্ষ করেছেন? তাহলে কোন নৈতিকতার ভিত্তি নিয়ে তারা ইসলামকে আক্রমণ করেন?
এই আলোচনার দ্বারা কোনো সাধারণ খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীকে কষ্ট পেয়ে থাকলে সে জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। এখানে কাউকে আঘাত করা উদ্দেশ্য নয়। বরং ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণের জবাব দেয়া এবং সত্যকে তুলে ধরাই উদ্দ্যেশ্য। আমরা দোয়া করছি এই আলোচনা সকলকে সত্যের দিকে ধাবিত করবে এবং হেদায়েতের উসিলা হবে।
তথ্যসূত্রঃ
[1] আল কুরআন, আলে ইমরান ৩ : ৫৪
[2] আল কুরআন, আনফাল ৮ : ৩০
[3] আল কুরআন, আ'রাফ ৭ : ৯৯
[4] আল কুরআন, নামল ২৭ : ৫০
[5] "Successors of the Messenger" by Khalid Muhammad Khalid, p. 70 [খ্রিষ্টান মিশনারীদের একটি ওয়েবসাইটে উল্লেখিত রেফারেন্স।]
[6] 'Arabic English Lexicon' By Edward William Lane , Page 2728
http://lexicon.quranic-research.net/pdf/Page_2728.pdf
অথবাঃ http://arabiclexicon.hawramani.com/search/مَكْرَ?cat=50
[7] এখানে অভিধানে সুরা ফাতিরের ৪১ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আলোচ্য শব্দাবলি আছে সুরা ফাতিরের ৪৩ নং আয়াতে। সম্ভবত এটি অভিধানের মুদ্রণজনিত ভুল।
[8] Arabic English Lexicon' By Edward William Lane , Page 2728
http://lexicon.quranic-research.net/pdf/Page_2728.pdf
অথবাঃ http://arabiclexicon.hawramani.com/search/مَكْرَ?cat=50
[9] আল কুরআন, ফাতির ৩৫ : ৪৩
[10] আল মুফরাদাত ফি গারিবিল কুরআন, পৃষ্ঠা ৭৭২
[11] ইবন হিব্বান ৫৫৫৯, তাবারানি ১০/১৬৯, (সহীহ)
[12] আয যারিআতু ইলা মাকারিমিশ শারিআহ, পৃষ্ঠা ২৫৫
[13] ইগাছাতিল লাহফান মিন মাছ্বায়িদিশ শাইত্বন ১/৩৮৮
[14]তাফসির ইবন কাসির, ২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) সুরা আলি ইমরানের ৫৪ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৪৯৪-৪৯৫
[15]তাফসির ইবন কাসির, ৪র্থ খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) সুরা আনফালের ৩০ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৪৩৩-৪৩৪
[16] তাফসির মা’আরিফুল কুরআন, ৪র্থ খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) সুরা আ’রাফের ৯৯ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৮
[17]তাফসির ইবন কাসির, ৮ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) সুরা নামলের ৪৮-৫৩ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৩৯৩-৩৯৫
[18] তিরমিযী,আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ,হাকিম,ইবনে হিব্বান; আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ২৮৮ (সহীহ)
[19] আগ্রহীরা এ ব্যাপারে দেখতে পারেন, তাফসিরে যাকারিয়া, সুরা নিসার ১৪২ নং আয়াতের তাফসির
[20] "Successors of the Messenger" by Khalid Muhammad Khalid, p. 70 [খ্রিষ্টান মিশনারীদের একটি ওয়েবসাইটে উল্লেখিত রেফারেন্স।]
[21] العبد المؤمن بين الخوف والرجاء، إلى أن يلقى الله تعالى
[22] إسلام ويب - مركز الفتوى
[23] الموسوعة الشاملة - فتاوى ابن الصلاح
[24] দেখুনঃ সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নং : ১৯৭ (সহীহ)
[25] আল কুরআন, রুম ৩০ : ২৭
[26] তাফসিরে যাকারিয়া, সুরা রুমের ২৭ নং আয়াতের তাফসির
[27] আল কুরআন, নাহল ১৬ : ৬০
[28] তাফসিরে যাকারিয়া, সুরা নাহলের ৬০ নং আয়াতের তাফসির
[29] বাইবেল,গীতসংহিতা (Psalms) ৬৪ : ৮-৯
[30] বাইবেল,যিহিষ্কেল (Ezekiel) ১৪ : ৯
https://www.bible.com/bible/3150/EZK.14.BERV
https://www.biblegateway.com/passage/?search=ezekiel+14%3A9&version=RSV
[31] বাইবেল, ১ রাজাবলি (1 Kings) ২২ : ২১-২৩
https://www.bible.com/bible/155/1KI.22.SBCL
https://www.biblegateway.com/passage/?search=1+kings+22%3A21-23&version=RSV
[32] Why did God use a lying spirit to deceive Ahab_ _ GotQuestions.org
[33] বাইবেল, ২ থিষলনীকীয় (2 Thessalonians) ২ : ১১
https://www.bible.com/bible/1883/2TH.2.IRVBEN
https://www.biblegateway.com/passage/?search=2+Thessalonians+2%3A11&version=RSV
[34] বাইবেল, যিরমিয় (Jeremiah) ৪ : ১০
https://www.bible.com/bible/2412/JER.4.BCV
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Jeremiah+4%3A10&version=RSV
[35] বাইবেল, যিরমিয় (Jeremiah) ২০ : ৭
https://www.bible.com/bible/2412/JER.20.BCV
[38] দেখুনঃ তাফসির ইবন কাসির, ২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) সুরা আলি ইমরানের ৫৪ নং আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ৪৯৪-৪৯৫
[39] দেখুনঃ বাইবেল, শিষ্যচরিত (Acts) ১ : ৩
[40] দেখুনঃ বাইবেল, শিষ্যচরিত (Acts) ১ : ৩
https://www.wordproject.org/bibles/ben/44/1.htm
আরো দেখুন, যোহন ২০ ও ২১ নং অধ্যায় এবং লুক ২৪ নং অধ্যায়
https://www.wordproject.org/bibles/ben/43/20.htm#0
[41] বাইবেল, মথি (Matthew) ১২ : ৩৮-৩৯
https://www.wordproject.org/bibles/ben/40/12.htm#0
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Matthew+12%3A38-39&version=RSV
[42] ভাববাদী যোনা [Prophet Jonah / নবী ইউনুস(আ.)] কিন্তু মরে গিয়ে পুনরুত্থিত হননি। তিনি মাছের পেটে মারা যাননি। জীবিতই ছিলেন। যিশু যদি ক্রুশে মরেন, তাহলে ভাববাদী যোনার চিহ্নের অনুরূপ হয় না। ভাববাদী যোনার চিহ্নের অনুরূপ হতে হলে যিশুকে বেঁচে থাকতো হতো। এই যৌক্তিক বিষয়টি অনেক খ্রিষ্টানেরই নজর এড়িয়ে যায়।
[43] বাইবেল, লুক (Luke) ২৪ : ১৫-১৯
[44] বাইবেল, যোহন (John) ২০ : ১৪-১৭
[45] বাইবেল, যিরমিয় (Jeremiah) ৪ : ১০
https://www.bible.com/bible/2412/JER.4.BCV
https://www.biblegateway.com/passage/?search=Jeremiah+4%3A10&version=RSV