Pray for the world economy

রমযান মাসে শয়তান বন্দী থাকলে মানুষ খারাপ কাজ করে কেন?

 

প্রশ্নঃ

শয়তানদেরকে নাকি রমযান মাসে বন্দী করে রাখা হয়। তাহলে রমযান মাসে মানুষ খারাপ কাজ করে কেন? রমযান মাসে কে মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়?

কিছু বর্ণনায় দেখা যায় বদরের যুদ্ধে শয়তান সুরাকা বিন মালিকের বেশে কুরাইশদের দলে ছিলো। বদরের যুদ্ধ হয় রমযান মাসে। রমযান মাসে বন্দী থাকলে শয়তান বদরের যুদ্ধে এসেছিলো কী করে?

এই বিষয়গুলো স্ববিরোধী কিনা?

 

উত্তরঃ

 

হাদিসের বক্তব্যঃ

 

নবী করিম() বলেছেনঃ

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُرَغِّبُ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ عَزِيمَةٍ، وَقَالَ: «إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ، وَسُلْسِلَتْ فِيهِ الشَّيَاطِينُ»

অর্থঃ “আবূ হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিতঃ নবী() ফরয ব্যতীত রমযানের তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করার জন্যও উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন যে,যখন রমযান আগমন করে জান্নাতের দরজাসমূহ খূলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।[1]

 

এটি একটি বিশুদ্ধ হাদিস। এই হাদিস থেকে সাধারণভাবে বোঝা যাচ্ছে যে রমযান মাসে শয়তান শৃঙ্খলবন্দী থাকে। তবে নবী() থেকে এই সংক্রান্ত আরো কিছু বিশুদ্ধ এবং বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। যা থেকে এর ব্যাখ্যা বোঝা যায়।

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ ... ...

অর্থঃ “আবূ হুরায়রাহ্(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু() বলেছেনঃ তোমাদের জন্য রমাযানের বারাকাতময় মাস এসেছে। এ মাসে সওম রাখা আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করে দিয়েছেন। এ মাসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের সব দরজা। এ মাসে বিদ্রোহী শয়তানগুলোকে কয়েদ করা হয়। … …” [2]

 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ ... ...

অর্থঃ “আবূ হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ() বলেছেনঃ রামাযান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান ও দুষ্ট জ্বীনদের শৃঙখলাবদ্ধ করে ফেলা হয়।…” [3]

 

عَنْ عَرْفَجَةَ، قَالَ: كُنْتُ فِي بَيْتٍ فِيهِ عُتْبَةُ بْنُ فَرْقَدٍ، فَأَرَدْتُ أَنْ أُحَدِّثَ بِحَدِيثٍ، وَكَانَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَأَنَّهُ أَوْلَى بِالْحَدِيثِ مِنِّي، فَحَدَّثَ الرَّجُلُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " فِي رَمَضَانَ، تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ النَّارِ، وَيُصَفَّدُ فِيهِ كُلُّ شَيْطَانٍ مَرِيدٍ، … …

অর্থঃ “আরফাজা(রহ.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ ‘আমি একটি ঘরে অবস্হান করছিলাম যেখানে উতবা ইব্‌ন ফারকাদ(রা.) ছিলেন। আমি একটি হাদীস বর্ণনা করতে চাইলাম, কিন্তু সেখানে রাসুলুল্লাহ্‌() -এর কাছে একজন সাহাবীও উপস্থিত ছিলেন, যিনি হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে আমার চেয়ে অধিক অভিজ্ঞ ছিলেন। তিনি নবী() থেকে বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ্‌() রমযান মাসের ব্যাপারে বলেছেন, রমযান মাসে আসমানের দরজাসমূহ খূলে দেয়া হয়, আর জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, আর প্রত্যেক দুষ্টু শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয়।… …[4]

 

আমরা দেখলাম সংক্ষিপ্ত বিবরণে সাধারণভাবে শুধু শয়তানের কথা আছে। কিন্তু বিস্তারিত বর্ণনায় জিন-শয়তানের ক্ষেত্রে مَرَدَةُ, مَرِيدٍ ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো একই জাতীয় শব্দ। অভিধানে এই শব্দগুলো এবং এদের সমজাতীয় কিছু শব্দের অর্থ করা হয়েছেঃ বিদ্রোহী হওয়া, বিদ্রোহ করা, ব্যতিক্রমধর্মী হওয়া, অনন্য হওয়া, উদ্ধত ইত্যাদি। [5]

 

 

 

উপরে হাদিসের বঙ্গানুবাদেও আমরা দেখেছি যে শয়তানের ক্ষেত্রে বিদ্রোহী, দুষ্টু ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে।

অর্থাৎ, হাদিসের বিস্তারিত বিবরণে দেখা যাচ্ছে রমযান মাসে এক বিশেষ শয়তানকে বন্দী করা হয় যারা এই বিশেষণে বিশেষায়িত।

 

মুহাদ্দিসদের ব্যাখ্যাঃ

 

قال ابن خزيمة في صحيحه (3/187-188) : " لفظ عام مراده خاص في تصفيد الشياطين إنما أراد بقوله "صفدت الشياطين" مردة الجن منهم، لا جميع الشياطين، إذ اسم الشياطين قد يقع على بعضهم".

 

وقال ابن حبان في "الإحسان" (8/221) : "إنما يصفد الشياطين في شهر رمضان مردتهم دون غيرهم".

অর্থঃ  ইবন খুযাইমাহ(র.) তাঁর সহীহ (৩/১৮৭-১৮৮) গ্রন্থে বলেছেন, “এখানে শয়তানকে বন্দী করাকে সাধারণ একটি কথার দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে তবে এর উদ্যেশ্য সুনির্দিষ্ট। “শয়তানকে বন্দী করা হয়” এই কথার দ্বারা তিনি বলতে চেয়েছেন তাদের মধ্যে ‘মারাদাহ’ (বিদ্রোহী/দুষ্টু) জিনদেরকে বন্দী করা হয়। সব শয়তানকে না। কেননা ‘শায়াতিন’ (শয়তান এর বহুবচন) দ্বারা কিছু জিনকে বোঝানো হয়।”

 

ইবন হিব্বান(র.) তাঁর ‘আল ইহসান’ (৮/২২১) গ্রন্থে বলেছেন, “রমাযান মাসে শুধুমাত্র ‘মারাদাহ’ শয়তানদেরকে বন্দী করা হয়। অন্যদেরকে বাদ দিয়ে[6]

 

এ প্রসঙ্গে ইমাম কুরতুবী(র.) বলেছেন,

 

إنما تغل عن الصائمين الصوم الذي حوفظ على شروطه

অর্থঃ “[শয়তানকে] শুধুমাত্র সেসব সাওম পালনকারীর (রোযাদার) জন্য শৃঙ্খলবদ্ধ করা হয় যারা সাওমের শর্তগুলো হেফাজত করে[7]

 

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া(র.) বলেছেন,

 

والمصفد من الشياطين قد يؤذي لكن هذا اقل وأضعف مما يكون فى غير رمضان فهو بحسب كمال الصوم ونقصه فمن كان صومه كاملا دفع الشيطان دفعا لا يدفعه دفع الصوم الناقص

অর্থঃ “বন্দীকৃত শয়তানেরাও ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু তা রমযান মাসের বাইরের মাসগুলোর তুলনায় দুর্বলভাবে ও স্বল্প আকারে। এবং তা হয় সাওমের (রোযা) পরিপূর্ণতা ও ঘাটতি অনুসারে। কেউ যদি পরিপূর্ণভাবে [উত্তমভাবে, সব শর্তের হেফাজত করে] সিয়াম পালন করে, তার থেকে শয়তানকে দূরে রাখা হবে। যাদের সিয়ামে ঘাটতি রয়েছে [উত্তমভাবে হয়নি, শর্তগুলোর হেফাজত হয়নি], তাদের ক্ষেত্রে ঐভাবে শয়তানকে দূরে রাখা হবে না[8]

 

মানুষের পাপের কারণ শুধু শয়তান নয়ঃ

 

মানুষ শুধুমাত্র শয়তানের প্ররোচনাতেই খারাপ কাজ করে বিষয়টা এমন নয়। নিজ প্রবৃত্তি ও রিপুর তাড়নাতেও মানুষ খারাপ কাজ করে। পাপে লিপ্ত হয়।

 

আল কুরআনে বলা হয়েছে,

 

أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ

 অর্থঃ “তবে তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? …” [9]

 

وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي ۚ إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থঃ ‘আর আমি আমার নাফসকে পবিত্র মনে করি না, নিশ্চয় নাফস মন্দ কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকে, আমার রব যাকে দয়া করেন সে ছাড়া। নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। [10]

 

এ কারণেই নবী() বলেছেন,

 

عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلاَقَةَ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ " .

অর্থঃ যিয়াদ ইবনু ইলাক্বাহ (রহ.) হতে তার চাচা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী() বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে গর্হিত চরিত্র, গর্হিত কাজ ও কু-প্রবৃত্তি হতে আশ্রয় চাই[11]

 

এ প্রসঙ্গে শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (হাফি.) বলেছেন,

 

“…মানুষ কেবল শয়তানের কুমন্ত্রণায় পাপ করে না বরং পাপাচার সংঘটিত হওয়ার পেছনে শয়তান ছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে। যেমন: মানুষ রিপুর কামনা-বাসনা ও কু প্রবৃত্তির তাড়নায় পাপ করে। আবার মানুষরূপী শয়তানের খপ্পরে পড়ে এবং বদ অভ্যাসের বশবর্তী হয়েও পাপ করে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যখন আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে প্রথম মানব আদম আ. কে সেজদা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন সে আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘণ করেছিলো। এখানে প্রশ্ন হল, কোন শয়তান তাকে আল্লাহর অবাধ্যতা করতে প্ররোচিত করেছিলো? না, কোনো শয়তান নয় বরং তার ভেতরের অহংবোধ ও কুপ্রবৃত্তির কারণে সে আল্লাহর অবাধ্যতা করেছিলো।

 

তাই তো হাদিসে রমাযান মাসে রোযাদারদেরকে কুপ্রবৃত্তি, বদ অভ্যাস ও খারাপ আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়েছে।[12]

 

অতএব উপরের কুরআন-হাদিসের দলিল প্রমাণ এবং উলামাদের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি—

 

রমযান মাসেও মানুষ খারাপ কাজ করে, কারণঃ

 

১। রমযান মাসে সব শয়তান বন্দী থাকে না, শুধু মারাদাহ বা মারিদ শয়তান বন্দী থাকে। অন্য শয়তানরা মুক্ত থাকে।

২। বন্দী শয়তানেরা স্বল্প আকারে ক্ষতি করতে পারে। যারা পূর্ণাঙ্গভাবে শর্ত পালন করে সিয়াম পালন করে, তাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখা হয়। অন্যান্যরা এর আওতাভুক্ত না।

৩। শুধু শয়তানের কুমন্ত্রণায় না বরং মানুষ সাধারণভাবে নাফস বা প্রবৃত্তির তাড়নাতেও এবং অভ্যাসবশতও খারাপ কাজ করে থাকে।

 

রমযান মাসে বিদ্রোহী শয়তানের বন্দী থাকা বা ক্ষতিকর প্রভাব কমে যাবার নিদর্শন আমরা দেখতে পাই এই মাসে মানুষের অধিক পরিমাণে সলাত আদায়, দান-সদকাহ এবং অন্যান্য সৎকাজ করা এবং অপেক্ষাকৃত কম পাপ কাজে লিপ্ত থাকার প্রবণতা থেকে।

 

বদরের দিন মুশরিকদের দলের মাঝে শয়তানের আগমন প্রসঙ্গঃ

 

এ ব্যাপারে আল কুরআনে উল্লেখ আছে,

 

وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَّكُمْ ۖ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكُمْ إِنِّي أَرَىٰ مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ ۚ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ

অর্থঃ “আর স্মরণ কর, যখন শয়তান তাদের জন্য তাদের কার্যাবলীকে শোভন করেছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয় অর্জনকারী নেই, আর নিশ্চয় আমি তোমাদের পাশে অবস্থানকারী। অতঃপর দু দল যখন পরস্পর দৃশ্যমান হল তখন সে পিছনে সরে পড়ল এবং বলল, নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে সম্পর্কমুক্ত, নিশ্চয় আমি এমন কিছু দেখছি যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌কে ভয় করি, আর আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।[13]

 

আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে বদর যুদ্ধের ঘটনাবলি আলোচিত হয়েছে।

 

“…যখন মক্কার মুশরিক ও মুসলিম উভয় দল (বদর প্রাঙ্গণে) সম্মুখ সমরে লিপ্ত হল, তখন শয়তান পিছন ফিরে পালিয়ে গেল। বদর যুদ্ধে যেহেতু মক্কার মুশরিকদের সহায়তায় একটি শয়তানী বাহিনীও এসে উপস্থিত হয়েছিল, কাজেই আল্লাহ্ তাআলা তাদের মোকাবেলায় জিবরীল ও মিকাঈল(আ.) -এর নেতৃত্বে ফিরিশতাদের বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন। ইমাম ইবন জরীর আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, শয়তান যখন সুরাকাহ ইবন মালেকের রূপে স্বীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তখন সে জিবরীল-আমীন এবং তার সাথী ফিরিশতা বাহিনী দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে সময় তার হাত এক কুরাইশী যুবক হারেস ইবন হিশামের হাতে ধরা ছিল।

 

সঙ্গে সঙ্গে সে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে চাইল। হারেস তিরস্কার করে বললঃ এ কি করছ? তখন সে বুকের উপর এক প্রবল ঘা মেরে হারেসকে ফেলে দিল এবং নিজের বাহিনী নিয়ে পালিয়ে গেল। হারেস তাকে সোরাকাহ মনে করে বললঃ হে আরব সর্দার সোরাকাহ! তুমি তো বলেছিলে আমি তোমাদের সমর্থনে রয়েছি। অথচ ঠিক যুদ্ধের ময়দানে এমন আচরণ করছ! তখন শয়তান সুরাকাহর বেশেই উত্তর দিল, আমি কৃত চুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছি। কারণ, আমি এমন জিনিস দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না। অর্থাৎ ফিরিশতা বাহিনী। আর আমি আল্লাহকে ভয় করি। কাজেই তোমাদের সঙ্গ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। [তাবারী]

 

শয়তান যখন ফিরিশতা বাহিনী দেখতে পেল এবং সে যেহেতু তাদের শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিল, তখন বুঝল যে, এবার আর পরিত্রাণ নেই। তবে তার বাক্য ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’ সম্পর্কে তাফসীর শাস্ত্রের ইমাম কাতাদাহ বলেন যে, কথাটি সে মিথ্যে বলেছিল। [ইবন কাসীর] ইবন ইসহাক বলেন, আর যখন সে বলেছিল যে, ‘আমি এমন জিনিস দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না।’ এ কথাটি সত্যি বলেছে। [ইবন কাসীর][14]

 

রমযান মাসে শয়তান যেভাবে বদরের ময়দানে উপস্থিত ছিলোঃ

 

১। রমযান মাসে সকল শয়তান বন্দী থাকে না, শুধুমাত্র মারাদাহ/মারিদ শয়তান বন্দী থাকে। অন্য শয়তানদের পক্ষে রমযান মাসেও এভাবে আবির্ভূত হওয়া সম্ভব।

২। বদরের যুদ্ধের ঘটনায় দেখা যায় শয়তান মুশরিকদের মাঝে ছিলো। মুসলিমদের মাঝে না। ঈমানদার মুসলিম, যারা যথাযথভাবে সিয়াম পালন করে, তাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখা হয়। মুশরিকরা ঈমানদার না, তাদের সিয়াম পালনের ব্যাপার নেই। তাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখা হয় না।  

 

অতএব রমযান মাসে শয়তানের বন্দী থাকার হাদিসের সাথে এই মাসে মানুষের খারাপ কাজ করা বা বদরের ময়দানে শয়তানের উপস্থিত থাকার ঘটনা মোটেও সাংঘর্ষিক বা পরস্পরবিরোধী কিছু না।

 

এ প্রসঙ্গে এই আলোচনাটিও দেখা যেতে পারেঃ

 

"রমাদানে সকল শয়তান বন্দি থাকে, এর ব্যাখ্যা কী?" | শায়খ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
https://youtu.be/nGiRHEFdMT0

 

 

 

তথ্যসূত্রঃ


[1] সুনান নাসাঈ, হাদিস নং : ২১০৪ (সহীহ)

http://ihadis.com/books/nasai/hadis/2104

[2]  নাসায়ী ২১০৬, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৮৬৭, আহমাদ ৭১৪৮, সহীহ আত্ তারগীব ৯৯৯, সহীহ আল জামি ৫৫, শুআবূল ঈমান ৩৩২৮। মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং : ১৯৬২ (সহীহ)

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=56522

[3]  সুনান তিরমিযি, হাদিস নং : ৬৭৯ (সহীহ)

https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=17868

[4] সুনান নাসাঈ, হাদিস নং : ২১০৮ (সহীহ)

http://ihadis.com/books/nasai/hadis/2108

[5] আল মুনীর আরবী-বাংলা অভিধান, পৃষ্ঠা ৯৩৩

https://xeroxtree.com/pdf/al_munir_arbi_bangla_ovidhan.pdf

আরো দেখুনঃ

https://www.almaany.com/en/dict/ar-en/مَرِيدٍ/

[8] মাজমু’উল ফাতাওয়া ২৫/২৪৬

https://shamela.ws/book/7289/12694

[9] আল কুরআন, জাছিয়াহ ৪৫ : ২৩

[10] আল কুরআন, ইউসুফ ১২ : ৫৩

[11] জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৫৯১ (সহীহ)

http://www.ihadis.com/books/tirmidi/hadis/3591

[12]  "রমজান মাসে শয়তানদেরকে শেকল বন্দি করার পরও কিভাবে তারা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়" - islamqabd

https://islamqabd.com/রমজান-মাসে-শয়তানদেরকে-শে/

[13] আল কুরআন, আনফাল ৮ : ৪৮

[14] তাফসির যাকারিয়া, সুরা আনফালের ৪৮ নং আয়াতের তাফসির

https://www.hadithbd.com/quran/link/?id=1208