Pray for the world economy

ছেলেকে হত্যা করলে বাবার শাস্তির বিধান কী?

 

কিছু ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত এবং অজ্ঞ লোকজন বলে, ইসলাম নাকি পুত্র হত্যার স্বাধীনতা দেয়!

 

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে,

“ছেলেকে হত্যা অপরাধে বাবাকে হত্যা করা যাবে না” – এর মানে এই নয় যে বাবা কোনো শাস্তিই পাবে না! 

 

ছেলেকে হত্যা করলে বাবার কী শাস্তি হতে পারে, এ সম্পর্কে ইসলামী আইনশাস্ত্রের বিভিন্ন অভিমত নিম্নে আলোচনা করা হল।

 

পুত্র হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নয়, বরং দিয়াত (১ম মত)

 

এ প্রসঙ্গে আমরা হানাফী ফিক্বহের ওয়েবসাইট থেকে তাদের ফাতওয়ার সাহায্য নিচ্ছি।

 

[মূল ফতোয়া  [1] অবলম্বনে]

পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

 

আর যে ইচ্ছাকৃত কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা‘নত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আযাব প্রস্তুত করে রাখবেন।[2]  

 

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে বান্দাদের মধ্যে সবার আগে খুনের ফায়সালা করা হবে।” [3]  

 

আবূল হাকাম আল-বাজালী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ “আমি আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরা (রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আসমান-জমিনের মধ্যে বসবাসকারী সকলে একত্রে মিলিত হয়েও যদি একজন মু’মিনকে মেরে ফেলার কাজে শরীক থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।[4]  

 

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহর নিকট পৃথিবী ধ্বংস হওয়াটা অধিকতর সহজ ব্যাপার একজন মুসলমান খুন হওয়ার পরিবর্তে।”  [5]  

 

উপরের হাদিসগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, যদি কোন পিতা ইচ্ছাকৃতভাবে তার পুত্রকে হত্যা করেন, তবে পিতার যে গুনাহ হবে তা অত্যন্ত গুরুতর হবে এবং পরকালে এর পরিণাম হবে কঠোর।

 

একটি ইসলামী রাষ্ট্রে একজন পিতাকে তার পুত্রকে হত্যা করার জন্য হত্যা করা হবে না (কিসাস প্রয়োগ হবে না)।

 

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “মাসজিদের ভিতর হদ্দ কার্যকর করা যাবে না এবং ছেলেকে খুনের দায়ে বাবাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা যাবে না।[6]

 

উপরন্তু, তিনি তার ছেলেকে হত্যা করার জন্য দিয়াত (রক্তপণ) দিতে বাধ্য হবেন। [7]

 

 আমর ইবনে শু‘আইব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, মুদলিজ গোত্রীয় আবূ কাতাদা নামক এক ব্যক্তি নিজ পুত্রকে হত্যা করে। উমার (রাঃ) তার থেকে একশত উট আদায় করেন (দিয়াত হিসেবে)। [8]

 

এছাড়াও পিতা তার পুত্রদের উত্তরাধিকার থেকে উত্তরাধিকারী হতে পারবেন না, যেটা পাওয়ার কথা ছিলো সেটা বাতিল।

 

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “হত্যাকারী কোন প্রকার উত্তরাধিকারী হবে না”। [9]

 

একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন।

মূল ফাতওয়া প্রদানেঃ মুফতি মোহাম্মদ তোসির মিয়াহ,

দারুল ইফতা, বার্মিংহাম।

 

পুত্র হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড (২য় মত)

 

ইবনে আল-মুলকিন (রহঃ) বলেছেন,

 

আব্দুল হক তার আহকামে বলেছেন, [পুত্র হত্যার দায়ে পিতাকে হত্যা করা যাবে না] এই হাদিসগুলো সবই যঈফ। একটাও সহীহ নয়। ইবনে আল-কাত্তান যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন আমরাও সেভাবে ব্যাখ্যা করেছি। [10]

 

ইবনে আব্দুল হাদী (রহঃ) উক্ত হাদিসগুলোর দুর্বলতা/যঈফ হওয়ার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। [11]

 

এ কারণেই একদল আলেম এই মত দিয়েছেন যে, পুত্রকে হত্যা করলে পিতারও শাস্তি হদ্দ (মৃত্যুদণ্ডই হবে)। এটা ইবনে নাফি’, ইবনে আল-হাকাম ও ইবনে আল-মুনধিরের মত। [12] ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, পিতা যদি পুত্রকে তরবারি দিয়ে হত্যা করে, তাহলে তাকেও সেইরূপ সাজাই দিতে হবে।

 

শায়েখ ইবনে উসাইমীন (রহঃ) বলেছেন [13] ,

পুত্র হত্যায় পিতার হদ্দ প্রয়োগ হয়না মর্মে সকল হাদিস যঈফ। তাই এখানেও কিসাস প্রযোজ্য হবে। পুত্রকে হত্যা করলে পিতার শাস্তিও মৃত্যুদণ্ডই হবে।

 

শেষ কথা বলতে, পুত্রকে হত্যার শাস্তি হিসেবে পিতার হদ্দ না হয়ে দিয়াত প্রযোজ্য হবে – এটা জুমহুর ওলামাদের বক্তব্যমাত্র। [14]  

 

 

তথ্যসূত্রঃ


[2] কুরআন ৪:৯৩

[3] ইবনু মাজাহ ২৬১৫, ইবনু মাজাহ ২৬১৭, সহীহুল বুখারী ৬৫৩৩, ৬৮৬৪, মুসলিম ১৬৭৮, তিরমিযী ১৩৯৬, ১৩৯৭, নাসায়ী ২৯৯১, ২৯৯২, ২৯৯৩, ২৯৯৪, ২৯৯৬, আহমাদ ৩৬৬৫, ৪২০১, সহীহাহ ১৭৪৮

[4] সহীহ্, রাওযুন নাযীর- (৯২৫), তালীকুর রাগীব- (৩/২০২), জামে আত-তিরমিজি (১৩৯৮)

[5] সহীহ্, গায়াতুল মারাম- (৪৩৯), জামে আত-তিরমিজি (১৩৯৫)

[6] তাহক্বীকে আলবানীঃ হাসান, সুনানে ইবনু মাজাহ- (২৫৯৯, ২৬৬১), জামে আত-তিরমিজি (১৪০১)

[7] শরহ সামিরি (৩/২৯৬)

[8] সুনানে ইবনু মাজাহ (২৬৪৬), আহমাদ ৩৪৯, মুয়াত্তা মালেক ১৬২০, ইরওয়া ১৬৭০, ১৬৭১

[9] জামে আত-তিরমিজি (২১০৯), সুনানে ইবনু মাজাহ (২৭০৫)

[10] আল-বদর আল-মুনির ফি তাখরিজ আল-হাদিস আল-রাফিঈ আল-কবির ৮/৩৭৪

[11] তানক্বিহ আল-তাহক্বীকী ৪/৪৭১

[12] আল-মুগনী ৭/২৭৭

[13] এ সম্পর্কে দেখুন, আশ-শারহুল মুমতি ১৪/৪৩