আচ্ছা পিঁপড়া কি কথা বলতে পারে?
যদি বলি পারে। কুরআন যেহেতু বলছে পিঁপড়া কথা বলতে পারে, তাই এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ থাকেনা। "পিঁপড়া"- এর ব্যাপারে একটা পূর্নাংগ সূরাই আছে কুরআনুল কারীমে। ২৭তম সূরাটির নাম আন-নামল বা পিপীলিকা। সর্বশক্তিমান আল্লাহ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী দিয়ে উদাহরণ দিতে কুণ্ঠিতবোধ করেন না। আমরা মানুষেরাই জাতিগতভাবে পিছিয়ে পড়েছি, অবাধ্য হয়েছি শিকড়হীন হয়ে পড়েছি। মাছি, মৌমাছি, পিঁপড়া, গরু এই সব তুচ্ছাতিতুচ্ছ প্রাণীর উদাহরণ দিয়ে আয়াত নাযিল করে সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক মানুষকে হিদায়েতের দিকে ডাকেন রব্বে কারীম। সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী।
যা বলছিলাম, পিঁপড়া কথা বলতে পারে। ঘটনাটা নাবী সুলাইমান (আ:)-এর শাসনামলের। সুলাইমান (আ:) - এর মু'জিযা ছিল এই যে, পশু-পাখি ও জ্বীন তার অধীনস্থ ছিল, তার দাসত্ব করত। সুলাইমান (আ:) তাদের ভাষাও বুঝতে পারতেন। কুরআন বলছে,
"সুলাইমানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমেবত করা হল।জ্বিন, মানুষ ও পক্ষিকূলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যুহে বিভক্ত করা হল। যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌছল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের ঘরে প্রবেশ কর।অন্যথায়,সোলায়মান ও তাঁর বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।“
[সূরা আন নামল, আয়াত, ১৭-১৮]
ছবিঃ ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ-এ ধারণকৃত পিপীলিকার মুখের ছবি। (সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আ'যীম)
মনে হতে পারে গাল-গল্প বা ঠাকুমার ঝুলি অথবা পৌরাণিক কথা। কিন্তু কুরআন কোন গাল-গপ্পের ঝুলি নয়। এ সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নাই। পিপীলিকা অবশ্যই কথা বলতে পারে।
সম্প্রতি এক গবেষণার মাধ্যমে পিপীলিকার জীবনযাপন ও পদ্ধতি সম্পর্কে এমন সব প্রকৃত ও বাস্তবসম্মত তথ্য উদঘাটিত হয়েছে,যা আগে মানুষ অবগত ছিল না। গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের জীবন সাথে যে সকল প্রাণী ও কীট-পতঙ্গের অধিকতর সাদৃশ্য আছে,সেটা হল, পিঁপড়া। [Bert Hölldobler and Edward O. Wilson, The Ants (Cambridge: Harvard University Press: 1990), 227]
পিঁপড়া সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য বের হয়েছে যা দিয়ে মানুষের সাথে তার সাদৃশ্যের সত্যতা যাচাই করা যায়:
১) পিঁপড়া মানুষের মত মৃতদেহ দাফন করে। (সুবাহানাল্লাহ)
২) তাদের মধ্যে উন্নতমানের শ্রম বিভক্তি আছে। তাদের মধ্যে রয়েছে পরিচালক, রয়েছে তত্বাবধায়ক আর শ্রমিকশ্রেণী ইত্যাদি।
৩) তারা গল্প করার জন্য কোন কোন সময় এক সাথে আড্ডায় বসে।
৪) নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তাদের রয়েছে অগ্রিম যোগাযোগ পদ্ধতি। (কন্টাক্ট করে)
৫) দ্রব্য বিনিময়ের জন্য তাদের মধ্যে বাজার বসে।
৬) তারা শীত মৌসুমে দীর্ঘ সময়ের জন্য খাদ্য দ্রব্য গুদামজাত করে। খাদ্য শস্যের মুকুল বের হলে,এবং মুকুলিত অবস্থায় রেখে দিলে যদি শষ্যটি পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে,তখনই তারা মুকুলটির গোড়া কেটে দেয়। তাদের গুদামজাতকৃত শস্যদানা যদি বৃষ্টির কারণে ভিজে যায়,তখন তারা এটাকে রোদে নিয়ে শুকায় এবং শুকানোর পর পুনরায় ভেতরে নিয়ে আসে। মনে হয় তারা এটা জানে যে, আর্দ্যতার কারণে শষ্যদানায় মুকুল বের হতে পারে। ফলে শষ্য দানাটি পঁচে যেতে পারে।
[Ibid., 244]
সুবহানাল্লাহ! ছোট্ট একটা প্রাণী অথচ কি শৃংখলাবদ্ধ আর বুদ্ধিবৃত্তিক তার লাইফ-স্টাইল। একদম মানুষের কাছাকাছি তার কর্মকান্ড, কাজ পরিচালনার পদ্ধতি। সৃষ্টিকূলের এই বৈচিত্রতার কারিগর কে? কে করেছেন এই সুনিপুণ কায়দায় এসব কিছুর সৃষ্টি। তিনি আর কেউ নন। তিনি আমাদের রব। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা।
"যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর [নিখুঁত] করেছেন"
[সূরা আস-সাজদা, আয়াত:৭]