➫ মূলঃ শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ
➫ অনুবাদঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
অনুবাদকের ভূমিকাঃ
পৃথিবীর অন্য সকল ভূখণ্ডের মতো মক্কা-মদীনাতেও মাঝে মাঝে বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগের বিস্তার দেখা যায়। এমন একটি হাদিস রয়েছে যার অনুবাদ দেখলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এখানে বলা হচ্ছে মক্কা-মদীনায় কোনো মহামারীরই বিস্তার হবে না। আসলেই কি ব্যাপারটি তাই? বিশেষ করে করোনা ভাইরাসজনিত মহামারীর সময়টিতে এ ব্যাপারে অনেকের মনেই প্রশ্নের উদয় হয়। কোনো কোনো ইসলামবিদ্বেষীকেও দেখা যায় হাদিসের সঠিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে।
ফতোয়া নং ১৩১৮৮৭: মক্কা ও মদীনা কি সোয়াইন ফ্লু জাতীয় মহামারী ও প্লেগ থেকে সুরক্ষিত?
প্রশ্নঃ
মক্কা-মদীনায় কি সোয়াইন ফ্লু কিংবা অন্যান্য মহামারী ও প্লেগ সংক্রমণ হওয়া সম্ভব? নাকি মক্কা-মদীনা মহামারী থেকে সুরক্ষিত?
উত্তরঃ
আলহামদুলিল্লাহ।
মক্কা ও মদীনা মহামারী থেকে পূর্ণরূপে সুরক্ষিত নয়। উমার(রা.) এর খিলাফতকালে একবার মদীনায় মহামারী (ওয়াবা - وباء) দেখা দিয়েছিলো। ইমাম বুখারী(র.) বর্ণনা করেছেন (২৬৪৩),
عَنْ أَبِي الْأَسْوَدِ قَالَ : (أَتَيْتُ الْمَدِينَةَ وَقَدْ وَقَعَ بِهَا مَرَضٌ ، وَهُمْ يَمُوتُونَ مَوْتًا ذَرِيعًا ، فَجَلَسْتُ إِلَى عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ...
অর্থঃ আবুল আসওয়াদ (র.) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, “একবার আমি মদীনায় আসলাম। সেখানে তখন মহামারী দেখা দিয়েছিল। এতে ব্যাপক হারে লোক মারা যাচ্ছিল। আমি ‘উমার (রা.)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম।...”
ذَرِيعً দ্বারা “অতি দ্রুত” বোঝানো হচ্ছে।
তবে নবী (ﷺ) থেকে এটি প্রমাণিত যে মদীনায় কখনো প্লেগ (الطاعون- ত্বউন) প্রবেশ করবে না। হাদিসের কোনো কোনো ভাষ্য অনুযায়ী এটি মক্কাতেও প্রবেশ করবে না।
ইমাম বুখারী(র.) [১৮৮০] এবং ইমাম মুসলিম(র.) [১৩৭৯] বর্ণনা করেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : (عَلَى أَنْقَابِ الْمَدِينَةِ مَلَائِكَةٌ لَا يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ وَلَا الدَّجَّالُ)
অর্থঃ আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসুল(ﷺ) বলেছেনঃ মদীনার দ্বারে ফেরেশতা মোতায়েন রয়েছে। ওতে কখনও প্লেগ দেখা দেবে না আর দাজ্জালও প্রবেশ করবে না।
হাফিজ [ইবন হাজার(র.) ] তাঁর ‘ফাতহ’ এ বলেছেন,
আবু হুরায়রা(রা.) এর হাদিসের কিছু বর্ণনায় বলা হয়েছে, “মদীনা ও মক্কা যাবার রাস্তাগুলো ফেরেশতা দ্বারা পূর্ণ। প্লেগ আর দাজ্জাল কোনোটিই এই দুই শহরে প্রবেশ করবে না।” উমার ইবন শাব্বাহ ‘কিতাব মাক্কাহ’তে বর্ণনা করেছেনঃ শুরাইহ ফুলাইহ এর থেকে, তিনি আলা ইবন আব্দুর রহমান থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তাঁর পিতা আবু হুরায়রা(রা.) থেকে, তিনি নবী (ﷺ) থেকে - এই সনদে। এই সনদের সকল ব্যক্তি সহীহ। [1]
বক্তব্য সমাপ্ত।
ইমাম নববী(র.) আবুল হাসান আল মাদাঈনী(র.) এর সূত্রে বলেছেন, মক্কা ও মদীনায় কখনো প্লেগ দেখা দেয়নি।
[আল আযকার, পৃষ্ঠা ১৩৯]
তবে কোনো কোনো আলেমের মতে মক্কায় ৭৪৯ সালে প্লেগ দেখা গিয়েছিলো।
এর জবাবে হাফিজ ইবন হাজার(র.) বলেন, মূলত এটি ‘ত্বউন’ (প্লেগ) ছিলো না। বরং তা অন্য ‘ওয়াবা’ বা কলেরাজাতীয় মহামারী ছিলো। যিনি এটাকে লিপিবদ্ধ করেছে, তিনি ধারণা করেছেন এটা ‘ত্বউন’ (অর্থাৎ ভুল করেছেন)।
উপসংহারঃ
মক্কা এবং মদীনা প্লেগ (ফোঁড়া জাতীয় ‘ত্বউন’ রোগ) থেকে সুরক্ষিত কিন্তু তা অন্যান্য রোগ-ব্যধি ও মহামারী থেকে সুরক্ষিত নয়।
আমরা আল্লাহর নিকট সকল মুসলিমের জন্য সুস্থতা ও নিরাপত্তা কামনা করি।
এবং আল্লাহই সর্বোত্তম জানেন।
মূল ফতোয়ার লিঙ্কঃ
আরবিঃ https://islamqa.info/ar/131887/
ইংরেজিঃ https://islamqa.info/en/131887/
এ ব্যাপারে আরো দেখতে পারেনঃ
"মক্কা-মদীনা মহামারী থেকে নিরাপদ হলে করোনা ভাইরাস বা অন্যান্য সংক্রামক ব্যধির মহামারী কিভাবে সেখানে প্রবেশ করে?"
"ইসলাম কি ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব অস্বীকার করে?"
অনুবাদকের টিকা
[1]. তবে ইমাম ইবন কাসির(র.) এবং আরো অনেক আলেমের এর মতে মক্কা প্লেগ থেকে সুরক্ষিত থাকার কথা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। শুধুমাত্র মদীনা প্লেগ থেকে সুরক্ষিত থাকবার বিবরণ বিশুদ্ধ। ইবন কাসির(র.) বলেছেন, “এটি ‘গারিব জিদ্দান’; হাদিসে মক্কা এবং প্লেগের উল্লেখ থাকার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত নয়।” [আন নিয়াহা ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬১]