বর্তমান যুগের উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রাচীন অন্ধ গোত্রবাদেরই এক সম্প্রসারিত রূপ। জাহেলি বংশগৌরবের বিরুদ্ধে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর বক্তব্যের ব্যাপারে ইসলামবিরোধীরা অনেক সময়ে প্রশ্ন তোলে।
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا رَأَيْتُمُ الرَّجُلَ يَتَعَزَّى بِعَزَاءِ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَعِضُّوهُ بِهَنِ أبِيهِ وَلَا تُكَنُّوا
অর্থঃ উবাই ইবনু কা‘ব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ(ﷺ) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নিজেকে জাহিলিয়্যাতের গৌরবে গৌরবান্বিত করে, তার দ্বারা তার পিতৃ-পুরুষের লজ্জাস্থানকে কর্তন করাও। আর এ কথাগুলো তাকে ইঙ্গিতে নয়; বরং পরিষ্কার ভাষায় বলে দাও। [1]
একটি ইংরেজি অনুবাদে হাদিসটি এভাবে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
Ubayy b. Ka‘b told that he heard God’s messenger say, “If anyone proudly asserts his descent in the manner of the pre-Islamic people, tell him to bite his father’s penis, and do not use a euphemism.” [2]
অনলাইনে খ্রিষ্টান মিশনারীদেরকে দেখা যায় মূলত এই অনুবাদটি ব্যবহার করে ইসলামের দুর্নামের চেষ্টা করতে। ইসলামের শত্রুরা এই হাদিস দেখিয়ে নবী করিম(ﷺ)কে মন্দভাষী এবং লজ্জাহীন বলে অপপ্রচার চালিয়ে থাকে (নাউযুবিল্লাহ)। আমরা এখন তাদের এহেন অভিযোগের সত্যতা কতোটুকু তা দেখবো।
■ নবী(ﷺ) এর লজ্জাশীলতাঃ
নবী(ﷺ)কে যাঁরা স্বচক্ষে দেখেছেন, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা তাঁকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাঁরা সকলেই তাঁর অনুপম চরিত্র ও লজ্জাশীলতার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয় বর্ণনার সময়েও নবী(ﷺ) এর সলজ্জ আচরণ এবং মার্জিত শব্দপ্রয়োগের বহু উদাহরণ হাদিসের মাঝে দেখা যায়। লজ্জাহীন আচরণ তাঁর বৈশিষ্ট্য ছিলো না।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَشَدَّ حَيَاءً مِنَ الْعَذْرَاءِ فِي خِدْرِهَا، وَكَانَ إِذَا كَرِهَ شَيْئًا عَرَفْنَاهُ فِي وَجْهِهِ
অর্থঃ আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ছিলেন পর্দানশীন কুমারী মেয়েদের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল। কোন কিছু তাঁর অপছন্দ হলে আমরা তাঁর চেহারা দর্শনেই তা বুঝতে পারতাম।” [3]
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ امْرَأَةً، مِنَ الأَنْصَارِ قَالَتْ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم كَيْفَ أَغْتَسِلُ مِنَ الْمَحِيضِ قَالَ " خُذِي فِرْصَةً مُمَسَّكَةً، فَتَوَضَّئِي ثَلاَثًا ". ثُمَّ إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم اسْتَحْيَا فَأَعْرَضَ بِوَجْهِهِ أَوْ قَالَ " تَوَضَّئِي بِهَا " فَأَخَذْتُهَا فَجَذَبْتُهَا فَأَخْبَرْتُهَا بِمَا يُرِيدُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم
অর্থঃ আয়িশা(রা.) থেকে বর্ণিতঃ একজন আনসারী মহিলা আল্লাহ্র রাসূল(ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কীভাবে হায়েযের গোসল করবো? আল্লাহ্র রাসূল(ﷺ) বললেনঃ এক টুকরো কস্তুরীযুক্ত নেকড়া লও এবং তিনবার ধুয়ে নাও। নবী(ﷺ) অতঃপর লজ্জাবশত অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন এবং বললেনঃ তা দিয়ে তুমি পবিত্র হও। ‘আয়িশা (রা.) বলেনঃ আমি তাকে নিজের দিকে টেনে নিলাম। তারপর তাকে নবী(ﷺ)- এর কথার মর্ম বুঝিয়ে দিলাম। [4]
শুধু তাই না, নবী করিম(ﷺ) এর শিক্ষা ছিলো লজ্জাশীলতা ও সহনশীলতার শিক্ষা। ইসলামে লজ্জাশীলতাকে ঈমানের অঙ্গ গণ্য করা হয়।
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " الْحَيَاءُ مِنَ الإِيمَانِ وَالإِيمَانُ فِي الْجَنَّةِ وَالْبَذَاءُ مِنَ الْجَفَاءِ وَالْجَفَاءُ فِي النَّارِ "
অর্থঃ আবূ বাকরা(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “লজ্জাশীলতা ঈমানের অংগ। আর ঈমানের অবস্থান হলো জান্নাতে। আর অশ্লীলতা হলো অত্যাচার (জুলুম), আর অত্যাচার থাকবে জাহান্নামে।” [5]
أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ لِلأَشَجِّ الْعَصَرِيِّ " إِنَّ فِيكَ خَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللَّهُ الْحِلْمَ وَالْحَيَاءَ "
অর্থঃ নবী(ﷺ) আশাজ্জ আল-আসারীকে বলেনঃ “নিশ্চয় তোমার মধ্যে এমন দু’টি উত্তম স্বভাব বিদ্যমান, যা আল্লাহ পছন্দ করেনঃ সহনশীলতা ও লজ্জাশীলতা।” [6]
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " إِنَّ لِكُلِّ دِينٍ خُلُقًا وَخُلُقُ الإِسْلاَمِ الْحَيَاءُ "
অর্থঃ আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ "প্রতিটি ধর্মেরই একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। আর ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো ‘লজ্জাশীলতা।" [7]
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " مَا كَانَ الْفُحْشُ فِي شَىْءٍ قَطُّ إِلاَّ شَانَهُ وَلاَ كَانَ الْحَيَاءُ فِي شَىْءٍ قَطُّ إِلاَّ زَانَهُ "
অর্থঃ আনাস(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেনঃ “নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা কোন বস্ত্তর কেবল কদর্যতাই বৃদ্ধি করে এবং লজ্জা-শরম কোন জিনিসের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে।” [8]
عَنْ قُرَّةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ الْحَيَاءَ وَالْعَفَافَ وَالْعِيَّ عِيُّ اللِّسَانِ لَاعِيَّ الْقَلْبِ وَالْعَمَلَ مِنَ الإِيمَانِ وَإِنَّهُنَّ يَزِدْنَ فِيِ الآخِرَةِ وَيُنْقِصْنَ مِنَ الدُّنْيَا وَلَمَا يَزِدْنَ فِي الآخِرَةِ أَكْثَرُ مِمَّا يُنْقِصْنَ فِي الدُّنْيَا فَإِنَّ الشُّحَّ وَالْبَذَاءَ مِنَ النِّفَاقِ وَإِنَّهُنَّ يَزِدْنَ فِي الدُّنْيَا وَيُنْقِصْنَ مِنَ الآخِرَةِ، وَلَمَا يُنْقِصْنَ فِي الآخِرَةِ أَكْثَرُ مِمَّا يَزِدْنَ فِي الدُّنْيَا
অর্থঃ ক্বুররাহ(রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, “নিশ্চয় লজ্জাশীলতা, যৌন-পবিত্রতা, মুখচোরামি ও দ্বীনী জ্ঞান ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। এগুলি পরকালের সম্বল বৃদ্ধি করবে এবং ইহকালের সম্বল হ্রাস করবে। পক্ষান্তরে কার্পণ্য, অশ্লীলতা ও নোংরা ভাষা মুনাফিকীর অন্তর্ভুক্ত। এগুলি পরকালের সম্বল হ্রাস করে এবং ইহকালের সম্বল বৃদ্ধি করে। আর পরকালের যা হ্রাস পায়, তা ইহকালের যা বৃদ্ধি করে তা অপেক্ষা অধিক।” [9]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما مَرَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى رَجُلٍ وَهْوَ يُعَاتَبُ فِي الْحَيَاءِ يَقُولُ إِنَّكَ لَتَسْتَحْيِي. حَتَّى كَأَنَّهُ يَقُولُ قَدْ أَضَرَّ بِكَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " دَعْهُ فَإِنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الإِيمَانِ "
অর্থঃ আবদুল্লাহ ইবনু উমর(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একবার নবী(ﷺ) একটি লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় লোকটি (তার ভাইকে) লজ্জা সম্পর্কে তিরস্কার করছিল এবং বলছিল যে, তুমি বেশি লজ্জা করছ, এমনকি সে যেন এ কথাও বলছিল যে, এ তোমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ “তুমি তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। কারণ নিশ্চয়ই লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ।” [10]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرٍو أَبِي مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " إِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ الأُولَى إِذَا لَمْ تَسْتَحِي فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ "
অর্থঃ আবূ মাসউদ উকবা ইবনে আমর(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “মানুষ পূর্ববর্তী নবীগণের বাণী থেকে যা পেয়েছে তার মধ্যে আছে, ‘‘তোমার লজ্জা-শরম না থাকলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারো”। [11]
عَنْ يَعْلَى، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى رَجُلاً يَغْتَسِلُ بِالْبَرَازِ فَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ " إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَلِيمٌ حَيِيٌّ سِتِّيرٌ يُحِبُّ الْحَيَاءَ وَالسَّتْرَ فَإِذَا اغْتَسَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَتِرْ "
অর্থঃ ইয়ালা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্(ﷺ) দেখলেন, এক ব্যাক্তি খোলা জায়গায় (পর্দা ব্যতীত) গোসল করছে। তিনি মিম্বরে আরোহণ করলেন, আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা ও তাঁর গুণগান করলেন। তারপর বললেনঃ “আল্লাহ্ তা’আলা ধৈর্যশীল, লজ্জাশীল, (মানুষের পাপ) আঁড়ালকারী। তিনি লজ্জাশীলতাকে এবং পর্দা করাকে পছন্দ করেন। অতএব তোমাদের কেউ যখন গোসল করবে, সে যেন পর্দা করে।” [12]
وَعَن عِمرَانَ بنِ حُصَينٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: « الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِخَيْرٍ ». متفقٌ عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسلِمٍ: « اَلحَيَاءُ خَيْرٌ كُلُّهُ ». أَوْ قَالَ: الْحَيَاءُ كُلُّهُ خَيْرٌ »
অর্থঃ ইমরান ইবনে হুসাইন(রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, ‘‘লজ্জা মঙ্গলই বয়ে আনে।’’ [13]
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, “লজ্জা মঙ্গলই সবটুকু” অথবা বলেছেন, ‘‘লজ্জার সবটুকু মঙ্গলই মঙ্গল”।
■ নবী(ﷺ) মন্দভাষী ছিলেন নাঃ
নবী(ﷺ) এর নিজ সময়কার এবং নিজ ভাষাভাষী মানুষ বহুবার এই সাক্ষ্য দিয়ে গেছে যে তিনি মোটেও মন্দ ও অশ্লীলভাষী ছিলেন না। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাঁর শিষ্যদেরকেও তিনি এই উত্তম শিক্ষা প্রদান করতেন। অশ্লীলতা ও জুলুম পরিহারের আদেশ দিতেন।
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاحِشًا وَلاَ لَعَّانًا وَلاَ سَبَّابًا، كَانَ يَقُولُ عِنْدَ الْمَعْتَبَةِ " مَا لَهُ، تَرِبَ جَبِينُهُ "
অর্থঃ আনাস ইবনু মালিক(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “রাসুলুল্লাহ(ﷺ) অশালীন অভিশাপদাতা ও গালিদাতা ছিলেন না। তিনি কাউকে তিরস্কার করার সময় শুধু বলতেনঃ তার কি হল? তার কপাল ধূলাময় হোক।” [14]
فَذَكَرَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لَمْ يَكُنْ فَاحِشًا وَلاَ مُتَفَحِّشًا . وَقَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلاَقًا "
অর্থঃ মুআবিয়াহ(রা.) রাসুলুল্লাহ(ﷺ) সম্বন্ধে বর্ণনা দিয়ে বললেন, “তিনি অশ্লীল ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা বলতেন না।” মু'আবিয়াহ্(রা.) আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “তোমাদের মাঝে উত্তম সে লোক যার চরিত্র উত্তম।” [15]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاحِشًا وَلَا مُتَفَحِّشًا وَلَا سَخَّابًا فِي الْأَسْوَاقِ وَلَا يَجْزِي بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَصْفَحُ.
অর্থঃ ‘আয়িশাহ্(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ(ﷺ) অশ্লীলভাষী ছিলেন না এবং অশালীন কথা বলার চেষ্টাও করতেন না। তিনি(ﷺ) হাট-বাজারে শোর-গোলকারী ছিলেন না। আর মন্দের প্রতিশোধ তিনি মন্দের দ্বারা নিতেন না, বরং তা ক্ষমা করে দিতেন এবং উপেক্ষা করে চলতেন।” [16]
عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ، وَلاَ اللِّعَانِ، وَلاَ الْفَاحِشِ وَلاَ الْبَذِي
অর্থঃ আবদুল্লাহ(রা.) থেকে বর্ণিত। নবী(ﷺ) বলেনঃ “মুমিন ব্যক্তি খোঁটাদাতা, অভিশাপকারী, অশ্লীলভাষী ও বাচাল হতে পারে না।” [17]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: إِيَّاكُمْ وَالظُّلْمَ، فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَإِيَّاكُمْ وَالْفُحْشَ، فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يُحِبُّ الْفَاحِشَ الْمُتَفَحِّشَ، وَإِيَّاكُمْ وَالشُّحَّ، فَإِنَّهُ دَعَا مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَقَطَعُوا أَرْحَامَهُمْ، وَدَعَاهُمْ فَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ.
অর্থঃ আবু হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিত। নবী(ﷺ) বলেনঃ “তোমরা অবশ্যই যুলুম করা থেকে বিরত থাকবে। কেননা যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার রূপ ধারণ করবে। তোমরা অবশ্যই অশ্লীলতা বর্জন করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা অশ্লীলভাষী ও অশ্লীলতার প্রসারকারীকে পছন্দ করেন না। তোমরা অবশ্যই কৃপণতা পরিহার করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে এবং হারামসমূহকে হালালরূপে গ্রহণ করতে উদ্যত করেছে।” [18]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَجُلًا اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: «ائْذَنُوا لَهُ فَبِئْسَ أَخُو الْعَشِيرَةِ» فَلَمَّا جَلَسَ تَطَلَّقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطَ إِلَيْهِ. فَلَمَّا انْطَلَقَ الرَّجُلُ قَالَتْ عَائِشَةُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْتَ لَهُ: كَذَا وَكَذَا ثُمَّ تَطَلَّقْتَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطْتَ إِلَيْهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَتى عهدتني فحاشا؟ ؟ إِن شَرّ النَّاس مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ» وَفِي رِوَايَةٍ: «اتِّقَاءَ فُحْشِهِ»
অর্থঃ ‘আয়িশাহ্ সিদ্দিকা(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী(ﷺ)-এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করল। নবী(ﷺ) [সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-কে] বললেনঃ তাকে আসার অনুমতি দাও। সে নিজের গোত্রের খারাপ ব্যক্তি। যখন লোকটি তাঁর দরবারে এসে বসল, তখন তিনি(ﷺ) প্রশস্ত ললাটে তার দিকে তাকালেন এবং মৃদু-হাস্যে তার সাথে কথা বললেন। যখন লোকটি চলে গেল, তখন ‘আয়িশাহ্ সিদ্দিকা(রা.) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি লোকটি সম্পর্কে এমন এমন বলেছেন, অতঃপর আপনিই তার সাথে প্রশস্ত ললাটে সাক্ষাৎ করলেন এবং মৃদু হেসে কথা বললেন। এটা শুনে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ তুমি কি আমাকে কখনো অশ্লীলভাষী পেয়েছ? কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে মানুষের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে সে-ই নিকৃষ্ট হবে, যাকে মানুষ তার অনিষ্টের ভয়ে ত্যাগ করে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, যাকে মানুষ তার অশ্লীলতার ভয়ে পরিত্যাগ করবে। [19]
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أُنَاسٌ مِنَ الْيَهُودِ فَقَالُوا السَّامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ . قَالَ " وَعَلَيْكُمْ " . قَالَتْ عَائِشَةُ قُلْتُ بَلْ عَلَيْكُمُ السَّامُ وَالذَّامُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَا عَائِشَةُ لاَ تَكُونِي فَاحِشَةً " . فَقَالَتْ مَا سَمِعْتَ مَا قَالُوا فَقَالَ " أَوَلَيْسَ قَدْ رَدَدْتُ عَلَيْهِمُ الَّذِي قَالُوا قُلْتُ وَعَلَيْكُمْ "
অর্থঃ আয়িশাহ্(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ)- এর নিকট কয়েকজন ইয়াহুদী আসলো। তারা বলল-السَّامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ হে আবূল কাসিম তোমার মৃত্যু হোক। তিনি বললেন,وَعَلَيْكُمْ তোমাদের উপরেও। আয়িশাহ(রা.) বলেন, আমি বললাম-بَلْ عَلَيْكُمُ السَّامُ وَالذَّامُ বরং তোমাদের মৃত্যু ও অপমান হোক। সে সময় রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-বললেন, হে আয়িশাহ! তুমি অশ্লীলভাষী হয়ো না। তিনি বললেন, তারা কি বলেছে, তা কি আপনি শুনেননি? তিনি বললেন, তারা যা বলেছিল, তা-ই কি আমি তাদের ফিরিয়ে দেইনি? আমি বলেছি-‘ওয়া আলাইকুম তোমাদের উপরেও। [20]
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: مَنْ أُعْطِيَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ فَقَدْ أُعْطِيَ حَظَّهُ مِنَ الْخَيْرِ، وَمَنْ حُرِمَ حَظَّهُ مِنَ الرِّفْقِ، فَقَدْ حُرِمَ حَظَّهُ مِنَ الْخَي
ْرِ، أَثْقَلُ شَيْءٍ فِي مِيزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُسْنُ الْخُلُقِ، وَإِنَّ اللَّهَ لَيُبْغِضُ الْفَاحِشَ الْبَذِيَّ
অর্থঃ আবু দারদা(রা.) থেকে বর্ণিত। নবী(ﷺ) বলেনঃ “যাকে নম্রতার মতো গুণ দান করা হয়েছে তাকে কল্যাণ দান করা হয়েছে। আর যাকে নম্রতার গুণ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে, সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিয়ামতের দিন মুমিন বান্দার নেকীর পাল্লায় সবচেয়ে ভারী বস্তু হবে উত্তম চরিত্র। নিশ্চয় আল্লাহ অশ্লীলভাষী ও বাচাল লোককে পছন্দ করেন না” [21]
وَعَنْ
عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنْسَابُكُمْ هَذِهِ لَيْسَتْ بِمَسَبَّةٍ عَلَى أَحَدٍ كُلُّكُمْ بَنُو آدَمَ طَفُّ الصَّاعِ بِالصَّاعِ لَمْ تملؤوه لَيْسَ لِأَحَدٍ عَلَى أَحَدٍ فَضْلٌ إِلَّا بِدِينٍ وَتَقْوًى كَفَى بِالرَّجُلِ أَنْ يَكُونَ بَذِيًّا فَاحِشًا بَخِيلًا»
অর্থঃ ‘উকবাহ্ ইবনু ‘আমির(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “তোমাদের বংশ পরিচয় এমন জিনিস নয় যে, তোমরা এর কারণে অন্যকে মন্দ বলবে। তোমরা সবাই এক আদমের সন্তান। পাল্লার সমান পাল্লা। কোন একদিক পূর্ণ করে নিতে পারো না। দীন ও আল্লাহভীতি ছাড়া তোমাদের কারো ওপর কারো মর্যাদা নেই। এক ব্যক্তি মন্দ ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে প্রগল্ভ, অশ্লীলভাষী ও কৃপণ।” [22]
■ অন্য কারো পিতা-মাতাকে গালাগাল করা বা অশ্লীল কথা বলা নবী(ﷺ) এর আদর্শ নয়ঃ
নবী করিম(ﷺ) অন্য কারো পিতা-মাতাকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন।
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِنَ الْكَبَائِرِ شَتْمُ الرَّجُلِ وَالِدَيْهِ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَهَلْ يَشْتُمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ: «نَعَمْ يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ ويسبُّ أمه فيسب أمه»
অর্থঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ নিজের মাতা-পিতাকে গালি দেয়া কাবীরাহ্ গুনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম। সহাবায়ি কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! মানুষ কি তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়? তিনি(ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ, সে কোন ব্যক্তির বাবা ও মাকে গালি দিল, সেই ব্যক্তিও তার বাবা ও মাকে গালি দিল। [23]
عَنِ الْمَعْرُورِ، قَالَ لَقِيتُ أَبَا ذَرٍّ بِالرَّبَذَةِ، وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ، وَعَلَى غُلاَمِهِ حُلَّةٌ، فَسَأَلْتُهُ عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ إِنِّي سَابَبْتُ رَجُلاً، فَعَيَّرْتُهُ بِأُمِّهِ، فَقَالَ لِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " يَا أَبَا ذَرٍّ أَعَيَّرْتَهُ بِأُمِّهِ إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيكَ جَاهِلِيَّةٌ، إِخْوَانُكُمْ خَوَلُكُمْ، جَعَلَهُمُ اللَّهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ، فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ، وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ فَأَعِينُوهُمْ
অর্থঃ মা’রূর (র.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর(রা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাঁদর) আর তাঁর চাকরের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর (সমতার) কারন জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ একবার আমি এক ব্যাক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন রাসূল(ﷺ) আমাকে বললেনঃ “‘আবূ যর! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যাক্তি, তোমার মধ্যে এখনো জাহিলী যুগের স্বভাব রয়েছে। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ তা’আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরে, তাকে তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য খুব কষ্টকর। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সাহায্য করবে।” [24]
■ নবী(ﷺ) এর বক্তব্যের মাঝে কোনো অশালীন বা অমার্জিত শব্দ নেইঃ
এবার আমরা আলোচ্য হাদিসের দিকে দৃষ্টিপাত করবো যেটি দেখিয়ে দাবি করা হয় নবী করিম(ﷺ) অশালীন কথা বলেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। পূর্ণ হাদিসটি এই প্রবন্ধের একদম সূচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসের মূল আরবির মধ্যে আছেঃ أَبِيهِ بِهَنِ فَأَعِضُّوهُ । এখানে আরবি هَن শব্দটির অর্থ আলোচনা করতে গিয়ে almaany অভিধানে বলা হয়েছেঃ
- شَيْء
- thing; something; stuff [25]
অর্থাৎ, এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ‘জিনিস’। এর শাব্দিক অর্থ লিঙ্গ বা লজ্জাস্থান নয়। যদিও এই ‘জিনিস’ কথাটির দ্বারা আরবি ভাষায় লজ্জাস্থানের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়; যে কারণে লিঙ্গ/লজ্জাস্থান ইত্যাদি শব্দ দ্বারা হাদিসের অনুবাদ করা হয়েছে (এই অনুবাদ সঠিক)। তবে শাব্দিকভাবে এর অর্থ লজ্জাস্থান/লিঙ্গ/পুরুষাঙ্গ নয়।
এই শব্দটির অর্থ আলোচনা করতে গিয়ে ইবনুল আসির(র.) [মৃত্যুঃ ৬০৬ হিজরি] বলেছেন,
كناية عن الشيء لا تَذْكُره باسْمِه
অর্থঃ “যেসব জিনিসের নাম সরাসরি উচ্চারণ করা যায় না, সেগুলোর বদলে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়।” [26]
আরবিতে ذَكَر শব্দটির দ্বারা পুরুষ, পুরুষাঙ্গ (লিঙ্গ) ইত্যাদিকে বোঝানো হয়। [27] [28]
___ ___ ___
অন্য হাদিসে যখন সরাসরি লিঙ্গ বা পুরুষাঙ্গের কথা আলোচনা করা হয়েছে তখন ذَكَر শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
عَنْ قَيْسِ بْنِ طَلْقِ بْنِ عَلِيٍّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ خَرَجْنَا وَفْدًا حَتَّى قَدِمْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبَايَعْنَاهُ وَصَلَّيْنَا مَعَهُ فَلَمَّا قَضَى الصَّلاَةَ جَاءَ رَجُلٌ كَأَنَّهُ بَدَوِيٌّ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا تَرَى فِي رَجُلٍ مَسَّ ذَكَرَهُ فِي الصَّلاَةِ قَالَ " وَهَلْ هُوَ إِلاَّ مُضْغَةٌ مِنْكَ أَوْ بَضْعَةٌ مِنْكَ "
অর্থঃ তালক ইবনু আলী(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আমাদের গোত্রের প্রতিনিধি হিসাবে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর নিকট এলাম, তারপর তাঁর নিকট বায়আত গ্রহণ করলাম এবং তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষ হলে এক ব্যাক্তি আসলো, মনে হল যেন সে একজন গ্রাম্য লোক। সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন ব্যাক্তি সালাতে পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে তার সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেনঃ “এটা তোমার শরীরের এক টুকরা গোশত বৈ আর কি? অথবা তিনি বললেনঃ তা তোমার শরীরের একটি অংশ।” [29]
যে হাদিসটির ব্যাপারে ইসলামবিরোধীরা অভিযোগ তোলে, সেখানে নবী করিম(ﷺ) সরাসরি লজ্জাস্থানের নাম উল্লেখ করেননি বরং ভিন্ন একটি শব্দচয়নের দ্বারা ভাব প্রকাশ করেছেন। তবে আমরা এটি দাবি করছি না যে নবী(ﷺ) সেখানে কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করেননি। নিঃসন্দেহে তিনি সেখানে ভৎর্সনা ও নিন্দা করে কথা বলেছেন। যদিও এমন কঠিন শব্দ দিয়ে ভৎর্সনা করাও তাঁর থেকে একটি ব্যতিক্রমী আচরণ। কিন্তু সেখানে একটি খারাপ বিষয়ের ব্যাপারে প্রচণ্ড নিন্দাসূচক কথা বলতে গিয়েও শব্দপ্রয়োগের ক্ষেত্রে নবী(ﷺ) ছিলেন মার্জিত এবং সতর্ক। যে নবী(ﷺ) থেকে সমগ্র নবুয়তী জীবনে শালীনতা ও মার্জিত আচরণের শিক্ষা ও বিপুল পরিমাণে উদাহরণ দেখা যায়, যিনি সদা-সর্বদা অনুসারীদেরকে মার্জিত ও শালীন আচরণের শিক্ষা দিয়েছেন – তাঁর থেকে একটি উদাহরণ উল্লেখ করে (যেখানেও তিনি সরাসরি কোনো অমার্জিত শব্দ ব্যবহার করেননি) তাঁকে মোটেও মন্দভাষী ব্যক্তি প্রমাণ করা যায় না।
এই ব্যাখ্যাগুলো ইসলামবিরোধী অমুসলিমদের জন্য কিংবা সংশয়ের আবর্তে পড়া মুসলিমদের জন্য দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ঈমানদার মুসলিমের নিকট ভালো-খারাপ, শ্লীল-অশ্লীল যে কোনো কিছু মানদণ্ড হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ। ইসলামবিরোধীরা কোনো কিছুকে অশ্লীল বললেই মুসলিমরা তাদের মানদণ্ডের সাথে একমত হয়ে যাবে বিষয়টা মোটেও এমন নয়। আল্লাহর রাসুল(ﷺ) এর পবিত্র জবান থেকে যা নিসৃত হয়েছে, প্রকৃত ঈমানদারের নিকট তা যথাযথ ও সঠিক।
■ নবী(ﷺ) যে প্রেক্ষাপটে জাহেলি গৌরবের বিরুদ্ধে এমন কঠিন বাক্য উচ্চারণ করেছেনঃ
‘মিশকাতুল মাসাবিহ’ গ্রন্থের যে অনুচ্ছেদ থেকে আলোচ্য হাদিসটি নেয়া হয়েছে, সেই অনুচ্ছেদের নাম “বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব”। নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে কী প্রসঙ্গের হাদিস একত্রিত করা হয়েছে। ঐ অনুচ্ছেদেই বেশ কিছু হাদিস রয়েছে যেগুলো নবী করিম(ﷺ) নানা জাহেলি কুপ্রথা উচ্ছেদ করে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। [30] পৌত্তলিক আরব সমাজের বিভিন্ন অনিষ্টকর রীতি-রেওয়াজকে ক্রমে বিলুপ্ত করে দিয়ে নবী(ﷺ) অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। এই হাদিসটিও এর অন্তর্ভুক্ত।
‘মিশকাতুল মাসাবিহ’ গ্রন্থে আলোচ্য অনুচ্ছেদের শুরুতেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উল্লেখ করা হয়েছে—
“ নিন্দনীয় গর্ব করা থেকে সাবধান করতে নবী(ﷺ) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ، وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ، وَفَاجِرٌ شَقِيٌّ، أَنْتُمْ بَنُو آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ، لَيَدَعَنَّ رِجَالٌ فَخْرَهُمْ بِأَقْوَامٍ، إِنَّمَا هُمْ فَحْمٌ مِنْ فَحْمِ جَهَنَّمَ، أَوْ لَيَكُونُنَّ أَهْوَنَ عَلَى اللهِ مِنَ الْجِعْلَانِ الَّتِي تَدْفَعُ بِأَنْفِهَا النَّتِنَ
অর্থঃ আবূ হুরায়রা(রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তোমাদের জাহিলী যুগের মিথ্যা অহংকার ও পূর্বপুরুষদেরকে নিয়ে গর্ব করার প্রথাকে বিলুপ্ত করেছেন। মু’মিন হলো আল্লাহভীরু আর পাপী হলো দুর্ভাগা। তোমরা সকলে আদম সন্তান আর আদম (আ.) মাটির তৈরি। লোকেদের উচিত বিশেষ গোত্রেরভুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে অহংকার না করা। এখন তো তারা জাহান্নামের কয়লায় পরিণত হয়েছে। অন্যথায় তোমরা মহান আল্লাহর নিকট ময়লার সেই কীটের চেয়ে জঘন্য হবে যে তার নাক দিয়ে ময়লা ঠেলে নিয়ে যায়। (আবূ দাঊদ ৫১১৬, তিরমিযী ৪২৩৩ : হাসান)
‘মিরক্বাতুল মাফাতীহ’-এর মধ্যে ‘আল্লামা মুবারকপূরী(র.) বলেনঃ বংশীয় বা গোত্রীয় অহংকার বলা হয়, বাপ দাদার অথবা বংশের নাম উল্লেখ করে গর্ব করাকে। এ কাজ অন্যকে ছোট করে নিজের মর্তবাকে উঁচু করে তোলার জন্য করা হয়। সেজন্য এ কাজ জায়িয নেই। অন্যের গোত্রকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ এ কাজে অন্যকে ছোট করা হয় বা লজ্জায় ফেলা হয়।
আর العصبية শব্দের অর্থ হলো-স্বজনপ্রীতি বা পক্ষপাতিত্ব করা। পরিভাষায় রক্তের বন্ধনে আবদ্ধতার অনুভূতি এবং সেই অনুভূতির কারণে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করাকে العصبية বলা হয়। আধুনিক পরিভাষায় একে গোত্রবাদ বা সাম্প্রদায়িকতাও বলা যেতে পারে। এটি একটি জাহিলী প্রথা। এ ব্যাপারে হাদিসে রয়েছে, আল হাবিস আল আশ্‘আরী হতে বর্ণিত, নবী(ﷺ) বলেছেনঃ
وَمَنْ ادَّعٰى دَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهٗ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ وَإِنْ صَلّٰى وَصَامَ؟ قَالَ: وَإِنْ صَلّٰى وَصَامَ، فَادْعُوا بِدَعْوَى اللهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ المُسْلِمِينَ المُؤْمِنِينَ، عِبَادَ اللهِ
অর্থঃ “আর যে লোক জাহিলিয়্যাতের ‘আমলের রীতি-নীতির দিকে আহবান করে সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত। জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল(ﷺ)! সে সালাত আদায় করলেও, সিয়াম পালন করলেও? তিনি (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ। সে সালাত আদায় করলেও, সিয়াম পালন করলেও। সুতরাং তোমরা সেই আল্লাহ তা‘আলার ডাকেই নিজেদেরকে ডাকবে যিনি তোমাদেরকে মুসলিম, মু’মিন ও আল্লাহ তা‘আলার বান্দা নাম রেখেছেন।”
(তিরমিযী ২৮৬৩, মিশকাত ৩৬৯৪)
অন্য হাদিসে এসেছে-
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: اقْتَتَلَ غُلَامَانِ غُلَامٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ، وَغُلَامٌ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَنَادَى الْمُهَاجِرُ أَوِ الْمُهَاجِرُونَ، يَا لَلْمُهَاجِرِينَ وَنَادَى الْأَنْصَارِيُّ يَا لَلْأَنْصَارِ، فَخَرَجَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: مَا هٰذَا دَعْوٰى أَهْلِ الْجَاهِلِيَّةِ.
অর্থঃ “জাবির হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসার ও মুহাজিরদের দু’জন বালক মারামারি করলে মুহাজিরগণ তাদের মুহাজির ভাইদের এবং আনসারগণ তাদের আনসার ভাইদের ডাকলেন। তখন রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বের হয়ে এসে বললেন, এটা কি জাহিলী যুগের সেই (মারামারির) ডাকার মতো?” (মুসলিম ৬২-[২৫৮৪]) [31]
জাহেলি গৌরবের ফলে প্রাচীন আরবের সমাজব্যবস্থার কীরূপ অরাজক অবস্থা ছিলো তা বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে। ‘রাহিকুল মাখতুম’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
“সাম্প্রদায়িকতা এবং আত্মীয়তাই ছিল গোত্রীয় নিয়ম-শৃঙ্খলার উৎস। তাঁরা সেই উদাহরণকে শাব্দিক অর্থে বাস্তবে রূপদান করতেন, যেমনঃ
(اُنْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُوْمًا)
(নিজ ভাইকে সাহায্য কর সে অত্যাচারী হোক কিংবা অত্যাচারিত হোক)।
ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন গোত্রের লোকজনের মধ্যে উৎকট এ গোত্রীয় চিন্তাধারা প্রচলিত ছিল। ইসলাম সেই সকল ধারণার মূলোৎপাটন করেছে। অত্যাচারী এবং অত্যাচারিত উভয়কেই সাহায্য করার বিধান ইসলামে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অত্যাচারীকে সাহায্য করার অর্থ হল তাঁকে অন্যায় ও অনাচার থেকে বিরত রাখা। অবশ্য, মর্যাদা এবং নেতৃত্ব কর্তৃত্বের ব্যাপারে একে অন্যের আগে অগ্রসর হওয়ার যে আকুতি ও আকঙ্খা একই ব্যক্তি কর্তৃক বহুবার তা বাস্তবে পরিণত করতে চাওয়ার কারণেই গোত্র সমূহের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহের দামামা বেজে উঠত। আওস ও খাযরাজ, আবস ও যুবইয়ান, বাকর ও তগলিব এবং অন্যান্য গোত্রের সংঘটিত ঘটনাবলীর ক্ষেত্রে যেমনটি লক্ষ্য করা যায়।
পক্ষান্তরে যতদূর জানা যায়, বিভিন্ন গোত্র বা গোষ্ঠির পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারটি ছিল অপেক্ষাকৃত শিথিল বন্ধনের উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন গোত্রের সকল ক্ষমতাই ব্যয়িত হতো পরস্পর পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহে।” [32]
জাহিলি যুগের মুশরিক পূর্বপুরুষরা নানা গুনাহের মাঝে লিপ্ত থাকতো। গুনাহ এবং আল্লাহর অপ্রিয় কর্ম নিয়ে গর্বিত হবার কিছু নেই। ইসলামে মর্যাদার মাধ্যম হচ্ছে তাকওয়া বা পরহেজগারী। জাহেলি গৌরবের ফলে মানুষ নিজ বাপ-দাদাকে নিয়ে অতিমাত্রায় গর্ব করতো, অন্ধভাবে নিজের গোত্রকে সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করতো, গোত্রের প্রতি অন্ধ আনুগত্য করতো। ন্যায় এবং অন্যায় সকল কাজে গোত্রের পক্ষাবলম্বন করতো। যার ফলে নিজ গোত্রের কেউ অন্যায়ভাবে অন্য গোত্রের কাউকে হত্যা করলেও সেই অন্যায়ে নিজ গোত্রকে সবাই সমর্থন দিতো। এভাবে গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ পর্যন্ত লেগে যেতো। সিরাত গ্রন্থগুলোতে আমরা জাহেলি যুগের বিভিন্ন ভয়াবহ যুদ্ধের উল্লেখ পাই। যেমনঃ ফিজার যুদ্ধ [33], ইয়াসরিবে (মদিনায়) আওস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যকার যুদ্ধ [34] ইত্যাদি। আজকের যুগেও অন্ধ গোত্রপ্রীতি এবং সমজাতীয় জিনিসগুলো মানুষের মাঝে নানা অশুভ পরিনতি বয়ে আনতে পারে।
আশা করছি পাঠকের নিকট এখন বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে কোন প্রেক্ষাপটের দিক থেকে নবী(ﷺ) জাহেলি বংশগৌরবের ব্যাপারে এমন কঠোর বাক্য উচ্চারণ করেছেন। ইসলামে এমন কঠোর ভাষায় এই জাহেলিয়াতকে আক্রমন করা হয়েছে যাতে কেউ এতে আর লিপ্ত না হয়। এই প্রবন্ধের আলোচ্য হাদিসের ব্যাখ্যায় ‘মিরক্বাতুল মাফাতীহ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে,
“… এও বলা হয়েছে যে, এর অর্থ হলো, যে ব্যক্তি জাহিলী যুগের নিয়ম-নীতি, কৃষ্টি-কালচার যেমন গালি দেয়া, অভিসম্পাত করা ও মানুষের মান-সম্মান নষ্ট করার মতো কাজ চালু করতে চায়। এছাড়াও নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা, অহংকার ছড়িয়ে দিতে চায় তাকে স্মরণ করিয়ে দাও যে, তার পিতা মূর্তি পূজা করত, যিনা করত, মদ পান করত। এছাড়াও অনেক খারাপ কাজ করত। আর তাকে এ কথাগুলো স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিবে। কোন প্রকারের ইঙ্গিত করে নয়। যাতে সে মানুষের সামনে লজ্জিত হয়ে ফিরে আসে।” [35]
■ খ্রিষ্টান মিশনারীদের অপপ্রচার বনাম বাস্তবতাঃ
নাস্তিক মুক্তমনা ছাড়াও নবী(ﷺ) এর এই হাদিস নিয়ে খ্রিষ্টান মিশনারীদেরকে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাতে দেখা যায়। এই প্রবন্ধে আলোচ্য হাদিসের যে ইংরেজি অনুবাদ উল্লেখ করা হয়েছে তা সরাসরি একটি ইসলামবিরোধী খ্রিষ্টীয় ওয়েবসাইট থেকে নেয়া হয়েছে। খ্রিষ্টান মিশনারীরা নবী(ﷺ)কে ‘অশ্লীলভাষী’ আখ্যা দিয়ে তাঁর নবুয়তকে ভুল প্রমাণ করতে চান, হাদিসের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। আমরা উপরে দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা তাদের এহেন দাবির বাস্তবতা কতোটুকু তা যাচাই করেছি। যে খ্রিষ্টান মিশনারীরা নবী(ﷺ) এর বিরুদ্ধে এহেন অপপ্রচার চালান, তারা কি নিজ ধর্মগ্রন্থের দিকে লক্ষ করেছেন যেখানে বহু স্থানে মানুষের লজ্জাস্থানের কথা উল্লেখ করে নিন্দাবাদ করা হয়েছে? বিশেষত নারীদেহের লজ্জাস্থানের দ্বারা এবং যৌনকর্মের দ্বারা উপমা দেয়ায় বাইবেলের লেখকগণ সিদ্ধহস্ত। এখানে কিছু উদাহরণ উল্লেখ করছি। এই উদাহরণগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে প্রচণ্ড রকম বিব্রত হতে হয়েছে। কিন্তু সত্য প্রকাশের স্বার্থে উদাহরণগুলো উল্লেখ করতে হচ্ছে। এখানে বাইবেলের বিভিন্ন বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন থেকে হুবহু কিছু পদ উল্লেখ করে দেয়া হচ্ছে। পাঠক রেফারেন্স উল্লেখিত লিঙ্কে গিয়ে অনলাইন বাইবেল থেকেও এগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেন। ---
1সদাপ্রভুর বাক্য আমার কাছে উপস্থিত হল, 2“হে মানবসন্তান, দুজন স্ত্রীলোক ছিল যারা একই মায়ের মেয়ে। 3যৌবনকাল থেকেই তারা মিশরে গণিকা হয়েছিল। সেই দেশে তাদের বুক ধরে সোহাগ করা হত এবং তাদের কুমারী স্তন টিপত। 4তাদের মধ্যে বড়টির নাম অহলা ও তার বোনের নাম ছিল অহলীবা। তারা আমার হল এবং ছেলেমেয়েদের জন্ম দিল। অহলা হল শমরিয়া এবং অহলীবা হল জেরুশালেম।
5“অহলা আমার থাকাতেই ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল; এবং তার প্রেমিকদের প্রতি তার কামনা ছিল, আসিরীয়—সৈন্য 6পরনে নীল কাপড়, শাসনকর্তা ও সেনাপতি, সকলেই সুন্দর যুবক এবং ঘোড়াসওয়ার। 7সে অভিজাত আসিরীয়দের কাছে নিজেকে বেশ্যারূপে দান করেছিল এবং যাদের সে কামনা করত তাদের সমস্ত দেবতা দ্বারা নিজেকে অশুচি করেছিল। 8সে মিশরে যে বেশ্যাবৃত্তি শুরু করেছিল তা ত্যাগ করেনি, যখন তার যৌবনকালে পুরুষেরা তার কাছে শুত, তার কুমারী স্তন টিপত এবং তাদের কামনা তার উপর ঢেলে দিত।
9“সেইজন্য আমি তাকে তার প্রেমিকদের হাতে ছেড়ে দিলাম, সেই আসিরীয়দের, যাদের সে কামনা করত। 10তারা তাকে উলঙ্গ করে, তার ছেলেমেয়েদের কেড়ে নিয়ে তরোয়াল দিয়ে তাকে মেরে ফেলল। সে স্ত্রীলোকদের আলোচনার বিষয় হল, কারণ তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।
11“তার বোন অহলীবা এসব দেখেছিল, তবুও তার কামনা এবং বেশ্যাবৃত্তির কারণে সে তার বোনের চেয়ে আরও বেশি চরিত্রহীন ছিল। 12তারও আসিরীয়—শাসনকর্তা ও সেনাপতি, সম্পূর্ণ পোশাকে যোদ্ধা, ঘোড়াসওয়ার, সকল সুন্দর যুবকদের প্রতি কামনা ছিল। 13আমি দেখলাম সেও নিজেকে অশুচি করল; দুজনই একই পথে গেল।
14“কিন্তু সে তার বেশ্যাবৃত্তি আরও বাড়াল। সে দেয়ালের উপর লাল রংয়ে আঁকা কলদীয় পুরুষদের ছবি দেখত, 15তাদের কোমর বাঁধনি এবং মাথায় উড়ন্ত পাগড়ি; তারা সবাই দেখতে ব্যাবিলীয় রথের সেনাপতিদের মতো, যারা কলদীয় দেশের অধিবাসী। 16তাদের দেখামাত্র তাদের প্রতি তার কামনা জাগত, এবং কলদীয় দেশে তাদের কাছে দূত পাঠাত। 17তারপর ব্যাবিলীয়রা তার কাছে এসে তার সঙ্গে বিছানায় যেত এবং ব্যভিচার করে তাকে অশুচি করত। তাদের দ্বারা অশুচি হবার পর সে তাদের ঘৃণা করতে লাগল। 18সে খোলাখুলিভাবে যখন তার বেশ্যার কাজ চালাতে লাগল এবং তার উলঙ্গতা প্রকাশ করল তখন আমি তাকে ঘৃণা করলাম, যেমন আমি তার বোনকে ঘৃণা করেছিলাম। 19যৌবনে সে যখন মিশরে গণিকা ছিল তখনকার দিনগুলির কথা মনে করে সে আরও বেশি ব্যভিচার করতে লাগল। 20সেখানে সে তার প্রেমিকদের সাথে এমন যৌনাচার করত যাদের যৌনাঙ্গগুলি ছিল গাধার মতো ও নিঃসরণ ছিল ঘোড়ার মতো। 21তোমার যৌবনকালে মিশরে যেমন তোমার বুক ধরে আদর করত এবং টিপত, তুমি আবার সেই যৌবনকালীন ব্যভিচারের আকাঙ্ক্ষা করছ।” [36]
“1রাজকন্যে, তোমার জুতো পরা পা দুখানি কত সুন্দর! তোমার বক্র রেখায়িত দুটি ঊরু শিল্পীর তৈরী অলঙ্কারের মত। 2তোমার নাভি গোলাকার পাত্রের মত, তা যেন সব সময় দ্রাক্ষারসে পূর্ণ থাকে। তোমার উদর দেশ পদ্ম দিয়ে ঘেরা স্তূপীকৃত গমের মত। 3তোমার স্তন দুটি গজলা হরিণের যমজ শাবকের মত। 4তোমার কণ্ঠদেশ হাতির দাঁতের স্তম্ভের মত। তোমার দুটি চোখ বৎ-রব্বীমের দ্বারবর্তী হিশ্বনের সরোবরের মতই সুন্দর। তোমার নাক লিবানোনের সেই স্তম্ভের মত যে স্তম্ভ দম্মেশকের দিকে চেয়ে থাকে। 5তোমার মাথা কর্ম্মিল পর্বতের মত। তোমার মাথার চুল রেশমের মত। তোমার দীর্ঘ দোলায়িত চুল রাজাকে পর্যন্ত আকৃষ্ট করে! 6তুমি সত্যিই সুন্দরী! তুমি সত্যিই মনোরমা! প্রিয়া আমার, সত্যিই তুমি একজন সব চেয়ে মনোরমা যুবতী! 7তুমি তালগাছের মত দীর্ঘ এবং তোমার স্তন দুটি সেই গাছের থোকা থোকা ফলের মত। 8আমি সেই গাছে চড়তে চাই, এবং আমি তার ডাল ধরতে চাই। তোমার বক্ষযুগল দ্রাক্ষার থোকার মত সুগন্ধিময় হোক্। 9তোমার মুখের স্বাদ যেন হয় শ্রেষ্ঠ দ্রাক্ষারসের মত। দ্রাক্ষারস ওষ্ঠাধর ও দাঁতের ওপর দিয়ে গড়িয়ে আমার প্রেমের ওপর ঝরে পড়ে।” [37]
“ 2 চুম্বনে চুম্বনে আমায় ভরিয়ে দাও। কারণ তোমার ভালোবাসা দ্রাক্ষারসের চেয়েও ভাল।
...
13 আমার প্রিয়তম আমার কাছে ভেষজ সুগন্ধির সৌরভের মত, আমার স্তনযুগলের মধ্যে সারাটা রাত্রি ধরে বিরাজিত থাকে।”
“2 Let him kiss me with the kisses of his mouth— for your love is more delightful than wine.
...
My beloved is to me a sachet of myrrh resting between my breasts.” [38]
“1যদি তুমি আমার ভাইয়ের মত হতে, যে আমার মায়ের স্তন্য পান করেছে, তাহলে আমি যদি তোমাকে বাইরে দেখতে পেতাম, আমি তোমাকে চুম্বন করতাম এবং তখন কেউই কিন্তু আমাকে ঘৃণা করত না।
...
8আমাদের একটি ছোট ভগিনী আছে।এখনও তার স্তন উদ্ভিন্ন হয় নি। যদি কোন ব্যক্তি তাকে বিবাহ করতে চায় তখন আমাদের ভগিনীর জন্য আমরা কি করবো?
...
10আমি একটি প্রাচীর, আমার স্তনদ্বয় মিনারের মত। আমি তার চোখে অনুগ্রহ দেখেছি!”
“1 If only you were to me like a brother, who was nursed at my mother’s breasts! Then, if I found you outside, I would kiss you, and no one would despise me.
...
8 We have a little sister, and her breasts are not yet grown. What shall we do for our sister on the day she is spoken for?
...
10 I am a wall, and my breasts are like towers. Thus I have become in his eyes like one bringing contentment " [39]
“1 পড়ে যাও আবর্জনায় এবং সেখানেই বসে পড়! কল্দীয়দের (বাবিলের অপর নাম) কুমারী কন্যা। কন্যা বসে পড় মাটিতে। তুমি এখন আর শাসক নও! লোকরা তোমাকে কোমলা ক্ষীণকায়া যুবতী মহিলা বলে মনে করবে না। 2এখন তোমাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। যাঁতাকলে খাদ্যশস্য থেকে তোমাকে আটা বানাতে হবে। তোমার আবরণ সরিয়ে দাও, খুলে ফেল তোমার শৌখিন পোশাক। তোমাকে তোমার দেশ ছাড়তে হবে। তোমার পা দেখতে না পাওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার ঘাঘরা তোল এবং নদী পার হয়ে যাও। 3পুরুষরা তোমার গোপন অঙ্গ দেখবে, তোমাকে ব্যবহার করবে যৌনকর্মে। …”
“1 Go down, sit in the dust, Virgin Daughter Babylon; sit on the ground without a throne, queen city of the Babylonians. No more will you be called tender or delicate. 2 Take millstones and grind flour; take off your veil. Lift up your skirts, bare your legs, and wade through the streams. 3 Your nakedness will be exposed and your shame uncovered. …” [40]
5“আমি তোমার বিপক্ষ,” সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু ঘোষণা করেন।“আমি তোমার মুখের উপর তোমার ঘাঘরা তুলে ধরব। আমি জাতিদের তোমার উলঙ্গতা দেখাব ও রাজ্যগুলির কাছে তোমার লজ্জা প্রকাশ করব। 6আমি অশ্লীলতা দিয়ে তোমাকে আঘাত করব, আমি তোমাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখব এবং তোমাকে এক প্রদর্শনীতে পরিণত করব।
“I am against you,” declares the Lord Almighty. “I will lift your skirts over your face. I will show the nations your nakedness and the kingdoms your shame. 6 I will pelt you with filth, I will treat you with contempt and make you a spectacle.” [41]
“ 1প্রিয়তমা আমার, তুমি অনন্যা! সত্যি, তুমি সুন্দরী! ঘোমটার অন্তরালে তোমার চোখ দুটি যেন কপোতী।
...
5তোমার স্তন দুটি শালুক ফুলের মাঝে চরে বেড়ানো যমজ হরিণ শাবকের মত।
...
7প্রিয়তমা আমার, তুমি সর্বাঙ্গ সুন্দরী। কোথাও তোমার এতটুকু খুঁত নেই!
...
10প্রিয়া আমার, বধূ আমার, তোমার ভালোবাসা কত মনোরম! তোমার ভালোবাসা দ্রাক্ষারসের চেয়েও সুন্দর, তোমার দেহের ঘ্রাণ যে কোন সুগন্ধির চেয়েও উৎকৃষ্ট! 11বধূ আমার, তোমার ওষ্ঠাধর মধুময়, তোমার জিহ্বাগ্রে দুধ ও মধুর স্বাদ। তোমার বেশভূষায় লিবানোনের সুগন্ধ আছে।” [42]
“In that day the Lord will use a razor hired from beyond the Euphrates River—the king of Assyria—to shave your head and private parts, and to cut off your beard also.” [43]
বাইবেল থেকে এ রকম আরো অনেক উদাহরণ দেখানো যেতে পারে, কিন্তু এখানেই থেমে যাওয়া সমীচীন মনে করছি। কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আঘাত করা বা কষ্ট দেয়া আমাদের উদ্যেশ্য নয়। বরং ইসলামের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ও অন্যায় অভিযোগের অপনোদনের জন্য কিছু কঠিন সত্য এখানে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হলো।
খ্রিষ্টান মিশনারীরা হয়তো এখানে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবেনঃ এগুলো কাব্যের মতো, তাই এমন উপমা দেয়া হয়েছে…এখানে কিছু পাপীদের নিন্দা করার জন্য এরূপ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে… ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের ব্যাখ্যাগুলো কতোটুকু সঠিক সে ব্যাপারে অন্যত্র আলোচনা বা বিতর্ক করা যেতে পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে – যাদের নিজ ধর্মগ্রন্থে এভাবে নারীদেহের লজ্জাস্থান, যৌনতা ও নগ্নতার নানা উল্লেখ ও উপমার ছড়াছড়ি, তারা কোন মুখে নবী(ﷺ) এর বক্তব্য নিয়ে প্রচারণা চালান?
এ ব্যাপারে এই আলোচনাটিও দেখা যেতে পারেঃ [ভিডিওর 15:03 - 20:12]
https://youtu.be/s-ODwkXxlnM?t=902
তথ্যসূত্রঃ
[1] মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং : ৪৯০২ (সহীহ)
আরো দেখুনঃ শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৫৪১, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৬৯, সুনানুন্ নাসায়ী আল কুবরা ৮৮৬৪, আহমাদ ২১২৩৬, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ৩৭১৮২।
[2] Mishkat Al Masabih, English Translation With Explanatory Notes By Dr. James Robson [Sh. Muhammad Ashraf Publishers, Booksellers & Exporters, Lahore, Pakistan, Reprinted 1994], Volume II, Book XXIV – General Behaviour, Chapter XIII. Boasting and Party-Spirit, p. 1021
[3] বুখারী, মুসলিম, আল-আদাবুল মুফরাদ ৪৬৯ (সহীহ)
[4] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩১৫
[5] সুনান ইবন মাজাহ , হাদিস নং : ৪১৮৪ (সহীহ)
[6] সুনান ইবন মাজাহ , হাদিস নং : ৪১৮৮
[7] সুনান ইবন মাজাহ , হাদিস নং : ৪১৮১ (হাসান)
[8] তিরমিযী ১৯৭৪, আত-তালীকুর রাগীব ৩/২৫৫, মিশকাত ৪৮৫৪। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
[9] ত্বাবারানী ১৫৪০৭, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩৩৮১ (সহীহ)
[10] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৫৬৮৮
[11] সহীহুল বুখারী ৩৪৮৩, ৩৪৮৪, ৬১২০, আবূ দাউদ ৪৭৯৭, আহমাদ ১৬৬৪১, ১৬৬৫৮, ২১৮৪০, ইরওয়া ২৬৭৩, সহীহাহ ৬৮৪। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
[12] সুনান নাসাঈ, হাদিস নং : ৪০৬ (সহীহ)
[13] সহীহুল বুখারী ৬১১৭, মুসলিম ৩৭, আবূ দাউদ ৪৭৯৬, আহমাদ ১৯৩১৬, ১৯৩২৯, ১৯৪০৪, ১৯৪৫৫, ১৯৪৭০, ১৯৪৯৭, ১৯৫০৬
[14] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৫৬২০
[15] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৯২৭
[16] সহীহ: তিরমিযী ২০১৬, বুখারী ৪৮৩৮, মুসনাদে আহমাদ ২৫৪৫৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৪৪৩, আল মু'জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৬৩, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৩৬৮২।
[17] তিরমিযী, আহমাদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান; আল-আদাবুল মুফরাদ ৩১২ (সহীহ)
[18] আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং : ৪৮৯ (সহীহ)
[19] বুখারী ৬০৫৪, ৬১৩১; মুসলিম ৭৩-(২৫৯১) তিরমিযী ১৯৯৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১০৮৯, আবূ দাঊদ ৪৭৯১, সহীহুল জামি‘ ২০৯৫, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৯৮৯, আহমাদ ২৪১০৬, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৪৮২৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৬৯৬, শু‘আবুল ঈমান ৮১০১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৬৮২
[20] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ৫৫৫১
[21] তিরমিযী, আবু দাউদ; আল-আদাবুল মুফরাদ ৪৬৬ (সহীহ)
[22] সহীহ : আহমাদ ৪/১৪৫, ‘বায়হাক্বী’র ‘‘শু‘আবুল ঈমান’’ ৫১৪৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১০৩৮, হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪০৭ পৃঃ।
[23] বুখারী ৫৯৭৩, মুসলিম ৯০-(১৪৬), আবূ দাঊদ ৫১৪১, তিরমিযী ১৯০২, সহীহুল জামি‘ ৫৯০৮, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫১৪, শু‘আবুল ঈমান ৪৮৫৯, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/১৭২, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১৬১৬
[24] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩০
[25] هَن In English - Translation and Meaning in English Arabic Dictionary of All terms
[26] الدرر السنية - غريب الحديث
[27] PENIS - Translation in Arabic - bab.la
[28] ذَكَرَ In English - Translation and Meaning in English Arabic Dictionary of All terms
[29] সুনান নাসাঈ, হাদিস নং : ১৬৫ (সহীহ)
[30] https://www.hadithbd.com/hadith/detail/?pageNum_mainHadith=13&totalRows_mainHadith=527&book=24=§ion=797
অথবা শর্ট লিঙ্কঃ https://rb.gy/oxrpre
[31] মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب); পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বংশগৌরব ও পক্ষপাতিত্ব, সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত
[32] ‘আর রাহিকুল মাখতুম’ – শফিউর রহমান মুবারকপুরী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স), পৃষ্ঠা ৭০
[33] ‘আর রাহিকুল মাখতুম’ – শফিউর রহমান মুবারকপুরী (তাওহীদ পাবলিকেশন্স), পৃষ্ঠা ৮৬-৮৭
[34] ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’’-ইবন কাসির, ৩য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা ২৭৫
[35] https://www.hadithbd.com/hadith/search/?q=مَنْ+تَعَزَّى+بِعَزَاءِ+الْجَاهِلِيَّةِ+فَأَعِضُّوهُ+بِهَنِ&s=hadith&lang=all&WADbSearch1=
অথবা শর্ট লিঙ্কঃ https://is.gd/TGZhU3
[36] বাইবেল, যিহিষ্কেল (Exekiel) ২৩ : ১-২১
বাংলা অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.bible.com/bible/2412/EZK.23.BCV
ইংরেজি অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.biblegateway.com/passage/?search=ezekiel+23%3A1-21&version=NIV
[37] বাইবেল, সলোমনের পরমগীত (Song of Songs/Songs of Solomon) ৭ : ১-৯
বাংলা অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.bible.com/bible/3150/SNG.7.BERV
ইংরেজি অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.biblegateway.com/passage/?search=Song+of+Songs+7%3A1-9&version=NIV
[38] বাইবেল, সলোমনের পরমগীত (Song of Songs/Songs of Solomon) ১ : ২, ১৩
বাংলা অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.bible.com/bible/3150/SNG.1.BERV
ইংরেজি অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.biblegateway.com/passage/?search=Song+of+Songs+1%3A2%2C13&version=NIV
[39] বাইবেল, সলোমনের পরমগীত (Song of Songs/Songs of Solomon) ৮ : ১, ৮, ১০
বাংলা অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.bible.com/bible/3150/SNG.8.BERV
ইংরেজি অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.biblegateway.com/passage/?search=Song+of+Songs+8%3A1%2C8%2C10&version=NIV
[40] বাইবেল, যিশাইয় (Isaiah) ৪৭ : ১-৩
বাংলা অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.bible.com/bible/3150/ISA.47.BERV
ইংরেজি অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.biblegateway.com/passage/?search=isaiah+47%3A1-3&version=NIV
[41] বাইবেল, নাহুম (Nahum) ৩ : ৫-৬
বাংলা অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.bible.com/bible/2412/NAM.3.BCV
ইংরেজি অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.biblegateway.com/passage/?search=Nahum%203%3A5-6&version=NIV
[42] বাইবেল, সলোমনের পরমগীত (Song of Songs/Songs of Solomon) ৪ : ১, ৫, ৭, ১০-১১
বাংলা অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.bible.com/bible/3150/SNG.4.BERV
ইংরেজি অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.biblegateway.com/passage/?search=Song+of+Songs+4&version=NIV
[43] বাইবেল, যিশাইয় (Isaiah) ৭ : ২০
ইংরেজি অনুবাদের লিঙ্কঃ https://www.biblegateway.com/passage/?search=isaiah+7%3A20&version=NIV
বাংলা অনুবাদগুলোতে এখানে “to shave your head and private parts” অংশকে ভিন্নভাবে এমন উপায়ে অনুবাদ করা হয়েছে যা দেখে মনে হয় পায়ের লোম কাটা হবে। কেউ বুঝতে পারবে না বাইবেলের ঈশ্বর এখানে ক্ষুর দিয়ে লজ্জাস্থানের লোম পরিষ্কারের কথা বলেছেন।