Pray for the world economy

আয়িশাহ (রা.) এর মতে তিনি ৯ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্কা ছিলেন

 

একজন মেয়ের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার বয়স সম্পর্কে আয়িশা(রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত আছে। এই প্রবন্ধটিতে উক্ত হাদিসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

 

১. মাতান উপস্থাপন ও তাখরিজ :

 

হাদিসটির মাতান :

আয়িশা বিনত আবি-বকর আল-কোরাশিয়াহ (রা.)  বলেছেন :

"إِذَا بَلَغَتِ الْجَارِيَةُ تِسْعَ سِنِينَ فَهِيَ امْرَأَةٌ" [1] [2] [3]

অর্থ : যখন একজন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায়, তখন সে ইমরায়াহ (প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা) হয়ে যায়।

 

হাদিসটির তাখরিজ :

আবু-ঈসা আত-তিরমিযী, আবু-বকর আল-বায়হাকী এবং আবু-মুহাম্মদ আল-বাগভী হাদিসটি মাওকুফরূপে তা'লিক হিসেবে সনদ ব্যাতিত উল্লেখ করেছেন [4] । হারব আল-কিরামানী সনদ ধরে আয়িশা (রা.) হতে মাওকুফরূপে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন [5]।ইমাম আহমাদ হাদিসটি সনদ ধরে মাওকুফরূপে আয়িশা (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, [6] এবং ইমাম আল-বুখারি হাদিসটি উল্লেখ করেছেন [7] [8]

 

২. হাদিসটির কিছু বর্ণনার বিশুদ্ধতা নির্ণয় :

 

ক) আত-তিরমিযী, আল-বায়হাকী ও আল-বাগভীর বর্ণনা :

তাঁরা উক্ত হাদিসটির কোনো সনদ উল্লেখ করেন নি বরং তা'লিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ তাঁদের বর্ণনাগুলো "মুয়াল্লাক্ব" যার হুকুম হলো তা যইফ, দলিলযোগ্য নয় [9]

 

খ) হারব আল-কিরামানীর বর্ণিত সনদ :

তিনি হাদিসটি আয়িশা (রা.)  হতে সনদ ধরে মাওকুফরূপে উল্লেখ করেছেন। তাঁর বর্ণিত সনদে আছে যে "হাবিব বিন আবি-মারযুক" হাদিসটি আয়িশা (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাবিবকে ইবন হিব্বান, ইবন হাজার ও আবু-আলি আল-ক্বাশিরী একজন "তাবে তাবেঈ" হিসেবে উল্লেখ করেছেন [10]। সুতরাং সনদটিতে ইনক্বিতা (বিচ্ছিন্নতা) আছে, সনদটি মুনক্বাতিঈ [11] , আর মুনকাতিঈর হুকুম হলো তা যইফ। দলিলযোগ্য নয় [12]

 

গ) ইমাম আল-বুখারির উল্লেখকৃত বর্ণনা :

এতটুকু জানা আছে যে ইমাম আল-বুখারি হাসিটি উল্লেখ করেছেন [13]  [14]।তিনি কি সনদ সহ উল্লেখ করেছেন নাকি সনদ ছাড়া উল্লেখ করেছেন, এসব ব্যাপার অজানা। কাজেই আল-বুখারির উল্লেখকৃত বর্ণনার ব্যাপার নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

 

ঘ) ইমাম আহমাদের বর্ণিত সনদ :

ইমাম আহমাদের বর্ণিত সনদের ব্যাপারে সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসছে।

 

৩. ইমাম আহমাদের বর্ণিত সনদ:

 

বর্তমান সময়ে ইমাম আহমাদের রচিত যেই গ্রন্থগুলো পাওয়া যায় সেই গ্রন্থগুলোর কোনোটিতেই সরাসরি পাওয়া যায় না যে ইমাম আহমাদ আয়িশা (রা.)  হতে সনদ ধরে উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এর অর্থ এই না যে ইমাম আহমাদ তাঁর কোনো গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেননি। বরং তিনি অবশ্যই বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি তাঁর যেই গ্রন্থে সনদ ধরে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন সেই গ্রন্থটি বর্তমানে পাওয়া যায় না।

 

বর্তমানে যদিও ইমাম আহমাদের কোনো গ্রন্থে উক্ত বর্ণনাটি সনদসহ পাওয়া যায় না, তবে পূর্ববর্তী সময়ের আলেমরা ইমাম আহমাদের বর্ণিত সনদটি পেয়েছিলেন। এবং তাঁদের অনেকেই এ ব্যাপারটি তাঁদের বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করে গিয়েছেন যে ইমাম আহমাদ উক্ত বর্ণনাটি সনদ ধরে তাঁর একটি গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

 

ইবন আব্দিল-হাদী আল-হাম্বালী বলেছেন :

والمشهور ما ذكره البخاريُّ عن عائشة أنَّها قالت: إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة.

ورواه الإمام أحمد بإسناده عنها [15]

এবং প্রসিদ্ধ হলো যা আল-বুখারি আয়িশা (রা.)  হতে উল্লেখ করেছেন যে তিনি বলেছেন : যখন একজন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়। এবং এটাকে ইমাম আহমাদ সনদ ধরে আয়িশা (রা.)  হতে বর্ণনা করেছেন।

 

ইবন আবি-উমার আল-হাম্বালী বলেছেন :

وقد روى الإمام أحمد بإسناده عن عائشة رضي الله عنها أنها قالت: إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة [16]

এবং ইমাম আহমাদ আয়িশা (রা.)  হতে সনদ ধরে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন : যখন একজন মেয়ে নয় বছরে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়।

 

ইবন কুদামাহ আল-মাকদিসী আল-হাম্বালী বলেছেন :

وقد روى الإمام أحمد ، بإسناده عن عائشة، رضى الله عنها، أنها قالت: إذا بلغت الجارية تسع سنين فهى امرأة [17]

এবং ইমাম আহমাদ আয়িশা (রা.)  হতে সনদ ধরে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন : যখন একজন মেয়ে নয় বছরে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়।

 

অনুরূপ বিষয় উল্লেখ করেছেন :… [18]

শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনু মুফলিহ আল-হাম্বালী

বুরহানুদ্দিন ইব্রাহিম ইবনু মুফলিহ আল-হাম্বালী

মানসুর বিন ইউনুস আল-বুহুতী আল-হাম্বালী

আব্দুল্লাহ আল-মাকদিসী আল-হাম্বালী

ইবনুন নাজ্জার আল-ফাতুহী আল-হাম্বালী

বাহাউদ্দিন আল-মাকদিসী আল-হাম্বালী

(রহিমাহুমুল্লাহ)

 

উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও আরো অনেক উলামাই এ ব্যাপারটি উল্লেখ করেছেন যে ইমাম আহমাদ হাদিসটি আয়িশা রা. হতে সনদ ধরে বর্ণনা করেছেন। এই আলেমদের মাঝে ব্যাপারটিতে ঐক্যমত রয়েছে।

 

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে ইমাম আহমাদ সনদ ধরে হাদিসটি আয়িশা (রা.)  হতে মাওকুফরূপে বর্ণনা করেছেন।

 

অতপর - ইমাম আহমাদের বর্ণিত উক্ত সনদটির বিশুদ্ধতা প্রমাণ করা হবে।

 

৪. ইমাম আহমাদের বর্ণিত সনদের বিশুদ্ধতা প্রমাণ :

 

এটা জানা আছে যে ইমাম আহমাদ একটি সনদ ধরে হাদিসটি আয়িশা (রা.)  হতে মাওকুফরূপে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সনদটি কি তা জানা নেই। কাজেই স্বাভাবিক ক্ষেত্রে একটি হাদিসের সনদের বিশুদ্ধতা যেভাবে নির্ণয় করা হয়, এক্ষেত্রে সেভাবে তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে একটি ভিন্ন সূত্রের সাহায্যে এর বিশুদ্ধতা নির্ণয় করা যাবে।

 

সূত্রটির সাথে সম্পর্কিত দুটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় :

সূত্রটি উল্লেখ করার পুর্বে এর সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপুর্ণ কিছু বিষয় স্পষ্ট করে নেয়া দরকার,

প্রথম বিষয় -

যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করা না করার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের মাঝে তিনটি মাযহাবের প্রচলন রয়েছে । সেগুলো নিম্নরূপ : [19]

 

প্রথম মাযহাব - সহীহ ও হাসান হাদিসের পাশাপাশি যইফ হাদিস সকল ক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য হবে, যদি তা এই দুটি শর্ত পুরণ করে :

 

(১) যইফ হাদিসটির দুর্বলতাটি খুবই বেশি হতে পারবে না

(২) একটি নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে সেই যইফ হাদিসটি ব্যাতিত অন্য কিছু পাওয়া যাবে না, এবং এমন কিছু থাকবে না যা উক্ত যইফ হাদিসটির বিরুদ্ধে যায়।

 

দ্বিতীয় মাযহাব - যইফ হাদিস কোনো ক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য হবে না। শুধুমাত্র সহীহ বা হাসান হাদিসই নির্ভরযোগ্য।

 

তৃতীয় মাযহাব - হালাল হারাম ও এ ধরণের হুকুম-আহকাম সক্রান্ত বিষয়গুলোতে যইফ হাদিস কোনোভাবেই নির্ভরযোগ্য হবে না, বরং এসব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সহীহ ও হাসান হাদিসই নির্ভরযোগ্য। কিন্তু আমলের ফজিলত বর্ণনা (ফাযাইলুল আ'মাল), আগ্রহ/উৎসাহ জাগানো (তারগিব), ভীতি প্রদর্শন (তারহিব) ও এই ধরণের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করা যাবে।

 

দ্বিতীয় বিষয় -

আয়িশা (রা.)  হতে মাওকুফরূপে বর্ণিত উক্ত হাদিসটির উপর যেই আলেমরা নির্ভর করেছেন বলে আমি উল্লেখ করে দেখাব, তাঁদের সকলেই হাম্বালী।

 

সূত্রটির উপস্থাপনা :

যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী একজন আলেম যখন হুকুম-আহকাম সক্রান্ত কোনো বিষয়ে একটি হাদিসের উপর নির্ভর করবেন, তখন এর অর্থ হবে এই যে সেই আলেম হাদিসটিকে 'সহীহ অথবা হাসান' গণ্য করেছেন।

 

সূত্রটির শুদ্ধতা প্রমাণ :

 

এই পয়েন্টে আমি তিনটি পদ্ধতির মাধ্যমে সূত্রটির শুদ্ধতা প্রমাণ করে দেখাব।

 

প্রথম পদ্ধতি - কাণ্ডজ্ঞানের [العقل السليم] মাধ্যমে,

কাণ্ডজ্ঞানের দ্বারাই উক্ত সূত্রটির শুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। একজন আলেম যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী হওয়ার অর্থ হলো এই যে সেই আলেমের নিকট হুকুম আহকামের প্রসংগে শুধুমাত্র সহীহ ও হাসান হাদিসই নির্ভরযোগ্য, যইফ হাদিস নির্ভরযোগ্য নয়। এখন তিনি যদি হুকুম আহকামের ক্ষেত্রে একটা হাদিসের উপর নির্ভর করেন (অর্থাৎ এমন একটা ক্ষেত্রে একটা হাদিসের উপর নির্ভর করেন যেক্ষেত্রে তাঁর নিকট শুধুমাত্র সহীহ বা হাসান হাদিসই নির্ভরযোগ্য, এছাড়া অন্য কোনো মানের হাদিস নির্ভরযোগ্য নয়), এর সুস্পষ্ট অর্থ হলো এই যে তাঁর নিকট সেই হাদিসটি (যেটার উপর নির্ভর করা হয়েছে) সহীহ অথবা হাসান মনে হয়েছে। যদি তাঁর নিকট সেই হাদিসটিকে সহীহ বা হাসান মনে না হতো তাহলে তিনি হুকুম আহকামের ক্ষেত্রে এর উপর নির্ভর করতেন না কারণ উনার নিকট হুকুম আহকামের প্রসংগে শুধুমাত্র সহীহ বা হাসান হাদিসই নির্ভরযোগ্য।

 

দ্বিতীয় পদ্ধতি - উসুলের মাধ্যমে,

হাদিসশাস্ত্রের একটা মূলনীতি হলো এরূপঃ

"একজন আলেম কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে শুধুমাত্র সহীহ বা হাসান হাদিসকেই নির্ভরযোগ্য মনে করেন, যইফ হাদিসকে নির্ভরযোগ্য মনে করেন না। এখন তিনি যদি সেই নির্দিষ্ট বিষয়টির বেলায় একটি নির্দিষ্ট হাদিসের উপর নির্ভর করেন, তাহলে এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তাঁর নিকট সেই নির্দিষ্ট হাদিসটির সনদে থাকা রাবীরা নির্ভরযোগ্য। [20] অনুরূপভাবে এটাও প্রমাণিত হয় যে উক্ত আলেমের নিকট সেই হাদিসটি 'সহীহ' অথবা 'হাসান'। " [21] [22]

আমার উল্লেখিত সূত্রটি হচ্ছে এই মূলনীতিটিরই একটি রূপ।

 

তৃতীয় পদ্ধতি - মুহাদ্দিসদের উদাহরণ আনার মাধ্যমে।

আমি যেই সূত্রটি উল্লেখ করেছি, সেই সূত্রটিকে বহু মুহাদ্দিসও প্রয়োগ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন… [23]

 

ইবন হাজার আল-আসক্বালানী

আবুল-ফিদা ইবন কাসির আদ-দিমাশক্বী

তাক্বিউদ্দিন ইবন তাইমিয়াহ

মাজদুদ্দিন বিন তাইমিয়াহ

আল-কাদ্বী আবু-ইয়ালা ইবনুল ফারা

নুরুদ্দিন আবুল-হাসান আস-সামহুদী

নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী

মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন

(রহিমাহুমুল্লাহ)

 

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে সূত্রটি সম্পুর্ণ সঠিক।

 

বর্ণিত সূত্রটির ব্যাপারে সম্ভাব্য কিছু আপত্তির জবাব :

 

এই সূত্রটির ব্যাপারে আসতে পারা সম্ভাব্য আপত্তিগুলো হলো,

 

(১) হাম্বালীদের কেউ কেউ হুকুম-আহকামের ক্ষেত্রে মুরসাল হাদিসকে দলিলযোগ্য মনে করতেন। সুতরাং তাঁদের উক্ত হাদিসটির উপর নির্ভর করা এটা প্রমাণ করে না যে এটা তাদের নিকট সহীহ অথবা হাসান, বরং সেটি মুরসালও হতে পারে।

(২) হাম্বালীদের অনেকে ক্বিয়াসের উপর যইফ হাদিসকে অগ্রাধিকার দিতেন। অর্থাৎ হুকুম-আহকাম সক্রান্ত ব্যাপারে যদি তাদের ক্বিয়াস করার প্রয়োজন হতো, তাহলে তাঁরা ক্বিয়াস না করে ক্বিয়াসের বদলে একটি যইফ হাদিস গ্রহণ করে নেয়াকে অধিক উত্তম বলে মনে করতেন। সুতরাং তাঁদের উক্ত হাদিসটির উপর নির্ভর করার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে তাঁদের নিকট হাদিসটি সহীহ অথবা হাসান গণ্য হয়েছে।

 

আপত্তিসমূহের জবাব –

 

প্রথমত, হাম্বালীদের নিকট মুরসাল মানে হলো সাহাবী ব্যাতিত অন্য যেকোনো প্রজন্মের রাবির এই বলে হাদিস বর্ণনা করা যে "রাসুল ()  বলেছেন..... " [24] । আর যেই মুরসাল গ্রহণযোগ্য হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে ইখতেলাফ ঘটেছে সেই মুরসাল দ্বারা উদ্দেশ্য রাসুল ()  হতে বর্ণিত একজন তাবেঈর বর্ণনা [25] । অপরদিকে এই লেখাটির আলোচ্য বিষয় হলো আয়িশা (রা.)  হতে বর্ণিত একটি মাওকুফ হাদিস।

 

দ্বিতীয়ত,  যেই মাস'আলাগুলোতে হাম্বালীরা আয়িশার (রা.)  আলোচ্য মাওকুফ হাদিসটির উপর নির্ভর করেছেন বলে আমি উল্লেখ করে দেখাবো ; সেই মাস'আলাগুলোতে হাম্বালীরা ইতিমধ্যে ক্বিয়াস করে ফেলেছেন। তাঁদের আগে থেকে সেসব মাস'আলায় ক্বিয়াস করা হয়ে গেছে। তাঁরা ক্বিয়াস করেছেন, এবং একইসাথে আয়িশার (রা.)  মাওকুফ হাদিসটির উপর নির্ভরও করেছেন।

 

সূত্রটি উপস্থাপন করা হলো, সূত্রটির বিশুদ্ধতা প্রমাণ করে এর ব্যাপারে আসতে পারা সাম্ভাব্য কিছু অপত্তির জবাব দেয়া হলো। এবার সূত্রটি প্রয়োগ করা হবে।

 

সূত্রটির প্রয়োগ :

সূত্রটি হলো এই - "যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী একজন আলেম যখন হুকুম-আহকাম সক্রান্ত কোনো বিষয়ে একটি হাদিসের উপর নির্ভর করবেন, তখন এর অর্থ হবে এই যে সেই আলেম হাদিসটিকে 'সহীহ অথবা হাসান' গণ্য করেছেন "

 

উক্ত সূত্রটিকে প্রয়োগ করার দ্বারা নির্ণয় করে দেখানো হবে যে বহু আলেম আয়িশার (রা.) এর  আলোচ্য মাওকুফ হাদিসটিকে সহীহ অথবা হাসান গণ্য করেছেন। এটাই উক্ত সূত্রটির মুল উদ্দেশ্য।

 

এবার এই পয়েন্টটির মুল আলোচনা শুরু করা যাক।

 

এক. [আল-ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী]

আবু-বকর ইবনুল-আরাবী আল-মালিকী বলেছেন -

"قال أحمد : وإذا رضيت وهي بنت تسع سنين جاز النكاح وكان الأستئمار صحيحا لقول عائشة إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي إمرأة " [26]

"এবং আহমাদ বলেছেন : এবং যখন সে রাজি হবে ও নয় বছর বয়সের হবে, তখন বিয়ে জায়েয হবে এবং আবেদনটি বিশুদ্ধ হবে, আয়িশার (এই) বক্তব্যের কারণে (যে) 'যখন একজন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়'  "

 

এটা সুস্পষ্ট, যে ইমাম আহমাদ একটি হুকুম-আহকাম সক্রান্ত ফিক্বহী বিষয়ে আয়িশার (রা.)  হাদিসটির উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করেছেন।যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদের মাযহাব কি প্রথমটি নাকি তৃতীয়টি, সেব্যাপারে কিছু মতপার্থক্য আছে। তবে বিশুদ্ধ অভিমত হলো এই যে যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদ তৃতীয় মাযহাবটির অনুসারী ছিলেন। [27]

 

সুতরাং সূত্র অনুযায়ী প্রমাণিত হলো যে ইমাম আহমাদের নিকট হাদিসটি "সহীহ বা হাসান"।

 

দুই. [আবু-মুহাম্মদ ইবন কুদামাহ আল-মাকদিসী আল-হাম্বালী]

ইবন কুদামাহ উল্লেখ করেছেন যে ইমাম আহমাদ হাদিসটি সনদ ধরে আয়িশা (রা.)  হতে  বর্ণনা করেছেন [28]

 

ইবন কুদামাহ বলেছেন :

وجمعنا بين الأدلة والأخبار، وقيدنا ذلك بابنة تسع؛ لأن عائشة قالت: «إذا بلغت الجارية تسع سنين، فهي امرأة» [29]

"এবং আমরা দলিলসমুহ ও বর্ণনাসমুহের মাঝে সামঞ্জস্য সাধন করেছি, এবং আমরা সেটাকে নয় বছরের মেয়ের জন্য নির্দিষ্ট করেছি, কেননা আয়িশা (রা.)  বলেছেন : যখন একজন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়"

 

স্পষ্টতই, ইবনে কুদামাহ একটি হুকুম-আহকাম সক্রান্ত ফিক্বহী বিষয়ে আয়িশার (রা.)  হাদিসটির উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করেছেন। আর যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তিনি তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী ছিলেন [30]

 

সুতরাং সূত্র অনুযায়ী প্রমাণিত হলো যে ইবন কুদামাহর নিকট হাদিসটি "সহীহ অথবা হাসান"।

 

তিন. [আব্দুর-রহমান ইবন আবি-উমার আল-হাম্বালী ]

ইবন আবি-উমার উল্লেখ করেছেন যে ইমাম আহমাদ হাদিসটি সনদ ধরে আয়িশা (রা.)  হতে  বর্ণনা করেছেন [31]

 

ইবন আবি-উমার বলেছেন : … [32]

ويَحْتَمِلُ أن يُحَدَّ ذلك بِتِسْعٍ في حَقِّ الجَارِيَةِ؛ لقَوْلِ عائشةَ: إذا بَلَغَتِ الجارِيَةُ تِسْعَ سِنِينَ فهى امْرَأةٌ

"এবং এটা গ্রহনযোগ্য যে সেটাকে মেয়ের জন্য নয় বছর দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হবে ; আয়িশার (রা.)  (এই) বক্তব্যের কারণে (যে) 'যখন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়'"

 

ইবন আবি-উমার আরো বলেছেন : … [33]

 وثَبَت في حَقِّها أحْكامُ الحَيضِ كلُّها؛ لأنَّه رُوِيَ عن عائشةَ، أنَّها قالت: إذا بَلَغَتِ الجارِيَةُ تِسْعَ سِنِينَ فهي امرأةٌ

"এবং তার (মেয়ের) জন্যে হায়েযের সকল বিধি-বিধান প্রমাণিত হয়েছে, কেননা আয়িশা (রা.)  হতে এমনটা বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন : 'যখন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়'"

 

স্পষ্টতই, ইবনে আবি-উমার একটি হুকুম-আহকাম সক্রান্ত ফিক্বহী বিষয়ে আয়িশার (রা.)  হাদিসটির উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করেছেন। আর যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তিনি তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী ছিলেন, যা ওনার বক্তব্য হতেই স্পষ্ট হয় [34]

 

সুতরাং সূত্র অনুযায়ী প্রমাণিত হলো যে ইবন আবি-উমারের নিকট হাদিসটি "সহীহ অথবা হাসান"।

 

চার. [তাক্বিউদ্দিন ইবনুন-নাজ্জার আল-ফুতুহী আল-হাম্বালী]

ইবনুন-নাজ্জার আল-ফুতুহী বলেছেন ;

وثبت في حقها أحكام الحيض كلها، لأنه روي عن عائشة رضي الله تعالى عنها انها قالت:" إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة [35]

"এবং তার (মেয়ের) জন্যে হায়েযের সকল বিধিবিধান প্রমাণিত হয়েছে, কেননা আয়িশা (রা.)  হতে এমনটা বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন : 'যখন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়'"

 

ইবনুন-নাজ্জার আরো বলেছেন ;

ووجه تقييد ذلك ببنت تسع؛ ما روى أحمد بسنده إلى عائشة أنها قالت: إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة [36]

"এবং সেটাকে নয় বছর বয়সী মেয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়ার কারণ হলো যা আহমাদ সনদ ধরে আয়িশা (রা.)  হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন 'যখন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়'"

 

স্পষ্টতই, ইবনুন-নাজ্জার একটি হুকুম-আহকাম সক্রান্ত ফিক্বহী বিষয়ে আয়িশার (রা.)  হাদিসটির উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করেছেন। আর যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তিনি তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী ছিলেন [37]

 

সুতরাং সূত্র অনুযায়ী প্রমাণিত হলো যে ইবনুন-নাজ্জারের নিকট হাদিসটি "সহীহ অথবা হাসান"।

 

পাঁচ. [মানসুর বিন ইউনুস আল-বুহুতী আল-হাম্বালী]

আল-বুহুতী বলেছেন :

وإذْنُ بنتِ تسعٍ مُعتبرٌ؛ لقولِ عائشةَ: «إذَا بَلَغَتْ الجَارِيَةُ تِسْعَ سِنِينَ فَهِيَ امْرَأَةٌ» رواه أحمدُ [38] [39]

"নয় বছর বয়সী মেয়ের অনুমতি বিবেচ্য, আয়িশার (রা.)  (এই) বক্তব্যের জন্য (যে) 'যখন একজন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়'। ইমাম আহমাদ এটা বর্ণনা করেছেন। "

 

আরো বলেছেন :

إذن بنت تسع سنين صحيح معتبر نصًا لقول عائشة: إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة، رواه أحمد [40]

"নয় বছর বয়সী মেয়ের অনুমতি নস অনুযায়ী বিশুদ্ধ বিবেচ্য, আয়িশার (রা.)  (এই) বক্তব্যের কারণে (যে) 'যখন একজন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়।'ইমাম আহমাদ এটা বর্ণনা করেছেন "

 

স্পষ্টতই, আল-বুহুতী একটি হুকুম-আহকাম সক্রান্ত ফিক্বহী বিষয়ে আয়িশার (রা.)  হাদিসটির উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করেছেন। আর যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তিনি তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী ছিলেন, যা তাঁর বক্তব্য দ্বারাই স্পষ্ট হয় [41]

 

সুতরাং সূত্র অনুযায়ী প্রমাণিত হলো যে আল-বুহুতীর নিকট হাদিসটি "সহীহ অথবা হাসান"।

 

ছয়. [শামসুদ্দিন মুহাম্মদ আয-যারকাশী আল-হাম্বালী]

আয-যারকাশী আল-হাম্বালী বলেছেন -

وإنما قيدنا ذلك ببنت تسع، لقول عائشة - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا -: إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة. رواه أحمد  [42]

"এবং অবশ্যই আমরা সেটাকে নয় বছর বয়সী মেয়ের জন্য নির্দিষ্ট করেছি আয়িশার (রা.)  (এই) বক্তব্যের কারণে (যে) তিনি বলেছেন 'যখন একজন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়।' ইমাম আহমাদ সেটা বর্ণনা করেছেন। "

 

স্পষ্টতই, আয-যারকাশী একটি হুকুম আহকাম সক্রান্ত বিষয়ে আয়িশার (রা.)  হাদিসটির উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করেছেন।

 

আয-যারকাশী হুকুম-আহকাম সক্রান্ত একটি হাদিস সম্পর্কে আলোচনা প্রসংগে বলেন :

"لكنه ضعيف، ولهذا لم يعتمده الإمام"_ [43]

"কিন্তু তা (হাদিসটি) যইফ, এবং এজন্যই ইমাম আহমাদ এর উপর নির্ভর করেননি"।

 

এখানে তিনি হুকুম-আহকাম সক্রান্ত একটি হাদিসের যইফ হওয়াকে সেই হাদিসের উপর ইমাম আহমাদের নির্ভর না করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তিনি মনে করতেন যে ইমাম আহমাদ হুকুম আহকামের বেলায় যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করেন না।অর্থাৎ আয-যারকাশী মনে করতেন যে ইমাম আহমাদ যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। এবার ইমাম আহমাদ এক্ষেত্রে তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী আর আয-যারকাশী ইমাম আহমাদের অনুসারী, সুতরাং আয-যারকাশীও তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী।

 

সুতরাং সূত্র অনুযায়ী প্রমাণিত হলো যে হাদিসটি আয-যারকাশীর নিকট সহীহ অথবা হাসান।

 

সাত. [মুস্তফা বিন সাদ বিন আবদাহ আর-রুহাইবানী আল-হাম্বালী]

আর-রুহাইবানী বলেছেন :

"وَوَجْهُ تَقْيِيدِ ذَلِكَ بِبِنْتِ تِسْعٍ، مَا روی أحمد عن عائشة أنها قالت إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي إمرأة " [44]

"এবং সেটাকে নয় বছর বয়সী মেয়ের জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়ার কারণ হলো যা আহমাদ আয়িশা (রা.)  হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন 'যখন একজন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায় '"।

 

স্পষ্টতই, আর-রুহাইবানী একটি হুকুম-আহকাম সক্রান্ত ফিক্বহী বিষয়ে আয়িশার (রা.)  হাদিসটির উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করেছেন। আর যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তিনি তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী ছিলেন, যা তাঁর বক্তব্য হতেই স্পষ্ট [45]

 

সুতরাং সূত্র অনুযায়ী প্রমাণিত হলো যে আর-রুহাইবানীর নিকট হাদিসটি সহীহ অথবা হাসান।

 

আট. [উসমান বিন আব্দুল্লাহ বিন জামি আল-হাম্বালী]

উসমান ইবন জামি বলেছেন :

"وخص بنت تسع لحديث أحمد عن عائشة قالت: إذا بلغت الجارية تسع سنين فهي امرأة" [46]  

"এবং নয় বছরের মেয়েকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে আহমাদের আয়িশা (রা.)  হতে বর্ণিত হাদিসের কারণে যে তিনি বলেছেন : যখন একজন মেয়ে নয় বছর বয়সে পৌছায় তখন সে একজন মহিলা হয়ে যায়"

 

স্পষ্টতই উসমান একটি হুকুম-আহকাম সক্রান্ত ফিক্বহী বিষয়ে আয়িশার (রা.)  হাদিসটির উপর সরাসরিভাবে নির্ভর করেছেন।

 

উসমান বিন জামি উনার "আল-ফাওয়াইদুল মুন্তাখাবাত" গ্রন্থের একস্থানে একটি হুকুম-আহকাম সক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একটি হাদিসকে শুধুমাত্র যইফ হওয়ার কারণে অনির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন [47] । এরদ্বারা প্রমাণিত হয় যে উসমান ইবন জামি যইফ হাদিসের উপর নির্ভর করার ক্ষেত্রে তৃতীয় মাযহাবের অনুসারী।

 

সুতরাং সূত্র অনুযায়ী প্রমাণিত হলো যে উসমান ইবন জামির নিকট হাদিসটি সহীহ অথবা হাসান।

 

সূত্রটি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল :

 

সূত্রটি প্রয়োগ করে পাওয়া গেল যে আয়িশার (রা.)  আলোচ্য মাওকুফ হাদিসটিকে ইমাম আহমাদ, ইবন কুদামাহ, ইবন আবি-উমার, ইবনুন-নাজ্জার, আল-বুহুতী, আর-রুহাইবানী, এবং উসমান ইবন জামি সহীহ বা হাসান মনে করেছেন।

 

একটি আপত্তি ও তার জবাব :

 

আপত্তি - আবু বকর ইবনুল আরাবী আল মালিকী তাঁর "আরিদ্বাতুল আহওয়াযী" গ্রন্থে আয়িশার (রা.)  আলোচ্য মাওকুফ হাদিসটির ব্যাপারে বলেছেন  "وحديث عائشة لم يصح" অর্থাৎ "এবং আয়িশার হাদিসটি সহীহ নয়" [48] । সুতরাং একজন মুহাদ্দিসের সুস্পষ্ট বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হলো যে আয়িশার (রা.)  হাদিসটি সহীহ নয়।

 

জবাব -  "আবু-বকর ইবনুল-আরাবী বিশুদ্ধ সুস্পষ্ট  বাগ্মিতাপূর্ণ ক্রুটিমুক্ত ভাষা ব্যবহার করতেন।তিনি একজন ভালো বক্তা ছিলেন। এবং সাহিত্য ও ব্যাকরণ সম্পর্কে তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। কবিগন তাঁর প্রশংসা করতেন। " [49]

 

ইবনুল আরাবী আরিদ্বাতুল আহওয়াযিতে বলেছেন :

"وحديث عائشة لم يصح ، فإن صح فالمراد به إحتمال الوطء لا صحة الإذن " [50]

"এবং আয়িশার হাদিসটি সহীহ নয়, তবে যদি তা সহীহ হয় তাহলে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সহবাসের সাম্ভাব্যতা, অনুমতির বিশুদ্ধতা নয় "

 

তিনি এখানে বলেছেন فإن صح (তবে যদি তা সহীহ হয়), এখানে তিনি ব্যবহার করেছেন "إن" (যদি), "لو" (যদি) ব্যবহার করেননি। এই إن (যদি) হচ্ছে ان الشرطية (ইন শরতিয়াহ), আর صح (সহীহ হয়) হচ্ছে الشرط (শর্ত)।

 

ইন শরতিয়ার নীতি হলো এই যে তা তার শর্তের সত্য হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে, শর্তটির সত্য হওয়া ও না হওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা ও সন্দেহ বুঝায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইহা সন্দেহপুর্ণ অনিশ্চিত বিষয়বস্তুর জন্য ব্যবহৃত হয়। [51] ইবনুল-আরাবী বাক্যটিতে ইন শরতিয়ার সাথে শর্ত হিসেবে বলেছেন "صح"(সহীহ হয়)।

 

সুতরাং ইবনুল-আরাবী তাঁর বক্তব্যটিতে فإن صح (তবে যদি তা সহীহ হয়) বলার দ্বারা বুঝিয়েছেন যে হাদিসটির সহীহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, হাদিসটি সহীহ নাকি সহীহ না সেব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন বরং সন্দিহান। অর্থাৎ তিনি তাঁর এই وحديث عائشة لم يصح (এবং আয়িশার হাদিসটি সহীহ নয়) বক্তব্যটির শুদ্ধতার ব্যাপারে অনিশ্চিত ও সন্দিহান।

 

একদিকে ইবনুল-আরাবী অনিশ্চয়তা প্রকাশের সহিত বলেছেন যে হাদিসটি সহীহ নয়, অর্থাৎ ইবনুল-আরাবী "সহীহ নয়" বলেছেন এই অর্থে যে "হয়তো হতে পারে হাদিসটি সহীহ নয়"। এর বিপরীতে ইমাম আহমাদ, ইবন কুদামাহ, ইবন আবি-উমার, ইবনুন-নাজ্জার, আল-বুহুতী, আর-রুহাইবানী, আয-যারকাশী এবং উসমান ইবন জামি হাদিসটিকে সহীহ বা হাসান অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য বলে গণ্য করেছেন ও এর উপর হুকুম-আহকাম সক্রান্ত ব্যাপারে নির্ভর করেছেন।

 

অবশ্যই ইবনুল-আরাবীর অনিশ্চয়তা প্রকাশের সহিত বলা একটি বক্তব্যের দ্বারা বাকি ৮ জন আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গী ভুল প্রমাণিত হয়ে যাবে না।

 

সিদ্ধান্ত :

 

ইমাম আহমাদ, ইবন কুদামাহ, ইবন-আবি উমার, ইবনুন-নাজ্জার, আয-যারকাশী, আল-বুহুতী, আর-রুহাইবানী ও উসমান ইবন জামি হাদিসটিকে সহীহ বা হাসান হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এবং এটা দাবি করার মতো কোনো প্রমাণ নেই যে তাঁরা এক্ষেত্রে ভুল করেছেন। সুতরাং তাঁদের বিবেচনার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে উক্ত-মর্মে ইমাম আহমাদের আয়িশা (রা.)  হতে সনদ ধরে বর্ণিত রেওয়াতটি সহীহ অথবা হাসান।

 

সুতরাং আয়িশার (রা.)  আলোচ্য হাদিসের যেই রেওয়ায়েতটি ইমাম আহমাদ সনদ ধরে বর্ণনা করেছেন সেটি সহীহ অথবা হাসান। কাজেই এটি প্রমাণিত যে আয়িশা(রা.) ৯ বছর বয়সকে একটি মেয়ের প্রাপ্তবয়স্ক হবার বয়স হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

 

অতএব, আয়িশা(রা.) এর নিজ বক্তব্যের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে নবী এর সাথে তাঁর যখন বাসর হয়, অর্থাৎ ৯ বছর বয়সে তিনি প্রাপ্তবয়স্কা নারী ছিলেন, বালেগা ছিলেন। যেখানে স্বয়ং আয়িশা(রা.) নিজ বাসর হবার বয়সকে প্রাপ্তবয়স্কা বা বালেগা নারীর বয়স বলে অভিহীত করছেন, সেখানে দেড় হাজার বছর পরে কিছু ইসলামবিরোধী নতুন করে তাঁকে “শিশু” বানিয়ে কী অভিযোগ তুললো এতে কিছুই আসে যায় না। এ যেন মায়ের চেয়ের মাসীর দরদ বেশি।

 

 

পাদটীকা


[1] আত-তিরমিযী, আল-জামি (হা/1109) ; আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা (1/476);

আল-বাগভী, শারহুস সুন্নাহ (9/37)।

[2] মাসাইলু হারব কিতাবুত তাহারাহ ওয়াস সালাহ (পৃ/587,হা/1289)

[3] ইবন আব্দিল-হাদী, তানক্বিহুত তাহক্বিক (4/324)।

[4] আত-তিরমিযী, আল-জামি (হা/1109) ; আল-বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা (1/476);

আল-বাগভী, শারহুস সুন্নাহ (9/37)।

[5] মাসাইলু হারব কিতাবুত তাহারাহ ওয়াস সালাহ (পৃ/587,হা/1289)

[6] ইবন আব্দিল-হাদী, তানক্বিহুত তাহক্বিক (4/324)।

[7] ইবন আব্দিল-হাদী, তানক্বিহুত তাহক্বিক (4/324)।

[8] ইবন তাইমিয়াহ,শারহুল উমদাহ(1/555);বুরহানুদ্দিন,আল-মুবদিঈ (2/227)

[9] আব্দুল-কারিম আল-খুদ্বাইর, আল-হাদিসুয যইফ (পৃ/68-75)

[10] ইবন হিব্বান, আছ-ছিকাত (6/184) ; ইবন হাজার, আত-তাক্বরীব (রাবি/1113); আল-ক্বাশিরী, তারিখুর রিক্বক্বাহ (পৃ/68)।

[11] আব্দুল-কারিম আল-খুদ্বাইর, আল-হাদিসুয যইফ (পৃ/94-97)

[12] আব্দুল-কারিম আল-খুদ্বাইর, আল-হাদিসুয যইফ (পৃ/94-97)

[13] ইবন আব্দিল-হাদী, তানক্বিহুত তাহক্বিক (4/324)।

[14] ইবন তাইমিয়াহ,শারহুল উমদাহ(1/555);বুরহানুদ্দিন,আল-মুবদিঈ (2/227)

[15] ইবন আব্দিল-হাদী, তানক্বিহুত তাহক্বিক (4/324)।

[16] ইবন আবি-উমার, আশ-শারহুল কাবির (7/388)

[17] ইবন কুদামাহ, আল-মুগ্বনী (9/404)

[18] আল-ফুরুউ (3/283),আল-মুবদিঈ (6/98),আর-রাওদ্বুল মুরবা'আ (3/86), কাশাফুল ক্বানা (11/253), শারহু দালিলিত তালিব (3/223), মায়ুনাতু উলিন নাহা (9/45), আল-উদ্দাহ(পৃ/393-394)

[19] আব্দুল-কারিম আল-খুদ্বাইর, আল-হাদিসুয যইফ (পৃ/249-299)

[20] আয-যারকাশী,আল-বাহরুল মুহিত (6/169-171) ; ইবনুল আসির,জামিউল উসুল (1/130) ; আর-রাযী,আল-মাহসুল (4/412) ; ইবন কুদামাহ,রাওদ্বাতুন নাযির (1/345);  আল-গাযযালী,আল-মুস্তাসফা(পৃ/129-130)।

[21] মাহমুদ আত-তহান,তাইসিরু মুস্তালাহিল হাদিস (পৃ/184);মুহাম্মদ আবু-শুহবাহ,আল-ওয়াসিত ফি মুস্তালাহিল হাদিস (পৃ/403-404); আল-খুদ্বাইর, শারহু আল-ফিয়াতিল ইরাক্বী (17/35)।

[22] ড. মুহাম্মদ হাসান আব্দুল-গাফফার বলেছেন : "والاحتجاج فرع عن التصحيح" অর্থাৎ "ইহতিজাজ হলো একধরনের তাসহীহ"। (https://shamela.ws/book/37435/251)

[23] ইবন হাজার, আত-তালখিস (3/1269);আস-সামহুদী,ওয়াফাউল ওয়াফা (3/91);আল-উসাইমিন, আশ-শারহুল মুমতা'আ  (15/216); আল-আলবানী,সিলসিলাতুস সাহিহাহ (1/763); তাফসির ইবন কাসির (8/423);মাজদুদ্দিন,আল-মুসাওওয়াদাহ (পৃ/326) ; আবু-ইয়ালা,আল-উদ্দাহ (4/1108);ইবন তাইমিয়াহ, শারহুল উমদাহ কিতাবুস সিয়াম (1/229) & আল-মুস্তাদরাক(2/122)।

[24] ইবনুন নাজ্জার, শারহুল কাওকাব (2/574)

[25] আয-যারকাশী,আন-নুকত (1/450)

[26] ইবনুল আরাবী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী (5/24)

[27] আল-খুদ্বাইর, আল-হাদিসুয যইফ (পৃ/279)

[28] ইবন কুদামাহ, আল-মুগ্বনী (9/404)

[29] ইবন কুদামাহ,আল-কাফী ফি ফিকহিল ইমাম আহমাদ (3/20)

[30] আল-খুদ্বাইর, আল-হাদিসুয যইফ (পৃ/280)

[31] ইবন আবি-উমার, আশ-শারহুল কাবির (7/388)

[32] ইবন আবি উমার,আশ-শারহুল কাবির (6/51)

[33] ইবন আবি উমার, আশ-শারহুল কাবির (2/385)

[34] ইবন আবি উমার, আশ-শারহুল কাবির (4/158)

[35] ইবনুন নাজ্জার, মায়ুনাতু উলিন নাহা শারহুল মুন্তাহা (1/422)

[36] ইবনুন নাজ্জার, মায়ুনাতু উলিন নাহা শারহুল মুন্তাহা (9/45)

[37] আল-খুদ্বাইর, আল-হাদিসুয যইফ (পৃ/283)

[38] আল-বুহুতী,আর-রাওদ্বুল মুরবা'আ (3/86)

[39] আল-বুহুতী,কাশাফুল ক্বানা (11/253)

[40] আল-বুহুতী, আল-মানহুশ শাফাইয়াত (2/574)

[41] আল-বুহুতী,দাক্বাইক্বু উলিন নাহা (1/250-251) ও কাশাফুল ক্বানা (1/444)

[42] শারহুয যারকাশী আলা মুখতাসারিল খিরাক্বী (5/83)

[43] শারহুয যারকাশী আলা মুখতাসারিল খিরাক্বী (3/581)

[44] আর-রুহাইবানী, মাতালিবু উলিন নাহা (5/53)

[45] আর-রুহাইবানী, মাতালিবু উলিন নাহা (1/580)

[46] উসমান ইবন জামি, আল-ফাওয়াইদুল মুন্তাখাবাত (3/281)

[47] উসমান ইবন জামি, আল-ফাওয়াইদুল মুন্তাখাবাত (4/1194)

[48] ইবনুল আরাবী, আরিদ্বাতুল আহওয়াযী (5/24)

[49] আয-যাহাবী, সিইরু আ'লামিন নুবালা (20/199, 201)

[50] শারহুয যারকাশী আলা মুখতাসারিল খিরাক্বী (5/83)

[51] আল-কাফওই, আল-কিলিয়াত (পৃ/125)