মুসলিমদের ঈমানহারা করার উদ্দ্যেশ্যে খ্রিষ্টান প্রচারকরা ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নামে বহু মিথ্যাচার করে থাকেন। তাদের বহু লেখায় এবং ভিডিওতে দেখা যায় তারা ইসলামের সাথে মক্কার মুশরিকদের পুজিত বিভিন্ন দেব-দেবীর নাম জুড়ে দেন। তারা এসব দেবী সম্পর্কিত জাল রেওয়ায়েত ব্যাবহার করেও নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নামে কুৎসা রটনা করেন। অথচ মুহাম্মাদ(ﷺ) এর দাওয়াহ ছিলই মূলত এইসব মিথ্যা দেব-দেবীকে ত্যাগ করে এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর উপাসনা। অর্থাৎ সত্যের সম্পুর্ণ বিপরীত জিনিসটি ইসলামের নামে চালিয়ে দিয়ে মিথ্যাচারে প্রবৃত্ত হয় খ্রিষ্টান প্রচারকরা। কেন তাদের এই অসৎ মনোবৃত্তি? এর পেছনে কি কোনো রহস্য আছে?
খোঁজাখুজি করলে দেখা যায় যে, খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের বাইবেলেই নবীদের মূর্তিপুজার কাহিনী আছে। বাইবেলে এমন ঘটনাও আছে যে, নবীরা মূর্তিপুজায় নের্তৃত্ব দিয়েছে, মানুষকে মূর্তিপুজার দিকে প্ররোচিত করেছে, এমনকি মূর্তিপুজার মন্দির পর্যন্ত গড়েছে!
[[ এই লেখার উদ্যেশ্য কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়কে কষ্ট দেয়া নয়। বরং ইসলামের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের বিরোধিতা করা ও সত্যের প্রচার করা। এই লেখার প্রতিটি তথ্য বাইবেল ও খ্রিষ্ট ধর্মীয় বিভিন্ন উৎস থেকে গৃহিত। ]]
বাইবেলের একজন ভাববাদী বা নবী হচ্ছেন হারোণ [Aaron / হারুন(আ.)]। [1] বাইবেল দাবি করে যে, নবী মুসা(আ.) তুর পাহাড়ে চলে যাবার পরে এই নবী নাকি বনী ইস্রাঈলকে গরুর বাছুর পুজায় নেতৃত্ব দিয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)!! এই নবী নাকি নিজ হাতে বনী ইস্রাঈলকে বাছুরের মূর্তি বানিয়ে দিয়েছে, মূর্তিপুজকদের নিয়ে চড়ুইভাতি উৎসবের ডাক দিয়েছে (নাউযুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ) !!
১ পর্বত থেকে মোশির [মুসা(আ.)] নামতে দেরী হচ্ছে দেখে লোকরা উদ্বিগ্ন হয়ে হারোণকে ঘিরে ধরল| তারা বলল, “মোশি আমাদের পথ দেখিয়ে মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছে কিন্তু আমরা তো এখান থেকে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না যে মোশির কি হয়েছে| সুতরাং এসো, আমরা আমাদের নেতৃত্ব দেবার জন্য দেবতাদের তৈরী করি|”
২ হারোণ তখন ঐ লোকদের বলল, “তোমরা আমার কাছে তোমাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের কানের সোনার দুল এনে দাও|”
৩ সুতরাং সবাই তাদের স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাদের কানের দুল এনে হারোণকে দিল|
৪ হারোণ সবার কাছ থেকে সোনার দুলগুলো নিয়ে সেগুলো গলিযে একটি বাছুরের মূর্তি গড়ল| হারোণ বাটালি দিয়ে বাছুরের মূর্তি গড়ল এবং সোনা দিয়ে মূর্তিটির আচ্ছাদন তৈরী করল| তখন লোকরা বলল, “হে ইস্রায়েল, এই তোমার দেবতা যিনি তোমাকে মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছেন|”
৫ সব দেখার পর হারোণ বাছুরের মূর্তির সামনে একটি বেদী তৈরী করল| এরপর হারোণ ঘোষণা করে জানাল, “আগামীকাল প্রভুর সম্মানার্থে একটি বিশেষ চড়ুই ভাতি উত্সব পালন করা হবে|”
৬ পরদিন খুব ভোরে লোকরা উঠে কিছু পশুকে মেরে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য দিল| তারপর তারা বসে পাত পেড়ে খাওয়া দাওয়া করে আনন্দ স্ফূর্তিতে মেতে উঠল|
[বাইবেল, যাত্রাপুস্তক (Exodus) ৩২ : ১-৬]
ইসলামে কোনো নবী মূর্তিপুজক নন। হারুন(আ.) এর ব্যাপারে আল কুরআনের কাহিনী সম্পূর্ণ ভিন্ন। আল কুরআনের কাহিনীতে বনী ইস্রাঈলকে মূর্তিপুজার দিকে আহ্বান করেছিল সামেরী। হারুন(আ.) নন। নবী হারুন(আ.) বনী ইস্রাঈলকে যথাসাধ্য মূর্তিপুজা থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করেছিলেন। [2]
বাইবেলের আরেকজন নবী হচ্ছেন শলোমন [King Solomon / সুলাইমান(আ.)]। বাইবেলের ৩ টি বই [3] তাঁর লেখা বলে খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে, সেগুলো খ্রিষ্টানদের নিকট ওহী বলে পরিগনিত। এবং খ্রিষ্টানদের নিকট তিনি একজন নবী। [4] বাইবেলের ভাষ্য অনুযায়ী, ওহীপ্রাপ্ত এই নবী একজন মূর্তিপুজক এবং মূর্তিপুজার মন্দির নির্মাণকারী (নাউযুবিল্লাহ) !!!
১ রাজা শলোমন নারীদের সান্নিধ্য পছন্দ করতেন। তিনি এমন অনেক মহিলাকে ভালোবেসে ছিলেন যারা ইস্রায়েলের বাসিন্দা নয়। মিশরের ফরৌণের কন্যা ছাড়াও শলোমন হিত্তীয়, মোয়াবীয়া, অম্মোনীয়া, ইদোমীয়া, সীদোনীযা প্রভৃতি অনেক বিজাতীয রমণীকে ভালোবাসতেন।
২ অতীতে প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, “তোমরা অন্য দেশের লোকদের বিয়ে করবে না, কারণ তাহলে ওরা তাদের মূর্ত্তিকে পূজা করতে তোমাদের প্রভাবিত করবে।” কিন্তু তা সত্ত্বেও শলোমন বিজাতীয় রমনীদের প্রেমে পড়েন।
৩ শলোমনের ৭০০ জন স্ত্রী ছিল। (যারা সকলেই অন্যান্য দেশের নেতাদের কন্যা।) এছাড়াও তাঁর ৩০০ জন ক্রীতদাসী উপপত্নী ছিল। শলোমনের পত্নীরা তাঁকে ঈশ্বর বিমুখ করে তুলেছিল।
৪ শলোমনের তখন বয়স হয়েছিল, স্ত্রীদের পাল্লায় পড়ে তিনি অন্যান্য মূর্ত্তির পূজা করতে শুরু করেন। তাঁর পিতা রাজা দায়ূদের মতো একনিষ্ঠ ভাবে শলোমন শেষ পর্য়ন্ত প্রভুকে অনুসরণ করেন নি।
৫ শলোমন সীদোনীয় দেবী অষ্টোরত এবং অম্মোনীয়দের ঘৃণ্য পাষাণ মূর্ত্তি মিল্কমের অনুগত হন।
৬ অতএব শলোমন প্রভুর সামনে ভুল কাজ করলেন। তিনি পুরোপুরি প্রভুর শরণাগত হননি য়ে ভাবে তাঁর পিতা দায়ূদ হয়েছিলেন।
৭ এমনকি তিনি মোয়াবীয়দের ঘৃণ্য মূর্ত্তি কমোশের আরাধনার জন্য জেরুশালেমের পাশেই পাহাড়ে একটা জায়গা বানিয়ে দিয়েছিলেন। ঐ একই পাহাড়ে তিনি ঐ ভযংকর মূর্ত্তির আরাধনার জন্যও একটি জায়গা [[ অর্থাৎ মন্দির ]] বানিয়ে ছিলেন।
৮ এই ভাবে রাজা শলোমন তাঁর প্রত্যেকটি ভিনদেশী স্ত্রীর আরাধ্য মূর্ত্তির জন্য একটি করে পূজোর জায়গা করে দেন, আর তাঁর স্ত্রীরা ধূপধূনো দিয়ে সেই সব জায়গায় তাদের মূর্ত্তিসমূহের কাছে বলিদান করত।
৯ এই ভাবে রাজা শলোমন প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বরের, কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। সুতরাং প্রভু শলোমনের প্রতি খুব ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি দুবার শলোমনকে দেখা দিয়ে,
১০ তাঁকে অন্য মূর্ত্তির পূজা করতে নিষেধ করা সত্ত্বেও শলোমন সেই নিষেধ মানেন নি।
১১ তখন প্রভু শলোমনকে বললেন, “শলোমন, তুমি চুক্তি ভঙ্গ করেছ। তুমি আমার আদেশ মেনে চলো নি। আমিও কথা দিলাম তোমার রাজত্ব তোমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেব এবং আমি তা তোমার কোন একটি ভৃত্যের হাতে তুলে দেব। কিন্তু য়েহেতু আমি তোমার পিতা দায়ূদকে ভালোবাসতাম আমি তোমার জীবদ্দশায় তোমার রাজ্য তোমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেব না। তোমার সন্তান রাজা না হওয়া পর্য়ন্ত আমি অপেক্ষা করব। আর তারপর আমি তার কাছ থেকে এই রাজত্ব কেড়ে নেব। [5]
খ্রিষ্টানদের বাইবেল অনুযায়ী শলোমন [সুলাঈমান(আ.)] একজন মূর্তিপুজক (নাউযুবিল্লাহ)। একজন মূর্তিপুজককে নবী মানতে খ্রিষ্টানদের কোনো সমস্যা হয় না। অথচ মুহাম্মাদ(ﷺ)কে নিয়ে তাদের কতই না আপত্তি, কতই না মিথ্যাচার!
আল কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী নবী সুলাঈমান(আ.) কখনো কুফরী করেননি, কখনো শির্ক করেননি। অর্থাৎ তিনি কখনো মূর্তিপুজক ছিলেন না। ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে সুলাঈমান(আ.) এর নামে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে, তা সংশোধণ করে দিয়েছে আল কুরআন।
“...আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে।...” [6]
“… প্রত্যেককে আমি হিদায়াত দিয়েছি এবং নুহকে পূর্বে হেদায়েত দিয়েছি। আর তাঁর সন্তানদের মধ্য থেকে দাঊদ, সুলাইমান, আইয়ুব, ইউসুফ, মুসা ও হারুনকে। আর আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দেই। ...
... এটাই আল্লাহর হেদায়েত; তিনি তাঁর বান্দার মধ্যে যাকে চান এই পথে পরিচালিত করেন। কিন্তু তাঁরা যদি শির্ক করত তাহলে তারা যা কিছুই করত, সবই ব্যর্থ হয়ে যেত।” [7]
বাইবেলের আরেকজন নবী হচ্ছেন বিলিয়ম (Balaam)। তিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রত্যাদেশ বা ওহী লাভ করতেন। [8] বিলিয়ম নিজেই দাবি করতেন যে তিনি ঈশ্বরের আদেশের বাইরে কোনো কাজ করেন না। [9] বাইবেল বলে, এই নবীকে মোয়াবের রাজা ইস্রায়েল জাতিকে অভিশাপ দেবার জন্য ভাড়া করেছিল! [10] বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী - নবী বিলিয়ম টাকার লোভে ভ্রান্ত পথে চলেছেন। [11] তিনি মন্দ কাজের পারিশ্রমিক পেলে আনন্দ পেতেন। [12] যিশু বলছেন যে, একজন নবী হওয়া সত্ত্বেও বিলিয়ম ইস্রায়েল জাতিকে পাপে লিপ্ত হওয়া শিক্ষা দিয়েছেন! এর ফলে ইস্রায়েল জাতি মূর্তিপুজা করে, মূর্তির উদ্যেশ্যে কুরবানী করে এবং জেনা-ব্যাভিচার করে!
“‘তবু তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কয়েকটি কথা বলার আছে৷ তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোককে তুমি সহ্য করেছ যাঁরা বিলিয়মের শিক্ষা অনুসারে চলে৷ ইস্রায়েলকে কি করে পাপে ফেলা যায় তা বিলিয়ম শিখিয়েছিল৷ সেই লোকরা প্রতিমার সামনে উৎসর্গ করা খাদ্য খেয়ে ও ব্যভিচার করে পাপ করেছিল।” [13]
এই মূর্তিপুজা ও জেনা-ব্যভিচারকারী ইস্রায়েলীয় ধর্মত্যাগীদেরকে ভাববাদী মোশী [নবী মুসা(আ.)] হত্যা করবার আদেশ দেন। [14]
এভাবেই বাইবেলের নবী বিলিয়ম মানূষকে মূর্তিপুজাসহ বিভিন্ন অপকর্মের দীক্ষা দেন এবং পাপে লিপ্ত করে মৃত্যুদণ্ডের দিকে ঠেলে দেন। কিন্তু ঈশ্বর তো তাকে ওহী প্রদান করতেন ও নবুয়ত দান করেছেন বলে বাইবেলে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। কাজেই খ্রিষ্টানরা তার নবুয়ত অস্বীকার করতে পারে না। খ্রিষ্টানদের কাছে বিলিয়ম মোটেও ভণ্ড নবী নন; তিনি সত্য নবী। কিন্তু ঈশ্বরের ‘নবী’ এত বিশ্রী কাজ করলে কেমন দেখা যায়? এ কারণে খ্রিষ্টানরা এই নবী সম্পর্কে বিশেষ একটি মতবাদ উদ্ভাবন করতে হয়েছে। আর তা হচ্ছে – বিলিয়ম নবী বটে; কিন্তু তিনি একজন ‘পাজি নবী’ (Wicked Prophet)। [15] বাইবেলে ‘পাজি নবী’র ব্যাপারে আরো উল্লেখ আছে। [16] বাইবেলীয় বিশ্বাস অনুযায়ীঃ পাজি- এবং খারাপ ধরণের মানুষও নবী হতে পারে! যেমন বিলিয়ম।
প্রিয় পাঠক একবার ভেবে দেখুন খ্রিষ্টান মিশনারীদের বিশ্বাসের অসারতা ও স্ববিরোধিতা সম্পর্কে। স্রষ্টার প্রেরিত বার্তাবাহক কর্তৃক মূর্তিপুজার অর্থ হচ্ছে সেই স্রষ্টা ভুল মানুষকে নবী হিসাবে নির্বাচিত করেছেন যে তার মূল কাজই করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাইবেলের কয়েক জন নবীকে এই কাজ করতে দেখা যায়। এদের ব্যাপারে খ্রিষ্টানদের কোনো আপত্তি দেখা যায় না। অথচ খ্রিষ্টান প্রচারকরা মিথ্যা অপবাদ প্রদান করে মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নবুয়ত অস্বীকার করার চেষ্টা করে। এবং এমন সব অপবাদ দেবার চেষ্টা করে যেগুলো খোদ তাদের নিজ কিতাবের নবীদের দ্বারা হয়েছে! কোনো সত্য ধর্ম প্রচারের জন্য কি এমন এমন মিথ্যাচার ও স্ববিরোধী আচরণের প্রয়োজন পড়ে? খ্রিষ্টানদের নিজেদের ধর্মগ্রন্থেই যেখানে নবীদের মধ্যে মূর্তিপুজা দেখা যায়, তারা কোন হিসাবে মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নামে এই অভিযোগ তুলে তাঁর নবুয়তকে মিথ্যা প্রমাণ করতে চায়? নাকি তাদের উদ্যেশ্য ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে মুসলিমদের ব্যাস্ত রাখা আর নিজ (বিকৃত)গ্রন্থের নবীদের 'কুকর্ম' ঢেকে দেয়া?
আল কুরআন বলে – আল্লাহর সকল নবী একত্ববাদ (তাওহিদ) প্রচার করেছেন।
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
অর্থঃ “আর তোমার [মুহাম্মাদ(ﷺ)] পূর্বে এমন কোন রাসুল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি [আল্লাহ্] ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদাত কর।’” [17]
আর মুহাম্মাদ(ﷺ) পূর্বের সেই নবীদের মতই একত্ববাদের সেই ধর্মকে [ইসলাম] প্রচার করেছেন।
شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ
অর্থঃ “ তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নুহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি তোমার [মুহাম্মাদ(ﷺ)] প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহিম, মুসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে - তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। ...” [18]
أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ ۖ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ ۗ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا ۖ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَىٰ لِلْعَالَمِينَ
অর্থঃ “এরাই তাঁরা, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন। অতএব তাদের হেদায়েত তুমি [মুহাম্মাদ(ﷺ)] অনুসরণ কর। বলঃ ‘আমি তোমাদের কাছে এর উপর কোন বিনিময় চাই না। এটা তো সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশমাত্র।” [19]
আমরা দলিল-প্রমাণসহ এতক্ষন দেখলাম যে, বাইবেলের নবীগণের মধ্যে রয়েছে খারাপ লোক এবং মূর্তিপুজক। অপর দিকে আল কুরআনের নবীগণ ছিলেন বিশুদ্ধ একত্ববাদের ধারক, বাহক ও প্রচারক। অতএব সত্য সন্ধানীরা সত্য ধর্মকে চিনে নিক।
سُبۡحَـٰنَ رَبِّكَ رَبِّ ٱلۡعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ (١٨٠) وَسَلَـٰمٌ عَلَى ٱلۡمُرۡسَلِينَ (١٨١) وَٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِينَ (١٨٢)
অর্থঃ “তারা যা আরোপ করে তা হতে পবিত্র ও মহান তোমার প্রভু, যিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী। শান্তি বর্ষিত হোক রাসুলগণের প্রতি। আর সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রভু আল্লাহর জন্য।” [20]
তথ্যসূত্রঃ
[1]. “প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে একজন ঈশ্বর করে তুলেছি। আর হারোণ তোমার ভাই হবে তোমার ভাববাদী (prophet)। ”
[বাইবেল, যাত্রাপুস্তক (Exodus) ৭:১]
[2]. “অতঃপর মুসা তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে গেল ক্রুদ্ধ হয়ে। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রভু কি তোমাদেরকে এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি? তাহলে কি প্রতিশ্রুতকাল তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ হয়েছে, নাকি তোমরা চেয়েছো তোমাদের প্রতি আপতিত হোক তোমাদের প্রভুর ক্রোধ, যে কারণে তোমরা আমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে?
তারা [বনী ইস্রাঈল] বললঃ আমরা আপনার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি; বরং আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা। এবং আমরা তা অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করে। তারপর সে (সামেরী) তাদের জন্য একটা গো বাছুরের প্রতিকৃতি বের করে আনল, যার ছিল আওয়াজ। তখন তারা বলল, ‘এটাই তোমাদের ইলাহ (উপাস্য) এবং মুসারও ইলাহ; কিন্তু সে [মুসা] এ কথা ভুলে গেছে’।
তারা কি দেখে না যে, এটা তাদের কোন কথার জবাব দিতে পারে না, আর তাদের কোন ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতাও রাখে না?
হারুন তাদেরকে পূর্বেই বলেছিলঃ হে আমার সম্প্রদায়! এটা দ্বারা তো শুধু তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে; তোমাদের প্রভু দয়াময়, সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার আদেশ মেনে চল।
তারা বলল, ‘আমরা এর উপরই অবিচল থাকব যতক্ষণ না মুসা আমাদের কাছে ফিরে আসে’।”
(আল কুরআন, ত্ব-হা ২০ : ৮৬-৯১)
[3]. প্রবচন, উপদেশক ও শলোমনের পরমগীত (The Proverbs, Ecclesiastes, The Song of Solomon) ।
[4]. “Solomon, Prophet and Writer” (Topical Bible Study)
http://www.dawnbible.com/1962/6206tbs2.htm
[5]. বাইবেল, ১ রাজাবলী (1 Kings) ১১ : ১-১১
[6]. আল কুরআন, বাকারাহ ২ : ১০২
[7]. আল কুরআন, আন’আম ৬ : ৮৪, ৮৮
[8]. বাইবেল, গণনাপুস্তক ২২ : ৮-১২, ২০; গণনাপুস্তক ২৩ : ১৬; গণনাপুস্তক ২৪ : ২-৩, ১৬
[9]. বাইবেল, গণনাপুস্তক ২২ : ১৮, গণনাপুস্তক ২৩ : ২৬; গণনাপুস্তক ২৪ : ১৩
[10]. বাইবেল, গণনাপুস্তক ২২ নং অধ্যায় দ্রষ্টব্য।
[11]. “তাদের ধিক্, কারণ কয়িন (কাবিল) যে পথে গিয়েছিল তারাও সেই পথ ধরেছে৷ তারা বিলিয়মের মতো টাকার লোভে ভ্রান্ত পথে চলেছে৷ আর কোরহের (কারুন) মতো বিদ্রোহী হয়ে ধ্বংসের পথে চলেছে৷ ”
[বাইবেল, যুদ (Jude) ১ : ১১]
[12]. “এই ভণ্ড শিক্ষকরা সোজা পথ ছেড়ে ভুল পথে ভ্রমণ করছে৷ তারা বিয়োরের পুত্র বিলিয়মকে অনুসরণ করে, যিনি মন্দ কাজের পারিশ্রমিক পেলে আনন্দ পেতেন।”
[বাইবেল, ২ পিতর (2 Peter) ২ : ১৫]
[13]. বাইবেল, প্রত্যাদেশ (Revelation) ২ : ১৪
[14]. বাইবেল, গণনাপুস্তক ২৫ : ১-৮ দ্রষ্টব্য।
[15]. “Who was Balaam in the Bible” (Got Questions)
https://www.gotquestions.org/Balaam-in-the-Bible.html
[16]. “29 Bible verses about Wicked Prophets”
https://bible.knowing-jesus.com/topics/Wicked-Prophets
[17]. আল কুরআন, আম্বিয়া ২১ : ২৫
[18]. আল কুরআন, শুরা ৪২ : ১৩
[19]. আল কুরআন, আন’আম ৬ : ৯০
[20]. আল কুরআন, আস সফফাত ৩৭ : ১৮০-১৮২