কখনো ভেবে দেখেছেন, মহান আল্লাহ কোন ফেরেশতাকে নবী হিসেবে না পাঠিয়ে কেন মানুষদের পাঠিয়েছেন? উত্তরটা খুব সহজ। যাতে করে আমরা সহজেই তাঁদেরকে অনুসরণ করতে পারি। নিজের জীবনটাকে তাঁদের মতো করে সাজাতে পারি। তাঁরা আমাদের মতোই মায়ের গর্ভ থেকে জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, বিয়ে করেছেন, সন্তানের পিতা হয়েছেন। তারপর, আল্লাহর ফয়সালা অনুযায়ী মৃত্যুবরণ করেছেন। আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো ব্যবহার করে ইসলামবিরোধীরা বিশেষ করে খ্রিষ্টান মিশনারীরা দাবি করে যেঃ মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু দ্বারা নাকি প্রমাণ হয় যে তিনি আল্লাহর নবী নন এবং তাঁর মৃত্যু আল্লাহর শাস্তির কারণে হয়েছিল (নাউযুবিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ)। সুনির্দিষ্টভাবে তাদের অভিযোগগুলো হচ্ছে—
◘ সহীহ বুখারীসহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী এক ইহুদি মহিলার দেয়া বিষের প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু হয়েছিল। একজন নবীকে কী করে কোন মানুষ হত্যা করতে পারে?
◘ কুরআনে বলা হয়েছে যেঃ যদি মুহাম্মাদ(ﷺ) আল্লাহর নামে নিজে থেকে কোন কিছু রচনা করতেন, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাঁর aorta(ইংরেজি অনুবাদ অনুযায়ী) কেটে দেবেন। বুখারীর কিছু ইংরেজি অনুবাদ অনুযায়ী মৃত্যুকালে বিষের প্রতিক্রিয়ায় রাসুল(ﷺ) এর মনে হচ্ছিল যেন তাঁর aorta কর্তিত হচ্ছে। অতএব এ থেকে প্রমাণিত হয় যে মুহাম্মাদ(ﷺ) নিজে থেকে আল্লাহর নামে কোন কিছু উদ্ভাবন করে প্রচার করেছেন এবং পরিনামে তাঁকে আল্লাহ শাস্তি দিয়েছেন ও তাঁর মৃত্যু ঘটেছে। (নাউযুবিল্লাহ, আসতাগসিরুল্লাহ)।
প্রথমে আমরা দেখে নিই কিভাবে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজি মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু হয়েছিল।
وَقَالَ يُونُسُ عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ عُرْوَة: قَالَتْ عَائِشَةُ رضى الله عنها : "كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ : " يَا عَائِشَةُ! مَا أَزَالُ أَجِدُ أَلَمَ الطَّعَامِ الَّذِي أَكَلْتُ بِخَيْبَرَ، فَهَذَا أَوَانُ وَجَدْتُ انْقِطَاعَ أَبْهَرِي مِنْ ذَلِكَ السَّمِّ ".
অর্থঃ ইউনুস(র.) যুহরী ও ‘উরওয়াহ(র.) সুত্রে বলেন, আয়িশা(রা.) বলেছেন, নবী(ﷺ) যে রোগে ইন্তিকাল করেন সে সময় তিনি বলতেন, “হে ‘আয়িশা! আমি খাইবারে (বিষযুক্ত) খাবার খেয়েছিলাম আমি সর্বদা তার যন্ত্রণা অনুভব করছি । আর এখন মনে হচ্ছে বিষক্রিয়ার ফলে আমার শিরাগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। [1]
নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যুর ব্যাপারে ইসলামবিরোধীদের অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাক এগুলোর আদৌ কোন সত্যতা আছে কিনা।
একজন নবীকে কী করে কোন মানুষ হত্যা করতে পারে?
ইসলামবিরোধীরা বিভিন্ন হাদিস ও সিরাত গ্রন্থ থেকে নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যুসংক্রান্ত বিবরণগুলো উল্লেখ করলে অনেক সময় মুসলিমরাও চমকে ওঠে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে বর্তমান যুগে মুসলিমদের একটা বড় অংশের ভেতর ইসলামের বেসিক জ্ঞানগুলোও নেই। ইসলাম ও নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) সম্পর্কে তাদের জ্ঞান একেবারে ভাসা ভাসা, যদিও ইসলামের প্রতি তাদের ভালোবাসার কোন অভাব নেই। অধিকাংশ মুসলিমেরই সারা জীবনেও একবার অর্থসহ কুরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া নেই, সারা জীবনেও নবী(ﷺ) এর একটা সিরাত(জীবনী) গ্রন্থ পড়া নেই। তাদের জানা নেই যে কিভাবে আমাদের নবী(ﷺ) এর মৃত্যু হয়েছিল। তাই যখন ইসলামবিরোধীরা হাদিসের বই থেকে দেখায় — বিষ প্রয়োগে নবী(ﷺ) এর মৃত্যু হয়েছিল তখন অনেক সরলপ্রাণ মুসলিমই অজ্ঞতার কারণে বিব্রত হয়ে যান। চমকের সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই তারা ইসলামবিরোধী এক্টিভিস্টদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে থাকেঃ কী করে আল্লাহর কোন নবীকে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা যেতে পারে? আল্লাহর নবীকে কিভাবে কোন মানুষ খুন করে? তিনি যদি সত্যিই আল্লাহর নবী হয়ে থাকেন, তবে আল্লাহ কেন তাঁকে রক্ষা করলেন না?
এখানে ইসলামবিরোধীরা “নবী কিভাবে হয়” –এ ব্যাপারে নিজস্ব একটা স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যেটা অনেক সরলপ্রাণ মুসলিম ধরতে পারেন না। “কী করে আল্লাহর কোন নবীকে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা যেতে পারে?” – এই প্রশ্ন দ্বারা ইসলামবিরোধীরা একটা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে যেঃ কোন নবীই আল্লাহর পথে শহীদ হতে পারে না। অথচ এটা এমন একটা স্ট্যান্ডার্ড যার সাথে কুরআন ও বাইবেল কোন গ্রন্থই একমত না। রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুর ব্যাপারে অনলাইন ও অফলাইনে অপপ্রচার চালায় মূলত খ্রিষ্টান প্রচারকরা। অথচ খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল বলছে যেঃ অতীতেও অনেক নবীকে অবিশ্বাসীরা হত্যা করেছিল। নাস্তিকরা তো স্রষ্টাতেই বিশ্বাসী না। ‘নবী-রাসুল’ বলে কোন কিছুও তাদের অভিধানে নেই। কাজেই কিভাবে একজন মানুষ নবী হয় অথবা কী কারণে একজন নবী হতে পারে না – এমন কিছু বলার ব্যাপারে খেয়াল-খুশী ব্যতিত তাদের কোন নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। দলিলপ্রমাণবিহীন খেয়াল-খুশীর কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই। অপরদিকে খ্রিষ্টান মিশনারীদের এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে, আর তা হচ্ছে বাইবেল। আমি বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old Testament) ও নতুন নিয়ম(New Testament) উভয় অংশ থেকেই নবীদের শহীদ হবার অনেক উদাহরণ দেখাতে পারব। যেমনঃ
“ঈশ্বর লোকদের মন তাঁর প্রতি ফিরিয়ে আনার জন্য ভাববাদী(নবী/prophet)দের পাঠালেন। কিন্তু লোকরা সদুপদেশে কর্ণপাত পর্য়ন্ত করলো না। তারপর ঈশ্বরের আত্মা যাজক যিহোয়াদার পুত্র সখরিয়র ওপর ভর করলো। তিনি লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “ঈশ্বর এই কথা বলেছেন: ‘তোমরা কেন প্রভুর বিধিসমূহ ও আজ্ঞা অমান্য করছো? এভাবে তোমরা কখনোই কোনো কাজে সফল হতে পারবে না। তোমরা প্রভুকে ত্যাগ করেছো, তাই তিনিও তোমাদের ত্যাগ করেছেন।” কিন্তু বিচারবুদ্ধিহীন লোকরা তখন একসঙ্গে চক্রান্ত করলো এবং রাজা যখন তাদের সখরিয় [Zechariah/যাকারিয়া(আ.)]কে হত্যা করতে আদেশ দিলেন, তারা পাথর ছুঁড়ে মন্দির চত্বরেই তাঁকে হত্যা করলো।” [2]
"আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আমি কী করেছিলাম। ঈষেবল যখন প্রভুর ভাববাদী(নবী/prophet)দের হত্যা করছিলেন, আমি তখন তাদের ৫০ জন করে দুভাগে মোট ১০০ জন ভাববাদীকে দু’টো গুহায় লুকিয়ে রেখে নিয়মিত খাবার ও জল দিয়েছিলাম। ” [3]
“সেখানে একটি গুহার ভেতরে এলিয় [ইলইয়াস(আ.)/Elijah] রাত্রি বাস করলেন। সে সময় প্রভু এলিয়র সঙ্গে কথা বললেন, “এলিয় তুমি এখানে কেন?” এলিয় উত্তর দিলেন, “প্রভু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, আমি সব সময় সাধ্য মতো তোমার সেবা করেছি। কিন্তু ইস্রায়েলের লোকরা তোমার সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ করে তোমার বেদী ধ্বংস করে ভাববাদী (নবী/prophet)দের হত্যা করেছে। এখন আমিই একমাত্র জীবিত ভাববাদী আর তাই ওরা আমাকেও হত্যার চেষ্টা করছে।” [4]
“তারা তোমার বিরুদ্ধে গেল এবং তোমার শিক্ষামালা ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারা তোমার ভাববাদী(নবী/prophet)দেরও হত্যা করল, যারা তাদের সতর্ক করে তোমার কাছে ফেরাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষরা তোমার বিরুদ্ধে বীভত্স সব কাজ করলো। " [5]
"মেয়েটি তার মায়ের পরামর্শ অনুসারে বলল, ‘থালায় করে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের[ইয়াহইয়া(আ.)/John the Baptist] মাথাটা আমায় এনে দিন।’ যদিও রাজা হেরোদ এতে খুব দুঃখিত হলেন, তবু তিনি শপথ করেছিলেন বলে এবং যাঁরা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিলেন তারা সেই শপথের কথা শুনেছিলেন বলে সম্মানের কথা ভেবে তিনি তা দিতে হুকুম করলেন। তিনি লোক পাঠিয়ে কারাগারের মধ্যে যোহনের [ইয়াহইয়া(আ.)] শিরশ্ছেদ করালেন। এরপর যোহনের মাথাটি থালায় করে নিয়ে এসে সেই মেয়েকে দেওয়া হলে, সে তা নিয়ে তার মায়ের কাছে গেল। তারপর যোহনের অনুগামীরা এসে তাঁর দেহটি নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন। আর তাঁরা যিশুর কাছে গিয়ে সব কথা জানালেন। ” [6]
[যিশু বললেন] “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা ভাববাদীদের জন্য স্মৃতিসৌধ গাঁথো ও ঈশ্বর ভক্ত লোকদের কবর সাজাও, আর বলে থাক, ‘আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে থাকতাম, তবে ভাববাদীদের হত্যা করার জন্য তাদের সাহায্য করতাম না।’ এতে তোমরা নিজেদের বিষয়েই সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, ভাববাদীদের যারা হত্যা করেছিল তোমরা তাদেরই বংশধর। তাহলে যাও তোমাদের পূর্বপুরুষেরা যা শুরু করে গেছে তোমরা তার বাকি কাজ শেষ করো। সাপ, বিষধর সাপের বংশধর! কী করে তোমরা ঈশ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাবে? তোমরা দোষী প্রমাণিত হবে ও নরকে যাবে। তাই আমি তোমাদের বলছি, আমি তোমাদের কাছে যে ভাববাদী, জ্ঞানীলোক ও শিক্ষকদের পাঠাচ্ছি তোমরা তাদের কারো কারোকে হত্যা করবে, আর কাউকে বা ক্রুশে দেবে, কাউকে বা তোমরা সমাজ-গৃহে চাবুক মারবে। এক শহর থেকে অন্য শহরে তোমরা তাদের তাড়া করে ফিরবে। এই ভাবে নির্দোষ হেবলের রক্তপাত থেকে শুরু করে বরখায়ার পুত্র সখরিয় [যাকারিয়া(আ.)/Zechariah], যাকে তোমরা মন্দিরের পবিত্র স্থান ও যজ্ঞবেদীর মাঝখানে হত্যা করেছিলে, সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত যত নির্দোষ ব্যক্তির রক্ত মাটিতে ঝরে পড়েছে, সেই সমস্তের দায় তোমাদের ওপরে পড়বে। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এই যুগের লোকদের ওপর ঐ সবের শাস্তি এসে পড়বে।’ ‘হায় জেরুশালেম, জেরুশালেম! তুমি, তুমিই ভাববাদীদের [নবী/prophet] হত্যা করে থাকো, আর তোমার কাছে ঈশ্বর যাদের পাঠান তাদের পাথর মেরে থাকো। মুরগী যেমন তার বাচ্চাদের ডানার নিচে জড়ো করে, তেমনি আমি তোমার লোকদের কতবার আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি, কিন্তু তোমরা রাজী হও নি। ” [7]
বাইবেলের পুরাতন নিয়ম(Old Testament) অংশটিকে ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায় নিজ ধর্মগ্রন্থ হিসাবে মান্য করে। আমরা উপরে দেখলাম যে বাইবেলের অনেক জায়গাতেই ইহুদিদের দ্বারা নবী হত্যা করার ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে। কাউকে হত্যা করা হলে সে নবী হতে পারে না—খ্রিষ্টান প্রচারকদের এই কথাকে সত্য ধরা হলে বাইবেলের অনেক নবীই মিথ্যা হয়ে যান!
বাইবেল অনুযায়ী যাকারিয়া(আ.) {সখরিয়/Zechariah}, ইয়াহইয়া(আ.) {যোহন বাপ্তাইজক/John The Baptist} সহ অনেক নবী-রাসুলকে হত্যা করা হয়েছে। যে সব খ্রিষ্টান প্রচারক মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তারা কিন্তু এই ব্যাপারগুলো বেমালুম চেপে যান! যাকারিয়া(আ.), ইয়াহইয়া(আ.) প্রমুখ নবীকে অবিশ্বাসীরা হত্যা করা সত্ত্বেও খ্রিষ্টান প্রচারকরা তাঁদেরকে ঠিকই নবী বলে বিশ্বাস করেন। অথচ সেই একই প্রচারকরা মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে তাঁর নবুয়ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই হচ্ছে তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।
আল কুরআনও এ ব্যাপারে একমত যে—অতীতেও বহু নবীকে হত্যা করা হয়েছে। আল কুরআনে ইহুদিদের নবী হত্যা করার জন্য ভৎর্সনা করা হয়েছে।
“...বলে দাওঃ যদি তোমরা [ইহুদিরা] বিশ্বাসীই ছিলে, তবে তোমরা ইতিপূর্বে কেন আল্লাহর নবীদের হত্যা করেছিলে?” [8]
“ ...এমন হলো এ জন্য যে, তারা [ইহুদিরা] আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালঙ্ঘণকারী।” [9]
নবী হলেই যে তাঁকে কেউ হত্যা করতে পারবে না—এ কথা প্রকৃতপক্ষে কোন জায়গায় বলা নেই। আমরা মুসলিম হিসাবে বিশ্বাস করি যে আল্লাহর অনেক নবীকেই যুগে যুগে জালিমরা হত্যা করেছে। সেইসব নবীরা আল্লাহর পথে প্রাণ দিয়েছেন; তাঁরা শহীদ হয়েছেন।
এ ছাড়া একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ইসলামবিরোধীরা এড়িয়ে যায় আর তা হচ্ছেঃ বিষ প্রয়োগ করার সাথে সাথে কিন্তু নবী(ﷺ) মারা যাননি। বরং তিনি মারা গিয়েছিলেন বিষ প্রয়োগের ঘটনার প্রায় চার বছর পর। [10] তিনি মারা গিয়েছিলেন মক্কা বিজয়ের পরে, বিদায় হজের পরে, আরবের গোত্রগুলো দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করার পরে তথা তাঁর মিশন শেষ হবার পরে। বিষ প্রয়োগের ফলে অন্য সাহাবীর মৃত্যু ঘটে কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় নবী(ﷺ) সে সময়ে মারা যান না বরং তাঁর মিশন শেষ করার পরে মারা যান। এর দ্বারা বরং তাঁর নবুয়তের সত্যতা আরো বেশি করে প্রমাণিত হয়, সুবহানাল্লাহ। বিষ প্রয়োগ করার এত পরে এর ক্রিয়া করা নবী(ﷺ) এর একটি মুজিজা এবং আল্লাহ তা’আলা তার নবী(ﷺ)কে তাঁর দায়িত্ব সমাপ্ত করা পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং তাঁকে সম্মানিত করার জন্য শহীদের মর্যাদা দান করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রা.), যুহরী(র.) এবং আরো বিদ্বানদের থেকে এই অভিমত বর্ণিত হয়েছে। [11]
এ ছাড়া বিষ প্রয়োগের সেই ঘটনার বিবরণ লক্ষ্য করলে তাঁর নবুয়তের সত্যতা আরো বেশি করে ফুটে ওঠে। সুনান আবু দাউদ থেকে ঘটনাটির একটি বিবরণ উল্লেখ করছি---
“খায়বারের অধিবাসী এক ইহুদি মহিলা বিষ মিশিয়ে একটা বকরী ভুনা করে তা রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে হাদিয়া দেয়। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) একটি রান নিয়ে খাওয়া শুরু করলেন এবং তাঁর কতিপয় সাহাবীও তাঁর সঙ্গে খেতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ পর রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাদেরকে বললেনঃ তোমরা হাত গুটিয়ে নাও।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ঐ ইহুদি মহিলাকে লোক মারফত ডেকে এনে বললেন, “তুমি কি এ বকরীর সঙ্গে বিষ মিশিয়েছ?”
সে বলল, “আপনাকে কে সংবাদ দিয়েছে?”
তিনি বললেন, “আমার হাতের এই রান আমাকে সংবাদ দিয়েছে।”
সে বলল, “হ্যাঁ”।
তিনি বললেন, “এরূপ করার উদ্যেশ্য কী?”
সে বলল, “আমি ভেবেছি যদি তিনি সত্যিই নবী হন তাহলে বিষ তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি নবী না হন তবে আমরা তার থেকে ঝামেলামুক্ত হব।”
অতঃপর রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাকে কোন প্রকার শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করে দিলেন।
যে সব সাহাবী তাঁর সঙ্গে বকরীর গোশত খেয়েছেন তাদের কেউ কেউ মারা গেলেন [12] এবং রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বকরীর গোশত খাবার প্রতিক্রিয়া প্রতিহত করার জন্য তাঁর বাহুদ্বয়ের মাঝখানে রক্তমোক্ষণ (শিঙ্গা লাগানো / cupping) করালেন। ... ” [13]
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বিষযুক্ত বকরীর রানটি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে বিষের ব্যাপারে অবহিত করেছিল – যা তাঁর একটি মুজিজা, সুবহানাল্লাহ। যে সব খ্রিষ্টান মিশনারী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নবুয়ত মিথ্যা প্রমান করার জন্য এই বিবরণ উল্লেখ করেন, তাদের জন্য এটা এক চপেটাঘাত। তাদের কী দুর্ভাগ্য যে, মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নবুয়ত মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য তারা যে বিবরণ উল্লেখ করেন তাতেই তাঁর একটি মুজিজা(miracle) দেখা যাচ্ছে!
কোন কোন খ্রিষ্টান মিশনারী(যেমন ডেভিড উড) বলতে চান যে--মুহাম্মাদ(ﷺ) বিষ প্রয়োগের চার বছর পর মারা গিয়েছেন এতে কোন অলৌকিকতা নেই কেননা তিনি খুব কম বিষ গ্রহণ করেছেন ফলে তাঁর তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়নি বরং তাঁর স্লো পয়জনিং হয়েছিল।
এর জবাবে আমরা তাদের প্রশ্ন করব—তিনি কেন খুব কম বিষ গ্রহণ করেছেন?
এর উত্তর হবে—বিষযুক্ত বকরীর রানটি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে বিষের ব্যাপারে অবহিত করেছিল; যার ফলে তিনি দ্রুত গোশত খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং অন্যদেরকেও খাওয়া বন্ধ করতে বলেন। রানটি বিষের ব্যাপারে অবহিত করার আগে খুব সামান্য গোশতই তিনি খেয়েছিলেন।
কাজেই আমরা যদি খ্রিষ্টান মিশনারীদের কথাকেও বিবেচনা করি যে - মুহাম্মাদ(ﷺ) খুব কম বিষ গ্রহণ করেছেন ফলে তাঁর তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়নি --- তবুও এর মাঝে তাঁর নবুয়তের সত্যতা নিহিত আছে। মুজিজার দ্বারা তিনি বকরীর রানের কাছ থেকে বিষের সংবাদ পেয়েছিলেন বলেই তো তিনি দ্রুত খাওয়া বন্ধ করেছিলেন এবং অন্যদেরকেও খাওয়া বন্ধ করতে বলেছিলেন।
কেউ যদি এরপরেও অপতর্ক করে বলতে চায়—ঐ সামান্য বিষটুকুও বা কেন তিনি গ্রহণ করলেন? বকরীর রানটি কেন খাওয়া শুরুর আগেই তাঁকে বিষের ব্যাপারে অবহিত করল না?
এর জবাবে আমরা বলব-- এটাই আল্লাহর ফায়সালা ছিল যে তিনি তাঁর শেষ নবীকে শহীদের মর্যাদায় ভূষিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী। এর দ্বারা শেষ নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে—তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল, সর্বশেষ নবী এবং একজন শহীদ।
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ(রা.) বলেনঃ “আমাকে যদি ৯ বার আল্লাহর নামে শপথ করতে হয় যে - আল্লাহর রাসুল(ﷺ)কে হত্যা করা হয়েছে, তবে তা আমার নিকট ১ বার শপথ করার চেয়ে প্রিয় হবে। কারণ আল্লাহ তাঁকে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] একজন নবী বানিয়েছেন এবং একজন শহীদ বানিয়েছেন।” [14]
এমনকি ঐ বিষের প্রভাবে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) যদি চার বছর পর মারা না গিয়ে ঘটনাস্থলেই তাৎক্ষণিকভাবে মারা যেতেন, তাহলেও সেটা তাঁর নবুয়তকে প্রশ্নবিদ্ধ করত না। আগেই আলোচনা করা হয়েছে যে, নবীদেরকেও হত্যা করা যেতে পারে, অতীতে বহু নবী আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছেন এ ব্যাপারে কুরআন ও বাইবেল উভয় গ্রন্থই একমত। সেই ইহুদি মহিলা বলেছিল যেঃ “আমি ভেবেছি যদি তিনি সত্যিই নবী হন তাহলে বিষ তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না”, অথচ এটা ছিল ঐ মহিলার নিজের বানানো নবুয়তের স্ট্যান্ডার্ড। তাদের নিজ কিতাবই সাক্ষ্য দেয় যে অতীতেও নবীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। বিষের অথবা অন্য যে কোন কিছুর ভৌত গুণাগুণ অন্য সকল মানুষের মত নবীদের দেহেও ক্রিয়া করতে পারে – যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রক্ষা করেন, যত দিন ইচ্ছা বাঁচিয়ে রাখেন, যাকে ইচ্ছা শহীদের মর্যাদা দেন। ওহুদের যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে এক সময় গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যেঃ মুহাম্মাদ(ﷺ) নিহত হয়েছেন। কিন্তু এটা শুনেও সাহাবায়ে কিরাম(রা.)গণ রাসুল(ﷺ) এর নবুয়ত নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেননি।
একজন মুহাজির সাহাবী একজন আনসারী সাহাবীকে উহুদের যুদ্ধে দেখেন যে, তিনি আহত হয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছেন এবং রক্ত ও মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছেন। তিনি উক্ত আনসারীকে বললেনঃ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) যে শহীদ হয়েছেন তা কি আপনি জানেন?
তিনি উত্তরে বলেনঃ “যদি এ সংবাদ সত্য হয়ে থাকে তাহলে তিনি তাঁর কাজ করে গেছেন। এখন আপনারা সবাই আপনাদের দ্বীনের(ইসলামের) উপরে নিজের জীবন কুরবান করুন।” [15]
আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে যে, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) লক্ষ্য করেছিলেন যে ইহুদিরা তাঁর নবুয়তে সন্দেহ পোষণ করছে। যে দিন তারা তাঁর খাবারে বিষ মিশিয়েছিল, সেদিন ঘটনাস্থলেই তিনি তাদের নিকট তাঁর নবুয়তের সত্যতা প্রমাণ করে এসেছিলেন।
খাইবার যখন বিজয় হয়, তখন রাসুলুল্লাহ(ﷺ) -এর নিকট হাদীয়া স্বরূপ একটি (ভুনা) বকরী পাঠানো হয়। এর মধ্যে ছিল বিষ।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেনঃ এখানে যত ইহুদি আছে আমার কাছে তাদের একত্রিত কর। তাঁর কাছে সকলকে একত্র করা হল। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাদের উদ্দেশে বললেনঃ আমি তোমাদের নিকট একটি ব্যাপারে জানতে চাই, তোমরা কি সে বিষয়ে আমাকে সত্য কথা বলবে?
তারা বললঃ হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম[মুহাম্মাদ(ﷺ) এর উপনাম]। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ তোমাদের পিতা কে? তারা বললঃ আমাদের পিতা অমুক। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ তোমরা মিথ্যে বলেছ বরং তোমাদের পিতা অমুক। তারা বললঃ আপনি সত্য বলেছেন ও সঠিক বলেছেন। এরপর তিনি বললেনঃ আমি যদি তোমাদের নিকট আর একটি প্রশ্ন করি, তাহলে কি তোমরা সেক্ষেত্রে আমাকে সত্য বথা বলবে? তারা বললঃ হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম যদি আমরা মিথ্যে বলি তবে তো আপনি আমাদের মিথ্যা জেনে ফেলবেন, যেমনিভাবে জেনেছেন আমাদের পিতার ব্যাপারে। তখন রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাদের বললেনঃ জাহান্নামী কারা? তারা বললঃ আমরা সেখানে অল্প কয়দিনের জন্যে থাকব। তারপর আপনারা আমাদের স্থানে যাবেন। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বললেনঃ তোমরাই সেখানে অপমানিত হয়ে থাকবে। আল্লাহর কসম! আমরা কখনও সেখানে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হবো না। এরপর তিনি তাদের বললেনঃ আমি যদি তোমাদের কাছে আর একটি বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে কি তোমরা সে বিষয়ে আমার কাছে সত্য কথা বলবে? তারা বললঃ হ্যাঁ। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি এ বকরীর মধ্যে বিষ মিশিয়েছ? তারা বললঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কিসে তোমাদের এ কাজে প্রেরণা যুগিয়েছে? তারা বললঃ আমরা চেয়েছি, যদি আপনি মিথ্যাচারী হন, তবে আমরা আপনার থেকে রেহাই পেয়ে যাব। আর যদি আপনি নবী হন, তবে এ বিষয় আপনার কোন ক্ষতি করবে না। [16]
আমরা দেখতে পেলাম যে, বকরীতে বিষ মেশানোর দিন মুহাম্মাদ(ﷺ) ঘটনাস্থলেই সকল ইহুদিকে ডেকে অলৌকিক উপায়ে তাঁদের পিতার নাম সঠিকভাবে বলে দিয়েছিলেন। এমনকি ইহুদিরাও স্বীকার করছিল যে তারা যদি মিথ্যা বলে তবে মুহাম্মাদ(ﷺ) তা আল্লাহর সাহায্যে বুঝে যাবেন। অর্থাৎ তাঁর নবুয়তের সত্যতা তাদের সামনেও ফুটে উঠেছিল [যদিও বংশগত হিংসা তাদের সকলকে ঈমান আনতে দেয়নি]। মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নবুয়ত নিয়ে সন্দিহান ছিল বলে তারা বিষ প্রয়োগ করে এর ‘পরীক্ষা’ নিতে চাইছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) তাদের এ সন্দেহও দূর করে দিয়ে এসেছিলেন। তাদের কোন ওজর-আপত্তির সুযোগ তিনি রাখেননি। যারা তাঁকে বিষ খাইয়ে মারতে চাইলো, তাঁদেরকেই ডেকে এভাবে সন্দেহ নিরসন করে দিলেন তিনি, কোন প্রকার শাস্তি দিলেন না। সুবহানাল্লাহ। অথচ এই মানুষটিকেই ইসলামবিদ্বেষীরা নির্দয়, নিষ্ঠুর হিসাবে চিত্রিত করতে চায়।
এত কিছু, এত প্রমাণের পরেও কোন বিবেকসম্পন্ন মানুষ কিভাবে মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নবুয়তের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে পারে?
◘ নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) কি আল্লাহর শাস্তির কারণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন?
এ প্রসঙ্গে আল কুরআনের যে আয়াতগুলো ইসলামবিরোধীরা উদ্ধৃত করে থাকে সেগুলো হচ্ছেঃ
وَلَوۡ تَقَوَّلَ عَلَيۡنَا بَعۡضَ ٱلۡأَقَاوِيلِ (٤٤) لَأَخَذۡنَا مِنۡهُ بِٱلۡيَمِينِ (٤٥) ثُمَّ لَقَطَعۡنَا مِنۡهُ ٱلۡوَتِينَ (٤٦)
অর্থঃ “যদি সে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো, তবে অবশ্যই আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তাঁর জীবন-ধমনী(শাহরগ)।” [17]
এখানে বলা হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি আল্লাহর নামে নিজে থেকে কোন কথা রচনা করতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) বা জীবন-ধমনী কেটে দিতেন। এখানে মূল আরবিতে الْوَتِينَ শব্দটি এসেছে।
কয়েকটি ইংরেজি অনুবাদে [যেমনঃ আহমেদ আলী, হাবিব শাকির, সহীহ ইন্টারন্যাশনাল] দেখা যাচ্ছে যে, الْوَتِينَ এর অনুবাদ করা হয়েছে ‘Aorta’। বুখারীর কিছু ইংরেজি অনুবাদেও দেখা যাচ্ছে যে বিষ প্রয়োগের ফলে রাসুল(ﷺ) এর মনে হচ্ছিল যে তাঁর aorta কেটে যাচ্ছে। এই ইংরেজি অনুবাদগুলো দেখিয়ে ইসলামবিরোধীরা প্রমাণের চেষ্টা করে যে রাসুল(ﷺ) এর উপর আল্লাহ শাস্তি বাস্তবায়ন করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)।
কিন্তু ইসলামবিরোধীদের এই অভিযোগের পেছনে কিছু শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। যে হাদিসটিতে রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুযন্ত্রনার উল্লেখ আছে, তার আরবি ইবারত আমি ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি। সেখানে মূল আরবি ইবারতে বর্ণনা করা হয়েছে যেঃ রাসুল(ﷺ) এর মনে হচ্ছিল যে তাঁর ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) কেটে ফেলা হচ্ছে [[فَهَذَا أَوَانُ وَجَدْتُ انْقِطَاعَ أَبْهَرِي مِنْ ذَلِكَ السَّمِّ ]] । সুরা হাক্কাহ এর আয়াতটিতে বলা হচ্ছে যে মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি আল্লাহর নামে নিজে থেকে কোন কথা রচনা করতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) বা জীবন-ধমনী কেটে দিতেন।
অর্থাৎ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, কোন কোন অনুবাদে এক শব্দ থাকলেও মূল আরবিতে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ আছে। আমরা আরো দেখলাম ‘আবহার’ ও ‘ওয়াতিন’ মোটেও এক জিনিস নয়। মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করতেন (নাউযুবিল্লাহ), তাহলে আল্লাহ শাস্তিস্বরূপ তাঁর ডান হাত ধরে ‘ওয়াতিন’ কেটে দিতেন। আর বিষের যন্ত্রণায় মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মনে হয়েছে যে তাঁর ‘আবহার’ কেটে ফেলা হচ্ছে।
তা ছাড়া আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করলে শাস্তি হিসাবে ডান হাত ধরে ‘ওয়াতিন’ কেটে দেবার কথা বলা আছে ; অথচ রাসুল(ﷺ) মৃত্যুর আগে বিষের কারণে কষ্ট হয়েছে। কেউ তাঁর ডান হাত ধরে ‘ওয়াতিন’ কেটে যবাই করে ফেলেনি। উভয় ঘটনায় বিশাল তফাত রয়েছে।
যেহেতু ইংরেজি বুখারীর অনুবাদেও aorta ব্যবহার করা হয়েছে এ কারণে ইসলামবিরোধী প্রচারকরা বেছে বেছে কুরআনের কিছু অনুবাদ দেখায় যেগুলোতে aorta শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ আমরা দেখেছি যে মূল আরবিতে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ আছে। ইতিমধ্যেই দেখানো হয়েছে যে বাংলা অনুবাদগুলোর অনেকগুলোতেই বুখারীর হাদিসটিতে ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) এর অনুবাদ ‘শিরা’ দিয়ে করা হয়েছে। রাসুল(ﷺ) এর সুবিখ্যাত জীবনীগ্রন্থ ‘আর রাহিকুল মাখতুম’ এর বাংলা অনুবাদেও আলোচ্য ঘটনায় ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) এর অনুবাদ ‘শিরা’ দিয়ে করা হয়েছে। [18] কাজেই এখানে বাংলা অনুবাদ দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কিছুটা শক্ত কাজ। অতএব এখানে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ইসলামবিরোধীদের কেবলমাত্র বেছে বেছে কিছু ইংরেজি অনুবাদ ব্যবহার করতে হয়।
ইসলামবিরোধীরা যদি এরপরেও অপতর্ক করে বলতে চায় –না না, ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) এবং ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) উভয়ই এক জিনিস; কোন কোন অনুবাদক তো উভয়কে ‘aorta’ দিয়ে অনুবাদ করেছেন!! – তাহলে আমি এইসব তর্কপ্রিয় লোকদেরকে আরবি ভাষাবিদদের মতামত দেখতে বলব।
প্রসিদ্ধ আরবি ভাষাবিদ আল মুরতাজা আয-যাবীদী তাঁর ৪০ খণ্ডে রচিত ‘তাজুল আরুস’ গ্রন্থের ১০ নাম্বার খণ্ডের ২৬৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- -
”الأَبْهَرُ عِرْقٌ مَنْشَؤُه مِن الرَّأْس، ويَمْتَدُّ إِلى القَدمِ، وَله شَاريِينُ تتَّصِلُ بأَكثرِ الأَطرافِ والبَدَنِ، فَالَّذِي فِي الرأْس منهُ يُسَمَّى النَّأْمَة ويَمتدُّ إِلى الحَلْق فيُسَمَّى فِيهِ الوَرِيدَ، ويمتدُّ إِلى الصَّدْر فيُسَمَّى الأَبْهَرَ، ويمتدُّ إِلى الظَّهْر فيُسَمَّى الوَتِينَ، والفُؤادُ معلَّقٌ بِهِ، ويمتدُّ إِلى الفَخِذ فيُسَمَّى النَّسَا، ويمتدُّ إِلى السّاق فيُسَمَّى الصّافِنَ [تاج العروس (10/ 263)]
অর্থঃ “ ‘আবহার’ মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি রগ। যার কিছু শিরা-উপশিরা আছে, যা পুরো শরীরের অধিকাংশ অঙ্গ-প্রতঙ্গে বিস্তৃত। মাথার শিরাকে বলা হয় ‘না’মাহ্’, কণ্ঠনালীর শিরাকে বলা হয় ‘ওয়ারিদ’, বুকের শিরাকে বলা হয় ‘আবহার’, পিঠের শিরাকে বলা হয় ‘ওয়াতিন’, তার সাথেই হৃদপিণ্ডের সম্পর্ক, রানের শিরাকে বলা হয় ‘নাসা’ আর পায়ের নলার শিরাকে বলে ‘সাফিন’। ”
‘আবহার’ (أَبْهَرِ) ও ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) এর ভিন্নতা
হৃদপিন্ড থেকে উৎপত্তি লাভ করে যে ধমনী উপরের দিকে ওঠে এবং বুকে অবস্থান করে তাকে 'আবহার' বলে। আবার সেই ধমনী যখন পিছনের দিকে গিয়ে নীচের দিকে নামে তখন তাকে 'ওয়াতিন' বলে। এই ধমনী থেকে যখন কিছু শাখা-প্রশাখা গলায় চলে যায় তখন তাকে 'ওয়ারিদ' বলে।
এটা খুবই সুস্পষ্ট ব্যাপার যে, ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) এবং ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) মোটেও এক জিনিস নয় এবং গত দেড় হাজার বছরে সুরা হাক্কাহ পড়ে এরপর সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ থেকে রাসুল(ﷺ) এর বিষের যন্ত্রণার বিবরণ দেখে কোন আরব এটা বোঝেনি যে আল্লাহ ঘোষিত শাস্তির দ্বারা এটা হয়েছে। দেড় হাজার বছর পরে কিছু খ্রিষ্টান মিশনারী এবং ইসলামবিদ্বেষী একটিভিস্ট ধূর্ততার সাথে কিছু অনুবাদ ব্যবহার করে রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুকে ‘আল্লাহর আযাব’ বানিয়ে ফেলার যে অপচেষ্টা করেছে, তা কখনোই সফল হবার নয়। আল্লাহ এদের অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের নিপাত করুন এবং এদেরকে হেদায়েত দিন।
◘ মৃত্যুর আগে কেন নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর এতো কষ্ট হল?
অনেকে একটি প্রশ্ন তোলে যে, মুহাম্মাদ(ﷺ) যদি নবী হন, আল্লাহর প্রিয় বান্দা হন, তাহলে বিষের জন্য মৃত্যুর আগের রোগে তাঁর কেন এত কষ্ট হল? এর উত্তর তিনি তাঁর জীবদ্দশাতেই দিয়ে গেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
আবু সাঈদ খুদরী(রা.) বলেন, আমি রাসুল(ﷺ)-এর গৃহে প্রবেশ করলাম। অতঃপর তাঁর দেহের উপর হাত রাখলাম। তখন তাঁর লেপের উপরেও তাপ অনুভূত হচ্ছিল। শরীর এত গরম ছিল যে, হাত পুড়ে যাচ্ছিল। এতে আমি বিস্ময়বোধ করলে রাসুল(ﷺ) বলেন, ‘এভাবে আমাদের [নবীদের] কষ্ট দ্বিগুণ হয় এবং আমাদের পুরস্কারও দ্বিগুণ হয়। অতঃপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত কারা? তিনি বললেন, নবীগণ। আমি বললাম, তারপর কারা? তিনি বললেন, নেককার ব্যক্তিগণ। এমনকি তাদের কেউ দারিদ্রে্যর কষাঘাতে এমনভাবে জর্জরিত হবে যে, পোশাক হিসাবে মাথার ‘আবা’ (الْعَبَاءَةُ) ছাড়া কিছুই পাবে না। তাদের কেউ বিপদে পড়লে এমন খুশী হবে, যেমন তোমাদের কেউ প্রাচুর্য পেলে খুশী হয়ে থাকো’। [19]
কাজেই বিষের তীব্র কষ্ট ও এর জন্য ভয়াবহ শারিরীক কষ্ট আরো বেশি করে প্রমাণ করে যে - মুহাম্মাদ(ﷺ) আল্লাহর নবী, সুবহানাল্লাহ। তাঁর পূর্বের নবীরাও অনেক কষ্টভোগ করে গেছেন। তিনি আল্লাহর জন্য, দ্বীন ইসলামের জন্য, তাঁর উম্মতদের জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট করেছেন, যন্ত্রণা সহ্য করেছেন এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এগুলো তাঁর মর্যাদাকে আরো বৃদ্ধি করেছে।
ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থও [বাইবেলের Old Testament / Tanakh] এ ব্যাপারে একমত। বাইবেলের একজন নবী হচ্ছেন ইয়োব [Prophet Job / আইউব(আ.)]। বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে কী ভয়াবহ দুর্ভোগ, সম্পদহানী ও শারিরীক কষ্ট-যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে। বাইবেলে বলা হয়েছে - যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়ায় ইয়োবের পা থেকে মাথা পর্য়ন্ত ভরে গিয়েছিল। চামড়ার ভয়াবহ রোগের কারণে তাঁর দেহ কৃমিকীট ও আবর্জনার মণ্ড দিয়ে আবৃত হয়ে গিয়েছিল। এমন ভয়াবহ যন্ত্রণা ও কষ্টে পড়েছিলেন যে তিনি যে দিন তিনি জন্মেছিলেন সেই দিনটিকে নিন্দা করেছিলেন, নিজের জীবনকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলেন। এ জন্য তিনি ঈশ্বরকে পর্যন্ত নিন্দা ও অভিযুক্ত করেছিলেন। বাইবেলের ইয়োব (Job) পুস্তকের ২, ৩, ৬, ৭, ৯, ১০, ১২, ১৩, ১৪, ১৬, ১৭, ১৯, ২৩, ২৭ ও ৩০ নং অধ্যায়ে নবী ইয়োব এর ভয়াবহ যন্ত্রণা ও বিলাপের বিবরণ আছে। বাইবেলের নবী যদি ভয়াবহ যন্ত্রণা ভোগ করে এমনকি এ জন্য ঈশ্বরের নিন্দা করে – তবুও খ্রিষ্টান মিশনারিদেরকে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় না। অথচ আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ(ﷺ)কে নিয়ে তাদের যত আপত্তি। এ হচ্ছে তাদের দ্বিমুখী নীতি। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, শারিরীক কষ্ট বা যন্ত্রণা কোনোভাবেই একজনের নবুয়তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না – এ ব্যাপারে বাইবেলও একমত। মুসলিমদের কাছে বাইবেল কোনো দলিল নয়। শুধুমাত্র তাদের দ্বিমুখী নীতির স্বরূপ উন্মোচনের জন্যই দলিলগুলো দেয়া।
সুতরাং উপরের আলোচনার সারাংশ হিসাবে আমরা বলতে পারিঃ
■ নবী হলে তাঁকে হত্যা করা যাবে না – এই কথার সাথে বাইবেল ও কুরআন কোন গ্রন্থ একমত না। অতীতেও বহু নবীকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা শহীদ নবী। মুহাম্মাদ(ﷺ) একজন নবী যিনি শহীদ হয়েছিলেন। এতে তাঁর মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
■ নবী মুহাম্মাদ(ﷺ)কে বিষ প্রয়োগের সাথে সাথেই তিনি মারা যাননি। আল্লাহ তাঁকে তাঁর মিশন শেষ করা পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। এরপরেই বিষ ক্রিয়া করেছে। এটি একটি মুজিজা বা অলৌকিক ঘটনা।
■ এমনকি তিনি যদি ঘটনাস্থলেও মারা যেতেন, তবুও তাঁর নবুয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হত না।
■ বিষ প্রয়োগ করা সেই বকরীর রানটি নবী(ﷺ)কে বিষের ব্যাপারে অবহিত করেছিল। যার ফলে তিনি অন্যদেরকে বিষের ব্যাপারে সতর্ক করতে পেরেছিলেন। ঘটনাস্থলেই তিনি সকল ইহুদিকে ডেকে তাঁদের সকলের বাবার নাম সঠিকভাবে বলে দেন। যা কোন সাধারণ মানূষের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ সকল মু’জিজার দ্বারা তাঁর নবুয়তের সত্যতাই বরং প্রমাণ হয়।
■ আল্লাহর নামে কিছু বানিয়ে বললে শাস্তিস্বরূপ ‘ওয়াতিন’(الْوَتِينَ) কেটে দেবার কথা আল কুরআনে বলা হয়েছে। বিষের যন্ত্রণার সময়ে নবী(ﷺ) এর মনে হয়েছে যে তাঁর ‘আবহার’ (أَبْهَرِ) কেটে যাচ্ছে। উভয় মোটেই এক জিনিস নয়। কাজেই তিনি আল্লাহর শাস্তির দ্বারা মৃত্যুবরণ করেছেন - এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক।
■ শারিরীক কষ্ট বা যন্ত্রণা কারো নবুয়তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না। বরং তা আল্লাহর নবীদের ত্যাগের নির্দেশক এবং এটা তাঁদের মর্যাদাকেই বৃদ্ধি করে।
যারা আল কুরআন থেকে সুবিধামত এক অংশ উদ্ধৃত করে অপব্যাখ্যা করে নিজেদের মিথ্যা মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদেরকে বলব—আপনারা প্রসঙ্গসহ সুরা হাক্কাহ এর আয়াতগুলো পড়ুন।
“নিশ্চয়ই এটা (কুরআন) এক সম্মানিত রাসুলের তিলাওয়াত। এটা কোন কবির কথা নয়; তোমরা অল্পই বিশ্বাস কর। এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর।
এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।
যদি সে [মুহাম্মাদ(ﷺ)] নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো, তবে অবশ্যই আমি তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তাঁর জীবন-ধমনী(শাহরগ)। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তার ব্যাপারে আমাকে বিরত রাখতে পারে।
এটা (কুরআন) মুত্তাকীদের(আল্লাহভীরু) জন্যে অবশ্যই এক উপদেশ।
আমি অবশ্যই জানি যে, তোমাদের মধ্যে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীও রয়েছে।
এবং এই (কুরআন) নিশ্চয়ই কাফিরদের অনুশোচনার কারণ হবে। অবশ্যই এটা নিশ্চিত সত্য।
অতএব তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের মহিমা ঘোষনা কর।” [20]
এখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে যে আল কুরআন আল্লাহর সম্মানিত রাসুল মুহাম্মাদ(ﷺ) এর তিলাওয়াতকৃত কিতাব। এটা কোন কবি কিংবা গণকের কথা নয় বরং এটা স্বয়ং আল্লাহর কাছ থেকে আগত। ইসলামবিরোধীরা মাঝখানের কিছু আয়াতের উপর ‘ঈমান’(?) এনে রাসুল(ﷺ) এর মৃত্যুকে আল্লাহর গজব প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ। আমি তাদেরকে আহ্বান জানাব যে—আপনারা অন্য আয়াতগুলোর উপরেও ঈমান আনুন, মেনে নিন যে কুরআন স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার বাণী।
এরপরেও যদি না মানেন, তাহলে পরের আয়াতগুলো দেখুন। আল্লাহ বলে দিচ্ছেন যে এই কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী আছে। সুবহানাল্লাহ, এখানে ইসলামবিরোধী মিথ্যাচারকারীদের ব্যাপারে কী স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হচ্ছে! আর মিথ্যা প্রতিপন্ন করলে পরকালে যে কী পরিনতি হবে তাও বলে দেয়া আছে। কাজেই সিদ্ধান্ত আপনাদের। আল্লাহ আপনাদের হেদায়েত দিন।
এ ব্যাপারে আরো দেখুনঃ
"David Wood Refuted | Was Prophet Muhammad (PBUH) Punished in Death by Allah?"
"Was The Prophet ﷺ poisoned? - Shaykh Uthman Khamees"
তথ্যসূত্রঃ
[1] সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৪২৮
আরো দেখুনঃ ‘আর রাহিকুল মাখতুম’, শফিউর রহমান মুবারকপুরী; পৃষ্ঠা ৫৩৪ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) অথবা পৃষ্ঠা ৪৮৯(আল কোরআন একাডেমী লন্ডন)
[2] ২ বংশাবলী(2 Chronicles) ২৪:১৯-২১
[3] ১ রাজাবলী( 1 Kings) ১৮:১৩
[4] ১ রাজাবলী( 1 Kings) ১৯:৯-১০
[5] নহিমিয়(Nehemiah) ৯:২৬
[6] মথি(Matthew) ১৪:৮-১২
[7] মথি(Matthew) ২৩:২৯-৩৭
[8] আল কুরআন, বাকারাহ ২:৯১
[9] আল কুরআন, বাকারাহ ২:৬১, আলি ইমরান ৩:১১২
[10] “The Jews’ attempts to kill the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) - islamqa.info” [islamQA (Shaykh Muhammad Salih al Munajjid)]
অথবা https://archive.is/TqzGZ (আর্কাইভকৃত)
[11] "هل مات الرسول بأثر السُّم؟" (Islamway)
https://ar.islamway.net/fatwa/37395/
অথবা https://archive.is/kLGPh (আর্কাইভকৃত)
"موت الرسول صلى الله عليه وسلم شهيدا في سبيل الله" (Islamweb)
https://www.islamweb.net/ar/fatwa/104689/
অথবা https://archive.is/YW5Z0 (আর্কাইভকৃত)
[12] এ জন্য কিসাস হিসেবে পরবর্তীতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়; সহীহ মুসলিম ৩৫০ দ্রষ্টব্য
[13] সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৫১০; এই হাদিসের সনদে কিছু দুর্বলতা থাকলেও একই ঘটনার সহীহ হাদিস রয়েছে। যেমনঃ একই অনুচ্ছেদের ৪৫০৮ নং হাদিস।
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=61876
[14] মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ৩৬১৭, সনদঃ সহীহ
[15] দালায়িলুল নাবুওয়াহ ৩/২৪৮; তাফসির ইবন কাসির, সুরা আলি ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতের তাফসির
[16] সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৫৭৭৭
[17] আল কুরআন, হাক্কাহ ৬৯:৪৪-৪৬; ড. মুজিবুর রহমানের অনুবাদ
[18] দেখুন— ‘আর রাহিকুল মাখতুম’; পৃষ্ঠা ৫৩৪ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স) অথবা পৃষ্ঠা ৪৮৯(আল কোরআন একাডেমী লন্ডন)
[19] ইবন মাজাহ হা/৪০২৪; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৪৪
[20] আল কুরআন, হাক্কাহ ৬৯:৪০-৫২