শিয়া এবং শিয়াপ্রেমীগণ দাবি করেনঃ সুন্নী ইমামদের সংকলিত বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থেই আল কুরআনের সাথে সাথে নবী(ﷺ) এর আহলে বাইতের অনুসরণের আদেশ পাওয়া যায়। সুন্নীরা নাকি ষড়যন্ত্র করে এইসব হাদিস লুকায় অথবা মানে না।
প্রথমতঃ
সুন্নীরা কোনো হাদিস লুকায় না, নাউযুবিল্লাহ। “আহলুস সুন্নাহ” কথাটার মানেই হচ্ছে যারা সুন্নাহর অনুসরণ করে। হাদিস লুকানো যদি সুন্নীদের খেয়াল হয়ে থাকতো, তাহলে আজও সুন্নী ইমামদের সংকলিত হাদিস গ্রন্থেই সেই হাদিসগুলো থাকে কী করে?
দ্বিতীয়তঃ
আমরা এখন সেইসব হাদিস পর্যালোচনা করবো যেই হাদিসগুলো উল্লেখ করে শিয়া এবং শিয়াঘেঁষা ভাইয়েরা আহলুস সুন্নাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন।
হাদিস নং ১:
من طريق مُحَمَّد بْن سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ ، عَنِ ابْنِ وَاثِلَةَ ، أَنَّهُ سَمِعَ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَقُولُ: " نَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ عِنْدَ شَجَرَاتٍ خَمْسِ دَوْحَاتٍ عِظَامٍ ، فَكَنَسَ النَّاسُ مَا تَحْتَ الشَّجَرَاتِ ، ثُمَّ رَاحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشِيَّةً فَصَلَّى ، ثُمَّ قَامَ خَطِيبًا ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ، وَذَكَرَ وَوَعَظَ ، فَقَالَ: مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقُولَ: ثُمَّ قَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ ، إِنِّي تَارِكٌ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا إِنِ اتَّبَعْتُمُوهُمَا ، وَهُمَا: كِتَابُ اللَّهِ ، وَأَهْلُ بَيْتِي عِتْرَتِي .
অর্থঃ “ইবন ওয়াসিলাহ থেকে বর্ণিত। তিনি যায়দ বিন আরক্বাম(রা.)কে বলতে শুনেছেনঃ নবী(ﷺ) মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থানে অবতরণ করলেন... ... অতঃপর বললেন, হে লোকসকল, আমি তোমাদের মাঝে ২টি জিনিস রেখে যাচ্ছি যাদেরকে অনুসরণ করলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। সেগুলো হচ্ছেঃ আল্লাহর কিতাব। এবং আহলে বাইত, আমার পরিবার।” [1]
এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে মুহাম্মাদ ইবন সালামাহ আছেন। ইবন আদি(র.) বলেছেন, “তিনি কুফা শহরের শিয়াদের একজন।” [2]
জুযজানী(র.) বলেছেন, “যাহিবুল হাদিস” (দুর্বল)। [3]
অতএব এর সনদ দুর্বল।
হাদিস নং ২:
من طريق علي بن ثابت ، قال : حَدَّثَنَا سعاد بن سليمان ، عن أبي إسحاق ، عن الحارث، عن علي قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إني مقبوض ، وإني قد تركت فيكم الثقلين كتاب الله ، وأهل بيتي ، وإنكم لن تضلوا بعدهما ، وإنه لن تقوم الساعة حتى يبتغى أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم كما تبتغى الضالة ، فلا توجد .
অর্থঃ আলি(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, “… আমি তোমাদের মাঝে সাকালাইন (২টি ভারী জিনিস) রেখে যাচ্ছি। আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত। এদের পরে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। ... ... ” [4]
এই হাদিসের সনদের মধ্যে আছেন হারিস বিন আবদুল্লাহ আল আ’ওয়ার। ইমা শা’বি(র.), আলি বিন মাদিনী(র.) এবং আবু খাইসামাহ(র.) তাকে মিত্যাবাদিতার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। অধিকাংশ আহলে ইলমই তাকে দুর্বল বলে অভিহীত করেছেন। [5]
সনদের মধ্যে আরো আছেন আবু ইসহাক আস-সুবাইয়ী। তিনি মুদল্লিস। তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছিল। [6]
সনদের মধ্যে আরো আছেন সাআআদ বিন সুলায়মান। তার সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী(র.) বলেন, “তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়।” ইবন হাজার আল-আসকালানী(র.) বলেন, “তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন, তিনি শিয়া মতাবলম্বী।” ‘তাহরীরু তাকরীবুত তাহযীব’ এর লেখক বলেন, “তিনি দুর্বল”। [7]
অতএব এই হাদিস সহীহ নয়। দলিলযোগ্য নয়।
হাদিস নং ৩:
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُنْذِرِ، - كُوفِيٌّ - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، قَالَ حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، وَالأَعْمَشُ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالاَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنِّي تَارِكٌ فِيكُمْ مَا إِنْ تَمَسَّكْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدِي أَحَدُهُمَا أَعْظَمُ مِنَ الآخَرِ كِتَابُ اللَّهِ حَبْلٌ مَمْدُودٌ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ وَعِتْرَتِي أَهْلُ بَيْتِي وَلَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَا عَلَىَّ الْحَوْضَ فَانْظُرُوا كَيْفَ تَخْلُفُونِي فِيهِمَا " . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
অর্থঃ “যাইদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা শক্তরুপে ধারণ (অনুসরণ) করলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ আল্লাহ্ তা'আলার কিতাব যা আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং আমার পরিবার অর্থাৎ আমার আহ্লে বাইত। এ দু'টি কখনও আলাদা হবে না কাওসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য কর আমার পরে দু'জনের সঙ্গে তোমরা কিভাবে আচরণ কর।” [8]
এর সনদে দুর্বলতা রয়েছে। কেননা এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে আ’মাশ এবং হাবিব বিন আবি সাবিত আছেন। এই ২ জনই মুদাল্লিস রাবী বলে মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন। [9]
হাদিস নং ৪:
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحَسَنِ، هُوَ الأَنْمَاطِيُّ عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي حَجَّتِهِ يَوْمَ عَرَفَةَ وَهُوَ عَلَى نَاقَتِهِ الْقَصْوَاءِ يَخْطُبُ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ " يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا كِتَابَ اللَّهِ وَعِتْرَتِي أَهْلَ بَيْتِي " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي ذَرٍّ وَأَبِي سَعِيدٍ وَزَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ وَحُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيدٍ . قَالَ وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ . قَالَ وَزَيْدُ بْنُ الْحَسَنِ قَدْ رَوَى عَنْهُ سَعِيدُ بْنُ سُلَيْمَانَ وَغَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ .
অর্থঃ “জাবির ইবনু ‘আবদিল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-কে আমি তাঁর বিদায় হাজ্জে আরাফার দিন তাঁর কাসওয়া নামক উষ্ট্রীতে আরোহিত অবস্থায় বক্তৃতা দিতে দেখেছি এবং তাঁকে বলতে শুনেছিঃ হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা তা ধারণ বা অনুসরণ করলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে নাঃ আল্লাহ্ তা‘আলার কিতাব (আল-কুরআন) এবং আমার ইতরাত অর্থাৎ আমার আহ্লে বাইত।” [10]
এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে আছেন যায়দ বিন হাসান আনমাত্বি।
ইমাম ইবন হাজার আসকালানী(র.) তাকে দুর্বল রাবী বলে উল্লেখ করেছেন। [11] আবু হাতিম(র.) তার ব্যাপারে “মুনকারুল হাদিস” বলে উল্লেখ করেছেন। [12]
কাজেই এই বর্ণনার সনদ অত্যন্ত দুর্বল (দ্বঈফ জিদ্দান)।
অন্য যেসব বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী জাফর বিন মুহাম্মাদ [জাফর আস সাদিক] থেকে এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন তাদের কারো বর্ণনাতেই আরাফার ময়দানে নবী(ﷺ) এর এই বক্তব্যে আহলে বাইতের কথা নেই। বরং শুধু কুরআনের কথা রয়েছে।
যেমন, সহীহ মুসলিমে এ সংক্রান্ত বর্ণনা। [13]
কাজেই স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে এই বর্ণনায় সমস্যা রয়েছে।
এখন কেউ কেউ বলতে পারে, বিভিন্ন হাদিস ওয়েবসাইটে তো এই হাদিসগুলোর পরে “সহীহ” বলে উল্লেখ করা আছে। যা শায়খ আলবানী(র.) এর তাহকিক অনুযায়ী।
এর উত্তরে আমরা বলবোঃ শুধু এক শব্দে ‘সহীহ’ কথাটি দেখে অনেকেই এখানে ভুল বোঝে। আমরা যদি শায়খ আলবানী(র.) এর পূর্ণ আলোচনা দেখি, তাহলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। শায়খ আলবানী(র.) তিনি তাঁর ‘সিলসিলাহ আহাদিসুস সহীহাহ’ গ্রন্থে ১৭৬১ নং বর্ণনার আলোচনায় আলোচ্য হাদিসে রাবীর দুর্বলতা উল্লেখ করেছেন। তিনি এই হাদিসকে সহীহ মুসলিমে যায়দ বিন আরক্বাম(রা.) এর বিশুদ্ধ হাদিসটির শাহেদ হিসেবে ধরেছেন। সেই হিসেবে একেও ‘সহীহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ সেই বিশুদ্ধ হাদিসের সাথে এই হাদিসে যে শব্দসমূহ একই, তিনি সেগুলোকে সত্যায়ন করেছেন। শায়খ আলবানী(র.) সেই আলোচনার মধ্যেই যায়দ বিন আরকাম(রা.) এর বিশুদ্ধ হাদিসটি উল্লেখ করে দিয়েছেনঃ “রাসুলুল্লাহ(ﷺ) একদিন মক্কা ও মদীনার মাঝামাঝি ‘খুম’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে বক্তৃতা দিলেন।... ... আমি তোমাদের নিকট ২টি ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন)। এতে পথনির্দেশ এবং আলোকবর্তিকা আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করো, একে শক্ত করে আঁকড়ে রাখো। তারপর তিনি কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। এরপর বলেন, আর [অন্যটি হলো] আমার আহলে বাইত (পরিবারের লোক)। আর আমি আহলে বাইতের (অধিকারের) বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। ” [14]
শায়খ আলবানী(র.) একে যে মূল হাদিসের শাহেদ হিসেবে ধরেছেন, সেই মূল হাদিসে আহলে বাইতের কথা আলোচনার সময়ে তাঁদেরকে অনুসরণের কথা উল্লেখ নেই। বরং তাঁদের অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আরো বোঝা গেলো এই ঘটনাটি গাদির খুমে ঘটেছে। আরাফার ময়দানে নয়। ঘটনার সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ বর্ণনা থেকে এটিই বোঝা গেলো। উপরে তিরমিযির দুইটি বর্ণনার ক্ষেত্রেই এই কথা প্রযোজ্য।
শায়খ যুবায়র আলি জাঈ(র.) এর তাহকিকও অনুরূপ। [15]
হাদিস নং ৫:
من طريق كَثِير بْن زَيْدٍ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عُمَرَ بْنِ عَلِيٍّ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنِّي تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا: كِتَابَ اللَّهِ سَبَبُهُ بِيَدِ اللَّهِ، وَسَبَبُهُ بِأَيْدِيكُمْ، وَأَهْلَ بَيْتِي .
অর্থঃ আলি(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে ২টি জিনিস রেখে গেলাম যা ধারণ করলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব - যার এক পাশ আল্লাহর হাতে এবং অপর পাশ তোমাদের হাতে। এবং আমার আহলে বাইত। [16]
এর রাবীদের মধ্যে আছেন কাসির বিন যায়দ। ইমাম নাসাঈ(র.) তাকে দুর্বল বলেছেন। [17]
রাবীদের মধ্যে আরো আছেন মুহাম্মাদ বিন উমার বিন আলি বিন আবি তালিব। তিনি একজন মাজহুল (অজ্ঞাত) রাবী। [18]
অতএব, হাদিসটি সহীহ নয়।
সাকালালাইন (২টি ভারী জিনিস) এর মাঝে আহলে বাইতদের কথা উল্লেখ করে আরো বেশ কয়েকটি দুর্বল হাদিস এসেছে। তবে সেগুলোতে তাঁদেরকে অনুসরণের কথা উল্লেখ নেই। সেই হাদিসগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো না।
এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ “حول حديث " كتاب الله وعترتي " ، وحديث " كتاب الله وسنتي "”
এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ এবং প্রমাণিত হাদিসঃ
হাদিস নং ১:
َوَقَدْ تَرَكْتُ فِيْكُمْ مَا لَنْ تَضِلِّوْا بَعْدَهُ إِنْ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ، كِتَابُ اللهِ
অর্থঃ “আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি যা শক্ত করে ধরে রাখলে তোমরা কখনোও পথহারা হবে না এবং তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (কুরআন)।” [19]
হাদিস নং ২:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ فَلَنْ تَضِلُّوا أَبَدًا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ-
অর্থঃ '‘হে জনগণ! আমি তোমাদের নিকট এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি, যা মজবুতভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও তাঁর নবীর সুন্নাহ।” [20]
হাদিস নং ৩:
قَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّىاللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فِينَا خَطِيبًا، بِمَاءٍ يُدْعَى خُمًّا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَوَعَظَ وَذَكَّرَ، ثُمَّ قَالَ
: " أَمَّا بَعْدُ، أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ، وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ: أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللهِ فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللهِ، وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ " فَحَثَّعَلَى كِتَابِ اللهِ وَرَغَّبَ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: «وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُاللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي»
অর্থঃ রাসুলুল্লাহ(ﷺ) একদিন মক্কা ও মদীনার মাঝামাঝি ‘খুম’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে বক্তৃতা দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা শেষে ওয়ায-নাসিহত করলেন। অতঃপর বললেনঃ শোনো হে লোক সকল! আমি তো কেবল একজন মানুষ, অতি সত্ত্বরই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত দূত (মৃত্যুর ফেরেশতা) আসবেন, আর আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেবো। আমি তোমাদের নিকট ২টি ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন)। এতে পথনির্দেশ এবং আলোকবর্তিকা আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অনুসরণ করো, একে শক্ত করে আঁকড়ে রাখো। তারপর তিনি কুরআনের প্রতি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। এরপর বলেন, আর [অন্যটি হলো] আমার আহলে বাইত (পরিবারের লোক)। আর আমি আহলে বাইতের (অধিকারের) বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। …” [21]
এই তিনটি হাদিস সহীহ, সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। এই বিশুদ্ধ হাদিসগুলোর আলোকেই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদা-বিশ্বাস গঠিত হয়েছে। আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং নবীর(ﷺ) সুন্নাত অনুসরণ করতে হবে। এগুলোই হবে সত্যের মানদণ্ড। এবং নবীর(ﷺ) আহলে বাইতদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
শিয়া এবং শিয়াপ্রেমীদের আপত্তিঃ
শিয়া এবং শিয়াপ্রেমীরা এক্ষেত্রে একটি আপত্তি তোলে। আর তা হলোঃ সাকালাইন এবং আহলে বাইত সম্পর্কিত এই হাদিসগুলো যদি দুর্বলও হয়ে থাকে, এগুলোর তো অনেকগুলো বর্ণনা এসেছে। একই বিষয়ে বহুসংখ্যক দুর্বল বর্ণনা থাকলে তা কি শক্তিশালী হয়ে যায় না?
এর উত্তরে আমরা বলবো, বিশুদ্ধ বর্ণনার বিপরীতে অনেকগুলো দুর্বল বর্ণনা এক হলেও তা শক্তিশালী হয় না। আমরা দেখেছি, এ সংক্রান্ত আলাদা বিশুদ্ধ বর্ণনা আছে। সেই বিশুদ্ধ বর্ণনার মাঝে আছেঃ
১। কুরআন এবং সুন্নাহ আঁকড়ে ধরলে পথভ্রষ্ট হবে না।
২। আহলে বাইতদের অধিকার স্মরণ রাখতে হবে।
এর বিপরীতে কোনো দুর্বল বর্ণনায় যদি পাওয়া যায়ঃ আহলে বাইতদের আকঁড়ে ধরলে পথভ্রষ্ট হবে না – তাহলে সহীহ বর্ণনার বিপরীতে তা দলিল হবে না। সহীহ এর বিপরীতে না হলে তা গ্রহণযোগ্য হবার সুযোগ থাকতো। কিন্তু সহীহ বর্ণনার বিপরীতে দুর্বল বর্ণনা থেকে দলিল নেবার কোনো সুযোগ নেই, যদিও এর অনেকগুলো বর্ণনা থেকে থাকে। সাকালাইন এবং আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরা সংক্রান্ত বর্ণনাগুলোর প্রত্যেকটির মাঝেই ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। যা আমরা উপরে দেখেছি। এই একই প্রসঙ্গে বিশুদ্ধ এবং ত্রুটিবিহীন রেওয়ায়েত রয়েছে। সেখান থেকেই দলিল নিতে হবে।
অন্য অনেক ক্ষেত্রে এরূপ উদাহরণ দেখা যায়। সহীহ এর বিপরীতে অনেক সংখ্যক দুর্বল বর্ণনা থাকার পরেও সেগুলো দলিল হয়নি। –
হাফিজ যায়লাই’(র.) বলেছেন,
احاديث الجهر و ان كثرت رواتها لكنها كلها ضعيفة وكم من حديث كثرت رواته و تعددت طرقه وهو حديث ضعيف…. بل قد لا يزيد كثرة الطرق الا ضعفا
অর্থঃ জোরে (তাসমিয়্যাহ) বলা সংক্রান্ত অনেকগুলো বর্ণনা আছে। কিন্তু এর সবগুলোই দুর্বল। এমন অনেক হাদিস আছে যেগুলোর অনেক বর্ণনাকারীর দ্বারা অনেকগুলো রেওয়ায়েত আছে, কিন্তু সেগুলো দুর্বল। ... বরং কখনো কখনো বহুসংখ্যক বর্ণনা এর দুর্বলতাকেই শুধু বৃদ্ধি করে। [22]
এ সংক্রান্ত ব্যাপারে পূর্বযুগের ও পরবর্তী যুগের উলামাদের নীতিমালা আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম শাওকানী(র.) বলেন,
“...এ সম্পর্কিত সবগুলো বর্ণনার মাঝে ত্রুটি রয়েছে। এ জন্যই আল্লামা ইবন আব্দুল বার(র.) বলেছেন, “আনাস(রা.) থেকে অনেকগুলো সনদে এটি বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এর সবগুলোই ত্রুটিপূর্ণ। মুহাদ্দিসদের মতে এর কোনোটিই নির্ভরযোগ্য নয়।”
ইমাম বাযযার(র.) বলেছেন, “এটি আনাস(রা.) থেকে দুর্বল সনদসমূহে বর্ণিত হয়েছে...যদিও উবাই(রা.), জাবির(রা.), হুজাইফা(রা.), হুসাইন বিন আলি(রা.), সালমান(রা.), সামুরাহ(রা.), ইবন আব্বাস(রা.), ইবন উমার(রা.), ইবন মাসউদ(রা.), আলি(রা.), মুয়াবিয়া বিন হায়দাহ(রা.), নুবায়ত বিন শুরায়ত(রা.), আবু সাঈদ(রা.), আবু হুরায়রা(রা.), উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা(রা.), আয়িশা বিনত কুদামাহ(রা.), উম্মু হানি(রা.) এবং অন্যদের থেকে এই বর্ণনার শাহেদ রয়েছে। হাফিজ ইরাকী(র.) ‘ইহইয়া উলুমুদ্দিন’ গ্রন্থে এই হাদিসের বিস্তারিত তাখরিজ করেছেন। তা সত্ত্বেও ইমাম বায়হাকী(র.) বলেছেন, এর বক্তব্য মাশহুর কিন্তু সনদ দুর্বল। অনেকগুলো সূত্রে এটি বর্ণিত হয়েছে কিন্তু এর সবগুলোই দুর্বল। তাঁরও পূর্বে ইমাম আহমাদ(র.) থেকেও এমন বক্তব্য পাওয়া যায় যা ইবনুল জাওযী(র.) ‘ইলাল আল মুতানাহিয়্যাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আহমাদ(র.) বলেছেন, “আমাদের মতে, এ (হাদিসটি) থেকে কোনো কিছুই প্রমাণিত হয় না। ... হাফিজ আবু আলি নিসাপুরী(র.) বলেছেন, “এ ব্যাপারে নবী(ﷺ) থেকে একটি বর্ণনাও প্রমাণিত নয়।” ইমাম ইবনুস সালাহ(র.)ও এই বর্ণনাকে সেসব সুপরিচিত বর্ণনার অন্তর্ভুক্ত করেছেন যেগুলো প্রমাণিত নয়। ইমাম হাকিম(র.)ও এ ব্যাপারে অনুরূভাবে তাঁর [আবু আলি(র.)] অনুসরণ করেছেন।”” [23]
শুধু আহলে বাইতের দুর্বল বিবরণগুলোতে না বরং অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটা আহলুস সুন্নাহর ইমামদের সুপরিচিত উসুল (নীতিমালা)। এমনকি শিয়া আলেমদের থেকেও অনুরূপ নীতিমালা পাওয়া যায়! [24]
এ সংক্রান্ত সকল বর্ণনা একত্রে বিবেচনা করে আল আমিদি(র.) বলেছেন,
لا نُسلِّم أنَّ المراد بالثَّقلينِ: الكتاب، والعترة، بل الكتاب، والسُّنَّة، على ما رُوي أنَّه قال: "كِتاب الله، وسُنَّتي
অর্থঃ “সাকালাইন এর অর্থ কিতাব (কুরআন) এবং [নবীর(ﷺ)] পরিবার – এই অর্থ আমরা মানি না। বরং এর অর্থ হবে কিতাব এবং সুন্নাহ। এটা তাঁর [নবীর(ﷺ)] এই বর্ণনার ভিত্তিতেঃ “আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ...” ” [25]
ইমাম ইবনু কুদামাহ মাকদিসী(র.) থেকেও অনুরূপ অভিমত বর্ণিত আছে। [26]
প্রখ্যাত সিরাহবিদ ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি উল্লেখ করেছেন,
“সহীহ মুসলিম থেকে আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধরা এবং এবং আহলে বাইতের প্রতি সদয় হওয়া ও সম্মান দেবার বিষয়টিই প্রতিষ্ঠিত হয়। যা আমরা সহীহ মুসলিমে যায়দ বিন আরক্বাম(রা.) এর হাদিসে দেখতে পাই। নবী(ﷺ) আল্লাহর কিতাব অনুসরণের আদেশ দিয়েছেন, এরপর বলেছেনঃ “আর [অন্যটি হলো] আমার আহলে বাইত (পরিবারের লোক)। আর আমি আহলে বাইতের (অধিকারের) বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। ” তিনি(ﷺ) এখানে আল কুরআন অনুসরনের আদেশ দিয়েছেন। আহলে বাইতের ব্যাপারে নবী(ﷺ) তাঁদের প্রতি লক্ষ রাখার এবং তাঁদেরকে আল্লাহ যেসব অধিকার প্রদান করেছেন, সেগুলো আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। (আরবি সংস্করণের টিকাঃ দেখুন হাক্ববাত মিন তারিখ পৃষ্ঠা ২০৩)” [27]
[1] মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস নং : ৪৫৭৭
[2] আল কামিল ৭/৪৪৫
[3] আহওয়ালুর রিজাল পৃষ্ঠা ৮৬
[4] মুসনাদ বাযযার, হাদিস নং : ৮৬৪
[5] আল জারহ ওয়াত তা’দিল ৩/৭৯
[7] তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২১৯৭, ১০/২৩৭ নং পৃষ্ঠা
[8] মিশকাত (৬১৪৪), রাওযুন্ নাযীর (৯৭৭, ৯৭৮), আস সুন্নাহ - ইবন আবি আসিম (১৫৫৫), জামে’ আত-তিরমিজি হাদিস নং ৩৭৮৮
[10] জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৭৮৬
[11] তাক্বরিব ১/৩৩৭
[12] আল জারহ ওয়াত তা’দিল ৩/৫৬০
[14] সিলসিলাহ আহাদিসুস সহীহাহ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৫৫-৩৫৬
https://ia902606.us.archive.org/34/items/waq47652/sahiha04.pdf
[15] জামে’ আত-তিরমিজি (তাহকিকঃ শায়খ যুবায়র আলি জাঈ) খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৩৫
[16] আস সুন্নাহ - ইবন আবি আসিম ১৫৫৮
[17] আদ দ্বুআফা’ ওয়াল মাতরুকিয়্যিন - ৫০৫
[18] তাবাকাত – ইবন সা’দ ৫/৩২৯, তারিখুল কাবির – বুখারী ১/১৭৭, জারহ ওয়াত তা’দিল – ইবন আবি হাতিম ৮/১৮
[19] সহীহ মুসলিম, নবীর(ﷺ) হজ অধ্যায়, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৭
[20] হাকিম হা/৩১৮, সহীহ
কাছাকাছি মাতান (মূল বক্তব্য) এর আরো অনেকগুলো হাদিস আছে। তবে এর সবগুলোই দুর্বল। কিন্তু ইবন আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি বিশুদ্ধ। এর তাহকিকঃ
قال الحاكم: احتجَّ البخاريُّ بأحاديث عِكرمة، واحتجَّ مسلمٌ بأبي أُويس، وسائرُ رُواته متَّفق عليهم. وقال المنذريُّ في ((الترغيب والترهيب)) (1/61): أصلُه في الصَّحيح. وجوَّد طريقَه ابنُ الملقِّن في ((البدر المنير)) (6/693)، وصحَّح إسنادَه ابنُ القيِّم في ((تهذيب السنن)) (7/279)، وصحَّحه ابن العربي في ((أحكام القرآن)) (4/250)، والألبانيُّ في ((صحيح الترغيب)) (40).
আরো দেখুনঃ https://dorar.net/article/1716/ حديث-الثقلين-كتاب-الله-وعترتي-كتاب-الله-وسنتي
[21] সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৪০৮
[22] নাসবুর রাইয়াহ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৬০
[23] আল মাকাসিদুল হাসানাহ ফি বায়ান কাসির মিনাল আহাদিস, পৃষ্ঠা ৪৪১-৪৪২
[24] দেখুনঃ আল মাসাইলুল সারাওয়িয়্যাহ –শায়খ আল মুফিত (তাহকিকঃ সাইব আব্দুল হামিদ), পৃষ্ঠা ১২
[25] আল ইহকাম ফি উসুলিল আহকাম ১/৩০৮
[26] রাওদ্বাতুন নাযার ১/৪৭০
[27] আলি ইবন আবু তালিব – ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি, খণ্ড ২ (ইংরেজি), পৃষ্ঠা ৪১২-৪১৩