Pray for the world economy

হজের সময়ে কি শয়তানের মূর্তিতে পাথর নিক্ষেপ করা হয়?

 

হজের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপ। ছোটবেলা থেকেই আমরা টিভিতে দেখি বা পত্রিকায় ছবি দেখি লম্বা তিনটা স্তম্ভের দিকে হাজি সাহেবরা ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করছেন। আমাদের দেশে হজের এই কর্ম "শয়তানকে পাথর মারা" হিসেবে পরিচিত। অনেককে এমন কথাও বলতে শোনা যায়ঃ বড় স্তম্ভটা বড় শয়তান, পরেরটা মেঝো শয়তান আর ছোট স্তম্ভটা ছোট শয়তান! এমন কথাও প্রচলিত আছে যে এই স্তম্ভগুলোর সাথে শয়তান বাঁধা থাকে, হাজিরা সেই শয়তানদের পাথর মেরে কাবু করে দেন। সমাজের এই প্রচলিত বিশ্বাসকে লুফে নিয়ে অনেক সময় নাস্তিক-মুক্তমনা বা খ্রিষ্টান প্রচারকরা দাবি করেঃ এই দেখো, মুসলিমরা "শয়তানের মূর্তি"কে পাথর মারে, মুসলিমরা পৌত্তলিক!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রচলিত এই কথাগুলো কতটুকু সঠিক?


 
এ প্রসঙ্গে 'মাসিক আল কাউসার' পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে,


 
"অনেক মানুষ ভুল ধারণা পোষণ করে যে, তিন ‘জামরা’ হল তিন শয়তান কিংবা প্রত্যেক জামরার সাথে একটি করে শয়তান বাঁধা আছে। বরং কিছু মানুষকে এমনও বলতে শোনা যায় যে, প্রথমটি হচ্ছে বড় শয়তান। তার পরেরটা মেঝ শয়তান। তার পরেরটা ছোট শয়তান। জেনে রাখুন, এ জাতীয় ধারণা পোষণ বা নামকরণ কোনটাই সহীহ নয়। আসলে ‘জামরাত’ আরবী ‘জামরাতুন’ শব্দের বহুবচন। এর অর্থ হচ্ছে ছোট ছোট কংকর বা নুড়ি পাথর। যেহেতু এই সকল স্থানে ছোট ছোট কংকর নিক্ষেপ করা হয় এজন্য এগুলোকে ‘জামরাত’ বলে।" [1]


 
এ ব্যাপারে শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল উসাঈমিন(র.) বলেছেনঃ

 
"অনেক হাজীদের ভ্রান্ত ধারণা যে, তারা জামরায় পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে শয়তানকে পাথর মারে। এজন্যে তারা জামরাগুলিকে শয়তান বলে আখ্যায়িত করে। তাই তাদের বলতে শুনা যায় যে, আমরা বড় শয়তানকে পাথর মেরেছি বা ছোট শয়তানকে পাথর মেরেছি কিংবা বড় জামরাকে পাথর মারলে তারা অনেকে বলে যে, আমরা শয়তানের বাপকে পাথর মেরেছি। এধরণের অনেক কথায় তারা বলে থাকে, যা হজ্জের স্থানসমূহ ও কার্যাবলী সম্পর্কে বলা সমিচীন নয়। আরো দেখবেন যে, তারা পাথর মারার সময় তাদের ভ্রান্ত ধারণায় এ জমরাসমূহকে শয়তান মনে করে বড়ই কঠোরতা, নিষ্ঠুরতা, চিৎকার ও গালাগালি করে থাকে। বরং এমনও লোক দেখেছি যে, জামরার উপর চড়ে বড়ই ক্রোধ ও আবেগের সাথে জুতো-স্যান্ডেল ও বড় বড় পাথর দ্বারা পিটাচ্ছে এবং তার উপর লোকদের মারা কংকর পড়তে আছে, তবুও তার রাগ-গোস্সা ঠান্ডাও হচ্ছে না এবং তারা এ আচরণও ছাড়ছে না। আর লোকেরা তার চারপার্শ্বে অট্ট হাঁসী হাঁসছে। মনে হচ্ছে যেন এক নাটকের দৃশ্য। এ দৃশ্য জামরায় পুল তৈরী হওয়ার এবং তার পিলার উঁচু করার পূর্বে দেখেছি। আর এসমস্ত ঘটনার কারণ হচ্ছে, তাদের বদ আকীদা যে, হাজীরা শয়তানকে পাথর মারে। অথচ ইহা এক ভিত্তিহীন কথা। আর পূর্বে জামরায় পাথর মারার তত্ত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন যে, তা আল্লাহর যিকির (স্মরণ) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে বিধি-বদ্ধ করা হয়েছে। এজন্যই নাবী(
)  প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপ করার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন" [2]

আরো অনেক উলামায়ে কিরাম থেকে অনুরূপ কথা বর্ণিত আছে।

 

'সংক্ষিপ্ত হজ, উমরা ও যিয়ারত' গ্রন্থে শায়খ আলী হাসান তৈয়ব (হাফি.) উল্লেখ করেছেন,

 

“…কঙ্কর নিক্ষেপের সময় ধীরস্থিরতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে আল্লাহর নিদর্শনের অসম্মান না হয়। রাগ-আক্রোশ নিয়ে জুতো কিংবা বড় পাথর নিক্ষেপ করা কখনো উচিৎ নয়; বরং এটি মারাত্মক ভুল। জামরাতে শয়তান বাঁধা আছে বলে কেউ কেউ ধারণা করেন, তা ঠিক নয়। এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই[3]

 

শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ (হাফি.) পরিচালিত সুবিখ্যাত ইসলামকিউএ ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত এক ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়েছেঃ

 

কেউ কেউ ধারণা করে যে, এ জমরাতগুলো শয়তান এবং তারা শয়তানকেই কঙ্কর নিক্ষেপ করছে। এ কারণে আপনি দেখবেন যে, কেউ কেউ তীব্র রাগ, ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়াশীল আসে; যেন শয়তান তার সামনে। এরপর এই জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করে। যার ফলে নিম্নোক্ত অনিষ্টগুলো ঘটে থাকে:

 

১। এমন ধারণা ভুল। বরং আমরা এই জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপ করি আল্লাহ্‌র যিকিরকে বুলন্দ করার জন্য, রাসূল () এর অনুসরণ করে এবং ইবাদত হিসেবে। কেননা কোন মানুষ যদি কোন নেকীর কাজের উপকারিতা না জানা সত্ত্বেও সেটা পালন করে সে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র ইবাদত হিসেবেই সেটা করে। এটি আল্লাহ্‌র প্রতি তার পরিপূর্ণ নতিস্বীকার ও পূর্ণ আনুগত্যের প্রমাণ।

 

২। কেউ কেউ তীব্র প্রতিক্রিয়া, ক্রোধ, রাগ, শক্তি ও আবেগ তাড়িত হয়ে কঙ্কর মারতে আসে। আপনি দেখবেন যে, এতে করে সে ব্যক্তি অন্য মানুষকে কঠিন কষ্ট দেয়; যেন তার সামনের মানুষগুলো কোন কীটপতঙ্গ, তাদেরকে কোন পরোয়াই সে করে না, দুর্বলদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। সে উত্তেজিত উটের মত সামনের দিকে আগাতে থাকে।

 

৩। ব্যক্তি এ কথা মনে রাখে না যে, সে আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে এসেছে কিংবা এই কঙ্কর নিক্ষেপের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র জন্য একটি ইবাদত পালন করছে। এ কারণে সে ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত যিকির-আযকার বাদ দিয়ে শরিয়তে অনুমোদন নেই এমন কথাবার্তা বলে। আপনি দেখবেন যে, কঙ্কর মারার সময় সে ব্যক্তি বলছে: ‘হে আল্লাহ্‌! শয়তানকে অসন্তুষ্টকরণ ও রহমানকে সন্তুষ্ট করণস্বরূপ’। অথচ কঙ্কর মারার সময় এমন কথা বলা শরিয়তসম্মত নয়। বরং শরিয়তের বিধান হচ্ছে- তাকবীর বলা, যেভাবে নবী () করেছেন।

 

৪। এ ভ্রান্ত আকিদার কারণে দেখা যায় যে, তিনি বড় বড় পাথর নিয়ে সেগুলো নিক্ষেপ করছেন। তার ধারণা হচ্ছে পাথর যত বড় হবে শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে সেটা ততবেশী কার্যকর হবে। আপনি দেখবেন, এমন লোকেরা জুতা ছুড়ে মারছেন, কাষ্ঠখণ্ড ও এ জাতীয় অন্য কিছু ছুড়ে মারছেন; যেগুলো ছুড়ে মারা জায়েয নয়।

 

আচ্ছা, আমরা যখন বলছি যে, এমন বিশ্বাস ভ্রান্ত-বিশ্বাস তাহলে জমরাতে কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে কী ধরণের বিশ্বাস রাখব? জমরাতগুলোতে কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস রাখব যে, আমরা আল্লাহ্‌র মহত্ব প্রকাশ ও আল্লাহ্‌র ইবাদত পালন হিসেবে এবং রাসূল() এর অনুকরণ হিসেবে এ আমলটি করছি।[4]

 

জামরাতুল আকাবাতে পাথর নিক্ষেপের জন্য চিহ্নিত স্থান ও তিনটি স্তম্ভ

ছবির উৎসঃ https://www.islamiclandmarks.com/makkah-hajj-places/jamarat

 

আরো একটি ভুল ধারণা হচ্ছেঃ ঐ স্তম্ভগুলোকে তাক করে স্তম্ভগুলোতেই পাথর মারতে হয়! অথচ এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। বিষয়টা মোটেও এমন না যে নিশানা করে ঐ স্তম্ভগুলোর গায়েই পাথর লাগাতে হবে। স্তম্ভগুলো কোনো "শয়তানের মূর্তি" বা শয়তানের চিহ্ন না যে এগুলোকে পাথর মেরে ঘায়েল করতে হবে! বরং সেখানে ঘিরে রাখা বেসিনের মতো জায়গাটির মধ্যে পাথর মারতে হয়। স্তম্ভগুলো শুধুমাত্র স্থানের নির্দেশক। লম্বা স্তম্ভ রাখার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও যাতে দূর থেকে পাথর মারার স্থানটিকে সহজে আলাদা করা যায় ও চিহ্নিত করা যায়। [5]  নিক্ষেপ করা পাথর স্তম্ভের চারদিকে বেসিনের মতো ঘিরে রাখা জায়গার মধ্যে কোনো এক স্থানে পতিত হলেই এই আমলটি পালন হবে। [6] অনেকে এই তথ্য জানে না যে শুধু পাথর মারার ঐ জায়গাটিতে না বরং মক্কায় এমন আরো বিভিন্ন স্থানে স্তম্ভ দেয়া আছে। যেমন মক্কায় হারাম এলাকা শুরুর স্থান, আরাফাতের পাহাড় ইত্যাদি স্থানেও স্তম্ভ দেয়া আছে যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে অন্য স্থান থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়। এমনকি স্বয়ং ইব্রাহিম(আ.) জিব্রাঈল(আ.) এর নির্দেশনায় মক্কায় হারাম এলাকার সীমানা নির্মাণ করেছিলেন এবং নবী মুহাম্মাদ() তা পুনরায় বহাল করেন বলে বর্ণনা রয়েছে। নবী() এর নির্দেশনায় হারামের সীমা নির্দেশক স্তম্ভ নির্মাণ করা হয় উল্লেখ করে ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থে বর্ণনা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে স্থানের নির্দেশক; কোনো মূর্তি না বা কোনো কিছুর প্রতীক না। সাধারণভাবে মানুষ নিজ জমিকে প্রতিবেশীর জমি থেকে আলাদা করার জন্য যেভাবে চিহ্ন দেয়, এগুলোও ঠিক তেমন চিহ্ন। [7] পাথর নিক্ষেপের স্থানের স্তম্ভগুলো যদি “শয়তানের মূর্তি” (!) হতো, তাহলে অন্য স্তম্ভগুলো কিসের ‘মূর্তি’?? এ থেকে আরো ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে যে "শয়তানের মূর্তিকে পাথর" মারার বিশ্বাস বা পৌত্তলিকতার অভিযোগ কতোটা অসার। ওখানে কোনো পুতুল নেই, মূর্তি নেই। পৌত্তলিকতাও নেই।

 

১৯৫৩ সালে জামরাতুল আকাবাতে পাথর নিক্ষেপের স্থানে ক্ষুদ্রাকৃতির স্তম্ভ, যখন হাজিরদের ভিড় অনেক কম ছিলো

ছবির উৎসঃ https://www.islamiclandmarks.com/makkah-hajj-places/jamarat

 

মক্কায় আরাফাত পাহাড় চিহ্নিত করে স্তম্ভ

ছবির উৎসঃ https://hajjumrahplanner.com/jabal-al-rahmah/#Photo_Gallery

 

ঐ স্থানে যদি শয়তানকে না-ই বেঁধে রাখা হয়, তাহলে হজের সময় কেন ঐ স্থানে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়?

 

মুসনাদ আহমাদে ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে একটি বর্ণনা রয়েছে যে, যখন ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় সন্তানকে যবাহ করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শাইতান সামনে এসে হাযির হল। কিন্তু তিনি শাইতানকে পিছনে ফেলে অগ্রসর হলেন। অতঃপর জিবরাঈলসহ (আঃ) জামরায়ে আকাবায় উপস্থিত হলেন। এখানেও শাইতান সামনে এলে তার দিকে তিনি সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। তারপর তিনি জামরায়ে উসতার নিকট এসে পুনরায় শাইতানের দিকে সাতটি কংকর ছুঁড়ে মারেন। অতঃপর সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে ছেলেকে মাটিতে শায়িত করলেন।…”। [8]

 
" ইবরাহীম আ. যখন আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে হযরত ইসমাইল আ.কে কুরবানী করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শয়তান তিনবার তাঁকে ফিরানোর চেষ্টা করেছিল। আর তিনবারই ইবরাহীম আ. তাকে সাতটি করে কংকর নিক্ষেপ করে প্রতিহত করেছিলেন। অবশেষে তিনি এই মহাপরীক্ষায় কামিয়াব হয়েছেন। যে তিন স্থানে ইবলিস তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সেই তিন স্থান নিশানার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে সেখানে একটি করে খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে যে খুঁটিটি মক্কার সীমানার একেবারেই নিকটবর্তী এবং মসজিদে খাইফ থেকে দূরে অবস্থিত সেটাকে ‘আলজামরাতুল কুবরা’ বা ‘জামরাতুল আকাবা’ বলে। এর পরেরটিকে ‘আলজামরাতুল উসতা’ এবং এর পরেরটিকে ‘আলজামরাতুল উলা’ বা ‘আলজামরাতুল দুনইয়া’ (নিকটতম জামরা) বলে। হযরত ইবরাহীম আ. সরাসরি শয়তানকেই কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন। আজ তাঁর অনুসরণে ওই সকল স্থানে কংকর নিক্ষেপ করা হয় যেখানে যেখানে শয়তান তাঁকে বাধা দিয়েছিল আর তিনি কংকর মেরে ওকে প্রতিহত করেছিলেন। আমাদের কংকর নিক্ষেপের উদ্দেশ্য হল মিল্লাতে হানীফ (মিল্লাতে তাওহীদ)-এর ইমাম হযরত ইবরাহীম আ.-এর অনুকরণ এবং তাঁর কাজের হুবহু অনুকরণ। এই জযবা ও অনভুতি নিয়ে যে, আশেকীন ও মুহিববীনের অনুকরণের মাঝে এমন শক্তি ও প্রভাব রয়েছে যে, যারা তাদের অনুকরণ করবে তাদের মাঝেও আল্লাহর ভালোবাসা ও মহববত সৃষ্টি হবে এবং এই প্রত্যাশা নিয়ে যে, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও জীবনের প্রতিটি ধাপে প্রতিটি বাঁকে শয়তানের মোকাবেলা করার এবং তাতে কামিয়াব হওয়ার তাওফীক দান করুন।" [9]
 
তাহলে বোঝা গেলো যে পাথর নিক্ষেপের ঐ স্তম্ভ বা পিলারগুলো মোটেও শয়তান না বা শয়তানের মূর্তিও না। এই কাজগুলো করা হয় মিল্লাতে ইব্রাহিমের অনুসরণ করে। নবী ইব্রাহিম(আ.) আল্লাহর আদেশে নিজ পুত্রকে কুরবানী করতে গিয়েছিলেন, শয়তানকে প্রতিহত করতে পাথর মেরেছিলেন, ইসমাঈল(আ.) এর মা পানির সন্ধানে সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌঁড়েছিলেন। [10] হাজি সাহেবরাও এই কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি করেন। হাজি সাহেবরাও সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌঁড়ান, যদিও তাঁরা পানির সন্ধানে এটি করেন না; হাজি সাহেবরাও কুরবানী দেন যদিও তাঁরা নিজ সন্তানকে কুরবানী দেন না। একইভাবে হাজি সাহেবরা জামরাতে পাথর ছোড়েন, কিন্তু সেখানে শয়তান বাঁধা থাকে না। এই কাজগুলো মিল্লাতে ইব্রাহিমের অনুসরণ। একত্ববাদী ও পৌত্তলিকতার মহা বিরোধী নবী ইব্রাহিম(আ.) এর ধর্মাদর্শের অনুসরণ। প্রাচীন আরব পৌত্তলিকরা হজের রীতিতে ইব্রাহিমী রীতির সাথে সাথে নিজেদের বানানো কিছু পৌত্তলিক রীতি সংযুক্ত করেছিলো। শেষ নবী মুহাম্মাদ(
) আল্লাহর আদেশে সকল পৌত্তলিক রীতিগুলো বিলোপ করেন এবং শুধুমাত্র ইব্রাহিমী রীতিগুলো বহাল রাখেন।

অতএব ইসলামবিরোধীরা হজের সময়ে পাথর মারাকে "শয়তানের মূর্তিতে পাথর মারা", "পৌত্তলিকতা" এইসব বলে যে অপপ্রচার চালায় এর অসারতা প্রমাণ হলো। তারা মূলত সমাজে প্রচলিত অজ্ঞতাকে পুঁজি করে ও সেই অজ্ঞতাকে "ইসলামী বিশ্বাস" ধরে নিয়ে ইসলামকে 'পৌত্তলিক' প্রমাণ করতে চায়। আমাদের উচিত হবে ভালোভাবে ইসলামী আকিদা জানা ও পড়াশুনা করা। তাহলে ইসলামবিরোধীদের অপপ্রচারগুলো আর কারো মনে সংশয় জাগাতে পারবে না ইন শা আল্লাহ।
 
যদিও ঐ স্থানে শয়তান বাঁধা থাকে না, কিন্তু জামরাতে পাথর মারা সত্যিকার অর্থেই শয়তানকে "পাথর মারা"তে রূপান্তরিত করা সম্ভব।
কিভাবে?
উত্তর হচ্ছেঃ সুন্নাহর অনুসরণ করলে। আমরা যতো সুন্নাহ অনুসরণ করবো, আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করবো, শয়তান ততো বেশি লাঞ্ছিত হবে। স্তম্ভে পাথর মারা তখন শয়তানের জন্য আঘাতের কারণ হবে। সুন্নাহর পরিপূর্ণ অনুসরণ করলে এর দ্বারা আমরা শয়তানকে পাথর মারতে পারবো।


"...এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, ওই সকল স্থানে খুঁটির আকৃতিতে শয়তানও থাকে না বা ওই সকল খুঁটির সাথে শয়তানকে বেঁধেও রাখা হয়নি। কিন্তু যদি আল্লাহ তাআলার বড়ত্বের প্রতি বিশ্বাস রেখে চিরশত্রু শয়তানের বিরোধিতা করার সংকল্প নিয়ে জবানে আল্লাহ তাআলার তাওহীদের ঘোষণা দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে কংকর নিক্ষেপ করা হয় তাহলে সেটা হবে শয়তানের মুখে কালি মেখে তাকে অপদস্ত করা। এর দ্বারা শয়তানের কোমর ভেঙে যায় এবং সে হতাশ হয়। তবে শয়তানকে জুতা ছুঁড়ে মেরে বা তাকে গালি দেওয়ার মাধ্যমে নয়, বরং আল্লাহ তাআলার কাছে তার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে ও তাকে চিরশত্রু ভেবে তার বিরোধিতা করা ও সুন্নাত অনুসারে ওই সকল স্থানে কংকর নিক্ষেপ করার দ্বারাই সে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত হয়।
 
আর বিশেষ করে কংকর নিক্ষেপের কাজ যদি সুন্নত মোতাবেক করা হয় তাহলে সেটা হয় শয়তানের জন্য সবচেয়ে লাঞ্ছনা ও অপদস্ততার কারণ। এই কংকর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে যে যত বেশি আল্লাহর বড়ত্ব ও আনুগত্যের প্রেরণা আর মহববত অন্তরে পোষণ করবে এবং যত বেশি শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জযবা ও ইচ্ছা রাখবে সেটা শয়তানের জন্য তত বেশি লাঞ্ছনা ও আক্ষেপের কারণ হবে।
" [11]
 

তথ্যসূত্র

[1] একটি ভুল ধারণাঃ মিনার তিনটি ‘জামরা’ কি তিন শয়তান? - মাসিক আল কাউসার
https://www.alkawsar.com/bn/article/2606/

অথবা https://web.archive.org/web/20230203044348/https://www.alkawsar.com/bn/article/2606/ (আর্কাইভকৃত)

[2] কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত’ - শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন(র.) নবম অধ্যায়
https://www.hadithbd.com/books/link/?id=9424

[3] সংক্ষিপ্ত হজ, উমরা ও যিয়ারত’ - আলী হাসান তৈয়ব ["কঙ্কর নিক্ষেপের পদ্ধতি" অংশ, পৃষ্ঠা ৮৫]
https://islamhouse.com/read/bn/সংক্ষিপ্ত-হজ-উমরা-ও-যিয়ারত-373500#t29

[4] "কঙ্কর নিক্ষেপের সময় সংঘটিত ভুলভ্রান্তিগুলো" - IslamQA (শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ)
https://islamqa.info/bn/34420

অথবা https://archive.is/wip/vgFDm (আর্কাইভকৃত)

[5]  In the place of throwing the Jamaraat previously, there were pillars, but they were not put as a sign for the devil; rather, they were just marks to specify the place of throwing the Jamaraat, especially for those who are far from it [so that they could see it] due to the large crowd. So the pillar is put to determine the place where the Jamaraat should be thrown.

From: "Pillar on Mount 'Arafah not obelisk" (Islamweb)

https://www.islamweb.net/en/fatwa/336991/

অথবা https://archive.is/wip/siVR0 (আর্কাইভকৃত)

[6]  Stoning the Jamaraat means throwing a certain number of pebbles in the specific places for stoning in Mina (the Jamaraat). It is one of the great rituals of Hajj which the pilgrims do during a certain number of days in Mina. The Jamrah is not the pillar that is found in the middle of the basin surrounding it (the marma), rather the Jamrah is the basin surrounding this pillar. If a person’s pebbles fall inside the basin that is allocated for stoning, then his stoning is valid and is acceptable, according to scholarly consensus.”

From: "Does Stoning the Jamarat Count If the Pebbles Don't Fall in the Basin?" - IslamQA (Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid)
https://islamqa.info/en/126231/

অথবা https://archive.is/wip/DjeEy (আর্কাইভকৃত)

[7] "...these are put as marks for determining a specific place and distinguishing it from others, in the same manner that people put marks on their land to shows its boundaries and separate it from the land of the neighbors, for example, or for other purposes.

...

... ‘Umar, may Allah be pleased with him, sent four persons from Quraysh to determine the place of the beginning of the Haram and distinguish it from the place that is not included in the Haram and erect pillars there by which people would know that the Haram starts from there. Prior to ‘Umar, may Allah be pleased with him, the Prophet  sallallaahu  `alayhi  wa  sallam ( may  Allaah exalt his mention ) had ordered to renew those marks during the conquest of Makkah.

 

Ibn Al-Qayyim  may  Allaah  have  mercy  upon  him said in Zaad Al-Ma’aad, “The Prophet  sallallaahu  `alayhi  wa  sallam ( may  Allaah exalt his mention ) ordered Tameem ibn Usayd Al-Khuzaa’i to renew the Ansaab (pillars/signs) of the Haram…”

 

This is because knowing these boundaries is important as there are many jurisprudence rulings that are related to it.

 

Imaam An-Nawawi  may  Allaah  have  mercy  upon  him said:

 

“Knowing the boundaries of the Haram is one of the most important matters that are to be taken into account due to the many (Islamic) rulings that are related to it, and I endeavored to clarify these boundaries and followed the statements of the scholars in being very accurate in determining it, praise be to Allah… And know that there are signs that have been erected in all corners of the Haram. Al-Azraqi and others mentioned with their chains of narrators that Prophet Ibraaheem (Abraham), may Allah exalt his mention, marked the boundaries of the Haram and erected signs around it, and Jibreel (Archangel Gabriel), may Allah exalt his mention, showed him their places, and our Prophet  sallallaahu  `alayhi  wa  sallam ( may  Allaah exalt his mention ) commanded renewing them, then 'Umar, then ‘Uthmaan, then Mu’aawiyah, may Allah be pleased with them, and they are clear until now, praise be to Allah…” [abridged]

 

With regard to the pillar on the Mount of ‘Arafah, we do not know when it was erected, but it is no more than a mark on the top of the mountain, and there are no Islamic rulings related to it."

From: "Pillar on Mount 'Arafah not obelisk" (Islamweb)

https://www.islamweb.net/en/fatwa/336991/

অথবা https://archive.is/wip/siVR0 (আর্কাইভকৃত)

[8] মুসনাদ আহমাদ ১/২৯৭; আল মানাসিক কিতাবে হিশাম (র.) এর বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

তাফসির ইবন কাসির, ৭ম খণ্ড (হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী), সূরা আস সফফাতের ১০৩-১১৩ আয়াতের তাফসির, পৃষ্ঠা ২৩৭

[9] একটি ভুল ধারণাঃ মিনার তিনটি ‘জামরা’ কি তিন শয়তান? - মাসিক আল কাউসার
https://www.alkawsar.com/bn/article/2606/

অথবা https://web.archive.org/web/20230203044348/https://www.alkawsar.com/bn/article/2606/ (আর্কাইভকৃত)

[10] “… … ইসমাঈলের মা ইসমাঈলকে স্বীয় স্তন্যের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। অবশেষে মশকে যা পানি ছিল তা ফুরিয়ে গেল। তিনি নিজে পিপাসিত হলেন, এবং তাঁর (বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ায়) শিশু পুত্রটি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুটির প্রতি দেখতে লাগলেন। পিপাসায় তার বুক ধরফড় করেছে অথবা রাবী বলেন, সে মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। শিশুপুত্রের এ করুন অবস্থার প্রতি তাকানো অসহনীয় হয়ে পড়ায় তিনি সরে গেলেন আর তাঁর অবস্থানের সংলগ্ন পর্বত ’সাফা’ কে একমাত্র তাঁর নিকটমত পর্বত হিসাবে পেলেন। এরপর তিনি তার উপর উঠে দাঁড়ালেন আর ময়দানের দিকে তাকালেন। এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন, কোথাও কাউকে দেখা যায় না? কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না।

 

তখন ’সাফা’ পর্বত থেকে নেমে পড়লেন। এমন কি যখন তিনি নিচু ময়দান পর্যন্ত পৌছলেন, তখন তিনি তাঁর কামিজের এক প্রান্ত তুলে ধরে একজন শ্রান্ত-ক্লান্ত মানুষের ন্যায় ছুটে চললেন। অবশেষে ময়দানে অতিক্রম করে ’মারওয়া’ পাহাড়ের নিকট এসে তার উপর উঠে দাঁড়ালেন। তারপর এদিকে সেদিকে তাকালেন, কাউকে দেখতে পান কিনা? কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। এমনিভাবে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী(ﷺ) বলেছেন, এজন্যই মানুষ (হাজ্জ (হজ্জ) বা উমরার সময়) এ পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সায়ী করে থাকে। এরপর এরপর তিনি যখন মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন, তখন একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং তিনি নিজেকেই নিজে বললেন, একটু অপেক্ষা কর। (মনোযোগ দিয়ে শুনি।) তিনি একাগ্রচিত্তে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তো তোমার শব্দ শুনিয়েছ, আর আমিও শুনেছি)। যদি তোমার কাছে কোন সাহায্যকারী থাকে (তাহলে আমাকে সাহায্য কর)।  … …”

সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩১২৫; দীর্ঘ হাদিসটি সম্পূর্ণ দেখুন এখান থেকেঃ
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=3383

[11] একটি ভুল ধারণাঃ মিনার তিনটি ‘জামরা’ কি তিন শয়তান? - মাসিক আল কাউসার
https://www.alkawsar.com/bn/article/2606/

অথবা https://web.archive.org/web/20230203044348/https://www.alkawsar.com/bn/article/2606/ (আর্কাইভকৃত)