বদর যুদ্ধ শেষ। শোচনীয় পরাজয়ে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো মক্কার পৌত্তলিক কুরাঈশরা। তাদের সেরা সব বীর এবং নেতাদের প্রায় সবাই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। মদীনার মুসলিমদের প্রতি সীমাহীন ক্রোধে জ্বলছিলো তারা। মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ সৈনিক নিয়েই মক্কার সেরা বীরদেরকে এভাবে পরাস্ত করলো মুসলিমরা? মক্কাবাসীর সব গৌরব একেবারে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে ওরা। প্রতিশোধ...কঠিন প্রতিশোধ চাই এর।
মক্কার উমায়র ইবন ওয়াহাব ছিলো ইসলামের চরমতম দুশমনদের একজন। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর মক্কার জীবনে তাঁকে এবং তাঁর সাহাবীদেরকে যারা নির্যাতন করতো, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলো এই ব্যক্তি। বদরের যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে তার ক্রোধকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো। একে তো কুরাঈশদের বড় বড় নেতারা প্রাণ হারিয়েছিলো, অন্যদিকে তার নিজ পুত্র উমায়র ইবন ওয়াহাব মুসলিমদের হাতে বন্দী হয়েছিলো। মুসলিমরা যদিও বদরের যুদ্ধের বন্দীদেরকে হত্যা করেনি, বরং অল্প মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু ছেলের বন্দী হওয়া তো মহা অপমানের জিনিস!
কা’বার হাতিমের কাছে বসে ছিলো উমায়র ইবন ওয়াহাব। সাথে সাফওয়ান ইবন উমাইয়া – মক্কার আরেক বড় কুরাঈশ নেতার সন্তান। বদরের যুদ্ধে নিহতদের কথা স্মরণ করে বললোঃ “এরা মারা যাবার পর আর বেঁচে থাকার কোনো সার্থকতা নেই।”
উমায়র বললোঃ “আল্লাহর শপথ! তুমি সত্যই বলেছ। আল্লাহর কসম! আমি যদি ঋণী না হতাম, যা আদায়ের কোন পথ আমার কাছে নেই, আর আমার সন্তানগুলো যদি না থাকত, যাদের আমার পর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা করছি, তবে আমি অবশ্যই গিয়ে মুহাম্মদকে হত্যা করে ফেলতাম। আরো কারণ হল আমার ছেলে তাদের হাতে বন্দী রয়েছে।”
সাফওয়ান সুযোগ বুঝে বললোঃ “তোমার ঋণের দায়িত্ব আমার, আমি তা পরিশোধ করবো। তোমার সন্তানরা আমার সন্তানদের সাথে থাকবে। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে, আমি তাদের সাহায্য করবো। এমনটি হবে না যে, কোনো কিছু আমার রয়েছে আর তারা পায়নি।
তখন উমায়র তাকে বললঃ তবে তুমি আমাদের এ (আলাপের) বিষয়টা গোপন রাখো!
সাফওয়ান বললোঃ তাই করবো! [1]
সাফওয়ান তখনই তরবারিতে ধার দিলো এবং তাতে বিষ মাখিয়ে উমায়রকে দিয়ে দিলো। উমায়র মদীনায় গিয়ে উপস্থিত হলো এবং মসজিদে নববীর দরজায় গিয়ে উটকে বসিয়ে দিলো।
উমার(রা.) উমায়রকে দেখামাত্র বুঝে ফেললেন, এ কোন অপবিত্র উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে। তৎক্ষণাৎ হযরত উমর (রা) তার তরবারির খাপ ছিনিয়ে নিলেন এবং তাকে পাকড়াও করে নবী(ﷺ)-এর সামনে হাজির করলেন।
রাসূলুল্লাহ(ﷺ) উমার(রা.)-কে বললেন, “ওকে ছেড়ে দাও।” আর উমায়রকে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন এসেছো?”
উমায়র বললো, “আমাদের বন্দীদের ছাড়িয়ে নিতে এসেছি।”
তিনি বললেন, “সত্যি করে বলো, তুমি কি কেবল এ উদ্দেশ্যেই এসেছো? সত্যি করে বলো দেখি, তুমি এবং সাফওয়ান হাতিমে বসে কী পরামর্শ করেছিলে?”
উমায়র ঘাবড়ে গিয়ে বললো, “আমি আবার কী পরামর্শ করেছিলাম!”
তিনি [নবী(ﷺ)] বললেন, “তুমি এ শর্তে আমাকে হত্যার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলে যে, সাফওয়ান তোমার সন্তান-সন্তুতির দেখাশোনা করবে এবং তোমার ঋণ পরিশোধ করে দেবে।
উমায়র বললোঃ
اشهد انك رسول الله - ان هذا الحديث كان بيني وبين صفوان في الحجر لم يطلع عليه احد غيري وغيره فاخبرك به فامنت بالله ورسوله
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। এ ঘটনা তো সাফওয়ান ও আমি ছাড়া আর কেউই জানতো না! কাজেই আল্লাহই আপনাকে এ খবর দিয়েছেন। আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনলাম।” [2]
ইবন ইসহাকের বর্ণনায় আরো বিস্তারিতভাবে আছে, উমায়র বলে উঠে, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর রাসুল। হে আল্লাহর রাসুল, এর আগে আপনি আমাদেরকে যেসব আসমানী খবর দিতেন এবং আপনার কাছে যেসব ওহী আসতো, আমরা সেগুলোকে মিথ্যা মনে করতাম। কিন্তু এ ঘটনায় তো কেবল আমি ও সাফওয়ান উপস্থিত ছিলাম। শপথ আল্লাহর! এখন আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছি—একমাত্র আল্লাহই আপনাকে এ সংবাদ দিয়েছেন। প্রশংসা সেই সত্তার, যিনি আমাকে ইসলামের দিশা দিয়েছেন এবং এখানে এনে হাজির করেছেন!”
এরপর সে সত্যের সাক্ষ্য পাঠ করে। রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু।
সাহাবীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহর রাসুল(ﷺ) বললেন, “তোমাদের ভাইকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান শিক্ষা দাও; তাঁকে কুরআন শেখাও; আর তাঁর বন্দীকে মুক্ত করে দাও।”
তাঁরা তাই করলেন।
এরপর উমায়র(রা.) বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! এতদিন আমি ছিলাম আল্লাহর আলো নিভিয়ে দেওয়ার জন্য সদা-তৎপর; আল্লাহ তা’আলার দ্বীনের অনুসারীদের কঠিন শাস্তিদাতা। এখন আমার মন চায়, আপনি আমাকে অনুমতি দিন—আমি মক্কা গিয়ে তাদেরকে আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও ইসলামের দিকে ডাকি। আশা করা যায়, (এর ফলে) আল্লাহ তাদের পথ দেখাবেন। নতুবা, নিজেদের দ্বীনে অটল থাকলে আমি তাদের কষ্ট দেবো, যেভাবে আপনার অনুসারীদেরকে একসময় দ্বীন পালনের জন্য কষ্ট দিতাম।” [3]
রাসুল(ﷺ) তাঁকে অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি মদীনাতে দ্বীন শেখার কাজেও সময় দিচ্ছিলেন। এরপর মক্কায় ফিরে আসছিলেন উমায়র ইবন ওয়াহাব(রা.)।
বদরের আরেক বন্দী ছিলো সুহায়ল ইবন আমর। সে ছিল অত্যন্ত চতুর ও শুদ্ধভাষী। জনসমাবেশে নবী(ﷺ) এর নিন্দাবাদ করত। উমার(রা.) বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে অনুমতি দিন, আমি সুহায়লের নিচের দু'টি দাঁত উপড়ে ফেলি, যাতে তার সামর্থ্যই না থাকে যে, কোনো সুযোগে আপনার বিরুদ্ধে কিছু বলে!”
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বললেন, “ওকে ছেড়ে দাও। এটা মোটেই আশ্চর্যের নয় যে, আল্লাহ তা'আলা তার দ্বারা তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারেন।” [4]
এদিকে সাফওয়ান ইবন উমাইয়া প্রতিদিন মনে মনে রঙিন স্বপ্ন দেখে। সে মক্কায় কুরাইশদের বিভিন্ন আড্ডায় গিয়ে বলতে থাকে, “শিগগির, একটা মহাসুখবর তোমাদের কাছে এসে পৌঁছবে। তোমরা তাতে বদরের সান্ত্বনা পাবে!
সাফওয়ানের প্রতীক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে চললো। প্রথমে সে কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলো, পরে অস্থির হয়ে পড়লো। মদীনার দিক থেকে আগত প্রতিটি কাফিলা বা আরোহীকে ধরে ধরে সে উমায়র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলো। কিন্তু কেউ সন্তোষজনক জবাব দিতে পারলো না। এমন সময় মদীনা থেকে আগত এক আরোহীকে সে পেল। ঔৎসুক্যের আতিশয্যে সাফওয়ান তাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো, “মদীনায় কি নতুন কোন ঘটনা ঘটেনি?”
লোকটি জবাব দিল, “হাঁ, বিরাট এক ঘটনা ঘটে গেছে।”
সাফওয়ানের মুখমণ্ডল দীপ্তিমান হয়ে ওঠে এবং আনন্দ উল্লাসে তার হৃদয়-মন ফেটে পড়ার উপক্রম হয়। সাথে সাথে সে আবার প্রশ্ন করে, “কী ঘটেছে আমাকে একটু খুলে বলো তো!”
লোকটি বললো, “উমায়র ইসলাম গ্রহণ করেছে। সেখানে সে নতুন দ্বীনের দীক্ষা নিচ্ছে এবং কুরআন শিখছে।”
সাফওয়ানের দুনিয়াটা যেন ওলট-পালট হয়ে গেল। তার মাথায় যেন বাজ পড়লো। তার ধারণা ছিল, দুনিয়ার সব মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলেও উমায়র কখনো ইসলাম গ্রহণ করবে না। [5]
রাসুল(ﷺ) এর হন্তারকের ভূমিকায় মদীনায় ছিলেন মানুষটি। বুকে ছিলো তীব্র ঘৃণা আর প্রতিশোধের আগুন। কিন্তু রাসুল(ﷺ) তাঁকে এমন কিছু সংবাদ বলে দিয়েছিলেন যা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। রাসুল(ﷺ)কে হত্যার জন্য যে পরিকল্পনা কা’বার হাতিমের নিকট বসে করা হয়েছিলো, সুদূর মদীনায় বসে স্বাভাবিকভাবে কোনো মানুষের পক্ষে সেই সংবাদ জানা সম্ভব নয়। উমায়র(রা.)কে নিদর্শন দেখালেন আল্লাহর রাসুল(ﷺ), যিনি ছিলেন ক্ষমাশীল ও সহনশীল। তাঁর সম্মানে যুদ্ধবন্দীকেও মুক্ত করে দিলেন। ইসলামের দীক্ষা দিলেন। হন্তারক হতে চাওয়া মানুষটি হয়ে গেলো ইসলামের প্রচারক।
সুহায়ল ইবন আমরের ব্যাপারে রাসুল(ﷺ) এর ভাষ্য ছিলো – তার দ্বারা আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারেন। যদিও সে মুহূর্তে তিনি ছিলেন ইসলামের প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণকারী একজন ব্যক্তি। কিন্তু সত্য নবীর সত্যভাষণ কখনো মিথ্যা হয় না। মক্কা বিজয়কালে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন সুহায়ল ইবন আমর(রা.) আর যে ভূমিকার দ্বারা তিনি মুসলিম উম্মাহকে সন্তুষ্ট করেন, তা বর্ণনা করেছেন ইবন কাসির(র.)। সে ভূমিকা হচ্ছে - রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর ইনতিকালের পর যখন গোটা আরবে বহু লোক মুরতাদ হয়ে যায় এবং মুনাফিকরা মদীনায় সংঘবদ্ধ হয়, ইসলামের এ দুর্দিনকালে সুহায়ল(রা.) মক্কায় ভাষণ-বক্তৃতার মাধ্যমে লোকদের সঠিক দ্বীনের উপর অবিচল হয়ে থাকার ব্যপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। [6] যে সুহায়ল একদিন ছিলেন রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর চরম বিরোধিতাকারী ও নিন্দাকারী, সেই তাঁরই ভূমিকার কারণে মক্কাবাসী পথহারা হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলো। সত্য নবীর পবিত্র জবানীতে এর বহুকাল আগেই এর ভবিষ্যতবাণী করা হয়ে গিয়েছিলো।
কাহিনীর অন্য চরিত্র সাফওয়ান ইবন উমাইয়ার কী হলো?
মক্কা বিজয়ের পরবর্তী সময়। কা’বা এবং মক্কার আধিপত্য তখন মুসলিমদের হাতে। মুসলিমদেরকে এক সময়ে নিপীড়নকারী সাফওয়ান তখন মক্কা ছেড়ে পালাচ্ছিলো। জেদ্দা থেকে জাহাজ যোগে ইয়ামেনে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়ে সে। উমায়র ইবন ওয়াহাব(রা.) বিষয়টি রাসুলুল্লাহ(ﷺ) -এর গোচরে আনেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর নবী! সাফওয়ান ইবন উমাইয়া হচ্ছে তার সম্প্রদায়ের নেতা - সে আপনার ভয়ে নিজেকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাচ্ছে। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তাকে নিরাপত্তা দিন। আল্লাহ আপনার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।
রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বললেন, “তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হলো।”
উমায়র(রা.) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে এমন একটি নিদর্শন দিন, যার দ্বারা বোঝা যায় যে, আপনি তাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন।
তখন রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাঁর নিকট নিজের পাগড়ীটি দিয়ে দিলেন। যা মাথায় দিয়ে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন। উমায়র পাগড়ীটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন এবং এমন অবস্থায় তাকে পেয়ে যান যখন সে সমুদ্রে পাড়ি দেয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
উমায়র(রা.) তাকে ডেকে বললেন, হে সাফওয়ান! আমার পিতামাতা তোমার জন্যে উৎসর্গ হোন। আল্লাহকে ভয় করো, নিজেকে ধ্বংস করো না। এই যে আমি রাসুলুল্লাহর(ﷺ) পক্ষ থেকে তোমার জন্যে নিরাপত্তা সনদ নিয়ে এসেছি।
সাফওয়ান বললো, “তোমার সর্বনাশ হোক। তুমি আমার নিকট থেকে দূর হও। আমার সাথে কোনো কথা বলো না।
উমায়র(রা.) বললেন, “সাফওয়ান, তোমার জন্যে আমার পিতামাতা উৎসর্গ হোন। দেখো, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) মানবকুলের সর্বোত্তম ব্যক্তি। মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক সদাচারী লোক, মানব গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিষ্ণু পুরুষ এবং সমগ্র মানবমণ্ডলীর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তি। তিনি তো তোমার পিতৃব্য-পুত্র। তাঁর সম্মান তোমারই সম্মান। তাঁর গৌরব তোমারই গৌরব, তাঁর রাজত্ব তোমারই রাজত্ব।
সাফওয়ান বললো, “আমি নিজের জীবনের ব্যাপারে তাঁকে ভয় করি।”
উমায়র(রা.) বললেন, “তাঁর সহিষ্ণুতা ও মহানুভবতা এর অনেক উর্ধ্বে।”
সব শেষে সাফওয়ান উমায়রের(রা.) সাথে ফিরে আসে এবং রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন সাফওয়ান বললো, “ও দাবি করছে, আপনি নাকি আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন?”
রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বললেন, “সে সত্য কথাই বলেছে।”
সাফওয়ান বললো, “তা হলে এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করার জন্যে আমাকে দু' মাসের অবকাশ দিন।”
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বললেন, “যাও, চার মাসের অবকাশ দেওয়া হলো, (ভালোরূপে চিন্তা-ভাবনা করো)।”
দুই মাসের সময় চেয়ে মানবকুলের সর্বোত্তম ব্যক্তিটির কাছ থেকে চার মাসের সময় পেলেন সাফওয়ান। সত্যের সূর্যকে সামনে পেয়েও তাকে কি আর অগ্রাহ্য করা যায়? সাফওয়ান পারেননি। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিলেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন। [7]
যে নবীজি(ﷺ) এর পরশে সেকালের হন্তারকেরা প্রচারক হয়ে যেতো, চরম বিরোধীরা অনুসারীতে পরিণত হতো, তাঁর জীবনীর ব্যাপারে আজ মুসলিম সমাজেই চরম অজ্ঞতা বিরাজ করছে। আজও তাঁর সিরাতের যথার্থ অধ্যায়নে এমন কিছু হতে পারে। ইসলামের চরম বিরোধীরাও পরিণত হতে পারে এর খাঁটি অনুসারীতে, ভক্ত-নবী প্রেমিকে। সত্যের যে নিদর্শনগুলো তাঁর জীবনে ছড়িয়ে ছিলো, এগুলো অগ্রাহ্য করা কোনো সুবিবেচকের পক্ষে সম্ভব নয়। ইসলামের অনুসারী ও সমালোচক সবার জন্য ভাবনার খোরাক হয়ে থাকুক এ নিদর্শনগুলো।
তথ্যসূত্রঃ
[1] সীরাতুন নবী (সা.) - ইবন হিশাম, ২য় খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা ৩৪০
[2] সীরাতুল মুস্তফা সা. – ইদরীস কান্ধলবী [ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ], ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৫; ‘মুজামে তাবারানী'তে বিশুদ্ধ সনদে আনাস ইবন মালিক(রা.) থেকে এবং ‘দালাইলে বায়হাকী’ ও ‘দালাইলে আবু নুয়াইমে' মুরসাল সনদে এটি বর্ণিত হয়েছে
[3] ইবন ইসহাকের সূত্রে বিশুদ্ধ সনদে ইবন হিশাম, আস-সীরাহ, ১/৬৬১৬৬৩। বর্ণনাটি মুরসাল। ইবনু মানদাহ অপর একটি নিরবচ্ছিন্ন সনদে এটি উল্লেখ করেছেন। ইবনু মাদা'র সনদের বাহ্যিক দিকটি হাসান। দেখুনঃ সীরাতুন নবি ﷺ [‘সহীহুস সীরাতিন নাবাবিয়্যাহ’ এর বাংলা অনুবাদ] – ইব্রাহিম আলি (মাকতাবাতুল বায়ান প্রকাশনী), খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩০-১৩১
[4] সীরাতুল মুস্তফা সা. – ইদরীস কান্ধলবী [ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ], ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৫; বায়হাকী তাঁর দালাইলে এবং ইসাবা সুহায়ল ইবন আমর(রা.)-এর জীবন চরিতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন
[5] ‘আসহাবে রাসুলের জীবনকথা’ – মুহাম্মাদ আব্দুল মা’বুদ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩২
[6] ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ – ইবন কাসির (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৮
[7] ■‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ – ইবন কাসির (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫২৮-৫২৯
■ সীরাতুন নবী (সা.) - ইবন হিশাম, ৪র্থ খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা ৭৫-৭৬
■ ইসাবা – ইবন হাজার আল আসকালানী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৩২-৪৩৩
■ ইস্তিআব–ইবন আব্দুর বার, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭১৮-৭২২