Pray for the world economy

আল্লাহু আকবার বললে বা তাকবির দিলে কি আগুন নেভে?

  

দেশে কখনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে একটা হাদিস অনেকেই অনলাইনে শেয়ার করেন। হাদিসটা হচ্ছেঃ
 
"আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (
) বলেন, তোমরা যখন কোথাও আগুন দেখো, তখন তোমরা তাকবির দাও। কেননা, তাকবির আগুন নিভিয়ে দেবে। (কিতাবুদ দুআ, তাবারানি, হাদিস নং: ১০০২)"
 
এটি কোনো সহীহ হাদিস নয়। এটি একটি যঈফ বা দুর্বল হাদিস। [1]  এই মর্মে কোনো কথা নবী(
) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়।
 

নাস্তিক-মুক্তমনা বা অন্য ধর্মের ইসলামবিদ্বেষীরা এই হাদিসটি দেখিয়ে অনেক সময়ে ইসলামকে কটাক্ষ করার চেষ্টা করে। কিন্তু এটি  নবী() থেকে প্রমাণিত কোনো বিশুদ্ধ হাদিস নয়। কাজেই এটি নিয়ে আর আলোচনা অনাবশ্যক।


দেশে কোথাও আগুন লাগলেই একটা কমন দৃশ্য দেখা যায়। অনেক মানুষ ভিড় করে আগুন লাগা দেখে। আবার কেউ কেউ ঘটনাস্থলে ফোনে ভিডিও করে বা লাইভে যাবার চেষ্টা করে। এই ভিড়ের ফলে দমকল কর্মীদের জন্য আগুন নেভানোর কাজ অনেক কঠিন হয়ে যায়। আগুন লাগলে ভিড় করে "মজা দেখার" এই বিশ্রী এবং অসভ্য ধরণের অভ্যাসটি পরিত্যাগ করা উচিত। এমন কোনো কাজ করা উচিত না যাতে দমকলকর্মীদের কাজ কঠিন হয়ে যায়। বরং তাদেরকে সম্ভব হলে সাহায্য করার চেষ্টা করা উচিত।
 
আমাদের কিছু জাতীয় (বদ) অভ্যাস আছে। রাস্তায় টিভির দোকানের সামনেও ভিড় করে অনেকে টিভি দেখতে থাকে, চৌরাস্তার মোড়ে গুঁইসাপের তেল বিক্রি করলেও (কিনুক বা না কিনুক) অনেকে ভিড় করে "মজা দেখে", ফেরিঘাটে শির্কি তাবিজ-কবজ বিক্রির ভাঙা রেকর্ড বাজানোর স্থলেও অনেকে ভিড় করে "মজা দেখে"। আবার বিদেশি পর্যটকদের দেখলেও অনেকে হাঁ করে চোখ বড় বড় করে তাদেরকে দেখতে থাকে। এই "মজা দেখার" জাতীয় বদ অভ্যাসটি থেকে আমাদের বের হয়ে আসা উচিত। রাস্তাঘাটে ভিড় না জমিয়ে সময় নষ্ট না করে যার যেই কাজ, সেই কাজে গমন করা উচিত। প্রকৃত মুমিনের কাজ হচ্ছে সময় নষ্ট না করা এবং অসার কর্ম পরিত্যাগ করা।
 
আগুন নেভানোর কোনো দোয়া সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণিত নেই। তবে কোনো কোনো আলেম আগুন লাগলে তাকবির দেয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। [2] আগুন লাগলে আগুন নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত, ফায়ার ব্রিগেডে খবর দেয়া উচিত। সেই সাথে আল্লাহর নামে তাকবিরও দেয়া যেতে পারে। আল্লাহর নামের তাকবির এবং যিকির সর্বদাই করা যায়। তবে কখনো স্রেফ তাকবির দিয়ে একেই আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট ভাবা এবং আর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বসে থাকা উচিত হবে না কেননা এর পক্ষে নবী(
) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত কোনো হাদিস নেই।
 
সর্বোপরি সর্বদা আল্লাহর নিকট অগ্নিকাণ্ডসহ সকল দুর্যোগ থেকে আশ্রয় চাওয়া উচিত এবং আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আল্লাহর নিকট সর্বদা আশ্রয় চাওয়া এবং সতর্কতা অবলম্বন করা সুন্নাহ আমল।
 
নবী(
) বলেন, "...আর নিদ্রাকালে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্জ্বলিত সলতেযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।’" [3]
 

তথ্যসূত্রঃ


[1] https://dorar.net/h/XiIF0jnB
এই মর্মে হাদিস বেশ কিছু গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সবগুলোই যঈফ বা দুর্বল সনদে।
দেখুনঃ
https://dorar.net/h/XiIF0jnB?sims=1

অথবা https://archive.is/wip/oeOi0  (আর্কাইভকৃত)

আরো দেখুন, সিলসিলা যঈফা আলবানী ২৬০৩

[2] দেখুনঃ "What the du’aa’ that will protect one from fire?” - IslamQA (Shaykh Muhammad Saalih al Munajjid)

https://islamqa.info/en/82932/

অথবা https://archive.is/wip/hF7au  (আর্কাইভকৃত)

[3] সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩৩১৬
https://www.hadithbd.com/hadith/link/?id=27655